মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫৭+৫৮
ইশরাত জাহান
সোনালীর মুখটা বেঁধে হাত পা শক্ত করে বেধে রেখেছে।যেনো পালাতে না পারে সোনালী।সোনালীর ফোন এখন মায়ার কাছে।ওটা সোনালীর সামনে দেখিয়ে দেখিয়ে ঘোরাতে লাগলো।তিনজনে মুখে হাসি ফুটিয়ে বাইরে আসে।গাড়ির সামনে দাড়িয়ে রুবি বলে,”মিথ্যা বলাটা কি ঠিক হলো ম্যাম?”
মায়া ও জারা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।রুবি বলে,”এই যে মোহন সরদারকে সব ছবি দেখিয়েছেন এটা।”
মায়া গাড়ির সামনের সিটে বসে বলে,”মোহন সরদারের কাছে আজ ছবিগুলো দেইনি কিন্তু মোক্ষম সুযোগ আসলে ঠিকই দিবো।আজকের কথাটা এজন্যই বলা যেনো সোনালী এখান পালাতে পারলেও ভুল অক্ষরে মোহন সরদারের কাছে না যায়।কারণ বিভান খানের থেকেও মোহন সরদার তার দ্বিতীয় বউকে অন্ধ বিশ্বাস করে।যার কারণে আমার মায়ের কপাল পুড়লো।এখন সোনালীও জানতে পারবে তার সেই বিশ্বাস করা ব্যাক্তি তাকে অবিশ্বাস করতে চলেছে।পালিয়ে কোথায় যাবে সেই সুযোগ বন্ধ করার জন্যই এটা বলা।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আমরা এখন কোথায় যাব?”
“প্রথমে বাংলোতে যেতে হবে।বলা তো যায়না সোনালীর খোঁজ না পেয়ে বিভান খান আবার তার লোক দিয়ে ফর্মুলা কোথায় লুকিয়ে দেয়।”
রুবি মাথা উপর নিচ করে।জারা গাড়ি স্টার্ট দেয়।এখন ভোর পাঁচটা।জারা গাড়ি চালাচ্ছে এর মধ্যেই ব্রেক করলো।মায়া ফোন টিপছিল।জারার এভাবে ব্রেক করাতে জারার দিকে তাকালো।প্রশ্ন করার আগেই জারা সামনের দিকে ইশারা করে বলে,”সামনে চেক করা হচ্ছে।আই থিঙ্ক এরা রুদ্রের ইন্সট্রাকশন ফলো করছে।কারণ ওখানে জেসিকে দেখা যাচ্ছে।যে কি না রুদ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট।”
মায়া সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে বলে,”ইউ টার্ন নেও।”
“বাট ওদিকে তো জঙ্গল।”
“জঙ্গলের রাস্তা দিয়েই যেতে হবে।উপায় নেই আমাদের।মন্ত্রী মশাই কেন সোনালীকে বাঁচাতে চায় আমি জানিনা।আমি চাইনা মন্ত্রী মশাই আমার রাস্তায় কাটা হয়ে আসুক।”
“এক্সাক্টলী কিসের ভিত্তিতে এমন বলছো তুমি?তোমার মন্ত্রী মশাই তুমি ব্যতীত কিছুই বোঝেনা।তার সমস্ত ভাবনা জুড়ে তো তুমি।”
“আমি এমনটা বলছি কারণ আমি নিজের কানে শুনেছি।তাজকে আক্রমণ করার আগেরদিন মন্ত্রী মশাইকে বাবার সাথে মিটিং করতে শুনেছি।সেখানে মন্ত্রী মশাই নিজে বলেছে এই সোনালীর ক্ষতি সে কোনমতেই হতে দিবেনা।দরকার হয় আমাকে কিছুদিনের জন্য সরদার মহলের বাইরে রাখবে।ক্যান ইউ ইমাজিন জারা?আমাকে সরিয়ে দিয়ে ঐ সোনালীকে প্রোটেক্ট করবে মন্ত্রী মশাই।”
জারা গাড়িটা জঙ্গলের দিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে।রুবি পিছনের সিটে থেকে বলে,”ম্যাম ছোট মুখে একটা বড় কথা বলতে পারি?”
মায়া পিছনে ঘুরে তাকালো শান্ত দৃষ্টিতে,”আমি কি তোমাকে ছোট নজরে দেখেছি কখনও?”
রুবি একটু মৃদু হেসে বলে,”আসলে ম্যাম আমার সংসার জীবন নিয়ে আইডিয়া নেই।কিন্তু ভালোবাসা নিয়ে তো আছে।আমি যতটুকু জানি রাজ স্যার আপনাকে নিজের থেকে আলাদা করার চিন্তা তো দুর তার স্বপ্নে আসলেও সেই স্বপ্ন চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিবে।তাই বলছি স্যারের সাথে একবার পরামর্শ করে নিলে ভালো হতো।”
“তোমার স্যার আমাকে জানিয়েছে একবারও কেন সে সোনালীকে বাঁচাতে চায়?যেহেতু তার উদ্দেশ্য আমার থেকে গোপন রাখা নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর আমি পাবো না।”
রুবি কথার প্রেক্ষিতে কিছুই বলতে পারলো না।জারা গাড়ি চালাচ্ছে।পিচঢালা রাস্তা বাদ। দিয়ে জঙ্গলের ভিতরের কোথাও ঘাস তো কোথাও মাটি এমন রাস্তার উপর দিয়ে গাড়ি চলছে।বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সবার।গাড়ি চলতেও অসুবিধা।তাও চালিয়ে যাচ্ছে।এর মধ্যেই হঠাৎ করেই মায়ার গা গুলিয়ে আসে।রুবি মাথা এগিয়ে বলে,”কি হয়েছে ম্যাম?”
“বিশ্রী গন্ধে বমি আসছে আমার।”
“বাট ম্যাম এখানে তো তেমন বাজে গন্ধ নেই।”
“আমি পাচ্ছি তো।গাড়ির ঝাঁকুনিতে মাথা ঘুরছে কেমন।”
“আপনার শরীরটা ভালো না ম্যাম।রিকোভার করেছেন রিসেন্টলি।বেড রেস্ট প্রয়োজন আপনার।তার মধ্যেই ধকল যাচ্ছে আপনার।”
“ইটস ওকে রুবি। আই ক্যান ম্যানেজ।”
রুবি কথা বাড়ালো না।পানির বোতল এগিয়ে দিলো।মায়া পানি পান করে।জঙ্গল পেরিয়ে আরেক পিচঢালা রাস্তায় আসলো গাড়ি।যেটা পিছনে থাকা পুলিশদের পিছনে।ওরা জানতেও পারল না ওদেরকে ক্রস করেছে মায়া জারা ও রুবি।অবশেষে পৌঁছে গেলো সোনালী ও বিভান খানের গোপন বাংলোতে।যেখানে আছে গার্ড।জারা সামনের দিকে চোখ রেখে বলে,”ধূর্ত মহিলা সব জায়গায় সিকিউরিটি দিয়ে রেখেছে।”
মায়া ক্লান্ত হয়েও মাথা নাড়িয়ে বলে,”আমাদের এখন পিছন দিক দিয়ে ঢুকতে হবে।”
“আমি আমার গার্ডদের কল করে আসতে বলি।যাওয়ার সময় যেনো ঝুঁকিতে না পড়তে হয়।”
জারা ম্যাসেজ করে দিলো ওপর প্রান্তে।তিনজনে গাড়ি থেকে নামলো।নামার সাথে সাথে দৌড়ে বাংলোর পিছনে চলে গেলো।বড় পাঁচিল দেওয়া আছে।যেটা পার হতে হবে।জারা খুব সহজে লাফ দিয়ে উঠে।রুবি গ্রামে বড় হবার কারণে অভ্যাস আছে এগুলো।তাই খুব সহজে উঠে বসলো পাঁচিলে।মায়া উঠতে নিবে কিন্তু উপরে তাকানোর কারণে মাথা ঘুরে উঠছে।জারা মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”কি হলো?”
