কালকুঠুরি পর্ব ২৫

কালকুঠুরি পর্ব ২৫
sumona khatun mollika

বেলা ডুবি ডুবি। তপ্ত দুপুরের রোদ ঢলে ছায়া পরেছে। গাড়ি থেকে নেমে একটু সামনে পদ্মার পাড়ে গিয়ে দাড়ালো চারজন। সিভান আর ইতি সামিরের হাত ধরে। মাহা সিভানের হাত ধরে আছে। নদীর ধারের বাতাসে মাহার নিকাব উড়ছে। সামির বলল,,

– খুলতে পারো এদিকে কেও আসবেনা। ।
– গ্যারান্টি কি?
– গ্যারেন্টি সামির সিকান্দার ।
– তাহলে হলোই।
– নাটক মারাসনা। তোর পানির মতো সুন্দর থোবড়ার যাতে কেও দর্শন না পায় তাই আগেই রিজার্ভ করে দিয়েছি । আমিতো আর ফকিন্নির ঝি নই। চাইলে বোরখাও খুলতে পারো। কেও বলতে কেওই আসবেনা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মাহা কথা বারালোনা। বোরখাটা খুলে গাড়িতে রেখে এলো। সামির গলা উচিয়ে বলল ,,
– দিবা,,ব্যাক সীটে শপিং ব্যাগে দেখ।
ব্যাগটা খুলে মাহা একবার উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে থাকা সামিরের দিকে তাকালো। তারপর ব্যাগ থেকে নিজের নীল ওড়নাটা বের করে গায়ে জড়ালো। উঁচু বাধের ওপর থেকে নিচে নামার সময় সামির মাহার দিকে হাত বারিয়ে দিল কিন্তু মাহা সম্পূর্ণ রূপে তাকে অবহেলা ঠেলে দিল।

– ঢওং শালার বাঙ্গিমারা জিন্দেগী!
নিচে নেমে আবারো চারজন একে অপরের হাত ধরে সামনে হাঁটতে লাগল। বাঁধের ওপর দাড়িয়ে থাকা শিমুল গাছের পাতাগুলো শেষ বেলার রোদে চিকমিক করছে।
বাতাসে মাহার দুরন্ত চুলগুলো ঝিরঝির করে উড়ছে। সিভান জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,,
– আমাদের পদ্মার পাড় কি সুন্দর! তাইনা কাকা, একদম কাকি সুন্দরীর মতো।
– সুন্দর তো হবেই কক্সবাজার লাইট বলে কথা।

কোথা এক শিশু হকার এসে বলল,,
– আপনে সামির ভাই? আপনেরে দেখা’র মেল্লা শখ ছিল।
সামির মাজায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,,
– কেনরে? আমার লগে তর বোইন বিয়া দিবি? তাইলে সেই বালিতে গুড়! এদ্যেখ আমার বউ , তোর চে সুন্দর কিন্তু তোর মতই ফকিন্নির ঝি।
– আপনের নাম মাহাদিবা ?
– হ্যা।
– ও, আপনেই তাইলে সেই ঐতিহাসিক বউ, জামাইরে দেনমোহর দিছিলেন তাইনা?

সিভান মুখ টিপে হেসে ফেলল। সামির বলল,,
– এ শালি বাঙ্গির নাতনি? দুন্নাম ভরার জন্য ডেকেছিস!
– দুর্নাম হবে কেন ভাই ? আপনেতো সেলিব্রিটি মানুষ। পুরা রাজশাহী জাইনা গেল! আপনেরে আপায় ১ লাখ ট্যাকা দেনমোহর দিছে।
– আরে আশ্চর্য! এটা কেমন বালের লজিক! মেয়েরা কেন দেনমোহর দিতে পারবেনা? ছেলেরা যে আজীবন ওদের টেনে বেরায়? বদলে মাত্র কটা টাকা দিলে কি ক্ষতি?

