কালকুঠুরি পর্ব ৩৭
sumona khatun mollika
মাহা বুঝতে পারে না এর ভিতরে সামিরের ওপর ইফেক্ট পরা কোনো স্টোরিই নেই সাফিন হলে ব্যাপারটা আলাদা ছিল । চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু , ভানুর বিভৎস দৃশ্য হয়তো তার ওপরে নেগেটিভ ইফেক্ট ফেলেছে। কিন্তু সামির সিকান্দার? তার তে তখনও আগমনি ঘটেনি।
কিছুক্ষণ নিরবতা…
– আমি বলেছি খারাপ হতে কারণ লাগেনা। নিজ ইচ্ছে টাই যথেষ্ট । তুমি আমার খারাপ হওয়ার কারণ খুঁজছ? কি খারাপ তুমি ডিপজলের মা, তুমি চাইছো থ্রিলারের মতো আমার সাথে যেন কাহিনির আগে খারাপ হয় খুব খারাপ হয়।
– সজল সিকান্দার কে কে মেরেছিল? আর ওই পেটের বাচ্চাটাই কি আপনি? তারপরে কি হয়েছিল বলুন?
..সিভানের কল পেয়ে সজল তখন কোনোকিছু না ভেবে ছুট লাগায় । সেখান থেকে সোজা কালকুঠুরি তে। দোরের দাসী তাকে বলে,,
– মাপ কইরেন ভাইজান বড়বাবু আপনেরে যাইবার মানা করছে।
– ভেতরে কে আছে? দড়জা খোল,, আমি তোকে দড়জা খুলতে বলেছি খোল
– কিন্তু ভাইজান?
– দড়জা খোল!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দাসী দড়জা খুলে দেয়। অন্ধকার কুঠুরির দড়জা ভেদ করে রাতকাটা ভোরের আলোর হলুদ আলো মতো চারদিক ছড়িয়ে যায় । আলোর বুক চিড়ে সজল গুটিগুটি পায়ে ভেতরে ঢুকতেই দৃশ্যমান হলো ভানুর শুকনো মুখচোখ। সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল নিজের আপন মানুষ টাকে ওভাবে দেখে। ধীর পায়ে এগিয়ে ভানুর সামনে গিয়ে বসলো।।
ভানু ভয়ে চোখমুখ খিচে দুইহাতে নিজের বুক চেপে ধরল। ততখনে পুরুষ জাতির ওপর থেকে তার বিশ্বাস নিঃশেষ হয়ে গেছে। তার ধারণা সজল সিকান্দার ও তার ক্ষিধে মেটাতে সেখানে উপস্থিত হয়েছে৷ তাকে চমকে দিয়ে সজল আলতো হাতে ভানুকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে ছোট বাচ্চার মতো হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। ভানু কিছুটা অবাক হয়। সজলের তো খুশি হওয়ার কথা। সজল কাপা হিম শীতল কণ্ঠে বললো,,,
– সব আমার দোষ ! সামান্য একটু কারণে আমার এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ ছিল না। তুমি কেন আমার কথা শুনলেনা ভানু কেন? তুমি কেন আমায় বিশ্বাস করলেনা।
ভানু স্পষ্ট বুঝতে পারছে সজলের হৃৎপিণ্ড বিদ্যুৎ গতিতে ছোটাছুটি করছে। কিন্তু এত ভুল বোঝা আর ভযাবহ অবস্থার পরেও কেন সজলের ছোঁয়া বিষাক্ত মনে হচ্ছে না ! সজল কেন কাঁদছে ওরি তো সবচে বেশি খুশি হওয়ার কথা। সজল ভানুর চোখ বরাবর তাকালে মনে হলো তার চোখ দুটো যেন অন্ধকারের আগুন হয়ে জ্বলে উঠলো । সজল দুইহাতে ভানুর দুইগাল আঁকড়ে ধরে রুদ্র কণ্ঠে বললো,,
” কসম সেই সৃষ্টিকারীর, তোমার এই অবস্থার জন্য দায়ী এক একজনকে আমি কঠোর থেকে কঠরোতম শাস্তি দেব! ”
ভানু একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে। তবে সজলের দৃষ্টিতে দেখে বেশ অবাক হয়ে গেল। মানুষ কি করে ভুল মানুষের পাল্লায় পরে সত্যি কারের ভালোবাসাকে চিহ্নিত করতে ভুল করে বসে! সজল হয়ত সত্যি ভানুকে এতটাই ভালোবাসতো কিন্তু ভানু তা বোঝেনি ।। ভানু ভাঙা কণ্ঠে সজলকে বলল,,
– আমাকে একটু খেতে দেবেন? আমার পেটের বাচ্চাটা মরে যাবে। দুদিন যাবত পানিবিহীন কিছুই খাইনি।
সজল শুষ্ক একটা ঢোক গিলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। নিজের গায়ের শার্টটা খুলে ভানুর গায়ে জড়িয়ে দিল। প্রথমে একবার তার দিকে হাত বারালো মাঝপথে থেমে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
– তোমার কি আমাকে ভয় লাগছে??
