ডার্কসাইড পর্ব ৩৮

ডার্কসাইড পর্ব ৩৮
জাবিন ফোরকান

আসমানের পোর্শে পরিত্যক্ত ঘাটের সামনে থামলো চাকার কর্কশ আর্তনাদ তুলে।এক ঝটকায় দরজা খুলে বাইরে পদক্ষেপ রাখলো অমানিশা।দুর্বোধ্য প্রজ্জ্বলন তার দৃষ্টিজুড়ে।ধাতুর তৈরি টার্মিনাল চলে গিয়েছে ঘাট পর্যন্ত,খানিক ব্রিজের মতন দেখতে।যার ওপাশে কয়েকটি লঞ্চ ভাসমান। জনমানবের চিহ্নটুকু নেই যেন কোথাও।শুধু সুদূরে লঞ্চ আসা যাওয়ার সময়কালে সাইরেনের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়ে চলেছে।নিহাদের বাইক এসে থামলো পিছনেই।পা নামিয়ে সে হেলমেট খুলতে খুলতে আসমান এগোলো।

প্রথমে হাঁটলো,এরপর রীতিমত ছুটতে আরম্ভ করলো।ধাতব ব্রিজের উপর তার ভারী পদক্ষেপের আওয়াজ রাত্রির নিস্তব্ধতা ভেদ করলো সহসাই। নিহাদও অনুসরণ করে আসছে,কোমরে গুঁজে রাখা রিভল*ভারটা তার হাতে উঠে এসেছে।সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে চলেছে চারিদিকে।শত্রু লুকিয়ে থাকতে পারে। উভয়ের চলনে এতটাই জোর যে কাপতে থাকলো টার্মিনাল,তবুও থামলোনা আসমান।ছুটে চলেছে দুর্বার ঘূর্ণিঝড়ের মতন।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি সে ঘটতে দেবে না,কিছুতেই না!
পরাশক্তির আগমনের প্রভাব উপলব্ধি করেই যেন দ্বিতীয় লঞ্চটির ভেতর থেকে ঘাটে লাফিয়ে নামলো দুইজন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– কেডা রে?
এটুকুই চিৎকার করা সম্ভব হলো।আসমানের শক্তিশালী হাত আবদ্ধ হয়ে গেলো তার গ্রীবায়, এক ঝটকায় আ*ছড়ে ফেললো ঘাটের উপর।হতবাক অপরজন দ্রুতই নিজের অ*স্ত্র উদ্যত করতে নিলো, কিন্তু নিহাদের তড়িৎ ক্রিয়ায় সে লঞ্চের সম্মুখভাগে ধাক্কা খেলো।উভয় বাহু তার পিছমোড়া করে নিহাদ ধরে রাখলো।আসমান গভীর স্বরে শুধালো,
– রোযা….কোথায়?
তার কণ্ঠের অশরীরী প্রভাবে অজান্তেই বুক কেঁপে উঠল যেন।ম্রিয়মাণ উত্তর এলো,
– ল…লঞ্চের…ছাদে…

এটুকুই।কোনো সুযোগ দিলোনা আসমান।দুহাতে চা*পলো তার মাথা,একবার ডানে এবং অতঃপর বামে মো*চ*ড় দিলো!অশ্রাব্য একটি আর্তনাদ উচ্চারিত হলো শুধু,নিথর শরীর এলিয়ে পড়লো মুহূর্তেই।নিহাদের দিকে তাকালো আসমান,তার ধরে রাখা ব্যক্তির দিকে এক পলকমাত্র চেয়ে আদেশ করলো,
– ফিনিশ হিম!
গুরুর মাঝে নির্দয় মনোভাব লক্ষ্য করে নিহাদ কিঞ্চিৎ আতংকিত হলো,কিন্তু তার ক্রোধেরও আজ সীমা ছাড়িয়েছে। কত্ত বড় দুঃসাহস এদের,রোযার দিকে হাত বাড়ায়!নিজের অ*স্ত্রটি কপাল বরাবর ঠেকিয়ে মৃদু ধ্বনি তুলে বু*লে*ট ঠু*কলো নিহাদ,র*ক্ত ছিটকে আচ্ছাদিত করলো সুদর্শন চেহারা, সামান্যতম কাপলোনা তার হাত।
লঞ্চের ভেতর ঢুকেই দ্রুত সিড়ি বেয়ে দুই তলায় উঠলো আসমান।ছাদ তৃতীয় তলার উপর।এদিকটা ডেক হিসাবে ব্যবহৃত হতো।তিনজন বান্দা সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে কি যেন রসের আলাপ করছিল।আসমানের অতর্কিত উপস্থিতি তাদের ভড়কে দিলো।

– কে রে তুই?
কোনো জবাব এলোনা।স্থির দন্ডায়মান আসমান, আঁধারের সঙ্গে মিশে।তাতে তার অবয়ব ঠেকলো ভীষণ অশুভ।
– জবাব দেস না কে…. আক!
বাক্য সম্পূর্ণ করা সম্ভব হলোনা।আসমানের হাতে উঠে এলো কাফের অগ্রভাগে লুকিয়ে রাখা ছোট্ট অথচ কার্যকরী ব্লে*ডটি। ক্ষীপ্র গতিতে এগোলো তার বাহু, র*ক্তে*র ফি*নকি তুলে ব্লে*ডটি গেঁ*থে গেলো লোকটির ঘাড়ে,বি*স্ফা*রিত হলো নয়নজোড়া, একঝাঁক বিস্ময় তাতে। অপর দুইজন তাতে বিহ্বল হয়ে অ*স্ত্র খুঁজতে লাগলো,নেশার ঘোরে অসাবধানে ফেলেছে আশেপাশে কোথাও।পেলো মেঝেতে পরা অবস্থায়।হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে হাত বাড়ালো ধরার আশায়,কিন্তু সেই হাতে ভারী বুট চে*পে বসলো।ককিয়ে উঠে মাথা তুলে তাকালো।শুভ্র শার্টে লেপ্টানো রক্তিম তরলে আসমানের অস্তিত্ব যেন বিভীষিকার প্রতীক।আসমান জোর বাড়ালো,তাতে হাতের আঙুলের হা*ড় কটমট করে ভা*ঙতে লাগলো এক এক করে।চিৎকার তুলতে গেলেও সম্ভব হলোনা, মুখে চেপে গেলো হাত,যেন দ*ম আ*টকে ফেলবে।
প্রচণ্ড ক্রোধ তার।কিসের এত ক্রোধ?অনুধাবন সম্ভব হলোনা।এর পূর্বেই দৃষ্টি হার মানলো।অজ্ঞান হয়ে লুটায়িত হলো মেঝেতে।অপরজন দূরে রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে ঠকঠক করে কাপছে।আসমান দৃষ্টি মেলাতেই দুহাত জোর করে কাদতে কাদতে বলল,

