তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৮
ভূমিকা তালুকদার
রাতে প্যারিস শহরের উপর কালচে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে।দূরে কোথাও ভাঙা ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলো হালকা কুয়াশার ভেতর দুলে উঠছে, যেন কারও শ্বাসের ছন্দে নড়ছে পুরো রাতটা।শ্যাডো এম্পায়ার এর উপরতলার করিডর দিয়ে পূর্ব পাশের শেষের বেড রুমটায় নিস্তেজ দেহটা নিয়ে পড়ে আছে নাদিয়া,টানা ক’দিন যাবত হসপিটালে ছিলো লিয়ানার পাশে জেগে, না খেয়ে, প্রায় ঘুমহীন অবস্থায়।লিয়ানার জোরাজুরিতে এম্পায়ার এ আসে।নাদিয়া মধ্যে একরকম অদ্ভুত অস্বস্তি।ছোটোবেলার থেকে হাসপাতালের antiseptic গন্ধ সহ্য হতো না।এম্পায়ার এ ফিরে এসেই ড্রয়ার খুলে তিনটা হাই পাওয়ারের ঘুমের ওষুধ বের করে খেয়ে শুয়ে পড়েছে।নিশ্চিন্তে ঘুম হবে তা ভেবে।তবে ঔষধে তেমন কোনো কাজই হলো না।পুরোপুরি গভীরঘুমে মগ্ন হতে পারলো না।
দেহটা হালকা হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে।এসির বাতাসটা যেনো পুরো শরীরকে এখনি জমিয়ে দিবে।গলাটা যেনো শুকিয়ে কাঠ হওয়ার উপক্রম।পানির তৃষ্ণায় ক্লান্তি সুরে,মিসেস হানকে কয়েকবার ডাক দিলো।তবে তার কণ্ঠ নিচতলা অব্দি পৌঁছালো না।রুমটা পুরোপুরি অন্ধকার। বাহিরে ছিমছাম আলো পর্দা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলেও তা খুবুই নগণ্ণ। বেলকনি থেকে আগত এক অদ্ভুত ঠান্ডা হাওয়ায় নাদিয়ার শরীরের কালো নাইটির উপরের কটিটা হালকা সরে যেতেই বক্ষের পাশটা উন্মু*ক্ত করে ফেলে।চুলগুলো এলোমেলো ভাবে মুখের উপর এসে পড়ে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বেলকনির পর্দার অপরপ্রান্তে একটা ছায়ামূর্তি ভাসমান হয়।বেশ্ লম্বা সুঠামদেহী।ছায়ামূর্তিটা বেলকনি টপকে এসে পর্দা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে।কুচকুচা কালো ওভারকোটটা খুলে শব্দহীন পাঁয়ে বিছানার কাছে আসতে থাকে।হাতে একটা ধারালো ছুড়ি, যার গায়ে শুঁকনো র*ক্ত লেপ্টে আছে।ছায়ামূর্তিটার পায়ের কোনো আওয়াজ নেই সে বিছানার কাছে এসে থামে। তারপর নিজের পুরো সুঠাম দেহ ছেড়ে দেয় নাদিয়ার উপর। শরীরে উপর কারোর স্পর্শ পেতেই নাদিয়া চোখ মেলতে চায়,কিন্তু পারে না।চোখ খোলা আর বন্ধ দুটোর মাঝখানে সে বন্দি হয়ে যায়।নাদিয়া বুঝে পারে না, এটা কি তার হ্যালুসিনেশন নাকি।বুকের ভেতর হার্টবিট তীব্র হয়ে উঠছে, যেন কোনো নিষিদ্ধ স্পন্দন।
