মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬৭+৬৮
ইশরাত জাহান
বীর এসেছে আজ খান বাড়িতে।বিভান খান ডেকেছে বীরকে।বাড়িতে ঢুকতেই বীর দেখে বিভান খান সোফায় বসে অপেক্ষা করছেন বীরের জন্য।বীর সামনাসামনি সোফায় বসে বলে,”কি চাই তোমার?”
“ছেলের সাথে কি বাবা একটু আলাদা সময় কাটাতে পারে না?”
বীরের চোখে গম্ভীরতা কণ্ঠে বিতৃষ্ণা এনে বলে,”বাবার মত বাবা হলে সম্পর্ক সেভাবেই গড়ে তুলতাম।আফসোস তুমি না হয়েছো তোমার বাবার মত না হয়েছো তোমার ছেলের মনের মত।”
“দেখো বীর আমি কিন্তু তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করি।আমার যা কিছু আছে সব তো ইন ফিউচার তোমার।”
“আমি যা কমিয়েছি জীবনে তাতে এখন থেকেই আরাম আয়েশে বসে খেতে পারব বাবা।তোমার টাকার দরকার হবেনা।”
“তুমি জানো জারা মেয়েটা তোমাকে ব্যবহার করছে?”
“হুম,জানি কিন্তু কেন করছে এটা কি জানো বাবা?”
বিভান খান একটু কেশে উঠলেন।কিছু একটা ভেবে বলেন,”জারার নজর খুব খারাপ।ও প্রথমে রাজকে বিয়ে করতে চাইতো এখন তোমাকে টার্গেট করেছে।মেয়েটা একটা লোভী।”
বীর হাত খিঁচে বসে আছে আর শান্ত কণ্ঠে বলে,”জারা যেমনই হোক আমার বউ।আমার বউকে আমি হ্যান্ডেল করতে জানি বাবা।তুমি ওর শ্বশুরের মত তাই বউমাকে স্নেহ দিবে। বাদ বাকি আমি দেখে নিবো।”
“একটা বাজারি মেয়ের জন্য…
“ইনাফ!আমার বউকে বাজারি বলার অধিকার তোমার নেই।তোমার ভাগ্য ভালো তুমি আমার বাবা।বাইরের কেউ হলে তার টুটি আমি ছিঁড়ে ফেলতাম।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুমি আমাকে ধমকাচ্ছো সামান্য একটা ছোটলোকের জন্য!”
“এই আরহাম খান বীরের বউ হবার যোগ্যতা সবাই রাখেনা।যে রাখে সে সাধারণ কেউ নয় তার ক্ষমতা ভিন্ন।যেটা তুমি দেখতে পাচ্ছো না।যাকে ছোটলোক বলছো তারও কিন্তু আলাদা ক্ষমতা আছে।”
“আই মাস্ট সে তুমি হলে রাজের নেউটে।নাহলে ওর মত বউ পাগল হতে না।অবশ্য থাকই তো রাজের বাম হাত হয়ে।রাজের বউকে কিনা নিজের কাছে যত্নে রাখতে হলো।”
“বেশিদূর এগিও না বাবা।আমার বউকে নিয়ে যা একটু বলেছো মানা যায় কিন্তু রাজের বউকে নিয়ে বলার আগে তোমার ওর সম্পর্কে পিএইচডি করতে হবে।”
“কোন বাহাদুরি সে শুনি?”
বীর ফিচেল হেঁসে বলে,”সে এমন এক বাহাদুরি যে আসার পর পুরো সরদার মহলের রূপ চেঞ্জ হয়েগেলো।”
“মাই ফুট!আসল কথায় আসি।তুমি আমার রাস্তা থেকে সরে যাও।”
ভ্রুকুটি করে বীর বলে,”তোমার রাস্তা!”
“হুম,আমার রাস্তা।এই যে তুমি রাজের সাথে মিলে ফর্মুলা নিয়ে একটা মিশনে আছো এটাই আমার রাস্তার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
“কিসব বলছো তুমি?আমি আর রাজ মিলে চেষ্টা করছি ফুফুর স্বপ্ন পূরণ করতে।বিদেশের ক্লায়েন্টের সাথে কথা হয়েছে ওরা যদি আমাদের দেশের চাষের দিক থেকে কোনো ডেভলপ দেখে তো রপ্তানি খুব ভালো ভাবে। হবে আমাদের।সেই সাথে আমাদের দেশে মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে বাঁচবে।”
“তোমাকে দয়ার ভান্ডার হতে কে বলেছে?”
“এটা আমার ফুফু আমার দাদার স্বপ্ন।একজন কৃষিমন্ত্রী হিসেবে আমার দাদাই কিন্তু ফুফুকে এই আইডিয়া দেয়।যেটার জন্যই রাজ কৃষিমন্ত্রী আর আমি মাফিয়া জগৎ বেঁচে নিয়েছি।আজ বলছো আমি তোমার পথের কাটা?”
“হ্যাঁ,কারণ ওই ফর্মুলা আমি দেশের বাইরে কোটি কোটি টাকায় সেল করতে পারব।দেশের বুকেতে ফর্মুলা দিয়ে তোমার কি উন্নত হবে শুনি?লন্ডনে এই ফর্মুলা দিলে নাম আসবে সাথে টাকাও।”
“আমাদের সমস্যা তো এখানেই।আমরা নিজেদের অধিক লাভের আশায় থেকে বাইরের সাথে ডিল করি যেনো নামডাক হয় কিন্তু দেশের উন্নত হয়না।ওই ফর্মুলা আমরা আবিষ্কার করে বাইরে সাপ্লাই করবো আবার ওদের থেকে পণ্য আমদানি করবো!ব্যাপারটা আমাদের দেশের বিষয়েও আছে।ভেবে দেখো কত দরিদ্র মানুষ না খেয়ে আছে। খাবারে এতটাই বিষাক্ত ফর্মুলা থাকে যে মানুষ দুদিন পরপর অসুস্থ হয়ে পড়ে।এগুলো থামাতে হবে।দেশসেবার কাজ করি আমরা।মাফিয়া বলো বা মন্ত্রী আমাদের উদ্দেশ্য একটাই দেশের সেবা করা।তাই তুমি আমাদের পথের কাটা ভাবলেও উপড়াতে ব্যর্থ হবে কারণ আমরা এবার মজবুত গ্যাং তৈরি করেই ফেলেছি।”
বিভান খান শয়তানি এক হাসি দিয়ে বলেন,”আমি জানি তো আমার ছেলে খুব বুদ্ধিমান।আমি আমার ছেলেকে চিনব না এটা তো হয়না।তুমি ঠিক কতটা মজবুত হয়েছো এটা জানি বলেই আজ তোমাকে নিজের কাছে আটকাতে এখানে ডাকা।”
ভ্রুকুটি করে বীর বলে,”মানে?”
