তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৫

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৫
ভূমিকা তালুকদার

একটা কৈ মাছের প্রানওয়ালা মানবের কপালে শেষে কিনা এই চুনোপুঁটি মতো বউ জুটলো! ”
জায়ান লিয়ানাকে কোলে তুলে সোনালি বর্ণের ডাইনিং টেবিলের উপর বসিয়ে এক হাতে লিয়ানাকে ধরে অপর হাতে গ্লাস থেকে পানি ছিটকালো মুখমণ্ডলে, একটু তাচ্ছিল্য হেসে জায়ান বলে,
“এইটুকুতে সেন্সলেস হয়ে গেলি? ”
লিয়ানা গলা থেকে হেডফোনটা খুলে পিটপিট চোখে জায়ানের দিকে তাকালো,হাতের তালু দিয়ে জায়ানের বুক বরাবর পাঁচটা কিল-ঘুষি মেরে বলে,
“আমি মুটেও গান ফান শুনে বেঁহুশ হই নি।আমি তো..”
“কি?”

“আল্লাহ! একটা পুরুষ নিজের বউ এর দিকে এতো কুনজর কি করে দিতে পারে, তা আপনাকে না দেখলে জানতাম এই না!”
জায়ান নিজের তর্জুনি মধ্যা আঙুল দিয়ে লিয়ানার থুতনির মাঝবরাবর চেপে ধরে,গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“কুনজর কাকে বলে তার প্রকারভেদগুলো বল,যদি না বলতে পারিস এই মূহুর্তের দশটা চুমু খাবি আমায়।”
জায়ানের এমন লাগামহীনতায় লিয়ানা ভরকে গেলো।কি আজব লোকরে বাবা।কুনজর এর ও প্রকারভেদ হয় তা সে বাপের জন্মেও শুনে নি।এখন তো নিজের গালেই নিজে চড় মারতে মন চাচ্ছে,কেন যে মুখ ফোঁসকে জায়ানের সাথে তর্ক করতে যায়।হায় আল্লাহ এখন তো মনে হচ্ছে এই এনাকন্ডা জামাইকে চুমু খেয়ে কেটে পড়াই তার জন্যে উত্তম সলিউশন। লিয়ানা একটা ইয়া বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে জায়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখে জায়ান গাল পেতে রেখেছে, লিয়ানা ফিসফিস করে উঠে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“শুধু শুধু কি আর নির্লজ্জের বংশধর বলি নাকি”
লিয়ানার ফিসফিসিয়ে বলা কথাটা ঠিকি জায়ানের কান অব্দি চলে এসেছে।
“নির্লজ্জ বলার কারণে আরও দশটা বেড়ে গেলো।নাও কিস মি বেবি”
“এ্যাহহহহ”
“এ্যা না হ্যাঁ,যত লেইট করবি সংখ্যা তত বাড়বে”