– তাইলে আমারে কয়ডা ট্যাকা দেন। আমরাতো খাইট্টাও পাইনা।
– ট্যাকা তোমার পশ্চাৎপদে ভরে দিচ্ছি । আমাকে বুঝি তর মরা বাপে ট্যাকা দিয়ে যায়। ? ।
মাহা বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে বলল,
-বেকার কাজেতো টাকা লাগাতে পারেন, ছোট বাচ্চাটার একবেলার অন্য জোগাড় করে দিলে কি ক্ষতি?
সামির আর কথা বারালোনা। একশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিল বাচ্চাটার হাতে। বাচ্চা মেয়ে টা চলে গেল।

ঈশান কোণে জমা হয়ে থাকা মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে মাহা বলে উঠলো,
– দেখলেন আপনাকে ভরসা করা যায় না সামির সিকান্দার।
– ওরা ওদের কাজ ঠিকমতো না করলে আমি কি ছিড়তে পারি?

বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা । সিভান আর ইতি চিকচিকে বালির ওপর আঁকিবুঁকির খেলায় মেতেছে। মাহা তাদের সাহায্য করছে। সামির একটা পাথরের ওপর বসে। পাথরের ওপরে বসে মাহার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে সামির । নিজের মনে মনে গান বাজাতে থাকে,,

~ একটা প্রেমের গান লিখেছি
আরতাতে তোর নাম লিখেছি ,
মাঝরাতে বদনাম হয়েছে মন,
যেইনা প্রেমের ইচ্ছে হলো,
তোর পাড়াতেই থাকতে গেল,
ডাকনামে তোর ডাকতে গেল মনন
কি করি এমন অসুখে জমেছে মরণ এবুকে।।

পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে গুজে তাতে আগুন ধরালো। আবহাওয়া ধিরে ধিরে ঠান্ডা হচ্ছে। মাহা ধির পায়ে এগিয়ে এসে সামিরের পাশে বসল। আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করে মাথার ওড়না নামিয়ে দিল। ডান পাশে ঘাড় কাত করে সিভান আর ইতির দিকে তাকিয়ে রইল।

– শৈশব ভিষণ সুন্দর একটা সময় তাইনা সামির সিকান্দার?
– সুন্দর কেন? বিষাক্ত কেন নয়! আমারোতো শৈশব ছিল। কিন্তু সেটাকে শৈশব বলা যায় না। সেটাকে কারাগার বলা যায়।
– যদি তাই হয় তাহলে আপনারতো সিভানকে একটু বোঝা দরকার। সে বিনা কারণে একটা মুক্ত কারাগারে বন্দী হয়ে আছে। । তার দিকে একটু নজর দিলে কি হয়?

– তুমি আছোতো। দাওনা নজর।
– সারাজীবন তো থাকবনা।
– কোথায় যাবে? আমিতো কোথাও যেতে দেবনা।
– ধরুন মরেই নাহয় গেলাম।
– চুপ করত বাঙ্গির নাতনি । হা করে বাতাস গিল। ভ্যাট বকিসনা।
মাহা সামিরের ঠোঁট থেকে সিগারেট টা টেনে দুরে ছুড়ে মারল। সামির দুইদিকে ঘাড় নাড়িয়ে দেহ দুলিয়ে হাসল।
– ভালো হতে টাকা লাগেনা। শুধরে যান
– টাকা লাগেনা জন্যই শোধরাবনা। আফটারঅল আমিতো ফকিন্নির ঝি নই। আমাকে সোজা করা আর কুত্তার লেজ সোজা করা একি ব্যাপার। ইউনিভার্সাল ব্যাকা। সম্ভব না।
– সম্ভব শুধু, কোনো একটা উছিলার প্রয়োজন পরে। উছিলাটা যদি আমি হই??
সামির দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল কেমন অদ্ভুত স্বরে বলল,,

