কালকুঠুরি পর্ব ১১

কালকুঠুরি পর্ব ১১
sumona khatun mollika

মাহবুব উদ্দিন বড্ড শক্ত চেষ্টা করছেন সামিরকে দায়ী করতে রুমাশা হারানোর দায়ে। রুমাশাকে তাহলে কে কিডন্যাপ করেছিল।
মাহবুব উদ্দিন কি একটা মনে করে মাহাকে কল করল,, কল রিসিভ করতে মাহবুব উদ্দিন বললেন,,,
– আপনি বড্ড চৌকষ। আমাকে একটু সাহায্য করবেন?
– আমি আপনাকে কি সাহায্য করব? আপনি নিজেইতো একজন পুলিশ।
– উপরমহল থেকে কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। সামনে নির্বাচন তাই তারা বেশি ঘাটতে চাচ্ছে না। কিন্তু আজ দুইদিন যাবত আমার বোন নিখোঁজ। যেদিন ওই ছেলেটা মারা গিয়েছিল,, সেদিন বাড়ি ফিরে দেখি রুমাশা নেই। বাড়ির সবাই কেও তাকে খুজে পাচ্ছে না।

– আপনার কাওকে সন্দেহ হয়,??
– আগে বলুন আপনি কোন দলের ভোটার?
– কোনোটারি না। আমি এবার ভোট দেবনা। কারণ আমার মনে হয়না ওরা কেও এই পদের যোগ্য।
– তাহলে বলছি,,, আমার প্রথম সন্দেহ সামির সিকান্দার ,, দ্বিতীয়ত মেয়ের সালার সিকান্দার। বা সাফিন সিকান্দার।
মাহা বেশ অবাক হয়! কিছু একটা চিন্তা করে বলে,,
– সব সন্দেহ কেন সামির সিকান্দার এর দিকে?
মাহবুব কাঠ গলায় বলে,,
– কারণ সেই একমাত্র ব্যাক্তি যে সবচে রেয়ার আইটেম। কোনো দলকেই নাকি ভোট দেয়না। আবার ছদ্মবেশ ধরে ঝামেলা লাগিয়ে দিলেও নাকি কেও টের পায়না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– কিছু মনে না করলে,, আপনার বাড়ি আসতে পারি? আপনার বাড়িতে? মুহিব ভাই সাথে যাবে।
– অবশ্যই , কেন নয়।
ঠিক ২০ মিনিটের মাঝে মুহিব আর মাহা পৌঁছে গেল মাহবুব উদ্দিন এর বাড়ির সামনে। মুহিব একবারো মানা করেনি। কারণ তাকে জানতে হবে মাহবুব উদ্দিন ঠিক কতটা এগিয়েছে! তাছাড়া এই কাজ যে সামির সিকান্দার এর এটাতো মুহিবের উপস্থিতিতেই ঘটেছিল।
মাহা মাহবুব উদ্দিন এর মাকে সালাম দিয়ে সোজা রুমাশার ঘরে চলে যায়। ৩ জনে খোজাখুজি করতেই মাহার হাতে সেই কাগজের টুকরাটা পরে। মুহিব চুপ করে শুধু দেখে।

মাহবুব বলে,,,
– এটার কথা তো আমাকে কখনোই বলেনি রুমাশা,, সুযোগ পায়নি হয়তো।
মাহা নিকাবের ভেতর থেকে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,,
– এটা সামির সিকান্দার এর লেখা কিনা সেটা আমি বের করব। তবে যেহেতু আমি কোনো এক্সপার্ট নই তাই আপনার উচিৎ বিষয়টি নিয়ে নিজে একটু মাথা ঘামানো৷ আমি যতদূর পারি আপনাকে সাহায্য করব।
ফেরত যাওয়ার আগে মাহবুব উদ্দিন এর মা মাহাকে আলাদা ঘরে ডেকে জোড় করে তার চেহারা দেখলেন। মাহা চলে যাওয়ার পর তিনি মাহবুবকে বললেন,,
-সব ঠিকঠাক হলে, এই মেয়ে টার বাড়িতে তোর জন্য সমন্ধ পাঠাবো। জানিস দেখতে অনেক সুন্দর।

