The Silent Manor part 27
Dayna Imrose lucky
“যাই বলিস, আমার ফারদিনাকে সে-ই লেগেছে। অপরূপা সুন্দরী নারী।আমি যদি তাকে নিজের চোখে দেখতে পারতাম!” কথাটা বলল মীর বেশ আফসোস এর সুরে।আহির বইয়ের পাতা বন্ধ করল খানিক বিরতির জন্য।সে মেরুদন্ড সোজা করে টান করে বসল। দ্যা সাইলেন্ট ম্যানর’ বইটি টেবিলে রাখল। রাফিদ মীর এর দিকে তাকিয়ে বলল “কারো বর্ণণা শুনেই প্রেমে পড়ে গেলি!”
“প্রেমে পড়িনি।বল মুগ্ধ হয়েছি।” মীর বলে সিগারেট বের করল। ঘন্টাখানেক এর বেশি হয় তিনজন বেশ মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছিল।পড়ার মাঝে বুলবুল কয়েকবার ডেকে গেছে সবাইকে রাতের খাবারের জন্য। রাফিদ পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে যতক্ষণ না বইটা পড়া শেষ হবে ততক্ষণ এখান থেকে যাবে না।এক রাখাল বাঁশিওয়ালা, একজন জমিদার কন্যার প্রেমের শেষ পরিণতি ঠিক কি হয়েছিল তা তারা জানতে চায়।
মীর সিগারেট এ দু টান দিয়েছে। তাঁর হাত থেকে সিগারেট এর বাকি অংশ আহির নিয়ে টানতে শুরু করল।মীর ঘাড় এদিক ওদিক ঝাঁকিয়ে বলল “তোরা আপাতত বইটির এখন পর্যন্ত যা পড়েছিস সেসব নিয়ে আলোচনা কর।আমি আসছি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাফিদ বলল “কোথায় যাচ্ছিস?
মীর হাই তুলে বলল “তোর বোনের সাথে দেখা করে আসি। সুন্দরী মায়া। ভাগ্যিস তোর মতন হয়নি।”
“আমার মত মানে? রাফিদ কপাল ভাঁজ করে জিজ্ঞেস করল।
“তুই তো রশীদ তালুকদার এর বিশ্বস্ত কাজের লোক কুদ্দুস এর মত।বোকা, দেখতে অসুন্দর,নাক বোচা, বেঁটে।”
“কুদ্দুস এর নাক বোচা ছিল না। কুদ্দুস কাজের লোক হলেও তোর থেকে ভালো ছিল। অন্তত মেয়েদের বর্ণনা শুনে হুটহাট করে মুগ্ধ হত না।”
“তাঁর মানে তুই স্বীকার করছিস,যে তোরও নাক বোচা!” বলে মীর হাসল। রাফিদ বলল “তোর চরিত্রের ঠিক নেই। আমার বোনের আশেপাশে ঘুরবি না।”
তাঁদের দুজনের কথোপকথন এর মাঝে আহির
বিবর্ণ মুখে বলল “একজন মানুষের শরীর থেকে হাত ছিঁড়ে ফেলাটা কতটা ভয়ংকর,ভেবে দেখেছিস? সামসুল এর কতটা কষ্ট হয়েছে!ভাবলেই আমার শরীর ঝিম মেরে উঠছে।”
মীর আহির এর কন্ঠে বিমর্ষতার ছাপ পেল।হঠাৎ শান্ত হয়ে বসল। রাফিদ স্থির ভাবে বলল ‘ঠিকই বলেছিস? বিষয়টি তো ভেবে দেখেনি।ওঁরা মানুষ না নরপশু? রাফিদ তিক্ত স্বরে বলল।
মীর বলল “আমিতো ভাবছি, সুফিয়ান এর সাথে ফারদিনার সম্পর্ক ওরা নাকি মেনে নেয়, কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ফারদিনার ভাইয়েরা এত সহজে সম্পর্কটা মেনে নিতে পারে না।”
আহির সিগারেট এ লম্বা টান দিল।এরপর সরু ঠোঁটে ধোঁয়া ছাড়ল।এক পায়ের উপর আর এক পা তুলে বসল।বলল “ভাবার বিষয়।তবে সুফিয়ান ফারদিনাকে সত্যি সত্যি ভালোবেসেছিল।”