“গা কাপছে খুব।”
জারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”আমার হাত ধরো।”
মায়া ধরলো জারার হাত।তাও উঠতে পারছে না। জারা যখন বুঝলো মায়ার শক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব না তখন নিজ শক্তি দিয়ে মায়াকে টেনে তুলতে নেয়।রুবিকে মায়ার আরেক হাত ধরে।তিনজনে একসাথে লাফ দিয়ে বাংলোর বাগানের দিকে এসে পড়ে।মায়া মাথায় হাত দিয়ে চোখটা খিঁচে বন্ধ করে।জারা দেখে বলে,”লক্ষণ ঠিক লাগছে না।তোমাকে গাড়ির ভিতর রেখে আসলেই ভালো করতাম।”
“সমস্যা নেই আমাদের এখন যেতে হবে।”
তিনজনে মিলে গেলো দরজার কাছে।রুবি ছবি দিয়ে বলে,”এই যে চাবি।”
জারা নিয়ে দরজা খুললো।ভিতরে অন্ধকার।কেউ আসেনা তেমন।বাইরেই শুধু গার্ড।ভিতরে আসার প্রয়োজন নেই। বিভান খান নিজেই তো থাকেন না এখানে।আশপাশ থেকে আলো দেখা দিচ্ছে।কাচের জানালা হবার কারণে সুবিধা হলো সবার।ভিতরের দিকে ঢুকে লকার খুঁজছে তিনজনে।আচমকা মায়া ঢলে পড়ল জারার পিঠের উপর।আবার উঠে মাথা চেপে ধরে।জারা পিছন ঘুরে রুবিকে বলে,”তুমি মায়াকে ধরো।আমি দেখছি লকার কোথায়।পাওয়ার সাথে সাথেই কল দিবো।”
মায়া না করলো না।রুবি মায়াকে নিয়ে চেয়ারে বসলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে।কিছুই পেলো না মায়াকে দেবার মত।মায়ার কপালে হাত দিয়ে দেখলো।জ্বর নেই মায়ার।তবুও কেন এতটা দুর্বল।যেভাবে সেলাইন দেওয়া হয়েছে মায়াকে এতটা মাথা ঘোরার কথা না।মাথায় হাত ভর দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে মায়া।শান্তি পাচ্ছে একটু।এভাবেই কাটলো ত্রিশ মিনিট কি তার একটু বেশি সময় ধরে।মায়ার খেয়ালই নেই সে কোথায় আছে?কেন আছে?রুবির কল আসলো।ধরলো কল।ওপাশ থেকে জারা বলে,”সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ঠিক বামপাশের কোনার ঘরটায় আসো।ওখানেই লকার আছে।”
“ঠিক আছে।”
রুবি কল কেটে মায়াকে আলতো ধাক্কা দিয়ে ডেকে বলে,”ম্যাম।”
মাথা ঘুমঘুম চোখে চোখ মেলে তাকাতেই রুবি বলে,”লকার পেয়েছে জারা ম্যাম।”
মায়া উঠে দাঁড়ালো।একটু ভালো লাগছে এখন।অল্প সময়ের ঘুম দিয়েও ফ্রেশ লাগছে মাথা।রুবির সাথে সাথে গেলো লকারের কাছে।এসেই দাঁড়ালো জারার পিছনে।জারা মুখটা শুকনো করে বলে,”পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে তো।”
রুবি অসহায় চাহনি দিয়ে বলে,”এত প্ল্যান করে এতদূর এসে হার মেনে নিবো?”
তিনজনেই ভাবুক হয়ে আছে।এর মাঝেই কোনো বুদ্ধি না পেয়ে মায়া বলে,”একটাই উপায় আছে।”
জারা ও রুবি প্রশ্নসূচক চাহনি দেয়।মায়া বলে,”লকার ভাঙতে হবে।”
“ইটস ক্রাইম ইউ নো মায়া।”
“জারা আমরা কেউই এখন আইনি কাজ করছি না কিন্তু আইনকে রক্ষা করছি।তাই এটাই আমাদের শেষ উপায়।”
জারা আশেপাশে তাকালো।কোনো অস্ত্র পেলো না।বাইরে আসলো কিছু একটা খুঁজতে।বাইরে এসে খোঁজ করতেই হাতুড়ি দেখতে পায়।হাতুড়ি এনে লকারের মজবুত তালা যেটার পাশেই পাসওয়ার্ড দেওয়া ওখানে বাড়ি দেয়।কিছুক্ষণ পর ভেঙে গেলো তালা।শব্দ হলো পাসওয়ার্ডের স্থানে।বেশ জোরেই শব্দ কিন্তু বাংলোর বাইরে না।রুবি উকি দিয়ে দেখলো কোনো গার্ডের এদিকে ঝোঁক নেই।তারমানে তারা শব্দ পাচ্ছেনা।রুবির ইশারা পেয়ে জারা লকার খোলে।কয়েকটা বক্স দেখা গেলো সেখানে।জারা বক্সগুলো বের করে ভিতরে হাতড়ালো।অবাক হয়ে ফোন নিয়ে ভিতরে লাইট দিলো।পুরো লকারে এই বক্স ছাড়া কিছুই নেই।বক্সে আছে শুধু গহনা।যেগুলো জারার মায়ের।গহনা দেখে জারা বলে,”এগুলো আমি আমার মাকে পড়তে দেখেছি।
প্রত্যেকটা ছবিতে এই গয়নাগুলো শাড়ির সাথে মিলিয়ে পড়ত।”
একটু ইমোশন হয়ে গেলো জারা।কান্না থামিয়ে বলে,”কিন্তু ফর্মুলা কোথায়?”
