Death or Alive part 27

Death or Alive part 27
priyanka hawlader

গভীর জঙ্গলের আঁধারে এক সরু কাঁচা পথ বেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে এক রাজকীয় horse carriage।
দুই পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো ঘন সবুজ পাতায় সূর্যের আলোকে ছেঁকে মাটিতে ছায়ার জাল বুনে দিয়েছে।

মৃদু বাতাসে পাতার মর্মর শব্দ আর দূরের অজানা পাখির ডাক, পরিবেশকে রহস্যময় করে তুলেছে।
গাঢ় কালো রঙে রাঙানো কারেজের গায়ে সোনালি খোদাই করা নকশা সূর্যের হালকা রশ্মিতে ঝিকমিক করছে।
এর চারপাশে ঝুলছে গাঢ় মখমলের পর্দা, যা বাতাসে হালকা দুলছে, মাঝে মাঝে ভিতরের ছায়ামূর্তি চোখে পড়ছে।
কারেজের সামনে দুটি কালো রাজকীয় ঘোড়া, মাথা উঁচু করে গর্বভরে ছুটছে, তাদের কেশর বাতাসে উড়ছে।
প্রতিটি খুর মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুষ্ক পাতার মচমচ শব্দ আর ধুলো কণার ছোট ছোট ঘূর্ণি উঠছে।
চাকার কাঠের চাপা কিঁচকিঁচ আওয়াজ জঙ্গলের নীরবতায় এক অদ্ভুত ছন্দ তুলেছে—
মনে হচ্ছে যেন প্রকৃতি নিজেই কারেজের পথচলার জন্য এক বিশেষ সুর বাজাচ্ছে।
আর এই সব মিলিয়ে, horse carriage-এর গতি যেন ধীর অথচ উদ্দেশ্যপূর্ণ,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

যেন সে জানে, কোথায় যাচ্ছে এবং কেন যাচ্ছে…
পথের প্রতিটি বাঁক আর প্রতিটি ছায়া তার যাত্রাকে আরও রহস্যময় করে তুলছে।
ভেতরে বসে আছে ওয়াজফান আর অর্ষা।
অর্ষার মুখে হালকা ক্লান্তির ছাপ—
তার চোখ আধবোজা, মাথা জানালার পাশে হেলান দিয়ে আছে।
অল্প আগে এক টানা শপিংয়ের পর সে যেন পুরো মন ভরে খুশি হলেও
পায়ের ব্যথা তাকে নিঃশব্দ করে রেখেছে।
ওয়াজফান পাশ থেকে একবার তাকিয়ে বুঝে গেল
অর্ষা খুব ক্লান্ত।
আসলে সে চেয়েছিল উড়ে চলে যেতে,

কিন্তু আজকের দিনটা পুরোটা অর্ষার ইচ্ছে মতো কাটবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
দুটো মানুষ যেমন সাধারণভাবে পথ চলে,
আজ তেমন করেই তারা যাত্রা করছে এই কারেজে।
হঠাৎ ওয়াজফান এগিয়ে এসে তার পায়ের সামনে বসল।
আস্তে করে অর্ষার পা নিজের হাতে তুলে নিলো,
তারপর ধীরে ধীরে আঙুল দিয়ে চাপ দিয়ে ম্যাসাজ শুরু করল।
পায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে অর্ষা হঠাৎ কেঁপে উঠলো।
ভ্রু কুঁচকে সে পা সরিয়ে নিতে চাইল—
“কি করছেন আপনি? পাগল হয়ে গেছেন নাকি! পা ছাড়ুন আমার!”
ওয়াজফানের ঠোঁটে তখন শুধু এক রহস্যময় হাসি…
ওয়াজফান ম্যাসাজ থামিয়ে অর্ষার চোখের দিকে গভীরভাবে তাকাল।
তার কণ্ঠে ছিল অনমনীয় দৃঢ়তা—

