সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫২+৫৩
neelarahman
সাদাফের মন মেজাজ ভালো ছিল না ।তাই অফিসের পর আর বাসায় ফিরেনি বন্ধুদের সাথে আড্ডা মে*রে একেবারে রাত 9 টার দিকে বাসায় ফিরল ।বাসায় ফিরে দেখল ড্রয়িং রুমে সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে ।এদিক ওদিক না তাকিয়ে উপরে উঠবে ঠিক এমন সময় নুর পিছন থেকে দৌড়ে এসে এক গ্লাস পানি দিয়ে বলল ,”পানি খান আপনাকে ভীষণ টায়ার দেখাচ্ছে।”
বাড়ির লোক সবাই অবাক হয়ে গেল ।রিমা সায়মন হুমায়ন রহমান বাকি সবাই অবাক হয়ে গেল । ফজলুর রহমান ভাবলেন,”যে মেয়েকে টি*পে টি*পে ধরে খাওয়াতে হয় সেই মেয়ে দৌড়ে সাদাফের জন্য পানি এনেছে।”
সাদাফ নুরের দিকে তাকালো ।সাদাফ জানে নূর সারা দিন সাদাফের জন্য অপেক্ষা করেছে তাই পানিটা নিয়ে চুপচাপ এক চুমুক দিয়ে খেলো। তারপর সামিহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”ছোট আম্মু আমার একটু কফি লাগবে মাথাটা ধরেছে খুব।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সামিহা বেগম কিছু বলবে তার আগে নুর বলল ,”আমি এক্ষুনি করে নিয়ে আসছি ।আপনি উপরে যান।”
সাদাফ নূরের দিকে তাকালো ।সাদাফ জানে নূর একটা মুহূর্ত নষ্ট করতে চাচ্ছে না সাদাফের কাছাকাছি থাকতে চাইছে ।তাই সাদাফ মুচকি হেসে উপরে চলে গেল ।হুমায়ূন রহমান বোকা বনে গেলেন ছেলের ট্রিকস দেখে ।কতটা বশীভূত করে ফেলেছে নুরকে এখন সাদাফেরা কিছু মুখ ফুটে বলতে হয় না যা চায় ঠিকই নূরকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে ফজলুর রহমান সামিহা বেগম নওরিন আফরোজ সবাই অবাক হয়ে গেলেন ।তবে নৌরিন আফরোজ এবং সামিহা বেগম ভিতরে ভিতরে খুশি ।
ফজলুর রহমান চিন্তায় পড়ে গেলেন ।এটা কি নূরের পক্ষ থেকে একতরফা নাকি সাদাফ ও নুর কে চায় ।কারণ সাদাফ এখনো কিছু বলেনি।
আর সাদাফ যেরকম চাপা স্বভাবের ছেলে হয়তো মুখ ফুটে বলবে ও না ।তাই উনি চিন্তা করছেন কি করে সাদাফকে পরীক্ষা করা যায় ।নুরের প্রতি সাদাফের কোন ফিলিংস আছে কিনা।যদি সাদাফের ভিতর নূরের জন্য এমন কোন ফিলিংস জন্ম না নেয় সত্যি সত্যি যদি অন্য কোন মেয়ে থেকে থাকে তাহলে নূরকে উনি কষ্ট পেতে দেবে না ।তাই আগেই সাদাফের দিকটা যাচাই করবে ।দেখবে সাদাফের তরফ থেকে নূরের প্রতি কোন অনুভূতি কাজ করে কিনা।
এদিকে নুর কফি বানিয়ে রেডি ।হনহনিয়ে সবার সামনে কফি ট্রে নিয়ে উপরে চলে গেলেন ।এমন একটা ভাব যেন নিচে কেউ নেই ।সায়মন আর রিমা একে অপরের দিকে চোখ চাওয়াচাওয়ি করছে ।বোঝার চেষ্টা করছে আসলে ঘটনাটা কি ?নূর এরকম করছে কেন?