~ চেষ্টা আপনি করতেই পারেন
ম্যাজিস্ট্রেট আফুজান্স , তবে,,
আমাকে খুজে পেতে আপনাকে
মহাসমুদ্রের গভীর অতলে তলিয়ে যেতে হবে। ।

– আমি কিন্তু সাঁতার জানি সামির সিকান্দার।
– হুমমহ আমি এমন গভীর জলের মাছ যেই গভীরতায় পানির চাপ সহ্যের ক্ষমতা তোমার নেই।
– আর যদি থাকে?
– শুধরে যাওয়ার চেস্টা করতে পারি।

বড্ড অবহেলা নিয়ে কথা টা বলল সামির। মাহা বয়ে আসা ঢেউগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল।
বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা পার হলো । ভেতরে ঢুকতেই সামনে পরল ইনায়া। সামির মনে মনে ভাবল, ইনায়াকে তো বলা হলোনা। যাকগা।

তখনি কাশেমের কল রিসিভ করতে ওপাশ থেকে ভেসে আসে,,,
– ভাই,, ওরা রনিরে মাইরা দিছে।
– কিই??
– হ ভাই। তাততাড়ি আসেন। ক্লাবের মধ্যে আসেন। পেছন রুমে।

সামির বিনা নোটিশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ক্লাবে পৌছতেই দেখে আজকে ভেতরে শোরগোল নেই। সবকিছু কেমন স্তব্ধ!! ভেতরে ঢুকতেই দেখে,, একটা বেঞ্চে রনির নিথর দেহ। সামির ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,,, পাটির তো অভাব নাই তাহলে রনি কে মারলোটা কে? কাইশসা?

– বিকালে আমাদের সাথেই ছিল ভাই। বাড়িত যাওয়ার রাস্তায় এ দুর্ঘটনা। দেহেন চাকু দিয়া মারছে।
সামির সাদা কাপড় সরিয়ে বড্ড মন দিয়ে দেখে বলল,,,
– পুলিশ লাশ কখন নিআইছে?
– সন্ধ্যাবেলা।

ক্লাবের ভেতর রনির মা, বাবা এসে হাহাকার জুরে দিলেন। সামির স্পষ্ট বুঝতে পারল এটা সাথির শশুর বাড়ির লোকজনের কাজ হবে। মাহবুব উদ্দিন বাঁকা চোখে জিজ্ঞেস করল,,
– বাহ্‌ এখানেও সামির সিকান্দার !

– অবশ্যই,, জলেতে, কলেতে, আকাশে, বাতাসে, যেখানেই তুমি চাইবে সেখানেই মোকে পাইবে,,,
– এটাতো আপনার পালের গরু,, টপকালোটা কে?
– আমার মুর্দা শশুড়।
মাহবুব উদ্দিন বাঁকা করে হাসল। তদন্তের কাজ শুরু হলো। সামির একদম শান্ত শিষ্ট হয়ে রইল যেন কিছুই হয়নি। রনি বরাবরি সামিরের চামচামি করা চেলা। সেজন্যই হয়ত তাকে এভাবে মেরে দেয়া হলো।

সেখান থেকে সোজা বাড়ি চলে গেল। বারান্দা টপকে ভেতরে ঢুকতে দেখে মাহা বলল,,
– সবসময় চোরের মতো দেয়াল টপকান কেন। দড়জাটাকি চোখে পড়েনা?
– মনে ধরেনা।

কালকুঠুরি পর্ব ২৪

তারপর টেবিলে গিয়ে পড়তে বসে গেল। মাহা পেছন থেকে উকি দিয়ে দেখল, সামিরের হাতের লেখা শুধু সুন্দরই নয় বরং স্পিডীও। ঝড়ের গতিতে লেখছে সামির। মাহা নিজেও বইখাতা বের করে পড়তে বসে গেল। সামির একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল অতঃপর আবার পড়ায় মন দিল।

কালকুঠুরি পর্ব ২৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here