বিভান খান মৃদু হাসেন।চারপাশ থেকে ধোঁয়া আসতে থাকে।বিভান খান মাস্ক পড়ে নেন।তারপর বীরের দিকে ফিরে দেখেন বীর খুকখুক করে কাশছে।বিভান খান বলতে শুরু করেন,”এমনিতেও একটু পর তোমাদের হার হতে চলেছে তাই কিছু সিক্রেট জানিয়ে দেই তোমাকে।তোমার দাদাজান মানে আমার বাবাকে আমি খুন করেছিলাম।এমনকি তোমার বড় ফুফুকেও।কারণ ওরা আমার পথের কাটা।তুমিও আমার একই রকম পথের কাটা হতে আসছো।আমি বুঝলাম না নিজের এত বেনিফিট থাকতে কেন মানবতার ফেরীওয়ালা হতে হবে?আমার খুব আফসোস হয় তোমাদের জন্য।তোমাকে খুন করতে আমার একটু কষ্ট হবে তাই তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি।কিন্তু একটু বাড়াবাড়ি করলে তোমাকে খুন করতে আমার হাত দ্বিতীয়বার কাপপে না।”
বীর কাশতে কাশতে নিচে বসে পড়ে। বিভান খান বলেন,”চারপাশে নকআউট ছড়িয়ে দেওয়া।তুমি এখন আরামে ঘুমের দেশে পাড়ি দেও আমি তোমার সমস্ত প্রিয় ব্যক্তিদের ওপারে পাঠিয়ে আসছি।”
বীর জ্ঞান হারালো।বিভান খান চলে গেলেন সেখানে থেকে।বাইরে এসে কল করে জানান,”মালিনীকে নিয়ে আমার পুরোনো ফ্যাক্টরিতে আসো।”
মায়ার অবস্থা আগের থেকে উন্নত।তাও বেডরেস্ট প্রয়োজন।সেলাই শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।রাজ চায়না এই অসুস্থ অবস্থায় মায়া সরদার মহলে থাকুক।তাই মায়াকে হাসপাতালেই রাখা।অন্যদিকে মালিনীর জ্ঞান ফেরেনি এখনও।সিয়া মাঝে মাঝে যায়।মৌ নিজেও আছে হাসপাতালে।মায়া ও মৌ একসাথে একটা কেবিনে আছে। প্রলয়কে নিয়ে গল্প করছে আর মেহরাজ এখনও NICU তে।মায়া রাজ মিলে সকালে বিকালে দেখা করে আসে।সিয়া এসেছে মায়ার কাছে।মায়া প্রশ্ন করে,”শাশু মায়ের কি অবস্থা?”
“ঘুমিয়েই আছে।একটানা বসে থাকতে ভালো লাগছে তাই কিছুক্ষণের জন্য এলাম।”
“বসো।”
এখানে তিনজনে গল্প করছে অন্যদিকে মালিনী খান একা আছেন।সিয়া একজন নার্সকে রেখে যায়।কিন্তু সেও বের হলো প্রতারক।বিভান খান এই নার্সকে টাকা দিয়ে রেখেছেন।সিয়া চলে যেতেই কল করে ডেকে আনে বিভান খানের লোকেদের।ওরা এসেই মালিনীর স্ট্রেচার নিয়ে চলে যায়।যেটা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা যায়।সাথে সাথে গার্ড কল করে কনফার্ম করে সবাইকে।পুলিশকে কল করা হয়।আদ্র খবর পেয়েই ছুটে আসে কিন্তু এরমধ্যেই হাসপাতালে ধোঁয়া ছড়াতে থাকে।আশেপাশের মানুষ কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ।আদ্র মাস্ক পড়া ছিল মাত্র অপারেশন শেষ করেছে তাই।এজন্য আদ্রর কষ্ট হচ্ছেনা কিন্তু আদ্র ছিল অপারেশন থ্রিয়েটারের দিকে।মালিনী খানকে অন্য বিল্ডিংয়ের কেবিনে রাখা ছিল।আশেপাশের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মায়া সিয়া ও মৌ ভ্রুকুটি করে।সিয়া দৌঁড়ে বাইরে এসে বলে,”এত ধোঁয়া কেন?”
বলেই নাকে ওড়না দিয়ে একটু কেশে সামনে তাকাতেই দেখে দুজন ডক্টর ছুটে আসছে।ওরা মালিনী খানের কেবিনে গিয়ে হতাশ হয়।মায়া মৃদু হেসে ওয়ান টাইম মাস্ক পড়ে নিলো।মৌকে একটা দিয়ে বলে,”বিভান খান নিজের খেলা দেখিয়ে দিলো।”
মৌ ভয়তে বলে,”আমাদের বাচ্চাগুলোর কিছু হবেনা তো আপু?আর তুমি যেও না প্লীজ।তোমার পেটের কাটা জায়গাটা শুকায়নি তো।”
“এরা আমাদের কখনো সুস্থ থাকতে দিবেনা বোন।যতদ্রুত সম্ভব পিছু নিতে হবে।”
বলেই কল দেয় জারাকে।জারার কল রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে পুরুষ কণ্ঠে ভেসে আসে,”খেলায় কোনোদিন বিভান খান কাঁচা ছিলো না মেয়ে।তোমরা আমার সাথে খেলতে এসে বড় ভূল করেছো।তোমার ভাবী এখন আমার কাছে বন্দী।”
“আমার ভাই কিন্তু আপনাকে বাবা বলে ছেড়ে দিবেনা।এতটাও সহজ নিবেন না নিজের খেলাকে।”
“তাহলে আসো দেখি কি করে তোমার ভাই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে।”
“মানে!”
“আগেই তো বললাম কাঁচা খেলা আমি খেলিনা।আমি অনেক বড় মাপের খিলাড়ি।”
“তাহলে দেখাই যাক আপনি আজ কিভাবে জিতে যান এই মায়াবতীর ইচ্ছা উপেক্ষা করে।”
“চলে এসো তাড়াতাড়ি।অ্যাড্রেস দেওয়া লাগবে না আমার পুরোনো ফ্যাক্টরিতে আছি।জানি পুলিশ নিয়ে আসবে না কারণ নিজের শাশুড়ি ভাই ভাবীদের তো বাঁচাতে হবে।”
মায়া কল কেটে পিয়াশকে কল দিয়ে বলে,”মন্ত্রী মশাইকে জানিয়ে দেও ওরা শাশু মাকে কিডন্যাপ করেছে।পুরোনো ফ্যাক্টরিতে আছে সবাই আর হ্যাঁ ভাইকে পাবেনা।ভাইকে কিছু একটা করেছে ওই লোক।”
কল কেটে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”আমি আসছি বোন।”
মৌ এবার মায়ার হাত ধরে নেয়,”না আপু যেও না।আমার ভয় করছে খুব।”
“ভয় নেই তোর।ওরা যাকে টার্গেট করার করছে।এবার যুদ্ধ জয় করতে হবে।”
“আপু!”
“সাহস রাখ বোন।আমি আসছি।”
মায়া চলে গেলো।সিয়া এসে উন্মাদের মত খুঁজছে মালিনী খানকে।আদ্র খানিক পর দৌড়ে এসে দেখে সিয়া কান্না করছে।মানে মালিনী খানকে নিয়ে গেছে। সিয়াকে আগলে নিয়ে বলে,”তুমি মৌয়ের কাছে যাও।আমি দেখছি।”
“না আমিও যাবো। মা কোথায় গেলো?”
বলেই কান্না শুরু করেছে।সিয়ার কান্না থামাতে পারবে না আদ্র তাই বলে দেয়,”এটা আমাদেরই একটা প্ল্যানের অংশ।রুদ্র আছে তো ওর ফোর্স নিয়ে।”
“আমি তাও যাবো।আমার মাকে নিয়ে রিস্ক আমি যাব না হয় নাকি?”
“পাগলামী করতে নেই প্রেয়সী।”
“আমার মা হয়।আমি পাগলামি করছি মনে হচ্ছে আপনার?আপনি যদি আমাকে না নিয়ে যান তাহলে আমি নিজেই যাচ্ছি।”
“আচ্ছা আচ্ছা চলো আগে বাঘিনীর সাথে দেখা করে আসি।”
সিয়া এবার শান্ত কণ্ঠে বলে,”চলুন।”
আদ্র কেবিনে ঢুকে প্রশ্ন করে,”বাঘিনী কোথায়?”
“আপু তো চলে গেছে।”
“এই কাঁচা সেলাই অবস্থায়?”