কফি নিয়ে নূর হনহনিয়ে সাদাফের রুমে অনুমতি ছাড়াই ঢুকে পড়ল ।সাদাফ মাত্র শার্টের বোতাম খুলছিল এমন সময় নুর ঢুকেছে।নুরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”কিরে দিন দিন তো বেয়া*দব হয়ে যাচ্ছিস ।আমি যে কাপড়চোপড় চেঞ্জ করছি দেখে ঢুকবি না?? আরেকটু হলে তো দেখে অ*জ্ঞান হয়ে যেতি ভাগ্যিস অন্য কিছু খোলা শুরু করিনি ।ঘড়িটি টেবিলে উপর রাখতে রাখতে কথাটি বলল সাদাফ।শার্টের বোতাম প্রত্যেকটা খোলা ।নিচের দিকে শুধু একটা লাগানো ।কাছে এসে দাঁড়িয়ে হাত থেকে কফি নিয়ে বলল ,”আর কিছু বলবি নাকি এখন সবকিছু খোলা দেখবি?”
নূর মুখে কি বলবে সাদাফ কাছে আসতে সাদাফের শরীরের বডি স্প্রে এবং পুরুষালী যে একটি ঘ্রাণ সেটিতেই নূর যেন বিমোহিত হয়ে যাচ্ছে ।সাদাফের শরীরের গন্ধ যে নুর কে নেশা ধরিয়ে দিতে পারে তা যেন এই মুহূর্তে জানতে পারলো নূর।
নুর সাদাফ এর কথা আমলে না নিয়েই বলল কখন যাবেন সাদাফ মুর এদিকে আর চোখে তাকালো তাকিয়ে বলল এত খুশি আমি চলে গেলে? তাড়াতাড়ি বের করার জন্যই বুঝি তোর বাচ্চাদের চাচাদের সাথে মিলে এই আয়োজন করেছিস তাই না?”
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে দেখলো নূর আনমনা হয়ে সাদাফের দিকে তাকিয়ে আছে ।সাদাফ নুরের সামনে হাত তুলে তুরি বাজিয়ে বললো ,”কি হলো কি ভাবছিস ?”
নূর বলল ,”হে কিছু না ।ভাবছি আপনার শরীরের গন্ধ ।আপনার শরীরের গন্ধ এরকম কেন ?সাথে সাথে নুর একটু কাছে এসে বুকের সাথে নাক লাগিয়ে লম্বা করে শ্বাস টেনে ভিতরে নিল ।”
তারপর বলল ,”এত সুন্দর কেন আপনার শরীরের গন্ধ কেমন নেশা ধরে যাচ্ছে।”
নূরের হঠাৎ এত কাছাকাছি চলে আসায় সাদাফের বুকের ভিতর ডিবডিব করছে ।লম্বা করে শ্বাস নিল সাদাফ।তারপরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। শুকনো ঢোক গিললো সাদাফ। বললো ,”যা রুম থেকে বাইরে যা আমি গোসল করব।”
নুর বললো ,”আপনি গোসল করতে যান ।আমি আপনার কাপড়-চোপড় নিয়ে আসছি ।”
সাদাফ অবাক হয়ে যাচ্ছে নূর আজকে এরকম করছে কেন?
হঠাৎ সাদাফের রুমের বাইরে হুমায়ুন রহমান গলা খাকারি দিলেন ।সাদাফ বুঝতে পেরেছে বাবা কোন বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন তাই নূর কে বলল ,”তুই বাইরে যা আমি তোর সাথে পরে কথা বলব ।”
নুরেরও কিছু করার নেই বড় বাবা এসেছে তাই চুপচাপ
রুম থেকে বাইরে বের হয়ে গেল।
নুর যাওয়ার সময় আড় চোখে তাকালো হুমায়ূন রহমানের দিকে । হুমায়ূন রহমান নূরকে ইশারা দিয়ে বললেন যেতে ।নুর চলে গেল ।হুমায়ুর রহমান ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন। নীলা রহমান লেখিকা
সাদাফ বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”তা আমাকে পাঠাতে চাইছো কেন ?ভিতরে কি চলছে শুনি?”
“কি চলবে আবার ?তোমার যাওয়া জরুরি তাই পাঠাচ্ছি ।”বললো হুমায়ূন রহমান।
সাদাফ বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”তা জরুরী কেন তোমার ছোট্ট মেয়ে থেকে সরাতে হবে তাই?”