ছায়ামূর্তিটার ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে নাদিয়ার কপাল বেয়ে গলদেশে নামে।অর্ধোখোলা ঝাপসা চোখে ঝুঁকে থাকা পুরুষটার দিকে তাকাতেই, পুরুষটা তার মুখের উপর থেকে কালো মাস্কটা সরিয়ে ফেলে।এ প্রথম মাস্ক ম্যান কোনো রমণীর সামনে নিজের চেহারা উন্মুক্ত করলো, যাকে আজ অব্দি কেউ দেখেনি।নামটাও জানা নেই।তবে নাদিয়া দৃষ্টিতে পুরুষটা মুখটা কোনোভাবেই স্পষ্ট হলো না।আর না পারলো মুখ দিয়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করতে।বিছানার চাদরটা খামছে ধরে অপরহাতে বালিশের পাশে থাকা লাইসেন্সযুক্ত বন্দুকটা কাঁপা হাতে ধরার আগেই,মাস্কম্যান নিজের এক হাত দিয়েই নাদিয়া দু’হাতে চেপে ধরে ফেলে। নাদিয়ার মাথার পেছনদিকে হাত নিয়ে শক্ত করে চুল টেনে নিজের উন্মুক্ত ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়।অশ্চর্যভাবে কেমন গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“নাও কিস মি, যাস্ট কিস মি।আই ওয়ান্’না টেস্ট ইউ।র*ক্তের খেলা শুধু চোখের শান্তি দেহের ক্ষুধা নিবারণ করে না।”
লোকটার শরীর থেকে আগত পুরুষালী গন্ধে নাদিয়ার মনে কেমন যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।বিভর হয়ে লোকটার চুল খামচে ধরে ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।মনের মধ্যে কেমন উত্তাল সমুদ্রর ঢেউ বয়ে যেতে থাকে।এত নেশালো হয় কি করে একটা পুরুষালী গন্ধ যা তার নারী সত্তাকে এভাবে জাগিয়ে দিলো।বুকটা ভারী হয়ে উঠতেই।লোকটা তাকে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।এক ধাক্কায় তাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে,ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে তা ধীরে ধীরে নিচে নামাতে থাকে।নাদিয়ার পেট উন্মুক্ত করে, একটা পৈশাচিক হাসির রেখা টানে,তার চোখের শান্তি দরকার,সাইকো সত্তা জেগে উঠতেই ছুড়িটা দিয়ে নিজের হাত কে*টে ফেলে যেনো তার মধ্যে ব্যথার কোনো অনুভুতি কিছু নেই।হাত থেকে গরম র*ক্ত চুইয়ে পড়তে থাকে নাদিয়ার পেটে।যার স্পর্শে তার পুরো শরীরে শিহরিত হতে থাকে।লোকটা নাদিয়ার উন্মুক্ত উদরে মুখ ডুবিয়ে কা*মড়িয়ে ক্ষত করতে থাকে।নাদিয়াকে ছটপট করতে দেখে ঘাড় কাত করে গুনগুনিয়ে উঠে,
you gonna call me papi,
I will make your body happy.
Everytime that you call me.
you know that i will take care of u.
You call me papi.
নাদিয়া পুরুষটার প্রতি অজানা টানে আকৃষ্ট হয়ে মত্ত হলো তার মাঝে। দেহের সমস্ত ভার ছেড় দিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইলো মখমলে বিছানায়।
জায়ানের হুঁশ ফিরার পরপরই লিয়ানার তুলতুলে নরম গালে সপাটে দশটা থাপ্পড় মেরে নাজেহাল অবস্থা করে দিয়েছে।নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরও কয়টা দেয়ার আগে নিজের ভেতরের জাগ্রতো দানবীয় সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে, হসপিটালের আইসিইউর রুমের সব কিছু তছনছ করে গুড়িয়ে দিয়েছে।নার্স রা কেউ ভয়ে এক পাঁ ও বাড়ায়নি এদিকে।কক্ষে শুধু সে আর লিয়ানা। মেয়েটা সেই কখন থেকে ফ্লোরে বসে কেঁদেই চলেছে।দুধ-সাদা মুখটা কেমন ফেঁকাসে হয়ে নীল বর্ণ ধারণ করেছে।জায়ান হিংস্র দানবের মতো হাতের গ্লাসটা দেয়ালে ছুড়ে মারে।গ্লাস ভাঙ্গার সশব্দে লিয়ানা এক পাঁ পিছিয়ে যায়।কেন এমন করছে এই সাইকো লোকটা তা তার বোধগম্যের নিকটে না।