“ভালোবাসা আবার মিথ্যা মিথ্যা হয় নাকি!” বলল মীর। কথাটা শুনে রাফিদ হেসে ফেলল।আহির বলল “বোকার মত কথা বলছিস কেন, মিথ্যা ভালোবাসা আছে। মিথ্যা ভালোবাসা কে সত্যর মত তৈরি করে অপরজন কে আকৃষ্ট করে তার উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য। এরপর সত্যটা যখন চাপা থেকে বেরিয়ে আসে তখন এর পরিনতি ভয়াবহ হয়।”
মীর বলল “ফারদিনা বোধহয় সত্যিই আজমাত নুরবেক এর সাথে চলে গিয়েছিল। আমার এটাই মনে হচ্ছে। মেয়েদের বিশ্বাস করতে নেই।”
“তবে তুই কেন মেয়েদের পেছনে ঘুরছিস?! রাফিদ জিজ্ঞেস করল।
“শোন, আমি একজনকে ভালোবাসি।আর আমি ওর পিছনেই পড়ে আছি। অন্যদের তো শুধু দেখি।তাও চোখ দিয়ে।মন দিয়ে না।”
“দেখা দেখাই হয়,চেয়েছিস মানে তোর দৃষ্টি বাসি হয়ে গেছে।তোর শরীর থেকে বাসি বাসি গন্ধ আসছে। দূরে যা।”
“তোর বোনের কাছে যাচ্ছি। ওকে দিয়ে আমার শরীরের গন্ধ শুকাব।ও যদি বলে সত্যিই এরকম গন্ধ আসছে তারমানে তুই সত্যি বলছিস।” মীর বলল।
তার দিকে তাকিয়ে আহির বলল “আমরা একটা বাস্তব ঘটনা সম্পর্কে জানছি,আর তোরা ঝগড়া করছিস?
মীর বলল “ঝগড়া না,ওর হিংসে হচ্ছে।যদি ওর বোনকে পটিয়ে ফেলি।ও তো মেয়ে পটাতে পারে না।অকর্মা।”
“এখানে অকর্মার কি আছে,তুই বড্ড বেশী কথা বলিস শালা।” রাফিদ বলল।
“শালা তো বলেই ফেলেছিস,এখন যাই,তোর বোনের সাথে একটু..!” বলে মীর বাকি কথা গিলে ফেলল।আহির কপাল চাপড়ে বলল “ভাই তুই যেখানে খুশি যা, আমাকে একটু ভাবতে দে।তবুও ঝগড়া করিস না।”
মীর বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। রাফিদও উঠে দাঁড়ালো বলল “তুই আমার বোনের কাছে যাবি না, খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।”
“খারাপ আমি করে আসছি।তুই গোয়েন্দা বাবুর সাথে আড্ডা দে।” বলে মীর ধাক্কা দিয়ে রাফিদ কে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে চলে যায় মায়ার ঘরে।
জমিদারবাড়ির প্রাচীন অন্দরমহল নিস্তব্ধ।
চাঁদের আলো পড়েছে বারান্দার পুরনো মার্বেল মেঝেতে, যেন রূপার পাত বিছানো। দূরে কুকুরের হালকা ডাকে রাতের নীরবতা আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে।
মায়া বসে আছে তার শোবার ঘরের জানালার পাশে। সোনালি কাজ করা পর্দা বাতাসে হালকা দুলছে।সে গুনগুন করে গাইছে,একটা পুরনো ধ্রুপদী সুর, যা তার মা ছোটবেলায় শিখিয়েছিল। কণ্ঠে বিষণ্নতা, তবুও সুরে এক অদ্ভুত কোমলতা।তার চোখে যেন অনন্ত স্মৃতি ভেসে উঠে,কখনো প্রিয়জনের মুখ, কখনো হারিয়ে যাওয়া সময়ের ছায়া।
চুল খুলে রেখেছে সে, কোমর পর্যন্ত নেমে এসেছে। হাতে হাতির দাঁতের চিরুনি দিয়ে ধীরে ধীরে চুল আচড়াতে লাগল।চিরুনির শব্দে যেন শোনা যায় পুরনো প্রাসাদের প্রতিধ্বনি