লিয়ানা দাঁতে দাঁত পিষে রাখে,আর কোনো উপায়ন্তর নেই,এই নাছোড়বান্দার যা চায় দিয়ে দে লিয়ানা তা না হলে তোর রক্ষে নেই।লিয়ানা ঠোঁট উল্টিয়ে জায়ানের গালে গুনেগুনে উনিশটা চুমু খা য়ে শেষ দেয়ার আগেই জায়ান নিজের ওষ্ঠ দিয়ে লিয়ানার অঁধর চেপে ধরে ফেলে, জায়ানের আকষ্মিক এহন কান্ডে লিয়ানা কিছুটা আঁতকে উঠে,জায়ানের কাঁধ শক্ত করে ধরে চু*ম্বনের গভীরতায় নিজেকে ডুবিয়ে দেয়।কিন্তুু জায়ান এর কানে কোথা থেকে যেনো একটা তরঙ্গ সুর ভেসে আসলো।এটা কি তার হার্টবিট এর স্পন্দন? হৃদয় কম্পিত হলে কি এমন সুর হয়!সে তো যতবার লিয়ানাকে স্পর্শ করেছে ততোবার লিয়ানাকেই কাঁপতে দেখেছে,তবে আজ কেন তার শরীর অবশ হয়ে আসছে এমনটা হওয়ার তো কথা ছিলো না।জায়ান জোড়ে জোড়ে শ্বাস টেনে হিংস্র পশুর মতো লিয়ানার অঁধরে কামুড় বসিয়ে দেয়।লিয়ানা প্রথমে স্থবির হয়ে গেলো,ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো,সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও জায়ানকে সরাতে পারলো না।চোখের কোনে জল জমে উঠেছে, ঠোঁটজোড়া কেমন ফেঁকাসে হয়ে নীল বর্ণ ধারণ করেছে।সহ্যের মাত্রা অসহ্যতায় গিয়ে ঠেকেছে।ভালোবাসার নামে এমন ব্যথা দেয়ার কি মানে। লিয়ানা বুঝতে পারে না, কি হয় জায়ানের মাঝে মাঝে কেন এমন করে,জায়ান লিয়ানার অঁধর ছেড়ে গলায় মুখ নিতেই লিয়ানা আর্তচিৎকার করে উঠে,

“জায়ান!আপনার ভালোবাসা আমায় ব্যথা অনুভব করায়।বুঝতে পারেন না কেনো”
জানালার কাঁচে তীব্র হাওয়া আঘাত করছিলো,বাহিরে ঘন তুষারপাত।লিয়ানার বাক্যে জায়ান তাকে ছেড়ে দিলো,ব্রাশ করা চুল গুলো কেমন উসকো খুসকো হয়ে গিয়েছে মূহুর্তেই, বুকটা ওঠানামা করছে দ্রুত। চোখ লালচে, নাকের পাশে টান ধরা, কণ্ঠস্বরটা নিচু কিন্তু কাঁপছে,
“কি বললি তুই।রিপিট কর আবার”

লিয়ানা কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু জায়ানের পায়ের ধ্বনি যেন বজ্রপাতের মতো এগিয়ে এলো। পাশের চেয়ারটা উলটে গেলো তার পায়ের আঘাতে।টেবিলের সব কটা কাচের গ্লাস ঝনঝন শব্দে নিচে ফেলতে লাগলো।কণ্ঠস্বর ভাঙলো সাথে অর্ধেক গর্জন, অর্ধেক যন্ত্রণায়।চোখে একটা তীব্র ঝড়ের দৃষ্টি,যেনো সে মুহূর্তে আর মানুষ নয়, একটা দগ্ধ, দানব। জায়ান টেবিলের কিনারা শক্ত করে ধরে রইলো, আঙুলের গাঁট সাদা হয়ে উঠছে।

লিয়ানা টেবিল থেকে নেমে ধীরে ধীরে পিছিয়ে গেলো, কিন্তু মুখে কোনো শব্দ বেরোল না। সে বুঝতে পারলো না এমন উদ্ভট আচরণের। লিয়ানারতো কখনোই এভাবে একা থাকার অভ্যাস নেই।তারপরেও জায়ানের সাথে হাসিমুখে দিনের পর দিন এমন জনমানবহীন এলাকায় থাকছে,আচ্ছা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কি এরকম লোকালয়ের বাহিরে থাকতে পারে।তার উপরে কথায় কথায় এমন উগ্র আচরণ। দমবন্ধ হয়ে আসে তার।তারপরেও মানিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে লিয়ানা।তাহলে জায়ান কেন এমন করে।লিয়ানা চোখের জল মুছে নিয়ে, ভয়মিশ্রিত সুরে বলে উঠে,