জারার কথা শুনে মায়া অবাক হয়ে বলে,”এর ভিতরেই তো আছে।”
“লকার ফাঁকা।”
মায়া এবার রুবির দিকে ফিরে তাকালো।সন্ধিহান নজরে তাকালে রুবি ঢোক গিলে বলে,”আমি ওদের মা ছেলের সমস্ত কথা শুনছিলাম ম্যাম।এখানেই এই বাংলো আর এই লকারে রেখেছে ফর্মুলা।ডকুমেন্ট আছে সরদার মহলে।যেটা আদায় করতে গেলে সরদার মহলের প্রোপার্টি ও বাড়ির ডিজাইনের পেপার লাগবে।যেগুলো সব একসাথে শাহমীর রাজের নামে।ওগুলো নিজের আয়ত্তে করতে হলে স্যারকে প্রয়োজন। স্যার অতি সহজে দিবেন না বলেই তো সোনালী একবার জারা ম্যামের সাথে স্যারের বিয়ে দিতে চান আবার আরেকবার আমার সাথে।কারণ আমাকে মোহনা ভেবেছিল।মোহনা পারবে স্যারকে নিজের করে প্রোপার্টি দিতে।মহসিন সরদার যে এটাই চেয়েছেন।আমি সত্যি বলছি ম্যাম।আমার শোনা প্রত্যেক গোপন কথা আমি আপনাকে বলেছি।কোনো কথা গোপন করিনি।”
মায়া নিজেও ভাবছে।আসলেই রুবি কিছু গোপন করেনি।কারণ কাল যখন মিহির তার ঘুমের সুযোগ নিয়ে সোনালীর সাথে কথা বলে তখন স্পষ্ট শুনতে পায়,”ফর্মুলার দলিল পাওয়ার আগে ফর্মুলা তোমাদের বাংলো থেকে সরিয়ে দেও মম।রিক্স আছে ওখানে ফর্মুলা থাকলে।”
তাহলে রুবির পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভব না।মায়া একটু ভেবে বলে,”এই কাজটা কে করতে পারে?সোনালীর অবস্থা এমনিতেই ভালো নেই।আমাদের কাছে বন্দী ও।মিহিরকে নিয়ে মোহন সরদার হাসপাতালে যায়।রাস্তায় মোহন সরদার ঘুমিয়েই পড়েছে কারণ সেও তো শরবত খেয়েছিল।ওখান থেকে আমরাই মিহিরকে কিডন্যাপ করিয়ে অন্য জায়গায় রেখেছি।তাহলে অবশিষ্ট আছে মন্ত্রী মশাই।তাহলে কি মন্ত্রী মশাই এই ফর্মুলা নিজের ট্যাকনিকে নিবে বলেই সোনালীকে সুরক্ষিত রেখেছিল?”
জারা একটু ভেবে বলে,”ব্যাপারটা যদি ফর্মুলা হয় তাহলে আমরা কেন জানবো না?”
“কারণ খেলাটা তো শুরু থেকেই দুইদিক থেকে চলছে।এই যেমন আমি ছোট থেকেই মন্ত্রী মশাইকে সহ্য করতে পারিনা।আমি তো সঠিকটা জানতাম না।বিয়ের পর অনেক তদন্ত করে জেনেছি।আজ পর্যন্ত নিজে থেকে মন্ত্রী মশাই আমার কাছে কোনো কিছুই মুখ ফুটে বলেনি।না বলেছে তাজের কথা আর না বলেছে দাদুর আর না তার বায়োলজিক্যাল মায়ের কথা।সবকিছু নিজের থেকে করে গেছে।এমনকি আমাকে সুরক্ষিত রেখেছে পর্যন্ত আমাকেই জানতে দিলো না।এই লোকটা আসলে চায় কি?”
“তোমার মন্ত্রী মশাই তোমাকে সাহসী দেখতে চায় সেই সাথে তোমাকে সুরক্ষিত।তোমার মন্ত্রী মশাই চায় সে তার মায়াবতীর ইচ্ছা নিজে পূর্ণ করবে।মায়াবতীর গায়ে যেনো একটা আঁচড়ও কেউ না কাটে সেদিকে তার নজর।খুব কঠিনভাবে আগলে রেখেছে তোমার মন্ত্রী মশাই তোমাকে।”
মায়া সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে টাকায় জারার দিকে।জারা স্মিত হেসে বলে,”ভালোবাসা আমার মাঝে কাজ না করলে আমি এসব বুঝতাম না। হ্যান্ডসামকে যদি আমি ভালো না বেসে জাস্ট ইউজ করতাম তাহলে আজও আমি তোমার মন্ত্রী মশাইয়ের ভালোবাসাটা বুঝতাম না।আমিও বুঝতে পারি প্রিয় মানুষের থেকে কিছু চলে যাওয়াটা কতটা কষ্টের।এই যেমন আমি তোমার ভাইয়ের থেকে তার বাবাকে আলাদা করে দিবো।নিজের হাতে খুন করার স্বপ্ন দেখছি নিজের শ্বশুরকে।মুখ ফুটে তোমার ভাইকে বলতেও পারছি না যে আমার উদ্দেশ্য কি।আমি কেন এত উতলা ওই দিনটার জন্য।কারণ আমি সবকিছু করতে চাইলেও আমার এই বাম পাশের যে স্থান ওখানে চিনচিন ব্যাথা করে।লোকটা খুব কষ্ট পাবে যখন সে তার বাবার লাশ দেখবে তাও কিনা খুনি হিসেবে তারই জানেমান থাকবে।”
জারা ডুকরে কেঁদে দেয়।নিচে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,”আমি পারবো না আমার মায়ের ধর্ষিতাকে জীবিত দেখতে।তোমার ভাই আমাকে সুখে রাখলেও আড়ালে রাখলেও আমি সুখে থাকতে পারবো না নিজের মায়ের কথা ভাবলে।তোমার ভাই আমার জীবনে আসার আগে আমার বাবা মাই তো পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।আমি তো তাদের অবদান ভুলতে পারবো না।আমি এতটাও বাজে মেয়ে না যে নিজের বাবা মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবে না।আমাকে তো পারতেই হবে।আমার স্বামীর চোখে পানি দেখলেও আমাকে পারতে হবে।যদি হাত কেঁপে ওঠে তুমি আমাকে সাহস যুগিয়ে দিবে তো মায়া?ঠিক যেমনটা প্রথমদিন আমার মায়ের ব্যাপারে জানিয়ে আমাকে আগলে নিয়েছিলে যেমনটা মৌকে আগলে রাখো।”
মায়া জারার গালে হাত রেখে নরম কণ্ঠে বলে,”তুমি মেয়েটা একদম বাজে না।তুমি পরিস্থিতির স্বীকার।তোমার বাবা মায়ের খুনিকে তো তুমিই শাস্তি দিবে।এটাই তো একজন আদর্শ সন্তানের কাজ।আমি যেমন আমার মাকে যে খুন করেছে তাকে বাঁচতে দিতে চাইনা তুমিও ঠিক তাই করবে।ওরা দুজন যেমন আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে ঠিক তোমার থেকেও সব কেড়ে নিয়েছে।আমি তোমাকে আগলে না নিলে হয়?”
