কালকুঠুরি পর্ব ৩৪
sumona khatun mollika
বেলা গড়িয়েছে । খাবার টেবিলে বসে মাহার কেমন অদ্ভুত লাগছিল। বাড়িতে তেমন কেও নেই । সিভান বসে টিভি দেখছে। ইতি ঘরে ঘুমাচ্ছে। জরিনা বাগানে গেছে। নুসরাত আর সাথি মার্কেটে। চাচি ইতির সাথে আছে। ইনায়া মাহার বরাবর বসে ।
ইনায়ার দৃষ্টি টা ঠিক অন্য দিনের মতো লাগছেনা। ইনায়া আজ কেমন নজর চুরিয়ে চুরিয়ে তাকাচ্ছে। হঠাৎই গেটে আওয়াজ ভেসে আসে। কেও এসেছে। ইনায়া বলে,,
– তুমি বোসো। আমি দেখছি।
দড়জা খুলতেই দৃশ্যমান হলো এক ছেলে। সে বলল,
– মাহাদিবা আপুর নামে একটা পার্সেল এসেছে। সিটি হসপিটাল থেকে ।
– সিটি হসপিটাল?
– জ্বি। উনাকে একটু ডাকুন, পেপারটা একমাত্র তাকেই দেওয়া যাবে৷
– আমিই মাহাদিবা। দিন আমাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ডেলিভারি বয়ের মতো দেখতে ছেলেটা তার হাতে একটা এনভেলপ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। ভেতর থেকে মাহা ইনায়া কে জিজ্ঞেস করল,, কে এসেছে ইনায়া?
– কেও না। আমার বন্ধু ।
মিথ্যা বলে বাইরে ছুটে বাগানের দিকে চলে গেল সে। হন্তদন্ত হয়ে এনভেলপটা খুলে দেখতে পেল মাহার হেলথ রিপোর্ট ! এবং সে যা সন্দেহ করেছে তাই! মাহা প্রেগন্যান্ট! এটা দেখে ইনায়ার মাথায় আগুন ধরে যায়। শান্তশিষ্ট মেয়েটাকে কিসে আসর করল কে জানে! রাগের দুঃখে পেপার দুটো ছিড়ে কুটিকুটি করে ফেলল সে। ওখানেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে নিজেই বলতে লাগল, ।
-নাএ হতে পারেনা! ওর পেটে যদি সামির সিকান্দার এর বাচ্চা থেকে থাকে, ওকে সরাব কি করে! আমি সামির ভাইয়ের অংশ কে কষ্ট দিতে পারবনা। হবেনা আমার দ্বারা! একে মারা যাবেনা। হ্যা একে মারা যাবেনা। এর কিছু হলে বাচ্চাটারও ক্ষতি হবে। না।
ইনায়া সেখান থেকে সোজা ক্লাবে চলে যায়। এদিকে মাহা বসে চিন্তা করতে থাকে রিপোর্ট কখন আসবে! তখন ডাক্তারের কেবিনে ডাক্তার কে সে সোজা জিজ্ঞেস করেছে আমি প্রেগন্যান্ট নই তো?
চিন্তিত কণ্ঠে ডাক্তারের জবাব,
লক্ষন তো সেরকমি কিন্তু নার্ভ অস্পষ্ট! যদি হয়েও থাক খুব একটা দিন বযস নয়। টেস্ট করাতে হবে। সময়ের অপেক্ষা করাটা উচিৎ নয়। মাহা সেখানেই ডাক্তার কে রক্ত দিয়ে এসেছে যাতে একবারে ফুল বডি চেকাপ দেয়া হয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে রিপোর্ট সিকান্দার বাড়ি পৌছে দেয়া হবে।
ঘন্টা খানেকের মধ্যে ইনায়া বাড়ি ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে যায় । সিভান বলে,,
– কাকি সুন্দরী,, একটা কথা বলব,,?