“চুপচাপ বসে থাকো… একটুও নড়বে না। আজ তোমার কথা অনেক শুনেছি,
এখন আমার কথা শোনো।”
অর্ষা কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু সেই দৃষ্টি তাকে থামিয়ে দিল।
ওয়াজফান আবার তার পায়ের দিকে মন দিল, ধীরে ধীরে চাপ দিয়ে পেশীর টান কমিয়ে দিলো।
কিছুক্ষণ এভাবেই যত্নে ম্যাসাজ করে,
সে উঠে এসে অর্ষার পাশে বসলো।
হঠাৎই শক্ত হাতে অর্ষাকে টেনে নিজের কোলের ওপর বসাল।
তারপর আলতো করে মাথাটা নিজের বুকের উপর ঠেসে দিলো।
নরম কণ্ঠে বলল—

“ইচ্ছে হলে ঘুমিয়ে পড়ো…”
অর্ষা কোনো উত্তর দিল না।
সে শুধু চোখ বন্ধ করে বুকের ধুকপুক শব্দ শুনতে শুনতে
নিঃশব্দে লেপটে রইল ওয়াজফানের সাথে।
জঙ্গলের বাইরে চাকার শব্দ চলতে থাকল,
আর ভেতরে নেমে এলো এক শান্ত, উষ্ণ নীরবতা…
হঠাৎ horse carriage থেমে গেল নির্জন এক জায়গায়।
চাকার গতি থামতেই চারপাশের নীরবতা যেন আরও গভীর হয়ে উঠল।
ওয়াজফান দরজা খুলে নেমে এলো, হাত বাড়িয়ে অর্ষাকে নামাল।
অর্ষা সামনে তাকাতেই বিস্ময়ে থমকে দাঁড়াল—
দূরত্বে একটা বড় দোতলা কাঠের বাড়ি,
যেন সময়ের গহীনে আটকে থাকা কোনো গোপন আশ্রয়স্থল।
পাকা রাস্তা নেই, নেই কোনো জনবসতি—

শুধু চারদিকে অসীম জঙ্গল, যতদূর চোখ যায়
গাছের সারি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
পাতার ফাঁক দিয়ে হালকা বাতাস বয়ে আসছে,
যার সঙ্গে মিশে আছে কাঠ আর মাটির গন্ধ।
ওয়াজফান কোনো কথা না বলে অর্ষার হাত ধরল,
ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে এগোতে লাগল সেই কাঠের বাড়ির দিকে।
পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়োয়ানকে সে বলল—
“চলে যাও। এই carriage আর এখানে থাক। তুমি চলে যাও।
গাড়োয়ান মাথা নত করে বলল,

“ঠিক আছে, বাদশা।”
তারপর
ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল জঙ্গলের আঁকাবাঁকা পথে।
ওয়াজফান তখনও অর্ষার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে,
যেন এই নির্জন জঙ্গলে সে-ই একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়।
ভেতরে পা রেখেই অর্ষা টের পেল, কাঠের ঘরটা বাইরে থেকে যতটা বড় মনে হয়েছিল, ভেতরে দিকটা ততটাই উষ্ণ আর নিস্তব্ধ।
মেঝেতে পুরনো কাঠের হালকা কটকট শব্দ, জানালা দিয়ে ঢুকে পড়া সূর্যের রোদে ধুলিকণাগুলো যেন নাচছে।
চিমনির পাশে সাজানো কয়েকটা নরম সোফা আর মাঝখানে ছোট্ট টেবিল—সবকিছুতেই এক ধরনের অদ্ভুত নির্জনতা।
হঠাৎ পিছন থেকে উষ্ণ দুই হাত অর্ষার কোমর জড়িয়ে ধরল।
সে চমকে উঠল—

ওয়াজফানের বুকের সাথে পিঠ মিশে গেল, আর তার কণ্ঠস্বর গভীরভাবে কানে বেজে উঠল,
কেমন লাগল বাড়িটা? এখানে শুধু কাজের জন্য আসিনি… হানিমুনেও এসেছি।
সবাইকে বলেছি আমি কাজে এসেছি, যেন কেউ এসে বিরক্ত না করে।
প্রাসাদে তুমি বারবার আমার হাত থেকে পালাও… এখন বলো, এখানে কোথায় পালাবে?”
অর্ষা গলা শুকিয়ে গিয়েছে, ডগ গিলে নিল।
তার বুকের ধড়ফড় বেড়ে গেছে—
সে জানে, এই নির্জন জঙ্গলে আর একান্ত কাঠের বাড়িতে
ওয়াজফান যা চায়, তা এড়ানো কঠিন হবে।
তবু তার চোখে এক অদ্ভুত দ্বিধা আর ভয়ের ঝিলিক…