রুবি ঘৃণাভরা কণ্ঠে বলে,”এই দুজন ব্যাক্তি এত নিকৃষ্ট ভাবতেই গা গুলিয়ে আসছে।আমি না নাটক সিনেমায় এমন বহুবার দেখেছি।বাস্তব জীবনেও দেখবো কোনোদিন ভাবিনি।সবসময় ভাবতাম এগুলো বাস্তবে হয়ই না।এগুলো জাস্ট এ ফিল্ম।নিজের চোখের সামনে যখন দেখছি বাস্তবতা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি।হ্যাঁ পাপ করেছিলাম কিন্তু সন্তান তো হারিয়েছি।যেটা ওই মিহির আর সোনালীর জন্যই হারিয়েছে।আমি কল্পনাও করিনি আমার যে সন্তান আসবে সে এভাবে আমার থেকে হারিয়ে যাবে।ছোট থেকেই আমি চাইতাম বিয়ে করে বাচ্চা নিয়ে তার গুটি গুটি হাত ধরে এই পৃথিবী দেখবো।সব কেড়ে নিলো।আমাকে ধোঁকা দিলো আমার থেকে বাচ্চাটাকে কেড়ে নিলো।একটাবার বলে দেখতো আমি দূরে সরে যেতাম।না তা করেনি।আসলে ওরা জানে কিভাবে মানুষের থেকে কেড়ে নিতে হয়।আমরাও ওদের থেকে কেড়ে নিয়ে সেই একই আঘাত করে দেখিয়ে দিবো।ম্যাম একদম ঠিক বলেছিলেন।ওদের প্রথম শাস্তি ওদের কর্মফল ওদেরকে ফেরত দেওয়া তারপর শেষ করে দেওয়া।”
মায়া চোখের পানি মুছে ভাবছে,”ফর্মুলা কোথায় তাহলে?”
জারা চোখের পানি মুছে উঠে দাড়িয়ে বলে,”আমার মনে হয়না রাজ বীর বা কেউই এই ফর্মুলা নিয়েছে।যদি নিয়ে থাকে তাহলে ওটা আমাদের শিওর করে রাখতে হবে।ওরা তো ওদের জিনিস সেফ রাখবে।আমাদের নাহয় পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।”
“ডকুমেন্ট সম্পর্কে মন্ত্রী মশাই কিছুই জানে না জারা।কারণ মন্ত্রী মশাই সেদিন এটাও বলেছে ডকুমেন্ট কোথায় এটা নাকি মা বলার আগেই চোখ বুজে নেয়।”
“তাহলে দ্রুত চলো ওই বাড়িতে।বিভান খান আসার আগেই আমাদের ডকুমেন্ট নিতে হবে।বিয়ের সময় ওই বাড়ি তোমার নামেই তো করা হয়েছে।তাই তুমি চাইলেই কাল বাড়ির দলিলপত্র দেখতে পারবে।”
“আমিও এটাই ভাবছিলাম।বাড়ির দলিল দেখতে পারবো কিন্তু এটা শিওর করবো কিভাবে যে ফর্মুলা কার কাছে?”
“আগে যেতে হবে আমাদের।কিন্তু এখন আমরা পিছনের গেট থেকে যাবো না।”
“তাহলে?”
“সদর দরজায় চোখ রাখো।”
মায়া জানালার বাইরে চোখ রাখতেই দেখে জারার গ্যাং চলে এসেছে।ওরা সবাইকে স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে দিচ্ছে।মায়া হাসলো শুধু।তিনজনে চলে গেলো বাড়ির আড়ালে রাখা গাড়ির দিকে।গাড়িতে উঠে পানি পান করে মায়া।
সকাল ছয়টা এখন।চারিদিকে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে।সবকিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।জারা গাড়ি থামিয়ে শুকনো ঢোক গিলে।মায়া মৃদু হেসে বলে,”ভাইকে এত ভয় পাও?”
“তোমার ভাইকে ভয় না পাওয়ার একটা দিক দেখাও তো।একটু হলেই যেভাবে গলা চেপে ধরে নিশ্বাস মনে হয় চলেই যাবে।”
রুবি অবাক হয়ে বলে,”আপনি কিছুই বলেন না?”
“উহু।”
“কেন?”
“কারণ লোকটা আমাকে রেগে আঘাত করলেও আমাকে জানে মেরে ফেলার মত মনোবল শক্তি সে রাখেনা।কারণ আমি তো তার একমাত্র জানেমান।”
তিনজনে মৃদু হেসে গাড়ি থেকে নামে।মায়া নেমেই রুবির দিকে তাকালো।রুবি বলে,”আমি ভিতরে যাচ্ছি না।তাজ আসবে একটু পর।ওকে নিয়েই ভিতরে যাবো।”
“তাজকে বলেছো তো মিহিরের নাম নিয়ে কীভাবে থাকতে হবে?”
“বলেছি তো সবকিছু।বিভান খান এবার বুঝুক তার সন্তানের থেকে লাথি খেতে কেমন লাগে।যদিও সে আপন সন্তান না।রূপটাই নিয়েছে জাস্ট।”
মায়া মৃদু হেসে জারার সাথে ভিতরে ঢুকছে।ভিতরে এসে দুজনে অবাক।রাজ আর বীর বসে আছে সোফায়।দুজনের চোখ লাল।রাজ সাদা পাঞ্জাবি পরে আছে আর বীর কালো স্যুট।মায়া ও জারা দাড়াতেই বীর উঠে এসে জারার কোমড় চেপে ধরে।জারাকে কাঁধে তুলে হাঁটতে থাকে গেস্ট রুমের দিকে আর বলে,”আমারটাকে আমি দেখছি তোরটাকে যেনো আবার মিনি বিড়াল সেজে ছাড় দিবি না।বউগুলো একটু বেশীই বেরেগেছে।অবাধ্য হতে থাকলে খাঁচার পাখি কিভাবে খাঁচায় আনতে হয় দেখিয়ে দিবি।”
মায়া হা করে দেখছে আর বলে,”আমি তোমার বোন হই।”
“স্বামীর অবাধ্য মেয়ে আমার বোন হলেও লাভ নেই।বোন তো একজন আছেই সাথে বউও আরেকজন।দুজনেই এক দল হয়ে আমাদের জীবন ঝালাপালা করে দিলো।”
মায়া আরও কিছু বলতে নিবে রাজ মায়ার বাহু চেপে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শাসনের সুরে বলে,”আব্বে এই মায়াবতী!তোমার সকল ইচ্ছা পূরণ করবো বলেছিলাম তাই বলে আমাকে টপকে চলে যাওয়ার কথা তো বলিনি।”
“মন্ত্রী মশাই আমার হাতে ব্যাথা করছে।এমনিতেও আমার শরীরটা আজ দুর্বল লাগছে।”
“আর এই দুর্বল শরীর নিয়ে তুমি এতকিছু করলে!”
“কি করতাম আমি?আপনি কেন সোনালীকে বাঁচাতে চান?”
“কারণ তুমি সেদিন সোনালীকে খুন করতে চেয়েছিলে তাই।”
“হ্যাঁ চেয়েছিলাম কারণ সোনালী আরশাদের সাথে মিলেই ধর্ষনের সাথে জড়িত ছিলো।ওর নাম ধামাচাপা কারণ বাকিরা ওর ইনস্ট্রাকশনে চলে।ওর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছিলো না।আমি কোনো অন্যায়কারীকে সমর্থন করবো না।”
“আইন আছে আমি আছি তুমি কেন ওকে নিজের হাতে শাস্তি দিবে?”