“মায়া, তুমি আবার গান গাইছো?”কিন্তু এখন আর কেউ তাকে ডাকতে আসে না।বাতাসে আতর মেশানো গন্ধ, পাশে জ্বলছে তেলের প্রদীপ।চাঁদের আলোয় মায়ার মুখটা যেন আরও ফ্যাকাসে, তবুও রাজকন্যার মতো গর্বিত ভাব ভঙ্গিমা ধরে রেখেছে।সে গান থামিয়ে নিঃশব্দে বলে উঠল
“এই বাড়ি,এই নিঃসঙ্গতাই যেন এখন আমার একমাত্র সঙ্গী…”
ঘর নিস্তব্ধ। বাইরে শুধু রাতের হাহাকার,
আর ভেতরে মায়ার মৃদু নিশ্বাসের শব্দ।এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল।মায়া চিরুনি হাতে রেখেই দরজা খুলে দিল।মীর এসেছে। মায়া পুনরায় দরজা লাগিয়ে দিতে চাইলে মীর দরজা খুলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল।মায়া বলল “এত রাতে আপনি এখানে কি করছেন?”
মীর মায়ার শোবার খাটের উপর শুয়ে পড়ল।হাতে মায়ার চুল বাঁধার ফিতেটা নিয়ে বলল “ছেলেরা মেয়েদের ঘরে রাতেই আসে।”
“আপনি আসতে পারবেন না,চলে যান।। অসভ্য লোক একটা”
“এখন পর্যন্ত সভ্য আচরণ করছি।তাই অসভ্য বলছো, অসভ্যতামি করলে কি করবে?
মায়া রাগে গজগজ করতে করতে মীর এর সামনে বিছানায় বসে বলল “আপনাকে জ’বাই করব।চলে যান এখান থেকে।কেউ চলে আসবে।”
“আসুক।আমিও চাই কেউ আসুক।” মীর এর কন্ঠে রসিকতার ছাপ।
মায়া বলল “উফ আপনি যাবেন এখান থেকে?”
“উফ যাব না আমি এখান থেকে।” বলে মায়ার দিকে ঝুঁকে গেল মীর।মায়া বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।আশেপাশে কিছু খুঁজছে।জগের দিকে তাকাল।পাশেই একটা গ্লাস রাখা। মায়া গ্লাস টা মীর এর দিকে ছুড়ে মারল।মীর গ্লাস টা ক্যাচ ধরে বলল “তোমার এত রাগ, শোনো, মেয়েদের এত রাগ ভালো নয়। বিয়ের পর দেখবা তোমার স্বামী পালিয়েছে।আজ আমি গ্লাস টা ধরেছি ঠিকই, আমার জায়গায় তোমার স্বামী হলে এতক্ষণে ঘুরে তোমার দিকেই মারত।”
“সেসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।আপনি চলে যান আমার ঘর থেকে।”
“একদিন দুনিয়া থেকেই চলে যাব।সেদিন আফসোস করবে। মিলিয়ে নিও।”
মায়া মুখ ভেংচে দিল।বলল “আপনার যা হোক, আমার তাতে কিছুই যায় আসে না।অন্যর হবু স্বামীর জন্য আমার দরদ দেখিয়ে লাভ কি” মায়া শান্ত ভঙ্গিতে ভাবলেশহীন ভাবে বলল।মীর কিঞ্চিত ভ্রু কুঞ্ছিত করে বলল “অন্যর স্বামী মানে?”
“মোহিনী,আমি মোহিনীর কথা বলেছি।এমন ভাব করছেন যেন কিছুই জানেন না।”
“তারমানে তুমি মোহিনীর কথা জেনে গেছো” মীর শীতল কন্ঠে বলল।
“আমি তো জেনেছি অনেক আগেই, কিন্তু আপনার ছোট্ট মা জানলে কিন্তু…!” বাকি কথা বলল না।
মীর লম্বা শ্বাস ফেলে বলল “আমি জানি তুমি কি বলতে চাচ্ছ,শোনো,ধনী গরীব,জাত-বেজাত এসব দেখে কখনো প্রেম ভালোবাসা হয় না।বুঝেছো?
“আমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই,যখন ওকে বিয়ে করবেন তখন আপনার ছোট্ট মা আর আপনার বাবাকে বুঝিয়েন।” বলে মায়া ভেনেশিয়ান আয়নার সামনে বসল।চুল আঁচড়াতে মনোযোগ দিল।মীর বিমুগ্ধ চোখে আয়নায় মায়ায় মুখটি দেখছে। মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে মীর এর দিকে দেখে বলল “আপনি যাচ্ছেন না কেন?
“যাওয়ার জন্য আসিনি।”
“অদ্ভুত, আমার ঘরে আপনাকে কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
“কি ধরনের কেলেঙ্কারি?
“আপনিই বলুন কি ধরনের কেলেঙ্কারি?” মায়ার মুখে কিছুটা ক্রোধ ভেসে উঠল।
মীর বলল “প্রশ্নের বিপরীতে প্রশ্ন হয় না।”
“আমিই আগে প্রশ্ন করেছি।”
“শোনো,আমি তোমার ঐ বাপ ভাইকে ভয় পাই না, তোমার ইচ্ছে হলে ডেকে এনে বলতে পারো,আমি তোমার ঘরে এসেছি।”
“আমিও বলব”
“কি বলবে? মীর বিছানা ছেড়ে মায়ার দিকে এগিয়ে বলল।
“বলব আপনি জোর করে আমার ঘরে ঢুকেছেন”
“শুধু ঘরেই ঢুকেছি, কিছু করিনি।আর তুমি আমার বোনের মত,আমি তোমাকে সে-ই চোখেই দেখি।”
মায়া দাঁড়িয়ে মীর এর মুখোমুখি হয়ে বলল “সত্যিই আমাকে বোনের চোখে দেখেন?
মীর ঢং করে বলল “অর্ধেক বোনের চোখে দেখি, অর্ধেক চোখে অন্যকিছু দেখি।”
“আপনার চরিত্রের ঠিক নেই। আপনার বাবাকে দেখে তো ভদ্রলোক মনে হয়। নিজের স্ত্রী চলে যাওয়ায় পর আর দ্বিতীয় অবধি করেনি।আর আপনি!”
“চরিত্র তুলে কথা বলো না।”
“একশো বার বলব। যতক্ষণ না এখান থেকে যাবেন ততক্ষণ কথা শোনাতে থাকব, আপনার চরিত্রের ঠিক নেই।”
“চরিত্র তুলে কথা বলে বড্ড ভুল করলে,এখন দেখো।….”
আহির ও রাফিদ প্রায়ই দেড় ঘন্টার মত অপেক্ষা করল মীর এর জন্য। ঘড়ির কাঁটা এখন সোয়া একটায়। আকাশে আজ রুপালি চাঁদ তারা। নারিকেল গাছের পাতাগুলো ঝিরিঝিরি শব্দ করছে। শেয়ালের ডাক আসছে না আজ।মনে হচ্ছে ওরাও দ্যা সাইলেন্ট ম্যানর’ বইটির ঘটনা নিস্তব্ধে শুনছে।
চাঁদনী আলো এসে আহির এর ঘরের বারান্দায় পড়েছে।সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে হাতে সিগারেট নিয়ে। সিগারেট জ্বলে ক্ষয় হচ্ছে।অথচ সেদিকে তার খেয়াল নেই।কানের কাছে সামসুল এর জীবনের শেষ আকুতি আর মিনতি গুলো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।সে দেখেনি দ্যা সাইলেন্ট ম্যানর’ বইয়ের ঘটনা গুলো।পড়েছে। কল্পনা করেছে। তাঁর মনে এখন পর্যন্ত যতটুকু পড়েছে ততটুকু গেঁথে আছে।