– আমারে মাই*রেন না ভাই মাই*রেন না।আমার বিবি আছে…. একটা বাচ্চা আছে….
এগোতে গিয়েও অতর্কিতে থমকালো আসমানের পদক্ষেপ।এক মুহূর্তের দ্বিধা অনুভব করলো।নিহাদ উঠে পড়লো উপরে।চারিপাশে তাকিয়ে আসমানকে দেখলো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকতে একজনের।নিজের অ*স্ত্র তুলে সে বান্দাকে নিঃশেষ করতে যাচ্ছিল কিন্তু আসমান এক হাত তুলে তাকে থামালো।জানালো,
– উপরে যাও,আমি আসছি।
নিহাদ প্রশ্ন করার চেষ্টা চালালো না, রোযাকে সুরক্ষিত করাটা বর্তমানে অধিক জরুরী।তাই সে দ্রুত তৃতীয় তলায় উঠলো।অপরদিকে আসমান কাপতে থাকা লোকটার দিকে এগিয়ে তার ঘাড় চেপে ধরলো, এক মুহুর্ত দৃষ্টিপাত করে সজোরে ঠু*কল তার মা*থা রেলিংয়ে।ক্ষ*ত হয়ে চুঁইয়ে পড়লো র*ক্তধারা।নিজের ইতি যেন সামনেই!এমন অনুধাবন হলেও আসমান তাকে নিজের কাছে টেনে অসহনীয় এক কন্ঠে জানতে চাইলো,

– তুই কি আমার জ্যোৎস্নাকে স্পর্শ করেছিস?
কয়েক সেকেন্ড লাগলো লোকটির বুঝে উঠতে।তারপরই জোরে জোরে মাথা নাড়ল,
– একদম না ভাই,আমি কিছুই জানিনা,কিছুই করিনাই। আমরা তো শুধু গার্ডে আছিলাম।শুধু দেখছি একটা অজ্ঞান মাইয়াকে ছাদে নিয়া গেছে,এরপর জানিনা…. আল্লাহর কসম ভাই!
আরও একবার রেলিংয়ে ঠুক*লো তাকে আসমান।দ্বিতীয়বার নাকও ফা*টলো।পুনরায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে আদেশ করলো অমানিশা,

– কথায় কথায় আল্লাহর কসম দিবি না!
মৃ*ত্যু বুঝি আসন্ন।কিন্তু লোকটিকে হতবিহ্বল করে দিয়ে আসমান তাকে ছেড়ে দিলো!উন্মুক্ত হতেই ফ্যালফ্যাল করে অবিশ্বাস নিয়ে তাকালো সে, পরমুহূর্তেই এক ছুটে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।আসমান ভ্রুক্ষেপটুকু পর্যন্ত করলোনা।দ্রুত উঠলো উপরে।তিনতলা পেরিয়ে পৌঁছলো ছাদে।অতঃপর যা দেখলো তা তার হৃদস্পন্দন থামিয়ে দিলো যেন সম্পূর্ণ।

তিন বছর আগের সেই বিভীষিকা,আপন ব্যর্থতা, ভালোবাসা এবং সন্তানকে হারানো…..সুতীব্র যন্ত্রণা।
স্মরণে আসছে জোরালোভাবে। সমস্ত শরীরে প্রজ্জ্বলিত হয়েছে প্রতিশোধবাসনা।রোযার সমস্ত অবয়ব যেন অন্তরে খচিত হলো যন্ত্রণাদায়কভাবে।মেঝেতে বসে পড়েছে মেয়েটি সকল শক্তি হারিয়ে, তার বিদ্ধস্ত অস্তিত্ব এবং তাকে ধরে রাখা পুরুষটির আক্রোশ এক লহমায় অভ্যন্তরে জন্ম দিলো র*ক্তপিপাসা!অগ্ন্যুৎপাত ঘটালো মহাপ্রলয়ের।
সবটা ঘটলো অত্যন্ত দ্রুত।বায়ুর গতিতে এগোলো আসমান,এক হাতের ঝটকায় কামরুলকে রোযার কাছ থেকে সরিয়ে তার দুবাহু মু*চড়ে ধরলো।পালোয়ান গোছের কামরুল নাছোড়বান্দা নয়, অত্যন্ত শক্তি প্রয়োগ করে নিজেকে ছাড়িয়ে পাল্টা আ*ঘাত হা*নলো আসমানের মুখ বরাবর।সামান্য পিছনে সরে গেলো পাথরমানব,কিন্তু তাতে তার ক্রোধ শুধু দ্বিগুণ মাত্রা ধারণ করলো।

রোযা সম্পূর্ণ এলিয়ে পড়েছে,নিজেকে বহু কষ্টে ধরে রেখেছে এখনো,যেন চেতনা না হারায়।প্রসারিত নয়ন মেলে অবলোকন করে চলেছে ধ্বংসযজ্ঞ।আসমান এবং কামরুল একে অপরের মুখোমুখি,কেউই কারো থেকে যেন কম নয়।তবুও আসমানের দৃষ্টিতে ফু*টে ওঠা বিভৎস অনুভূতিটুকু রোযার নজর এড়ালোনা। কাপলো তার হৃদয়, প্রিয়তমর চিন্তায়। ছাড় দিতে নারাজ আসমান। কামরুলকে টপকে তাকে আছ*ড়ে ফেললো মেঝেতে উল্টো করে।ততক্ষণে আ*ঘা*তে তার কপালের অংশ কে*টে র*ক্তধারা বইছে,পরোয়া নেই।
কামরুলকে চেপে ধরে তার ডান হাতটি পিছনে টানলো আসমান, ঝুঁকে কানে ফিসফিস করলো,
– এই হাত দিয়ে ওকে স্পর্শ করেছিস,তাইনা?
– তোকে আমি….আহহহহ!

হাহাকার প্রতিধ্বনিত হলো সমগ্র স্থানজুড়ে।তার হাতটি শক্ত এক মো*চড়ে বা*কিয়ে দিয়েছে আসমান, কটকট করে ভে*ঙেছে হা*ড়, তবুও থামলোনা দানব। হাতটি সম্পূর্ণ বা*কিয়ে ঠেকালো পিঠে,যন্ত্রণার তীব্রতায় অপর হাতটি দিয়ে মেঝে থাবা দিয়ে ধরলো কামরুল।বিন্দুমাত্র লাভ হলোনা।মনিবের এই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে অবশিষ্ট দুইজন ছুটলো,কিন্তু নিহাদের বাঁধার সম্মুখে পতিত হলো সহসাই। ক্ষীপ্র গতিতে একজনের মাথা পাকড়াও করে সোজা ছাদের রেলিং থেকে বুড়িগঙ্গায় ভাসালো সে। অপরজন পিছন থেকে তার ঘাড়ে চেপে বসলো ঠিকই,কিন্তু অতিরিক্ত সুবিধা করা সম্ভব হলোনা।দুহাতে তার কাধ আঁকড়ে ধরে মাথার উপর থেকে একটানে সামনে এনে মেঝেতে ফেললো নিহাদ,সহসাই চড়ে বসলো বুকে।গলা চে*পে ধরে আক্রোশে শুধালো,