“আপনার আইনকে আমি ঘৃণা করি।সবাই স্বার্থপর।আইন শুধু মুখে মুখে।কাজে ঘোড়ার ডিম।”
“সোনালী এখন কোথায়?”
“জাহান্নামে সে।”
“আমি কিন্তু সিরিয়াস।”
“আমিও সিরিয়াস তাই বলছি বলব না।”
“দেখো এখনও অনেক হিসাব বাকি আছে আমার।ওকে প্রয়োজন আমার।তুমি ওর কোনো ক্ষতি করবে না।”
“কিসের হিসাব মন্ত্রী মশাই?”
“কারণ হলো ওই সোনালীর ….
পায়ের শব্দে থেমে গেলো রাজ।পাশ ফিরে দেখে মালিনী এসেছে।থেমে গেলো রাজ।উপরের দিকে চোখ রেখে দেখে সিসিটিভি ক্যামেরা।এই ক্যামেরার ফুটেজ কোথায় রাজ জানেনা।ফুটেজ সম্পর্কে জানতে পারে রুদ্র।তাও এই তিনদিন হলো।তাই তো মায়াকে নিজের সিক্রেট মিশন সম্পর্কে বলতে পারছে না।এর মধ্যেই মায়া মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নেয়।রাজ আগলে নেয় নিজের বক্ষে।মালিনী দৌড়ে আসে।রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমি ডাক্তার ডাকছি।”
“কোনো দরকার নেই আপনার।আপনি রিল্যাক্স থাকুন।আমি দেখছি ব্যাপারটা।”
“আমি তোমার মা হই রাজ।”
রাজ বরাবরের মত প্রতিবাদ না করে মায়াকে কোলে নিয়ে চলে গেলো উপরে।রুদ্রকে জানিয়ে দিলো ডাক্তার আনার জন্য।মালিনী দাড়িয়ে আছে দরজার কাছে।রাজ দেখেও কিছু বলছে না।
জারাকে ঘরে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিল বীর।জারাকে নামিয়ে দিয়ে কোর্ট খুলে নিচে ফেলে।জারার বাহু চেপে বিছানায় শুইয়ে দেয়।জারা কোনো ভাবভঙ্গি দেখালো না বরং নীরব আছে।বীর জারার টুটি চেপে ধরে দাঁত কটমট করে বলে,”সাহস একটু বেশীই হয়েছে তাইনা আমার মাফিয়া কুইন।”
জারা মৃদু হেসে বীরের নাক বরাবর চুমু খেলো।বীর অবাক হলেও ধরে নিলো এটা জারার নতুন চাল।কিন্তু জারা বেশিদূর ভাবতে না দিয়ে বীরের অধর নিজের আয়ত্তে করে নেয়।বীরের হাত জারার কোমড়ে।জারা এক এক করে বীরের শার্টের বোতাম খুলতে থাকে।বীরের উন্মুক্ত লোমশ বুকে হাত দিয়ে স্লাইট করছে জারা আর অধরের স্বাদ নিতে থাকে।বীর চুপচাপ জারার কান্ড দেখছে।বীরের অধর ছেড়ে দিয়ে জারা বলে,”আই নিড অ্যা জুনিয়র হ্যান্ডসাম।প্লীজ গিভ মি।”
বীর রক্তিম চোখ দিয়ে জারার মুখটা দেখতে থাকে।জারা মুখে হাসি ধরে রেখে বলে,”দিবেনা?”
বীর উঠতে নিবে জারা আবারও বীরের মাথাটা ধরে অধর ছুঁয়ে দেয়।এতদিন মাফিয়া কিং তার মাফিয়া কুইনকে নিজের করতে চাইতো আজ মাফিয়া কুইন তার মাফিয়া কিংকে নিজের করছে।বীর বাঁধা দিলো না আর।
ডাক্তার এসেছে মাত্র।মায়াকে চেক করে বলে,”ওনার শরীর তো অনেক দুর্বল।খাওয়া দাওয়া কিছুই তো করেন না।প্রেগন্যান্সি ওমেন এভাবে চলাফেরা করলে তো রক্তশূন্যতায় ভুগবে।”
রাজ ভ্রুকুটি করে বলে,”প্রেগন্যান্সি ওমেন!”
“ইয়েস,আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট।আপনি বাবা হতে চলেছেন।”
ডাক্তার আসার আগেই মায়ার মুখে পানি দিয়ে মায়ার জ্ঞান ফেরানো হয়।তারপর মায়ার থেকে সব শুনে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে স্টিক দিয়ে।যেটা দেখেই ডাক্তার রাজকে ডাক দেয়।রাজ এতক্ষণ বাইরে ছিল।ভিতরে এসে এগুলো শুনে অবাক হলো।মিনিট দুই পরে চেঁচিয়ে বলে,”আব্বে ব্যাটা রুদ্র দ্রুত ভিতরে আয়।তুই কাকা হবি আমি বাবা হবো।”
রাজের কথা কর্ণপাত হতেই দৌড়ে আসে রুদ্র।ভিতরে ঢুকেই দেখে রাজের মুখে এক চিলতে হাসি।মায়া নিজেও হাসছে।রুদ্র কাকা হবে ভাবতেই খুশিতে কল দিলো ব্যান্ড পার্টিকে।তারপর রাজের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে রাজকে।আনন্দের সাথেই বলে,”কংগ্রাচুলেশন ব্রো।”
ডাক্তার উঠে দাড়ালো,” ওনার শরীরের অবস্থা একদমই ভালো না।যতটুকু বুঝলাম ওনার শরীরে ঘাটতি আছে।যথেষ্ঠ যত্নের প্রয়োজন তার।প্রেশার নেই একদম সাথে রক্তশূন্যতা।ওনার প্রপার টেক কেয়ার প্রয়োজন।”
সাথে কিছু ঔষধ লিখে দিলো ডাক্তার।রুদ্র ওটা নিয়ে বাইরে বের হয়।মালিনী হালকা হেসে মায়ার কাছে এসে বলে,”আমি তোমাদের বাবার কাছে জানিয়ে দিচ্ছি।তোমরা রেস্ট নেও।”
মায়া সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখছে।রাজ একবারের জন্যেও তাকালো না মালিনীর দিকে।ছোট্ট থেকেই রাজ মালিনীর দিকে সেভাবে আগ্রহ নিয়ে তাকায় না।অসম্মান করেনি কিন্তু মা বলে দাবি করেনি।ছোট রাজকে আগলে নিলে হয়তো এই দিন মালিনী দেখতো না।শাহানা পারভীনের মতোই রাজের মনে একটা ছোট্ট জায়গা করে নিতে পারতো মালিনী।এই সম্পর্ক গড়ার মানসিকতা মালিনীর ছিলই না।তাই তো আজ এরা দুজন দুজনকে এড়িয়ে চলে।
ঘণ্টা কিছুক্ষণ যেতেই বাড়িতে ব্যান্ড পার্টির শব্দ পাওয়া যায়।রুদ্র দুইহাত উপরে করে কোমর দুলিয়ে ব্যান্ড পার্টির সাথে নাচতে নাচতে ভিতরে আসে।সাথে আছে মায়ার জন্য ঔষধ।মেইন গেটে গাড়ি থামলো।সেই গাড়ি থেকে বের হলো মৌ ও পিয়াশ।রাজ জানিয়েছে দিয়েছে ওদেরকে।মৌ এসেই রুদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলে,”আপু সুস্থ আছে রুদ্র ভাই?”