একটা মানুষ নিজের বউয়ের সাথে এমন আচরণ করতে পারে বলে তার মনে হয়না।খুশিতে নিজের ইচ্ছেতে আরও আদর করে চুমু খেলো,কিন্তুু তার বিনিময়ে জায়ান কিনা তাকে মারলো।শরীরের ভিতর রক্তগুলো টগবগিয়ে উঠছিলো।ভয়ে চোখ তুলে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারলো না।এদিকে জায়ানের বা হাতের স্যালাইন এর নল টা টান দিয়ে ছিড়ে ফেলার কারণে ফিনকি দিয়ে তা থেকে ব্লিডিং হতে থাকে,অথচ মুখাবয়ে যন্ত্রণার ছিটেফোঁটাও নেই।যে কেউ দেখলে ভাববে একি অনুভুতিশূন্য যান্ত্রিক মানব নাকি!জায়ান চোয়াল শক্ত করে লিয়ানার দুকে এগিয়ে গিয়েই তাকে ফ্লোর থেকে তুলো দাঁড় করিয়ে দেয়।জায়ান লিয়ানার কনুই চেপে ধরতেই লিয়ানার হাড়গুলো যেনো ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম। বুনো সিংহের ন্যায় থাবা ফেলে লিয়ানাকে ঠেলে দেয় ঠান্ডা দেয়ালে।লিয়ানা অশ্রুশীক্ত লালিমা চোখজোড়া সরিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।জায়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে লিয়ানার গাল চেপে ধরে গর্জে উঠে,
“ফা*কিং ব্লাডি উইমেন।তুই বেঁচে আছিস তার মানে তুই আমার কথার অবাধ্য হ’য়েছিস।অ্যাম আই রাইট? ”
লিয়ানা হরিণের ন্যায় জায়ানের দিকে তাকায়। কথার অবাধ্য হওয়ার কারণে এতো কাহিনী।এমন হিংস্রতা।অথচ সে যদি গাড়িতে থাকতো আজ হয়তো-বা বেঁচে ফিরতে পারতো না।জায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়তো না।তখন কাকে মারতো, কার উপর চিল্লাতো।লিয়ানা কোনো প্রতিউত্তরই করলো না।অভিমান মিশ্রিত ক্ষোভ নিয়ে চুপ থাকলো।লিয়ানার থেকে কোনো জবাব না পেয়ে জায়ানের পাঁয়ের রক্ত যেনো তড়তড় করে সব মাথায় গিয়ে জমলো।দাঁতে দাঁত পিষে দেয়ালে ঘুষি মেরে হাত থেতলিয়ে দিলো।লিয়ানা শুধু নিঃশব্দে কাঁদছে। যেনো চোখের পলকে যেনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদাটাও ভুলে গিয়েছে।নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে।একটুও নড়লো না।স্থির দাঁড়িয়ে আছে।জায়ান উদ্ভট ভাবে ঠোঁট গোল করে লিয়ানার মুখে ফুঁ দিয়ে বলে উঠে,
“স্টপ ইউর ফা*কিং ক্রাইং ইডিয়েট। কথার অবাধ্য হতে নিষেধ করিনি?কোথায় গিয়েছিলি?আমার পারমিশন নিয়েছিলি?”
লিয়ানা দৃষ্টি না ফেলেই উত্তুর দেয়।
“আপনি না আসলেই একটা মেন্টালি সিক্ পার’সন. আপনার কি খুশি হওয়ার কথা না? তা না করে কোন জাতের আচরণ এসব আপনার? আমি বেঁচে আছি দেখে মনে হয় আপনি মুটেও খুশি হতে পারেন নি!”
