মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৭+৩৮
ইশরাত জাহান
রিমুকে স্কয়ারে আনা হয়েছে।আদ্র এসে দেখছে রিমুকে।মায়াকে এম্বুলেন্স করে নামতে দেখেছে সিয়া।অতিরিক্ত ভিড় থাকায় মায়া নেমে যায় ড্রিম লাইফ হাসপাতালের সামনে দিয়ে।আগে আগে দৌড়ে চলে যায় স্কয়ার হাসপাতালের দিকে।সিয়া ড্রিম লাইফ হাসপাতালের ব্যালকনিতে দাড়িয়ে ছিল একটা ক্লাস শেষ করে।মায়াকে ইমার্জেন্সী দৌড়াতে দেখে সিয়া বাকি ক্লাস না করে চলে আসে মায়ার পিছনেই।সিয়া এসে মায়াকে জিজ্ঞাসা করে,”কি হয়েছে ভাবী?”
“ইমারজেন্সি ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।মেয়েটা অসুস্থ।”
সিয়া একবার স্ট্রেচারের দিকে তাকালো।রিমুকে দেখে আপনাআপনি মুখে হাত চলে যায় সিয়ার।চোখমুখে ক্ষত।দেখে গা শিউরে উঠে পিছিয়ে যেতে থাকে।সিয়াকে আগলে নেয় আদ্র।এতক্ষণ নার্সদের সাথে কথা বলতে ছিলো সে।সিয়াকে আগলে ধরে বলে,”ডক্টর হওয়ার আগে নিজেকে স্ট্রং রাখতে হয়।মনোবল শক্তি কমে গেলে তো একজন সৎ ডক্টর হতে পারবে না তুমি।”
“আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?”
“এমনি শিখতে পারো প্র্যাক্টিকাল কিন্তু এখনো অপারেশন করার এবিলিটি হয়নি তোমার।”
“আমি সাথেই থাকবো।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আদ্র মাথা নাড়িয়ে নার্সদের বলে,”আমি আসছি তোমরা মিস সিয়াকে মাস্ক আর কভার দিও।”
আদ্র নিজের মত করে হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক পড়ে চলে আসে।ডাক্তারদের অপারেশনের সময় যে পোশাক থাকে সেই পোশাক পরে এসেছে আদ্র।সিয়া ও অন্যান্য নার্স আছে আদ্রর সাথে।
রাজ এসেছে দৌড়ে।মায়াকে দেখে রাজ ভ্রু কুঁচকে বলে,”তুমি এখানে?”
“রিমু মেয়েটাকে সেফ করতে এসেছিলাম।ও আমার গার্মেন্টসে কাজ করে।”
“রিমুর এই অবস্থা আমার জন্য হয়েছে।”
রাজের কণ্ঠে আহাজারি।নিজের উপর অভিযোগ আসছে রাজের কথার ভাঁজে।এর আগে এই রাজকে মায়া কখনও দেখেনি।রাজ আজ অনুতপ্ত কারো জন্য।চোখটা লাল চুলগুলো উষ্কখুষ্ক।মায়া রাজের কাছে এসে বলে,”কি ব্যাবস্থা নিলেন?”
“উকিল ঠিক করেছি আমি।তার নাম আপাতত গোপন রাখতে চাই।শত্রুপক্ষ জেনে যাবে যে।”
“আচ্ছা।”
অপারেশন শেষ করে আদ্র বের হলো।পিছনে সিয়াও আছে।আদ্র বের হতেই রিমুর মা দৌড়ে এসে বলে,”আমার মেয়েটা কেমন আছে?”
