তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪২
তাবাস্সুম খাতুন
নভেম্বর মাস শুরু হলো। পাঁচটা চল্লিশ অথবা পয়তাল্লিস হলে সূর্যের আগমন ঘটে ধরণী জুড়ে।লাল আভা ছড়িয়ে পরে শহর জুড়ে। হাল্কা কুয়াশার দেখাও মেলে। পাখিরা কিচির – মিচির করে শব্দ তুলে সবাইকে জানাতে চাচ্ছে ‘ ভোর হয়ে গেছে তোমরা ওঠো সবাই…গাছের পাতা বা ঘাসের উপরে থাকে শিশিরের বিন্দু। এই শীতের ভোরে যদি কেউ হেঁটে বেড়ালে পা একদম ভিজে যাবে এই শিশিরের বিন্দুতে। বাতাসে কাঁপুনি ধরানো ঠান্ডা বয়ে বেড়ালো শহর জুড়ে।সময়টা গিয়ে ঠেকেছে সকাল আটটা পঞ্চাশ মিনিট…..
বাড়ির কর্তারা আজকে কেউ অফিসে যাই নি। বাড়িতে আছে এর কিছু মুখ্যম কারণ আছে!সেলিনা, রোজিনা, কিয়া আর মেহেরিন রান্না ঘরে সবার জন্য গরম গরম নাস্তা তৈরী করছে। মিহু আর পিহু দুইজনই চলে গেছে অনেক আগে কোসিং এর উদ্দেশ্য বাড়ি ফেরার মতো সময় হয়েছে। তাজ বড়োদের সাথে ড্রইং রুমে বসে তার আম্মুর ফোনে গেম খেলছে। সিমি, সামিয়া, জারা আর রাত্রি বাড়ির গার্ডেনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গিন্নিদের রান্না শেষ হতে কর্তারা ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো, তাজ একই ভাবে গেম খেলতে লাগলো। সবার বসার মধ্যে জিহান আর নিশান একসাথে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো দুইজনের পরণেই টাউজার আর টিশার্ট। ওদের দুইজনকে দেখে সেলিনা বলে উঠলো,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তোমরা খেত আসো আব্বু। আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।”
সেলিনার কথার উত্তর দিলো জিহান,,
“পরে খাবো বড়ো মামী, মামা, বাবাদের খেতে দাও।”
সেলিনা আর দ্বিতীয় বাক্য ব্যায় করলো না। নিশান আর জিহান ড্রইং রুমের সোফায় গিয়ে বসলো। জিহান নিজের ফোন বাহির করে স্ক্রল করতে লাগলো। নিশান তাজকে গেম খেলতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,
“তুই স্কুল যাবি না আজকে?”
তাজ মুখ উঁচিয়ে নিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
“আজকে কাউকে কোথাও যেতে দেবে না বাড়ি থেকে। তাই গেম খেলছি।”
নিশান মাথা নাড়িয়ে এইদিকে ওইদিকে উঁকি দিলো চোরা চোখে কাউকে যেন খুঁজছে সে। খুঁজেও যখন পেলো না তখন নিশান আবারো তাজ কে প্রশ্ন করলো,,,
“তোর বোন কইরে?”
তাজ ফোন অফ করে নিশানের সামনে কনফিউজ ভাবে প্রশ্ন করলো,,,
“তুমি আমার কোন বোন কে খুঁজছো ভাইয়া?”
নিশান ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“কোন বোনকে মানে তুই জানিস না? আমি কার কথা বলছি?”
তাজ মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে বললো,,,
“জানলে কি আর প্রশ্ন করতাম।”
তাজের কথা শুনে জিহান মুখ চেপে হাসলো। নিশান শান্ত ভঙ্গিতে বললো,,
“তোর বড়ো বোন সিমি কই?”
“আপুই তো বাকি আপুইদের সাথে বাগান বিলাস করতে গেছে।”
নিশান আর কিছু বললোনা। তাজ আবারো ফোন দেখতে লাগলো হুট্ করে নিশান আবারো তাজ কে বললো,,,
“একটা কাজ করতে পারবি?”