“না পারি নি,ইউ আর রাইট,বি কউ’জ তুই আমার অবাধ্য হ’য়েছিস।মরে গেলেও বলতে পারতাম আমার বউ ভালোবেসে শহিদ হ’য়েছে। ”
জায়ানের এমন তিক্ত কথাতে যতটা না আঘাত পাচ্ছে লিয়ানা এর চেয়ে মাথায় বজ্রপাত পড়লেও শান্তি লাগতো তার।জায়ানকে যত দেখছে ততই অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে।একটা গিরগিটি প্রাণীরও এতো রঙ নেই যতটা জায়ানের মধ্যে বিরাজ করে।লিয়ানা বিক্ষোভ করে বলে উঠে,
“আপনি একটা গিরগিটি, একটা মন্সটার, একটা দানব।”
“তুই ও শিকার করে নে তুই যে একটা ছলনাময়ী নারী।হৃদয় পুড়ানো মহা মানবী।আমার ধ্বংসের চাবিকাঠি।আমার নিষিদ্ধযাত্রার মোহবিষ।আমার জীবনে কেনো এলি বল,আমায় ধ্বংস করতে?কেন এতো দূর্বল করে দিয়েছিস।”
লিয়ানা এবার কটাক্ষ করলো।
“এতোই যেহেতু বিষ মনে হয় মেরে দিন না।নিজ হাতে আপদ বিদেয় করে দিন।সমস্তপ্রেমযাত্রা এখানেই চুকিয়ে দিন। ইউ ডিসার্ভ বেটার।”
জায়ান মূহুর্তেই লিয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে উচ্চশব্দে ভয়ানক হাসিতে ফেটে পড়ে।ফ্লোরে থুথু ছুড়ে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে আরেকটা চড় বসিয়ে দেয় লিয়ানার বা গালে।ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে লিয়ানা।
“আহ!”
জায়ান শক্ত হাতে লিয়ানার দু’হাতে এক হাতে চেপে ধরে তাচ্ছিল্যে করে বলে,
“এই বান্দি! তোর সাহস এর প্রসংশা না করে পারলাম না।মরার শখ মেরে দিচ্ছি, তুই পরনারীর নাম মুখে আনলি কেনো? তোর জিভটা আমি টেনে ছিড়ে দিবো”
“শুনে রাখ, আই অ্যাম নট ফাঁ*কিং ইন্টারেস্টে’ড। দুনিয়ার সব নারী যদি আমার সামনে ন’গ্ন হয়েও শুয়ে থাকে তাতেও অ্যাম নট ইন্টারেস্টে’ড।ড্যাময়ে’ইট।”
জায়ান বাঁকা হেসে লিয়ানার চুলের কালো ফিতাটা খোলে দু’হাত বেঁধে দেয়।ঠোঁট দিয়ে জিভ ভিজিয়ে লিয়ানার কানে উষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয়।লিয়ানা ছটপট করে সরতে চায়।জায়ানের শরীর থেকে মিন্ট পারফিউম এর একটা ঝাঁঝালো গন্ধ লিয়ানার রন্দ্রে প্রবেশ করতেই দেহে হালকা কাঁপন সৃষ্টি হয়।
“এখন যদি শাস্তি সরূপ তোকে খেয়ে নি কেমন লাগবে?”
জায়ান লিয়ানার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পুরো শরীর স্কেন করতে থাকে।লিয়ানার থুতনির মাঝবরাবর ধরে ভ্রু কুচকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“এসব কি পড়েছিস।এসব শুধু আমার জন্যে।স্লিভ’লেস টপ পড়ার সাহস কই পেলি।পর পুরুষদের নিজের শরীর দেখাতে খুব মজা লাগে তাই না।তুই কি চাস তোর জন্যে মানুষজন অন্ধ হয়ে যাক।”