– না ।
– সন্দেহ?
– না।
তারপর আর কোনো কথা না। সজল সোজা ভানুকে পাজা কোলে তুলে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। দাসী কি করবে না বুঝে কালকুঠুরি ২ এ চলে যায় ।
সজল ভানুকে নিয়ে সোজা সিকান্দার বাড়ি পৌঁছে যায় । সাফিন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে। সুফি বেগম সজলের কথামতো ভানুকে পরিষ্কার জামা কাপড় পরিয়ে একটা ঘরে শুইয়ে দেন। সজল সাফিনকে সাথে করে চলে যায় কমিশনার এর বাড়ি। সেখানে রাগিব দেওয়ান এর সাথে তার প্রথম দেখা। রাগিব দেওয়ান , সোমার খালাতো ভাই । আর কমিশনার সোমার বাপ। । তাদেরককে কথায় কথায় এক ঘরে পাঠিয়ে দেয় সজল। কমিশনার বেশ ফুর্তি মনেই সজলের সাথে কথা বলছিল । এক পর্যায়ে সজল জিজ্ঞেস করে,,
– শুনলাম কালকুঠুরি তে নাকি কোন মেয়ে কে আটকে রেখেছিলেন? অন্য মেয়ে দেরতো কালকুঠুরি ২ এ রাখেন। ওটাকে কেন ওখানে রেখেছিলেন?
– ওটা ভিষণ সুন্দরী। তর ভাইয়ের হেব্বি পছন্দ । আমারো ভালো লাগছে তাই একটু ট্রায়াল দিছি এই আরকি।
– ভেরি গুড। আজ আমিও একটা ইউনিক ট্রায়াল দেব ভাবছি। আগে কখনো বেশি উত্তেজিত হইনি। আজ হব ভাবছি।
– কার সাথে আমার বউ তো মরে ভুত! মেয়ে তো ছোট এখন এখানে এখন কি করে?
– পুরুষত্ব প্রমানের উত্তেজনা এটা কাপুরুষত্ব নয় কমিশনার সাব! শুভ যাত্রা।
কথাটা বলেই সজল পাশে থেকে মদের বোতল ভেঙে সোজা কমিশনারের গলায় গেঁথে দিল। চিৎকারের সুযোগটুকু পায়নি সে। অতঃপর তাকে লাথি মেরে কাচের টেবিলের ওপরে ফেলে দিল। দু তিন মিনিট ছটফটিয়ে কমিশনারের কার্যক্রম শেষ।
সজল যে কমিশনারকে খুন করল এটা ৩ জনেই দেখে ফেলল। বড্ড অদ্ভুত বিষয়, সাফিন কোনো প্রতিক্রিয়া না করলেও রাগিব আর সোমা হাসলো। সজল সেদিকে পাত্তা দিলনা। সাফিনের হাত ধরে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। সঙ্গে কমিশনারের মৃতদেহ একটা বস্তায় পুরে ফেলে। সোজা পদ্মা পাড়ে গিয়ে বস্তাসহ কমিশনারের দেহ নদীর পানিতে ফেলে দেয়।। সাফিন সেটাও চুপ করে দেখে। গাড়িতে বসে,,
বড়ি পৌছুতে পৌছুতে সাফিন জিজ্ঞেস করল,
– ভানু মাকে কোথায় রাখবে কাকা? ওই বাড়ি সুরক্ষিত মনে হয়?
– সবচে সহজ জায়গা সবচে কঠিন হয়। সবসময় মনে রাখবি।
 সাফিন মাথা নাড়ায় । সজল ধীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,,,
– আর কেকে?