– বলো সিভান।
– তুমি ইনুর থেকে একটু দুরেই থেক। সে যথেষ্ট রেগে আছে। যতই হোক সিকান্দার দের রক্ত তো বিশ্বাস নাই।
– জানি। বলার জন্য ধন্যবাদ সিভান।
-হুমম ,
সাফিন আর রাহা কোথাও বের হচ্ছিল৷ আচমকা সাফিন উল্টো ঘুরে এসে দাড়িয়ে মাহাকে জিজ্ঞেস করে,,
– চলো,, তোমাকে আমাদের ব্যাবসা দেখিয়ে আনি। ভয়ের কিছু নাই, তোমার হাজবেন্ড আপাতত ওখানেই আছে। বলো যাবে??
– যাব।
পেছন থেকে সিভান মাহার হাত টেনে ধরে বলল,,
– যেওনা। কাকাকে জিজ্ঞেস না করে গেলে কাকা রাগ করতে পারে।
– তুমি গিয়ে দাদির সাথে একটু ঘুমিয়ে নাও। ঘুম ভাঙতেই আমি চলে আসবো।
– কাকি, যেওনা।
মাহা একপর্যায়ে সিভানের কথা টা এড়িয়ে গেল। তবে যাওয়ার সময়ও খেয়াল করল ইনায়ার কিছুতো একটা হয়েছে। রাস্তায় রাহা বা সাফিন কারো সাথেই কোনো কথা বললোনা মাহা বেশ লক্ষ করল জায়গাটা সেই ভয়ানক ভুতুড়ে বাড়ির একটু দুরত্বে । আর এই এলাকায় তেমন কারো যাতায়াত নেই।
সাফিন তাকে ইনিয়েবিনিয়ে কোনো বিপদে ফেলবেনাতো! তবে তার ধারণা ভুল । ঘাপলা লাগছে ওই জায়গা তেই সাফিনের এত নরম আচরণ ঠিক বোধগম্য হতে পারছেনা। বড়সড় একটা বাড়ি। এটা একদমি জমিদার বাড়ির মতো নয়। নাই সিকান্দার বাড়ির মতো! আধুনিক দ্বিতল ভবনের বাড়ি। সামনে লেখা কালকুঠুরি ২ !
ভেতরে যেতেই দৃশ্যমান হলো কর্মরত কর্মীগণ। সুন্দর – অসুন্দর অনেকজন রমণী। পুরুষের সংখ্যাও কম নয়।
তারা এদিকে সেদিকে বিচরণ করছে। তবে আপত্তিকর ভঙ্গিতে। মাহার কপাল জড়ো হয়। সাফিন নিরেট কণ্ঠে বলে,,
– যেদিকে খুশি যাও। এক ঘন্টার মধ্যে ফেরত এখানেই আসবে। ভেঙে বলার প্রয়োজন নেই।। যতই হোক র স্টুডেন্ট বলে কথা । বুঝেই যাবে। যাও।
মাহা সাফিনের দিক থেকে নজর ঘুরিয়ে এক পা দুপা করে সামনে এগোলো। হ্যা এটা জমিদার বাড়ির মতো নয় তবে পরিধিতে জমিদার বাড়ি থেকে কিছুটা কম নয়। চারপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। হাটতে হাটতে মাহার সাথে ধাক্কা লাগে এক দৌড়াদৌড়ি করা বাচ্চার। মেয়ে বাচ্চাটার বয়স খুব সম্ভব ১০ কি ১১। সিভানের কিছুটা বড় সে। ড্যাবড্যাবে গোল চোখ মেলে মাহার দিকে তাকালো সে।
– ব্যাথা পেয়েছ?
– না।
– তোমার নাম কি সোনা?
– রুমাশা ।
মাহার বুকের ভেতরটা মট করে ওঠে। রুমাশা! ইশশ কি বিদঘুটে অবস্থাই না হয়েছিল তার। কোনো বিচারও পায়নি সে। মাহা মেয়ে টাকে জিজ্ঞেস করল,,
– তুমি এখানে কি করছো? কার সাথে এসেছ?
– আমিতো এখানেই থাকি। এটাই আমার বাড়ি ।
– কি বলছো? তোমার মা কোথায় ?
– কাস্টমারের সাথে।
– ওহ আর বাবা?
– কি বলছ তুমি? আমাদের কোনো বাবা হয়না জানোনা। তুমি কি এখানে নতুন এসেছ?
– হ্যা, বাবা হয়না মানে?