– ভুল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছিস,চরম ভুল!
– তোর বউ লাগে?
– আমার বোন লাগে!
পাল্টা চিৎকার ছুড়লো নিহাদ।রিভ*লভার স্পর্শ করলো তার গ*লায়,একটি মাত্র বু*লেট,ছি*টকে উঠলো মাং*সপি*ণ্ডসহ।তবুও নির্দয় হৃদয়।জীবনে যাদের আপন ভেবেছে তাদের তরে এটুকু মাত্র নিষ্ঠুরতা কিছুই নয়।
একটি ভা*ঙা হাত নিয়েও উল্টে আসমানকে পাল্টা মেঝেতে ঠেললো কামরুল।পুরুষটির শরীরে অত্যধিক শক্তি।তাকে এক হাতেই মেঝের সঙ্গে ঠেসে ধরার প্রচেষ্টা কামরুলের।আসমান কয়েক সেকেন্ডের জন্য বেকায়দায় পরে গেলো,দ্রুত চিন্তায় ভাবতে থাকলো পাশা পাল্টানোর উপায়।কামরুলের হাতটিতে উঠে এলো মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা ধা*রালো প্রান্তের স্ক্রু ড্রাইভারটি।সজোরে গাঁ*থতে গেলো আসমানের চো*খে,কিন্তু তড়িৎ প্রতিক্রিয়ায় মাথা সরিয়ে ফেললো দানব।

– কামরুলকে টেক্কা দিতে চাস?কোন বাপের ব্যাটা তুই শা*লা?
– আমি শুধুমাত্র আমিই, বাপকে খুঁচিয়ে দরকার কি?
আসমানের দৃষ্টিতে অদ্ভুত এক প্রভাব লক্ষ্য করা গেলো, যা ক্ষণিকের জন্য কামরুলকে স্তম্ভিত করে তুললো।কিছুটা দূর থেকে সবটা পর্যবেক্ষণ করে যাওয়া রোযা আর বসে থাকতে পারলোনা।আসমানকে সাহায্য করা দরকার,নিহাদ ব্যাস্ত আছে দুইজনকে টেক্কা দিতে।আশেপাশে খুঁজে একটি বেল্ট খুঁজে পেলো সে,যেটা দিয়ে কিছুক্ষণ আগেই তাকে আ*ঘাত করে চলেছিল কামরুল।

কাপা কাপা ভঙ্গুর আঙুলেও তুলে নিলো, সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তুললো নিজের শরীরটাকে। পায়ে পায়ে টলতে টলতে পৌঁছলো কামরুলের পিছনে,তার সম্পূর্ণ মনোযোগ আসমানের মাঝে আবদ্ধ।এতটা ভারী শরীরের চাপে ছেলেটি আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে সম্পূর্ণ।এক নজর মিললো আসমানের সঙ্গে রোযার দৃষ্টি, তীব্রভাবে মাথা নাড়লো।তবুও বেপরোয়া রোযা। কামরুলের হাতের স্ক্রু ড্রাইভারটি তার হৃদয়ে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে।তাকে আ*ঘাত করেছে ঠিক আছে, কিন্তু আসমানের শরীরে আর একটি কলঙ্কের দাগ সহ্য করা অসম্ভব!

রীতিমত দৈবিক বলে প্রাপ্ত শক্তিটুকু ব্যবহার করে রোযা বেল্টের মাঝে ফাঁ*স তৈরি করে পিছন থেকে কামরুলের গ্রীবায় জড়ালো। ভড়কে গেলো বেচারা।সুযোগটি ভালোমতই নিলো সে।জোর টানে শক্ত করলো বেল্টের বাঁধন,তাতে ফাঁ*সির দ*ড়ির মতন কামরুলের কন্ঠ চেপে আসলো মুহূর্তেই।স্ক্রু ড্রাইভার হাত থেকে ছিটকে গেলো।পিছনে পড়লো ভারসাম্য হারিয়ে।এর বেশি অবশ্য কিছু করা সম্ভব হলোনা রোযার পক্ষে। বেল্টটি চেপে জোরালো টানে রোযাকে নাড়িয়ে দিলো কামরুল,লাফিয়ে উঠে চিৎকার ছুড়লো,

– খা***!
অশ্রাব্য শব্দটি ঠিকমত শ্রবণ করাও সম্ভবপর হলোনা রোযার পক্ষে,বলিষ্ঠ হাতের চ*ড়ের ধাক্কায় তার সম্পূর্ণ শরীর ঝনঝন করে উঠলো,ছিটকে পড়ল মেঝেতে।এবার আর নড়চড় সম্ভব হলোনা।দৃশ্যটি দৃষ্টি মেলে অবলোকন করলো আসমান।আবারো আ*ঘাত!তার সামনে!ওই কৃষ্ণগহ্বরে যেন সৌরঝড়ের উদ্ভব ঘটলো।অতিমানবীয় শক্তির তোড়ে কাপলো মুঠো।উঠলো আসমান। স্ক্রু ড্রাইভারটি বাগড়ে নিয়ে পিছন থেকে এক লাফে ঝাঁপিয়ে পড়লো শত্রুর ঘা*ড়ে, হিং*স্র চিতাবাঘ যেন।অপ্রস্তুত কামরুলের ঘা*ড়ে গেঁ*থে দিলো,সম্পূর্ণ এক ইঞ্চি।ফি*নকি দিয়ে ছাড়লো র*ক্তধারা, তার সঙ্গে অমানবিক হাহাকার।তবুও ক্ষান্ত দিলোনা আসমান, অ*স্ত্রটি বের করলো টেনে।আ*ঘা*ত হান*লো পুনরায়, একের পর এক, দ্রুতগতিতে।ধোঁয়াশা দৃষ্টিতে অজান্তেই গুণতে লাগলো রোযা,ঠিক প্রথম দিনের ন্যায়।
এক…দুই… তিন…চার….

যেন রোযার শরীরে প্রতিটি উপরঘাতের দ্বিগুণ প্রতিদান।কোনো খামতি নেই,চলমান প্রলয়।তার এমন ভয়াবহতা লক্ষ্য করে কাপলো অন্তর,আর্তনাদ উঠলো গগন কাপিয়ে।তবুও নির্দয় ধ্বংসাধিপতি।
বত্রিশবারে থামলো হাত।শুভ্রতায় আচ্ছাদিত অবয়ব রক্তিম ধারায় রেঙে উঠেছে।চেনার অবকাশমাত্র নেই।তবুও নৃশং*সতার ক্ষুধা মেটেনি।কামরুল বলে কেউ অবশিষ্ট নেই।শুধুমাত্র যেন এক মাং*সপিন্ড। সেটিরই ক্ষীণ প্রাণ সংযুক্ত সত্তার মাথার চুল ধরে টেনে নিয়ে চললো চিমনির কাছে, অতঃপর নিজের মুখোমুখি করলো নরকরাজ।অন্তিম একটিমাত্র বাণী উচ্চারণ করলো পুরুষরূপী রাক্ষ*সটির উদ্দেশ্যে,

– জ্যোৎস্নাকে ছোঁয়া অসাধ্য, শুধুমাত্র এর স্নিগ্ধতা অনুভব সম্ভব।
ঝুঁকলো আসমান, বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করলো মৃ*ত্যুপরোয়ানা।
– জ্যোৎস্নাকে ছোঁয়ার দুঃসাহস করেছিস,এর একমাত্র প্রতিফল মৃ*ত্যুদণ্ড!
অতঃপর যা ঘটলো তা যেকোনো মানবের রুহ কাপিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
কামরুলের ঘাড়ে শক্তভাবে নিজের হাত জড়ালো আসমান,পাকড়াও করে ধাতব শীতল চিমনিতে ঠু*কলো তার মা*থা। অগণিতবার!কর্কশ ধ্বনি এবং হাহাকারের মিশ্রণে যেন অশরীরীরাও আজ আতঙ্কিত হলো।হাতের মুঠোয় চুরমার হলো মা*থা*র খু*লি,তবুও ক্ষান্ত হতে নারাজ ক্রুব্ধ অন্তর। চললো তাণ্ডবলীলা, যতক্ষণ না সামান্যতম প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছে। র*ক্তপিপাসা মিটবার নয়,তার চাই,এই অশুভ আত্মার আরো র*ক্ত চাই!