আহির কে যে অচেনা ব্যক্তি বইটি পড়তে বলেছে তাঁর কথা মনে পড়ল। আগামীকাল লোকটি আহির এর জন্য অপেক্ষা করবে। অনেক আশাভরসা নিয়ে আহির এর কাছে এসেছে।আহির তার ভরসা রক্ষা করবে বলে মনে মনে প্রতিশ্রুতি করল।হাত থেকে সিগারেট এর বাদবাকি খন্ডটি ফেলে দিল। বারান্দা থেকে চেয়ারে এসে বসল। দ্যা সাইলেন্ট ম্যানর’ বইটি হাতে নিল।এখন পর্যন্ত চল্লিশ নম্বর পৃষ্ঠায় পৌঁছেছে।বাকি পৃষ্ঠা উল্টাতে আহির সাহস করল না। অজান্তে তাঁর হাত কাঁপছে।টেবিলে রাখা জল থেকে এক গ্লাস জল খেয়ে নিল। শান্ত হওয়ার চেষ্টা করল।
রাফিদ একটা লকেট ঘোরাতে ঘোরাতে আহির এর ঘরে উপস্থিত হয়।আহির এর সামনের চেয়ারে বসল।আহির এখনো বইটির পরবর্তী পৃষ্ঠায় যায়নি। রাফিদ এর হাতে লকেট দেখে আহির জিজ্ঞেস করল “এটা কিসের লকেট?
“বাবা বলেছেন, জমিদার বংশের ছেলেদের গলায় এই ধরণের লকেট রাখা উচিত।রত্নখচিত পেনডেন্ট।রুবি পাথরের তৈরি। কিন্তু আমার এসব ভালো লাগে না।” রাফিদ এর বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই মীর উপস্থিত হয়।এসেই চেয়ারে ধব করে বসে পড়ল।জগ থেকে জল ঢেলে দু গ্লাস জল খেয়ে নিল।মীর কে উদাসীন দেখাল। রাফিদ জিজ্ঞেস করল
“কোথায় ছিলিস?
মীর সাথে সাথে জবাব দিল না। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল “ছাদে। অনেক সময় ধরে বসে ছিলাম।তাই হাঁটতে গিয়েছিলাম।”
“মিথ্যা বলছিস”
“আমি কখনো মিথ্যা বলি না।” মীর বলল। রাফিদ প্রসঙ্গ পাল্টে বলল “বাদ দে,এই লকেট টা তোর গলায় পড়িয়ে দিচ্ছি। আমার এসব পড়তে ভালো লাগে না। তোকে মানাবে।” মীর এর গলায় লকেট টা পড়াল।মীর ক্ষীণ স্বরে বলল “আমি কি জমিদার নাকি? আমাকে পড়াচ্ছিস কেন?”
আহির বলল “তোকে ভালোই মানাচ্ছে।এসব নিয়ে আর কথা বলিস না।আমরা বইটা পড়ি।”
মীর ও রাফিদ চুপ হয়ে বসল।আহির বইটি হাতে নিল। পরবর্তী পৃষ্ঠায় গেল।
রায়ান সহ সবাই অট্টহাসিতে তলিয়ে গেল। একচোখা ব্যক্তি তাদের হাঁসি থামিয়ে বলল “এত হাইসো না।আগে র’ক্তশোষী কে খাইতে দাও।ও খুদায় ছটফট করছে।” দু’জন অনুচারী সামসুল এর দেহ খানি বাঘ এর সামনে দিল। র’ক্তশোষী বেশ আরাম করে খাওয়া শুরু করেছে। সামসুল এর একটি হাত র’ক্তশোষী মুখে দিয়ে কড়কড় শব্দে খাচ্ছে। মানুষ এর হাড় খাওয়ার শব্দ ফারদিনা প্রথম শুনছে। বাতাসে যেন শব্দটি তাঁর কানের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।সে ভয় পাচ্ছে। সুফিয়ান ফারদিনাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে রেখেছে।
র’ক্তশোষী খাচ্ছে। একচোখা ব্যক্তি বলল “আজ ও একটা মানুষ খাইছে।পেট পুরোপুরি ভরে নাই। এইরকম চলতে থাকলে আমাদের র’ক্তেশ্বরী দুর্বল হয়ে যাইবো।”
আরিব বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।দু হাত পেছনে বেঁধে বলল “তুমি আছো কিসের জন্য! গ্রামে কে বা কারা একমাত্র সন্তান, এবং নিখুঁত যারা আছে তাদের খোঁজ নাও। এরপর আমাদের সন্ধান দিবে।”