নিচতলার অন্ধকার ঘরে একা বসে ছিল জ্যাইম। দেয়ালের কোণে মৃদু আলোয় তার চারপাশটা যেন আরও গভীর ছায়ায় ঢেকে গিয়েছিল। ঠিক তখনই, তার সামনে রাখা জাতিশক্তির গোল পাথরটি হঠাৎ কাঁপতে শুরু করে।
পাথরের ভেতর ঘূর্ণি খেতে খেতে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে মালালার মুখ—উদ্বিগ্ন, তড়িঘড়ি ভরা কণ্ঠে সে বলল,
— প্রিন্সেস এলিনা… অনেক বেশি পাগলামি করছে। তাকে আর সামলানো যাচ্ছে না। আপনি এক্ষুনি আসুন!”
শব্দগুলো জ্যাইমের বুকের মধ্যে ধাক্কার মতো লাগে। সে আর এক মুহূর্ত দেরি করে না। পাথরের ঝলক থেমে যেতেই, দৃঢ় পদক্ষেপে অন্ধকার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। রাজশক্তির পথ ধরে মুহূর্তের মধ্যেই ছুটে চলে যায় মেসোপোটেমিয়া রাজ্যের দিকে—যেখানে এক অনিশ্চিত ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু রয়েছে।
প্রাসাদের বিশাল দরজা পেরোতেই জ্যাইমের চোখে ধাক্কার মতো ধরা দেয় দৃশ্যটা—
এলিনা, এলোমেলো চুল, চোখে উন্মত্ত লালচে দৃষ্টি, হাতে ভাঙা গ্লাসের টুকরো, ঠোঁটে একটাই নাম—

— “ওয়াজফান… ওয়াজফান…”
তার কণ্ঠে তীব্র আকুলতা, আর চারপাশে ভাঙচুরের শব্দ। প্রাসাদের চাকর-বাকরেরা দূরে দাঁড়িয়ে, কিন্তু কেউই সাহস করে কাছে আসছে না। এলিনার পাগলামী যেন এক বন্যা, যা ছুঁলেই গ্রাস করবে।
জ্যাইম আর এক মুহূর্ত ভাবেনি—সে দৌড়ে গিয়ে এলিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, তার কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে বলে,
— “শান্ত হও, এলিনা… আমি এসেছি।”
নেশার গভীরে ডুবে থাকা এলিনার দৃষ্টি কুয়াশাচ্ছন্ন। সে জ্যাইমকে চিনতে পারে না, বরং মনে করে সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত মুখ—ওয়াজফান।
হঠাৎ তার ঠোঁটে ম্লান এক হাসি ফুটে ওঠে।
— “তুমি এসেছ… আমি জানতাম তুমি আসবে… আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো, যেমন আমি তোমাকে ভালোবাসি…”

জ্যাইমের বুকের ভেতরটা যেন চুরমার হয়ে যায় এই কথায়। কিন্তু তার মুখে কোনো অভিব্যক্তি ফুটতে দেয় না। নিঃশব্দে, অত্যন্ত ধীরে, এলিনাকে কোলে তুলে নেয় সে।
তাকে নিজের কক্ষে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়, পাশে বসে পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এলিনার চোখ আধখোলা, নেশার ভার এখনও পুরোপুরি কাটেনি। তবুও তার শ্বাস কিছুটা স্থির হয়, কণ্ঠ নরম হয়ে আসে।
জ্যাইম দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তার কপালে আলতো করে হাত রেখে বসে থাকে—
যেন এই উন্মত্ত ঝড়ের মাঝেও সে একমাত্র আশ্রয়।
হঠাৎই এলিনা তীব্র শ্বাস নিয়ে উঠে বসে।
তার চোখে এখন ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে দৃশ্য—

না… সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ওয়াজফান নয়, জ্যাইম।
এক মুহূর্ত থমকে থাকে সে, তারপর যেন সব বাঁধ ভেঙে হু হু করে কান্না শুরু হয়।
সে ঝাঁপিয়ে পড়ে জ্যাইমের বুকে, দুই হাত দিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে—
যেন ভয় করছে, একবার ছেড়ে দিলে সে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।
কাঁপা কণ্ঠে এলিনা বলে,

— “তুই আমাকে ছেড়ে যাবি না তো…? দেখ, আমাকে ছেড়ে সবাই চলে যায়। ছোটবেলায় মা চলে গেল… আর এখন ওয়াজফানও… তুইও জানি চলে যাবি…”
জ্যাইমের বুকের ভেতরটা আবারও মোচড় খেয়ে ওঠে। সে আলতো করে এলিনার মুখের পাশে হাত রাখে, গভীর চোখে তাকিয়ে বলে,
আমি তোকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। সারা জীবন বললে সারা জীবন… তোর পাশে থাকতে রাজি আছি। তোকে নিজের এই বুকে আগলে রাখতে রাজি আছি। তুই যদি চাস… আমি পুরো দুনিয়া ছেড়ে দেব তোর জন্য।”
এলিনা আরও জোরে কেঁদে ওঠে, তার হাতের বাঁধন শক্ত হয়।
মনে হয়, সে যেন জ্যাইমের বুকের ভেতরে ঢুকে গিয়ে সব ভয় আর একাকীত্ব থেকে পালাতে চাইছে।
জ্যাইম তাকে শক্ত করে আগলে রাখে—

বাইরের দুনিয়া যেন তখন হারিয়ে যায়,
শুধু থাকে দু’জন মানুষের ভেতরের অব্যক্ত শপথের উষ্ণতা।
কিছুক্ষণ পর এলিনার কাঁপা শ্বাস ধীরে ধীরে স্থির হয়।
তার কান্নার শব্দ থেমে আসে, শুধু বুকের ভেতরের দমবন্ধ নীরবতা শোনা যায়।
সে আলতো করে মাথা তোলে, জ্যাইমের দিকে তাকায়।
দুই জোড়া চোখ যেন এক অদ্ভুত নীরব সংলাপে বাঁধা পড়ে যায়—
কোনো কথা নেই, কিন্তু ভেতরে ভেতরে যেন অনেক অজানা অনুভূতি প্রবাহিত হচ্ছে।
জ্যাইমের চোখে এলিনা খুঁজে বেড়ায় নিরাপত্তা, আকর্ষণ, আর অদ্ভুত এক টান।
হঠাৎই, যেন নিজের অজান্তেই, এলিনা এগিয়ে আসে—
তার ঠোঁট ছুঁয়ে ফেলে জ্যাইমের ঠোঁট।
মুহূর্তটা এত দ্রুত ঘটে যায় যে জ্যাইম প্রথমে বুঝতেই পারে না কী হলো।
পরের মুহূর্তেই সে চমকে ওঠে।
তাড়াহুড়ো করে এলিনাকে আলাদা করে দেয় নিজের কাছ থেকে।
তার কণ্ঠে বিস্ময় আর বিরক্তির মিশেল—

— “তুই পাগল হয়ে গেছিস নাকি! কি করছিস তুই… জানিস কি করছিস?”
এলিনা কিছু বলে না… শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে,
তার বুকের ভেতরে তখনও কাঁপুনি চলছে,
আর জ্যাইম নিজের ভেতরের অদ্ভুত আলোড়ন লুকানোর চেষ্টা করে।
জ্যাইম উঠে দাঁড়ায়, তার মুখে এক ধরনের গম্ভীরতা।
সে ধীরে ধীরে দরজার দিকে হাঁটা দেয়।
হঠাৎ পিছন থেকে এলিনা তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে,
চোখে অশ্রু আর কণ্ঠে কাঁপুনি,
কোথায় যাচ্ছিস তুই? না বলেছিস আমাকে ছেড়ে যাবি না…
জ্যাইম একটু থেমে নিচু স্বরে বলে,
শুধু বাইরে যাচ্ছি। এখানে… এখন আমার থাকা ঠিক হবে না।”
কিন্তু এলিনা তাকে ছেড়ে দিতে নারাজ।
পাগলের মতো তাকে জড়িয়ে ধরে, বুকের কাছে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে

“I need you…”
জ্যাইমের কণ্ঠ আরও কঠিন হয়ে ওঠে,
কি বলছিস তুই? তুই এখন নেশার ঘোরে আছিস… তুই পাগল হয়ে গেছিস। আমাকে যেতে দে।
কিন্তু এলিনা শুনছে না কিছুই।
বরং আরও শক্ত করে তাকে আঁকড়ে ধরে—
তার কাঁপা ঠোঁট এসে ছুঁয়ে যায় জ্যাইমের গলার কাছে, এড্যামস অ্যাপেলের উপর।
তারপর ফিসফিস, প্রার্থনার মতো,
আমার এক্ষুনি তোকে চাই… প্লিজ… না করিস না…
জ্যাইম তাকে সরানোর চেষ্টা করে,
কিন্তু এলিনার গ্রাস আরও শক্ত হয়।
তার ঠোঁট বারবার খুঁজে নিতে থাকে জ্যাইমের গলার উষ্ণতা,
আর কণ্ঠে ভেসে আসে একই মিনতি—
প্লিজ… জ্যাইম… প্লিজ…
দরজার বাইরে তখনো নীরবতা,
কিন্তু ভেতরে জমে ওঠে এক অদ্ভুত, ভারী আবহ…
এরপর এলিনা হঠাৎ ঝুঁকে এসে জ্যাইমের কানে হালকা কামড় বসায়।

শরীরের প্রতিটি স্নায়ুতে বিদ্যুতের শিহরণ বয়ে যায় জ্যাইমের, আর সে মুহূর্তেই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। এক ঝটকায় এলিনাকে জড়িয়ে ধরে টেনে নেয় নিজের কাছে, ঠোঁটে ঠোঁট রেখে গভীর চুম্বনে ডুবিয়ে দেয় তাকে।
চুমুর তীব্রতা বাড়তেই এলিনার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে, জ্যাইম উম্মাদ হয়ে এলিনার পোশাক খুলতে থাকে, এলিনাও হাত বাড়িয়ে জ্যাইম এর পোশাক খুলে ফেলে,
আর জ্যাইম তাকে নিয়ে সোজা বিছানায় শুইয়ে দেয়।
পরের মুহূর্তে যেন সব সীমারেখা মিলিয়ে যায়—সে সম্পূর্ণ ডুবে যায় এলিনার মাঝে, যেন তার সব বেদনা, সব ক্ষত একে অপরের মাঝে মিশে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘক্ষণ ধরে চলতে থাকে তাদের এই উন্মত্ত রোমান্স—
আবেগ, উত্তেজনা আর অদ্ভুত এক শান্তি মিশে যায় প্রতিটি স্পর্শে।
দু’জনের দৃষ্টি, স্পর্শ, আর শ্বাসপ্রশ্বাস যেন বলে দিচ্ছে—এই মুহূর্তে তারা একে অপরের পুরো দুনিয়া, আর অন্য কিছুর আর কোনো অস্তিত্ব নেই।

ইসাবেলা বসে আছে নিজের নিঃসঙ্গ কক্ষে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সে—দূরে ধূসর আকাশ, হালকা শীতের হাওয়া, আর পাতা-ঝরা পথ যেন তার মনখারাপের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারপাশে নীরবতা, কিন্তু সেই নীরবতার মাঝেও কানে বাজছে কেবল একটাই সত্য—তার দা কখনোই নেকড়েদের মানবে না, এমনকি নামটাও সহ্য করতে পারবে না।
কিছুক্ষণ আগে যে কথাগুলো শুনেছিল, সেগুলো এখনো কানে বাজছে। যেন প্রতিটি শব্দ হৃদয়ে ধারালো কাঁটার মতো বিঁধছে। সে ঠিকই বলেছিল… দা মানবে না। একবার মনে হলো, হয়তো কোনো অলৌকিক উপায়ে সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু পরের মুহূর্তেই সেই ক্ষীণ আশাটুকুও মিলিয়ে গেল।