তাজ ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“কি কাজ?”
নিশান টাউজার এর পকেট থেকে একশো টাকার একটা নোট বাহির করে তাজের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,,
“তোর আপুকে বাড়িতে ডেকে আন। কিভাবে আনবি সেইটা তুই জানিস। খবরদার আমার নাম যদি করেছিস সত্যি তোকে শালার উপরের শালা করে ছাড়বো, যা।”
তাজ লাফ দিয়ে নিশানের টাকাটা নিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,,,
“আচ্ছা দুলাভাই আমি আপুকে আনছি।”
বলে টাকাটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। এইদিকে জিহান মিটমিট করে হাসতেই আছে যা দেখে নিশান বিরক্তি কণ্ঠে বললো,,,
“শালা হাসছিস কেন তুই?”
জিহান হাসি থামিয়ে বললো,,,
“দেখছি এক অসহায় হাসবেন্ড কেযে টাকার বিনিময়ে শালাকে পটিয়ে নিজের বউ কে আনার কষ্ট করে যাচ্ছে।”
“শুধু আমার বউ না তোর বউ ও আছে। দরকার আমার একার না তোর ও আছে, আপাতত তোর হয়তো লাগবে না সমস্যা নেই নিতে হবে না। তবে ভুলবশত যদি চোখ যাই তোর চোখ তুলে ফেলবো আমি।”
জিহান নিশানের কাছে আসলো কাঁদো কাঁদো সুরে ওর হাত ধরে বললো,,,
“আমার জান আমার কলিজা এমন করিস না। আমি তাহলে দুঃখে মরে যাবো না না বউ এর অভাবে ভিটামিন না পেয়ে মরে যাবো। তখন আমার কি হবে? দূর আমার না আমার বউ এর কি হবে? এইটা হবে না। প্লিজ আমার সোনা ভাই আমার চোখ তুলিস না আমি মাসুম একটা বেবি এই নিষ্পাপ মাসুম বাচ্চাটার উপরে নির্দয় হস না।”
নিশান হেসে ব্যাঙ্গ করে বললো,,,
“তুই মাসুম আর নিষ্পাপ, হবি আর দুইদিন পরে সন্তানের বাপ। আর বাপ এসে নিজে কই ও নাকি নিষ্পাপ।”
জিহান কিছু বলবে তখনি ঐখানে সিমি, সামিয়া, জারা রাত্রি সবাই আসে। ওদের আসতে দেখে জিহান আরেক সোফায় গিয়ে বসে পড়লো। সিমি সোজা নিশানের পাশে বসলো জারা, রাত্রি আর তাজ একসাথে বসলো। সামিয়া উপায় না পেয়ে জিহানের পাশে বসলো। নিশান আর চোখে সিমির দেখলো কালো রঙের থ্রিপিস পড়া। চুলগুলো যেমন তেমন করে খোঁপা করা। উড়না মাথায় কাপড় দেওয়া আছে অর্ধেক কাপড় দেওয়া বলে চুলের ধরণ বোঝা যাই। নিশান চোখ সরিয়ে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে লাগলো। সিমি নিশানের কাছে আরো সরে আসলো দুইজনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। নিশান উঠে যেতে চাইলেই সিমি হাত চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,,,
“উঠবেন না প্লিজ একটু থাকেন এইভাবে খুব ভালো লাগছে আপনার পাশে বসে থাকতে।”
সিমির এই আবদার নিশান ভাঙতে পারলোনা তাই চুপচাপ বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। এইদিকে জিহান ঝুঁকে সামিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,,
“ম্যাডাম আপনাকে দারুন দেখাচ্ছে। উফফ আবার প্রেমে পড়ে গেলাম!”