একচোখা ব্যক্তি বলল “আজ্ঞে।আপনারা যা কইবেন আমি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করমু।”
সায়েম বলল “ভাই, আব্বা নিশ্চয়ই আমাদের অপেক্ষা করছে।চলো এখন যাই।”
রায়ান একচোখা কে লক্ষ্য করে বলল “র’ক্তশোষী কে নিয়ে যাও। ওকে সাবধানে রাখবে।”
একচোখা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। এরপর সে চারদিকে গভীর দৃষ্টিতে গোলাকার ভাবে দেখল।যেন তারা ছাড়াও এখানে ফারদিনা আর সুফিয়ান আছে,তা উনি টের পেয়েছে।
র’ক্তশোষী সামসুল দেহটা স্বাদ করে খাচ্ছে। শরীরের সবটুকু অংশ প্রায়ই খাওয়া শেষ।এখন শুধু মন্ডু টা বাকি। সামসুল এর বুকের অংশটি র’ক্তশোষী খেতেই মন্ডু টা এক দিকে সরে যায়। র’ক্তশোষী কিছুটা গর্জে উঠে।যেন খাওয়ার সময় থালার খাবার পড়ে গেছে তাই ওর রাগ উঠেছে।রায়ান এরকম দৃশ্য দেখে সামসুল এর মন্ডুটি পা দিয়ে র’ক্তশোষী এর দিকে এগিয়ে দেয়।এবার ও তৃপ্তি করে খেল।
সুফিয়ান ফারদিনাকে বলল “তোমার ভাইয়েরা চলে যাবে এখন।ওরা যাওয়ার আগে তুমি বাড়ি চলে যাও।” ফারদিনা শান্ত চোখে বোঝাল সে যাবে।
মিনিট ত্রিশ এর পড়ে সুফিয়ান ফারদিনাকে তালুকদার বাড়ির পেছন অবধি দিয়ে আসে। ঝিলমিল সেখানেই অপেক্ষা করছিল ফারদিনার জন্য।ফারদিনা নিস্প্রভ ভঙ্গিতে একবার সুফিয়ান এর দিকে দেখল। এরপর প্রাচীর এর ছোট্ট দরজা খুলে ভেতরে চলে যায়।
সুফিয়ান শরীর এর সমস্ত বলশক্তি ছেড়ে এক পা দু পা করতে করতে পিছপা হচ্ছে।তার দৃষ্টি ফারদিনার ঘরের দিকে। অন্ধকার তাঁর ঘর।ফারদিনা ঘরে পৌছালেই আলো জ্বলবে। সুফিয়ান সে-ই আলোর অপেক্ষা করছে। তাঁর পেছনে জন্তু, জানোয়ার, না পরিখা সেসব নিয়ে ভাবছে না। তাঁর পেছনের অংশে বিশাল ক্ষেত।ক্ষেত হলেও রাতের অন্ধকারে বি’ষাক্ত কত কি থাকতে পারে। সুফিয়ান নিজের ক্ষতির কথা এখন মোটেই ভাবছে না। সমস্ত ভাবনা জুড়ে ফারদিনা। কয়েক মিনিট হয়ে গেছে ফারদিনার ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে।এখনো আলো জ্বলেনি।এর মানে ফারদিনা ঘরে পৌঁছায়নি।
সুফিয়ান ঘাড় উঁচিয়ে তাকিয়েই রইল। হাঁটা থামিয়ে দেয়। অবশেষে ফারদিনার ঘরে আলো জ্বলে উঠেছে।ফারদিনা ঘরে পৌঁছেছে। সুফিয়ান এক চিলতে হাসি আনল ঠোঁট এর ফাঁকে।
ফারদিনা ঘরের জানালা খুলে দিল। তাঁর ঘরের পেছনের দিকের জানালা খুলে দিলে পুব দিক পরিষ্কার দেখা যায়। সুফিয়ান এর সাথে সে সবসময় দেখা করতে পুব দিক থেকেই যায়।ফারদিনা ক্ষেতের দিকে দেখল। সুফিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদনীর আলোয় স্পষ্ট দেখা না গেলেও বোঝা যাচ্ছে সুঠাম দেহের অধিকারী সুফিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। ঝিলমিল ফারদিনার পাশে দাঁড়িয়ে বলল “এত ঘুরোছ তারপরও মন ভরে না। আবার জানালা দিয়ে উঁকি মাইরা তাকাইয়া আছোছ”