– একটা ছেলে নাম জানিনা। দাদি, আর..
– ভাইজান, তাইনা?
– হুম৷
– বাপ মরলে কষ্ট হবে?
– তুমি বেচে থাকবে গ্যারেন্টি দেবে? যদি দাও তাহলে মেরে দাও। আমি নিঃস্ব হতে পারবনা।
সজল চুপ করে থাকে। যে খেলায় নেমেছে, সে খেলার মাঠে সে বড্ড নতুন খেলোয়াড় । সাথে সালার সিকান্দার তুলনায় সে একদম পানি পান্তা । সুতরাং সে যে বেঁচে থাকবে তার কোনো গ্যারেন্টি নেই। সালার যদি বাচিয়ে রাখেও,, সুমনা রাখবেনা।
এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি না গিয়ে তারা পৌছে যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়েজ হোস্টেলে। পরিচিত বলে ওবায়দুল কে ডেকে আনে। জিজ্ঞেস করে,,
– ভানু কোথায় ?
– ভা.. ভানু? আবব ভানু? ও তো রাম,, রাম, রামচন্ডিপুর গেছে।
– ওহ ঠিকাছে। তোর সাথে কথা ছিল । চল।
ডেকে নিয়ে চলে গেল ভার্সিটি থেকে কিছু দূর । পদ্মার পাড়ে একটা টেবিলে বসে,,
– তুই এবার কোন দলে ভোট দিয়েছিস?
– জ্বি বরাবরি সালার সিকান্দার কে দেই। মানে আপনাদের দলে৷।
– কেন?
– জ্বি, সজল ভাই,, আমি মেয়র ভাইসাবকে,, ব্যাবসায় সাহায্য করি। আবব, আপনি কি ভানুকে সত্যি পছন্দ করতেন?
– না, তেমন কিছু না। সুন্দরী ছিল তাই।
– তাহলে বাচা গেল।
– কেন?
– এখন আর বলতে সমস্যা নাই। ওই ছুড়িরে কালকুঠুরি তে দিয়ে দিয়েছি।
– কত টাকা নিয়েছিস বে?
– মাত্র পনের হাজার।
– আর?
– বেশিনা মাত্র ৫ প্যাকেট।
– সাদা?
– জ্বি ভাই।
– সাবাশ! এদিকে আয়।
কথাটা বলে সজল ওবায়দুল কে কাছে টেনে ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল,,
– জিজ্ঞেস করলিনা ভানুকে ভালবাসি কিনা? না। শুধু ভালোবাসি না। পাগলের মতো ভালোবাসি। আর সেই পাগলের প্রমাণ দেব।
তারপর নিজের পকেট থেকে একটা ছুড়ি বের করে ওবায়দুলের বুকের বামপাশে গেথে দিল। পরের একটানে ওবায়দুল এর গলার র\গ কেটে দেয়। শুধু এক নয় কয়েকবার ছুড়িকাঘাত* করে তাকে লাত্থি মারে পদ্মার পানিতে। বড় রকমের পাক যেন তারি অপেক্ষা করছিল। মিনিট কয়েকের মধ্যে সেখানে বিশাল পাকের সৃষ্টি হয। চোখের পলকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ওবায়দুল কবির কে। সাফিন সেটাও চোখ ভরে দেখল।
সাফিনকে কোলে তুলে সজল বাড়ি ফিরে আসে এবারে সাক্ষাৎ হয় সালার সিকান্দার এর সাথে । সালার হাসিমুখে তাকে স্বাগত করে জিজ্ঞেস করে, গায়ে রক্ত কিসের?
– কুকুরের।
– তোর গাযে আর কারিবা রক্ত লাগবে বল! যাইহোক ভালো করেছিস চলে এসে। এবার ওই মেয়ে টাকে দেখাবি যাকে তোর পছন্দ । বিয়ে দিয়ে দেব তোর। এতদিনে ভোটের মামলা শেষ হযেছে।
কবে যাবি বল? নাম কি মেয়ে টার?
– মিসিং আইডি।
– কিই?
