নীলের হুরপাখি পর্ব ১৬
কারিমা ইসলাম কেয়া
হুর কারও উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে ঘুরতেই হুরকে ধাক্কা মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিল।
হুর 1 তলা ছাদ থেকে পড়ে যেতে লাগলো কিন্তু হাত বাড়িয়ে দিল সেই মানুষটির দিকে। মানুষটি ওহ হুরের হাতের ইশারায় ছাদ থেকে লাফ দিল।
দুজনই গিয়ে পড়লো সুইমিং পুলের পানিতে।
নীল হুরের গলায় এক হাত রেখে অন্যহাত কমোরে
রেখে হুরকে কাছে টেনে তাদের মাঝের দূরত্বের ইতি টানলো।
নীল নিজের ঠোঁটের ভাজে হুরের ঠোঁটজোড়াকে নিজের অংশ হিসেবে দখল করে নিল। তাদের উত্তপ্ত শরীর ঠাণ্ডা পানির স্পর্শে ভিজে হীম হয়ে গেল।
দুজনেরই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। দুজনই ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে লাগলো।
নীল হুরের ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিল। দুজনই পানির উপরে মাথা বের করে ফেলল। নীল হুরের হাত ধরে দুজনে সাতঁরাতে লাগলো।
পাড়ে এসে দুজনেই থামল। নীল হুরের কমোর ধরে
উপরে বসাল। হুরের কমোরে স্লাইড করে বলল,
নীল ঃ কেমন লাগলো পাখি ওয়াটার রোমান্স। আই নো ইউ লাইক ইট।
হুর জোরে জোরে শ্বাস টানছে। হুর নীলের শার্টের কলার চেপে ধরলো।
হুর ঃ পাগল নাকি আপনি, এভাবে কেউ কাউকে এক তলা ছাদ থেকে ধাক্কা মারে। এখনো আমার বুক ধকপক করছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নীল ঃ তাইইই।
নীল হুরের বুকে মাথা রাখলো।
নীল ঃ নীল, নীল, নীলাদ্র আমি তহ শুধু এই তিনটে শব্দই শুনতে পাচ্ছি।
হুরের বুকের ধকপকানি আরও বেড়ে গেল। এতটাই জোরে আওয়াজ হচ্ছে যেটা নিস্তব্ধ রাতের আধারে ঢোল পিটানো বাজনার মতো শব্দ উঠে গেলো।
নীল হাসঁলো
নীল ঃ তর হৃদপৃণ্ডের প্রতিটা ধপকানি ওহ আমার নাম উচ্চারণ করে বারবার প্রতিধ্বনিত হয়।
হুর নীলের দিকে তাকালো। সেই চোঁখে ফুটে উঠলো একরাশ আকুতি, অভিমান, অভিযোগ।
নীল হুরের গলায় নাক ঘসতে ঘসতে আলতো নেশা গলায় বলল,
নীল ঃ খুব হট লাগছে আজ তোকে, এতটা হট তকে টাওয়াল ড্যান্সের সময় ওহ লাগে নি।
মূর্হর্তেই হুরের মুখটা রাগে রুপান্তরিত হলো। নীলকে ধাক্কা দিল পানিতে।
হুর ঃ দূরে থাকুন আপনার মতিগতি ভালো না।
নীল হাসঁল আবারো মন মাতানো মিষ্টি হাসিঁ।
নীল ঃ এটাঁ তর আর তর বাপের আমার কাছে বিয়ে দেওয়ার আগে চিন্তা করা দরকার ছিল।
বউকে যদি সোপিচের মতো সাজিয়েই রাখার জন্য
বিয়ে করতাম তাহলে তকে না, বাজার থেকে একটা পুতুলকে কিনে এনে বিয়ে করে সাজিয়ে রাখতাম।
নীল হুরকে কোলে তুলে নিল।
নীল ঃ মনে রাখিস, নিজের অধিকারকে নিজের আয়ত্তে আনতে না জানতে তুই নারী নয়।