“ভাইকে ওরা আটকে রেখেছে ভাবীকেও।তাই আপু গেছে আগে আগে।”
আদ্র এবার সিয়ার হাত ধরে দেয় দৌড়।কারণ সিয়া আদ্রকে একা যেতে দিবেনা। মাকে দেখতে হলে একা একা গেলেও সিয়া যাবে।তখন আরেক রিস্ক।আদ্র ও সিয়া দৌঁড়ে চলে যায়।মৌ দোয়া পড়তে থাকে।
এদিকে পিয়াশের থেকে সব শুনে রাজ উঠে দাঁড়ায়।রুদ্রের সাথে যেতে যেতে সামনে দেখা হয় মাহমুদ সরদারের সাথে।তিনি এখানেই আসছিলেন মোহন সরদারকে নিয়ে কথা বলতে।কিন্তু রাজকে তাড়াহুড়ো করতে দেখে বলেন,”আজকে আবার কি হলো?”
“বউ কিডন্যাপ হয়েছে বাবা।”
“এই তোমার বউ বাঘিনীর মত হয়ে লাভ কি যদি বারবার কিডন্যাপ হয়?”
“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এটা আমার বউ না এটা তোমার বউ।”
মাহমুদ সরদারের চোখ উপরে।উনিও এবার রাজের পিছনে ছুটছেন।রাজ মৃদু হেসে বলে,”যুগ যেমনই হোক না কেন বউয়ের নেওটা হয়ে থাকে সকল পুরুষ।”
“হতচ্ছাড়া আমার বউ রিস্কে আছে তুই মজা পড়ে নিবি।”
রাজ,রুদ্র ও পিয়াশ আগে আগে হাঁটছে পিছনে মাহমুদ সরদার।মাহমুদ সরদারের কথা শুনে তিনজনেই হাসে।কারণ মালিনীর যে কিছু হবেনা এটা সবাই জানে।রুদ্র মজা করে বলে,”তোমার বউ রিস্কে থাকলে কি হবে বড় বাবা আমরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে যা হবার তা হয়েও যেতে পারে।তাই আপাতত পরিস্থিতি ফেস না করা অব্দি চিল করতে থাকো।”
মাহমুদ সরদারের মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় নিজের বংশধরদের নিজ হাতে খুন করতে।কিন্তু যখন ভাবে এরাই আবার পরবর্তী বংশধর আনার হাতিয়ার তখন থেমে যান।
মায়া গাড়ি থামিয়ে গোডাউনের ভিতরে ঢুকলো।সামনেই দাঁড়িয়ে বিভান খান ও পুরো গ্যাং।পাশেই আছে স্ট্রেচার এর উপর মালিনী।জারার হাত বেঁধে রাখা।জারা চিৎকার করে বলে,”একা এসেছো কেন?”
“কারণ ধীরে ধীরে খেলা জমবে তাই।”
“বাব্বাহ!জমের দুয়ারে এসেও বুলি ফুটছে তোমার।”
“জম যে কে কার এটা এখনও তোর মত মূর্খ বুঝতে পারেনি।”
“ওই!মুখ সামলে কথা বল।আমাকে চিনিস না তুই।”
“আমাকেও চিনিস না রে তুই।আমার সাথে পাঙ্গা নিয়ে খুব বড় ভুল করেছিস।”
মায়ার কথা শুনে বিভান খান মৃদু হেসে বলেন,”একটু আগে আমার ছেলেটার প্রিয় বউ একই ডায়লগ দিয়েছিলো এখন দেখ কি অবস্থা।”
মায়া জারার দিকে চোখ রাখলো।অতঃপর বিভান খানের দিকে চেয়ে হাসি দিলো।আঁচলের ভিতরে লুকানো বামহাত উঁচিয়ে জারার দিকে রিভলবার তাক করে।জারার হাতের বাঁধনে শুট করে দেয়।জারার হাত মুক্ত হতেই বিভান খান ঠোঁট বাকিয়ে হাত তালি দিয়ে বলেন,”খুব ভালো খেলা দেখালি।আমার আশেপাশের লোকগুলোকে দেখতে পাচ্ছিস?ওরা থাকতে এগোতে পারবি না।”
শত্রুর চোখে চোখ স্থির রেখে মায়া বলে,”আমি একা একটা মেয়ে হয়ে লড়াই করতে যে ক্ষমতা রাখি,একজন প্রোফেশনাল মাফিয়া হয়ে তুই একা সেই ক্ষমতা রাখিস না।তাই তো তোর কাছে থাকে সাঙ্গপাঙ্গ আর আমার কাছে নিজের উপর কনফিডেন্ট।”
“চুরমার হয়ে যাবে এখনই।”
“তাহলে দেখাই যাক।”
জারা একটু ঘাবড়ে যায়।বলে,”তোমার সেলাই কাঁচা।”
“ব্যাথা অনেক কম আছে।তাছাড়া জীবনে এত ব্যাথা পেয়েছি যে আজকের ব্যাথাটা আমার কাছে আহামরি না।এর আগেই তো আমার লাইফ রিস্কে ছিল।”
“ওহ!এত কথা কেন?দেখিয়ে দে না তোর একা ক্ষমতার জোর।”
মায়া শাড়ির আঁচল একত্র করে কোমরে গুঁজে নেয়।জারা সুযোগ বুঝে পিছিয়ে গিয়ে ওর ফোনটা নিয়ে নিলো।কোনমতে পিছনে ঘুরে লিখে দিলো,”মায়ার মাথা গেছে ও ফাইট করছে।দ্রুত আসো নাহলে ওর সেলাইয়ের জায়গায় সমস্যা হবে।”
পিয়াশ ম্যাসেজ পড়ে জানায় রাজকে।রাজ এবার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো।মাহমুদ সরদার বলেন,”তোমার বৌকি একটু স্থির থাকতে পারেনা?এখন কাকে রেখে কাকে সামলাবে?”
“আমি তো আমার বউকেই সামলাবো তুমি তোমার বউকে সামলাবে।যে যার বউকে সামলাবে।”
“আজ আমার বিয়ে হয়নি বলে বউ সামলানোর সুযোগ নেই!”
রুদ্রের কথা শুনে মাহমুদ সরদার পিছনে থেকে রুদ্রের মাথায় চাপড় মেরে বলেন,”হতচ্ছাড়া তোর ফোর্স কি আঙুল চুষছে?এত দেরি করে কেন পৌঁছাতে?”
“রিল্যাক্স বড় বাবা পৌঁছে যাবে।তাছাড়া ভাবীজী ইজিলি ফাইট করতে পারবে।এত উন্নত চিকিৎসা করা হয়েছে যে ফ্র্যাকচার হবেনা।”
“তুমি সব জানো?”
“ব্রো বলেছিলো তাই শুনেছি।”
মাহমুদ সরদার একটু শান্তির নিশ্বাস নিলেন তখনই রুদ্র বলে,”কিন্তু ভাবীজী বড় মাকে বাঁচাতে পারবে কি না এটা ভাবছি।”
মাহমুদ সরদারের শান্তি শেষ।তিনি আবারও দুশ্চিন্তায় পড়লেন।তার বাড়ির ছেলে মেয়েগুলো তাকে শান্তি দিবেনা।
মায়া ফাইট করতে শুরু করেছে।বিভান খান অবাক হয়ে গেলেন।মায়া পা দিয়ে যাকেই লাথি দিচ্ছে সেই কিনা রক্তক্ষরণ হয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে।কিছু একটা গড়বড় আছে নিশ্চয়ই। হ্যাঁ,মায়ার পায়ে জুতার সাথে ধারালো ছুরি যুক্তি করা।যেটা রুবির থেকে ভিডিও দেখার সময়ই বানিয়ে নেয় নিজের লোক দিয়ে।এমন পরিস্থিতিতে এগুলোই কাজে লাগে।একেকজন এসে মায়ার সাথে ফাইট করতে নিলেই মায়া একেক কৌশলে আঘাত করে।কিন্তু শেষমেষ পায়ের আঘাতেই যেনো ওদের শরীরের একেক জায়গা কেটে রক্ত ঝরছে।কয়েকজনকে কুপোকাত করতে করতেই সেখানে উপস্থিত হয় সিয়া ও আদ্র।সিয়া চিৎকার করে বলে,”আমার মা তোমার কি ক্ষতি করেছে মামা?”