মাহবুব রসিকতা করে বলল,
– তোমার মেয়ে নিখোঁজ। হাসপাতাল থেকে গায়েব সেটা নিয়ে টেনশন করলে ভালো হয়।
মুহিব বাড়ি পর্যন্ত মাহাকে এগিয়ে দিয়ে সোজা পাড়ার মোড়ে গিয়ে দাড়ালো। সামির ক্লাবের ভেতরেই ছিল,,,
মুহিব সোজা সামিরের কাছে গিয়ে বলল,
– ভাই,,, এই পুলিশ মাহবুব সব কিছুতেই মাহাকে ডেকে নিয়ে যায়। সেদির ক্যাম্পাসেও ডেকেছিল। আজ বাড়িতেও,, তাছাড়া মাহা একটা কাগজ খুজে পেয়েছে। ওইযে,, কাশেমের লেখা কাগজটা সম্ভবত। যেটায় হুমকির কথা লিখেছেন।

সামির বাহাতে কপাল চুলকে গাড় শ্বাস ফেলে বলল,,,
– তোর সাথে সোডিয়াম ক্লোরাইড এর বিয়া না হওয়াই উচিৎ। ঘরের মাল সামলাতে পারোনা, বিদেশি মারাও!
– কি আর বলব ভাই,,, মাহার চেহারা দেখে ওই পুলিশ মা ফিদা।
সমির বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,,
– লে মারা,,,,, পৃথিবী খাওয়া গান্জায় থাকি,,, নাকি রে ভাই,,, কিন্তু দিবা তো সবসময় থোবড়া ঢেকে রাখে।
– ওই চেহারা দেখার লোভে জোর করে জুস খেতে দিয়েছিল,, মাহবুব উদ্দিন দেখেনি অবশ্য!
– আরেব বাস! এতো ওইযে ইয়ের মতো হয়ে গেল,, কি জানি বাঙ্গি মার্কা গানটার নাম,,,
বলেই সামির লুঙ্গি ঝেড়ে নিজেই রসিকতার সুরে বানিয়ে বানিয়ে বলতে লাগল,,,

– চোখেতে তেজ হাতে, কারেন্টের ঘড়ি!
মুখ তার রাইফেল, যেন বিষের ছুড়ি!
ছোট্ট একটা নল দিয়া খায় যখন জুস,
বেডা-বেডি কারোরি আর রয়না যে হুশশ,,
গুসসা কইরা যহন বেডি আমার দিকে চায়
ফুরুৎ কইরা বাঙ্গি ক্ষেতে মূলা খুইজা পাই,,
এহন বুঝি মহিলা কেন দিবার প্রেমে পরেচে!
বাঙ্গির প্রেমে পরেচে!

হায় বুরকা পরা মে পাগল করেচে,
আরে বেডিও এহন দিবার প্রেমে পরেচে।
এটা বুরকা পরা মে পাগল করেচে!! __

কাশেম ভুল শুদরে দেয়ার মতো করে বলল,
– নল দিয়া খায় নাই ভাই, নিকাব তুইলা খাইছে।
‎সামির লুঙ্গি ছেড়ে চেযারে বসে বলল,,
– আরে ওই হইলো,, খাইছে তো নাকি!

মুহিবের গাড়ে হাত দিয়ে সামির বুঝ দেওয়া স্বরে বলল,,
– শোন ভাই মধু থাকলে মৌমাছি এমনিতেই আসবে,, সেখানে তুই মৌচাক নিয়ে ঘুরে বেরাস। সহমর্মিতা না দেখিয়ে, একটু টাইট দে গা।

মুহিব মাথা নেড়ে বলল,
– কি লাভ ভাই বিয়ে তো হবে অন্য জনের সাথে..
– গ্যারেন্টি কি যে হবেই হবে!!
– মানে?
– কিছুনা । তাই বলছি এমনোতো হতে পারে বিয়ের আগ মুহুর্তে মরে গেল ।
– ওহ!
– যা বাড়ি যা,,

