বাদশাহ নামা পর্ব ৩৭+৩৮

বাদশাহ নামা পর্ব ৩৭+৩৮
আমিনা

ধারালো, লম্বা চকচকে রাম দা টা হাতে নিয়ে ক্ষীপ্র গতিতে মাঞ্জারের পেছন দিকের উদ্দেশ্যে এগোচ্ছে অ্যানা। ওর মাথার ওপর দিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে ডেকে সামনে উড়ে চলেছে ফ্যালকন। একটা কালো রঙা ট্রাউজার আর অফ হোয়াইটের একটা অফশোল্ডার বেলিলেস টপ পরিহিতা অ্যানার স্ফিত বক্ষ তার হাটার গতির কারণে কেঁপে কেঁপে উঠছে। কুচকুচে কালো রঙা চুলগুলো একটা হৃষ্টপুষ্ট বেনীতে রুপান্তরিত হয়ে পিঠের ওপর দোদুল্যমান। ওর প্রতিট পদক্ষেপে কেঁপে উঠছে সেখানের মাটি। চোয়ালদ্বয় শক্ত হয়ে জানান দিচ্ছে ওর তীব্র রাগের; চোখ জোড়াতে ভয়ঙ্কর তেজ, যেন সামনে যাকে পাবে তাকেই ওই শাণিত চোখের দৃষ্টি তে ভস্ম করে দেবে।
আর একটু এগোতেই শার্লটের চাপা চিৎকার এবার অ্যানার কানে স্পষ্টভাবে এসে পৌছালো, অ্যানা রামদা টা হাত থেকে বাতাসে ছুড়ে মেরে ঘুরিয়ে এনে দক্ষ হাতে ধরলো আবারও, তারপর এগিয়ে গেলো সে মানুষরূপী জানোয়ার গুলোর দিকে।

মাঝারি সাইজের একটি গাছের সাথে হাত জোড়া পিঠ মোড়া করে বেধে রাখা হয়েছে ব্রায়ান কে। তীব্র গতিতে নিজেকে সেখান থেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ও৷ কাপড় দিয়ে মুখ বাধা ওর শক্ত করে, তা সত্বেও সাহায্য পাওয়ার ক্ষীণ আশায় চিৎকার দিয়ে চলেছে ও। কিন্তু চাপা শব্দ ছাড়া আর কোনো কিছুই শোনা যাচ্ছে না! ওর দুপাশে নতুন ওয়ার্কার্স হয়ে আসা ছেলে গুলোর দুজন দাঁড়িয়ে আছে, থেকে থেকেই নিজেদের হাতের বজ্রমুষ্ঠি তে ছটফট করতে থাকা ব্রায়ান কে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে ওরা।
শার্লট কে পিঠ মোড়া করে বেধে শুইয়ে রাখা হয়েছে ব্রায়ানের সামনে, পোশাক ওর এলোমেলো। মুখ টা কাপড় দিয়ে বাধা। মেরুণ রঙা গাউন টা হাটুর ওপরে উরুতে উঠিয়ে রেখেছে ওরা। ছেলে গুলোর হাতের অশ্লীল ছোয়া বার বার ঘুরে বেড়াচ্ছে শার্লটের পুরো শরীর জুড়ে। মুখ বাধা অবস্থাতেই নিজের ইজ্জত রক্ষা করতে প্রাণপণে চিৎকার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শার্লট।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এক পাশে কিছুটা আগুন করে চারপাশ টা সামান্য আলোকিত করে ছেলে গুলো শার্লট কে ঘিরে বসে বসে মদের বোতলে চুমুক দিচ্ছে থেকে থেকে। ওদের ভেতরের লিডার গোছের একজন শার্লটের অফশোল্ডার পোশাক টির বুকের দিকে একবার দৃষ্টি দিয়ে, অশ্লীল হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলো ব্রায়ানের দিকে।
ছেলেটিকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে গাছের সাথে বাধা ব্রায়ান যেন মরিয়া হয়ে গেলো নিজেকে ছাড়িয়ে এখনি এই ছেলেটার গলার ওপর পা দিতে। ব্রায়ানের চোখে সেই তেজ স্পষ্ট দেখতে পেলো ছেলেটি। খ্যাকখ্যাক করে হেসে উঠলো সে। তারপর ব্রায়ানের মুখের নিকট মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দরাজ গলায় বলে উঠলো,

— তোর বোন টা একটা খাসা মাল! আজ রাত টা জমবে ভালো। ওদিকে ফুল সাউন্ডে গান বাজছে, সব্বাই নাচা গাওয়া করছে, আমরাও তোর বোনের সাথে এখানে এনজয় করবো! হেব্বি মজা হবে আজ। সকাল বেলা সবাই উঠে দেখবে তুই আর তোর বোন এইখানে মরে পড়ে আছিস! কিন্তু কেউ কিচ্ছুটি করতে পারবে না। কেউ জানবেও না কে করেছে এই কাজ। এমন ভাবে তোদের কে আজ মারবো যে মানুষ ভাববে রেড জোন থেকে কোনো বাঘ ভাল্লুক এসে তোদের কে মেরে রেখে গেছে!
খ্যাকখ্যাক করে আবারও হাসলো ছেলেটা। তারপর হঠাৎই শক্তহাতে ব্রায়ানের চোয়াল চেপে ধরে ওর কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

— কি ভেবেছিলি? তুই! তোর মতো একটা ব্রায়ান আমাদের কে সাদ্দিন না খাইয়ে রাখবে, আর আমরা ছেড়ে দেবো? কখনোই না, ওই সাদ্দিনের খাওয়া আজ তোর বোন কে খেয়ে উসুল করবো, আর তুই এইখানে বসে বসে দেখবি, কিচ্ছু করতে পারবিনা! তোর কোনো বাপ আজ তোকে বাচাতে আসবে না!
কথা গুলো শেষ করে ব্রায়ানের কানের কাছ থেকে মুখ সরিয়েই ব্রায়ানের চোয়াল বরাবর লাগালো একটা ঘুষি, ব্রায়ানের মাথাটা যেন ছিটকে অন্যদিকে সরে গেলো সে ঘুষির দাপটে। ঠোঁটের বাম কোণা কেটে গিয়ে সেখান থেকে দরদর করে রক্ত বেয়ে পড়তে শুরু করলো। ব্রায়ান রাগে দুঃখে কেঁদে ফেললো এবার। নিজের চোখের সামনে নিজের আদরের বোনের এমন সর্বনাশ হতে ও কিভাবে দেখবে! চোখ দিয়েই যেন সে ছেলে গুলোর কাছে ও আকুতি জানালো ওর বোন টিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য! কিন্তু ওর সে আকুতি শুনলো না কেউ!

লিডার ছেলেটি মাটিতে শোয়ানো ভীতসন্ত্রস্ত শার্লটের দিকে এগিয়ে গেলো। শার্লটের চোখ ভরা মিনতি! যেন ওর এমন সর্বনাশ টা না করা হয়। কিন্তু জানোয়ার গুলোর কি আর মানুষের ভোখের ভাষা বোঝার মতো ক্ষমতা আছে? লিডার টি এগিয়ে গেলো শার্লটের নিকট, মুখ বাধা অবস্থাতেই চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো শার্লট। লিডার টি ঝুকে শার্লটের পোশাকের তলা দিয়ে হাত দিয়ে ওর পেট থেকে হাত ঘষতে ঘষতে নিয়ে গেলো ওর বুকের নিকট, আর এরপর মাংস পিন্ড টা গায়ের সর্বোচ্চ জোরে চাপ দিয়ে ধরে খ্যাকখ্যাক করে বিশ্রি হেসে উঠলো, ব্রায়ান লজ্জায় সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার নিকট সাহায্য চাইতে লাগলো প্রাণপণে!
লিডার ছেলেটি শার্লট কে ছেড়ে দিয়ে শার্লটের নিকট থেকে সরে এসে পাশে থাকা একটি ছেলেকে নির্দেশ করে বলল,