“সেটাও একটা কারণ ।যেভাবে মেয়েটাকে বশ করে ফেলেছিস ও তো তোকে ছাড়া আগে পরে আর কিছুই দেখছে না ।তাই এখনই যদি না সরিয়ে দেই সেদিন আর দূরে নেই যেদিন বিয়ে ছাড়াই নাতি কোলে নিয়ে ঘুরতে হবে।”বললো হুমায়ূন রহমান।
“বিয়ে ছাড়া ???আর তাছাড়া তোমার ছোট্ট মেয়ে এখন আমার সাথে জো*কের মত লেগে থাকে ।আমি তো তাকে ডেকে আনিনি দেখতেই পারছ পিছে পিছে ঘুরছে ।চিন্তা করো তো সাত দিন কি করবে ?তোমাদের মাথা তো খে*য়ে ফে*লবে।”বললো সাদাফ।
“সেজন্যই দূরে পাঠাচ্ছি যাতে তোর সাথে এত চিপকে থাকতে না পারে ।কি যে যাদু করেছিস তুই ?তোর আসল রূপ যদি জানত তাহলে আর তোর সাথে চিপকে থাকত না।”বললো হুমায়ূন রহমান।
সাদাফ কিছুক্ষণ বাবার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপরে মুচকি দুষ্টু হেসে বললো,” কেমন বাবা তুমি ?তোমার তো খুশি হওয়া উচিত ।সামনে তোমার নাতি হবে তাদের নিয়ে তুমি উলু লু লু লু করবে।”
হুমায়ূন রহমান:😂😂😂😂😂😂😂
রাত সাড়ে ১১ টায় বাস । সাদাফ কার ড্রাইভ করে যেতে চেয়েছিল কিন্তু বাসা থেকে কেউ রাজি না সবাই বলছে বাসে করে যেতে। সাদাফের কাপড় চোপড় প্যাক করা শেষ ।রাতে ডিনার করে বের হয়ে যাবে যদিও বাইরে থেকে খাবার হালকা পাতলা খেয়েছিল তবে নওরিন আফরোজ একদম না খাইয়ে ছেলেকে বের হতে দিবে না ।তাই হালকা কিছু খেয়ে বের হতে হবে।
সাদাফ একেবারে রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে নিচে নামলো ।এখান থেকে খাওয়া দাওয়া করে একবারে বের হয়ে যাবে ।নিচে নামতে সিঁড়ির কাছে দাঁড়ানো দেখল নূরকে ।
সাদাফ বুঝতে পারছে নূর কোনভাবেই সাদাফকে যেতে দিতে রাজি নয় কিন্তু এবার যেতেই হবে ।বাবা ডিটারমাইন্ড কোনভাবেই বাবাকে রাজি করানো যায়নি তাই সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”খেয়েছিস ?”
নুর মাথা না সূচহ মাথা ঝাঁকালো।
সাদাফ দেখলো নিচেই সবাই তাকিয়ে আছে সবার সামনে নুরের হাত ধরে টেবিল এনে বসিয়ে বলল ,”এক প্লেটে ভাত নে তুই খাবি আমাকেও খাইয়ে দিবি আমার তো হাত কাটা।”
সাদাফ যেন মুখে কাউকে কিছু না বলেও অনেক কিছু দেখিয়ে দিতে চাচ্ছে ।নুরু কোন কথা নেই সাথে সাথে প্লেটে খাবার নিয়ে এক প্লেটে মেখে সাদাফকে খাইয়ে দিতে লাগলো ।সাদাফ চুপচাপ খেলো ।এদিক-ওদিক আর তাকালো না।
বাকি সবাই তাকিয়ে হা হয়ে রইলো ।হুমায়ুন রহমান ফজলুর রহমান তারা যেন একটু ল*জ্জায় পাচ্ছে । নওরিন আফরোজ সামিহা বেগম তো রান্নাঘর থেকে মুচকি মুচকি হাসছে।
সাইমন এসে চেয়ারে বসে বলল ,”কিরে তোকেই তো আম্মু আর বড় আম্মু খাইয়ে দেয় তুই আবার কবে থেকে সাদাফ ভাইকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিলি?
