তাজমহল দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ১০
প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
জামাই চলে যাচ্ছে তাই শাহিদা বেগম একের পর রান্না করে পাঠাচ্ছেন মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। আজ এসেছে মধুভাত। যদিও এই মধুভাত গরমকালে বেশি খাওয়া হয় কিন্তু গরম আসতে আসতে জামাই দেশে থাকবে না তাই তিনি জালা চাল ভিজিয়ে রেখেছিলেন গতরাতে। তারপর ভাত রেঁধে সেগুলোকে ঘুটনি দিয়ে ঘেঁটে তারপর জালা চালের গুঁড়া দিয়ে মেখে রেখে দিয়েছিলেন। সকালে বড়ো একটা পাতিলে করে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
শাইনা এত বারণ করলো তারপরও আম্মা শুনলো না। তাসনুভার নাক সিটকানি তার ভালো লাগে না।
মধুভাত তাজদার সিদ্দিকী খাবে কিনা সেটা নিয়েও মনে সন্দেহ ছিল। কিন্তু তাজদার সিদ্দিকী চুপচাপ খেয়েছে। অবশ্য সে না দেখেমতো অন্য দিকে মুখ করে বসে খেয়েছে। তার মুখ দেখলে শাইনা বুঝেই যেত এটা তার অতটা পছন্দ হয়নি। শাইনার মন রাখতে খেতে হয়েছে একবাটি।
রায়হান আর তৌসিফ ঠোঁট টিপে হাসছিল তার কান্ড দেখে। বেচারা। বউয়ের মন রাখতে কত কষ্টটাই না করতে হচ্ছে।
কিন্তু বাড়ির বাকি সবাই বেশ মজা করে খেয়েছে। শাহিদা বেগম রওশনআরাকে পুকুরঘাটে দেখেছিল তখন জিগ্যেস করেছিল, তাজদার খেয়েছে কিনা। রওশনআরা বলেছেন, বেশ মজা করে খেয়েছে।
ও আর নুভা দুই ভাইবোনের সহজেই কোনো কিছু পছন্দ হয় না শুরুতেই। পরে আবার ওটাই খায়। উনি মধুভাত বসাতে জানেন না। অনেক বছর খাওয়া হয়নি। কেউ আগ্রহ দেখায় না বলে বাড়িতে করা হয় না।
তিতলি, তৌসিফ, রায়হান, ঝিমলি বেশ মজা করে খেয়েছে। ঝিমলির কাছেও এটা নতুন ছিল। তার কাছে পায়েস, টক দই এই দুইটার মাঝামাঝি নতুন স্বাদের ডেজার্টের মতো মনে হয়েছিল। খুব মজা লেগেছে।
তাসনুভা ভয়ে খায়নি। মধুভাত খেলে ঝিমুনি শুরু হয় এইসব কথা সে শুনেছে। ঝিমুতে থাকা মানুষ তার কাছে বিরক্তিকর লাগে। শো রুমে গিয়ে তার ঝিমুনি পেলে তখন? তাছাড়া এমন উইয়ার্ড খাবার কোথাথেকে আবিষ্কার করে মানুষ?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিন্তু দুপুরে বাড়ি ফিরে ফ্রিজ খুলে দেখলো আইসক্রিমের বাটিতে উপরে নারিকেল কুঁচি ছিটিয়ে কিছু একটা রাখা আছে। সে খেতে খেতে পুরো বাটি শেষ করে ফেললো। জোহরা বেগম এসে বললেন,”সকালে খাবেনা বলেছিলে। এখন মজা লাগলো?”
তাসনুভা অবাক হয়ে বলল,”এগুলো মধুভাত ছিল?”
“তো কি?”
তাসনুভা বাটিটা ধুয়ে নিতে নিতে বলল,”ভালো ছিল। এভারেজ।”
শাইনা ইদানীং অদ্ভুত ভাবে ভাত খায়। তাজদার সেটা লক্ষ করেছে। সে রান্নাঘরে একা একা অল্প করে খেয়ে বসে থাকে এই অভিযোগ আসার পর থেকে তাজদার তাকে নিজের পাশে বসে খাওয়ায়। সে খেয়াল করেছে শাইনা একদিন ঝোল ছাড়া সাদা সাদা ভাত খায় ভাজা মাছ কিংবা মাংস দিয়ে। অন্যদিন মাছ মাংস ছুঁবেও না। শুধু সবজি মেখে খায়। অন্যদিন ঝোল দিয়ে মেখে ভাতের রঙ লাল করে তারপর মুখে তোলে। কাঁচা মরিচ পারেনা একলোকমায় একটা করে খেতে। তাজদারের জিভ পুড়ে যায় দেখলে। এই মেয়ে কি পাগল?