— নে, তোরা শুরু কর। তাড়াহুড়ো করবি না, এক এক করে শেষ করবি।
লিডারের আদেশ পেয়ে ছেলেটির চোখ জোড়া চকচক করে উঠলো। অশ্লীল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছেলেটি এগিয়ে গেলো শার্লটের দিকে। শার্লট তীব্র বেগে মাথা নাড়িয়ে ছেলেটির নিকট অনুনয় করলো তাকে কিছু না করার জন্য, কিন্তু শুনলো না ছেলেটি। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে ঝুকে এগিয়ে গেলো মাটিতে পড়ে থাকা শার্লটের দিকে। আর এরপর শার্লটের উন্মুক্ত মাংসল উরুতে হাত রাখা মাত্রই কোথা থেকে ধারালো কিছু একটা ক্ষীপ্র গতিতে উড়ে এসে লাগলো ছেলেটির গলা বরাবর, আর লাগা মাত্রই ছেলেটির ধড় থেকে মাথা টা আলাদা হয়ে ছিটকে পড়লো কোনো একদিকে। ব্যাপার টা এতটাই দ্রুত গতিতে ঘটলো যে কি হলো সেটা বুঝতেও ছেলে গুলোর সময় লেগে গেলো কিছুটা। আর এরপর শার্লটের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছেলেটার মাথার দিকে চোখ পড়তেই আঁতকে উঠলো সকলে, শুরু হয়ে গেলো চিৎকার চেচামেচি। ভয় পেয়ে ওরা এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুর করলো উত্তেজনায়। লিডার টি তাড়াতাড়ি ওদের সবাই কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

— এই, তোরা থাম, চিল্লাপাল্লা করিস না। সজাগ থাক, কেউ একজন জানে যে এদের কে নিয়ে আমরা এখানে এসেছি। চারদিকে নজর রাখ। যে-ই আসবে তাকেই ভোগে পাঠিয়ে দিবি। এত বড় কলিজা! অলিভারের ছেলেদের গায়ে হাত দিতে আসে! কে সে, তাকে আমিও দেখে নেবো।
এরপর চারপাশের অন্ধকার জঙ্গলের দিকে একবার দৃকপাত করে অলিভার উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলো,

— এই কে তুই, বেরিয়া আয়! তোর কত খানি কলিজা হয়েছে দেখি আমি! বেরিয়ে আয় এখনি বাপের বেটা হস তো!
অলিভারের কথা শেষ হতে না হতেই ওদের পেছন দিকে, মাটিতে পড়ে থাকা ধারালো রাম দা টা কোনো এক অদৃশ্য শক্তিবলে শব্দ করে মাটিতে ঘষতে ঘষতে ওদের কে পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলল, আর তার কিছু মুহুর্ত পরেই সেটা মাটি থেকে শূণ্যে উঠে ক্ষীপ্র গতিতে অন্ধকারের ভেতর তার সেই অদৃশ্য মালিকের হাতে গিয়ে ঠেকলো।
এমন ভোজবাজি দেখা মাত্রই অলিভার সহ তার সাথের ছেলে গুলো এবার যেন ভয় পেলো একটু। শিরো মিদোরি সম্পর্কে ওরা অনেক কথাই শুনেছে যে এখানে অনেক অতিপ্রাকৃতিক জিনিসপত্র ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু সেগুলো তো রেড জোনে থাকে, সেইফ জোনে তো ঢোকার কথা না! তবে এটা কি হতে পারে?

ওদের এসব ভাবনার মাঝেই অন্ধকার থেকে কে যেন এক পা এক পা করে বেরিয়ে আসতে লাগলো ওদের দিকে। সাউন্ড বক্সের উচ্চশব্দ কে টেক্কা দিয়ে তার পা ফেলার ভারিক্কি শব্দ ছেলেগুলোর বুকে যেন ভয়ের সঞ্চার করে দিতে লাগলো একটু একটু করে। তখনি ওদের মাথার ওপরে থাকা গাছ টার মগডালে শব্দ হলো কোনো কিছুর, পাতা গুলো কেঁপে উঠলো সেখানের, যেন ভারী কিছু উড়ে এসে সেখানে আয়েস করে বসেছে। ছেলে গুলো সাথে সাথেই মাথা তুলে তাকালো সেদিকে। বোঝার চেষ্টা করলো ঠিক কি এসে বসলো ওদের মাথার ওপর, কিন্তু অন্ধকারে কিছুই ওদের চোখে বাধলো না৷ এমন গা ছমছমে পরিবেশে স্তিমিত হয়ে এলো ছেলেগুলোর এতক্ষণের উল্লাস! কেমন যেন মিইয়ে গেলো ওরা। ঠিক তখনি অন্ধকারের ভেতর থেকে একপ্রকার চকচক করতে করতে বেরিয়ে এলো অ্যানা। হাতে ওর ধারালো রাম দা, চোখে হিংস্রতা।

অলিভার অ্যানা কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। ওর চোখ আটকে গেলো অ্যানার ওই শুভ্র, অসম্ভব রকম সুন্দর মুখশ্রীর ওপর। কিছুক্ষণের জন্য ও যেন কোনো ঘোরের ভেতর চলে গেলো। ব্রায়ান অ্যানাকে দেখা মাত্রই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন, অন্তত কেউ তো একজন এসেছে ওদের কে বাঁচাতে! শার্লটের চোখে মুখে ফুটে উঠলো কৃতজ্ঞতা। মাটিতে শোয়া অবস্থাতেই চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো ওর৷
অ্যানা এগিয়ে এসে দাড়ালো ছেলেগুলোর সামনে। ছেলেগুলোর নজর এখনো ওর মুখের দিকে। অ্যানা ওর ডান হাতে থাকা রামদা টা উঁচু করে বা হাতের তালুতে রেখে রামদা টার ধার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে উঠলো,

— কে শার্লট কে কিভাবে স্পর্শ করেছিস, এক এক করে বল, তার সেই অংশ টা আমি কেটে ফেলবো, এছাড়া কাউকে কিছুই করবো না। ছেড়ে দেবো সবাইকে। তোদের সময় জন প্রতি পাঁচ সেকেন্ড। এর ভেতরে না বললেই সে মায়ের ভোগে। দ্রুত, দ্রুত; আমাকে আমার বিউটি স্লিপ মেইনটেইন করতে যেতে হবে৷ ক্যুইক।
অ্যানার কথায় ছেলে গুলো যেন সম্বিত ফিরে পেলো। অলিভার ভড়কে গেলো প্রচন্ড। এটা যে ওয়ার্কার্স দের ভেতরের সবচেয়ে লম্বা সেই অদ্ভুত চাহনির মেয়েটা সেটা বুঝতে ওর আর বাকি নেই। এই মেয়েটাকে প্রথম দিন থেকেই কোনো এক অজানা কারণে ভয় পেয়ে এসেছে ও। যতবারই ওই তীক্ষ্ণ চোখ জোড়ায় ওর দৃষ্টি পড়েছে ততবারই আনুগত্যে মাথা নামিয়ে নিয়েছে ও, কেন নিয়েছে সেটা ও নিজেও জানে না। ওই দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যেন খুবই কষ্টকর!
অলিভারের চোখে মুখে ভীতি স্পষ্ট হওয়া সত্বেও সে মুখে সেটা প্রকাশ করলো না। অ্যানা কে ভড়কে দেয়ার জন্য ও মুখ টাকে যথাসম্ভব কেয়ারলেস করে নিয়ে বলে উঠলো,

— আরে, পরমাসুন্দরী যে! তুমি আবার রাম দা চালানো কবে শিখলে? এসব কি তোমার হাতে মানায়? এসব তো আমাদের কাজ! তবে এসেছো ভালোই করেছো, একটাতে আমাদের এমনিতেও হতো নাহ। আমার এক ছেলের মাথা নামিয়ে দিয়েছো তাতেও আমি কিছুই মনে করবো না। শুধু লক্ষী মেয়েটির মতো তুমি থেকে যাও এখানে। তবেই আমাদের ভুরিভোজ টা জমবে ভালো। এই তোদের কে ওই মেয়েটা দিয়ে দিলাম!
শার্লট কে নির্দেশ করে পেছনে থাকা ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল অলিভার। তারপর অ্যানার দিকে আবার চোখ ফিরিয়ে অশ্লীল ভঙ্গিতে জিহবা দিয়ে ঠোঁট চেটে বলল,
— আর এই আগুনের গোল্লা টার পুরোটাই আমার।
অ্যানা ওর কথার বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা না করে অলিভারের ঠিক পেছনে দাঁড়ানো ছেলেটার দিকে নির্দেশ করে শক্ত গলায় বলে উঠলো,

— এই যে, তুই। এদিকে আয়।
অলিভারের পেছনে থাকা ছেলেটা এক পলক অলিভারের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এলো অ্যানার দিকে। তারপর অশ্লীল ভঙ্গিতে অ্যানার সামনে গিয়ে দাড়ালো৷ অ্যানা ওর দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
— ওকে কিভাবে, কোথায় ছুয়েছিস বল।
— এই তো, এই হাত টা দিয়ে ওর উরু টা ছুয়েছিলাম। এত্ত সুন্দর, আর এত্ত নরম!
ছেলেটা অশ্লীল ভঙ্গিতে হেসে নিজের ডান হাত টা উচু করে অ্যানা কে দেখালো। অ্যানা ছেলেটির দিকে তাকানো অবস্থাতেই চোখের পলকে রামদা টা দিয়ে ছেলেটির ডান হাতের কনুই আর উরু বরাবর সাঁই করে কোপ বসিয়ে দিলো । সাথে সাথেই ছেলেটির দেহ থেকে তার হাত আর পা টা খসে পড়ে গেলো গাছের শুকনো পাতার মতো। ছেলেটা ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলো, আর পরমুহূর্তেই একটা বিকট চিৎকার দিয়ে সেখানেই জ্ঞান হারালো। কিন্তু ছেলেটা মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগেই ছেলেটার গলা বরাবর রামদা টা চালিয়ে দিয়ে এই ধরণী থেকে তার নিঃশ্বাস চিরতরে মুছে ফেললো অ্যানা৷