– ভার্সিটিতে একটা মেয়ে মিসিং ,, সেই মিসিং আইডির মেয়ে টা আমার ভালোবাসা। নাম শুনতে চাও? ভানুমতী শিকদার ভানু,, পরীর মতো সুন্দরী , সেই ভানু যে তোমার অবৈধ বাচ্চার গর্ভধারিণী। সেই ভানু যাকে মাত্র পনের হাজার টাকায় কিনেছ ।
সালার সিকান্দার আটকে যায়। মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না। সুমনা সিকান্দার পেছন থেকে সব শুনে ফেলে হুঙ্কার দিয়ে বলে,,
– ওর সাথে তর বিয়া হইবনা , বেশি পছন্দ হলে তুইও খেয়ে নে। কে মানা করেছে?
কিছুক্ষণ পিনপতন নিরবতা। সজল ধীরে ধীরে সুমনা সিকান্দার এর কাছে এগিয়ে যায় ।
– ঠিক বলেছ মা। তোমার মতো সুশিক্ষা দানকারী মা পৃথিবীতে কোথাও নেই। খেয়ে নেব। তবে ভানুর সত্বাকে নয় তোমার জানকে। হাজার হাজার মেয়ে কে ন*ষ্ট করেছ তোমরা। ভানুতো শুধু আমার ভালোবাসা নয়, ওর বাপ মায়েরো ভালোবাসা। আমি তোমার শিক্ষা মাথা পেতে গ্রহণ করছি মা জননী ।
সালার আর সজলের মধ্যে সুমনা সজলকে বেশি ভালোবাসত। কারণ ছোট থেকে সে মা ভক্ত। তবে তার ভিষণ আফসোস,, সজলকে সে নিজের মনমতো গড়ে তুলতে পারেনি।
কথাগুলো শেষ করেই সজল সুমনা সিকান্দার এর পেটে ছু*ড়ি গেঁথে দেয় চোখ দিয়ে ঝড়ে পরে অশ্রুকনা। সালার সিকান্দার ঠাই নিজ জায়গায় দাড়িয়ে থাকে। রক্তমাখা ভয়াবহ চেহারা নিয়ে সজল সালারের দিকে ঘুরে দাড়ায়৷
সালার সিকান্দার আগে থেকেই তার দিকে গুলি তাক করে দাড়িয়ে ছিল । সজল ঠুনকো হাসলো।
– তোর মতো শুয়োরে* বাচ্চার ভাই পরিচয়ে বাচার চে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
-তাহলে মরে যা।
আচমকা একটা বিদঘুটে হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটলো কি জানো? একটা বুলেট গিয়ে সজল সিকান্দার এর বুকের ডানপাশ ঝাঝড়া হয়ে গেল। ডানপাশ পুড়লো গুলিতে কিন্তু বামপাশ পুড়লো আঘাতে। কারণ চোখ মেলে দেখলো সজল,, গুলিটা সালার সিকান্দার চালায়নি৷ চালিয়েছে কে জানো? সজল সিকান্দার এর ভালোবাসা আর স্নেহের ছোট্ট ভাতিজা, সাফিন সিকান্দার !
কেন? সালার সিকান্দার তাকে এটাই শিখিয়েছে। হ্যা জন্ম থেকে এটাই শিখিয়েছে তাকে হত্যা, খুন* রাহা*জানি। ভানু সজলকে বলার সুযোগটুকুও পায়নি,, সাফিনকে বেঁধে রাখা হতোনা। সে নিজে পায়ের ওপর পা তুলে চেয়ারের ওপর বসে থেকে সব দেখত। সজল ছিল শিক্ষিত আর এসব থেকে দূরে। তবে কোনো খুন খারাবি তাকে দিয়ে পদ্মায় লাশ ফেলে আসানো হতো। বখাটে গিরি করত কিন্তু কোনোদিনো কোনো নারীর দিকে বাজে নজরে দেখেনি। কোনোদিনও খুন করেনি। সালার সিকান্দার এর হিসেবে অপদার্থ আর বংশের নাম ডুবানো পয়দা সে।
সজলের চোখ থেকে নোনা জল গড়ে পরে। এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা। তবুও সজল তার দিকে ভালোবাসার নজরে তাকিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। সাফিন এক পা দুপা করে তার দিকে এগিয়ে যায় । সজল আটকা আটকা গলায় বলে,,
– তুই গান চালাতে শিখে গেলি সাফি? এত বড় হয়ে গেলি কেন বাপ?
– বংশের যোগ্য রক্ত যে কাকা। বাপ দাদার নাম কি করে ডুবাই?