“এ কেমন গোলোকধাঁধার মধ্যে এনে ফেললেন আপনি আমায় ভালোবাসলে বাসুন না হলে শুধুই ঘৃণা করুন।তারপরেও দয়া করে একেক সময় একেক বিষাদীয় রুপ দেখাবেন না ”
জায়ান কিছু বলো না।থেমে গেলো।শ্বাস নিল ভারি গলায়, কুচকুচে কালো মণির চোখজোড়া বন্ধ করলো যা ইতিমধ্যে রক্তিম হয়ে ফুলে উঠেছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য স্থির দাঁড়িয়ে রইলো, যেন নিজের মধ্যের থাকা দানবটাকে বোঝাতে চাইছে, স্টপ।সংযত করো নিজেকে।তারপর জায়ান একেবারে নিচু স্বরে বলে উঠে,
“চেই’ঞ্জ ইউর ড্রে’স রাইট নাও।”
লিয়ানা স্তব্ধ হয়ে গেলো জামা পাল্টিয়ে আসবে মানে কি,ভয়ে মুখও খুলতে পারছে না যদি আবার রেগে যায় সেই ভয়ে,তারপরেও কৌতূহল বসে বলেই ফেললো,
“কোনো??এখন কেন ড্রেস চে’ঞ্জ করে আসবো? ”

জায়ান কপাল চেপে ধরলো, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। যেনো পাগলামির কিনারা থেকে সামান্য এক চুল দূরে ফিরে এসেছে কিন্তু সেই চোখে এখনো আগুন জ্বলছে, নিভে যাওয়ার আগের লালচে ঝলকানি।নিভু নিভু কন্ঠে বলে,
“আমি ব’লেছি তাই।ফাস্ট! বের হতে হবে।রেডি হয়ে আয়।’
বের হবে মানে!,বের হওয়ার নাম শুনতেই লিয়ানার মুখশ্রিতে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।এই অন্ধকার কুটির থেকে অনেকদিন পর বের হতে পারবে ভেবে লিয়ানা মহা খুশি। তখনি এক মূহূর্ত দেরি না করে,বড়বড় পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।বেডরুমে গিয়ে সুন্দর একটা কারচুপির কাজের মেরুন গ্রাউন পড়ে নেয়।চুল গুলো পোনিটেল করে বেঁধে একদম পারফেক্ট ভাবে রেডি হয়ে তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে পায়ের হিল মার্বেল ফ্লোরে পিচ্চিল হয়ে পড়ে যেতে নেয়।তখনি এক জোরা হাত লিয়ানার কোমড় চেপে ধরে নেয়।লিয়ানার চুল উড়ে গিয়ে জায়ানের ললাটে আঁটকে যায়।

“একটা কাজ ঠিকমতো করতে পারিস না।ওভারকোট কই তোর?? ”
লিয়ানা কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে আবার উপরে চলে যায়।ঠিকি তো বাহিরে প্রচন্ড ঠান্ডা খালি জামায় বের হলে শীতে জমে যাওয়ার চান্স 99.99%.বাড়ির মধ্যে রুম হিটার থাকার কারণেইনা ঠান্ডা লাহে না।তাড়াতাড়ি গিয়ে লিয়ানা ব্রাউন রঙা একটা ওভারকোট গায়ে জড়িয়ে নেয়।সাথে গলায় ধূসর মাফলার।নিচে নেমেই দেখতে পায় জায়ান কার সাথে যেনো ইয়ারপিসে কথা বলে যাচ্ছে।পড়নে ব্লেজার সুট নিচে সাদা সিল্কের শার্ট। এক হাতে গোল্ডেন ব্রেসলেট,মধ্যা আঙুলে নীল পাথরের একটা রিং চকচক করছে।অপর হাতে রোলেক্সের ঘড়ি।ঘড়ির টাইম দেখে পিছনে ফিরতেই দেখতে পায় লিয়ানা তার পিছনেই।