– আসমান ভাই!
কানে গেলো না ডাকটি।শুধুমাত্র গমগমে আওয়াজ হয়ে গোত্তা খেয়ে ফিরে গেলো যেন।আপন অভিশপ্ত জগতে বিচরণরত আত্মার মুক্তি নেই।হাতের মাঝে কামরুল বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই,তবুও আ*ঘা*ত হে*নে চলেছে একের পর এক। এলিয়ে পড়ছে নিথর শরীরটি,বারংবার তুলে ধরছে,আবারো মেটাচ্ছে আক্রোশ।চলমান প্রক্রিয়াটি চক্রের মতন আবর্তিত হয়ে চলেছে।
– আসমান ভাই…..থামো!
জাপটে ধরলো নিহাদ আসমানকে পিছন থেকে, দুবার ধাক্কা খেয়ে সরে যেতে হলো তবুও হাল ছাড়লোনা। অন্তিমবার আপন মানুষটির সর্বাঙ্গে বাহু জড়িয়ে সজোরে আলিঙ্গন করলো নিহাদ,যেন দুর্বার বালুঝড়কে প্রশান্ত করার ক্ষীণ প্রচেষ্টা।

– থামো…. ম*রে গেছে,আর নয়।
অবশেষে সামান্য টললো হিমালয়।ছুঁড়ে দিলো কামরুলের গাট্টাগোট্টা গড়নের ধ্বং*সপ্রাপ্ত শরীরটিকে দূরে,অত্যন্ত অবহেলায়।একবার ইচ্ছা হলো নদীতে ছুঁ*ড়ে ফেলে,কিন্তু পরবর্তীতেই সিদ্ধান্ত বদলালো।না,সকালের ক্ষুধার্ত কাক এবং শকুনের দলের মহাভোজের দরকার!
নিজেকে ঝাড়া দিয়ে সরে দাঁড়ালো আসমান।নিহাদ মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– ঠিক আছো?
– হুম।

লঞ্চের ছাদটি যেন বর্তমানে বধ্যভূমির চেহারা ধারণ করেছে।এদিক সেদিক লুটিয়ে রয়েছে প্রাণহীন দে*হ।কামরুলের দে*হ নয়,একটি পি*ন্ড মাত্র শুধু।হাড়গোড় কিছুই রক্ষিত নেই।রক্তিম প্রবাহে তলিয়েছে সমগ্র অঙ্গন।চিনচিনে ব্যাথা উঠলো বুকে,নাহ,এই দৃশ্যপট উপলব্ধি করে নেয়।আতঙ্কের বিষয়বস্তু স্মরণে আসতেই।
পাই করে ঘুরে দাঁড়ালো আসমান।কিছুটা দূরে ধাতব মেঝেতে লুটিয়ে রয়েছে রোযা।চোখজোড়া বন্ধ। ক্ষীণভাবে চলছে শ্বাসকার্য।সমস্ত শরীর যেন জমাট বেঁধে পাথর হয়েছে।তাতে কলঙ্কিত চিহ্নের ছড়াছড়ি।নিজের সামনে ধরিত্রী গুঁড়িয়ে যাওয়ার অনুভূতি অনুভূত হলো আসমানের।এক ছুটে পৌঁছল রোযার কাছে।
অত্যন্ত যত্নে রমণীকে নিজের বাহুডোরে তুলে নিলো আসমান,যেন মোমের পুতুল সে।সামান্য জোড় প্রদানে গলিত হবে। ঝুঁকলো নিকটে,কম্পিত কন্ঠে ডাকলো,

– রোযা?
মিটমিট করে তাকালো রোযা, ডাকটি তার হৃদয়ে গিয়ে দোলা দিয়েছে যেন।অজানা আবেগে উদ্ভাসিত হলো দুই নয়ন।জমাট র*ক্তের সাথে মিশ্রিত হয়ে বইতে থাকলো কপোল বেয়ে।অত্যন্ত ক্ষীণ কন্ঠে উচ্চারণ করলো,
– চাঁদ….
তৎক্ষণাৎ অমানিশার বুকে আবদ্ধ হলো সে।কাপছে তার সর্বাঙ্গ,অনুভব করছে রোযা।একটি অস্ফুট শব্দ তার কানে প্রতিধ্বনিত হলো বারংবার।
– সরি!

সরি?আসমান?সত্যিই সে উচ্চারণ করেছে নাকি ঘোরের মাঝে কল্পনা করছে রোযা?কিছুই উপলব্ধি সম্ভব হলোনা পরিশ্রান্ত মস্তিষ্কের পক্ষে।একটুখানি বিশ্রাম দরকার,ঘুম আসছে,প্রচণ্ড ঘুম!সুখ সুখ অনুভূতির মাঝে উষ্ণতায় জড়ানো আলিঙ্গনে রোযার দৃষ্টি বুজে এলো।অবশেষে একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস নির্গত করে চৈতন্য হারালো সে।
রোযার শরীর শিথিল হয়ে পড়তেই আসমান জমে গেলো সম্পূর্ণ।বিহ্বল হয়ে তাকে নিজের দিকে ফেরালো, খানিক ঝাঁকালো,

– রোযা?এই….কথা বলো… প্লীজ?
কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।অমানিশা স্বয়ং আঁধারে আচ্ছাদিত হলো মুহূর্ত কয়েকের জন্য।দিশাহারা পথিকের ন্যায় এদিক সেদিক চাইলো।অবস্থা লক্ষ্য করে নিহাদ এগিয়ে এলো,নিজের পরিধানের জ্যাকেটটি খুলে ঝেড়ে নিয়ে আসমানের হাতে দিলো।
– জলদি,হাসপাতালে নিতে হবে।
অবুঝ শিশুর মতন সম্মতি জানালো আসমান।নিহাদের জ্যাকেটটি রোযার শরীরে জড়িয়ে নিয়ে পাঁজাকোলা করে তুললো।নিজের বক্ষে আগলে নিয়ে অতি দ্রুত এগোলো।সামনে সামনে নিহাদ,তার হাতে তখনো রিভ*লভার রয়েছে। সতর্কিত দৃষ্টি চারপাশে।বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতেও রাজী নয়।লঞ্চ থেকে বেরিয়ে টার্মিনাল বেয়ে ছুটলো আসমান,যতটা দ্রুত সম্ভব।তার আলিঙ্গনে অচৈতন্য রোযা,মুড়িয়ে রেখেছে নিজের সবটুকু উষ্ণতা দিয়ে।