ফলমূলের ক্ষেত্রেও তাই। একদিন আপেলের গন্ধ সইতে পারেনা। অন্যদিন সারাক্ষণ আপেল চিবোতে থাকে। ড্রাগন ফল সে খায় না। নাম শুনলেই বিরক্তি প্রকাশ করে। কিন্তু একদিন দেখা গেল এত তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে দেখে মনে হয়েছে এত মজার ফল সে আর কোনোদিন খায়নি। কি অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার!
রোদে কাপড়চোপড় শুকানোর ক্ষেত্রে খুব সতর্কতা আছে শাইনার। সে রোদে কাপড়চোপড় না শুকিয়ে গায়ে দেয় না। কেমন একটা ভেজা গন্ধ থেকে যায় মনে হয়।
কেচে কাপড় না ধুলেও তার পছন্দ হয় না। এতদিন তাজদারই কাপড়চোপড় ধুয়ে দিয়েছে। শাইনা সেসব দেখে ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে ফেলতো অনেকবার। তার কাপড়চোপড় কেউ ধুয়ে দেবে এইসব তার কাছে অস্বস্তিকর। কিন্তু তাজদার নিজের কাপড়চোপড়ের সাথে তার কাপড়চোপড়ও ধুয়ে ফেলতো। বিছানার চাদর, দরজা- জানালার পর্দা ধুতে হলে সেদিন পুকুরে চলে যেত। পুকুরে কাপড়চোপড় ধুতে আরাম।
তিতলি এসে বলতো এখনো সাবান ঘষেই যাচ্ছে। আজ রাত নামবে তবুও কাপড় ধোয়া শেষ হবে না। কাপড়ে এমনভাবে সাবান ঘষে কাপড় সাবানের সুগন্ধি ঘরজুড়ে ম ম করতে থাকে। তাকে ওভাবে কাপড় ধুতে দেখে শাহিদা বেগম সাথে সাথে ফোন করে বলেছিল,”তাজকে কাপড় ধুতে দিয়েছিস নাকি?
শাইনা বলল,”আমি মানা করেছিলাম। তারপরও শোনেনি। আমি বললে কোন কথাটা শোনে?”
শাহিদা বেগম বললেন,”কাপড়ে এমন এভাবে সাবান লাগালে টাকাপয়সা আর একটাও থাকবে? ফতুর হয়ে যেতে হবে। ও তো কাপড় কাচতেই জানে না। সাবান লাগাচ্ছে আর হাত দিয়ে একটুখানি কচলে পানিতে চুবাচ্ছে।”
শাইনা মায়ের কথা শুনে হেসে ফেলেছিল।
সে এতগুলো দিনেও তাজদার সিদ্দিকী আয়ের পরিমাণ সম্পর্কে জানেনা। কৌতূহলও দেখায়নি। মনে হয়েছে অপ্রয়োজনীয় কৌতূহল। পরে সে এমনিতেও জানতে পারবে। কিন্তু ব্যয় সম্পর্কে তার ধারণা হয়ে গিয়েছে। এত খরুচে না হলে ঢাকা শহরে তাজদার সিদ্দিকীর আরও অনেক ফ্ল্যাট হতে পারতো। তারউপর আত্মীয়স্বজনদের বিয়ে, অনুষ্ঠান, রোগসোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে টাকাপয়সা খরচ করে। নিজে না গেলেও প্রয়োজনমতো টাকাপয়সা পাঠিয়ে দেয়। এই ব্যাপারটা শাইনার অনেক ভালো লাগে। আত্নীয়স্বজনের খোঁজখবর নেয়া আর বিপদেআপদে টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করতে পারাটাও আল্লাহর একটা রহমত। এজন্যই তো তাজদার সিদ্দিকীর এক্সিডেন্টের খবর শুনে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হাসপাতালে।
কিন্তু সমস্যা একটা মাঝেমধ্যে এমন কিছু কাজ করে যা দেখে অন্যরা ভেবে নেয়, তিনি বিরক্ত, আগ্রহ নেই কিংবা অবহেলা করছে। অথচ বাস্তবে তার অভিপ্রায় মোটেই তা নয়।
শাইনা এটাও খেয়াল করেছে রাগের বশে, কিংবা জেদ দেখিয়ে একটা কথা বলে ফেলার পর সেই কথাটা ফিরিয়ে না নিতে পারার জন্যও স্ট্রাগল করতে হয় তাজদার সিদ্দিকীকে।
কিন্তু রাগের বশে একবার ঝামেলা শুরু করলে তারপর সবকিছু বিপরীত চক্রে প্রবাহিত হয়। জেদ বজায় রাখতে আরও একটি শক্ত কথা বলেন। তারপর নতুন ঝামেলা, নতুন ভুল বোঝাবুঝি। জেদ, তর্ক, কথার পিঠে কথা এভাবেই চক্রাকারে ঘটতে থাকে সব।