বিভান খান হাত উঁচিয়ে সবাইকে থামিয়ে দেন।সিয়ার উদ্দেশ্য করে বলেন,”আমার সাথে থেকে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে।ভুগতে তো হবেই।”
“কি করলে এগুলো থামাবে?”
“ফর্মুলা দিতে বল তোর মাকে।”
“মায়ের জ্ঞান নেই।কিভাবে দিবে?”
“এমনিতেও দিবেনা।তাই তোদেরকে শেষ করে দিবো।”
“ওহ রিয়েলী!”
বলেই ভিতরে ঢুকলো রাজ। বিভান খান উচ্চস্বরে হেসে বলেন,”এসেগেছে বউয়ের শ্রেষ্ঠ বর।”
“কান টানলে যেমন মাথা আসে,আমার বউকে টানলে তেমন আমিও আসি।জিধারপে বিবি উধার পে হামভি।”
মাহমুদ সরদার চেয়ে চেয়ে দেখছেন ছেলের ভাষণ। দাঁত খিঁচে বিড়বিড় করে বলেন,”মন্ত্রী হয়েছো জনগণকে গিয়ে দেশের জন্য ভাষণ দিও,আমরা তোমার বউয়ের হয়ে ভাষণ শুনবো না।”
“তাহলে কান বন্ধ রাখো।”
রুদ্র এবার হো হো করে হেসে দেয়।যেটা দেখে বিভান খান বলেন,”এই যে টো টো কোম্পানির ম্যানেজার।আপনি এখানে উইদাউট ইনভেটিশনে কেন?মরার ইচ্ছা জেগেছে নাকি?”
“উহু,আমি এসেছি ফ্রীতে কিছু সিন দেখতে।আমার কাজ এটাই।যেখানে একটু ক্লাইমেক্স ওখানেই আমার এন্ট্রি।”
“ওহ,তাহলে থাকো এক কোণায় আমাদের ডিল দেখো।অবশ্য তুমি চাইলে আমার সাথে শেয়ারে থাকতে পারো।বলেছিলে তো একদিন আমার থেকে বিজনেস শিখবে।”
“হুম,আপনার থেকে বিজনেস শিখে আপনার উপড়ে চলে যাবো।”
বলেই রুদ্র এক কোণায় দাড়ালো। তাজ আসলো রুবির সাথে।তাজকে দেখে বিভান খান বলেন,”এসেছো তাহলে।এই দেখো তোমার স্বপ্ন পূরণ হলো আজ।চেয়েছিলে না সবাইকে এক জায়গায় করে শেষ করে দিতে।আজ সুযোগ পেয়েছো।তোমার মা অবশ্য সেই সুযোগ করে দিলো না।”
“সে থাকলে তো সুযোগ করে দিবে?”
“মানে?”
রাজ কান্নার ভান করে বলে,”আমাদের দুই নাম্বার কাকি আজ আল্লাহর কাছে নিজের দুই নাম্বার ব্যবসার হিসাব নিকাশ দিতে ব্যস্ত।”
বিভান খান যেন শক খেলেন।তাও নিজেকে সামলে বলেন,”তো কি হয়েছে এখনও সুযোগ আমাদের হাতে।কারণ ফর্মুলা যার কাছে আছে সেই আমাদের হাতে।”
সবাই একটু অবাক হলো।ফর্মুলা তো শাহানা পারভীনের জানা আছে।তাহলে কি শাহানা পারভীনকে আটকে রেখেছে?মায়া হুংকার ছেড়ে বলে,”খবরদার যদি আমার মাকে এর মধ্যে রাখিস।তোর কলিজা কিন্ত আমি কুকুর দিয়ে খাওয়াবো।”
“তোর মাকে আমি কোথায় পাবো?আমি তো মালিনীর কথা বলছি।”
সবাই যেন আরো অবাক!একেকজন একেকজনের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে বলে,”কিভাবে সম্ভব?”
“কারণ ব্লুপ্রিন্ট ও সরিয়েছে।”
রুদ্র এবার হাত উচু করে বলে,”আমি কি কিছু রোল প্লে করতে পারি?”
“পারো।”
“আমার জানামতে ব্লুপ্রিন্ট ভাবীজীর মাম্মিজির কাছে,তাহলে শাশু মাম্মিজির কাছে কিভাবে ট্রান্সফার হলো?না মানে ওটা ছাড়া তো ফর্মুলা হাতানো সম্ভব না।সম্ভব হলে ব্রো চুপ থাকতো না অনেক আগেই ফর্মুলা পাবলিক করে দিত।”
“কারণ রাজ যখন দেশে ছিল না ওর অবর্তমানে ওর বাবা মা এসবের দায়িত্বে ছিল।সেই সূত্রে নেওয়া সম্ভব।আর শাহানার কাছে দেয় এটাও একটা চাল ছিল।আসলে ব্লুপ্রিন্ট শাহানার কাছে না আছে মালিনীর কাছে।”
সবাই অবাক হলেও স্বাভাবিক নিলো ব্যাপারটা।রাজ এবার মাহমুদ সরদারের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে,”হোপ ফর নাথিং বাবা তোমার থেকে তো তোমার বউ বেস্ট।চুপ থেকেও খেলা দেখিয়ে দিলেন।”
মাহমুদ সরদারের কপালে হাত। বিভান খান এবার গার্ডদের বলেন,”এটাক মালিনী।”
শুনতেই এগিয়ে আসতে নেয় সিয়া রাজ ও পিয়াশ কিন্তু তার আগেই গার্ড এসে মালিনীর কাছে দাঁড়ায়।সিয়া ফুফিয়ে বলে ওঠে,”মাকে ছেড়ে দেও মামা।”
“তাহলে তোর মা ফর্মুলা কোথায় রেখেছে এটা বলতে বল।”
“মা তো অসুস্থ।”
“মিথ্যা,ও অসুস্থের অভিনয় করছে শুধু।আমাকে এতবড় ঘোল খাওয়ানোর পর আমি এখন খুব ভালো করে বুজেছি।”
সিয়া এখনও কান্না করছে।আদ্র শান্তনা দিয়ে বলে,”রিল্যাক্স,যতক্ষণ না ফর্মুলা ওনার হাতে যাচ্ছে আমরা কেউই মরছি না।সবকিছুর ঊর্ধ্বে ওনার আগে ফর্মুলা প্রয়োজন।”
“ব্রিলিয়ান্ট বয় তাহলে ভাইকে বেকার না রেখে একটা জব দিলেই পারতে।”
“ওটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা।আমার ভাই আপনার বাড়ির জামাই হতে যাচ্ছে না যে ওর জব নিয়ে আপনি পড়ে থাকবেন।”
“তোমাদের কাছে খেলাটা খুব নরমাল লাগছে তাই না?”
সবাই ইজিলি নিয়ে বলে,”অফ কোর্স সবকিছু তো প্ল্যান মোতাবেক চলছে।”
বিভান খান হিহি করে হেসে বলেন,”একটু উপরের দিকে চোখ রাখো তো বাচ্চারা।”
রাজ উপরের দিকে চোখ রাখতে রাখতে বলে,”বাচ্চা তো আমরা কিন্তু আমার বাবা তো বুড়ো….
বলেই যে উপরের দিকে চোখ রাখে অবাকের সাথে বলে,”এরা আবার এখানে কেন?”