“ভালোবাসার মানুষটির সাথে সময় কাটালে মনে হয় সময় ফুরিয়ে যায়।সময় যেন উড়ে উড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু সে যখন কাছে থাকে না,তখন মনে হয় সময়,দিন ফুরাচ্ছে না।তোর মনে হচ্ছে আমি এতটা সময় ছিলাম,আর আমার মনে হচ্ছে এই তো গেলাম।”
“হইছে প্রেমের সংলাপ শুনতে চাইনাই।আমি বাপু এমনিতেই তোর লইগা চিন্তায় থাকি।কখন তোর রাক্ষুসে ভাই গুলা চইলা আয় বলা যায় না।”
“ভুল বলিসনি। আমার ভাই গুলা আসলেই রাক্ষুসে। সম্ভব হলে হয়ত জীবিত মানুষ খেয়ে ফেলত।”
ঝিলমিল নিজের চুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে বলল “দেখিস,তোর বাঁশিওয়ালারে যেন খায় না। একজন কৃষকের লগে প্রেমের সম্পর্ক মানবে বইলা আমার মনে হয় না।”
“না মেনে নিলে কি,আমি পালিয়ে যাব।”
“কোথায় পালিয়ে যাবেন?” কুদ্দুস এর কন্ঠ।ফারদিনা ঘুরে তাকাল। ঝিলমিল এলোমেলো চোখে তাকাল কুদ্দুস এর দিকে।ফারদিনা কুদ্দুস এর সম্মুখে হাজির হয়।বলল “কালু ভাই, তুমি এখানে?
“আমি দেখতে কিন্তু অতটাও কালো না। আপনার আব্বা আমাকে শুধু শুধু কালু নাম দিছে। আপনি জানেন, আমাদের পাড়ার অনেক মেয়েরা আমার জন্য পাগল ছিল।”
“তাই নাকি কালু ভাই।বেশ তো,একদিন তোমার প্রেম কাহিনী আমরা শুনব।”
“তওবা তওবা,আমার কোন প্রেম কাহিনী নাই।যদি আপনি চান তাহলে প্রেম কাহিনী হবে।” বলা শেষে মুখ চেপে হাসল। ঝিলমিল ফারদিনার দিকে একবার চেয়ে এরপর কুদ্দুস কে লক্ষ্য করে বলল “হু হু,আমরা ঐ বিষয়েই কথা কইতে ছিলাম।তুমি তো এই বাড়ির কামের লোক। তোমার লগে তো সহজে এই বাড়ির কেউ সম্পর্কটা মাইনা নেব না।তাই ফারদিনা কইতে আছিল পালাইয়া যাইবো।মানে তোমার লগে।”
কুদ্দুস ঝিলমিল এর মুখে এমন কথা শুনে হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে রইল ফারদিনার চোখের দিকে।ও স্বপ্নের শহরে হারিয়ে গেল। সেখানে ও দেখছে ধান ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে ফারদিনার হাত ধরে দৌড়াচ্ছে দু’জনে।প্রচন্ড বাতাসে ফারদিনার চুল উড়ে যাচ্ছে।ও বেশ খুশি।ঠিক কিছুদূর যেতেই রশীদ তালুকদার, এবং তাঁর চার ছেলেরা ওদের সামনে উপস্থিত হয়।সবাই হাতে অ’স্ত্র নিয়ে ওত পেতে দাঁড়িয়ে আছে।ফারদিনা আর কুদ্দুস দাঁড়িয়ে যায়। রশীদ বলল “এই কালুর ঘরে কালু,তুই সারাজীবন আমার সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন আমার মেয়ে নিয়ে পালাচ্ছিস?ধর ওকে,ওর ঘাড় থেকে মন্ডু টা আলাদা করে ফেল।