“কাম উইথ মি! “-বলেই জায়ান বড় বড় পা ফেলে গৃহ ত্যাগ করতেই যাবে লিয়ানা গিয়ে জায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে থামিয়ে দেয়।জায়ানের সামনে গিয়ে হাঁটা দেয়।
“এবার চলুন”
লিয়ানার এবার পেট ফেটে খুব জোরে হাসি পেলো তাও হাসি গিলে নিলো জায়ানের ভয়ে।এখন একেবারে মনে হচ্ছে লিয়ানার পিছু পিছু তার বডিগার্ড তাকে প্রটেক্ট করছে।

গার্ডেনের এক প্রান্তে “Ferrari SF 90” গাড়ির কাছে আসেই লিয়ানা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।একবার মনে হলো হয়তবা কোনো কাকতালীয় ভাবে মিলে গিয়েছে তার ফোনের ওয়ালপেপার এর সাথে।হোম স্ক্রিনের ওয়ালপেপার জায়ান কীভাবেই বা দেখবে।গভীর ভাবনায় লিপ্ত লিয়ানার হুঁশ ফিরে নিজের অনামিকা আঙুলে কোনো ধাতব বস্তুুর স্পর্শ পেতে।ভরকে গিয়ে জায়ানের দিকে তাকাতে দেখে জায়ান চাবির রিং লিয়ানার অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দিয়েছে। লিয়ানা আশ্চর্যবনে হাতের তালু উল্টো করতেই দেখে এটা এ গাড়ির চাবির রিং।বিস্মিত হয়ে জায়ানের পানে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। জায়ান তুরি বাজিয়ে বলে উঠে,

“খেয়ে ফেলবি নাকি, এভাবে কেন তাকিয়ে আছিস।”
“না মানে, আমা..আমাকে কেন দিলেন?”
“বিক’উস ইট’স্ ইউর কার।দ্যাট’স হুয়াই”
“আমার? ”
জায়ান লিয়ানার দিকে কিছুটা ঝুঁকে লিয়ানার নাকের ডগায় আঙুল ছুইয়ে দেয়,
“তোর আর আমার আবার কি?? আমার যা তা তো তোরি। নাও গাড়িতে উঠে বস।
জায়ান গাড়ির দরজা খোলে দেয়। লিয়ানা উঠে বসতেই জায়ান সিটবেল্ট পড়িয়ে দেয়।তারপর নিজে গিয়ে গাড়ির ড্রাইবিং সিটে বসে পড়ে।ধূসর রঙা ফেরারি ধীরে ধীরে বাঁক ঘুরে চলছে। গাড়ির ভেতর সাইলেন্স,ভিতরে শুধু হালকা গানের সুর বাজছে রেডিওতে, আর ইঞ্জিনের গভীর গর্জন।

লিয়ানা জানালার পাশে বসে আছে,চুলের কিছু গোছা বাতাসে উড়ছে। তার চোখে পর্বতের প্রতিচ্ছবি, দূরে কোথাও মেঘের ভেতর সূর্যের রশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে,টায়ারের নিচে ছোট ছোট পাথর গড়িয়ে পড়লো খাদে। জায়ানের হাত শক্ত করে ধরা স্টিয়ারিংয়ে। বাতাসের ঠান্ডা হিম, জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে এলো, আর তাতে লিয়ানার কাঁধে তার স্কার্ফটা হালকা নড়ে উঠলো।জায়ান গাড়ির কাচ উপরে উঠিয়ে হিটার অন করে দেয়।

ফ্রান্সের দক্ষিণে, কোত দাজুর অঞ্চলে। যেখানে নীল সমুদ্রের ধারে পাহাড়ি রাস্তাগুলো সাপের মতো বেঁকে গেছে, পাশে পাথরের ক্লিফ, নিচে ঝিকিমিকি করা ভূমধ্যসাগরের নীল জল।
নাদিয়া বাইক রাইড করে এসে পড়ে এখানে।নাদিয়া প্রায়শই গাড়ি থেকে বাইক রাইড করতে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করে।নাদিয়ার পড়নে একটা কালো লেদার জ্যাকেট, জিন্স প্যান্ট। দেখতে মনে হচ্ছে কোনো লেডি বাইকার।মার্কো একজন ইটালিয়ান ব্যাক্তির সাথে হেন্ড’শেক করছে।মার্কো সাদা ক্রিস্প শার্টের হাতা গুটিয়ে রেখেছে।আজকে টাই ছাড়া খোলা কলার।মুখে হালকা খোচা খোচা দাঁড়ি। নাদিয়া এসেই মার্কোর কাঁধে হাত রাখে।মার্কো পিছনে না ফিরেই বুঝে ফেলে এটা আর কেউ না নাদিয়া।নাদিয়া নাকুচে গলায় বলে,