হুর ঃ নামান আমায়, লাগবে না আমার আপনার হেল্প। আপনার হেল্পের চোটেঁ এখনো আমার বুক
ভয়ে ধকপক করছে।
নীল হুরের কমোরটা আরেকটু জোরে চেপে ধরল।
নীল ঃ পাখি,,,ভয় আর উত্তেজনার আরেক নামই হলো তর জীবনে নীলাদ্র সরকার।
হুর ড্রেস চেঞ্জ করে গরম কফি বানিয়ে খাচ্ছে।
হুর কফির মগে চুমুক দিল।
হুর ঃ কিহ ইটিশপিটিশ লোক, ওভাবে আমায় 1 তলা থেকে ধাক্কা মারলো, ভাগ্যিস ওমন লাফালাফি করার অভ্যেস আছে নাহলে তহ
আজ ওই এক লাফে সর্গে চলে যেতাম।
আবার বলে ওয়াটার রোমান্স কেমন লেগেছে।
সালা হারামি, মাঝে মাঝে মনডাই চায় তর টেস্টটিকে এক লাথি দিয়ে সব ইটিশপিটিশ বন্ধ করে দিই।
পরের দিন হুরের জ্বর বেড়ে গেল। জ্বরের একমাত্র কারণ যেহেতু নীল। তাই হুরের জ্বর যত বাড়তে লাগলো। তইটাই হুরের নীল নামক শব্দটা মনে যবে গেল। হুরের মনে হচ্ছে এই তাপমাত্রাটাও নীলের।
হুর ঃ মনে হচ্ছে এই শরীরের জ্বালা তাপ কোনটাই আমার না সবটুকু আপনার।
হুর নিজের মনে বকবক করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেল।
নিলাসা ঃ হুর এখন তর কেমন লাগছে।
কথা বলছিস না কেন হুর?
নীলাসা ভয়ে ভয়ে হুরের কপালে হাত রাখলো হুরকে ঝাকিয়ে বুজল হুর তার জ্ঞানে নেই।
নিলাসা ঃ ও লামীম ভাই , নীল ভাই, কাকি, মা তোমরা কোথায় এখানে আসো, হুর নিজের সেন্সে নেই।
সকলে রুমে আসলো হুরের এই অবস্থা দেখে সবাই চিন্তাই পড়ে গেল। লামহা কান্না কাটি জুড়ে দিল।
নীল রুমে আসলো অসুস্থ শরীরে। হুরের এই অবস্থা দেখে তার পাগল প্রায় অবস্থা।
নীল অসুস্থ শরীলেই হুরকে কোলে তুলে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হলো।
হুরকে ভর্তি করা হলো। নীলের অবস্থা ওহ আরও খারাপ হলো হসপিটালে গিয়ে।
নীলকে ও ভর্তি দেওয়া হলো। শত চেষ্টার পরেও তাকে অন্য কেবিনে শিপ্ট করানো গেল না। তার কথা হলো সে তার পাখিকে ছেড়ে অন্য কোথাও যাবে না।
তাদের একই কেবিনে রাখা হলো পাশাপাশি দুটো বেডে।
তবে নিরাপত্তার দিক থেকে কড়া সচেতন নাহিদ সরকার আর হায়দার সরকার। তাই তারা দুই ভাই সারা রাত পাহাড়ায় থাকলো।
তাদের এই অবস্থার কারণে ইংগেজমেন্ট ডেট আরও পিছলো।
হুর আস্তে আস্তে চোঁখ খুলল। চোঁখ খুলতেই তার প্রথম নজর হলো নীল।
হুর মনে করার চেষ্টা করলো তার সাথে কিহ হয়েছে।
তখনই মা লামহা আর নিলাসার কান্নায় মনোযোগ কারলো হুরের।
লামহা হুরের কপালে চুমু খেল।
লামহা ঃ হুর মা আমার। এখন কেমন লাগছে মাকে বল।
লামীম ওহ কান্না কান্না অবস্থা।
নার্স ঃ আপনারা এখন বের হন। রোগীর 2 দিন পর এই মাত্র জ্ঞান ফিরলো। এখন তাকে কোনোভাবেই মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না।