এইসবের ভীড়ে তাজদার সিদ্দিকীর আসল চেহারা আর সামনে আসতে পারে না। তিনি কি চাইছেন সেটা আর সোজাসুজি বলতে না পেরে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাড়া কথা বলে বসেন। সেখান থেকে আবারও নতুন ঝামেলা তৈরি হয়।
শাইনা অনেক কষ্টে এই ব্যাপারটা আবিষ্কার করেছে। আগে সে তাজদার সিদ্দিকী সম্পর্কে অন্যরকম ধারণা পোষণ করত। চোখের সামনে সবকিছু দেখলেও তার কাছে তা ভুল মনে হতো। মেকি মনে হতো। কিন্তু সে ধীরেধীরে বুঝতে পেরেছে একজন মানুষকে চেনার জন্য শুধু তার সাথে একঘরে থাকা যথেষ্ট নয়। সময়ই মানুষের প্রকৃত রূপকে সামনে নিয়ে আসে।
তাজদার সিদ্দিকীর একটাই দোষ।
মানুষকে নিজের ব্যাপারে বোঝানোর ক্ষেত্রে তিনি খুব কাঁচা। নিজেকে সবসময় উপস্থাপন করার সময় সবসময় ভুল পন্থাটা অবলম্বন করেন। যেটা করলে মানুষ সহজে তাঁকে মেনে নেবে, সেই কাজের বদলে তিনি এমন কিছু করে বসেন যা অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক চাপ দেওয়া বলে মনে হয়।
অথচ নিজে খুব ভালোভাবে অন্যজনকে বুঝতে পারেন। দূরে দাঁড়িয়ে মানুষের ঠোঁট নড়া কিংবা অঙ্গভঙ্গি দেখেও বুঝে ফেলতে পারেন কে তার সম্বন্ধে কেমন মনোভাব পোষণ করছে। কিন্তু এমনভাবে চলাফেরা করেন যেন তিনি বুঝতেই পারেননি তার নামে বাজে কথা বলা হচ্ছে।
অন্যের মনে কি চলছে তাও তিনি বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারেন। কিন্তু সহজেই মেনে না নেওয়ার এমন ভাব করেন যেন সহজ বিষয়টা তিনি আমলেই নিতে চাইছেন না। সহজতম সত্যটাকেও তিনি নিজের জেদে চেপে ধরে রাখেন। ফলশ্রুতিতে এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
শাইনার বিয়ের শুরুর দিনগুলোর জন্য এখন খুব আফসোস হয়। সে জানেনা তাজদার সিদ্দিকীর আফসোস হয় কিনা। কিন্তু তার হয়। সে যদি ছোটবেলার সেই দিনগুলোর কথা পুরোপুরি ভুলে গিয়ে নতুন জীবনটা শুরু করতো? হয়তো শুরু থেকেই তাজদার সিদ্দিকীর এই রূপটা তখন থেকেই আবিষ্কার করতে পারতো। চেষ্টার কোথায় কমতি ছিল সেটা সে বুঝে উঠতে পারেনা। আগে যা হয়েছে তা সে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। হয়তো ওইদিনগুলোর ছিল বলেই আজকের দিনগুলো এত স্পেশাল। আবারও কোনোদিন ভুল করার সময় ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে হয়তো সেই ভুল আর কখনোই হবে না।
তাজদার সিদ্দিকীর খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। আছরের নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরেই হঠাৎ করে বললো,”শাইনা রেডি হও। সময় পাঁচ মিনিট।”
শাইনা চমকে গেল।
“কোথায় যাব?”
“ডাক্তারের কাছে।”
“এখন?”
“হ্যাঁ। পাঁচ মিনিট কিন্তু।”
বলেই আবারও বেরিয়ে গেল। শাইনা কালো বোরকাটা পরলো। কালো হিজাব। তার অনেক বোরকা হয়েছে। কিন্তু এটা বেশি স্পেশাল। কারণ এটি বিয়ের সময়কার বোরকা। সবাই বলে এই বোরকায় তাকে বেশি মানায়।
তাজদার সিদ্দিকী গুণে গুণে পাঁচ মিনিট পরেই ভেতরে এসে হাত ধরে নিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো।
“চলো চলো।”
“ফাইলটা নিতে হবে।”
“আরেহ না।”
শাইনা থমকে দাঁড়ালো।
“ডাক্তার বকবে না? ওটা ছাড়া কিভাবে যাব? পরশুই তো এলাম ডাক্তার দেখিয়ে। আবার কেন?”