লিয়ানা কোনো প্রতিউত্তুর না করে জায়ানের সিংহ থাবা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যস্থ।এতোক্ষণ শীত লাগলেও এবার ঘেমে যাচ্ছে মেয়েটা।জায়ান লিয়ানার ললাটে মুখডুবিয়ে দেয়।লিয়ানা খাচা বন্ধি পাখির ন্যায় মুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়।বিপরীতে আজানা আক্ষাঙ্খায় ডুবে যেতে থাকে।পুরুষালীর তিব্র ঝাঁঝালো গন্ধে মন ব্যাকুল করে দিতে থাকে।জায়ান ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে লিয়ানার ইনা’র এ কামুড় বসিয়ে খুলতে নিলেই।লিয়ানা নিস্তেজ হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। লিয়ানার চোখে অশ্রু দেখে জায়ান লিয়ানার হাতের বাঁধন খুলে দেয়।খুলতেই লিয়ানা জায়ানকে এক ধাক্কায় সরিয়ে কক্ষের দরজা খুলে বাহিরে চলে যায়।জায়ান না থামিয়ে কপাল ছুঁয়া চুলগুলো বেক ব্রাশ করে ফিসফিস করে,
“তোকে পড়ে দেখে নিবো হুয়া’ইট রোজ।নাও আই হ্যাভ অ্যা ইম্পর্ট্যান্ট ওয়ার্ক”
শ্যাডো এম্পায়ার এর বিশাল কালো ভবনটা তখন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে এক নিঃশব্দ দৈত্যের মতো।তার কাচের দেয়ালে চাঁদের আলো পড়ে এক অচেনা নীল আভা তৈরি করেছে।
বাইরে পাহারার লাইটগুলো কেবলমাত্র মেঝেতে আলো ফেলছে। ঠিক তখনই, দূরের রাস্তায় এক ঝলক হেডলাইট দেখা যায়।একটা কালো জিপ্ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে, গেটের সামনে থামে।ইঞ্জিনের গর্জন থামার সঙ্গে সঙ্গে যেন পুরো রাত নিঃশ্বাস ফেলে।গাড়ির দরজা খুলে প্রথমে নামে এলেক্স কালো leather jacket পায়ে ভারি বুট, মুখে সেই পরিচিত ঠান্ডা ভাব।কিন্তুু তার চোখ দুটো তীক্ষ্ণ।তারপর নামে মেরিন।এলেক্স মেরিনকে নিয়ে ফ্রান্সে নিয়ে এসেছে।শ্যাডো এম্পায়ের এর ভেতর জায়ানদের ছাড়া বাহিরের মানুষ নট এলাউ।আর এতো হাই সিকিউরিটি ভেদ করে প্রবেশও করতে পারবে না।এখন কলাকৌশল এ এলেক্স মেরিনকে নিয়ে চলে আসে।আজকের রাতটা এখানে রেখে পড়ে একটা ব্যবস্থা করে দিবে।এমনিতে মেয়েটা ভয়ে কুঁকড়ে আছে কথাও বের হচ্ছে না।সারা রাস্তা মুখে তালা মেরে বসে ছিলো।কি ভেবে যেনো একটা অচেনা মেয়ের প্রতি মায়া হলো তার যে সোজা শ্যাডো এম্পায়ার এ নিয়ে চলে এসেছে।এলেক্স মেরিনের হাত ধরে সামনে এগুতে নিলে মেয়েটা এগিয়ে যেতে না চাইলে।এলেক্স বুঝতে পেরে হাত ছেড়ে দেয়।
ভিতর গুটগুটে অন্ধকার এলেক্স চুপিচুপি মেরিনকে নিয়ে প্রবেশ করে। এলেক্স মেরিনের দিকে তাকিয়ে মুখে আঙুল ঠেকিয়ে আওয়াজ করতে নিষেধ করে।মেরিন মাথা নাড়ে।সে না চাইতেও অপরিচিত লোকের সাথে তার বাড়িতে চলে এসেছে।মনের মধ্যে হাজার টা ভয় উঁকি দিলেও যে সে নিরুপায়।দুজনে চুপিচুপি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে যাবে আর তখনি পিছন থেকে মিসেস হান ডেকে উঠে।
“এলেক্স স্যার, কখন এলেন।”
মিসেস হানের গলার আওয়াজ পেতেই এলেক্স থ মেরে তড়িঘড়ি করে মিসেস হানের মুখ চেপে ধরলেন।
“কাম ডাউন। মিসেস হান।প্লিজ। ”