জিহানের কথা শুনে সামিয়া মুখ ঘুরালো। এইদিকে জারা আর রাত্রি ওদের কান্ড দেখে একসময় বলেই উঠলো,,,
জারা — “হয়েছে ভাইয়ারা ভাবিরা হয়েছে!আমরা দুই সিঙ্গেল মামুনি বসে আছি তোমাদের মাঝে এত পীড়িত কর না। আমাদের গলায় কলসি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না।”
জারার কথা শুনে সিমি বললো,,,
“তুই বল কোন ছেলেকে পছন্দ কিনা? আমি তোর ভাবি হয় ওর সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দেবো।”
জারা দুঃখী ভাব নিয়ে বললো,,
“উমমম ভাবিজান মনের মতো কথা বললে ভার্সিটি গিয়ে গেটের সামনে ছেলে খুঁজে তারপর বলবো বিয়ে দিয়ে দিতে।”
সিমি হাসলো। হুট্ করে তার শরীর যেন কেঁপে উঠলো। ওয়াক করলো মুখে হাত দিলো দ্রুত নিশানের গা ঘেঁষে বসাই নিশান অনুভব করলো সিমির কাঁপুনি তাই সে ভ্রু কুঁচকে স্লো ভয়েসে সিমিকে সুধালো,,,
“ঠিক আছিস তুই?”
সিমি নিশানের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,,,
“একদম ঝাক্কাস আছি।”
নিশান আর কিছু বললো না। নিজের মতো ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। রাত্রি জারাকে বলে উঠলো,,,
“জারা তোর জন্য সুন্দর একটা ছেলে আছে। বলবো?”
জারা ভ্রু কুঁচকে বললো,,,
“আমার জন্য? কই আগে বলিস নি তো এখন বল দেখি !”
রাত্রি হেসে বললো,,,
“নিশান ভাইয়া আর জিহান ভাইয়ার ফ্রেন্ড আয়ানের সাথে প্রেম করতে পারিস প্রেম না বিয়েও করতে পারিস খুব সুন্দর হবে তোদের জুটি।”
রাত্রির কথা শুনে সামিয়া বললো,,,
“হ্যা আয়ান আর একটা অভি ওদের দুইজনেরই এক দেখতে দুটোর মধ্যে একটারে বিয়ে করলে করতে পারিস।”
দুটোর কথা শুনে রাত্রির রাগ হচ্ছে কেন অভি কে তুলছে? অভি শুধু তার একান্ত ব্যাক্তিগত সম্পদ সে। জারা ভেবে বললো,,,
“ঠিক বলেছিস খারাপ না দেখতে ভালোই আছে বিয়ে করলে মন্দ হবে না।”
জিহান বলে উঠলো,,,
“তোকে বিয়ে করলে আমার বন্ধু পিছনের দরজা দিয়ে আবারো এই বাড়ি পাঠিয়ে দেবে।”
জিহানের কথার উত্তরে সামিয়া বলে উঠলো,,
“এই জবেদার ভাতার আমার বোনকে এইসব বলার রাইট আমি আপনাকে দেই নি।”
“ম্যাডাম জবেদার ভাতার বলছেন মানলাম। But আপনার এত সুন্দর সামিয়া নাম থাকতে জবেদা নাম বেশি পছন্দ হচ্ছে?”
জিহানের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো। একমাত্র নিশান বাদে সে ফোন স্ক্রল করছে আর ফাঁকে ফাঁকে সিমিকে দেখছে। অপরদিকে সামিয়া রাগে গজগজ করতে করতে বললো,,,
“আমি আপনার বউ লাগি না। দূরে থাকবেন বলে দিলাম।”
জিহানের আর উত্তর দেওয়ার সুযোগ হয় নি কারণ বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসছে। বাড়িতে পরপর মানুষ ঢুকতে দেখে নিশান শান্ত কন্ঠে সিমিকে বললো,,,
“চুপচাপ নিজের রুমে যা, খবরদার সাবধানতার বাণী এক পা যদি রুমের বাইরে বের হয় তাহলে যে তোর সাথে আমি কি করবো? I don’t know..!”