এরপর নির্বিকার মুখে তাকিয়ে রইলো অলিভারের পেছনে থাকা ছেলেগুলোর সারির প্রথম জনের দিকে। তারপর বা হাতের তর্জনির ইশারায় তাকে কাছে ডাকলো অ্যানা৷ কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় ছেলেগুলোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। যে মেয়ে এমন নির্বিকার মুখে কারো হাত পা গলা নিমিষেই নামিয়ে দিতে পারে সে চাইলে আর কি কি করতে পারে সেটা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ রইলো না। কোনো কিছু না ভেবেই অলিভার আর ওর সাথের অন্য একটি ছেলে ব্যাতিত বাকি সকলেই নিজেদের পেছন দিকে যে যেভাবে পারলো ছুটে পালাতে শুরু করলো। কিন্তু ওদের সে ছুটে পালানো দীর্ঘস্থায়ী হলো না। পা চালিয়ে ওরা অন্ধকারের ভেতর তলিয়ে যেতেই অ্যানা ক্ষীপ্র গতিতে ছুটে গেলো ওদের পেছনে। আর এরপর ব্রায়ান, শার্লট, অলিভার আর ওর সাথে থাকা অন্য ছেলেটির কানে শুধু একটাই শব্দ ভেসে আসতে থাকলো বারংবার৷ আর সেটি হলো ধারালো রামদার সাঁই সাঁই করে ধড় থেকে মাথা আলাদা করার শব্দ।

কিছুক্ষণ পরেই অন্ধকারের ভেতর সবকিছু নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে গেলো। শোনা গেলো না আর কারো পদশব্দ, শোনা গেলো না আর কোনো ধস্তাধস্তি, শোনা গেলো না আর কোনো ধারালো অস্ত্রের শব্দ। অলিভার সেই নিকষ কালো অন্ধকারের ভেতরে নিজের চোখ জোড়া লাগিয়ে দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো সেখানে ঠিক কি হচ্ছে, কিন্তু ব্যর্থ হলো পুরোপুরি। পরমুহূর্তেই অন্ধকারের ভেতর থেকে এগিয়ে আসতে লাগলো সেই ভারী পদধ্বনিটির শব্দ।
আর তার কিছু মুহুর্ত পরেই অলিভারের সম্মুখে জ্বলন্ত আগুনের আলোতে দৃশ্যমান হলো রক্তে পর্যবসিত একটি শুভ্র, সুডৌল দেহ। রাম দা টা কাধের ওপর ঠেকিয়ে, বাকা হিংস্র হাসিতে, পাতলা কোমরে ঢেউ তুলে এগিয়ে আসছে অ্যানা।

অলিভারের শরীরে কম্পন ধরে গেলো। অ্যানার ওই হিংস্র হাসি এসে যেন বাড়ি খেতে লাগলো ওর হৃৎপিণ্ডে, যেন ওই হাসি দিয়েই ওর বুকের হৃৎপিণ্ড টা এই ভয়ঙ্কর সুন্দরী মেয়েটি বুক চিরে বের করে আনতে চাইছে। অলিভারের পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার হাতে তখনো একটা মদের বোতল। এতসব কাহিনীর ভেতর মদের বোতল টা হাত থেকে নামাতেই এ ভুলে গেছে। হা হয়ে ভীতসন্ত্রস্ত চোখে সে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে এগিয়ে আসা অ্যনার সুশ্রী মুখ খানার দিকে।
অ্যানা এগিয়ে আসলো সোজা সেই ছেলেটির দিকেই। তারপর ছেলেটির সামনে দাঁড়িয়ে হিসহিসে কন্ঠে বলে উঠলো,

— মদ খাওয়ার খুব শখ তোর তাই না? আজ তোকে এ জনমের মতো মদ খাওয়াবো।
বলেই ছেলেটির হাত থেকে এক ঝটকায় মদের বোতল টা কেড়ে নিয়ে ছেলেটির চোয়াল বরাবর একটা বিশাল থাপ্পড় দিয়ে ছেলেটাকে মাটিতে ফেলে দিলো অ্যানা৷ ছেলেটা মাটিতে পড়ে যেতেই ছেলেটার বুকের ওপর উঠে বসে মদের বোতলের মুখ টা ছেলেটার মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে বোতলের পেছনে সজোরে একটা ঘুষি মেরে বোতল টা ছেলেটার গলা পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিলো। ছেলেটার ঠোঁটের দুই কোণা চিরে ফেড়ে গেলো দুদিকে৷ তারপরও শেষ চেষ্টা হিসেবে মদ শ্বাস নালিতে না যাওয়ার জন্য সে প্রাণপণে গলা বন্ধ করে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করলো। কিন্তু অ্যানা সেটা বুঝতে পারে মাত্রই ছেলেটার নাক চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— খা মদ, যত পারিস খা, জনমের মতো খা৷
নাক আটকে ধরায় নিঃশ্বাস নিতে না পেরে গলা ছেড়ে দিতেই শ্বাস নালিতে মদ ঢুকে গিয়ে বিষম খেয়ে ছেলেটা দম আটকে সেখানেই ছটফটিয়ে মারা গেলো।
মৃত ছেলেটাকে ছেড়ে অ্যানা এবার রাম দা টা হাতে উঠে দাঁড়িয়ে অলিভারের সামনে এলো। তারপর শক্ত মুখে অলিভার কে উদ্দ্যেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,
— কোন হাত দিয়ে ছুয়েছিস ওকে?

অলিভার ভয়ে কুকড়ে উঠে, পাংশু বর্ণ হয়ে গিয়ে নিজের ডান হাত খানা কাঁপতে কাঁপতে সামনের দিকে এগিয়ে ধরলো। আর ধরা মাত্রই অ্যানা সজোরে রাম দা খানার এক কোপে নামিয়ে দিলো অলিভারের কনুই থেকে হাতের নিচের অংশ। তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে উঠে মাটিতে বসে পড়লো অলিভার। এরপর অ্যানার পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে নিজের বাম হাত খানা দিয়ে অ্যানার পা ধরে মিনতি পূর্ণ কন্ঠে চিৎকার করে কেঁদে বলে উঠলো,
— আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমি আর কখনো এমন করবো না। আমাকে যেতে দিন, আমাকে মারবেন না প্লিজ! দয়া করুন আমার ওপর!
অ্যানা শার্লটের দিকে তাকালো এক পলক। শার্লট ততক্ষণে উঠে বসেছে ব্রায়ানের কোলের কাছে। শার্লটের দিকে তাকিয়ে অ্যানা জিজ্ঞেস করলো,

— তুই কি চাস আমি ওকে ক্ষমা করে দিই?
শার্লট অশ্রুসিক্ত চোখে ঘৃণার দৃষ্টিতে অলিভারের দিকে এক পলক তাকিয়ে দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। অ্যানা শার্লটের থেকে উত্তর পেয়ে অলিভারের দিকে চোখ ফেরালো তারপর আফসোসের সুরে বলল,
— কিচ্ছু করার নাই ব্রো, ও তোকে ক্ষমা করতে চায় না! সুতরাং তোকে এখন ভোগে যেতে হবে।
এরপর ব্রায়ান আর অ্যানার নিকট গিয়ে ওদের দুজনের বাধন খুলে দিয়ে অ্যানা বলল এখান থেকে সোজা নিজেদের মাঞ্জারে চলে যেতে। আর এই বিষয়ে কাউকে কিছু না জানাতে। ব্রায়ান কলের পুতুলের মতো অ্যানার কথা মান্য করে শার্লট কে নিয়ে সেখান থেকে কোনো বাক্যব্যয় ছাড়াই নিজেদের মাঞ্জারের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়লো আর অ্যানা মাটিতে মাথা গুজে পড়ে থাকা অলিভারের শার্টের কলার ধরে টেনে, মাটিতে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে ক্ষীপ্র গতিতে এগোতে লাগলো রেড জোনের দিকে। অলিভারের মোটাতাজা শরীরের ভার অ্যানার কাছে কিছুই মনে হলো না। ছোট বাচ্চারা সুতার সাথে প্লাস্টিকের খেলনা বল বেধে নিয়ে যেভাবে নির্বিকার চিত্তে মাটিতে টেনে নিয়ে যায়, ঠিক সেভাবেই অলিভার কে মাটিতে টেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলল অ্যানা। আর এগোতে এগোতে রেড জোনে ঢুকে পড়া মাত্রই অলিভারের শরীর হীম হয়ে আসতে লাগলো। সেইফ জোন কেন সেইফ জোন সেটা যেন ও এইবার টের পেলো।