“নিজে থেকে বাঁচার তার কোনো রেসপন্স দেখাচ্ছে না।খুব বাজেভাবে মনে আঘাত লেগেছে।আমরা যথাযত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।গলায় বেশ ভালোভাবেই দড়িটা আটকে যায়।শ্বাসনালীতে সমস্যা হয়েছে।ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।কিন্তু আপনাদের এখন রোগীকে মাইন্ডলি সাপোর্ট করা প্রয়োজন।এই সময় মানসিকভাবে নারীদের আঘাতটা বেশি হয়।মানসিক শান্তি পেলে সে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পাবে।”
রিমুর মা এবার রিমুর বাবার দিকে ফিরে বলে,”তুমি বাসা পাল্টাবা।প্রতিবেশীরা এখন আমার মেয়েটাকে অনেক বাজে কথা শুনায়।আমি আমার মেয়েকে নিয়ে আর ঝুঁকি নিবো না।”
রিমুর বাবা রাজি হলো।মায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধু।প্রতিবেশী!হ্যাঁ এই প্রতিবেশীর কটু কথা থেকে বাঁচতে আজ রিমুকে নিয়ে অন্য জায়গায় যাবে রিমুরা।নাহলে তো এখানেই থাকতে পারতো।মায়া আফসোসের সাথেই বলে,”কি নির্মম মানসিক অত্যাচার তাই না?অন্যায় করলো ধর্ষক আর শাস্তি পেলো ধর্ষণকারী।ঘৃণা করি আমি এই সমাজের নিয়মটাকে।”
রাজ এখনও বসে আছে।সিয়া কল করে জানালো হিয়াকে।হিয়া দৌড়ে এসেছে মাহমুদ সরদারের সাথে।মায়া আর রাজের বিষয়টা জানতে পেরেই দৌড়ে আসা।মাহমুদ সরদার এসেই ছেলের মুখটা দেখে করুন হয়ে তাকিয়ে আছেন।হিয়া এসে বলে,”কি অবস্থা এখন মেয়েটার?”
“না মরেও মরার মত হয়ে আছে।”
মায়ার কথা শুনে স্তব্ধ হিয়া।একবার দরজা দিয়ে উকি দিল ভিতরে।রিমুর অবস্থা দেখে গা শিউরে উঠলো তারও।কান্না করে দিবে এমন।মুখে হাত দিয়ে বলে,”মানুষ এত খারাপ কেন?”
“এই পৃথিবীতে এমন অহরহ ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে।শুধু আমরা দেখি না বলে সুখে দিন কাটাই।আজ তুমি এসেছো তাই দেখতে পাচ্ছো।”
আদ্রর কথা শুনে হিয়া পিছনে ঘুরে বলে,”অন্যায়কারীর শাস্তি হবেনা?”
আদ্র বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে,”নিরানব্বই শতাংশ লোকের শাস্তি হয়না।আজকাল টাকার খেলা আসল খেলা।”
হিয়া রাজের দিকে তাকালো।রাজকে দেখে হিয়ার মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।ভাইকে কখনও এভাবে বিষন্ন মনে দেখেনি।সবাইকে হাসিখুশি করা রাজ আজকে চুপচাপ এক কোণায় বসে আছে মাথা নিচু করে।হিয়া এবার মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাইয়া এভাবে বসে আছে কেন?”
“তোমার ভাইয়ার মাঝে অনুতপ্ত কাজ করছে।সে নিজেকে দায়ী করছে।”
“কেন কি হয়েছিল?”
“কিছুদিন আগে একটা কাজে রিমুর বাবা মন্ত্রী মশাইকে সাহায্য করেছিল।বিরোধী দলের আরশাদ ওনার এগেইন্স গিয়ে।তাই ওই বিরোধী দলের লোকেরা রিমুকে নির্মমভাবে অপহরণ করেছে।”
হিয়া এবার রাজের কাছে বসে বলে,”ভাইয়া মন খারাপ করো না।তুমি তো আর জানতে না যে রিমুর এই দিনটাও আসতে পারে।”
রাজ কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না।হিয়া তাকিয়ে আছে রাজের মুখের দিকে।এভাবে রাজকে দেখতে যেনো সবার আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে।হিয়ার যেনো একটু বেশি।কারণ হিয়ার কাছে রাজ হলো তার শ্রেষ্ঠ ভাই।রাজের মত ভাই নাকি একটাও হয়না।ভাইয়ের যত্ন ভাইয়ের উৎফুল্ল ভাব না দেখলে পরিবেশটা কেমন গমগমে দেখা যায়।হিয়া রাজের কাঁধে হাত রেখে বলে,”ও ভাইয়া?”