মিসেস হান অবাক হয়ে মেরিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওনি এক প্রকার আশ্চর্য বনে গেলেন।এলেক্সতো আর যাই করুক এই ম্যানশনে মেয়ে নিয়ে আসে না।কে এই মেয়ে।গার্লফ্যান্ড নাকি।তিনি বিষ্ময় হয়ে জিজ্ঞেস করেন।
“আপনি অচেনা কাউকে ম্যানশনে নিয়ে এসেছেন জায়ান স্যার জানতে পারলে কিন্তুু রাগ করবেন।আর এই মেয়ে কে”
মিসেস হানকে দেখে মেরিন সস্থির শাস ফেলবে নাকি ভয় পাবে বুঝে উঠতে পারলো না।ভয়ে দু হাত কচলাতে লাগলো।এলেক্স একবার মেরিনের দিকে দৃষ্টি ফেলে আবার হানের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চাইলো,
“আপনি যা ভাবছেন তেমন কিছু না হান।মেয়েটা বিপদে পড়েছিলো দ্যা’টস হুয়াই।আজকের রাতটাই শুধু। আপনি একটু হেল্প করুন না”
মিসেস হান এলেক্সকে আর কিছু বললেন না।মেয়েটাকে দেখে তারও খুব মায়া হলো।মুখটা কেমন ফেকাসে হয়ে আছে।জামা কাপড় ও ছেড়া।
“হুম বলুন স্যার”
“আজকের রাতটা আপনি ওকে আপনার রুমে আপনার সাথে রাখুন।”
মিসেস হান মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।এলেক্স মেরিনকে ইশারা করে মিসেস হানের সাথে যেতে বলে।মিসেস হানের পিছু পিছু মেরিন যেতে থাকে।পিছন থেকে এলেক্স বলে উঠে,
“মিসেস হান টে’ক কে’য়ার হার।”
মিসেস হান মেরিনকে নিজের রুমে নিয়ে আসে। মেরিন মিসেস হানের ছোট রুমটাতে চোখ বুলাতে থাকে।নিচতলার কিচেনের পাশের রুমটাই মিসেস হানের।মেরিনকে দেখে বড্ড ক্লান্ত দেখে তিনি জিজ্ঞেস করেন।
“তোমার কি ক্ষুধা পেয়েছে? খাবার এনে দি।”
মেরিন কোনো জবাব দিলো না।তার তো ক্ষিধে পেয়েছে। কিন্তুু সেটা কিভাবে বলবে।মেরিনকে সংকুচণে ভুগতে দেখে মিসেস হান মৃদু হেসে কিচেনে গিয়ে তার জন্যে খাবার নিয়ে আসে।মেয়েটা হেংলা পাতলা নিজের পড়নের জামার তার গায়ে ফিট হবে কিনা জানেনা।তারপরও একটা জামা এনে মেরিনকে দিয়ে বলেন,
“যাও। ড্রেসটা পাল্টিয়ে এসে খাবারটা খেয়ে নাও কেমন।ভয় পাবার কোনো কারণ নেই তুমি সে’ইফ জোনেই আছো এখন।”
মেরিন মাথা নেড়ে মিসেস হান থেকে জামাটা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে হেঁটে যায়।নিজের করা ভুলের কারণে কেঁদে উঠে।
রাতের শেষ প্রহরে জায়ান লিয়ানাকে প্যালেসে রেখে চলে আসে প্যারিসের বাহিরে।চারপাশে গুটগুটে অন্ধকার। কানে এয়ারপি’স অন করে নিয়ে ছিমছাম একটা গুদাম ঘরে প্রবেশ করে। গুদাম ঘরের বাহিরে মার্কো ব্ল্যাক সুটে দাঁড়িয়ে আছে।তার কানেও এয়ার’পিস ভিতর থেকে জায়ানের সাথে কানেক্টে’ড করা।জায়ান এক হাতে শার্টের হাতা গুটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। আরেক হাতে লোহার রড।লোহার রডটা মাটিতে স্পর্শ করে যাচ্ছে আর তা প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে।গুদামটা প্রায় বিশাল বড়।বন্ধ থাকার কারণে মাকড়শার জাল এ ভরে গিয়েছে চারপাশ। জায়ান রাগে গজগজ করতে করতে সামনে এগুতে থাকে। তার হিংস্রতা এতক্ষণে তিব্র আকার ধারণ করেছে।