জঙ্গলে ঢোকা মাত্রই কোনো এক অদ্ভুত বাতাস এসে বাড়ি খেতে লাগলো ওর সারা শরীরে৷ অদ্ভুত অদ্ভুত প্রাণীর হাড়হীম করা কণ্ঠধ্বনি ভেসে আসতে লাগলো ওর কানে। চারপাশ টা কেমন যেন গা ছমছমে ঠেকলো ওর কাছে। ওর শরীরের স্পর্শে মাটি থেকে যেন বেরিয়ে আসতে চাইলো কোনো অশরীরীর শতশত হাত, ওকে যেন জাপটে ধরে নিজেদের দলের একজন করে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করলো ওরা৷ অলিভার ভয়ে কেঁদে ফেললো। তাকে নিয়ে ক্ষীপ্র গতিতে এগিয়ে চলা অ্যানাকে উদ্দ্যেশ্য করে কান্না মিশ্রিত গলায় ও বলে উঠলো,
— আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ! আমাকে দয়া করে সেইফ জোনে দিয়ে আসুন, আমাকে এখানে ফেলে যাবেন না! দয়া করুন!

কিন্তু অলিভার হাজার অনুনয় করা সত্বেও তার আকুতির সামান্য অংশও কানে নিলো না অ্যানা। নিজের গন্তব্যের দিকে ক্ষীপ্র গতিতে পা চালাতে লাগলো ও৷ ওর চলার সাথে সাথে সেখানে গাছপালা গুলো ফাঁকা হয়ে দুদিকে সরে যেতে লাগলো যেন। আর অ্যানা নির্বিকার চিত্তে এগোলো সেদিকে।
কিছুদূর যাওয়ার পরই চলা থামালো অ্যানা। অলিভারের আকুতি এবার আরও বেড়ে গেলো। অ্যানা নামক এই ভয়ঙ্কর মেয়েটি যে ওকে এখানেই রেখে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সেটা ও হাড়ে হাড়ে টের পেলো। শেষ বারের মতো আবারও অ্যানার পায়ের কাছে পড়ে কাকুতি মিনতি শুরু করলো সে। কিন্তু অ্যানা ওর দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে অজানার দিকে তাকিয়ে হাঁক ছাড়লো,

— কোকো!
অ্যানার হাঁক ছাড়ার কয়েক মুহুর্ত পরেই অলিভার কে ভয়ের চুড়ান্ত সীমায় নিয়ে গিয়ে জঙ্গলের বিপরীত দিক থেকে ভারী শব্দ তুলে ক্ষীপ্র গতিতে জঙ্গলের গাছপালা গুলোকে মাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে আসতে শুরু করলো কোকো, তার ক্রোকোডাইল ফর্মে।
অলিভার কোনো বিশালাকার জন্তুকে নিজেদের দিকে আসতে অনুভব করে অ্যানার হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে শুরু করলো। কিন্তু অ্যানার বজ্রমুষ্ঠি থেকে নিজেকে এক অণু পরিমাণও মুক্ত করতে পারলো না ও৷ আর তার কিছুক্ষণ পরেই কোকো এসে হাজির হলো সেখানে৷ কোকো কে দেখে অলিভার ভয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করলো। কোকো অ্যানার সামনে এসে নিজের হিউম্যান ফর্মে ফিরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো,

— আদেশ করুন আম্মা!
অলিভার হকচকিয়ে গেলো। চোখের সামনে ভোজবাজির মতো একটা জন্তুকে মানুষের রূপে ফিরে আসতে দেখে ও যতটা না অবাক হলো তার থেকে বেশি অবাক হলো সেই জন্তুটার অ্যানাকে আম্মা ডাকায়৷ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে মাটিতে পড়ে কোকোর মুখপানে তাকিয়ে রইলো ও৷
অ্যানা এক পলক অলিভারের দিকে তাকিয়ে আবার কোকোর দিকে ফিরে বলল,
— এইটা তোর আজ রাতের ডিনার৷ এইটার শেষ মাংসপিন্ড টুকু খতম না হওয়া পর্যন্ত যেন এর প্রাণ না যায় সেই বিষয়টা নিশ্চিত করবি। তোর প্রতিটা বাইট যেন ও অনুভব করে! নিয়ে যা ওকে তোর সাথে।
অ্যানার কথায় অলিভারের দিকে তাকিয়ে নিজের ধারালো দাঁত গুলো মেলে নিঃশব্দে হিংস্র হাসি দিয়ে কোকো বলে উঠলো,

— আপনার আদেশ শিরোধার্য আম্মা!
আর এরপর অ্যানার হাত থেকে অলিভারের দেহ টা এক টানে ছিনিয়ে নিয়ে জঙ্গলের গভীরতায় মিশে গেলো কোকো। অলিভার সামান্যতম অনুনয় করার সুযোগ টাও আর পেলো না। আর তার কিছুক্ষণ পরেই অলিভারের গগণবিদারী চিৎকারে ভারি হয়ে উঠতে থাকলো শিরো মিদোরির জঙ্গল। কিন্তু সে আর্তনাদ জঙ্গলের পশুপাখি আর অ্যানা ছাড়া কেউ শুনলো না৷
নিজের ধারালো রাম দা খানাকে কাধে নিয়ে, শুভ্র, মেদহীন পাতলা কোমরে ঢেউ তুলে অ্যানা এগিয়ে চলল নিজের মাঞ্জারের দিকে৷ ওর জিনিসে হাত দিলে তার পরিণতি যে প্রচন্ড ভয়াবহ! প্রাসাদের দাসী গুলো তো এ বিষয় সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই জ্ঞাত!

এরই মাঝে কেটে গেছে দুদিন। ছেলে গুলোর নিখোজ হওয়ার খবর ইতোমধ্যে চাউর হয়ে গেছে চারদিকে। প্রথম দিন ওয়ার্কার্স দের লোকজন গুলো নিজেরাই ছেলেগুলোকে খুজে বেড়িয়েছে। কিন্তু মাঞ্জারের শেষ মাথায় গিয়ে জায়গায় জায়গায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ ছাড়া আর কিছুই পায়নি৷ না আছে ছেলেগুলোর কেউ, না আছে তাদের কোনো অংশ।
বিষয়টা সমাধানের জন্য প্রাসাদে খবর দেওয়া হয়েছে। প্রাসাদের চিফ ইনভেস্টিগেটর হামজা আনাস এসেছেন ওয়ার্কিং জোনে। তার আন্ডারে কাজ করা কর্মচারী গুলোকে লাগিয়ে সমস্ত সেইফ জোন খুজেছেন তিনি। কিন্তু কোথাও তাদের কোনো হদিস নেই।

রেড জোনের হিংস্র প্রাণীগুলোরও এখানে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। ঘেউল গুলো ওদেরকে প্রলুব্ধ করে নিজেদের ডেরায় নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু সেটা হলে সেইফ জোনের ভেতরে ব্লাড কিভাবে আসবে? যা হয়েছে সেইফ জোনের ভেতরেই হয়েছে। ওয়ার্কার্স দের কে জিজ্ঞেস করেও কোনো সদুত্তর পেলেন না আনাস। কারণ গতরাতে সবাই বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো। উচ্চশব্দে মিউজিক প্লে হচ্ছিলো বিধায় কেউ কিছুই শোনেনি। পার্টি শেষে সবাই যে যার মতো নিজেদের কামরায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এদিকে কি হয়ে গেছে সেটা সম্পর্কে তারা কেউই জানে না৷ শুধু এটাই জানে যে পার্টিতে একজন ছিলো না। আর সেটা অ্যানা৷

অ্যানা তখন ব্রায়ানের সাথে ব্রায়ানের তৈরি গার্ডেনে কাজ করছিলো। ব্রায়ান সেদিনের ইনসিডেন্ট এর পর থেকে অ্যানা কে কেন জানি খুব ভয় পাচ্ছে। অ্যানাকে দেখা মাত্রই চমকে উঠছে। ওর গুলা শুনলেই কেঁপে উঠছে। কিন্তু ভালোও লাগছে ওর৷ এই মেয়েটা শুধু ওদের ওপর হাত উঠেছে বলে ছেলে গুলোকে একেবারে নিঃশেষ করে দিয়েছে। শুধু একটা প্রশ্নই থেকে যায় এখানে, অ্যানা ছেলেগুলোর ডেডবডি গুলো কি করেছে? কিভাবে গায়েব করেছে!