তাজদার শেষমেশ হতাশ হয়ে তার দিকে তাকালো। তারপর এগিয়ে এসে তার কানের পাশে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল,
“সিক্রেট। পরে বলব। সবাই জানবে আমরা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। পারফরম্যান্স দারুণ হওয়া চাই। লেটস গো।”
শাইনা হেসে ফেললো।
“কি চালাক বাপরে!”
তাজদার তার গাল টিপে দিয়ে বলল,”চলো।”
পথিমধ্যে তাসনুভা পথ আটকে দাঁড়ালো। কান থেকে ইয়ারপিস খুলতে খুলতে বলল,
“ভাইয়া জাস্ট টু মিনিটস। শাইনাকে আমি নিয়ে যাচ্ছি।”
তাজদার ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল,”কেন? আবার কি?”
“এখুনি নিয়ে আসছি। শাইনা চলো।”
সে শাইনার হাত ধরে টেনে নিয়ে এল ঘরে। তারপর বলল,”তোমার স্নিকার্সগুলো কোথায়?”
শাইনা দেখিয়ে দিল। তাসনুভা স্নিকার্সগুলো তার পায়ের কাছে এনে রাখলো। তারপর হাত ঝেড়ে বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বলল,
“কি ধরণের জুতো পরে চলে যাচ্ছিলে?”
শাইনা নিজের পায়ের দিকে তাকাতে তাকাতে জুতোটা খুলে ফেললো। ফ্ল্যাট জুতো তার ভালো লাগে। তাড়াহুড়োয় এটাই পেয়েছে। পরে নিয়েছে। কিন্তু বোরকাটার সাথে স্নিকার্স মানায়। পরতেও আরাম। তাড়াহুড়োয় খেয়াল করেনি।
“এটা পরো। আমি সিউর ভাইয়া তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে।”
কি চালাক! শাইনা বিস্ময় চেপে স্নিকার্সটা পরে নিল। তাজদার এসে বলল,
“হয়েছে?”
“চেইন।”
সে শাইনাকে টেনে নিয়ে গেল।
“সন্ধ্যা নেমে আসছে। চেইন পরে লাগাবে।”
“জুতো খুলে যাবে।”
“গাড়িতে উঠে যাবে এখন।”
আনোয়ারা বেগম বললেন,”ওই দেখো। বউ নিয়ে এই ভরসন্ধ্যায় কোথায় চলে যাচ্ছ?”
“ডাক্তারের কাছে। ইমার্জেন্সি।”
রওশনআরা বললেন,”ডাক্তার পরশু দেখালো না?”
তিতলি এসে তাসনুভাকে বলল,”আমাকে নিয়ে গেল না।”
তাসনুভা তার দিকে ফিরে একটা ঝাড়ি মারলো।
“ননসেন্স তিতলি! তুমি ওদের হাসবেন্ড ওয়াইফের মধ্যে কি করবে? পাগল তুমি?”
“তুমি পাগল। সবসময় ননসেন্স বলো কেন? তুমি একদম সেন্সলেস!”
“তিতলি বেয়াদবি করবে না।”
রওশনআরা পাশের রুম থেকে বললেন,”তিতলি তুমি আবারও তর্ক করছো বড়দের সাথে?”
“আচ্ছা সরি।”
তাসনুভা বলল,”শাটআপ! তোমার সরির কোনো ভ্যালু নেই আমার কাছে। হাজারবার সরি বললে সরির কোনো দাম থাকে না। তোমার সবার সাথে ঘুরতে ইচ্ছে করবে কেন? কেনই বা করবে? তুমি জানো না কোন সময় কোন কথাটা বলা উচিত? তুমি কি বাচ্চা মেয়ে?”
তিতলি কাঁচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আঙুলে চুল প্যাঁচাচ্ছে। এই শাঁকচুন্নির জন্য কোনো কথা বলে শান্তি নেই।
তৌসিফ তাদের পেছনে কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে রইলো। তাসনুভা তিতলির চোখ অনুসরণ করে তার দিকে ফিরলো। তৌসিফ বলল,
“তোর জ্ঞান দেয়া শেষ হয়েছে?”
“আমি জ্ঞান দিচ্ছি? তোমার এখানে কাজ কি?”