উপরে বেঁধে রাখা আছে মোহন সরদার ও আহান সরদারকে।তাদের পাশে আছে গুলি তাক করা চারজন গার্ড।আদ্র ও রুদ্র চাওয়া চাওয়ি করে এবার একটু ভাবতে লাগলো।আদ্র ইশারা করে রুদ্রকে।রুদ্র সার্ট হাতঘড়ির উপর টাচ করে জানায়,”মিস জেসি উই আর ইন ডেঞ্জারাস পজিশন।প্লীজ ডু এনিথিং ভেরি সিন্সিয়ার্লি। আদারওয়াইজ মাই ফাদার উইল বি…
ডাই শব্দটা বলতে পারল না রুদ্র।গলা আটকে আসলো যেনো।মায়া স্বাভাবিক হয়ে বলে,”ওনাদের ছেড়ে দিন।”
“নো, নো ওয়ে।”
“ওনারা এসবে যুক্ত না।”
“কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে কৃতিত্ব রাখে।এই যেমন তোমার বাবা মোহন সরদার আর ওদের বাবা আহান সরদার।আহান সরদারকে আমরা কখনও টার্গেট করিনি কারণ হি ওয়াজ অনেস্ট।অবনীকে মন থেকে ভালোবাসতো কিন্তু আফসোস শাহানাকে নিয়ে মাথা ঘামাতে গিয়ে ওপারে চলে গেলো।”
রুদ্র চোখ লাল করে সাথে আদ্র।আদ্র প্রশ্ন ছুঁড়ে,”কে মেরেছে আমার মাকে।”
“সোনালী মেরেছিল।”
“আগে জানতে পারলে ওই ব্লা*ডি বি*চকে আমি আরো বেশি শাস্তি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কুত্তার খাবার বানিয়ে দিতাম।”
মায়া ফিচেল হেসে বলে,”আমি তো এটাই করতে চেয়েছিলাম যাই হোক তোমাদেরকেও থ্যাংকস।ওনার হার্ট তো আমাদের কাজে লাগলো।”
ভ্রু কুঁচকে তাকালো বিভান খান।মায়া বলে,”আপনার পেয়ারী সোনালী যার সাথে সম্পর্ক করে জন্ম দেন মিহিরকে সেই মানুষটা যেতে যেতে আমার মাকে হার্ট দিয়ে গেছে।”
“তোমার মা বেঁচে আছে?”
“হুম।”
মোহন সরদার অবাক হয়ে শুনছে।মায়াকে তার মেয়ে বলার পর অবাক হয়ে গেলো।এখন আবার শাহানা পারভীনের কথা উঠতেই পরিষ্কার হলো এই মায়াই তার মেয়ে।মোহন সরদার এখন বুঝতে পারছেন মায়ার চোখে তার জন্য কেন এত ক্ষোভ।সবসময় একেকটা কথার বুলি দিয়ে কেন মোহন সরদারকে ক্ষত করে দিত।এই বিপদের সময়ে এসে মেয়ের ঘৃণার সাথে প্রতিশোধ দেখে তার চোখ ভিজে এলো।খুব ভালোভাবেই মায়ের হয়ে বাবার থেকে প্রতিশোধ নিলো মেয়েটা।
ক্ষণিকের জন্য পরিবেশ শান্ত থাকলেও বিভান খান সর্বপ্রথম জানান,”সে যাই হোক না কেন এখন তোমাদের সব খেলা শেষ।আগে তোমাদের মিটমাট করে নেয় পরে শাহানাকে দেখা যাবে।”
মায়া হুংকার দিয়ে জানায়,”খবরদার আমার মা অব্দি এগোনোর চেষ্টা করবি না।একবার আমার মায়ের দিকে চোখ উঠিয়ে দেখবি তো তোর চোখ আমি উপড়ে দিবো।আমি কোনো সাধারণ ঘরণার নারী না যে মুখ বুজে তোদের ভয়ানক দৃশ্য দেখবে,আমি ভয়ানক দৃশ্য রিটার্ন করে দিতে জানি।”
রুদ্র কিছু বলতে নিলেও আদ্র থামিয়ে দিয়ে পিছনে থাকতে ইশারা করে।কারণ এগুলো সব প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।আদ্র ইশারা করে দেখালো তাজের দিকে।তাজের পোশাকের সাথে একটা হিডেন ক্যামেরা সেট করা আছে।যেটা থেকে বিভান খানের কিছু স্বীকারোক্তি নেওয়া হবে।আদ্র আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছে এই ভিডিও থেকে কাট করে শুধু বিভান খানের কুকীর্তি ফাঁস করে দিবে।বাকিদের যে প্রতিশোধের রাস্তা ওটা কাউকে দেখাবে না। সবারই নিজস্ব ক্যারিয়ার আছে।তাই রুদ্র ধৈর্য ধরে পিছিয়ে গেলো। বিভান খান মুগ্ধ হয়ে বলেন,”এত তেজ তোমার?কিন্তু এগুলো তো মুখের কিছু বুলি মামণি।”
রাজ ঠোঁট প্রসারিত করে সতর্কতা জানায়,”আমার বউয়ের সাথে চ্যালেঞ্জ নিও না মামা।আমি ব্যতীত কেউই আমার বউয়ের সাথে লড়াই করে জিতবে না।”
“ওহ তাই নাকি মন্ত্রী মশাই?লড়াই করবেন নাকি একবার?”
“বউয়ের সাথে লড়াই করার মত পাগল আমি হইনি মায়াবতী।”
মাহমুদ সরদার দাঁত কিড়মিড় করে বলেন,”এখানেও তোমাদের প্রেম শুরু?”
“প্রেম সব জায়গায় চলে বাবা।শুধু চালিয়ে যেতে হয়।স্থান কাল ঘটনা দেখতে নেই।তুমিও চাইলে করতে পারো প্রেম।”
“তোমার আমার অত প্রেম জাগে না।”
“তাই তো তোমার রাত কাটে গেস্ট রুমে যেখানে তোমার আরামদায়ক একটা কামড়া আছে।”
“এখানেও কি তোমাকে আমার পার্সোনাল ব্যাপারে কথা বলতে হবে?”
“তুমি মুখ খুললেই তো এই ব্যাপারে।”
“এই তোরা বাপ ব্যাটা চুপ কর।যেখানেই যাবে খালি বাপ ব্যাটা মিলে যেকোনো পরিবেশে কমেডি ক্রিয়েট করে।”
“এটাই হলো সরদারদের আলাদা একটা সোয়াগ।”
রুদ্রের কথা শুনে পিছনে ঘুরে মৃদু হেসে বিভান খান বলেন,”তাই নাকি?তোমার সাথে পরে দেখছি ব্যাপারটা।আগে এই মেয়েটার সাথে ডিল করে নেই।”
“I am not interested in dealing with you.”
“But I will.”
“কি চাই?”
“চাই তো আমার একটাই জিনিস।কিন্তু এবার দেখছি বাংলাদেশে আমার শত্রুদের অস্থানা রেখেছি।এদেরকে শেষ না করে আমার চাওয়া পূরণ করা সম্ভব না।”
“আমাদের টার্গেট করে লাভ কি?আপনার চাওয়া তো আপনার পিছনেই।”
বিভান খান এবার বিরক্তিতে পিছনে ফিরে মালানীর উদ্দেশ্যে বলেন,”আর কত অভিনয় করবি?এবার ওঠ।বউমার সাথে সাথে শাশুরির সাথেও তো ডিল করতে হবে।”
মালিনী সঙ্গে সঙ্গে চোখ দুটো খুলে তাকালো।তারপর স্ট্রেচারে শোয়া থেকে বসে বলে,”বিশ্রামটাও করতে দিবে না নাকি?”