ব্রায়ানের আনমনা ভাবনার মাঝেই লিলি সেখানে উপস্থিত হয়ে খবর দিলো হামজা আনাস অ্যানাকে ডেকেছেন। খবর টা শোনা মাত্রই ব্রায়ান চকিতে একবার অ্যানার দিকে তাকালো। চোখে মুখে ওর ভয়; অ্যানার যদি কিছু হয়ে যায়, ওকে যদি ধরে ফেলে ওরা তাহলে কি করবে ও? কি নিয়ে বাঁচবে!
কিন্তু অ্যানার মুখে কোনো বিকার দেখা গেলো না। নির্বিকার মুখে ও মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে, হাত থেকে কাস্তে টা ফেলে দিয়ে ট্রাউজারে মাটি মাখা হাত দুটো মুছে নিয়ে এগোলো মিটিং জোনের দিকে। ব্রায়ান নিজেও তড়িঘড়ি করে এগোলো ওর পেছন পেছন। অ্যানাকে ও কোনো অবস্থাতেই একা ছাড়তে চায় না৷

মিটিং জোনে ওয়ার্কার্স দের লিডারের চেয়ারে বসে ছিলেন হামজা আনাস। অ্যানাকে দেখা মাত্রই চমকে অভ্যাসবশত উঠে দাড়ালেন তিনি। কিন্তু পরক্ষণেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে সাথে সাথে আবার বসে গেলেন চেয়ারে। অ্যানা এসে মুখোমুখি দাড়ালো তার। কিন্তু হামজা আনাস পড়লেন অস্বস্তিতে।
রাজ পরিবারের মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর নিয়ম নেই। অভ্যাসও নেই তার। তার ওপর তিনি যদি হন স্বয়ং শেহিজাদী আনাবিয়া ফারহা দেমিয়ান, তখন তো অসম্ভব! এই মেয়ে ঠিক কি কি করতে পারে সেটা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান আছে আনাসের। অ্যানাকে একেবারে নিজের সামনে দেখে শুকনো একটা ঢোক গিললেন তিনি। তাকে চুপ থাকতে দেখে অ্যানাই প্রথম কথা শুরু করলো,

— আমাকে ডেকেছেন?
অ্যানার এমন গম্ভীর কণ্ঠে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলেন হামজা আনাস। তারপর অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
— আপনি গতকাল রাতে কোথায় ছিলেন?
এই সামান্য প্রশ্ন টা করতে গিয়েই হামজা আনাস যেন ঘেমে গেলেন। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে তৎপর রইলেন তিনি। কিন্তু ওনার কান মাথা গরম হতে শুরু করেছে। চেয়ারে বসা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। উনি এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচেন, কিন্তু ফর্মালিটি রক্ষা করতে গিয়ে ওনাকে এখন সিংহীর খাচায় এসে উপস্থিত হতে হয়েছে!
আনাসের প্রশ্নে অ্যানা কিছুক্ষণ নিরব থেকে কিঞ্চিৎ হেসে উত্তর করলো,

— আমি আমার কামরাতেই ছিলাম। কোনো ভাবে কি আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন? আলনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি একটা সামান্য মেয়ে! আর ওরা অতোগুলো ছেলে। আমি কখনো ওদের সাথে পেরে দিবো বলে আপনার মনে হয়? আপনি একজন চিফ ইনভেস্টিগেটর, সেটাও প্রাসাদের। এরকম বুদ্ধি সুদ্ধি নিয়ে চললে কি করে চলবে বলুন তো!
হামজা আনাসের গলা শুকিয়ে এলো। উনি কথা ঘুলিয়ে ফেললেন। হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে একবার নিজের ঘর্মাক্ত ললাট মুছে নিলেন। অ্যানার দিকে তিনি তাকাচ্ছেন না, কারণ অ্যানার শূলের ন্যায় তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া তার দিকেই তাক করে রাখা। আনাস কে এমন অপ্রস্তুত হতে দেখে অ্যানা আবার বলল,

— আপনি বোধ হয় এখানে অস্বস্তি অনুভব করছেন। আপনি চাইলে এখান থেকে লোকসমাগম সরিয়ে দেই?
হামজা আনাস সাথে সাথেই উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। অ্যানা নিজের চারদিকে থাকা ওয়ার্কার্স দের দিকে দৃষ্টি দিলো একবার। অ্যানার দৃষ্টি পেয়েই আশেপাশে থাকা ওয়ার্কার্স গুলো সুড়সুড় করে যে যার কাজে চলে গেলো। ব্রায়ান ও কি ভেবে সেখান থেকে সরে গিয়ে দাড়ালো লাইব্রেরি এরিয়াতে, সেখানের একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে বসে ওদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে অনুধাবন করতে চেষ্টা করলো অ্যানা আর হামজা আনাসের কথপোকথন।

সকলে সেখান থেকে সরে যাওয়ার পর অ্যানা ধীর গতিতে গিয়ে বসলো আনাসের সামনে থাকা চেয়ার টিতে। আনাস দৃষ্টি নত করে রইলেন। ওনার হাত পা কাঁপা শুরু হয়েছে। আনাসের পেছনে দাঁড়ানো, তার আন্ডারে কাজ করা লোকগুলো তাদের বসের এরূপ অদ্ভুত আচরণে অবাক হলো প্রচন্ড। সর্বদা বাঘের ন্যায় হুঙ্কার দেওয়া লোকটি হঠাৎ এমন মিইয়ে গেলো কেন এটা তাদের মাথায় এলো না। সেই সাথে সামনের মেয়েটিও প্রচন্ডরকম অদ্ভুত। এই চোখ ধাধানো প্রচন্ড ভয়ঙ্কর সুন্দরী মেয়েটি নিজের চোখে কি নিয়ে ঘোরে সেটা ভাবনার বিষয়। কেননা মেয়েটির চোখে চোখ রাখা যায় না। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন প্রবল আনুগত্য চাপিয়ে দিয়ে চোখ গুলো কে নামিয়ে দেয়।
চেয়ারে বসে অ্যানা আনাসের চোখের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে আদেশের সুরে বলে উঠলো,

— ওয়ার্কার্স দের লিস্ট থেকে ছেলেগুলোর পরিচয় নিবেন, তাদের বাসায় খবর পৌছে দিবেন, তাদের ডেরা গুলোতে খবর পৌছে দিবেন যে তাদের ছেলেরা আর বেঁচে নেই, এবং বলবেন যে তাদের কে খুন করা হয়েছে, খুনিকে এখনো ধরা যায়নি। ন্যো ন্যিড ফ’ ডিএনএ টেস্টস। তাদের কে আমি কুমির আর হায়েনার পেটে চালান করে দিয়েছি। গট ইট?

অ্যানার কথা শুনে আনাসের পেছনে দাঁড়ানো ছেলে গুলো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো অ্যানার দিকে। এই মেয়েটাই খুনি! তবে মিস্টার আনাস কিছু বলছেন না কেন? উনি এখনো নির্বিকার হয়ে চেয়ারে বসে আছেন কেন, যেখানে মেয়েটা নিজেই স্বীকার করে নিয়েছে যে ছেলেগুলো সে হায়েনা আর কুমিরের পেটে চালান করে দিয়েছে! কিন্তু সেটা হলোই বা কি করে? প্রাণীগুলো তো আর সেইফ জোনের ভেতর প্রবেশ করবে না! তবে কি এই মেয়েটা রেড জোনে প্রবেশ করেছে? কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব! মেয়েটা যদি রেড জোনে প্রবেশ করে তবে তো তার বেঁচে থাকার কথা না। এতক্ষণে ঘেউলের পেটে থাকার কথা!
অথর্বের ন্যায় অ্যানার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ওরা।
আনাস অ্যানার কথার প্রতিউত্তরে শুধু ওপরে নিচে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে উঠলেন,

— আপনি যা বলবেন শেহজাদী।
— আর হ্যাঁ, ওরা সংখ্যায় ছিলো বারো জন। আমি এগারো জন কে সরিয়েছি। বাকি একজন কে আমি পালাতে দিয়েছি, এবং সে যেন নির্বিঘ্নে পালিয়ে তার দ্বীপে পৌছাতে পারে সে ব্যাবস্থাও করে রেখেছি। ইতোমধ্যে সে হয়তো পৌছেও গেছে সেখানে। আপনি জাস্ট তাদের ফ্যামিলির নিকট এবং তাদের ডেরায় খবর টা পাঠানোর ব্যাবস্থা করুন। এর বাইরে আপনার আর কোনো কিছুই করার প্রয়োজন নেই।

চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে নির্বিকার কন্ঠে বলল অ্যানা। হামজা আনাস বুঝলেন শেহজাদীর মস্তিষ্কে এদের কে নিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা জাল বুনে চলেছে। বিনা বাক্যব্যয়ে তিনি সম্মতি জানিয়ে অ্যানার থেকে অনুমতি নিয়ে উঠে দাড়ালেন। তারপর যতদ্রুত সম্ভব সাথের ছেলেগুলোকে নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।
আনাসের সাথের ছেলে গুলো আনাসের মুখে শেহজাদী শব্দ টা শোনার পর থেকেই ঘোরের ভেতরে আছে। উনি তবে সেই শেহিজাদী! যাকে কিনা অনাগত দেমিয়ান সদস্য কে খুনের অপরাধে শাস্তি দেওয়া হয়েছে! চোখের সামনে ওদের এখনো ভাসছে অ্যানার অনিন্দ্য সুন্দর শুভ্র মুখ খানা৷
মিটিং জোন পার হয়ে কিছুদূর গিয়েই আনাস কে ছেলে গুলোর ভেতরের একজন প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করে উঠলো,

— উনি যে অকারণে এতগুলো খুন করলেন, এতে ওনার কিছুই হবে না? ওনার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না কেউ?
— এই সেক্টরে জব নেওয়ার আগে দেমিয়ান ল’স এর বইটা পড়েছো নিশ্চয়?
ছেলেটার দিকে না তাকিয়েই সামনে হাটতে হাটতে ছেলেটার উদ্দ্যেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লেন আনাস। ছেলেটা অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে হাটতে উত্তর দিলো,
— জ্বি, পড়েছি।
— তবে বইটার প্রথম পরিচ্ছেদের প্রথম অংশের এক্কেবারে ফ্রন্টে নিশ্চয় দেখেছো লেখা আছে ‘দেমিয়ান বাদশাহগণ যেটা বলেন এবং করেন সেটাতে কোনো ভূল নেই। তারা আইন প্রণয়ন করেন, আইন তাদের জন্য নয়।’

— কিন্তু উনি তো শেহজাদী, উনি তো আর বাদশাহ নন!
— প্রথমত উনি বাদশাহর ওয়ান অ্যান্ড ওনলি লিগ্যাল ওয়াইফ, দ্বিতীয়ত তিনি বাদশাহর সবচাইতে কাছের কেউ, যাকে বাদশাহ নিজের থেকেও বেশি কেয়ার করেন এবং ভালোবাসেন। তৃতীয়ত তিনি একজন শেহজাদী। তিনি যদি পঞ্চদ্বীপের সমস্ত মানুষ কেও মেরে ফেলেন তবুও বাদশাহ তাকে কিছুই বলবেন না। আর তাছাড়া শেহজাদী অকারণে কিছুই করেন না৷ নিশ্চয় ছেলেগুলো এমন কিছু করেছে যার জন্য শেহজাদী ওদের কে এমন শাস্তি দিয়েছেন। এসব নিয়ে আলোচনা যত কম হবে ততই বেটার। ওনাদের নিয়ে আলোচনা করলে বরং আমরাই ফেসে যাবো। কারণ শিরো মিদোরিতে গাছের পাতারও কান আছে।

আনাসের কথায় চুপ হয়ে গেলো সকলে। তারপর নিজেদের গাড়ি নিয়ে ফিরে চলে গেলো প্রাসাদের দিকে।
৫৬. ইনভেস্টিগেশনের পর সপ্তাহ খানেক পার হয়ে গেলো। হামজা আনাস তারপর আর ওয়ার্কিং জোনে আসেননি। খুন গুলো কখন কিভাবে হয় সেটা কোনোকালে কেউই জানতে পারেনা৷ রহস্য গুলো সর্বদা রহস্যই থেকে যায়।
ওয়ার্কিং জোনের পরিবেশ থমথমা। কেউ কারো সাথে তেমন কথা বলছে না, কোনো এক অজানা আতঙ্কে সবাই সবাইকে এড়িয়ে চলছে, বিশেষ করে অ্যানাকে৷ তার জনসম্মুখে দেওয়া স্টেটমেন্ট বিশ্বাস হয়েও যেন অনেকের বিশ্বাস হচ্ছে না। এর আগেও স্টেলার মৃত্যুর সময়ে সবাই কেন যেন অ্যানাকেই সন্দেহ করছিলো। এখন দ্বিধাদ্বন্দে দিন পার হচ্ছে সবার।

ব্রায়ান কে আজকাল খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। সেদিন হামজা আনাসের সাথে অ্যানার কথোপকথন কর্ণগোচর না হলেও সে দৃশ্য টা ব্রায়ান নিবিড় দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেছে। অ্যানাকে দেখেই হামজা আনাস কেমন যেন চুপসে গেছিলেন, এবং একটি বারের জন্যও অ্যানার দিকে তিনি চোখ তুলে তাকাননি। পুরোটা সময় মাথা নত রেখেছিলেন। এর ভেতরে কি অন্য কোনো কাহিনী আছে? নাকি আগুন সুন্দরী অ্যানার দিকে আনাস সাহেব তাকাতে পারছিলেন না!
অনেক ভেবে চিন্তে ব্রায়ান শেষের ভাবনা টাকেই সঠিক ধরে নিলো। এতগুলো দিন একত্রে ওঠাবসা করেও সে নিজেই অ্যানার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না, আর কোথায় সেদিনের আনাস৷ তবে একটা ব্যাপার ভালো হয়েছে, ওরা কিছুই বুঝতে পারেনি। যদি বুঝতো তবে এতদিনে নিশ্চয় অ্যানার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতো! কিন্তু তাদের কোনো রা’ নেই যেহেতু সেহেতু তারা কিছুই টের পায়নি। অ্যানা যে এসব কাজে খুব পাকা সেটা বুঝতে আর ব্রায়ানের বাকি রইলো না। এতসবের পরেও দিন দিন মেয়েটার প্রেমে ও আরও বেশি মরিয়া হয়ে পড়ছে। আবার সাহসেও কুলাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে কবে না জানি ও হার্ট অ্যাটাক করে!

চিন্তাভাবনা করতে করতে ব্রায়ান বুকে হাত চেপে ধরলো। বুকের বাপাশে সুক্ষ্ম, মিষ্টি যন্ত্রণা। কিন্তু এ যন্ত্রণায় ব্রায়ানের মুখের অভিব্যক্তির কোনো পরিবর্তন হলো না, বরং ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো লাজুক মিষ্টি হাসি।
কিন্তু শার্লটের মুখে হাসি নেই। সেই ঘটনার পর থেকে কেমন যেন মনমরা হয়ে গেছে ও। ব্রায়ান অনেকবার চেষ্টা করেছে ওকে হাসাতে, এসব কথা ভুলিয়ে দিতে। কিন্তু প্রতিবারই শার্লটের চোখ ফেটে পানি আসতে চাইছে! সেদিনের পর থেকে অ্যানার সাথেও ওর তেমন কথা হয়নি। অ্যানা শুধুমাত্র নিজের কাজটুকু করেই ওয়ার্কিং জোন থেকে নাই হয়ে যায়, কারো সাথে কথা বলে না। শার্লটের সাথেও না। যার জন্য শার্লট আরও বেশি কষ্ট পায়।

অ্যানা ওর জন্য যা করেছে তার ঋণ ও কিভাবে শোধ দিবে জানেনা। মেয়েটা ওকে প্রতি পদে পদে আগলে আগলে রেখেছে, ওর মন খারাপের খবর নিয়েছে, তবে আজ কেন অ্যানা ওর মন খারাপ হওয়া সত্বেও ওর কাছে এসে দুটো কথা বলছে না! অ্যানা এসে দূটো সান্ত্বনার কথা বললেই তো ও খুশি হয়ে যায়, সেটা কি অ্যানা বুঝে না?
ডিনারের জন্য টেবিল তৈরি করতে করতে এসব ভেবে চোখ মুছলো শার্লট। ব্রায়ান দূর থেকে শার্লট কে দেখছিলো। ওকে চোখ মুছতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ব্রায়ান। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো এর কিছু একটা করা দরকার। ওয়ার্কিং জোন থেকে হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে না আর আগের মতো। এইভাবে চলতে দিলে হবে না। সবাই আবার ব্রায়ান আসার আগের সময় টার মতো মনমরা হয়ে থাকবে। শার্লট তো একেবারেই ডিপ্রেসড, ওকেও একটু চিয়ার আপ করা প্রয়োজন।