অতিবাহিত হয়েছে তিনদিন।
একটি বিখ্যাত বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে রোযাকে।চব্বিশ ঘণ্টার জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে রাখা হয়েছিল তাকে,পরবর্তীতে কেবিনে দেয়া হয়েছে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ায়।যদিও তার জ্ঞান আসেনি এখনো পর্যন্ত। রেমান পরিবারের প্রত্যেকের জন্য এই তিনটি দিন অতিক্রান্ত হয়েছে দুশ্চিন্তায়। বিলাল রেমান, চারুলতা, নিহাদ সকলে পালাক্রমে থেকেছে রোযার নিকট।আপাতত তার উন্নতি কিংবা অবনতি কোনোটিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

চতুর্থ দিন।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায়।ঔষধি ঘ্রাণপূর্ণ কেবিনটির বিছানায় শুয়ে থাকা রোযা মিটমিট করে চোখ খুললো।সর্বপ্রথম নজরে এলো ধবধবে সিলিং।কানে গেলো হার্টবিট মনিটরের মৃদু বিপ বিপ শব্দ।নড়তে গিয়ে অনুভব করলো তার শরীরজুড়ে ব্যান্ডেজ।হাতের আঙ্গুল,পায়ের আঙুল,মাথা, ঘাড়, উদর…. বাদ গিয়েছে খুব কম অংশই।হাতের কব্জিতে সংযুক্ত ক্যানোলা বেয়ে শরীরে প্রবাহিত হয়ে চলেছে পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ স্যালাইন।প্রাণ ভরে প্রশ্বাস গ্রহণ করলো সে।অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করছে বুকে।অসুস্থতা থেকে সুস্থতার পথে বুঝি এমনি অনুভূতি হয়?
মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকালো,তাতে সামান্য ব্যাথা অনুভূত হতেই ভ্রু কুঁচকে ফেললো।নজরে এলো পাশের একটি সোফায় হাত গুটিয়ে বসে থাকা নিহাদকে।একটি বইয়ে মনোযোগী,টানা টানা নয়নজুড়ে চতুর্ভুজাকৃতির চশমা।লেন্সের অন্তরালে প্রজ্জ্বলিত চোখজোড়া দামী রত্নের মতন লাগছে।রোযা আনমনে মৃদু হাসলো, ঠোঁটেও হালকা ব্যথা লাগলো।

– উঃ!
ক্ষীণ শব্দটুকু নিহাদের নজর কাড়তে যথেষ্ট ছিল।বই রেখে দ্রুত রোযার বিছানার কাছে এলো।চোখ থেকে চশমা খুলে হাসিমুখে ঝুঁকলো,নিজের চিরায়ত স্বভাবে বলে বসলো,
– ওয়েলকাম ব্যাক ফুলটুশী!
রোযা না পারতে পুনরায় হাসলো,লাগুক ব্যথা সামান্য।নিহাদ একটি হাত বাড়িয়ে আলতোভাবে স্পর্শ করলো তার ব্যান্ডেজে আচ্ছাদিত কপাল।
– তুমি তো আমাদের ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে!
– যাক, হিটম্যানও তাহলে ভয় পায়!
– হাহা… অবশ্যই।আমি তো আর মেশিন না।
চোখ টিপ দিয়ে উঠলো নিহাদ।
– ডাক্তারকে ডাকছি,চেক আপ করে নিক তোমার।
– উহু,প্রয়োজন নেই।আমি ঠিক আছি।

কাঠের স্টুল টেনে বিছানার কাছেই বসলো নিহাদ।রোযার দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস নির্গত হলো তার বুক থেকে।
– খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলাম তাইনা?
– হ্যাঁ।এই কয়েকটা দিন কিভাবে পেরিয়েছে জানো না ফুলটুশী।
– দুঃখিত।
– উহুম,আমি দুঃখিত।সেদিন আমি তোমার পাশেই ছিলাম,তবুও বুঝতে পারিনি।রক্ষা করতে পারিনি।আমি খুব খুব লজ্জিত।আমি বেঁচে থাকা সত্ত্বেও আমার আপন মানুষগুলো বারবার মৃ*ত্যুর দুয়ারে দাঁড়ায়।প্রচণ্ড অনুতপ্ত আমি।
– আমি তোমার আপন মানুষ?

জবাব দিলোনা নিহাদ।তাকে এমন গুরুগম্ভীর হতে দেখা যায়না বললেই চলে। রোযা নিজের ক্যানোলা সংযুক্ত হাতটি বাড়ালো কাপা কাপাভাবে, তা মাঝপথে পাকড়াও করে আলতোভাবে নিজের উভয় মুঠোয় ধরলো নিহাদ,অতি যত্নে যেন এক প্রজাপতিকে ধরে রেখেছে।
– তুমি আমাকে রক্ষা করতে গিয়েছ নিহাদ।এটুকুই যথেষ্ট।কোনকিছুর পরোয়া না করে ছুটে গিয়েছ আমার স্বার্থে।আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
নিহাদের অধর কাপলো।কিন্তু কিছুই উচ্চারণ করতে পারলোনা।ব্যান্ডেজ পরিহিত হাতেই রোযা সামান্য চেপে তার হাতটি ধরে হাসার চেষ্টা করলো,

– ধন্যবাদ নিহাদ।
– আমার একটা বোন ছিল।
নিহাদের অতর্কিত উচ্চারণে রোযা থমকালো।নিঃশব্দে শুনে গেলো।
– চট্টগ্রামে থাকতে একসঙ্গে খেলতাম আমরা।ওদের বস্তির ঘরে কত গিয়েছিলাম!না খেতে পেলে ওর মা আমাদের দুইজনকে মরিচ ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিতো।
আপন স্মৃতির দুনিয়ায় ডুবে গিয়েছে ছেলেটি।তার টলটলে দৃষ্টিমাঝে চেয়ে থাকলো রোযা।কত কি চেপে রেখেছে সে নিজের মাঝে?কত না বলা রচনা রয়েছে তার জীবনটিতে?আপাতদৃষ্টিতে নিহাদ প্রচণ্ড সুখী একজন মানুষ।কিন্তু অভ্যন্তরে?সে কি নিজের অধরের হাসি দিয়ে আপন যন্ত্রণা ঢেকে রাখছে না?

– কি হয়েছিল ওর?
রোযার প্রশ্নে একটি ঢোক গিলে নিহাদ জানালো,
– ট্রেনে কা*টা প*ড়েছিল। ধ*র থেকে মা*থা একদম আলা*দা হয়ে গিয়েছিল।
এক শিহরণ খেলে গেল রোযার মাঝে,ইচ্ছা হলো উঠে বসে তার সামনে নতমুখে বসে থাকা ছেলেটিকে একটু ভরসা দেয়।কিন্তু তা সম্ভব নয়।নিহাদ খুব দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে নিলো নিজেকে।মাথা ঝেড়ে বললো,
– যাক গে সেসব।আমি দুঃখিত,তোমাকে এই মুহূর্তে এসব বলা উচিত হয়নি।
– আমার মাঝে কি সেই বাচ্চা মেয়েটিকে দেখতে পাও?

একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো নিহাদ রোযার মুখপানে, সরাসরি উত্তর না করে বললো,
– আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না কেমন?নাহলে আমি ফুলটুশী বলে ক্ষেপাবো কাকে?
– চিন্তা করোনা।একবার যখন তোমার ঘাড়ে ঝুলেছি, এত সহজে নামবো না হু!
– তা নামবে কেনো?একটা রাক্ষসী তো!
– আর তুমি কি?খোক্কোস?
– আমি হলাম এক সুদর্শন পুরুষ যার রূপের ঝলকে পো*ড়ে লাখ লাখ রমণীর মন।এমন সুদর্শনকে খোক্কোস বলতে বিন্দুমাত্র লজ্জা হলোনা?

– মিস্টার বাংলাদেশে অংশ নিয়ে জিতে দেখাও, তাহলে বুঝবো কত বড় সুদর্শন তুমি!
– মিস্টার বাংলাদেশ?মাত্র এইটুকু?আমি তো মিস্টার ইউনিভার্স এক তুড়ি বাজিয়ে হয়ে যাবো! উফ, একবার ভেবে দেখো আমার বউ কতটা ভাগ্যবতী!গ্যাস লাগবেনা,আমার রূপের আ*গুনেই রান্না হবে, বিদ্যুৎ চলে গেলে আমার রূপের ঝলকে ঘর আলোকিত হয়ে যাবে।ঝগড়া?উহু…শুধু এই খোমাটা নিয়ে সামনে দাঁড়াবো,অমনি সব রাগ ঝেড়ে ফেলে লাফিয়ে পড়বে বুকে!
হাসির দমকে রোযার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো।এই নিহাদ আর ঠিক হলোনা।সে এমনি থাকবে সর্বদা,সকলের মাঝে খুশি বিলিয়ে যাবে আপন চিত্তে।

– উফ্… আউচ….
হাসতে হাসতে শরীরে ব্যথা উঠে গেলো।তাই নিহাদ বক্তব্য থামিয়ে উঠে দাঁড়ালো,মাথা দুলিয়ে জানালো,
– চুপটি করে শুয়ে থাকো এখন।আমি ডাক্তারকে বলছি।আর সবাইকে ফোন করে সুসংবাদ জানিয়ে দিই,চিন্তায় আছে।
এক অবোধ্য ইচ্ছা হলো রোযার অন্তরে,বিশেষ একজনের খবর জানার।কিন্তু কেন যেন জিজ্ঞেস করতে পারলোনা।শুধু নিঃশব্দে সম্মতি জানালো।

একটি সপ্তাহ পেরোলো। রোযাকে আরো কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।তার হা*ড় ভাঙেনি,কিন্তু ফ্র্যাকচার হয়েছে প্রচুর।ছোট বড় ক্ষত তো রয়েছেই।সেগুলো শুকিয়ে আসা প্রয়োজন।এই কিছুদিনে ডাক্তারের পরামর্শে নার্সরা তাকে হালকা পাতলা ব্যায়াম করিয়েছে,নতুনভাবে হাঁটাচলা আয়ত্বে আনতে হয়েছে।আঙুলজুড়ে ব্যান্ডেজ রয়েছে,অল্প স্বল্প নাড়ানো শিখেছে।পরনির্ভরশীল থেকে ধীরে ধীরে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে।
এই কয়েকদিনে বিলাল রেমান, চারুলতা এবং নিহাদ প্রত্যেকেই এসেছে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।বেশ খানিক সময় কাটিয়ে যায়।নিহাদ রোযাকে হাত পায়ের হালকা কিছু এক্সারসাইজ শিখিয়ে দিয়েছে, ব্যথা কমিয়ে ঠিকভাবে নড়াচড়ার জন্য। চারুলতা তার জন্য খাবার রেঁধে এনেছে।বিলাল?উনি কিছুই করেননি।তবুও যেন অনেক কিছুই করেছেন।তার আবেশ মাখানো ভরসাবাণী এবং উষ্ণ ছোঁয়া পেলে অনুভূত হয়ে যে না,রোযা একলা নয়,তার মাথার উপর যেন এক বিস্তৃত সুবিশাল বটবৃক্ষের ছায়া রয়েছে।

এত এত পাওয়ার ভিড়ে সবথেকে বড় না পাওয়াটা রয়েই গিয়েছে।আসমান।চুল পরিমান সময়ের জন্যও তার সাক্ষাৎলাভ হয়নি। কেউই আসমানকে নিয়ে রোযার সামনে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি,রোযা নিজে থেকে কিছু জিজ্ঞেসও করেনি।তার কোনোপ্রকার আশা নেই।তবুও অবাধ্য এই অন্তর যে কোনো যুক্তিতর্ক মানেনা,শুধু আবেগ বোঝে!সেদিন লঞ্চে আসমানের প্রলয়ংকরী রূপ স্মৃতির চিত্রপটে দগদগে কালিতে চিত্রিত হয়েছে। ভোলা যে অসম্ভব!কেনো করেছিল সে অমন?রোযার জন্য?নাকি আপন আফসোস থেকে?এর জবাব হয়ত কোনোদিন লাভ সম্ভব নয়।
নভেম্বরের কত তারিখ আজ?হিসাব নেই।নার্স এলে জিজ্ঞেস করবে ভাবলো রোযা।তার চাকরি উচ্ছন্নে গিয়েছে।ফাউন্টেন পেনের সম্পাদক জ্যাক হেনরিকে অবশ্য জানিয়েছে দুর্ঘটনার কথা,তার কিছুদিনের ছুটি মঞ্জুর হয়েছে। ফারিয়াও খুব বেশি কিছু মনে করবে না, রোযাকে বেশ পছন্দ করে সে।কিন্তু তাও,নিজের একটি বোধ রয়েছে।প্রাইভেট হাসপাতালে অভিজাত কেবিনে বসবাস করছে সে,তার খরচও রয়েছে।হ্যাঁ, দাদুর চিকিৎসার জন্য নিজের ভরণ পোষণ এবং খরচের জন্য আসমানের মুখাপেক্ষী হয়েছিল সে,কিন্তু তা একটি চুক্তি ছিলো।তখন জীবনের উপর নির্ভর করা ব্যতিত উপায় ছিল না।কিন্তু বর্তমান তো ভিন্ন। বাধ্যবাধকতা নেই।এভাবে চলবে কতদিন?ভাবনাগুলো রোযাকে বেদনা দিচ্ছে।বিছানায় শুয়ে একমনে ভেবে চলেছে উপায়।

রাত্রি নেমেছে নগরে। দূর থেকে যানবাহনের হর্ণের আওয়াজ ভেসে আসছে,তার সঙ্গে মৃদু কোলাহল। বায়ুপ্রবাহ হচ্ছে বাইরে,শীতল।সেই হাওয়ায় দুলে চলেছে জানালার কাছে ঝুলন্ত পর্দা।উষ্ণ কম্বলের অভ্যন্তরে আলসেমি ভঙ্গিতে এলিয়ে বিনা কারণেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো রোযা।শুধু শারীরিক আ*ঘাত নয়, কামরুলের ঘটনাটি তাকে প্রচণ্ড মানসিক আ*ঘাতও দিয়েছে।রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠে, ক্ষণে ক্ষণে চমকে যায়। কেউ স্পর্শ করতে এলেও অন্তর কেঁপে উঠে। অতি যত্নে তা নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখেছে মেয়েটি,তার জন্য অনেক করছে সবাই,এর অধিক কিছু তার প্রাপ্য নয়।লাভ কি দুশ্চিন্তা দিয়ে?