মাহমুদ সরদারের দিকে চোখ রেখে রাজ বলে,”দেখেছো তো জীবন মানুষকে কিভাবে এগিয়ে নেয়?বিপদের সময়েও তোমার বউ বিশ্রাম করতে চায় আর তুমি কি না তার জন্যই ডেসপারেট ছিলে!হতাশ জীবন বাবা হতাশ জীবন!”
“আসলেই সব পাগলের দল আমার নসিবেই জুটেছে।উপরে দুটোর বাপ বেঁধে আছে, পাশে গুলিবিদ্ধ লোক তাও এরা ভয় পায়না।আমার বউটাও কিনা স্ট্রেচারের আশেপাশে চারজন গুলি তাক করা লোক দেখেও ভয় পায়না উল্টো বিশ্রাম করতে চায়।আমার বউমার তো আলাদাই খেলা দেখায়।মাত্র ডেলিভারি হলো সেও ছুটে এলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করতে।আর হতচ্ছাড়া আরেক ছেলে কিনা এই বিপদের সময়ও জবানে দেয়না লাগাম।”
মালিনী উঠে দাড়ালো।বিভান খানের সামনে এসে বলে,”শুধু শুধু আমাদের এক জায়গায় করলে ভাই।এখানে তুমি কারো কিচ্ছু করতে পারবে না।”
“তোর কেন মনে হলো আমি কারো কিছুই করতে পারব না?ছেলের কথা কি ভুলে গেছিস?ওকে কিন্তু আমি নিজ হাতে খুন করে দিবো।”
“আর কত?আর কত আমার সন্তানকে আমার থেকে দূরে রেখে ব্ল্যাকমেইল করবে আর আমি সবাইকে বিপদের মুখে ফেলব?একটাবার চোখের দেখাটাও দিতে দিলে না।একটু আমাকে ছুঁতেও সুযোগ দিলেনা আর কত আমি তোমাকে বিশ্বাস করব?দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।আমার বোঝা হয়েগেছে তুমি আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবেনা।সে কেমন আছে কোথায় আছে কিছুই জানতে দিবেনা কারণ তুমি হলে একজন জানোয়ার।আমার আপন ভাই হয়েও তুমি সবসময় আমাদের বোনেদের ক্ষতি করে এসেছো।নিজের বাবাকে খুন করেছো,তাই তোমাকে আমি আর বিশ্বাস করতে পারিনা যে আমার ছেলেকেও তুমি বাঁচিয়ে রেখেছো।এবার আমিও দেখে নিবো তুমি কতদূর এগোতে পারো?”
“মুখ ফুটেছে খুব!বউমা আসার পর থেকে দেখছি তোর মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে।”
“আমি কিন্তু সেদিনই তোমাকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে এই মেয়ে কতটা ভয়ানক।তুমি উড়িয়ে দিয়েছিলে।আমি জানতাম আমার কথাগুলো গা ভাসিয়ে দিবে।আসলে ওর প্রতি ক্ষোভ না দেখালে তোমরা আমার নিখুঁত অভিনয় ধরে ফেলতে।তাই আমি আমার মত আলাদা খেলা খেলে দিলাম।”
“কিন্তু জিততে তো পারলি না।শেষে এসেও নিজের সন্তানকে পাবি না যার জন্য তোর জীবনে এতটা লড়াই।”
মালিনীর চোখ ভিজে আসে।হাসফাঁস করে বিভান খানের দিকে চেয়ে।এরমধ্যেই পিছন থেকে পিয়াশ কর্কশ কন্ঠ বলে,”যে ছেলেকে নিয়ে এতটা ভয় দেখানো সেই ছেলে আপনার থেকে পালালো কিভাবে বিভান খান?”
মালিনী ও বিভান খান দুজনেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। পিয়াশ এগিয়ে এসে বলে,”যাকে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছেন তাকে নিজের কাছে রাখতেই তো পারলেন না।কিভাবে সে আপনার হাত ফসকে বের হলো?”
মালিনী অবাকের সাথে বলে,”এসব কি বলছো তুমি?”
“যাকে প্রশ্ন করেছি সেই উত্তর দিক।”
“তুমি কিভাবে জানলে ছেলেটা আমার হাত ফসকে গেছে?”
“এখানে উপস্থিত থাকা সকলেই জানে।”
মালিনী প্রশ্নবিত্ত নয়নে চেয়ে আছে,”আমার সন্তান তোমার কাছে নেই?”
বিভান খান চুপ করে আছেন।মালিনী আচমকা ঠাস করে বসিয়ে দিলো বিভান খানের বামপাশে। রাগে গজগজ করে বলে,”শুয়োরের বাচ্চা!আমার ছেলেকে নিজের কাছে রাখতে পারলি না কিন্তু আমাকে ভয় দেখিয়ে এসেছিস এই যাবতকাল।তোকে আমি ….
“ওনাকে আর যাই করুন শেষ নিশ্বাস আমার মাধ্যমেই ছাড়ার সুযোগ করে দিবেন।লাস্ট ডিল তো আমাকেই করতে হবে।”
জারার কথা শুনে বিভান খান চোখ রাঙিয়ে তাকালেন।জারা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আছে। বিভান খানের হাত ঝাড়া দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মালিনী বলে,”আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।”
“হ্যাঁ সোনালী ওকে হারিয়ে ফেলে।এই গোডাউনের মধ্যেই ছিল ওর বসবাস।যত বড় হয় তত পালাই পালাই করে ওই বাচ্চাটা।সোনালী অতিষ্ঠ হয়ে ওকে লন্ডনে আমার কাছে পাঠাতে নেয় কিন্তু তুই অব্দি জানলেও ওইদিন ওই বাচ্চাটা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।সোনালীর হাত থেকে বাঁচার জন্য ওইদিন পালিয়েছিল ওকে নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার আগেই আমরা ওকে হারিয়েছি।কিন্তু তোকে বলিনি কারণ তুই ওকে খুঁজতে মরিহা সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগিয়েছে ব্যাস এই।”
মালিনী চোখের পানি ফেলে মেঝেতে বসে কান্না করে দেয়।সবাই সেই কান্নার দিকে তাকিয়ে আছে।মায়ের কষ্ট মাই বুঝবে।এখন মায়া বুঝতে পারছে মালিনীর কষ্ট।সিয়াও নিজের মায়ের অসহায়ত্ব দেখে কান্না করে দেয়।এগিয়ে এসে মালিনীর হাত ধরে জড়িয়ে নিয়ে বলে,”আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি মা।আমাকে ক্ষমা করে দেও।আমি আমার মাকে চিনতে পারিনি।এতদিন তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে যে অন্যায় করেছি আজ বুঝতে পারছি।”
মালিনী জড়িয়ে ধরে সিয়াকে,”তোরা অনেক নরম মনের যে।এসব মারপ্যাঁচ বুঝবি না বলেই এভাবে সোজাপথে ভুল বুঝেছিস।আমি তোদের আচরণে কষ্ট পাইনি বরং আমার কর্মফল হিসেবে গ্রহণ করেছি সব।”
“কিন্তু মা তুমি কান্না করো না তোমার হারিয়ে যাওয়া ছেলে মানে আমাদের ভাইয়া ফিরে এসেছে।আমরা পেয়েছি তাকে।”
মালিনীর ভ্রু কুঁচকে এলো।সিয়া আঙুল উচু করে পিয়াশকে দেখিয়ে বলে,”তোমার সেই ছেলেটা যে আমাদের আরেক ভাই।আমার ভাইয়া।”
মালিনী বসা অবস্থায় দেখছে পিয়াশকে।চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না।মাহমুদ সরদারের দিকে চোখ রাখলো।তিনি ইশারায় হ্যাঁ জানালেন।মালিনী ফুঁফিয়ে উঠে হাত দুটো মেলে দিলো। পিয়াশ নিচে বসে মায়ের কোলে আশ্রয় নেয়।মালিনী মা হয়েও বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কান্না করে দেয়।এই কান্না দেখে সবাই নীরব হয়ে সাক্ষী থাকে। পিয়াশ নিজেও ওর মায়ের কান্না দেখে মাকে জড়িয়ে ধরে।সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে নেয় বিভান খান।গার্ড থেকে রিভলবার নিয়ে সিয়ার মাথার উপর তাক করে বলেন,”তোদের মেলোড্রামা শেষ এবার।এসব দেখতে আমি তোদের এক করিনি।তোদেরকে স্বপরিবারে ওপারে এক করে দিবো।”
সিয়াকে এভাবে এটাক করায় মালিনী আতকে ওঠে।সন্তান সবই তো তার।মালিনী বলে,”তোমার ফর্মুলা চাই তাই না?আমি দিয়ে দিচ্ছি।আমার সন্তানদের ছাড়ো।”
“ফর্মুলা তোরা মরে গেলেও আমি পাবো কারণ তোরা না থাকলে আমার সুবিধা হবে ইজিলি সরদার মহলে নিজের রাজত্ব করতে।”
“কিভাবে?”