ডিনার শেষে ব্রায়ান সব ওয়ার্কার্স দের উদ্দ্যেশ্যে ঘোষণা দিলো ছোট্ট একটা গেইমস এর আয়োজন করা হয়েছে, যারা তাতে অংশগ্রহণ করতে চায় তারা যেন থেকে যায়৷ ব্রায়ানের ঘোষণার পরেই উচ্ছাসে ফেটে পড়লো সকলে। এমন চুপচাপ পরিবেশ আসলেই কারো ভালো লাগছে না। আজকের গেইমের মাধ্যমে যদি একটু ওয়ার্কিং জোনে প্রাণ ফিরে আসে! অল্পসংখ্যক লোক বাদে বাকি সকলেই থেকে গেলো মিটিং জোনে।
ডাইনিং এরিয়ার পাশের ফাকা জায়গাতে বড় করে বিছানা পাতা হলো। সকলে গোল হয়ে বসলো সেখানে। অ্যানা চলে যেতে নিচ্ছিলো কিন্তু ব্রায়ান শার্লটের দোহায় দিয়ে আটকালো ওকে। অগত্যা অ্যানাকেও থেকে যেতে হলো। ও গিয়ে বসলো শার্লটের পাশে। এতগুলো দিন পর অ্যানাকে পাশে পেয়ে বেজায় খুশি হলো শার্লট৷ অ্যানার গায়ে গা লাগিয়ে অ্যানার বাহু জড়িয়ে ধরে পড়ে রইলো ও।
কিয়ৎক্ষণ পর ব্রায়ান কই থেকে একটা কোল্ড ড্রিংকস এর খালি বোতল নিয়ে এসে উঁচু গলায় বলল,

— আজ ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার খেলা হবে, সবার পেট থেকে সব সত্যি কথা বের করে নিয়া আসা হবে আজ।
ব্রায়ানের কথায় দ্বিতীয় বার সেখানে আরেকদফা খুশির চিল্লাপাল্লা হলো। থিয়োডর আউটসাইডার্স দের রেসিডেন্সিয়াল এরিয়াতে গেছিলো কাজে। সেখান থেকে ফিরে সেও যোগ দিলো সবার সাথে। ব্রায়ান বোতল টা হাতে নিয়ে এসে বসলো শার্লট আর অ্যানার বিপরীতে। ব্রায়ানই প্রথম বোতলে স্পিন করলো, সেটা গেলো ওয়ার্কার্স দের কারো একজনের দিকে। শুরু হলো প্রশ্নের বান, সেই সাথে উদ্ভট উদ্ভট ডেয়ারের উদ্ভব। হাসি ঠাট্টায় মুখরিত হয়ে উঠলো মিটিং জোনের পুরোটা। শার্লটের মুখেও হাসি দেখা দিলো। অ্যানার বাহু জড়িয়ে ধরে ক্ষণে ক্ষণে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো ও। বোতলে স্পিন দিতে দিতে এক সময় সেটা ঘুরলো ব্রায়ানের দিকে। ব্রায়ান নিলো ট্রুথ। স্পিন যে দিলো সে ব্রায়ান কে প্রশ্ন করলো, ওয়ার্কার্স দের ভেতরের কাউকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে চ্যুজ করতে বললে সে কাকে চ্যুজ করবে?
ব্রায়ান বিন্দুমাত্র টাইম ওয়্যেস্ট না করে ঠাস করে উত্তর করলো,

— অ্যানা।
সমস্ত ওয়ার্কার্স দের ভেতরে হাসির রোল পড়ে গেলো। ব্রায়ান যে অ্যানাকে প্রচন্ড পছন্দ করে সেটা সকলেরই জানা। ব্রায়ানের তাকানো, কথা বলা, সর্বদা অ্যানাকে খোজা, তাকে নজরে নজরে রাখা, কাজের ফাকে ফাকে অ্যানার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা সবই তারা দেখেছে। কিন্তু ব্রায়ান যে এইভাবে অকপটে স্বীকার করে নিবে সেটা তারা কখনোই ভাবেনি। সবাই অ্যানার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে নিজেদের ভেতর হাসাহাসি করতে শুরু করলো। শুধু হাসি এলোনা থিয়োডরের মুখে। চোয়াল শক্ত করে সে এই তামাসা দেখতে লাগলো।

অ্যানা নিজেও চুপচাপ হয়ে রইলো। কিন্তু রাগলো না। খেলা টাকে খেলা হিসেবেই নিলো। শার্লট যদিও বার কয়েক খোচালো ওকে কিন্তু অ্যানা ওর সে খোচানেতে পাত্তা দিলো না। নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে রইলো।
এরপর কারো এক স্পিনে বোতলের মুখ খানা এলো শার্লটের দিকে। শার্লট তো কাঁপা-কাঁপি করে শেষ, ওকে কি প্রশ্ন করবে কি ডেয়ার দিবে সেটা ভেবেই ও আকাশে চলে যেতে নিলো। স্পিন দাতা ওকে প্রশ্ন করলো ও কাউকে পছন্দ করে না।
শার্লট লজ্জা পেলো। গাল দুটো লাল হয়ে এলো ওর। ও কি কাউকে পছন্দ করে না? করে, খুব করে। কিন্তু প্রকাশ করার মতো সাহস নেই, কখনো হবেও না। গোপনেই ঠিক আছে। কখনো সময় এলে ঠিকই নিজের মনের কথা বলে দিবে ও৷ শুধু সময়ের অপেক্ষা।
লাজে রাঙা মুখ খানা তুলে ও মাথা নাড়িয়ে বলে দিলো,

— না, করিনা।
ব্রায়ান এতক্ষণ আড়চোখে তাকিয়ে ছিলো বোনের দিকে, উত্তর পাওয়া মাত্রই সে মাল টাকে ঝালাই করে দিয়ে আসবে। কিন্তু ও যে কাউকে পছন্দ করে না সেটা শুনে আস্বস্ত হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো ও। তারপর হাসি হাসি মুখে শার্লট কে একটা চুম্মা দেখালো। শার্লট সশব্দে হেসে উঠলো ব্রায়ানের কাজ কর্মে। তার ভাই যেদিন জানতে পারবে সেদিন নিশ্চয় কুরুক্ষেত্র বাধাবে, এইটা ভেবে মনে মনে হাসলো ও খানিক।
স্পিন চলতে চলতে এক সময় এবার সেটা চলে এলো থিয়োডরের হাতে। থিয়োডর অনেক কৌশল করে বোতলের মুখ খানা অ্যানার দিকে দেওয়ার চেষ্টা করলো, এবং সফলও হলো। অ্যানা থিয়োডরের দিকে একপলক শক্ত চোখে তাকালো। এই লোকটিকে ওর কোনোকালেও পছন্দ হয়না। তবুও বার বার এই লোকটিই ওর সাথে কিভাবে জানি জুড়ে যায়। থিয়োডর অ্যানার দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

— তুমি কাউকে ভালোবাসো অ্যানা? আর বাসলেও সেটা কে?
অ্যানা যেন এমন প্রশ্নই আশা করছিলো থিয়োডরের নিকট থেকে। থিয়োডরের এমন প্রশ্নে সবাই চুপ হয়ে রইলো, অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইলো অ্যানার শুভ্র মুখ পানে, অ্যানা ঠিক কি উত্তর দেয় সেটা শোনার জন্য। শার্লটও পাশে বসে উদগ্রীব হয়ে রইলো অ্যানার উত্তর শোনার জন্য৷ ব্রায়ান তাকিয়ে রইলো অ্যানার টেরাকোটা রঙা ঠোঁট জোড়ার দিকে, সেগুলো আন্দোলিত হয়ে ঠিক কি কথা নিঃসৃত করবে সেটা শোনার জন্য৷
অ্যানা কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো,
— হ্যাঁ ভালোবাসি, আমার স্বামীকে।

অ্যানার উত্তরে সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো, অ্যানা কি তবে বিবাহিত? শার্লট এই আশঙ্কায় করছিলো, অ্যানার সেই কাল্পনিক জামাই কে নিয়ে অ্যানা এত বাড়াবাড়ি করে কেন ও বুঝে না৷ ব্রায়ানের মুখ নেমে গেছে। ছলছল চোখে হতবাক হয়ে ও তাকিয়ে আছে অ্যানার দিকে সবাই চারপাশে ফিসফিস করে কথা বলতে শুরু করেছে অ্যানাকে নিয়ে। থিয়োডর নিজেও উত্তর শুনে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে অ্যানার দিকে৷ শার্লট পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য বলে উঠলো,