তৌসিফ এসে তার আর তিতলিকে মাথায় চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,”হাট! তোদের ঝগড়াঝাটির জ্বালায় ঘরে শান্তিতে একটু বসতে পারিনা। তোদের জন্য বড়ো ভাই আর মেঝ ভাই ঠিক আছে। ওরা থাকলে তোরা সিধা থাকিস।”
তিতলি তাসনুভার পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো। উঁকি দিয়ে বলল,
“ঘরে বসে থাকতে কে বলেছে তোমাকে? এখন কি তোমার ঘরে বসে থাকার সময়? যাও বাইরে যাও। রোজগার করো। পয়সা কামাও। ঘরে বসে বসে চাচ্চুর অন্ন ধ্বংস করছো কেন? হুয়াই? জবাব দাও বৎস।”
তৌসিফের চোয়াল ঝুলে পড়লো। এখন বোনের পেছনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে?
“তুই তো দেখছি নাম্বার ওয়ান পল্টিবাজ! এখন ওর সাইডে চলে গেলি?”
“তো কি? তোমার মাথায় উঠে নাচতে বলছো? সারাক্ষণ মারো কেন আমাদের? তোমার বউয়ের সব চুল ছিঁড়ে ফেলবো আমরা। প্রতিশোধ নেব। প্রতিশোধ। তুমিও তো মেঝ ভাইয়ার মতো লন্ডন উড়াল দেবে। তখন তোমার বউকে আমি আর আপু মিলে এমন মার দেব। ভাই রে ভাই। মার খেয়ে তোমার বউ ফিতফিত করে কাঁদতে কাঁদতে বাপের বাড়ি চলে যাবে।”
তৌসিফ কপাল চেপে ধরলো।
“ভাই আমি এই কাকে পকেট খালি করে আচার চকলেট খাওয়াই? এতবড়ো ধড়িবাজ তো বাপের জন্মে দেখিনি।”
তাসনুভা এতক্ষণ চুপচাপ ওদের তর্ক শুনছিল। এবার অধৈর্য হয়ে গর্জে উঠলো,
“ভাইয়ে তুমি আমাকে মারলে?”
তৌসিফ তার দিকে তাকিয়ে দ্বিগুণ গর্জে বলল,”ধুর শালা। কোন মান্ধাতার আমলে মারলাম সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন করছে। এই ছাগলদুটোকে কাদের গলায় যে ঝুলাবো আল্লাহ!”
বলতে বলতে সে সেখান থেকে সরে পড়লো। তাসনুভা অবাক হয়ে তিতলির দিকে চেয়ে বলল,”তুমি ছোটো ভাইয়াকে এখনো আচার চকলেট আনতে বলো? তুমি বড়ো হবে না কখনো?”
তিতলি দুপাশে মাথা নেড়ে বলল,”না, আমি বড়ো হতে চাই না। ছোটবেলা থেকে খেয়ে এসেছি। খেয়েই যাব। ছোটো বোনের জন্য সবাই আচার চকলেট আনে। ইট’স নর্মাল।”
“ইউ নৌ হোয়াট তিতলি? ইউ আর জাস্ট ডিজগাস্টিং!”
“ওকে, আই লাভ ইউ।”
“তিতলি!”
তার চিৎকার শুনে রওশনআরা চলে এল। কিন্তু তিতলি তার আগেই সেখান থেকে পালিয়েছে।
শাইনা গাড়ি থেকে নামতেই উবু হয়ে জুতোর চেইন লাগাতে গেল। কিন্তু পারলো না। তাজদার এসে বলল,”কি হলো নামো?”
শাইনা জুতোর দিকে তাকালো। তাজদারও চোখ নিচু করে তার জুতোর দিকে তাকালো। তারপর বসে চেইনটা লাগিয়ে দিয়ে হাত ধরে বলল,”চলো।”
“এখন কোথায় যাব? স্ট্রিটফুড খাব?”
শাইনার চোখমুখ ঝলমল করে উঠলো। তাজদার বলল,”আমার মাথা খারাপ?”