“একা এলি কেন?? বলেছিলাম না আমায় ড্রপ করে নিয়ে আসতে।”
মার্কো গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“আমাকে কি তোর পার্সোনাল ড্রাইবার মনে হয় নাকি? ”
মার্কোর এমন তাচ্ছিল্য করা জবাব এর জন্যে নাদিয়া মুটেও প্রস্তুুত ছিলো না।তার গাড়ির ইঞ্জিনজনিত প্রব্লেম এর কারণে গাড়িটা মেকানিক এর কাছে দিয়ে রেখেছে।প্রথমে এলেক্সেই বলেছিলো তবে, এলেক্সকে জায়ান শহরের বাহিরে পাঠিয়েছে মি. মাল্টার নিখোঁজ এর তদন্তের জন্যে।
তবে মার্কো এমন গম্ভীরপ্রকৃতির কঠোর মনের মানুষ তা নতুন কিছু না।তবে নাদিয়া ভেবেছিলো এতোখানি রাস্তার পথ মার্কো নিশ্চয়ই তাকে একা ফেলে আসবে না।মন চাচ্ছে এক ঘুষিতে সরু নাক ভোতা করে দিতে।নাদিয়া রাগে তার পায়ের হিল দিয়ে মার্কোর পা এর উপর চেপে ধরে।কোনো কাজ হলো না।মার্কো ওহ,আহ টুকুনিও করলো না।শুধু ভ্রু কুচকিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত রেখে তাকিয়ে আছে।নাদিয়া রাগে গজগজ করতে করতে বলে,

“হুয়াট দ্যা হেল মার্কো! ব্যথা পাচ্ছিস না কেন?উফ!অসহ্য।”
“না ব্যাথা পাওয়া যায় না। ওয়েট আমি দিয়ে দেখাচ্ছি।”-বলতে বলতেই মার্কো লেদার বুট সো্ দিয়ে নাদিয়ার পায়ে চেপে ধরতেই ব্যথায় উহুুুহহহ করে উঠে নাদিয়া।
“এই কুকুর ছাড়।উফফ! ইউ হার্ট মি প্লিজ স্টপ। ”
“ধরার আগেই ছাড়ার প্রসঙ্গ!ইট’স নট ফেয়ার নূর।”
মার্কো নাদিয়ার পা ছেড়ে দিয়ে বড়বড় পা ফেলে ভি আই পি স্টেজের দিকে পা বাড়ায়।নাদিয়ে পিছন পিছন চিল্লাতে চিল্লাতে দৌড়াতে থাকে,
“কুকুর! কুকুর! কুকুর! ওয়ান ডে আই উইল কিল ইউ, ডেমে’ইট”
ভিআইপি স্টেজে উঠেই নাদিয়া মার্কোর চুল টেনে ধরে জোরে টান মেরে পি’ন্চ মারে।তারপর মার্কোর পাশে গিয়ে বসে পড়ে।