বাচ্চা মেয়ে টা মাহার আর কোনো কথার জবাব দেয়ার আগেই পেছন থেকে এক লোক বলে ওঠে,,
– তুই এখানে কেন? বোরকা পড়ে আছিস কেন? দেহতো সবাই খেয়েই ফেলেছে। যা কাস্টমারের কাছে যা।
উল্টো ঘুরে বসে থাকা মাহা লোকটার এমন বিদঘুটে কথা শুনে ফিরে তাকায়। তার রুদ্র দৃষ্টির দিকে তাকাতেই লোকটা একটু হকচকিয়ে যায় । শুষ্ক একটা ঢোক গিলে বলে,
– নতুন এসেছিস? ঠিকাছে বড় সাহেবদের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে? জানিসতো, এখান থেকে যাওয়ার চেষ্টা করবি তে একবারে কালকুঠুরি ১ এ পাঠিয়ে দেবে।
মাহা কান খুলে লোকটার কথা গুলো শুনছিল। আশ্চর্যের পর্দা ফেড়ে লোকটার পেছন থেকে বেরিয়ে এলো তিহান সঙ্গে সোমা। তাকে মাহা খুব একটা ভালো করে চেনেনা । সাফিনের বিরোধী দলের নেতা তিহান।
– হ্যাএএ!! তুমি এখানে? এতদ্রুত পদোন্নতি ! দেখেছ সোমা, বিশ্বাস হযেছে দেখ, আমি বলেছিলাম সামিরের সাথে এর পত্তা হবেনা। সামির শেষমেশ একে কালকুঠুরি তে না দিয়ে যায় । দেখ দিয়ে গেল তো?
সোমা চোখ কুচিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
– এই মেয়ে ,, সত্যি তোমাকে সামির দিয়ে গেছে ?
– না। মেয়ের সাফিন সিকান্দার এনেছে।
সোমা ঘ্যাটগ্যাট করে হাসতে লাগল মাহার বড্ড বিরক্ত লাগছে। তিহান সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করল,,
– কেন এনেছে?
– কি হয় তাই দেখাতে!
– তার মানে তুমি কষ্ট করে খুজে বেড়াচ্ছো কালকুঠুরির রহস্য তাইতো? মনে মনে কিছু সন্দেহ করেছ??
– এখানকার বাচ্চাদের বাবা নেই মানে? অনাথ আশ্রম তো নয় এটা।
– হাহাহা আরে এত চালাক হয়ে লাভ কি হলো? তুমি এমন জায়গায় দাড়িয়ে আছো যে জায়গা তোমার নীতিবিরোধী। তুমি বুদ্ধিমান ছুড়ি খুজতে থাক। সামনে এগোও পেয়ে যাবে রহসসসস্য। চলো সোমা।
তারা দুজন চলে যেতেই মাহা বারবার বাচ্চাটার কথা চিন্তা করতে লাগল,,, তাদের কোনো বাবা হয়না৷ সাফিন বলেছিল তারা মাটির নিচে নয় ওপরেই অবৈধ ব্যাবসা করে।লোকজন এর আনাগোনা বেশি নেই। জায়গাটার নাম কালকুঠুরি ! কাল কুঠুরি! কাল, কু ঠু রি,,, কুঠিরি! আসতাগফিরুল্লাহ! এটা কুঠুরি! মানে অবৈধ ব্যাবসাটা হলো দেহ ব্যাবসা! ছিঃ!
মাহা সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর জন্য পা বারাতেই দুজন লোক তাকে ধরে ফেলে। একজন মাহার হাত ধরতে যাবে তখনি কোথা থেকে একটা ধারালো ছুরি উড়ে এসে লোকটার কব্জিতে গেঁথে তার ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে আসে। অপর লোকটা আর মাহা ঘাড় ঘুরিয়ে ডানে চোখ ফিরিয়ে দেখে সামির সিকান্দার! মুখে আপেল চিবোতে চিবোতে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। অপর যে লোকটা ছিল সে তার থেকে বয়সে বেশি!!
– কি করছ সামির!
সামির আপেলের বাকিটা পিছে মেরে লোকটার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে কলার ঝাকিয়ে হিংস্র স্বরে বলে,,
– শুওরের বাচ্চা! হাউ ডেযার ইউ! তোকে কে বলেছে একে ধরতে?