“সুস্থ বলতে যা ধকল গেছে তাতে আহামরি কোনো ডেভেলপ না হলেও মা হবার আনন্দে এখন শান্তিতে আছে ভাবীজী।ভিতরে চলো দেখা দিয়ে আসি।”
মৌ খুশিতে যেই নাচতে নিবে পিয়াশ মৌয়ের হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বলে,”নিজের পেটের দিকে একবার তাকাও।ওটাকে আসতে কিন্তু আর মাত্র তিনমাস।ডাক্তার বলেছে বেশি ভার নিলে বা লাফালাফি করলে তার আগেই সিজার করতে হবে।”
মৌ থেমে গেল।রুদ্র এখনও নাচতে থাকে আর ভিতরের দিকে যেতে থাকে।নিজ ঘরে থেকে ব্যান্ড পার্টির শব্দে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় হাত উঁচিয়ে নাচতে থাকে মন্ত্রী।মায়া বুকে হাত ভাঁজ করে বলে,”এটা কেমন পাগলামো মন্ত্রী মশাই?”
“পাগলামো না মায়াবতী।বাবা হবার আনন্দ এটা।”
“আপনি বাবা হতে চলেছেন মানে বুড়ো।”
“বাবা হলেই কি সে বুড়ো হয়ে যায়?”
“আপনার মতে কি না বলে?”
“একদমই,বুড়ো তো হয় মনের দিক থেকে। বাবারা কখনও বুড়ো হয়না।”
মায়া সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখছে।রাজের মনে আজ ফুর্তি জেগেছে।থামানো উচিত হবেনা মায়ার।
ব্যান্ড পার্টির এই শব্দে বিছানা থেকে তড়িৎ গতিতে উঠে বসে বীর জারা।দুজনেই নগ্ন হয়ে বসে আছে।গায়ে একটি ব্ল্যাঙ্কেট জড়ানো।জারা ভ্রুকুটি করে বীরের দিকে ফিরে তাকায়।কি হয়েছে বুঝতে না পারলেও মজা করে বীরকে বলে,”আমাদের আজ ফার্স্ট কমপ্লিট ডে উপলক্ষে ব্যান্ড পার্টি এনেছে নাকি?”
বীর রক্তিম চাহনি দিয়ে বলে,”হোয়াট ডু ইউ মিন?”
“আজ আমাদের ফার্স্ট সানডে মানডে ক্লোজ হলো তো তাই বললাম।”
বীর উত্তর না দিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।শাওয়ার নিয়ে বের হতেই জারা চলে গেলো।দুজনে একসাথে বাইরে এসে দেখে রুদ্র নাচতে থাকে। জারাও কিছু না জেনে নাচতে শুরু করে।বীর পাশে তাকিয়ে জারার দিকে এক ভ্রু উচু করে।জারা পিংক গাউন পরে আছে।রুদ্রের দেখা দেখে নাচতে নাচতে রুদ্রের কাছে গিয়ে বলে,”এত নাচানাচির কি আছে?”
“আমি কাকা হবো সেই খুশিতে।”
জারা ভেবে নিলো আদ্র বাবা হবে।থেমে গিয়ে বড় একটা হা করে বলে,”বিয়ের আগেই বাবা হয়ে গেলো আদ্র ভাই।এত ফার্স্ট!তার থেকেও তো দেখছি তুমি ফার্স্ট।”
মায়ারাজ নিচে নেমে এসে জারার এহেন কথা শুনে থ হয়ে গেলো।রুদ্র নিজেও নাচ থামিয়ে অবাক হয়ে বলে,”এহ!”
“বিয়ের আগেই আদ্র ভাইয়ের বেবীকে কি আহান আংকেল একসেপ্ট করবে?”
“আমার অবিবাহিত ভাইয়া বাবা হতে যাবে কোন দুঃখে?আমার যে ভাই বিবাহিত সেই ভাই আগে বাবা হবে।মানে তোমার বেবী বাবা হতে চলেছে।”
জারা পিছন ঘুরে মায়ারাজকে দেখে।মৌ এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরে আনন্দের সাথে।জারা মুখে দুষ্টু হাসি রেখে বলে,”রিয়েলী বেবী!তুমি বাবা হতে চলেছো?”
রাজ মিনমিন করে বলে,”মাফিয়ার বউ হয়েও কেমন সাহস নিয়ে বেবী বলে এই মেয়ে!আসলেই দম আছে এর।বাবা ঠিকই বলে এটা একটা নাগিন।”
জারা মৃদু হেঁসে বীরের দিকে ফিরে বলে,”আমার বেবীর বেবী আসবে।মিষ্টি খাওয়াবে না হ্যান্ডসাম?”
বীর দাঁত কটমট করে বলে,”তোমার বুইড়া বেবীর বেবী আসাতে মিষ্টি তো সেই খাওয়াবে তবে আমি তোমাকে চল্লিশা খাওয়াতে প্রস্তুত আছি জানেমান।”
রুদ্র ঢঙ্গী ভঙ্গিতে বলে,”ওহ প্লীজ ব্রো এই সময় চল্লিশা নয় বরং টক খাওয়ার কারণ হও।অন্তত বেবী হিসেবে কোনো বুড়োকে চুজ না করে তোমার বউ কোলে থাকা মুতু করা বাবুকে দেখবে।”
হেঁসে দিলো সবাই।মায়া রাজের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”দেখেছেন তো?বাবা হবার খবর আসতে না আসতেই আপনি বুড়ো হয়েগেছেন।”
“সবে তো একটা সন্তানের বাবা হবার খবর দিলাম এখনও আরো বাকি আছে মায়াবতী।তারাও আসুক তারপর নাহয় বুড়ো হয়েও তোমাকে নিয়ে বাথরুম বিলাসে পারি দিবো।”
মায়া মুখটা পাংশুটে করে সোফায় বসে।মৌ মায়ার পাশে বসে বলে,”কিছু লাগবে আপু?”
মাহমুদ সরদার এলেন বাড়িতে।মায়াকে দেখে বলে,”কেমন লাগছে তোমার?”
মায়া শুধু চাইলো মাহমুদ সরদারের দিকে।মাহমুদ সরদার স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,”কালকের ব্যাপার ভুলে যাও।ওটা জাস্ট একটা দুঃস্বপ্ন ধরে নেওয়া হোক।”
মায়া কথা পাল্টিয়ে বলে,”আপনি কোথায় ছিলেন?”
“বাবা আর রোহিণীর কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম।”
রুদ্র এসে মাহমুদ সরদারকে মিষ্টি খাওয়ালো।মাহমুদ সরদার বলেন,”মিষ্টিও রেডি?”