সামির সোজা কাশেমকে ডেকে মাথায় চাটি মেরে বলল,,
– বলদের বাচ্চা! তোকে বলেছিলাম লেখা যেন বোঝা না যায়?
– ভাই আমিতো থেড়াবেড়া করেই লিখছিলাম।
– কেও বুঝবোনাতো??
– না ভাই।

সামির সেখান থেকে বেরিয়ে বাড়ি চলে যায়। রাত হয়েছে। ইনায়া খাবার টেবিলে বসে বসে ঘুমিয়ে গেছে। সামির গিয়ে টেবিল টোকা মারতেই হুড়মুড় করে উঠে পরল ইনায়া।
সামির কাটখোট্টা গলায় বলল,,
– কি ব্যাপার? এখনো ঘুমোসনি কেন? এখানে কি? ভুতেদের সাথে মিড নাইট ডেটিং করছিস নাকি??
– না মানে ওই,,, ভাবি, মা, সবাই ঘুমিয়ে গেছে আর আজতো বাড়িতে খাসির মাংস রেধেছে,, তাই আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

সামির চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,,
– বিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিস নাকি? সমস্যা নাই। তুইতো সব কাম করতে পারস। ভালো জায়গায় বিয়া হইব। ধুমসে তোর বিয়া দিমু।
ইনায়া সামান্য মুচকি হাসলো। তারপর জিজ্ঞেস করল,,
– আচ্ছা ভাই,, আপনি মাহাদিবা ফারনাজ মাহা নামের কাওকে চিনেন?

সামির কিছু একটা ভেবে বলল,,
– না, কেন বলত?
– ওই আজ যখন কলেজ থেকে ফিরছিলাম এই নামের একটা আপু এসে বলল,, সে নাকি আপনার পরিচিত। একি ডিপার্টমেন্ট এ পড়েন। তাই আপনার একটা খাতা নিতে এসেছিল।
– কিসের খাতা?
– বাড়িতে তো আমি আর ভাবি বাদে কেও ছিলনা। মা আর সিভান পার্কে গেছিল। আর আপনার
বই খাতাতো আমি নাড়িনা। তাকে ভেতরে ঢুকতে দিয়েছিলাম। সে নিজে থেকে একটা খাতা নিয়ে গেছে।

– চেহারা দেখেছিস?
– আমি কি বোকা নাকি চেহারা দেখবনা?
– কেমন দেখতে মনে আছে??
-সত্যি বলতে,,, আপনার যে এতগুলো বান্ধবী ছিল সবচে সেরা দেখতে মেয়েটা। হলপ করে বলতে পারি,, ভিষণ সুন্দর। কেমন অদ্ভুত মায়াবী। চোখজোড়া বড্ড সুন্দর। সমুদ্রের মতো গভীর। ঠোঁট জোড়া যেন ফুটন্ত রক্ত জবা, আমার চেয়েও লম্বা।
– আর তোর চেয়ে ধুর্ত আর শিক্ষিত।

-আপনার থেকেও ট্যালেন্ট?
– সম্ভবত।
– আপনি চেহারা দেখেছেন?
– এক ঝলক।
ইনায়া আর কিছু বললনা কেমন নিজেরি অসস্তি হতে লাগল,, কেন যে মাহাদিবাকে এভাবে বর্ণনা করল নিজেও বুঝতে পারছেনা।
সামির ভ্রু কুচকে তাকে বলল,,

কালকুঠুরি পর্ব ১০

– বাইরে কম ঘোরাফেরা করবি। কিছুদিনের মধ্যে ভোট। ঝয় ঝামেলা হতে পারে। পরশুদিন এর কোনো প্রস্তুতি নিয়েছিস?
– হ্যা চলছে।
সামির চুপচাপ খেয়ে দেয়ে ওপরে চলে গেল।
মাহবুব রুমাশার চিন্তায় বেহাল। তারোপর সামনে নির্বাচন। এই মুহূর্তে তার ঠিক কি করা উচিৎ সেটা নিয়ে দ্বিধায ভুগছে সে৷

কালকুঠুরি পর্ব ১২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here