রাজের চোখের কোণা বেয়ে পানি পড়ল।মাহমুদ সরদার এগিয়ে আসতে নিলে রাজ তাকে না দেখেই বলে,”আমার মায়ের লাশটাও ঠিক এভাবে পড়ে ছিল সেদিন রাস্তায়।”
বলেই অন্যদিকে ফিরে চোখ মুছে নেয় রাজ।মাহমুদ সরদারের পা থেমে যায় ছেলের কথা শুনে।রোহিনী খানকেও ধর্ষণ করে মারা হয়। কারা করেছে এমন কেউ জানেনা।রাজ সেদিন ওর মায়ের লাশ দেখে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়।আজ আবারও সেই দৃশ্য ভেসে উঠেছে রাজের চোখে।হিয়ার চোখটাও ভিজে এসেছে।সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।রিমুর বাবা মাও তাকিয়ে দেখছে রাজকে।মনে মনে ভাবছে,”মন্ত্রী হলেও লোকের সামনে সতেজ থাকলেও তাদের মনেও কষ্ট আছে।তারাও আর চারপাঁচ মানুষের মতোই জীবনে সুখ দুঃখ নিয়েই চলে।”
মায়া এগিয়ে এসে হিয়াকে বলে,”মন্ত্রী মশাইকে একা থাকতে দেও।তার এখন কোনো শান্তনাতেই কাজ করবে না।মাকে হারানোর কষ্ট যে কেউই কমাতে পারে না।সবকিছুর স্থান পরিবর্তন হলেও মায়ের স্থান কখনও পরিবর্তন হবে না।”
হিয়া সরে আসে।পিয়াশ দৌড়ে এসে বলে,”আসামিদের সনাক্ত করা হয়েছে।কিন্তু আমরা একজনকেই পেয়েছি।হয়তো তারা খোঁজ পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তাই দুজন পালিয়েছে।”
মায়া পিয়াশের উদ্দেশ্যে বলে,”তাদের কোনো পরিচয় বা ছবি আছে কি?”
“হ্যাঁ তিনজনের একসাথেই ছবি আছে।”
“দেখাও আমাকে।”
পিয়াশ ছবি দিতেই মায়া ছবি দেখে।ছবিটা দেখে মায়া অবাকের সাথে বলে,”এরা তো কাল রাতের পার্টিতে ছিলো।”
রাজ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে ছবি দেখে বলে,”এরাই তো কাল বোনেদের সাথে ড্যান্স করেছিলো।”
“বাট ওনাদের এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বস।”
“যে করেই হোক ওদের খুঁজে বের করো।”
বলতেই রাজের চোখ যায় কোণায় মানে দাড়িয়ে থাকা আদ্রর দিকে।আদ্র রাজের চাহনি দেখে ঠোঁট প্রসারিত করে।রাজ যা বোঝার বুঝে নিলো।
গভীর রাতে,
অন্ধকার কেবিনে দুইটা বেড রাখা।সেই দুইটা বেডে বেঁধে রাখা হয় দুজন যুবককে।তাদের সামনে আছে আরো দুজন যুবক।একজন আদ্র ও অপরজন রুদ্র।বেডে শুয়ে থাকা যুবক দুজন ছটফট করছে।তাদের মুখ বেধে রাখা।আদ্র ওদেরকে দেখে বলে,”ইলেকট্রিক শক দেওয়া শুরু কর ভাই।”
রুদ্র চোখ টিপ দিয়ে বলে,”ওকে ব্রো।”
বলেই দুইভাই দুজন যুবককে শক দিতে থাকে।আদ্র শক দিয়ে বলে,”মেয়েদের কোমড়ে হাত রাখার এত শখ তোদের যে এখন ইলেকট্রিক শক খা।”
রুদ্রও শক দিতে দিতে বলে,”খুব তো মেয়েদের গা থেকে ছলেবলে কৌশলে ওড়না ফেলাতে চেয়েছিলি এবার দেখ তোর মাথা থেকে এসব ধান্দা কিভাবে ফেলে দেই।”
বেশ কিছুক্ষণ শক দেওয়ার পর থেমে যায় আদ্র ও রুদ্র।যুবক দুজন নিস্তেজ হয়ে গেলো।চোখগুলো মেলে রাখা কষ্টকর হয়ে গেলো তাদের জন্য।অনেক কষ্টে নিশ্বাস নিচ্ছে।রুদ্র হিয়ার সাথে ড্যান্স করা যুবকের বেডে দিলো এক লাথি।যুবকটি যেনো ঘাবড়ে গেলো।ছটফট করতে নিলেও লাভ হলো না নিজেকে রক্ষা করার।ইলেকট্রিক শক দেওয়ার পর আবারও মোটা বেত এনে দুজনকে মারতে থাকে ইচ্ছামত।আদ্র ওর চোখের সামনে সেই দৃশ্যটা এখনও ভুলতে পারছে না।যার প্রেয়সীকে ছোঁয়ার চেষ্টা।সে তো শিক্ষা দিবেই।রুদ্রও ভুলতে পারছে না হিয়াকে ছোঁয়ার দৃশ্য।দুজনেই মিলে মারতে মারতে ওদের অজ্ঞান করে দিলো।
বর্তমান,
সিয়া ওদেরকে দেখে নাকমুখ কুঁচকে বলে,”ছিঃ ছিঃ ছিঃ এদের সাথে ড্যান্স করেছিলাম।”
হিয়া শিউরে উঠে বলে,”ঘৃণা করছে এখন নিজের উপর।”
“বাড়ি গিয়ে হট ওয়াটার নে ঘৃণা কমে যাবে। পারলে জেনেশুনে পার্টনার খুঁজে নিস।”
পিছন থেকে রুদ্রের কথা হিয়ার কানে ভেসে আসে।রাগে গজগজ করতে করতে হিয়া পিছনে ঘুরে চোখের চশমা ঠিক করে বলে,”আপনার থেকে এডভাইস চাইনি আমি।”
“তোর ভালোর জন্য ফ্রিতে দিলাম একটু।”
রাজ রুদ্রের কাছে এসে বলে,”ছেলে দুজন কোথায়?”