সাথে সাথে শাইনার মুখ থেকে হাসি সরে গেল। না থাক, আজেবাজে জিনিস খাওয়া যাবে না। আর কয়েক মাসই তো।
সূর্য পশ্চিম দিকে ধীরেধীরে ঢলে পড়ছে। গাড়ি থেকে নামামাত্রই গোধূলির আকাশ দেখে শাইনা বলল,”একদিকে কুয়াশা নামছে আরেক দিকে সূর্য ডুবছে। দেখুন দেখুন।”
তাজদার পশ্চিম দিকে তাকালো। তারপর তার দিকে তাকিয়ে বলল,”দেখলাম। মারাত্মক কিছু না। স্বাভাবিক।”
শাইনা গাল ফুলিয়ে তাকালো। ধুর! এই লোকের সামনে কোনো কথা বলে শান্তি নেই। রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ। বেশ চওড়া রাস্তার। রাস্তার পাশের হাঁটার জায়গায় সাদা মাটি। কিছুটা পথ হেঁটে গেলে কয়েকটা দোকানপাট দেখা যাবে।
শাইনা জানতে চাইলো,
“এখানে হাঁটতে এসেছি?”
“তুমি চাইলে দৌড়াতে পারো। এমনকি ডান্সও।”
“যাহ।”
মাথা দিয়ে তাজদারের বাহুত ঘষা দিল সে। তাজদার শব্দ করে হেসে উঠলো। শাইনা তার শালটা পিঠের সাথে জড়িয়ে দুহাতের পাশে রাখতে রাখতে বলল,
“আপনি চাদর আনেননি? ঠান্ডা লাগবে কিছুক্ষণ পর। জ্যাকেটও তো পরেননি।”
“চাদর আছে গাড়িতে।”
“ওটা এখন নিয়ে নিন। এখনো ঠান্ডা লাগছে।”
“পড়ে নেব।”
“না, এখন নিন।”
“এত জোরাজোরি পছন্দ না আমার।”
বলতে বলতে গাড়ি থেকে চাদরটা নিয়ে গায়ে জড়ালো।
“শান্তি?”
শাইনা মাথা কাত করে জানালো,”শান্তি!”
দুজনে পাশাপাশি কিছুটা পথ হাঁটলো। সন্ধ্যা নেমে এসেছে প্রায়। মাগরিবের আজান হচ্ছে। শাইনা বলল,”আপনার নামাজ?”
তাজদার ইশারায় সামনে দেখিয়ে দিল। একটি চায়ের দোকান। ঝকঝকে নতুন দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে নতুন খুলেছে। আগে তো এখানে দোকান ছিল না।
শাইনা বলল,”আমি ওখানে বসবো?”
“আরেহ না। চলো।”
শাইনা ধীরেধীরে হাঁটতে লাগলো। তাজদারের হাতের মুঠোয় তার হাতটা। ধীরেধীরে কুয়াশায় জড়িয়ে যাচ্ছে চারপাশ। দেখতেও শান্তি লাগছে। চোখের সামনেই অন্ধকার নেমে এল। শাইনা এবার মসজিদ দেখতে পেল। এই এলাকার সবচেয়ে বড়ো মসজিদটি। এই মসজিদের ব্যাপারে অনেক শুনেছে সে। তাজদার তাকে নিয়ে গেল মসজিদের গেইটের সামনে।
শাইনা দেখলো মুসল্লীরা ঘাটে নেমে অযু করছে। সে ঘুরেফিরে মসজিদের চারপাশটা দেখতে লাগলো। চারিদিকে আলো জ্বলে উঠায় কেমন জৌলুশ ফিরে পেয়েছে এই শীতের সন্ধ্যা। এবার আরও ভালো লাগছে শাইনার। ভেতরটা কেমন উৎফুল্ল হয়ে আছে! সে অনেকক্ষণ পরে তাজদারের দিকে তাকালো।
“আমি এখানে কি করবো?”
“এসে জানাচ্ছি। তুমি ওখানে গিয়ে বসো।”
মসজিদের পাশেই যাত্রী ছাউনির কাছটায় শাইনাকে রেখে গেল সে। দু’জন বৃদ্ধ মহিলার পাশে শাইনা বসে রইলো। তারা কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে জানতে চাইল,”ও মেয়ে ওটা তোমার জামাই?”
“জি।”
“বাড়ি কোথায়?”
“পটিয়ায়।”
আর অনেকগুলো প্রশ্ন! নামাজ পড়ে মুসল্লীদের সাথে সাথে নামাজ পড়ে বের হয়ে এল তাজদার। শাইনা তাকে দেখামাত্রই দাঁড়িয়ে পড়লো। তাজদার কাছে আসতেই শাইনা ফিক করে হেসে ফেললো। তাজদারের কপাল কুঁচকে গেল।
“হাসছো কেন?”