সিমি একটু হেসে উপরে উঠতে লাগলো। সত্যি বলতে কোন রাগ, ভয় কিছু লাগছে না তার। ভালো লাগছে যে নিশান তাকে আবারো শাসাচ্ছে, খেয়াল রাখছে। অভিমান কি ভাঙছে তবে? এইদিকে সিমির পিছু পিছু। বাকি তিনজন ও উপরে উঠে গেলো। বাড়িতে আত্মীয় আসতে তাজউদ্দিন সালাউদ্দিন মিলে আপ্পায়ন করতে লাগলো। আয়ান আর অভি দৌড়ে নিশান আর জিহানের কাছে আসলো। আত্মীয় হিসাবে আয়ান – অভির বাবা – মা, দাদা- দাদি আর ফুফি আসছে। আয়ান নিশানের পাশে বসে এক ধাক্কা দিয়ে বললো,,,
“আরে ভাই এইবার তো চোখ তুলে তাকা সারাদিন শুধু ফোনের মধ্যে ডুবে থাকিস। কি আছে এই ফোনে?”
নিশান আয়ানের কথাই পাত্তা না দিয়ে বললো,,,
“কি করতে আসছিস?”
“কতদিন পরে আসলাম ভাবলাম একটু আদর যত্ন করবি।তা না সোজা কি করতে আসছি এইটা জিজ্ঞাসা করছিস?”
নিশান জিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
“ফ্রিজ থেকে দুধ বাহির করে ফিডারে ঢেলে আমার পাশে বসে থাকা নবজতক শিশুকে আদর করে দে।”
নিশানের কথাই অভি বললো,,,
“একদম ঠিক আজকাল নবজাতক শিশুর থেকেও বেশি আকাম করে এই আয়ান।”
জিহান — “এইজন্য তোর কপালে বউ দূরে যাক প্রেমিকা ও জুটছে না।”
আয়ান — “তোর একটা বোনকে দিয়ে দিলেই তো বিয়ে করে ফেলতাম। দ্রুত গুড নিউজ শুনিয়ে তোদের মামা ডাক শোনাতাম। সেইটা তোরা চাইলেই হয়ে যাই। কিন্তু তোরা তো তোদের বোনদের লকারে বন্ধী করে রাখিস ছিঃ।”
আয়ানের কথা শুনে নিশান উঠে যেতে চাইলে আয়ান নিশানের হাত ধরে বললো,,,
“তুই কই যাস?”
নিশান হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে বললো,,
“বিয়ে করতে!”
বলে চলে গেলো সেই জায়গা ছেড়ে। অভি – আয়ানের বাবা কে গিয়ে সালাম দিলো নিশান,,,
“আস্সালামুআলাইকুম আঙ্কেল।”
উনিও সালামের জবাবে বললেন,,,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আসো বসো এইখানে!”
“না আঙ্কেল আমার অফিসের কাজ আছে সেগুলো করতে হবে। আপনারা থাকেন আমি পরে আসবো আল্লাহ হাফেজ।”
বলে নিশান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।সোজা নিজের রুমে ঢুকে কাজ করতে লাগলো। মূলত অভির বাবা মায়ের আশার কারণ ছেলের বিয়ে নিয়ে কথা বলবে। আর হলো ও তাই হুট্ করে অভির বাবা বলে উঠলো,,,
“আমার ছেলে অভির জন্য আপনার বাড়ির মেয়ে রাত্রির হাত চাইতে এসেছি। না করবেন না। আমার ছেলে অযোগ্য হওয়ার প্রশ্ন আসে না নিজিস্ব বাড়ি আছে ব্যবসা আছে। বিয়ে করে বউ কে ইনশাআল্লাহ ভালোই রাখবে।”
অভি ছেলে হিসাব খারাপ না কাজ কাম করে। দেখতেও ভালো, আর নিশান জিহানের ফ্রেন্ড অনেক দিনের পরিচিত চরিত্র ও ভালো। তাই সবদিক বিবেচনা করে মেহেরিন বলে উঠলো,,
“আমি রাজি। এখন মেয়ে আর বাকি সদস্য রাজি হলে বিয়ের কথা বার্তা বলবো।”
পরিবারের সবাই একত্রে বললো,,,
“আমরা রাজি সবাই।”
তাজউদ্দিন বলে উঠলো,,,
“আমরা মেয়ের কাছে শুনি দেখি সে আদাও রাজি কিনা? যদি রাজি থাকে তখন আপনাদের ফোন দিয়ে জানিয়ে দেবো। আপনারা এসে মেয়ে দেখে যাবেন।”
অভির পরিবার সায় দিলো। হাল্কা পাতলা নাস্তা করে উঠে পড়লো। চৌধুরী বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। অভি আগে আগে চলে গেছে। আয়ান জিহানের পাস দিয়ে যেতে যেতে বললো,,,
“সবারই হচ্ছে শুধু আমার বাদে….