“ব্রো জানে ভালো।আমি ওদের বায়োডাটা সার্চ করতেই জানতে পারি ওরা কতটা নারীলোভী।তাই তো রাতেই ওদের অপারেশন করেছিলাম দুই ভাই মিলে।যেন সিয়া আর হিয়াকে টার্গেট না করে।কিন্তু রিমুর ব্যাপারটা জানলে শুধু থ্রেট না মেরেও ফেলতাম।”
“ওদেরকে আইনি শাস্তি দেওয়া হবে।”
“মনে তো হয়না খুব বেশি একটা সহজ হবে শাস্তি দেওয়া।কারণ ওরা উচ্চ বংশীয়।পাওয়ার আছে অনেক।”
“আমাদের কি সেই পাওয়ার নেই?”
“থাকলেও ইকুয়াল খেলায় খারাপ লোকেদের টার্গেট সবসময় থাকে শত্রুপক্ষের ধ্বংসের দিকেই থাকে।”
রিমুকে কড়া নজরে রাখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।রাজ ঘরে বসে ভাবছে অন্যায়কারীর শাস্তি কিভাবে দিবে?কারণ দুজনকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।আদ্র জানালো,”আমি ওদেরকে অপারেশন করেই ওদের বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ খুঁজে পাচ্ছি না।ওরা কি দেশ থেকে পালিয়েছে নাকি দেশেই কোনো এক কোণায় আছে এটা ভালো করে খুঁজতে হবে।”
রুদ্র ওর লোকেদের নিয়ে খোঁজ শুরু করে দিয়েছে।রাজ এসে বসে আছে নিজের ঘরের সোফায়।থুতনিতে হাত রেখে ভাবছে সবকিছু।মায়া এসে রাজের পাশে বসে।রাজের হাতে হাত রেখে বলে,”সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে মন্ত্রী মশাই।”
“রাজনীতি জগৎটা ভয়ানক বাজে এক জগৎ মায়াবতী।এই জগতের মাঝে নেই সততা আছে লাভ লস।আমি সেই বেড়াজালে আটকা পড়ে আছি।পারছি না সততাকে জয় করতে।ওপর থেকে চাপ আসলে আমিও থেমে যাবো হয়তো কিছুক্ষণ পড়ে।”
“আপনার মায়াবতী আছে তো আপনার পাশে।আপনার কোনো কিছু হবেনা।দেখবেন এই লড়াই খুব ভালোভাবে জিতে যাবেন।”
“ওই নরপশুরা তো আরামছে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
“কতদিন বা পারবে শুনি?একদিন না একদিন তো ধ্বংস হয়ে যাবে তারা।”
“কাল কোর্টে ওদেরকে হাজির করতে হবে কিন্তু ওই দুজনের ক্ষমতা এতই বেশি যে ধর্ষনের রায় আসলেও ওরা ছাড়া পেয়ে যাবে খুব সহজে।ওদেরকে পেলে একটা ব্যবস্থা নেওয়া যেতো।”
“একজনকে তো পাওয়া গেছে।তার ব্যবস্থাটাই আগে নেওয়া হোক।এরপর আরশাদ লোকটার ব্যাবস্থা নিবেন।”
“কতবার নিবো বলতে পারো?আমি বারবার চেষ্টা করি সবকিছু সমাধান করার আইনি ব্যবস্থা নেই কিন্তু দিনশেষে ওদের দেখা যায় মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াতে।”
“উদ্দেশ্য সফল করতে বারবার চেষ্টা করতে হবে মন্ত্রী মশাই।আমরা দুজনে মিলে ঠিক পারবো আমাদের আশেপাশে থাকা জালিমদের শাস্তি দিবে।”
রাজের হাত আঁকড়ে নেয় মায়া।রাজ মায়ার চোখের দিকে তাকায়।মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে বলে,”মায়াবতীর বক্ষে নিজের জন্য স্থান হবে কি?”