চেয়ারের সাথে বাঁধা একটা আধম’রা লোক।যাকে ইতিমধ্যে মার্কো ইচ্ছেমতো পিটিয়ে গিয়েছে। মারতে মারতে মৃত্যুর দৌড়কোঠায় এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে।লোকটার নাক মুখ দিয়ে ফিনকি দিয়ে র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে।জায়ানে সামনে এসেই লোহার রড দিয়ে লোকটার মাথায় আঘাত করে, জায়ান শান্তি পেলো না মোটেও না।হাতের রড টা ছুঁড়ে ফেলে নিজের প্যান্টের বেল্ট খুললো।খুলে সপাট সপাট ইচ্ছেমতো কয়েক ঘা বেল্টের আঘাত করতেই, লোকটার চা*মড়া ছিড়ে বেল্টে লেগে গেলো।শিকারির কাছ থেকে বাঁচার প্রাণ ভিক্ষা চাইতে থাকলো।পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।জায়ান লোকটার চুলের মুঠি চেপে ধরে চোখের মণির মধ্যে আঙুল চেপে ধরতেই লোকটা অসহ্য যন্ত্রনায় মৃত্যু ভিক্ষা চাইলো।তবে জায়ান এতো সহজে তার শত্রুকে মৃত্যু দিয়ে মুক্ত করে না।আইনের লোক হয়েও যে সে নিজেই আইন এর পরোয়া করে না তা তার এমন দানবীয় আচরণে ফুটে উঠেছে। নিজের শত্রুকে নিজের হাতে শাস্তি দেয়া তার পুরোনো রেকর্ড। তবে তা সম্পুর্ন সুক্ষ হাতে।নো প্রোভ নো এভি’ডিয়েন্স।
কেথেরিন যে তার রেসিং কারে টাইমিং বোম ফিট করে রেখেছে তা মার্কো ঠিকি বের করে ফেলেছে।তবে ভাগ্য ক্রমে জায়ান টাইমের আগেই রেস জিতে যায়।আর বেঁচে যায়।কেথেরিন দক্ষ আর প্রেফেশনাল রেসার হওয়ার সত্তেও জায়ানের কারণে তার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জায়ানের কারণে ইন্টারন্যাশনালি তাকে নেয়া হয়নি এই ক্ষোভ থেকেই জায়ানকে মারা প্রি প্লা’ন সাজিয়ে ব্যর্থ হলো।
জায়ান কেথেরিনকে মৃত্যু থেকেও ভয়ানক যন্ত্রণা দিতে তার হাতের আঙুলের নোখ গুলো চাকু দিয়ে উপরে ফেলতে থাকে।কেথেরিন প্রাণপনে আর্তনাদ করতে থাকে তাকে যেনো গুলি করে মেরে ফেলে।জায়ান ঠোঁটের কোণে পৈশাচিক হাসির রেখা টেনে,কেথেরিনের নাক বরাবর এক ঘুষি মারে।তিব্র ঘুষির আঘাতে কেথেরিনের চোয়ালের হাড় মটমট করে ভেঙ্গে যায়। চুলের মুঠো ধরে জায়ান গর্জে উঠে,
“তুই জানিস।ঔ গাড়িতে আমার হোয়াইট রোজ ছিলো। আমার বউ।মাই ওয়াইফ।তোর এই অপকর্মের ফলে আমার বউ মরে যেতে পারতো।”
তার জন্যে আমি তোর মতো জানো’য়ারদের জেন্ত মাটি চাপা দিয়ে দিতে পারি।”
“এই শো’য়র এর বাচ্চা,মরার আগে একটা কথা যেনে রাখ।আই লাভ হার।সি ইজ মাই ওয়াল্ড।এন্ড আই ক্যান ডো এনিথিং ফর মাই ওয়ার্ল্ড। ”
কেথেরিনের মুখ দিয়ে লা*লামিশ্রিতো র*ক্ত বেরিয়ে আসতেই সে শেষ হাসি হেসে নিলো।
“ইউ আর অ্যা সাইকোপ্যাথ ম্যান, ইউ আর অ্যা অ্যাস’হোল। ওয়ান ডে ইউর লাভ ডিস্ট্র্রোয় ইউ।”
বাক্যে শেষ করার পরই কেথেরিন জায়ানের প্যান্ট থেকে বুন্দুক নিয়ে মুখে মধ্যে প্রবেশ করিয়ে গুলি করে দেয়।যাকে বলে প্রান বাঁচাতে আ*ত্মাহত্যা
(Die for Alive)