সূর্যের তেজ কমে এলো। ঠান্ডা বাতাস বইতে লাগলো শহর জুড়ে। সময়টা বিকাল চারটা বেজে দুই মিনিট। নিশান, জিহান বাইরে গেছে অনেক ক্ষণ আগে জরুরি কাজ আছে এইজন্য।বাড়ির কর্তারা আসরের নামাজ পরে চায়ের দোকানে বসে হয়তো গল্প করছে। আর বাকি সদস্য সব ঘুমে কাত হয়ে আছে। এইদিকে সিমি রুম থেকে বেড়িয়ে দৌড়ে তার আম্মুর রুমে যাই নক করলো রোজিনা বলে উঠলো,,,
“আয়।”
সিমি ভিতরে ঢুকতে রোজিনা বললো,,,
“বল কি হয়েছে?”
সিমি মাথা নিচু করে বললো,,,
“আম্মু নিশান ভাইয়ের পছন্দের খাবার কি?”
“পায়েস জিনিসটা পছন্দ করতো নিশান। তবে অনেকদিন খেতে দেখি নি।”
“কিভাবে রান্না করতে হয় পায়েস?”
রোজিনা চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,,
“তুই রান্না করবি?”
সিমি মাথা নাড়লো রোজিনা আবারো বললো,,,
“না তুই পারবিনা আমি রান্না করে দিচ্ছি।”
সিমি মিনতি সুরে বললো,,,
“আমি রান্না করবো প্লিজ আম্মু বলো না কিভাবে রান্না করে। প্রমিস আমি কোন অঘটন ঘটাবো না।”
রোজিনা অনেক ভেবে মেয়েকে পায়েস রান্নার রেসিপি বলে দিলো। আর বারবার সাবধানে থাকতে বললো। সিমি দৌড়ে রান্নাঘরে ঢুকলো। ফ্রিজ থেকে দুধ বাহির করে ভিজাতে দিলো। চিনি, নুন, তেজপাতা সবকিছু একজায়গায় করে রাখলো। দুধ গলে আসতেই রান্না শুরু করলো। প্রথম বার সে চুলার কাছে দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে। আজ পযন্ত কোনদিন সে রান্না ঘরের রান্নার চৌকাট মারাই নি। রান্না করতে গিয়ে তার হাতে দুই তিন জায়গায় ছেঁকা লাগলো।
তুই শুধু আমার উন্মাদনা পর্ব ৪১
লাল দাগ হলো মুহূর্তেই কালো দাগ হয়ে গেলো।জ্বালা করে উঠছে ক্ষনে ক্ষনে, চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। অথচ সিমি সেইসব দিকে পাত্তা দিলো না পায়েস রান্না শেষ বলে, বাটিতে সার্ভ করলো। বাটিতে একটা চামুচ দিয়ে নিয়ে সোজা উপরে নিশানের রুমে ঢুকলো। টি টেবিলের উপরে ঐটা রেখে ওয়াশরুমে হাত মুখ ধুতে গেলো। ধোঁয়া শেষে বাহির হয়ে ফাস্ট এইড বক্স থেকে পোড়ার মলম লাগিয় নিলো। নিশান যদি দেখে তাহলে রেগে যাবে নিশ্চই। এইজন্য মলম লাগিয়ে নিলো যেন একটু কমে আসে। সিমি বেডে বসে নিশানের অপেক্ষা করতে লাগলো কখন আসবে আর কখন পায়েস খাওয়াবে?