“আমার বক্ষে আপনাকে স্বাগতম মন্ত্রী মশাই।”
রাজ হেসে দিলো।মায়ার গলার কাছে দীর্ঘশ্বাস এর গরম ছোঁয়া এক।মায়া ঠোঁট প্রসারিত করে।ঠিক তখনই মায়ার ফোনে ম্যাসেজ আসে।ওপাশ থেকে লেখা আসে,”ওই দুজন যুবককে আমি আপনার সিক্রেট রুমে রেখেছি ম্যাডাম।”
মায়া এবার বিজয়ের হাসি হাসে।মনে মনে বলে,”এই পৃথিবীতে যারা আইনি শাস্তি থেকে মুক্ত তাদের শাস্তি এই মায়া দিবে।মায়া কাউকে তার প্রাপ্য শাস্তি থেকে এক চুলও ছাড় দেয়না।আর মায়ার কাছে শাস্তি মানে একটাই মৃত্যু।”
বলেই মায়া ভিলেনী হাসি দেয়।
পরদিন সকালে নিজের কোম্পানিতে এসে সিক্রেট রুমে ঢুকলো মায়া।হাতে হ্যান্ডগ্লাভস।বন্দুক নিয়ে ঢুকলো রুমের মধ্যে।দেওয়ালের কোণায় হাত দিয়ে সুইচ দিতেই ঘরটা আলোকিত হয়।নীল শাড়ির সাথে পনিটেল করা চুল।হাতে বন্দুক থাকলেও মায়াকে দেখতে ভয়ানক লাগছে না কারোর কাছে।কারণ তারা মায়াকে সাধারণ একজন নারী ভেবে রেখেছে।মায়া ওদের চোখে ভয়ডর দেখতে না পেয়ে ঠোঁটে এমন হাসি দিলো যেনো এখনই এদের শেষ সময়।মায়া এগিয়ে এসে ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ভিডিও ক্লিপস কোথায়?”
“তোকে কেন বলব রে?”
“বলবি না তাহলে?”
“মা* ভয় দেখাতে এসেছে আমাদের শুধু।আমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানিস কিছু?”
“আরে এই মা* তো আমাদের উপকার করেছে আটকে রেখে।কোর্টে গিয়ে খবরের কাগজে নাম লেখাতে হবে না।”
মায়া ওদের দিকে তাকিয়ে চোখটা রক্তিম করে বলে,”হ্যাঁ খবরের কাগজে তোদের অপকর্ম সম্পর্কে ছাপানো হবেনা কিন্তু তোদের লাশের বিষয়ে ঠিকই ছাপানো হবে।”
“তুই মারবি আমাদের?তাহলে ক্লিপস?”
“ক্লিপস দিলে আমি তোদের একটু বাঁচার সুযোগ দিতাম কিন্তু ক্লিপ যখন দিবি না তখন বেঁচে থাকবি বা কেন?”
বলেই মায়া বন্ধু তাক করে।শুট করতে নেয় মায়া।যুবক দুজন ভয় পায় সাথে আরেকজন যুবক যে মায়াকে আক্রমণ করতে চেয়েছিল সেও।মায়া যেই ট্রিগারে চাপ দিলো অবাক হয়ে গেলো যেনো।কোনো কিছুই বের হলো না।গুলি নেই তাহলে।মায়া অবাকের সাথে বন্দুকটা দেখে বলে,”এটা কি হলো?”
যুবক দুজন হেসে দিলো।কিন্তু হাসতে পারল না আক্রমণ করা যুবকটা।কারণ সে কাল সকাল থেকে যে থেরাপি পেয়েছে।তাতেই তার শিক্ষা হয়েগেছে।
বাকি দুজন যুবক অট্টহাসি দিয়ে বলে,”একটু পরেই আমাদের বাবা দলবল নিয়ে এসে তোর অবস্থা শেষ করে দিবে।”
যুবক দুজনের হাতের ঘড়িতে জিপিএস অন করা।যেটা দ্বারা তাদের লোকেশন খুঁজে পাওয়া সহজ।মায়া ওদের হাতের দিকে তাকালো।ওদের দিকে এসে হাতঘড়ি খুলে নিয়ে বলে,”এটার জন্যই এত কনফিডেন্স?”