জায়ানদের গাড়ি ততক্ষণে কোত দাজুরেতে এসে পৌঁছে পরে।গাড়ি ব্রেক কষতেই। ভিতর থেকে জায়ান বেরিয়ে আসে, এসেই লিয়ানার সাইডের দরজাটা খোলে দেয়।লিয়ানা গ্রাউন সামলে নিয়ে গাড়ি থেকে নামে।নামতেই আশেপাশের এতো লাইটিং এর আলোতে চোখ কুঁচকে যায়।কিসের এতো আলো জায়ান তাকে কোথায় বা নিয়ে এলো।এতো মিউজিক মানুষদের কোলাহল কিসের।লাইটের ফ্লেশ এর ফলে ঠিকভাবে চোখ মেলে তাকাতে পারছে না।জায়ান লিয়ানার হাত ধরে লাল কার্পেটের উপর দিয়ে হেঁটে স্টেজের দিকে পাঁ বাড়ায়।তাদের দেখে আশেপাশে নামি-দামি ব্যাক্তিরা তাকিয়ে আছে। যেনো কোনো রয়েল কাপল হেঁটে আসছে।

“কোথায় এসেছি আমরা”
“একটু পরেই জানতে পারবি সুইটহার্ট ”
লিয়ানাকে দেখতে পেয়েই নাদিয়া খুব খুশি হলো কতদিন দরে দেখে না।নাদিয়ার জায়ানের বউ হিসেবে না বরং ছোটো বোনের মতো লিয়ানাকে স্নেহ করে।লিয়ানা সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠতেই জায়ান লিয়ানার হাত ছেরে দেয়।
“আপনি আসবেন না?আমি একা কই যাবো।”
“উপরে নাদিয়া আছে ওর কাছে যা।আমার একটু কাজ আছে।নাও গো”
“নূরি আপু? ”
“হুম”
নাদিয়ার কথা শুনতেই লিয়ানা গ্রাউন সামলে নিয়ে উপরে উঠতে থাকে।একবার পিছন ফিরে জায়ানের দিকে তাকাতেই দেখে জায়ান নেই আর।কোথায় গেলো লোকটা।লিয়ানা একবার পিছনে ফিরে আবার সামনে তাকাতেই নাদিয়া এসে জড়িয়ে ধরে।লিয়ানাকে উপরে ভি আই পি স্টেজে নিয়ে যায়।

“ওমাই গার্ল! “আই মিস্’ড ইউ ”
“আই অল’সো মিস’ড্ ইউ নূরী আপু।”তুমি জানো আমার এখন কি যে শান্তি লাগতেছে। আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই।তুমি একটু ওনাকে বলবে।”
লিয়ানার আকুতি ভরা কন্ঠে বলা কথায় নাদিয়ার মনে মায়া অনুভূব হলো।কিছুটা শীতল গলায় ব’লে,
“জায়ানকে বলবো মাঝে মাঝে স্যাডো এম্পায়ারে নিয়ে আসতে তোমায়।তাহলে হ্যাপি?”
“সব সময় কেনো না? ”
নাদিয়া হাসলো।

“জায়ান যা করে সব তোমার ভালোর জন্যে।লিসে্ন্ট ডুন্ট হার্ট মাই ফ্রেন্ড ওকে? ”
লিয়ানা ঠোঁট বাকালো।সে কবেইবা জায়ানকে কষ্ট দিলো। জায়ানি তো তাকে আঘাত করে প্রতিমুহূর্তে।
তবে এখানে কি হচ্ছে তা বুঝতে না পেরে লিয়ানা নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক তখনি,
লাউডস্পিকারে ঘোষণার আওয়াজ ভেসে আসে,
“Ladies and gentlemen,Welcome to the International Grand Prix of France!
স্ট্যাজে বসা হাজারো দর্শক, কারও হাতে ফরাসি পতাকা, কারও মুখে রঙিন মাস্ক, আবার কেউ মোবাইল তুলে সরাসরি লাইভ করছে।