দাদুর কথা মনে পড়লো হঠাৎ।ইউনূস রহমান থাকলে আজ তাকে জড়িয়ে ধরে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারতো রোযা।কিন্তু তা যে এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসম্ভব বিষয়।এক ফোঁটা অশ্রু জমলো নয়নের কোণে।ঠিক তখনি মৃদু আওয়াজ শোনা গেলো, কেবিনের দরজা খুলেছে।রোযা ফিরে দেখলো না, নিশ্চয়ই নার্স এসেছে।ক্রমেই সন্নিকটে এসে থামলো এক অস্তিত্ব,তার উষ্ণ প্রভাব এবং পরিচিত সুঘ্রাণে রোযার অন্তরজুড়ে তরঙ্গ খেলে গেলো। এক ঝটকায় পিছন ফিরে তাকালো।

বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে আছে আসমান।একটি কালো ওভারসাইজ হুডি এবং গাবার্ডিনে আবৃত তার সুগঠিত অবয়ব।উভয় হাত ভরে রেখেছে হুডির আস্তিনে, টুপিটিও মাথায় তোলা।মাস্কের অন্তরালে শুধুমাত্র নয়নজোড়া শীতল অভিব্যক্তিতে চেয়ে আছে।
কিছু উচ্চারণ করলো না রোযা।একটি শক্ত ঢোক গলাধঃকরণ করে চিৎ হয়ে শুলো। চাইলোনা আসমানের তরে।অমানিশা নীরব থাকলো দীর্ঘক্ষণ, তারপর স্টুল টেনে বসলো বিছানার পাশে।আবারো নীরবতা।কতক্ষন পেরোলো?এক মিনিট?দুই মিনিট?উহু….মিনিট পনেরো!নৈঃশব্দ্য আজ ছড়িয়ে দিয়েছে আপন মায়ার জাল। যে জাল ছিন্ন করা কষ্টকর।

– কেমন আছো?
কণ্ঠটি শ্রবণ হতেই সমগ্র অস্তিত্ব বিদ্রোহ করে উত্তর করতে চাইলো,কিন্তু মস্তিষ্কের জোরে রোযা নিজেকে ঠেকালো।নীরব থাকলো,যেন জবাব প্রদানে আগ্রহী নয়।মিনিট তিন অপেক্ষা করলো আসমান।দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করলো,
– অভিমান করেছ?
প্রশ্নটিতে কিছু একটা ছিল,যার দরুণ সহসাই রোযার দৃষ্টি ঝাপসা হলো অশ্রুতে।অতি দ্রুত তা লোকাতে মুখ ফিরিয়ে নিলো সে,চেয়ে থাকলো জানালার দিকে।দেখতে না পেলেও একটি নড়চড় শুনতে পেলো।অনুভব করলো আসমান স্টুল ছেড়ে বিছানায় বসেছের।তারপরই তার উপর ঝুঁকে এলো অমানিশা, উভয় হাত দুপাশে রেখে আবদ্ধ করলো মাঝে।দৃষ্টিপাত ঘটাতে চাইলো রোযার মাঝে,কিন্তু অভিমানের পাহাড় যে অন্তরজুড়ে!

– কথা বলবে না?
নীরবতা।যেন আসমানের ব্যাবহারই তাকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে প্রতিদানস্বরুপ।
– অন্তত একবার তাকাও?
অধরে অধর চাপলো রোযা,কম্বলের আড়ালে মুষ্টিবদ্ধ করলো উভয় হাত,ব্যথা লাগলো কিঞ্চিৎ,তবুও।নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।আবেগে ভাসানো যাবে না নিজেকে।তার দিকে হাত বাড়ালো আসমান,কিন্তু অন্তিম মুহূর্তে কি যেন ভেবে গুটিয়ে নিলো নিজেকে। সোজা হয়ে বসলো। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে অস্তিত্ব।পুনরায় দীর্ঘ মুহূর্ত নৈঃশব্দ্যর রাজত্ব।একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করে রোযা মৃদু কন্ঠে বললো,
– তোমাকে ধন্যবাদ সেদিন আমাকে রক্ষা করার জন্য।
নিশ্চুপ আসমান।

– আমার উপরে তোমার ঋণের বোঝা বৃদ্ধি পেয়েছে।চিন্তা করোনা।একটু সময় দাও।নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে সবটা শোধ করে দেয়ার চেষ্টা করবো।
এবারেও নিঃশব্দ।
– আমাকে দেখতে এসেছ,আমি ঠিক আছি।সুস্থ হয়ে যাবো কিছুদিনের মধ্যে।ধন্যবাদ আবারো।তুমি এখন আসতে পারো,আমার ঘুম পাচ্ছে,একটু ঘুমাবো।
– আমি চলে গেলে খুশি হবে?
– হ্যাঁ।তোমার উপস্থিতি পীড়াদায়ক।

কথাটা বলতে বুকে বাঁধলো শতবার।তবুও উচ্চারিত হলো।স্পষ্ট দেখলো আসমানের এক হাত মুঠো পাকিয়ে বিছানার চাঁদর আঁকড়ে ধরেছে। হৃদয়রাজকে আঘা*ত করতে হাহাকার অন্তরজুড়ে।
– হওয়াই উচিত।এই অভিশাপের উপস্থিতি বড়ই অশুভ।
ক্রোধ হলো রোযার।ছেলেটি নিজেকে দোষারোপ করছে।এর প্রতি কি সামান্য খেদটুকুও প্রদর্শন করা যাবে না?হাত তুলে দুর্বল ঘু*ষি বসালো পিঠে।তাতে নিজেই ঘাত পেলো।তবুও বারকয়েক ঠেলে বিড়বিড় করলো,
– ইডিয়ট!আমি তোমাকে ঘৃণা করি।একটা পাষন্ড, নির্দয়,নিষ্ঠুর, জঘণ্য লোক!
ঘুরে রোযার হাত পাকড়াও করলো আসমান।নিজের দুহাতের মুঠোয় ব্যান্ডেজ পাকানো হাতখানি তুললো সযত্নে। কৃষ্ণগহ্বরজুড়ে দুশ্চিন্তা।

– স্টপ প্লিজ….ডোন্ট হার্ট ইওরসেল্ফ।
অভিমানী হিমপর্বত গলে অশ্রু হয়ে ঝরতে লাগলো নয়ন বেয়ে।বড্ড বদভ্যাস হয়েছে তার। প্রিয়তমর নিকট কিছুতেই লোকায়িত থাকেনা অনুভূতি।আস্ফালন ঘটে তীব্রভাবে।রোযার ক্রন্দনরত অবয়বে তাকালো আসমান,তার শীতল দৃষ্টিমাঝেও জ্বলজ্বল করে উঠলো আবেগের ফোঁটা।একটি হাত অগ্রসর করে কপোল মুছলো জ্যোৎস্নার।পুনরায় সিক্ত হয়ে পড়লো তা বিসর্জন ধারায়।