বলে ঘড়িদুটো নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে ভেঙ্গে দিলো ঘড়ি।এবার ভয়ানক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,”বন্দুক খালি তো কি হয়েছে আমি এমনিতেই তোদের শেষ করে দিতে পারি।”
বলেই মায়া এক কোণায় থাকা রড নিয়ে আসে।ওগুলোর গায়ে আছে তারকাটা।যেগুলোতেই কারেন্ট যুক্ত করা।মায়া এবার ভয়ানক হাসি দিয়ে বলে,”শয়তানের শেষ তো হবেই যদি সেই শয়তান আমার হাতের নাগালে থাকে।”
রড দিয়ে মায়া তিনজনকে একাধারে মারতে থাকে।একেক বাড়িতেই ওদের চামড়া ছিলে রক্ত ঝরতে থাকে।মায়া একটা করে বাড়ি দিচ্ছে আর বলে,”নারীদের সবসময় লালসায় দেখেছিস কিন্তু নারীকে প্রতিবাদী হতে দেখিসনি।আজ এটা দেখে নে।এতদিন ক্ষমতার জোরে নারীদের ধর্ষণ করেছে আজকে সেই নারীর আরেক রূপ দেখ।এক নারী যেমন ধর্ষিতা হতে জানে আরেক নারী ধর্ষকের জীবনটা শেষ করে দিতে জানে।”
যুবক গুলো এবার ছটফট করছে।মায়া দাঁত কটমট করে বলে,”মেয়েটার শরীর খুবলে খুবলে খেয়েছিলি তাই না?খুব মজা পেয়েছিলি তো ওদের দেহ ভোগ করার সময় ওদেরকে অত্যাচার দিয়ে।এবার দেখ তোদের দেহে যখন অত্যাচার করা হয় কেমন লাগে।এই মায়া সমানভাবেই সবাইকে শাস্তি দেয়।একচুল পরিমাণ কম শাস্তি পাবি না তোরা।”
“কিন্তু মায়াবতী তো হিংস্রবতী হয়ে গেলে অন্যায়কারীর শাস্তিটা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।”
পিছন থেকে রাজের কথা শুনতে পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো মায়া।রাজকে দেখে অবাক হয়ে বলে,”আপনি?”
রাজ দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।মুচকি হেসে বলে,”আব্বে এই মায়াবতী।”
“আপনি এই রুম সম্পর্কে জানেন?”
“তোমার সমস্ত সিক্রেট আমি জানি,আফটার অল আমি তোমারই স্বামী।”
“ভাইয়াও তো কিছু জানেনা এটা নিয়ে।”
“আমার শালা তার বউকে নিয়ে ভাববে আমি ভাববো আমার বউকে নিয়ে।”
এগোতে এগোতে রাজ মায়ার হাতটা ধরে।মায়া রাজের চোখে চোখ রেখে বলে,”বন্দুক ফাঁকা আপনি করেছেন?”
“হুম।”
“কিন্তু কেন?”
“মিশন যখন দুজনার একই তখন আলাদা কেন শাস্তি দিতে যাবে?”
“আপনি মানসিকভাবে তখন দুর্বল ছিলেন।”
“আমার মায়াবতী তাই আড়ালে আমার হয়ে লড়াই করছে।স্বামী হয়ে ঘরে মুখ গুঁজে কেন থাকব শুনি?”
“এখন শাস্তিস্বরূপ কি দিবেন?”