– একটু অনুরোধ রাখবি সাফি? ভানু আর পেটের বাচ্চাটাকে বাচিয়ে রাখবি? নিজেদের মতোই পালিস কিন্তু বাচিয়ে রাখবি সাফি?? যেতে যেতে ওর জীবনটা ভিক্ষা চাই। প্লিজ।
– নিশ্চয়ই কাকা। কেন নয়। আমরা বড়লোক! কাওকে খালি হাতে ফেরাই না। নিশ্চয়ই বাচাবো ।
সজল ছটফটাতে থাকলে সাফিন তার দিকে তাক করে আবারো ট্রিগা*র প্রেস করে। ছোট্ট দেহ দুলে ওঠে কিন্তু নিশানা একদম টেন অন টেন! তারপর আরকি সজল সিকান্দার শেষ চলে গেল যেতে যেতে সামির সিকান্দার কে এই দুনিয়ায় ফাসিয়ে গেল।
সাফিন সালারের দিকে ঘুরে তাকালো, সালার সিকান্দার তার চেহারায় হাসি দেখে হালকা একটু কেপে উঠলো। তাদের এসব বুঝতেই সময় লেগেছিল ১২, ১৩ বছর সেখানে সাফিন মাত্র ৭ বছর বয়সী । সাফিন তাকে বলে,,
– তুমি??? খেতে পেরেছ এবার থালও ধুয়ে রাখবে। কাল কিংবা পরশু দুদিনের মধ্যে তুমি ভানুমতী শিকদার কে বিয়ে করবে। লোকজন জানবে, সালার সিকান্দার এক মহৎ লোক অসহায় নারী কে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে। ইজ দ্যাট ক্লিযার?
সালার সিকান্দার মাথা নেড়ে হ্যা জানায়। যথারিতি তাদের বিয়ে হয়। ভানু শকের ওপর শক পেয়ে দিশেহারা হয়ে যায়। ভুবন জুড়ে মনে করে বাচ্চাটা ওবায়দুল এর । শুধু সে নয় সবাই। বিশ্বাস রাখে শুধু ভানুর বাবা মা। তাতেও লাভ হয়না। সমাজের চাপে ভানুকে সালারের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। দিন পর দিন যায় , জন্ম হয় সামির সিকান্দার এর। নিরুপমা শিকদার নাম দেয় ভিরান সিকান্দার । কিন্তু তা গ্রাহ্য হয়না। নাম বদলে সামির সিকান্দার রাখে সাফিন সিকান্দার নিজে।
মারধর, জবরদস্তি এরমকরে ৬ টা বছর পার হয়। সাফিন যথারিতি সামির কে ভরকে দেয়ার চেষ্টায় থাকে। ওই বয়সেই তাকে বিড়ি, সিগারেট, মদ এসবের সাথে পরিচয় করায়। সামির যে ভালো মানুষ হবে সেটার আশা ভানু প্রায় ছেড়ে দেয় । কিন্তু একদিন খাটের থেকে পরে মাথায় ব্যাথা পেলে সামির তার মাথা নেড়ে দেয় আর চিন্তিত হয়ে যায়। তার মানে তার মনে মায়া নামক বস্তুটা আবেগটা এখনো জিবীত আছে। তাই ভানু একদিন সিদ্ধান্ত নেয় ভিরানের ভালোর জন্য সে তাকে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাবে৷
যেই ভাবা সেই কাজ ।
সামিরের হাত ধরে ছুটতে ছুটতে লাল গলির রাস্তা পেরোনোর সময় কিছু বখাটেরা তাদের ধাওয়া করে। উপায়ান্তর না দেখে কালকুঠুরি তে আশ্রয় নেয় ভানু। বোকা মেয়ে ঘুরে ফিরে সর্বনাশা কালকুঠুরি তেই আশ্রয় নেয়। বখাটেগুলোও তার পিছু নেয় । রূপ থাকা বড্ড ভয়ানক ব্যাপার! যদি ভানু রূপবতী না হতো বখাটে গুলো এত ধাওয়া করত না তাকে।
তারাও কালকুঠুরি পর্যন্ত পৌছে যায়। ভানুদৌড়ে সেই শেল নং ২১৮! তেই প্রবেশ করল। দড়জা লাগাতে পারলোনা। তার আগেই বখাটেগুলো তাকে ধরে ফেলল। ভানু তাদের করুণ কণ্ঠে আকুতি করতে লাগলো তাকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু তা হলোনা। সামির দৌড়ে তার মাকে বাঁচাতে গিয়ে একজন বখাটের হাত কামড়ে ধরল । লোকটা তাকে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দিল! লম্বা শিকল দিয়ে বেধে দিল নোংরা পুরোনো খাটটার সাথে৷