সকলে বাইরে গেল।
রুহানি ঃ মা আমার হুরের জ্ঞান ফিরেছে।
চারুলতা ঃ আল্লাহর অশেষ অশেষ রহমত রুহানি আমার নাতি, নাতনিদের নিয়ে বাড়ি ফিরো।
এখন রুমের ভিতর শুধু নীল আর হুর।
হুর ঃ এখন শান্তি হয়েছে আপনার।
নীল ঃ একদমই নয়, মাথায় শুধু একটা কথায়ই ঘুরপাক খাচ্ছে, যে মেয়ে ওয়াটার রোমান্সেই 2 দিন অজ্ঞান তার সাথে বেড রোমান্স,,,,
হুর ঃ চুপ থাকুন, আপনি না আপনার হবু বউ তুবার কথা ভাবুন।
নীলঃ হুম ভাবছি তহ, ওকে নিয়ে ভাবা ছাড়া আপাদত কোনো রাস্তা দেখছি না।
হুর রেগে গেল, ফল কাটার ছুরিটা হাতে নিয়ে নীলের দিকে এগোতেই দরজা খুলার আওয়াজে হুর সেদিকে তাকালো।
তুবা ঃ হুর ননদীনি এখন কেমন আছো, আর হাতে ছুরি।
হুর ঃ বরাবরের মতোই খুব ভালো। আসলে ফল কাটার জন্য ছুরিটা হাতে নেওয়া।
তুবা হুরের হাত থেকে ছুরিটা নিল।
তুবা ঃ আমি হেল্প করে দিচ্ছি। ওহ নীল বেইবি এখন কেমন আছো।
নীল ঃ ভালো।
তুবা নীলের কপালে হাত রেখে জ্বর মাপলো।
তুবা নীলের দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ হয়ে।
নীল চোঁখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
হুর ওদের এই অবস্থায় দেখে বিছানার চাদর চেপে ধরল।
আজই করে ছেড়ে দেওয়া হবে। হুর শুয়ে আছে। হায়দার সরকার আসলো মেয়ের জ্ঞান ফিরেছে শুনে।
হায়দার সরকার হুরের কপালে হাত রাখলো। হুর আস্তে আস্তে চোঁখ খুললো।
হায়দার ঃ এখন কেমন আছিস আম্মা।
হুরের চোঁখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
হুর ঃ ভালো।
হুর উল্টো দিক ফিরে গেল। হুরের এরুপ ব্যবহারে তার মনে কিছু চলতে শুরু করলো। সে বেরিয়ে গেল।নীলের ঘুমন্ত মুখের দিকে একবার তাকিয়ে।
কেটে গেল মাঝে 7 দিন। আজ নীল আর তুবার ইংগেজমেন্ট ডেট।
সরকার বাড়িতেই আয়োজন করা হয়েছে অনুষ্ঠানের।
খন্দবাড়ির ওহ সকলে উপস্থিত। তাকরিম খন্দকার
কমল সরকারের সাথে কথা বলছে।
কেটে গেল আরও বেশ কিছুটা সময়। বাড়ির ড্রয়িং রুমে সকলেই উপস্থিত। নীল আর তুবা সোফায় বসে আছে।
নাহিদ ঃ তাকরিম আপনার অনুমতি থাকলে অনুষ্ঠান শুরু করা যাক।
তাকরিম ঃ হ্যাঁ সময় বেশ গড়িয়েছে। রাত 10 টা বেজে গেছে।
নীলের হুরপাখি পর্ব ১৫
নীল অনুভূতি শুন্য চোঁখে তাকিয়ে আছে তার কোনো হেলদুল নেই। আর তুবা তহ মহাখুশি।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। একপর্যায়ে নীলকে তুবাকে আন্টি পড়ানোর জন্য বলা হলো।
নীল আন্টি হাতে নিয়ে তুবার দিকে এগোতেই থেমে গেল হুরের কথায়।
হুর সিড়ি বেয়ে নামছে সকলের দৃষ্টি তার দিকে।
হুর ঃ নীল আমার ভিষণ ঘুম পাচ্ছে চলে এসো।