“মায়াবতীর ইচ্ছা যখন শাস্তি হিসেবে ওদেরকে ওপারে পাঠানো তখন তার মন্ত্রী মশাই এটাকেই মঞ্জুর করে নিলো।”
বলেই রাজ পাঞ্জাবির পকেট থেকে বন্দুক বের করে।মায়ার হাতের সাথে নিজের হাত একত্র বন্দুক নিয়ে যুবকদের দিকে তাকালো।মায়া রাজের চোখের দিকে চেয়ে আছে।রাজ মায়ার দিকে এক পলক চেয়ে যুবকদের দিকে চাইলো।অতঃপর শুট করে দেয় ওদের বুকে।একেকজনের বুকে শুট করে ঝাঁঝরা করে দেয়।তরল রক্তে ঘর রক্তাক্ত হয়ে আছে।যুবকদে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কেউ নেই।রাজ ওদের মৃত্যুটা নিজ চোখে দেখছে।ঠোঁটে আফসোসের দেখা দিয়ে বলে,”আজ তিনজন মায়ের কোল খালি হলো।”
“এরা যদি মায়ের আদর্শ সন্তান হয়ে থাকতো তাহলে আরেক মায়ের সন্তানকে ভোগ করে এই দিনের সাক্ষী কোনো মাকে হতে দিতো না।এরা যেমন কোনো এক মায়ের সন্তান রিমুও ঠিক তাই।আফসোস এটাই আজ একটা মা হাহাকার করবে কাল মিটে যাবে কিন্তু রিমুর মা রিমুকে জীবিত দেখেও পদে পদে শেষ হয়ে যাবে সমাজের কুৎসিত মন্তব্যে।দুদিন পর এই মায়ের জালিম সন্তান আরো এক রিমুকে ধরতে চাইবে।আইনের নোংরা খেলায় ওরা শাস্তি না পেয়ে মুক্ত পাখির মত ঘুরবে।আর রিমুরা বেঁচে থাকতে পারেনা।রিমুদের ক্ষমতা নেই বলে ওরা বেঁচে থেকেও তিলে তিলে শেষ হয়ে যায়।”
“আমার মায়াবতীর ইচ্ছায় এই রিমুদের উপর অন্যায় হওয়া লোকেদের শাস্তি ঠিকই হবে।”
“কিন্তু এমনটা আর কত মন্ত্রী মশাই?পৃথিবীতে খারাপ লোক একটা দুইটা না।এরা অহরহ ঘুরে বেড়ায়।”
“ভালো খারাপ মিলেই এই পৃথিবী।ক্ষমতার বেড়াজালে সবকিছু আটকে থাকে।দিন যত যাবে তত খারাপের দেখা মিলবে।একটা প্রতিষ্ঠিত জীবনে আসতে নিলেও অহরহ আপত্তি।এটা তো নারী হয়ে তুমি জানোই।”
মায়া এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।রাজ মায়াকে নিয়ে বের হয় সিক্রেট রুম থেকে।বাইরে এসে তারেকের উদ্দেশ্যে বলে,”ওগুলোকে নিজেদের বাড়ির সামনে রেখে আসো।অন্তত জানাজা হোক।যে বাবা এতদিন ওদের অপকর্ম শিখিয়েছে আজ সেই বাবা ওদের লাশ নিয়ে মসজিদে গিয়ে সন্তানের জান্নাত পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চাইবে।”
তারেক মাথা নাড়িয়ে কিছু গার্ড নিয়ে ভিতরে গেলো।বাইরে এসে স্বাভাবিক হয়ে গেলো মায়া ও রাজ।স্টাফদের কিছুই বুঝতে দিলো না এমন।মায়া সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আজকে থেকে কোনো মেয়েকে যদি এক্সট্রা কাজের নাম করে রাতে রাখা হয় তাহলে তার চাকরি থেকে আমি বাতিল করে দিবো।এমনকি এমন অবস্থা করে দিবো কোনো স্থানেই সে চাকরি পাবে না।”
সবাই মায়া ও রাজকে একত্রে দেখে চুপ করে চলে যায়।রাজ একজন মন্ত্রী।তার ক্ষমতা অনেক সাথে মায়া হলো স্ট্রেট ফরোয়ার্ড।এদের সাথে কেউ পারবে না।
আজ পাঁচদিন পর রিমু অনেকটাই সুস্থ।অনেক কষ্টে রিমুকে সুস্থ করা হয়েছে কিন্তু মানসিকভাবে সে এখনও কারো সাথে কথা বলতে পারছে না।জানালার দিকে চোখ রেখে বাইরের পরিবেশ দেখছে রিমু।চুলগুলো জট পাকিয়ে আছে।রিমুর মা হাত দিতে গেলে রিমু বলে,”অনেক ব্যাথা মা।ওরা আমার চুলগুলো হিঁচড়ে টেনে ধরেছিল।”
রিমুর মা মুখে কাপড় গুঁজে কান্না করে দেয়।মেয়ের কষ্ট সহ্য হয়নি তার।রিমু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে রেখেছে।তিনদিন ধরে সেলাইন চলছে তার।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে কিন্তু পানি খাওয়া যাবে না।রিমু কখনও চায়নি পানি।
মায়া এসেছে আজ।রাজের করা মামলা গ্রহণ হলেও সাক্ষী নেই।এদিকে যে ধর্ষিতা তাকেও লাগবে।তাই কোর্টের থেকে সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়।রিমু যেহেতু এখন সুস্থ তাই কালকেই রিমুকে নিয়ে যাওয়া হবে কোর্টে।রিমুর মায়ের থেকে শুনেছে রিমু খাওয়া দাওয়া করতে চায়না মন মরা করেই থাকে।ভেঙ্গে গুড়িয়ে আছে মেয়েটা। কাল হয়তো সে সাক্ষ্য দিতে পারবে না।তাই মায়া এসেছে আজকে রিমুকে সহায়তা করতে।সাথে আছে সিয়া আর হিয়া।মায়া রিমুর কাছে বসেছে মাত্র।রিমু এখনও বাইরে চোখ স্থির রেখে আছে।মায়া রিমুর মাথায় হাত ছোঁয়ায়। রিমু মায়ার মুখ না দেখে বলে,”মাথায় খুব ব্যথা মা।”
মায়া হাত থামিয়ে বলে,”আর সর্বাঙ্গে?”