“সবকিছুই রেডি বড় বাবা।মালিনী এসে দাড়ালো এক কোনায় জানালো,”ভাই আসবে কালকে।বীর আজকে আমাদের এখানেই থাক।ভাই নাহয় আমাদের এখানেই থাকলো।”
জারা একবার মায়ার দিকে মৃদু হেঁসে তাকালো।মায়া নিজেও ঘাড় কাত করে হালকা হেঁসে ইশারা করে কিছু।রাজ আর বীর একসাথে দাড়িয়ে ছিল।রাজ দাড়ি চুলকে বীরের কাছে এসে বলে,”মেরা বিবি হাঁসি,তো হাম লোগ ফাঁসি।”
“আমারটাও কিছু একটা পাকাচ্ছে বুঝলি?”
রুদ্র পাশ থেকে বলে,”তোমাদের গুলো তো তাও সামনে উপস্থিত থেকে কিছু পাকাচ্ছে আমারটা কোথায়?”
“তোর হবু শাশুড়ি জানে।আমরা কি জানি?”
“এটা শাশুড়ি নাকি কুচক্রি এটাই তো বুঝিনা।”
“যেটাই হোক ডালমে কুছ কালা হে।নাহলে এই একটা যুদ্ধে তিনটা দল কখনও ভাগ হয়ে যায়না।একটা হলো ফর্মুলা চোরের আরেকটা আমাদের বউদের আরেকটা আমরা অসহায় স্বামীদের।”
রুদ্র ও বীর একসাথে মাথা উপর নিচ করে বলে,”হুমমম।”
রাতের বেলা মায়া বসে আছে অফিসের কাজ নিয়ে।ল্যাপটপে ডিজাইন দেখতে ব্যাস্ত।রাজ ব্যাস্ত নিজের ফোন নিয়ে।মায়ার কাজ শেষ করে পাশ ফিরতেই রাজকে মনোযোগ দিয়ে ফোনে কিছু দেখতে দেখে বলে,”কি দেখছেন মন্ত্রী মশাই?”
“দেখছি মানে উপায় খুজছি।”
“কিসের?”
“প্রেগনেন্ট অবস্থায় বাথরুম বিলাস করা সম্ভব কিনা এগুলো আর কি।”
“হোয়াট?”
“বউকে বক্ষে নিয়ে বাথরুম বিলাস করতে না পারলে আমার দিন ভালো যায়না মায়াবতী।”
“আমাদের জুনিয়র আসতে চলেছে মন্ত্রী মশাই।”
“হ্যাঁ তো জুনিয়র আসার পরও আরো জুনিয়র আসবে।একটা জুনিয়র দিয়েই কি আমার বংশের বৃদ্ধি পূর্ণ হয়ে যাবে?”
“কয়টা জুনিয়র লাগবে শুনি?”
“কম হলেও দুটো।”
মায়া চোখ অন্যদিকে তাকালো।ল্যাপটপ টেবিলের উপর রেখে বিছানায় বসলো।রাজ এসির পাওয়ার বাড়িয়ে ব্ল্যাংকেট জড়াতে নিবে ওমনি শুনতে পায় বাবা মায়ের চিল্লাচিল্লি সেই সাথে ভাংচুরের শব্দ।মায়া রাজ দুজনেই একটু অবাক হয়ে উঠে দাড়ালো।রাজ দরজা খুলে নিচে উকি দিতেই দেখে মাহমুদ সরদারের ঘরে দরজা খোলা।হুট করে একটা সোপিজ এসে বাইরে টুকরো হয়ে গেলো।যেটা ছুঁড়ে মারে মালিনী।মাহমুদ সরদার চিৎকার করে বলেন,”পাগল হয়েছো তুমি?পাগলা গারদে কল দিবো কি?”
মালিনীও বলে ওঠে,”হ্যাঁ তাই করো।তোমার মতলব আমি বুঝিনা!সুস্থ আমিটাকে অসুস্থ বানিয়ে পাগলা গারদে রেখে তুমি অন্য নারী নিয়ে মনোরঞ্জন করবে।”
মাহমুদ সরদার ফুঁসে উঠে বলেন,”মুখ সামলে কথা বলো নাহলে কিন্তু এই বয়সে আমার হাত চলবে।বাড়িতে আমাদের বাচ্চা কাচ্চারা থাকে।নিজের সম্মান ধরে রেখো।”
মাহমুদ সরদারের কথা শুনে স্পষ্ট বোঝা গেলো তিনি হাপাচ্ছেন এবং খুবই রেগে আছেন।বাবা মায়ের ব্যাপারে বামহাত ঢোকানো উচিত না কিন্তু এখন ওদিকে না গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।বিশেষ করে মালিনী কোনো অঘটন ঘটাকে বিপদ আছে।রাজ একটু ভেবে পা আগাতেই দেখে মৌ ও পিয়াশ দরজা খুলে বাইরে এলো।মিলি ফোলা ফোলা চোখে বাইরে এসে দেখছে।রাজ এই প্রথম একটু লজ্জা পেলো যেনো।স্বামী স্ত্রীর মনোমালিন্য জনসম্মুখে যাওয়াটা লজ্জাজনক ব্যাপার তাও আবার সেই ব্যাপারটা বাবা মায়ের ক্ষেত্রে।মিলি বিষন্ন মনে বলে,”কি হচ্ছে বাড়িতে?প্রথমে হিয়াকে খুঁজে পাওয়া গেলো না।এখন মম ও ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।বাবা অজ্ঞান হয়ে বাড়িতে সেই যে এসেছে এখনও নিজের ঘরে ঘাপটি মেরে বসে আছে।এখন আবার এরা কি শুরু করলো?বাড়ির উপর এমন অশান্তি হঠাৎ কেন আসতে গেলো?”