– তি.. . তিহান বাবা। আমার কোনো দোষ নাই সামির বাপ। আমিতো নিজের কাজ করছিলাম।
মাহা সামিরের বাহাত ধরে টানাটানি শুরু করে,,
– ছেড়ে দিন। উঠুন। হয়েছে। চলুন।
সে দুই হাত দিয়ে টেনেও সামিরকে নড়াতে পর্যন্ত পারছেনা। সামির পাশের লোকের হাত থেকে ছুড়িটা খুলে নিয়ে অপর লোকটার মাথার সোজা সজোরে ছু*ড়ি দিয়ে কোব বসিয়ে দেয়। নসিকার ওপরের হাড়।ফেড়ে ছুড়ির অর্ধেকটা লোকটার মাথায় গেথে যায় । রক্তের ছিটে এসে পরে সামিরের গোটা মুখে। লাল শার্টের জায়গায় জায়গায় বিন্দু বিন্দু রক্তের চিন্হ পড়ে যায়। ঘাড় থেকে ভূত নামার মতো নিঃশ্বাস ফেলে সামির পেছনে ফিরে তাকায় । মাহা চোখ বড়বড় করে দম ফেলছে। যে কারোরি ভয় পাবার কথা । মাহা আরো একবার নিজ চোখে দর্শন করে নিলো সামির সিকান্দার এর খুনের দক্ষতা। তার হাতের কাজে সে একদম তার হাতের লেখার মতোই নিখুত।
সামিরের চোখ দিয়ে যেন লাভা ঝড়ে পরছে! সে লোকটার ছটফটানি বন্ধ হতেই তার বুকের ওপর থেকে উঠে দাড়ায়। তাদেরকে চিৎকারের সময়ই দেয়নি সামির। উঠে দাড়িয়ে ক্ষণকাল দেরিও করেনি সামির। মাহার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। বাইক স্টার্ট দেযার পর মাহা তাকে জিজ্ঞেস করছিল,,
– আপনি ওদের মারলেন কেন? শত্রুর শত্রুতো বন্ধুই হয়।
সামির কোনো কথাই বললনা। বাইকের গতি বারালো৷ ২ মিনিটের মাথায় মোড়ে এসে একটা পুকুর সামনে পরে। সামির থেকে নিজের শার্ট আর চেহারা থেকে রক্তের দাগ ধুয়ে নেয়। প্যান্টে যে দাগ লেগে থাকে তা মেটায়না।
মাহা খেয়াল করে মোড়ের মাথায় লেখা,, লালগলির কালোপাড়া। কথাটার মানে হয়ত বে*শ্যা পাড়া! তারপর আবার ১৫ মিনিটের মাথায় সিকান্দার বাড়ি পৌঁছে যায়। সিভান বুঝে যায় সামির যথেষ্ট ক্ষেপে রয়েছে । চুপচাপ মাহার পিছে পিছে চলে যায় গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– তোমাকে বলেছিলাম কাকার আদেশ ব্যাতীত কিছু কোরোনা। কইও যাইওনা। কি হলো? তুমি ঠিকাছো?
– মাথাটা একটু ঘুরছে সিভান পরে কথা বলি এসব বিষয়ে।
– ঠিকাছে।
সামির বাথরুমে থেকে বেরিয়ে বলে,
– ছাদে চলে এসো।
মাহা বেশি কিছু বললনা। মাথা নেড়ে হ্যা জানালো শুধু। সব জায়গায় ত্যাড়ামি চলেনা। হয়তো সামির তাকে কিছু একটা বলবে এসব বিষয়ে !