“আমার মিহির আছে তো।ওই তো এখন সরদার মহলের এক অংশ।যদিও আসলে না কিন্তু সার্টিফিকেট এবং জাতীয়তা হিসেবে তো মিহির সরদার ও।তোরা সবাই একসাথে মারা গেলে তোদের অস্তিত্ব বিলীন হলে মিহির ওই বাড়ির অধিকার পাবে।রাজের সবকিছু মিহিরের।মিহির আর আমি বাপ ছেলে মিলে ভোগ করবো সবকিছু।”
বিভান খানের মুখে মিহিরকে নিয়ে এভাবে গর্ব করতে দেখে মনে মনে হাসছে সবাই।সিয়াও কিনা রিভলবারের ভয় না পেয়ে মিটিমিটি হাসছে এবার।কারণ মিহির আসলে তাজ।কিন্তু বুঝতে পারল মালিনী ও বিভান খান সাথে মোহন সরদার।রাজ তো হাসতে হাসতে মাহমুদ সরদারের উদ্দেশ্যে বলেই দেয়,”জীবনে কখনও আমাকে নিয়ে এভাবে রাজত্ব করার স্বপ্ন দেখলে আজ আমি তোমাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করতাম বাবা।”
“তোমার জন্য যতই করিনা কেন মন যে পাবো না এটা আমার জানা আছে তাই বিপদের সময়েও মাখন লাগাতে এসো না।”
বিভান খান বিরক্তিতে প্রশ্ন করে,”মরার ভয় নেই নাকি মামণি?রিভলবার কিন্তু নকল না।এক শুট করার সাথে সাথে মস্তিষ্ক ছিদ্র করে দিবে।”
মায়া ম্লান হেসে বলে,”আপনি আমাকে একবার মন্ত্রী মশাই সাজিয়ে তাজকে দিয়ে শাস্তি দিয়েছিলেন তাই না?”
“এগুলো সব জেনেছো?”
“হুম,দিনটা রিটার্ন করতে চাই।”
বলেই তাজের দিকে ইশারা করে মায়া। তাজ সময় ব্যয় না করে দিলো এক লাথি বিভান খানের বুক বরাবর। বিভান খান ছিটকে পড়তেই মায়া বলে,”একেই বলে টিট ফর ট্যাট।”
বিভান খান মাথা উঁচিয়ে মিহিরের রূপে তাজকে দেখে বলেন,”মাথা গেছে তোমার?”
তাজ মাথা চুলকিয়ে বলে,”এবার কি বলব আমি?আমাকে তো এরপর কি করতে হবে শিখিয়ে দেয়নি।”
মায়া তাজকে ধরে পিছনে সরিয়ে মাহমুদ সরদারের দিকে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে বলে,”তোমার কাজ শেষ এবার আমাদের কাজ শুরু।”
অন্যদিকে জেসি ও পুরো ফোর্স মিলে গোডাউনের পিছন থেকে উপরে উঠে আহান সরদার ও মোহন সরদারকে আটক করা ব্যক্তিদের পিছন থেকে হামলা করে।রুদ্র আর তাকিয়ে দেখিয়ে দিলো,”ভেরি গুড।”
মায়া এগিয়ে এসে বলে,”রাজ সেজে যেমন তাজ আমাকে মেরেছিল আমার ঠিক এমন কষ্টই হয়েছিল।অবাকের সাথে চেয়েছিলাম যেমন আপনি আছেন মিহিরের দিকে চেয়ে। অপস!মিহির না তাজ।”
“হোয়াট!”
“অবাক হচ্ছেন?বিষ্ময় আকার দেখা মিলছে আপনার থেকে। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তাই না নিজের অতি বিশ্বস্ত,কাছের ব্যাক্তি যাকে নিয়ে এত পরিকল্পনা সেই কিনা আপনাকে লাথি মেরে আমাদের দলে।আমারও কষ্ট হয়েছিল এমন বিষ্ময় চাহনি আমারও ছিলো।বুকের মধ্যে হাহাকার দিয়েছিলো যখন দেখেছিলাম মন্ত্রী মশাই আমার বুকে লাথি দিয়ে তার থেকে দূরে করেছিল ঠিক তখন।আজ আপনাকে সেই অনুভূতি জাগিয়ে দিলাম।এবার আসি রহস্য উন্মোচন করতে।এই যে ছেলেটাকে মিহির মিহির বলে এত কনফিডেন্ট দেখিয়েছেন সে আসলে তাজ।সোনালীর সাথে সাথে আপনার মিহিরও ওপারে।”
“ম মানে!”
“আপনার গোপন বউ আর ছেলে আপনার জন্য ওপারে অপেক্ষা করছে।আমরা এখন আপনাকে সেখানেই পাঠিয়ে দিবো শশুর মশাই।”
জারার দিকে তাকালেন বিভান খান। উপড়ে তাকাতেই দেখতে পান সবাই মুক্ত।কিছু অজানা লোক এখানে।জেসি এগিয়ে এসে বলে,”দেশের বেআইনি কাজে আপনি ধরা পড়েছেন।সব অপশন বন্ধ পালাবার জন্য।এম আই রাইট ইন্সপেক্টর রুদ্র?”
রুদ্র মৃদু হেসে বলে,”আইনের ছায়া লম্বা হয়, কিন্তু অপরাধীর ছায়া শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েই যায়!”
বিভান খান হা হয়ে দেখছে রুদ্রকে।রুদ্র তাচ্ছিল্য করে বলে,”টোটো কোম্পানির তরফ থেকে আপনাকে কাস্টডিতে নেওয়া হবে।”
মুখে কাপড় চেপে হাসে সিয়া।মালিনী অবাক হলেও হেসে দেয় এবার।সেই সাথে SI ও ASI ওরাও হেসে দেয়। বিভান খান অবাকের সাথে বলে,”তুমি সিক্রেট সিআইডি অফিসার?”
“জি,টোটো কোম্পানির ব্যবসা থেকে পদত্যাগ করে আমি অসিফার পদে যুক্ত হয়েছি।বলেছিলাম না আপনার থেকেই বিজনেস শিখে আপনার উপড়ে যাবো।”
জেসি এগিয়ে এসে বলে,”আপনার পালানোর রাস্তা বন্ধ।এখন সমস্ত অন্যান্য আমাদের কাছে স্বীকার করুন আপনাকে সহজভাবে আদালতে নেওয়া হবে।বেশি সমস্যা তৈরি করলে আমরা বাধ্য হবো অন্য একশন নিতে।”
বিভান খানকে চেয়ার পেতে দেওয়া হয়।সামনে সবাই দাড়িয়ে আছে। বিভান খানের সমস্ত গার্ডকে রুদ্রের ফোর্স মিলে আটক করেছে।তারাও জবানবন্দি দিবে।মেইন কালপ্রিট হিসেবে বিভান খান আগে জবানবন্দি দিচ্ছে।নিজের সমস্ত অন্যায় স্বীকার করে বিভান খান মৃদু হাসলেন।চোখে রহস্য ভাব এনে বলেন,”কিন্তু আমার শেষ আরেকটা অন্যায় আছে যেটা থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না।রুদ্র এত ইনভেস্টিগেশন করেও আমার এই সিক্রেট ধরতে পারলে না।”
ভ্রু কুঁচকে রুদ্র এগিয়ে এসে একটু ঝুঁকে জিজ্ঞাসা করে,”কি সিক্রেট?”