ইসাবেলার চোখের কোণে জমে থাকা জল ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়ল গালে। কাঁচের জানালায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে মনে হলো, এ যেন আর আগের সেই হাসিখুশি ইসাবেলা নেই—এ এক ক্লান্ত, দুঃখভারাক্রান্ত মেয়ে, যার কাঁধে দায়িত্বের বোঝা আর মনের গভীরে জমে থাকা এক অসম্ভব সিদ্ধান্তের ভার।
তার মনে দৃঢ় সংকল্প জন্ম নিল—যদি দা না মানে, তবে আমাকেই কিছু করতে হবে। দূরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সে শপথ নিল, যত ঝড়ই আসুক, যত বাধাই আসুক, সে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়াবে না। জানালার ওপারে সূর্য ডুবে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি ইসাবেলার ভেতরে এক পুরনো জীবন ডুবে যাচ্ছে, আর জন্ম নিচ্ছে এক নতুন পথের সূচনা।

গভীর রাত।
বাহিরে নিঝুম বৃষ্টি ঝরছে, বাতাসে ভেজা মাটির গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
অর্ষা নিজের রুমের জানালা দিয়ে ধীরে ধীরে তাকিয়ে আছে—
বৃষ্টির ফোঁটারা মাটিতে পড়ে ঝপঝপ শব্দ করছে, আর তার গা ছমছম করছে সেই কোমল স্পর্শে।
বৃষ্টি তাকে যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তি দিচ্ছে, মন ভালো লাগছে, ভালো লাগার মতো এক নিঃশব্দ অনুভূতি।
হঠাৎ…
সেই অনুভূতি তাড়াতাড়ি থেমে গেল।

পিছন থেকে গা ঘিরে উঠল শক্ত একটা আঙুলের জড়াজড়ি।
ওয়াজফান, নিরব নিঃশ্বাস ফেলে, অর্ষাকে জড়িয়ে ধরল।
তার গলার কাছে ঠোঁট মগডুবিয়ে নরম স্পর্শ দিল।
একসঙ্গে হাত ধীরে ধীরে অর্ষার জামার ভেতরে ঢুকে গেল।
কোমরের নিচে নামার চেষ্টায় হঠাৎই অর্ষার শরীর কেঁপে উঠলো।
সে দ্রুত ফিরে সরে গেল, একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলল
“না, এখান না…”

তার চোখে স্পষ্ট ভয় দেখা যায় সে এখনো সে রাতের কথা মনে করে ভয় পাচ্ছে।
রুমে বৃষ্টি আর নিঃশব্দতার মাঝে সেই মুহূর্তটা যেন থমকে গেল।
ওয়াজফান মুচকি একটুখানি শয়তানি হাসি ছুঁড়ে দিয়ে ধীরে ধীরে পাশে থাকা চেয়ারে বসে পড়ল।
পা দুটো দুই দিকে ছড়িয়ে রেখে গভীর চোখে অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল—
আজও কি পালাতে চাও, আমার লিটল মনস্টার?
ঠিক আছে, চলো… আজও তোমায় একটা সুযোগ দিলাম। পালাও।
তুমি যত দূর পালাবে… তোমাকে ধরতে আমার ততটাই বেশি মজা লাগবে।
কিন্তু মনে রেখো…”

সে সামান্য ঝুঁকে সামনে এল, গলা আরও নিচু করে কণ্ঠে নরম অথচ ধারালো সুরে যোগ করল—
সোজাসুজি কিছু আমার পছন্দ না।
তুমি যত পালিয়ে বেড়াবে… আমি তার চেয়েও বেশি শক্ত হাতে তোমাকে ধরে ফেলব।
তারপর হঠাৎ ঘাড়টা ওপরের দিকে সামান্য ঘুরিয়ে এনে ঠোঁটে সেই বাঁকা, শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে দিল—
“Run, my little laddu… run.”
এক সেকেন্ড থেমে সে ফিসফিস করে বলল—
“If I catch you…”
বাকিটা আর বলল না।
শুধু চোখে অদ্ভুত এক আগুন নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রইল—
যেন খেলাটা শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
অর্ষা আজও দৌড় দিল।
পালানোর জন্য এবার শুধু ঘরের ভেতরে নয়—
পুরো বাড়ি থেকেই বেরিয়ে গেল।