— এহ্‌, এসব মিথ্যা কথা। ওর জামাই কই থেকে আসবে, ও ঢং করছে। ওসব জামাই ফামাই কিচ্ছু ওর নেই৷
শার্লটের কথায় ব্রায়ান যেন প্রাণ ফিরে পেলো। হার্টবিট মিস হয়ে গেছিলো ওর একটা। এরকম জান বেরোনো কথা কেউ বলে! অ্যানাকে একটাবার নিজের করে পাক, তারপর এসবের প্রতিশোধ নিবে ও, একদম সুদে আসলে।
শার্লটের এমন কথায় অ্যানা ওকে কনুই দিয়ে গুতা মেরে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
— তুই বেশি জানোস?
— তুই চুপ কর, জামাই তোর ডেলুলু তে থাকে। ওরকম জামাই আমারও আট দশ টা আছে। হুহ! তোর লাগলে আমার থেকে ধার নিস।
অ্যানা কিঞ্চিৎ শব্দ করে হেসে বলল,
— আমার জামাই যদি তোর ওপর ক্ষেপে আর ওকে যদি তুই একবার দেখিস তবে এক্কেবারে উলটে পড়ে থাকবি, আর কোনোদিন উঠবিনা।

— ওরকম জামাই কত দেখলাম! নিয়ে আসিস তোর ডেলুলুর পাওয়ারফুল জামাই। দেখবোনে কি করে!
শার্লটের বলার ধরণ দেখে অ্যানা এবার খিলখিল করে হাসলো। ওর উইন্ড চাইমস এর ন্যায় মিষ্টি হাসিতে চমৎকৃত হয়ে ফিরে তাকালো সকলে ওর দিকে। অ্যানা সেটা খেয়াল করে সাথে সাথেই চুপ হয়ে গেলো। বার বার ও ভুলে যায় যে ও এখন ওয়ার্কিং জোনে থাকে!
খেলা শুরু হলো আবারও। স্পিন ঘুরতে ঘুরতে এবার এলো শার্লটের কাছে। শার্লট স্পিন দেওয়ার পর সেটা গিয়ে থামলো থিয়োডরের দিকে। থিয়োডর ট্রুথ নিলো। শার্লট কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে প্রশ্ন করলো,
— তুমি কোন অপরাধের জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে শিরো মিদোরি তে এসেছিলে থিয়োডর?
এই প্রশ্ন টা থিয়োডর আশা করেনি। নিজের অপরাধের কথা ও এখনও পর্যন্ত কাউকে বলেনি। কিন্তু আজ এত গুলো মানুষের সামনে বলতে ওর ভেতরে প্রচন্ড জড়তা কাজ করছে। অপরাধবোধ জেঁকে বসছে চারদিক থেকে। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে থিয়োডর উত্তর দিলো,

— আই ওয়্যাজ অ্যা রে*পি*স্ট অ্যান্ড সিরিয়াল কিলার। আমি কমবয়সী মেয়েদের কে ক্যিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়ে তাদের ওপর ফিজ্যিক্যাল টর্চার চালিয়ে খুন করতাম। খুনের সংখ্যা বিশের কাছাকাছি যাওয়ার পর পোলিস ধরে ফেলে আমাকে।
থিয়োডরের কথায় থমকে গেলো যেন সকলে। শার্লট যেন আরও বেশি চুপসে গেলো। মুহুর্তেই ওর মনে পড়ে গেলো সে রাতের কথা। ভয়ে কুকড়ে গিয়ে অ্যানার সাথে মিশে গেলো ও। অ্যানা গম্ভীর মুখে ওকে আরও কাছে টেনে নিয়ে বাহাতে ওকে জড়িয়ে নিলো।
খেলা টা আর জমলো না। হুট করেই ভাটা পড়লো। কারো ভেতরে আর জোস দেখা গেলো না কোনো। কিয়ৎক্ষণ পরেই সকলে গেইমস ছেড়ে উঠে পড়ে যে যার মাঞ্জারের দিকে চলল।
অ্যানাও যেতে নিচ্ছিলো কিন্তু শার্লট এসে বায়না ধরলো ও আজ অ্যনার সাথে ঘুমাবে৷ ওর একা ঘুমাতে ভয় করছে। অ্যানাও মানা না করে ওকে আজ সঙ্গে নিলো নিজের।

ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো ওরা দুজন। অ্যানার পরণের লেট্যুস ট্রিমের নাইট টপ আর সফট শর্টস এর ওপর দিয়ে ফুটে ওঠা অসাধারণ গড়নের শরীরের ওপর দৃকপাত করে শার্লট পাশ ফিরে কনুইতে ভর দিয়ে মাথা উচু করে প্রশ্ন করলো,
— তুই এত সুন্দর, সে*ক্সি ফিগার কিভাবে মেইনটেইন করিস রে অ্যানা! সিক্রেট বল শিগগির।
— আমি কিছু করিনা। যা করার আমার হাজব্যান্ড করে; আমি কি খাবো, কিভাবে ডায়েট করবো, কখন জিমে যাবো, কতক্ষণ ওয়ার্কআউট করবো এসব ও-ই দেখে। আমি শুধু ওর কথা মতো চলি।
বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে পা দুটো একটার ওপর একটা তুলে নাচাতে নাচাতে বলল অ্যানা৷ শার্লট এবার সিরিয়াস কন্ঠে প্রশ্ন করলো,

— তুই সত্যিই বিবাহিত অ্যানা?
— হু, যদিও এখন তিনি আমার ডেলুলু তেই বসবাস করেন। কারণ তাকে আমি কাছে পাই না৷
শার্লটের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল অ্যানা। শার্লট ভ্রু কুচকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
— দুষ্টু! শুধু নাটক করিস আমার সাথে! তোর সাথে কথাই বলবো না, সর্‌।
বলে শার্লট অন্যদিকে ফিরে ঘুমানোর প্রস্ততি নিলো। কিছুক্ষণ দুজনেই নিরব থাকার পর অ্যানা হঠাৎ বলে উঠলো,
— তোর পছন্দের কেউ আছে কিনা সেটা কিন্তু আমি জানি শার্লট। আর কাকে পছন্দ করিস সেটাও জানি।
শার্লট চমকে ফিরলো অ্যানার দিকে। তারপর চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেস করলো,
— কি জানিস তুই? কাকে পছন্দ করি আমি?
— থিয়োডর কে৷

সিলিং এর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো অ্যানা৷ নিজের অনুভূতি গুলোকে এত্ত গোপন করে রাখার পরও অ্যানার চোখে কিভাবে পড়ে গেলো সেটা শার্লটের মাথায় এলো না। কিন্তু মুহুর্তেই মুখে আঁধার নেমে এলো ওর।
থিয়োডর যে এরকম একটা কাজ করেছে তার পাস্ট লাইফে সেটা ও ভাবতেই পারেনি৷ চোখ ভরে পানি এসে গেলো ওর। এতদিন ধরে একটু একটু করে গড়ে ওঠা ভালোলাগা, ভালোবাসা ওর নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে! এরকম একটা মানুষ কে ও কিভাবে ভালবাসতে নিয়েছিলো! কি হতো যদি আজ ও এটা না জানতো! ও তো ঠিকই একদিন না একদিন থিয়োডরের নিকট নিজের অনুভূতি জানিয়ে বসতো! আর সেইটা হওয়ার পর যদি থিয়োডরের সত্যি টা ওর সামনে আসত তবে কি করতো ও! ও তো মরেই যেতো!
বুকের কষ্টকে চাপা দিয়ে ধীর গতিতে পাশ ফিরে নিঃশব্দে শুয়ে পড়লো শার্লট। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর অ্যানা আবার বলে উঠলো,

বাদশাহ নামা পর্ব ৩৫+৩৬

— ওই ভালোমানুষের মুখোশ পরা জানোয়ার টাকে ভেবে কষ্ট পাস না শার্লট, তুই অনেক ভালো কাউকে ডিজার্ভ করিস। তোর জন্য অনেক অনেক ভালো কেউ হয়তো অপেক্ষা করছে কোথাও। সময় হলেই তাকে পেয়ে যাবি। আর যদি নাও পাস তবে আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে তোকে বিশ্বাস যোগ্য কারো হাতে তুলে দিবো। তুই নিশ্চিন্ত মনে ঘুমা।
শার্লট দীর্ঘশ্বাসের সাথে নিজের কান্না চাপা দিলো। আর এরপর রাত বাড়ার সাথে সাথে একসময় ঘুমিয়েও গেলো ওরা দুজন৷
মাঝরাতে হঠাৎ অ্যানার ঘুম ভেঙে গেলো কারো ইস্পাত-দৃঢ় বাহুবন্ধনীর উষ্ণ আলিঙ্গনে৷

বাদশাহ নামা পর্ব ৩৯+৪০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here