“আগে কপাল ঠিক করেন।”
“করলাম।”
“আপনি মসজিদের টুপি পরে চলে এসেছেন।”
তাজদার সাথে সাথে মাথায় হাত দিল। হেসে ফেললো শাইনার সাথে। তারপর সেটা খুলে পকেটে ভরে নিয়ে বলল,”কিছু হবেন। ওখানে অনেক টুপি এমনিই পড়ে থাকে। তৌসিফকে বলবো দশটা দিয়ে যেতে। চলো।”
শাইনা মজা করে বলল,”ডিজিটাল টুপিচোর!”
তাজদার ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,”তুমি কতবড়ো চোর সেটা তো তুমি জানো না।”
শাইনা অবাক হয়ে বলল,”আমি কি চুরি করেছি? আজব!”
তাজদার আর কথা বললো না। শাইনার হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,”বেশি কথা বলছো আজকাল।”
শাইনা যেতে যেতে বলল,”কি যেন বলবেন বলেছিলেন?”
তাজদার বলে উঠলো,”ওহ হ্যাঁ। তোমাকে এখানে কেন এনেছি।”
“কেন?”
“আমি লন্ডন থেকে ফেরার পর আব্বুদের সাথে এই মসজিদে এসেছিলাম। তুমি তখন আমাকে দেখা দিতে রাজীই হচ্ছিলে না। আমি ফ্যামিলির সাথে ফাইট করছি আর আপনি আমাকে দেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। ওইসব মনে পড়লে এখন মনে ময় একদম ইচ্ছেমতো দিই।”
শাইনা তার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শুনতে শুনতে হাসলো। বলল,
“আচ্ছা, তারপর?”
“তখন আমি এই মসজিদে এসে নিয়ত করেছিলাম তোমাকে যদি আমি কোনোভাবে পেয়ে যাই তাহলে এই মসজিদে এসে দু রাকাআত নফল নামাজ পরবো। তোমাকেও একদিন এই মসজিদের সামনে নিয়ে আসবো।”
“নফল নামাজ পরেছেন?”
তাজদার তার দিকে তাকালো। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,”অনেক আগেই। আমি কথা দিয়ে কথা রাখি। অনেকবার এসেছি এই মসজিদে। যেমনভাবে বলছো যেন আমি কথার খেলাপে ওস্তাদ।”
শাইনা হাসি চাপা দিয়ে বলল,”তারপর?”
তাজদার এবার রেগে গেল।
“তারপর তোমার মাথা। বেকুবচন্ডী। আজ নিয়ত করেছি পরের বার দেশে এলে জুনিয়রকে নিয়ে আসবো। তোমার এত হাসি পাচ্ছে কেন? পারো তো এটাই।”
শাইনা তার বাহুতে মাথা হেলান দিয়ে বলল,”আপনি বিয়েটা করার জন্য আর কি কি করেছেন?”
তাজদার রাগ দেখিয়ে তার হাত ছেড়ে দূরে চলে গেল। যে মেয়ে কোনোকিছু সিরিয়াসলি নেয় না তাকে এতকিছু বলতে ভালো লাগে না। খানিকটা গম্ভীর হয়ে গেল তার মুখ।
শাইনা তাকে চুপ হয়ে যেতে দেখে তার পিছু পিছু হেঁটে গিয়ে নিজ থেকে হাত ধরে ফেললো। তাজদার মাথা ঘুরিয়ে তাকালো তার দিকে। তারপর তার ধরা হাতের দিকে। শাইনা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“আপনার রাগের ফ্যাক্টরীটা কোথায়? ঠিকানা দিন। একটা বোম মেরে আসি।”
তাজদার আরও গম্ভীরমুখে বলল,”তুমি এইসবই পারবে। আমি যখন তোমাকে পাওয়ার জন্য দোয়া করছিলাম তখন তুমি দোয়া করছিলে আমি যাতে তোমাকে না পাই। হিম্মত থাকলে স্বীকার করো।”
শাইনা মাথা দুলিয়ে বলল,”স্বীকার করলাম। আপনিও এটা স্বীকার করুন যে আপনি আমার সাথে ছোটোবেলায় এমন এমন কান্ড করেছিলেন যার জন্য আমি ওইরকম দোয়া করতে বাধ্য হয়েছিলাম।”
তাজদার তার সাথে আর কোনো কথা বললো না। শাইনাও না। সামনের একটা দোকান থেকে দুই প্লেট ভেলপুরি কিনে নিল তাজদার। সে এখানকার ভেলপুরির রিভিউ পেয়েছিল তাসনুভার কাছ থেকে। শাইনা খেতে পারবে। কোনো সমস্যা হবে না।
শাইনা বলল,”আপনিও খাবেন?”