মিলির কান্না দেখে রাজের মন নরম হলো।ওদিকে মালিনী এখনও চিৎকার করছে।তার হারিয়ে যাওয়া সন্তানের কথা উল্লেখ করে মাহমুদ সরদারকে কথা শুনিয়ে দিচ্ছে।মিলির কান্নার গতি আরো বাড়লো।মায়া এসে জড়িয়ে ধরে বলে,”সব ঠিক হয়ে যাবে মিলি।”
মিলি কালকের ঘটনা কিছুই জানেনা।মায়া ইচ্ছা করেই তারেককে বলে মিলিকে নিজের সাথে ব্যাস্ত রাখে।তাই মায়ার নাটক সম্পর্কে অবগত না মিলি।গ্লাস ভাঙার আরেকটা শব্দ আসতেই কেঁপে ওঠে মিলি।আরেকটা ঘর থেকে বের হয়ে আসে বীর জারা।ওপর পাশের ঘর থেকে সিয়াও ফোলা চোখে এসে মিলিকে সামলে নেয়।সিয়াও কিছু জানেনা।এখন বাবা মায়ের এসব কান্ডে মায়ের উপর রাগ বাড়ছে সিয়ার।তার মা যা শুরু করেছে এতে মায়ের জীবনে বড় বিপদ আসতে চলেছে।মায়া যদি একবার জানতে পারে মালিনী তার জীবনের আরেক শত্রু তাহলে হয়তো সোনালীর মতোই মালিনীকে গুম করে দিবে।ভয়তে সিয়া আর মালিনীর কথা বলেনি মায়ার কাছে।শত হোক মা হয়। মাকে হারানোর ভয় সন্তানের আছে।রাজ সবাইকে দেখে বলে,”আমি নিচে যাচ্ছি।”
রাজ হাতা গুটিয়ে নিচে নামছে।মায়া নিচে নামতে নিলে দেখলো রুবির ম্যাসেজ,”সরি ম্যাম আজকে তাজের জ্বর আসে হঠাৎ।মাত্রই তো এক্সিডেন্ট হয়ে আবার সার্জারি হলো।তাই দুর্বল শরীরে জ্বর আসছে।এখন সুস্থ আর স্বাভাবিক আচরণে আছে কিছুটা। কাল আসবে সরদার মহলে।”
মায়া লিখে দিলো,”আমি জানানোর পর এনো।”
মায়া এবার নিচে গেলো।মাহমুদ সরদার ক্ষিপ্ত এবার।তার রাগ মাথাচাড়া দিয়েছে। হাত উঁচিয়ে মালিনীর দিকে যাবে ওমনি রাজ এসে ধরে নিলো হাতটা।মাহমুদ সরদার কাপা কাপা অবস্থায় তাকালেন ছেলের দিকে।রাজ শান্ত চাহনি দিয়ে হাতটা ধরে আছে।মাহমুদ সরদার একটু স্থির হতেই রাজ ঠোঁট দুষ্টু হাঁসি ফুটিয়ে বলে,”মন্ত্রীর বাবা হয়ে কিনা বউ নির্যাতন করো বাবা!তোমার নামে তো দেখছি মামলা করতে হবে।”
মাহমুদ সরদার বেক্কল হয়ে গেলেন ছেলের এমন কথা শুনে।রাজের দিকে চোখ বড় বড় করে বলেন,”আমি তোমার বাবা হই।”
“তাই তো জেলে যাওয়ার আগে রেড এলার্ট দিয়ে দিলাম বাবা।ভুলেও বউ নির্যাতন করবে না।এতে করে বুড়ো বয়সে নাতি নাতনী নিয়ে খেলা না করে জেলের ভাত খেতে হবে।”
মায়া বুকে হাত ভাঁজ করে মালিনীর সামনে এসে বলে,”মন্ত্রী মশাই যদিও বাবাকে থামিয়ে দিলেন তবে আমি কিন্তু বাবার সাপোর্টে আছি।হ্যাঁ বউ নির্যাতন আমিও বাবাকে করতে দিবো না কিন্তু বউ পরিবর্তন করার সুযোগ করে দিবো ঠিকই।”
মাহমুদ সরদার রাগের মধ্যেও বিষম খেলেন।ছেলে ছিল একরকম এখন আবার বউমা কি শুরু করলো?মালিনী ক্ষিপ্ত অবস্থায় বলে,”লজ্জা করেনা এসব বলতে?”
“একদমই না।বরং একজন আদর্শ বউমা হিসেবে আমার উচিত আমার শশুর মশাইকে সুখে রাখা।আমি বলতে বাধ্য আমার শশুর আপনার মত বউ পেয়ে সুখে নেই।সে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করে।আমি কিন্তু তুড়ি মেরে তার জন্য বেটার কাউকে এনে দিতে পারি।যদি আপনি বাড়াবাড়ি করেন তো।”
“আমি কিন্তু তোমার শাশুড়ি হই মায়া।”
“আমার শশুরের দুই নম্বর বউ আপনি। এখনও চারটা সিরিয়াল আছে।আমি দরকার হয় তিন নম্বর সিরিয়ালে বেস্ট একটা শাশু মা এনে সুখে সংসার সামলাবো।”
মাহমুদ সরদার গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,”এগুলো কি বলছো তুমি মা?”
রাজ ঠোঁটের দুষ্টু হাসি বজায় রেখেই বলে,”ছেলে লাগাম ছাড়লে চোখ কপালে বউমা লাগাম ছাড়লে গলা নিচে।এটা কেমন লজিক বাবা?”
“তোমার লজিকের মাইরে বাপ!তোমার থেকেই এসব শিখেছে আমার বউমা।এতদিন তো এমন ছিলো না।শিক্ষিত বউমা এখন কেন এমন হলো?”
“এই দেখো বাবা লাগাম ছাড়া কথা কোনো ছোঁয়াচে রোগ না যে আমার থেকে ছোয়া লেগে অন্য কারো হবে।এটা একটা আর্ট যেটা কেউ পারেনা।তুমি শুধু শুধু আমার গুনটাকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে আমাকে দোষারোপ করবে না।”
“চুপ করো হতচ্ছাড়া।এমন দিন দেখতেও হবে কখনও ভাবিনি আমি।দাদু হবার খবর পেয়ে আবার সেইদিন আমাকে বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করছে আমারই বউমা!”
“তোমার বউমা একেকদিন একেক জিনিসের দাবি করে।দেখো না কাল কি চেয়েছিল আজ আবার তোমাকে নিয়ে পড়েছে।”
“বউকে সামলে রাখতে পারোনা?কেমন স্বামী তুমি?”
“মাহমুদ সরদার যেমন স্বামী আমিও ঠিক তেমনই স্বামী।এই সরদার বাড়ির পুরুষেরা সবদিক থেকে বাঘের মত রূপ নিলেও এক বউকে দেখলেই বিড়াল হয়ে যায়।আমি কেন তার ঊর্ধ্বে যাবো?”
“আমার ভুলটাই তোমার সাথে কথা বলা।”
“তাহলে চুপ থেকে দেখো তোমার বউমার কান্ড।”
“বেরিয়ে যাও আমার ঘর থেকে।”
“ভাংচুর না করে স্বামী স্ত্রী সুখে সংসার করলে আমিও আসতাম না আমার বউকে নিয়ে এখানে।নিজের ঘরে অনেক জায়গা আছে আমার।দাদাজান ঠিক সেভাবেই আমাদের ঘর গড়ে দিয়েছেন।”
দাদাজান ঘর গড়ে দিয়েছেন শুনতেই মায়ার মনে পড়ে বাড়ির সেই পেইন্টিংয়ের কথা।এখন এটা নিয়ে মাথা ঘামায় না।বরং বলে,”মন্ত্রী মশাই কুল।শশুর মশাই এখন মাথা গরম করে আছেন।তাকে আর রাগাবেন না।”
মাহমুদ সরদার স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে বলেন,”শেষমেষ তুমি আমাকে বুঝলে মা।”
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫৫+৫৬
“আমি আপনাকে বুঝছি বলেই বলছি বাবা।সুযোগ আছে এখনও আমার শাশু মা পাল্টান।এমন শাশু মা থাকা মানেই আপনাকে একেকদিন একেকভাবে হেনস্থা হওয়া।”
মাহমুদ সরদার কপালে হাত দিয়ে বসে পড়লেন বিছানায়।তার শান্তি কোথাও নেই।তবে একটা জিনিস ঠিক।মায়া ভুল কোনো উপদেশ দেয়নি।এই মহিলা সত্যিই তার জীবনকে জাহান্নাম করে দিচ্ছে।