সে জানে, এই চার দেওয়ালের মধ্যে থাকলে ওয়াজফান মুহূর্তের মধ্যে তাকে ধরে ফেলবে।
তাই নিঃশব্দে দরজা ঠেলে বেরিয়ে জঙ্গলের আঁধারে ঢুকে পড়ল।
ঝুম বৃষ্টি তাকে পুরো ভিজিয়ে দিচ্ছে, বাতাসে এখনো ভেজা মাটির গন্ধ।
পায়ের নিচে শুকনো ডাল ভাঙার শব্দ, কপালে লেগে থাকা চুল…
সে যতটা পারে দূরে সরে যেতে লাগল।

অন্যদিকে—
ওয়াজফান এখনো সেই চেয়ারে বসে আছে।
পা দুটো আলগা ছড়িয়ে, কনুই দুটো হাঁটুর ওপর রাখা।
চোখে তীব্র শিকারির দৃষ্টি আর ঠোঁটে সেই চেনা বাঁকা হাসি।
ধীরে, প্রায় ফিসফিস করে সে বলল—
আমার কিউট little kitty…
এক মুহূর্ত থেমে তার চোখে সোনালি আভা ফুটে উঠল।
তুমি ভুলে যাও কেন… আমি কোনো মানুষ নই।
সে মাথা সামান্য কাত করল, কণ্ঠে শীতল দৃঢ়তা,

তুমি যদি মাটির নিচেও লুকাও… তবুও আমি তোমাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসব।
তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল,
যেন খেলাটা এখন সত্যিই শুরু হতে যাচ্ছে।
ঝুম বৃষ্টির মধ্যে অর্ষা দৌড়ে দৌড়ে জঙ্গলের অনেক গভীরে চলে এসেছে।
তার জামা ভিজে শরীরের সঙ্গে লেগে আছে, ঠাণ্ডা পানি তাকে জর্জরিত করছে,
কিন্তু সে থামার সাহস পাচ্ছে না।
হালকা হাপানিও তাকে শিথিল করে ফেলছে।
সে ভেবে নেয়, ওয়াজফান এতদূর আর আসতে পারবে না, আজ সে নিরাপদ।
তবে মুহূর্তেই তার ভাবাটা ভুল প্রমাণিত হলো।
হঠাৎ পেছন ফিরে দেখতেই,

একটা গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াজফান—
দুহাত বুকে জড়ানো,
চোখে ঠাণ্ডা, গভীর আর একটুও নড়াচড়া নেই।
তার ঠোঁটে ঝলমলে সেই বাঁকা হাসি ফুটে আছে,
যা এক সময় অর্ষার মনে আতঙ্ক আর আকর্ষণের একসাথে মিশ্রণ জাগিয়েছিল।
বৃষ্টির ফোঁটা ওর শরীরের উপর ঝরছে,
চুলগুলো কপালের সঙ্গে লেগে আছে,
সেখানে থেকে টুপটুপ পানি ঝরছে নিচে।
পরনে কালো টি-শার্ট, ভিজে শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে,
নিচে কালো জিন্স—

Death or Alive part 26

সেই পোশাক, যা আজ অর্ষা নিজেই পরিয়েছিল ওয়াজফানের জন্য।
তার লম্বা মার্কা পোশাক বদলে,
যা যেন এই মুহূর্তের উত্তেজনার সাক্ষী।
অর্ষা আবার পালানোর জন্য পা বাড়াতে চাইল,
কিন্তু তার আগেই ওয়াজফান ছোবলের মতো সামনে এসে ছুড়ে দিলো তাকে।
তার চিলের মতো বুনো আঙুলগুলো জড়িয়ে ধরল অর্ষার কোমর।
ফিসফিস করে কণ্ঠে বলল—
তোমার সময় শেষ, আমার লিটল মনস্টার।

Death or Alive part 27 (2)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here