তাজদার চট করে তার দিকে তাকালো। তারপর শান্তভাবে বলল,
“না, দুটোই তোমার জন্য।”
শাইনা মনে মনে খুশি হলো। কিন্তু লজ্জাও পেল তাজদারকে অমনভাবে তাকাতে দেখে। ধুর সে মাঝেমধ্যে এমন কাজ করে বসে!
সে খেতে খেতে তাজদারের দিকে বাড়িয়ে দিল।
“খান।”
তাজদার বলল,”এইসব আমার ভালো লাগে না।”
শাইনা বলল,”আপনার কি ভালো লাগে সেটা একটু বলবেন?”
তাজদার আবারও তার দিকে তাকালো। শাইনা বলল,”এত রাগ করেন কেন হুটহাট? কালকের পর আর রাগ করার জন্য আমাকে পাবেন?”
“তোমাকে আমি কখনো পেয়েছি?”
শাইনা হেসে ফেললো।
“না তো! বাচ্চাটা আকাশ থেকে টুপ করে পড়ে পেটের ভেতর ঢুকে পড়েছে।”
বলেই সে হাসতে লাগলো। তাজদার বেশি রেগে যাচ্ছে মনে হতেই শাইনা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,”আচ্ছা বেশ! পরের বার দেশে এলে খুব ভাব জমাবো।”
“ওই ভাবের দরকার নেই আর।”
শাইনা এবার চুপচাপ খেতে লাগলো। আর কোনো কথা বললো না। নিজেরটা শেষ করে তাজদারের হাতে থাকা প্লেটটা নিয়ে খাওয়া শুরু হলো। তাজদার মনে মনে ভাবলো, কি পরিমাণ পেটুক হয়ে গিয়েছে এই মেয়ে!
শাইনা তাকে জোরপূর্বক দুটো খাওয়ালো। খাওয়া শেষে তার খুব ঝাল করছিল। তাজদার দুটো হাওয়ায় মিঠাই কিনে নিয়ে এল। শাইনা বলল,
“আপনার রাগগুলো এই হাওয়ায় মিঠাইয়ের মতো। দেখতে বিশাল। কিন্তু গালে দিলেই টুক করে মিলিয়ে যায়।”
তাজদার কোনোকিছু বললো না আর। শাইনা তার শালটা ভালো করে জড়ায়নি দেখে শালটা ভালো করে জড়িয়ে ইশারায় বোঝালো চুপচাপ তার সাথে হাঁটতে। আর কোনো কথা হলো না। তাজদার
চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলো। শাইনা গাড়িতে উঠলো না। তাজদার বেরিয়ে এসে তার হাত ধরতেই শাইনা বলল,
“আমি জানি আপনি এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার জন্য বের হননি। সরি। আর কোনো মজা করবো না।”
তাজদার তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
শাইনা তার পাঞ্জাবি দুহাতে ধরে টেনে এনে বলল,
“সিদ্দিকী মিয়া কি খুব রাগ করেছে?”
তাজদার অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,”আমার সাথে রাগ ছাড়াও অন্য শব্দ যায় এটা তোমার মাথা আসে না কখনো?”
শাইনা ঠোঁট গোল করে বলল,”ওহহ, অভিমান?”
“তুমি আসলে একটা..
শাইনা ঠোঁট কামড়ে বলল,”আমি তো জানি আপনি আমাকে পাওয়ার জন্য কত কষ্ট করেছেন।”
“কিছু জানো না।”
“আমি ওই বাড়িতে অনেকদিন আছি। আমি বুঝতে পারছি কত কি ঘটেছে।”
“তাতে কি প্রমাণ হয়?”
“প্রমাণ হয় আপনি আমাকে পাওয়ার জন্য কতটা ডেস্পারেট ছিলেন।”
“তুমি এখনো ছোটবেলার ঘটনাগুলো মনে রেখে দিয়েছ।”
শাইনা বলল,”তার জন্য না হয় আরেকবার বিচ্ছেদ হবে?”
তাজদার চট করে তার হাত চেপে ধরে বলল,”আবার?”
শাইনা তার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। বিস্ময়ের সাথে বলল,
তাজমহল দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৯
“আপনি সেই তাজদার সিদ্দিকী? আমার অবিশ্বাস লাগে। আমার কি মনে হয় জানেন?আমার প্রতি যেদিন আপনার ভালো লাগা তৈরি হলো ওইদিনই অহংকারী তাজদার সিদ্দিকীর পতন হয়ে গিয়েছিল।”
“আমার পতন দেখে তোমার আনন্দ হয়েছিল খুব?”
“না, ভয় হয়েছিল। আপনি যদি ওটাকেই নিজের বিজয় ভাবেন সেটা ভেবে।”