আন্তর্জাতিক কার রেসিং প্রতিযোগিতা।বিশ্বের সেরা ১২ জন রেসার রা আংশ গ্রহণ করবে তাতে।
আন্তর্জাতিক কার রেসিং প্রতিযোগিতায় মোট বাজেট প্রায় ৭৫ মিলিয়ন ইউরো।যার মধ্যে ৩০% স্পনসরশিপ এসেছে ফ্যাশন হাউস “Maison Duvall”এর কাছ থেকে,আর বাকি এসেছে আন্তর্জাতিক স্পোর্টস নেটওয়ার্ক, রেসিং ব্র্যান্ড, আর ধনী ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ থেকে।ক্রিমিনাল লইয়ার জায়ান খানও স্পনসর করেছে তাতে।
লাউডস্পিকার এ এবার ১২জন রেসার এর নাম ঘোষনা হচ্ছে।যেখানে থাকছে বিশ্বের ১২টি দেশ থেকে আগতো ১২জন বিগত কয়েকবছরের জয়ী রেসারগণ।
“THE TWELVE COUNTRIES OF SPEED”
ফ্রান্স, ইতালির, জার্মানি, জাপান,স্পেন,যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া,রাশিয়া,দুবাই,চীন।
প্রত্যেকটা দেশের নাম আর কোন দেশ থেকে কোন রেসার অংশ গ্রহণ করবে তার নাম গুলো লিয়ানা মনোযোগ সহকারে শুনছে।সে খুব

খুশি।লিয়ানা এমনিতেই কার লাভার গার্ল। তার উপরে এভাবে কখনো সরাসরি কার রেসিং প্রতিযোগিতা দেখতে পারবে তা তো সপ্নতুল্যে।কিন্তুু যখনি অ্যানাউন্সমেন্ট হলো যে ফ্রান্স থেকে যিনি রেসিং করবে “গ্রেট জায়ান”।লিয়ানা আঁতকে উঠে নাদিয়ার দিকে তাকায়।
“কি নাম বললো আপু? ”
মার্কো পপকর্ন খেতে খেতে বলে গম্ভীর গলায় বলে,
“যা শুনেছো। তা।কেন জায়ান তোমাকে কিছু বলে নি?? ”
“নাতো”

“জায়ান তো ইন্টারন্যাশনালি কার রেসার।ইউনিভার্সিটি থেকে বহুবার রেস করেছে।এলেক্সও করে।তারপর জায়ান ফ্রান্সের সিটিজেনশিপ পাওয়ার পর ইন্টারন্যাশনালি ভাবে রেস করতো।যেহেতু ফ্রান্সের নাম্বার রেসার এর তালিকায় জায়ানের নাম আছে তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে তো তারই আংশ নেওয়ার কথা তাইনা।
“তাহলে ওনি কি প্রফেশনালি রেসার? ”
“এটা জায়ান এর একটা হেবিট।যখন মন চায় করে,।তেমন গুরুত্বও দেয়নি কখনো।তবে যখনি রেসিং করবে তখন আর অন্যে কেউ জেতার প্রশ্নই আসে না।”

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৪

কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রাউন্ডে একটা লাল কালারের রেসিং কার তার গ্লসিবডি নিয়ে উপস্থিত হয়।কার নাম্বার 07…কারের ভেতর থেকে একজন ব্যাক্তি নামে।পড়নে ফায়ারপ্রুফ রেসিং স্যুট,মাথায় হেলমেট হাতে কালো গ্লাভসবুট।হেলমেটে টা খুলতেই কপাল ছুই ছুই চুল গুলো ঝেরে নেয় এপাশ ওপাশ। হেলমেট খুলে রেসিং কারে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। তার দৃষ্টি ভি আই পি স্টেজে বসা মেরুন রঙা গ্রাউন পরিহিতা ব্রাউন চোখের লিয়ানার দিকে।হাত নেড়ে হাই দিলো লিয়ানাকে।লিয়ানাও ততক্ষণে জায়ানকে লক্ষ্যে করে।মুখে একটু মৃদু হাসির রেখা টানতেই জায়ান,
একটা ফ্লাইং কি’স ছুড়ে দেয় লিয়ানার দিকে……

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here