মা, মা, করে চিৎকার করেও লাভ হলোনা । লোকগুলো মাকে অন্য শেলে নিয়ে চলে গেল। পাশের ২১৭ তে । ভানু চিৎকার করে বলল,,
” ভয় পায় না সোনা। মা আসবো। তুই ১ থেকে একশ পর্যন্ত গুনতে থাক। একদম থামবিনা। ”
সামির কাদো কাঁদো কণ্ঠে কাঁপা গলায় গুনতে লাগলো,,
এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, …. তেরো, চৌদ্দ ,
ওপার থেকে ভেসে আসে ভানুর হাহাকার । চিৎকার! ভয়াবহ ভৌতিক সে চিৎকার! চোখের সামনে ভানুর শাড়ি, ব্লাউজ , ছিড়ে ছুড়ে ফেলে দেয় ওরা! মায়ের ন\গ্ন দেহ দেখে সামিরের চোখ জ্বলে পুড়ে যায় চোখ বুজে সে আরো দ্রুত গননা শুরু করে,
যাতে অতিদ্রুত একশ পর্যন্ত শেষ হয়ে যায়। ২বার, ৩ বার একশ পর্যন্ত গোনা শেষ হয় কিন্তু ভানু আসেনা।
হঠাৎ ভানুর চিৎকার থেমে যায় । লোকগুলো খিলখিল করে হাসতে থাকে। বিভৎস সেই হাসি।
শুধু এইটুকু শেষ নয়! তারপর ওরা কি করেছিল জানো?
মাহার হাতের লোম দাড়িয়ে যায়! কাঁপা কণ্ঠে বলে,
– আরো কিছু করেছিল?
সমির নজর ঘুরিয়ে ঢোক গিলে মাথা নেড়ে বলল
-হ আরো কিছু। আমার মায়েরে ধ\র্ষ\ণ কইরেও ওরা শান্তি পায়নাই। পরের দিনো আমার মায়ের মরা লাশটারেও ওরা ছাড় দেয়নাই। আমি চেঁচালাম বহুত জোরে জোরে গুনতে থাকলাম,, এক, দুই, তিন! কতবার যে একশ পযন্ত গুনলাম মায়ে আইলোনা। খিদায় পরাণ যায় যায়! তাদের মধ্যে এক বখাটে, এক বোতল লাল রঙের কিছু একটা এনে দেয়! আমি ভেবেছিলাম জুস! কিন্তু না। সেটা কি ছিলো জানো? আমায় নাড়ী ছিড়ে জন্ম দেওয়া মায়ের রক্ত! শুয়োরের বাচ্চা বে\জন্মা কীট টা বোতলের রক্ত আমার মাথায় ঢেলে দেয়। আমার মাথা ভনভন করে ঘুরাতে থাকে। আমি জ্ঞান হারাই। পরে উঠে দেখি সন্ধ্যা হচ্ছে । আমার তখন ভিষণ বলতে ভিষনি খিদে পায়। যাওয়ার সময় লোকটার পকেট থেকে কিছু হয়ত পরে গেছিলো,,
আমি জাতামনা ওটা কি জিনিস! খিদের চোটে ওটা খুলে আমি অতি কষ্টে চিবিয়ে খেতে থাকি। স্বাদ কেমন ছিল মনে নেই। কি জিনিস তাও জানিনা। শুধু খেয়ে গেছি। পেট ভরেনি। প্রচন্ড পিপাসা পায়! প্রচন্ড! আশেপাশে কিছুই নেই।
জানো দিবা,, তোমার মুখ দিয়ে হয়ত ছি বেরোবে! ঘেন্না চলে আসবে কিন্তু আমার কোনো উপায় ছিলনা। যে রক্তের বোতলটা পরে ছিল, ওটায় করে আমি নিজের পিপাসা মেটাতে নিজের প্রসাব ব্যাবহার করেছি।।তাতেও কষ্ট নিবারণ হয়নি। আমার কোডিনে এলার্জি! লোকটার ফেলে যাওয়া ড্রা\গসে কিছু মাত্রায় কোডিনও ছিল। যারদরুন কিছু সময়ের মধ্যেই আমার এলার্জি ধরে যায়। গলা কাটা মুরগির মতো ছটফটাতে থাকি।। আমি সৃষ্টি কর্তাকে ডাকতে জানিনা। কেও শেখায়নি। তাই ডাকিওনা। চিৎকার করে মাকে ডাকি বেঈমানের বাচ্চা জবাব নেয়না। আমাকে একা ফেলে নিশ্চিন্তে ওপারে চলে যায়!