রশীদ এর এক কথায় কুদ্দুস স্বপ্নের শহর থেকে চলে আসে।বেশ হকচকিয়ে গেল ও।বলল “না,হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক না। আপনার জন্য আমি আমার প্রাণের ঝুঁকি নিতে পারব না।এসব নিয়ে পড়ে ভাবব। আপনাকে সরদার ডাকে।চলুন।”বলে চলে যায় কুদ্দুস।
ফারদিনা গুনগুন করতে করতে রশীদ এর ঘরের দিকে যাচ্ছে।ভাবনায় তাঁর সুফিয়ান।আজ সুফিয়ান এর সাথে অনেক সময় কাটিয়েছে। কিন্তু শেষমেশ তাঁর ভাইদের নিষ্ঠুর কর্মের জন্য সুন্দরতম অনূভুতি গুলো ভেঙ্গে গেছে।সেসব ভাবতে ভাবতে সামনে এগোতেই রায়ান এর সাথে ধাক্কা খায়। হঠাৎ ধাক্কা খাওয়ায় ফারদিনা আঁতকে উঠল।রায়ান বলল “বেখেয়ালি ভাবে হাটছিস যে!মন থাকে কোথায়? রায়ান এর কন্ঠ স্বাভাবিক শান্ত। কিন্তু ফারদিনা ভয়ে ঢোক গিলল।জবাব দেয়ার মত কোন শব্দ পাচ্ছে না।অথচ রায়ান একটা সাধারণ প্রশ্ন করেছে।
রায়ান ফারদিনার দিকে এগিয়ে মৃদু হাসল।বলল “আমার ছোট্ট বোনের চোখে ভয় দেখতে ভালো লাগে না।কোন কারণে ভয় পেয়ে আছিস?
“না।আমি আব্বার ঘরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তোমার সাথে ধাক্কা লেগে যায়।”
“কোন ব্যাপার না।যা” বলে রায়ান যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল।যেন শ’ত্রুদল তাকে পেছন থেকে আক্র’মণ করেছে।ফারদিনার যাওয়ার পানে রায়ান ঘুরে তাকাল। কঠিন গলায় বলল “দাঁড়া।” ফারদিনা দাঁড়িয়ে যায়।চোখ দুটো বারবার এদিক ওদিক করছে। না চাইতেও ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল।
The Silent Manor part 26
রায়ান ফারদিনার দিকে এগিয়ে গেল। তাঁর পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল “তোর পায়ে কাঁদা কেন? বলে রায়ান ফারদিনার পায়ের কাছে বসে মনোযোগ দিয়ে কাঁদা দেখল। এরপর কাঁদা হাতে নিয়ে বলল “এগুলো তো ক্ষেতের কাঁদা। দীর্ঘদিন এই ক্ষেতে চাষ করা হয় না। কাঁদা এখনো শুকায় নি। তার মানে সদ্য লেগেছে। কোথায় গিয়েছিলিস?
ফারদিনা শুধু জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। বুকের ভেতর ধুকধুক শব্দ বাড়ছে। জবাবে কি বলবে?বাড়ির ভেতরে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে কাঁদা আছে। একমাত্র বাড়ির বাইরে। মিথ্যা বললেও সে ফেসে যাবে।ফারদিনা জবাব দেয়ার আগেই সায়েম,আরিব উপস্থিত হয়। সায়েম রায়ান কে বলল “ভাই, তুমি রেগে আছো কেন,ও কি করেছে?
“তোরা এখানে? কিছু হয়েছে?তোর চোখমুখ লাল কেন? জিজ্ঞেস করল আরিব। রায়ান এর দিকে তাকিয়ে।