কেথেরিনকে মরতে দেখে জায়ান এর রক্ত টগবগিয়ে উঠে।এ মরতে পারে না।এতে সহজে না।জায়ান ছটপট করতে করতে কেথেরিনকে চোখ খুলতে বলে,
“এই তুই মরলি কেনো।তোকে আমি মারবো।ওহহহ শিট।ফা’ক”
জায়ানের গর্জনে মার্কো ভিতরে প্রবেশ করে। জায়ানকে শান্ত করে।কেথেরিনকে টেনেহিছড়ে নিয়ে গিয়ে তার দেহটা মাটি চাপা দিয়ে দেয়।
আর কিছুক্ষণ পর ভোরের আলো ফুটবে, জায়ানের সাদা শার্ট পুরো রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে ।ফোনে নটিফিকেশন দেখে বাংলাদেশে এইচএসসি রেজাল্ট পাবলিশ হয়েগিয়েছে একদিন আগেই।তার বউ তো এবারই এক্সাম দিলো।রেজিষ্ট্রেশন রোল নাম্বার দিয়ে বের করে নেয়।লিয়ানা সব সাবজেক্টে এ প্লাস পেলেও হাই’য়ার ম্যাথে কোনোমতে টেনেটুনে পাশ মার্ক উঠেছে।জায়ান গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,
“ঢাকা বোর্ড অল্পের জন্যে রেহাই পেলো।”
অতঃপর গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখে মার্কো কে কল করে,ওপাশ থেকে মার্কো ফোন উঠাতেই জায়ান বলে,
“ফ্রান্সের একশো একটা ডিপার্টমেন্ট এ কয়টা যেনো অনাথ আশ্রম আছে?”
“তেইশ টাতো হবেই।কেনো?”
“সবগুলোতে মিষ্টি বিতরণ করার ব্যাবস্থা কর।”
মার্কো হকচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তুইতো প্রতিবছর নিউ ইয়ারে টাকা দিস।আবার মিষ্টি কিসের! ”
“আমার ইজ্জত বাঁচানোর ”
“হুয়াট! ”
“ছয়শতকেজিতে হবে না,?আরও লাগলে তাও দেয়ার ব্যবস্থা কর।টাকাপয়সা এসব হাতের ময়লা।ইজ্জতের কাছে টাকা পয়সা ডা’জেন্ট মেটার।”
কল কাট করে জায়ান পাহাড়ি অঞ্চল আল্পসে প্রবেশ করে। তবে শার্টে যে রক্ত লেগে আছে তার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছে।গাড়ি লিয়ার্জ প্যালেসে গেটের ভেতর ডুকে।জায়ান গাড়ি থামিয়ে প্যালেসের ভিতর হনহনিয়ে হেঁটে যায়। তার হাতে এক গুচ্ছো সাদা গোলাপের তোড়া।জায়ানের পায়ের শব্দে লিয়ানা কিচেন থেকে ডাইনিং স্পেসে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে।জায়ান লিয়ানার সামনে এসে দাঁড়াতেই লিয়ানা জায়ানের শার্টে লাল দাগ দেখতে পায়।জায়ানের কাছ থেকে কেমন শুকনো রক্তের গন্ধ ভেসে আসে।লিয়ানা কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে,
“ক কি হ’য়েছে আপনার? ”
তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৭
মুহূর্তেই শার্টের দিকে নজর পড়তেই। জায়ানের হুঁশ ফিরে আসে।শার্টটা বদলাতে ভুলে গিয়েছে একদমি।লিয়ানা কাছে এসেই জায়ানের শার্টের গুতোম খুলতে শুরু করে। ভয়ার্ত দৃষ্টি ফেলে বলে,
“আপনি কি শুধু আঘাতই পান।আর আমায় আঘাত দেন।”
জায়ান লিয়ানার হাত দু’টো ধরে ফেলে। কোমরে হাত দিয়ে হেঁচকা টানে নিজের বুকে মিশিয়ে নেয়।মাথায় ওষ্ঠ ছুঁইয়ে হাস্কি সুরে বলে,
“আই নিড টেক টু অ্যা শাওয়ার ইউ’থ ইউ ব্লাডি হুয়াইট রোজ ।কাম…..