আমি চারদিন ওভাবেই পরে থাকি। মৃত্যু যখন সন্নিকটে তখন সেদিন চোখেদেখি দু- চারজন ছেলে এসেছে। আলো ভেদ করে তারা আমার সামনে এসে দাড়ায় । তাদের মধ্যে একজন যার নাম হাশেম হালদার সে দৌড়ে গিয়ে আমাকে টেনে তোলে। কাশেমের বাপ হাশেম হালদার ।
চোখেমুখে পানির ছিটা মারে। স্পষ্ট হয় নজর, সামনে তিন যুবক, কিশোর ছেলে,, রাগিব দেওয়ান, সাফিন সিকান্দার আর সিয়াম সিকান্দার। সাফিন সিকান্দার আমার দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের হাত বারিয়ে বলে,,
দেখেছিস ভালো মানুষ কে এভাবেই ঠাপ খেতে হয়!
এসেছিস ভিরান হয়ে তবে ফিরতে হবে সামির হয়ে, মরতে হলেও তোকে আমার অনুমতি নিতে হবে। বল রাজি? আমি নিজের ছোট্ট হাতটা বারিয়ে দিলাম। ১৩,১৪ বছরের সাফিন সিকান্দার তখন আমায় কোলে তুলে এই সিকান্দার বাড়ি ফেরত নিয়ে এলো। তারপর ধীরে ধীরে আমি এখান পর্যন্ত চলে আসলাম টাকার হাত ধরে ধরে। সেই বোম ব্লাস্ট হওয়া গোরস্তানের কথা মনে আছে? সেখানেই শায়িত ছিল নিজের জীবন দিয়ে আমায় এই দরিয়ায় ফাসিয়ে যাওয়া দুই বেঈমান। সজল আর তার ভানুমতী। সেই বোম কে মেরেছিল জানো? আমি। কারণ ওখানে যে তিহানের ড্রাগসের ঘাটি ছিল তা পুলিশ মাহবুব প্রায় ধরে ফেলেছিল। ধরলে সাফিন সিকান্দার ও ফাসতো তাই সেই বোমা হামলা। বদলে ১০ লাখ টাকা পেয়েছি। পিওর ইনকাম বলো?
মাহা একদৃষ্টিতে সামিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকা
হঠাৎ বাজ পরার মতো গলা জড়িয়ে তার ঘাড়ে মাথা দিয়ে বলল,,
– ওই কালকুঠুরি কি এতই ভয়ানক?
সামিরের ভেতরটা কেমন চিনন করে ওঠে! ঠান্ডা কণ্ঠে বলে,,
-ভীষণ ভয়ানক!
– সামির সিকান্দার?
– হু?
– সুযোগ পেলে ভালো হবেন? পালাবেন এসব ছেড়ে?
– উহু , না। তাছাড়া সাফিন সিকান্দার অনুমতি দেবেনা। বাই দা রাস্তা, কি ব্যাপার বলতো দিবা? তুমি কি আমার কষ্টভরা মারা খাওয়া অতীতবাণি শুনে দয়ার সাগরে ভেসে যাচ্ছো? হুমম সামথিং সামথিং?
মাহা নিশ্চুপ হয়ে থাকে। গলা ছেড়ে লাগলে, সামির তার মাজা টেনে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে ওঠে। মনে মনে বলে,,
কালকুঠুরি পর্ব ৩৬
– ইশশ এই সময় টা যদি না যেত,, আমার কেন মন চাইছে এভাবেই বসে থেকে এক জনম পারি দিতে। বাঙ্গিমারা সময় কেন বহমান!
পেছন থেকে একটা ছায়া সরে যায়। মাহা সামিরের এমন মুহুর্তে দাঁত কেলিয়ে হাসতে দেখে ভিষণ মেজাজ খারাপ হয়। সে উঠে সেখান থেকে চলে যায়।