– অসহ্যকর এই অনুভূতি!আমি তো চাইনা,তবুও কেন ফিরে ফিরে আসে?কেনো তুমি ফিরে আসো?হারিয়ে যেতে পারোনা?কিংবা আমি নিঃশেষ হয়ে যেতে পারিনা চিরতরে?
আসমানের বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে গেলো রোযার অধর, আলতো চাপে বাকরুদ্ধ করলো শব্দদের।টলটলে আবেদনে ঝুঁকলো অতি নিকটে,অনুভূতির প্রকম্পন তুলে কপালে কপাল ঠেকালো, বুজে ফেললো আঁখিজোড়া।স্তব্ধ হয়ে রইলো রোযা।কান্না তার দলা পাকিয়েছে কন্ঠে।
– ভেবেছিলাম অবহেলাই মুক্তি। দূরে ঠেলে দিয়েছিলাম,ভালো থাকার অঙ্গীকারে।বুঝতে পারিনি, কত বড় ভুল করেছে এই অস্তিত্ব।

বাক্যগুলো আসমানের অনুভূতি প্রকাশে যথেষ্ট,অন্তত রোযার নিকট।বুঝতে পারে সে এই বান্দাকে।তার না বলা অনুভূতিকেও। রোযাকে বারংবার দূরে ঠেলেছে অমানিশা।কেনো?কারণ সে ভয় পেয়েছিল।নতুন এক সম্পর্কে নিজেকে আবদ্ধ করার ভয়।নিজের অভিশপ্ত ভাগ্যচক্রে কাউকে টেনে আনতে বাঁধ সাধছিল মস্তিষ্ক।অন্তরের চাহিদা উপেক্ষা করে তাই তীব্রভাবে আ*ঘা*ত করেছে,দূরে পাঠিয়েছে সর্বশক্তিতে।নিজের প্রতি নিজেই হতাশ অমানিশা,ভাগ্যের প্রতি ভরসা নেই তার বিন্দুমাত্র।
আসমানের বদ্ধ চোখের পাতা বেয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পতিত হলো রোযার কপোলে,উভয়ের অশ্রু আজ মিলেমিশে একাকার।ক্রন্দনরত কন্ঠে রোযা বললো,

– ঠিক আছে।চলে যাবো দূরে কথা দিচ্ছি। আর কষ্ট দেবো না।তুমি ভালো থেকো নিজের মতন।আমি নাহয় তোমায় দূর থেকেই চাইবো,বুঝবো তোমার অনুভূতি আমার ভাগ্যে লেখা হয়নি।কেমন?
– না!
অতর্কিতে খুলে গেলো আসমানের আঁখিজোড়া।ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সে তাকালো,রোযার পানে।অশ্রুসিক্ত নজরে বিড়বিড় করলো,
– প্লিজ…. যেও না।
অত্যন্ত ক্ষীণ শোনালো কণ্ঠটি।আসমানের অভ্যন্তর থেকে এমন অনুভূতিপূর্ণ স্বরের উদগীরণ সম্ভব রোযা এর পূর্বে ধারণা করেনি কোনোদিন।

– তোমায় রক্ষা করার ওয়াদা করেছি,পালন করবো অন্তিম মুহুর্ত পর্যন্ত।সুস্থ হও,বাসায় নিয়ে যাবো।
– উহু চাঁদ,আর নয়।আমায় ক্ষমা করো,কিন্তু বোঝা আর বাড়িও না,ঋণের শৃংখলে জর্জরিত করোনা, দোহাই লাগে!
ঝরলো এক ফোঁটা অশ্রু, পতিত হলো রোযার নয়ন বরাবর, বুজে এলো পল্লব,অনুভব করলো অমানিশার অনুভূতিকে।পুনরায় কপালে ঠেকলো কপাল, কপোলে তালু,মুঠোয় হাত,স্পর্শ হলো প্রশস্ত বক্ষ বরাবর।চোখ খুলে আসমানের নত অবয়ব লক্ষ্য করলো রোযা,যেন প্রলয় স্বয়ং সমর্পণ করেছে নিজেকে তার পদক্ষেপে।
– তুমি কি চাও রোযা?
ভাঙা ভাঙা শোনালো কন্ঠস্বর।প্রশ্বাস টানলো রোযা।দূরত্ব ঘুচেছে আজ।আবেগের তাড়নায় ধুঁকছে অন্তর।
– জোরপূর্বক পরিণতি চাইনা।তাই বলছি, বিদায় দাও।
– কিন্তু আমি যে চাই!

দৃষ্টি মেলে রোযার নয়নে নিগূঢ় দৃষ্টিপাত ঘটালো আসমান।ঘোষণা করলো,
– ভুল শোধরাতে চাই।উপেক্ষক নয়,রক্ষক হতে চাই।জীবন নতুনভাবে আরো এক পাঠ পড়িয়েছে আমায়।বিচ্ছেদের বদলে মিলন চাই।হৃদয় ভাঙতে নয়, জুড়তে চাই।দূরে সরিয়ে রক্ষার বদলে কাছে টেনে ভাগ্যের চোখে চোখ রেখে মোকাবেলা করতে চাই।একটিবার সেই সুযোগ দেবে আমাকে?

হৃদস্পন্দন থমকে এলো। সমস্ত বিষাদ যেন দূরীভূত হলো সন্নিকটতার মায়ায়। বাঁধ ভেঙে এলো অশ্রুর জোয়ার।অনুধাবন করতে পারছে অন্তর,আসমানের পরবর্তী বক্তব্য কি হতে পারে।বেহায়া অন্তর পুনরায় বুক বাঁধলো আশায়। এবার ভাগ্য নিরাশ করলোনা। আরও নিকটে ঝুঁকলো আসমান,রোযার কপালে লুটিয়ে পড়ল তার মসৃণ চুলের গুচ্ছ।নাকের ডগায় ঠেকলো মাস্ক,যা আনমনেই আঙুল বাড়িয়ে টেনে সরিয়ে দিলো রোযা। হৃদয়েশ্বরের অস্তিত্ব অবলোকন করতে চায় তার সত্তা।অবশেষে ধ্বনিত হলো,

ডার্কসাইড পর্ব ৩৭

– আমায় বিয়ে করবে রোযা?
ঠিকরে এলো অশ্রুজল,আবেগে কাপলো অধর, শিরশির তরঙ্গ খেললো অঙ্গে।সুধার মতন বারংবার প্রতিধ্বনিত হয়ে চললো অমিত কন্ঠস্বর।
– কথা দিচ্ছি,চেষ্টা করবো নিজেকে গোছানোর….
রোযার কপালে লেপ্টে যাওয়া কেশরাশি সরিয়ে দিতে দিতে অতি আবেগে আসমান আবারো জানালো,
– তোমার তরে আরো একবার বিনাশ ঘটুক আমার।

ডার্কসাইড পর্ব ৩৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here