 মাহা নিজের পোশাক বদলে সোজা ছাদে চলে গেল। ছাদে থেকে টুংটাং গিটারের সাথে সামিরের ভারী কণ্ঠ ভেসে আসছে। একটু কাছে যেতেই সেই সুর আরো গভীর হয়,,
~ কারো আদেশ মানিনা আমি চির স্বাধীন
আমি না মানি আইন, আমি না কারো অধীন
যেন আমিই সত্য শুধু আমিই সঠিক
কেবল আমিই সভ্য পুরো দুনিয়ায় বেঠিক।
প্রলয় আমি, আমি করি ধ্বংস
আমি শৃঙ্খলা মানিনা মৃত্যু চিনিনা
আমি জ্বলে ওঠা শিখা
মাহার উপস্থিতি টের পেলে সামির আটকে যায়। ইশারায় বসতে বলে পাশে। মাহা বসার আগে পাশে থাকা মদের বোতলে লাথি মেরে ছাদ ছেকে নিচে ফেলে দেয়।
– লাভ নেই। ওটা পানি ছিল। এখন আমার মাল গেলার মুড নেই। বসো।
– আপনি এক দক্ষ হাতে কিভাবে মানুষ মেরে ফেলেন? আপনার হাত কাপেনা?
– কাপেনা জন্যইতো আমি সামির সিকান্দার । তুমি কালকুঠুরি তে কেন গিয়েছিলে?
– আপনাদের অবৈধ ব্যাবসার চার্জ করতে।
– হাহা ওবার কনফিডেন্স ! আরে দুদিনের দুনিয়া, মরেওতো যেতে পারো?
– আপনাকে না মেরে মরব না।
সামির বাকা করে হাসলো একটু। কোনো সুর ছাড়াই গীটারে টুংটাং করছে৷ মাহা আকাশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
– আপনি ওখানে রোজ যান?
– না। ওখানে আমি ডাক ছাড়া যাইনা। না চাইতেও দুঃস্বপ্ন আসে। বারবার মনে পরে যায় এক প্রেতান্মা ঘেরা সময়ের কথা । তোমাকে একটা সিক্রেট বলি,, আজ পর্যন্ত কাওকে জানতে দেইনি।
মাহা সামিরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল,,
– জানো আমিনা ভয় পাই। মানুষ বা মৃত্যু কে নয়। আমি স্বপ্ন কে ভয় পাই। তোমারোতো বাপ মা মরেছে তারা কি তারা তোমাকে স্বপ্নে ভয় দেখায়?
আাকে দেখায় যে জন্মদিয়েছিল সে দেখায়। তাকে সালার সিকান্দার পেয়েছিল ওই কালকুঠুরি তে। কিনেছিল মাত্র পনের হাজার টাকার বিনিময়ে । আমার জন্ম অপ্রত্যাশিত। আমি যদি মেয়ে হয়ে জন্মাতাম,, আমার ঠাই হতো ওই কালকুঠুরির ওই পারে। ছেলে হয়েও তেমন লাভ হয়েছিল না। প্লাস পয়েন্ট ছিল একটাই আমি সিকান্দার এর রক্ত। বিষাক্ত রক্ত।
– যদি কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকে,, আপনি কি আমাকে বলবেন? আপনি খারাপ কেন হয়েছিলেন? এত খুনাখুনি কি আপনার খারাপ লাগেনা?
– খুনাখুনি খারাপ কাজ। আমি খারাপ। খারাপ কাজ করতে খারাপের কোনোদিনো খারাপ লাগেনা।
– আপনার মা কিভাবে মারা গিয়েছিল? আপনার মাতুলকুল বলতে কিছু ছিলনা?
– ছিল। নানা ছিল নানি ছিল মামা ছিল, ইনফ্যাক্ট এখনো আছে। এবং তুমি তাদের চেনো।
-আমি কিভাবে চিনি? কে?
কালকুঠুরি পর্ব ৩৩
– রামচন্ডিপুর এর ওই বুড়োবুড়িই হচ্ছে আমার নানা আর নানি। তাদের তথাকথিত আত্মহত্যা করা মেয়ে টা এই সামির সিকান্দার এর মা!
– কিই!
– বোম ফাটলোতো? আমারো ফেটেছিল । আমি আজকেই মাত্র জানতে পেরেছি তারা আমার নানা-নানি । তুমি আমার নামটাও ঠিক করে জানোনা। আমার নাম জানো? ভালো নাম? জন্মদায়িনীর দেয়া নাম। আমি ভিরান! অভাগা ভানুমতীর অভাগা সন্তান ভিরান। মাহা বিস্ফোরিত নয়নে সামিরের মুখের দিকে চেয়ে রইল।