নুর সরল মনে বলল ,”হাত কাটার পর থেকে ।উনি তো হাত দিয়ে খেতে পারে না তাই যখন বাসায় থাকে তখন আমি খাইয়ে দেই ।বড় আম্মু বলেছে আমাকে খাইয়ে দিতে ।”
সাথে সাথে হুমায়ুন রহমান তাকালো নওরিন আফরোজ এর দিকে। চোখ সরিয়ে সাথে সাথে রান্না করে কা*জে মনোযোগ দিলেন যেন কোন কিছু শুনতেই পাননি।
সাদাফকে খাওয়ানো শেষ হতে সাদাফ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এখনো ১১ঃ০০ টা বাজে নি। দশ মিনিট বাকি আছে ।তাই নূরের প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল ,”আরেকটু ভাত নে।”
নুর কথা মতো আরেকটু ভাত নিল ।তারপর সাদাফ বলল ,”এবার সুন্দর করে মাখ।”
নুর সাথে সাথে ভাত মেখে ফেলল ।এরপর সাদাফ বলল ,”এবার খা। “অনলি দশ মিনিট সময় আছে আমার হাতে তোর খাওয়া হলে বের হয়ে যাব।
নুর তাকিয়ে রইলো সাদাফের দিকে ।সাদাফ ভালো করে জানে সাদাফ যাওয়ার পর নূরের মন খারাপ হবে ।খাবে না আর এমনিও খেতে খুব অনীহা মেয়েটার।
ফজলুর রহমান তাকিয়ে রইলেন সাদাফের শেষের কথাগুলো শুনে ।ফজলুর রহমান বুঝতে পারলেন নূরকে খাওয়ানোর জন্য বসে আছে সাদাফ কারণ সাদাফ যাওয়ার পর নুর খাবেনা এটা সাদাফ যেমন বুঝতে পেরেছে ফজলুর রহমান ও যেন বুঝতে পারলেন ।
তাই মেয়েকে খাওয়ানোর জন্য সাদাফ বসে আছে ওনার যেন মনটা একটু ভালো হয়ে গেল। যেন কিছু কিছু বিষয় পরিস্কার হতে লাগলো ।হয়তো সাদাফ মুখে কিছু বলে না কিন্তু নূরের কেয়ার করে খুব।
আগেও করতো।আগে ফজলুর রহমানের কাছে মনে হতো সাদাফ নুরকে ছোট বোনের মতোই ভালোবাসে কিন্তু এখন যেন অন্য কিছু মনে হচ্ছে উনার।
নুর কে খাওয়ানো শেষ করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেল সাদাফ।নুর দরজা পর্যন্ত পিছে পিছে গেলো।নূরের দিকে একবার তাকিয়ে ছিল কিন্তু আর কিছু বলার সাহস পেল না ।
মনে হচ্ছে আরেকটু হলেই নূর ঝরঝর করে চোখে পানি ফেলে দিবে তাই যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে গেল সাদাফ। যাওয়ার সময় শুধু এতোটুকু কথা বলে গিয়েছে নিয়মিত খাবি যদি শুনি খাওয়ার ব্যাপারে কোন অনিহা করেছিস তাহলে কিন্তু ফিরব না।
রাত ১১.৩০।বাসে উঠেছে সাদাফ।মাত্রই বাস ছেড়েছে। সাথে সাথে ফোনের রিংটোন বেজে উঠল সাদাফ স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পেরেছে ফোন নুর দিয়েছে।
ফোন রিসিভ করে সাথে সাথে সাদাফ বলল ,”হ্যালো ।”
নুর ওপাশ থেকে নিশ্চুপ ।নাক টানার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে শুধু
সাদাফ বলল ,”ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবি শুধু ?নাকি কিছু বলবি ?মাত্র বাসা থেকে এলাম আধা ঘন্টাও হয়নি ।এর মধ্যে কান্না শুরু করে দিয়েছিস?”
নুর বলল ,”আপনি যেতে রাজি হলেন কেন ?আর আমাকে নিয়ে গেলেন না কেনো?আপনাকে খাইয়ে দিবে কে ? আপনার তো হাত কা*টা।”নীলা রহমান লেখিকা
সাদাফ ফোনের মধ্যে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ।তারপর বলল ,”তোর বাপ চাচা তোকে আসতে দিত যে তোকে নিয়ে আসতাম ?এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাস কিভাবে তুই? কান্না থামাবি নাকি তোর বাপ চাচাকে ফোন করে বলবো তুই কান্না করছিস আমার সাথে যেতে চাইছিস?”
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫০+৫১
নূর চোখে পানি মুছে বলল ,”আমার কথা বলবেন কেন ?আপনি বলবেন আপনার হাত কা*টা আপনার খেতে সমস্যা হবে তাই খাওয়ানোর জন্য আমাকে দরকার।”
“চোরা বুদ্ধি সব বাপ চাচার কাছ থেকে পেয়েছিস তাই না ?চুপচাপ ফোন রাখ ।ফোন রেখে ঘুমিয়ে যা ।কাল সকালে কথা হবে।”বললো সাদাফ।