রিমু মায়ার কন্ঠ পেয়ে পাশ ফিরে তাকালো।মায়াকে দেখে চোখের পাতা নাড়িয়ে বলে,”সর্বাঙ্গে এতটাই ব্যাথা যে এখন বেঁচে থাকতেই ইচ্ছা করছে না।”
একজন ধর্ষিতার মুখের কথা এর থেকে আর কিই বা হতে পারে?মায়া স্থির চোখে রিমুর দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার শরীরের ব্যাথাকে কখনও কমিয়ে রাখবে না।ব্যাথাকে জাগ্রত করো।”
সিয়া আর হিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।এটা কি শিখাচ্ছে মায়া?এই সময় মানসিকভাবে আরো সুস্থ রাখতে হয়।মেয়েটার তো একটু শান্তনার প্রয়োজন।মায়া উল্টো কথা বলছে কেন?মায়া আবারও বলে,”মেয়েদের সম্মান ধরে রাখার জন্য তাদের জীবনের আঘাতগুলোকে নিজের মাঝে পুষে রাখাটা খুব প্রয়োজন। আঘাতগুলো যখন নিঃশেষ হয়ে যায় তখন মেয়েদের আবার নতুনরূপে আঘাতপ্রাপ্ত হতে হয়।এতবার আঘাত না হয়ে একবারই নাহয় আঘাতটাকে পুষে রেখে জালিমদের বিনাস করলে।”
“জালিমের হয়ে লড়াই করতে ক্ষমতা লাগে।যেটা আমার নেই।”
“ক্ষমতা না বলো মানসিক অবস্থা।তুমি নিজেকে একটাবার প্রতিবাদি হিসেবে গড়ে তোলো দেখবে ক্ষমতা আপনাআপনি চলে আসবে।”
“আমার এখন উপায় কি?আমি কিভাবে নিজেকে কলঙ্ক থেকে মুক্ত করবো?”
“নিজেকে কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার আগে নিজের মাঝে মনোবল শক্তি আনো।তুমি পারবে অন্যায়ের হয়ে লড়াই করতে এটা মস্তিষ্কে ভালোভাবে আঁকড়ে নেও।অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেতে গিয়ে যদি জীবনটাও দিতে হয় দিয়ে দিবো কিন্তু সম্মান ফিরিয়ে আনতে লড়াই করাটা প্রয়োজন।”
“আমার কথা কেউ শুনবে?”
“পাশে তো আমরা আছি।আমরা শুনলে বাকিরাও শুনবে।শুধু সৎ সাহস রাখো।”
রিমুর মত যদি বাকি ধর্ষিতাদের পাশে একটা করে মায়া থাকতো তাহলে সমাজে ধর্ষণ কমে যেতো।ভাবছে সিয়া আর হিয়া।তারা আসলেই ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে।যেখানে যায় পারিবারিক গার্ড নিয়ে যায়।কোথাও কেউ হেনস্থা করতে পারেনা।আহা জীবন!বাবার অর্থ সম্পদ ভালো বলেই তাদের কেউ কোনকিছু করতেই পারেনা।দুর থেকে লোভাতুর দৃষ্টি আসলেও কাছে ছুতে পারেনা কেউ।
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩৫+৩৬
রিমুদের ধর্ষণ সহজেই হয়ে যায় কিন্তু ক্ষমতায় থাকা মানুষদের খুবই কম।আজকাল তো কিছু স্মার্ট যুগের নারী আছে নিজে থেকেই শরীর বিলিয়ে দেয়।একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর সংসার নষ্ট করে।একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর সর্বনাশ করতে অহরহ মানুষকে দেখা যায়।এই কালনাগিনী থেকে মুক্তি মিলবে কবে কেউ জানেনা শুধু করতে থাকে অপেক্ষা।