বিভান খান হাত উঁচিয়ে সামনের দিকে ইশারা করে বলেন,”ওই জায়গায় দেখো আমার একটা ল্যাপটপ আছে।নিয়ে আসো।”
রুদ্রের ইশারা পেয়ে জেসি নিয়ে আসলো ল্যাপটপ।যেদি ল্যাপটপ রাখলো বিভান খানের সামনে। বিভান খান ল্যাপটপ ওপেন করে দেখালেন স্ক্রিনে কিছু পার্সেন্টেজ।যেটাতে দেখা যাচ্ছে একটি রাসায়নিক পদার্থ যেটা ছড়িয়ে গেছে দেশের সত্তর শতাংশ কৃষকের হাতে।এই রাসায়নিক পদার্থ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে অতি দ্রুত সহায়তা করে কিন্তু এটার লাভের দিক যত কম ক্ষতির দিক ততই বেশি। এটা আসলে বিষাক্ত ফর্মুলা।যেটা চক্রান্ত করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিভান খান।সবাই অবাক হয়ে তাকালো।রাজ রাগ ধরে রাখতে না পেরে ছুটে এসে কলার চেপে ধরে বিভান খানের,”কুত্তার বাচ্চা,তোর সাহস দেখে আমি অবাক।আমার মায়ের স্বপ্নকে আমি নষ্ট করতে দিব না।”
বিভান খান শয়তানি হাসি ধরে রেখে স্ক্রিনের দিকে চোখ রেখে বলেন,”এই দেখো 75% হয়েছে।মানে অন্য আরেক জায়গায় পৌঁছে গেছে।সেল যত বেশি আমার লাভ তত বেশি।”
“তারমানে আমাদের শেষ করার সাথে সাথে দেশের মানুষের ক্ষতিটাও নিজের অপশন হিসেবে ছিল?”
“একদম তাই।তোমাদের শেষ করে আমার উদ্দেশ্য ছিল তোমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া।যেটা এখন দেখছো ওটা তো আমিই রাজের নামে ছড়িয়েছি।এখন তোরা জীবিত থাকলেও আমার আফসোস নেই।দেশের জনগণের হাতে মরবি তোরা।জনগণ যখন খেতে না পেরে অসহায় হয়ে আবারও একত্রিত হয়ে মন্ত্রী শাহমীর রাজের দিকে তেড়ে আসবে তখনই তো রাজকে পদত্যাগ করতে হবে।মামলা হবে রাজের নামে।এটাই আমার চাওয়া।”
বলতে না বলতেই দেখে 80% হয়েগেলো।এভাবে করতে করতে যেই 95% হয় মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পড়ে রাজ। বিভান খান হেসে দেয়,”বীর এবার তোমার কোনো কাজে আসলো না।নিজের বামহাত হিসেবে কাজে লাগানো মাফিয়াকে দিয়ে তোমার আসল সময়েই কাজে লাগলো না।”
বলতে না বলতেই 100% কমপ্লিট ডান।সবুজ মার্কের টিকচিহ্ন আসতেই বিভান খান বলেন,”ইয়েস।”
এখন শুরু হলো লাইভ।একেক জায়গা থেকে কৃষকরা তাদের মতামত দিচ্ছে।প্রথমে 20% কৃষক এই ফর্মুলা ব্যবহার করেছে।তাদের মতামত আগে নেওয়া হলো।লাইভ দেখছে পরীক্ষাকৃত প্রমাণের সাথে।কৃষকের মতামত,”আমরা কৃষিমন্ত্রী শাহমীর রাজের নতুন এই উদ্যোগে অনেক উপকৃত।দুই সপ্তাহ হলো আমরা কৃষিকাজে এই সার ব্যবহার করছি।ওনার অসুস্থতার সময়ও ওনার বউকে দিয়ে আমাদের মাঝে দেশের নতুন উদ্যোগ নিয়ে জানান দেন।আমরা ভেবেছিলাম হয়তো গল্প বলে শেষ কিন্তু নাহ।সময়ের মধ্যেই উনি আমাদের সার দিয়ে দেন।”
সাংবাদিক প্রশ্ন করে,”আমরা শুনেছি উনি একটা ফর্মুলা নিয়ে আপনাদের মাঝে ঘোষণা করেন।এটা নিয়ে কিছু বলুন।”
“আমরা তো অত শিক্ষিত না।আমরা ছিলো শিক্ষিতদের উপদেষ্টা নিয়ে।ওই ফর্মুলা নিয়েই নাকি সার বানানো হয়।কৃষি বৈজ্ঞানিক ছিলেন তিনি এটা বহুবছর আগে আবিষ্কার করেন।সেটাকেই নতুনরূপে আমাদের হাতে দেওয়া।”
“দুই সপ্তাহ ব্যবহার করেছেন সার।তো কি কি সবজির উপর ব্যবহার ব্যাবহার করেছেন?”
“আমরা আপেল,কমলা,ড্রাগন,স্ট্রবেরী,তরমুজ এগুলো আর কিছু তরকারির উপর সার ব্যবহার করেছি।”
“এগুলো ব্যবহারে কেমন উপকার পেলেন?”
“উপহার ভালো পাইছি।ওই ফল নিয়ে তো আবার পরীক্ষা করছে নতুনকরে যে সারে কোনো ভেজান আছে কিনা দেখতে।”
“পেলেন কোনো ভেজাল?”
“না আমরা ভেজাল পাইনি খুব ভালো বলতে গেলে এই প্রথম দেশের কোনো কাজ ভালো লাগলো। উদ্যোগটা অনেক ভালো।আল্লাহ তার ভালো করুক আমাদের নিয়ে এভাবে চিন্তা করুক।আমরা এমন মন্ত্রী চাই।”
কৃষকের এসব প্রশংসা শুনে মাথায় বাজ পড়ল বিভান খানের।সাথে সবাই ভ্রু কুঁচকালো।বিভান খান বিড়বিড় করে বলেন,”কিভাবে সম্ভব?”
মালিনী বিজয়ের হাসি দিলো,”আমার মেয়ে তাহলে এত ফার্স্ট!”
সবাই অবাকের সাথে তাকালো মালিনীর দিকে।সিয়া হা করে বলে,”এহ?”
বিভান খান রাগ করে ল্যাপটপ ভেঙ্গে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বলেন,”কিভাবে সম্ভব?কিভাবে আমার রাসায়নিক সার না অরজিনাল ফর্মুলা ছড়িয়ে গেলো?”
আবারও খবরের কথা শুনতে পেলো সবাই।ল্যাপটপ তো বন্ধ তাহলে খবর চালু করলো কে?দেখতে গোডাউনের ভাঙ্গা দরজার দিকে চোখ রাখতেই সবাই অবাক।মুগ্ধ হয়ে চোখের তৃষ্ণা পেটালো শুধুমাত্র একজন।লম্বা ছেড়ে চুলের মুগ্ধকর চাহনি চারফ্রেমের চশমা পরিহিতা মেয়েটি।যে কিনা আমাদের নষ্ট পুরুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে আকাশ সমান।আজ কতগুলো মাস পর তাকে দেখে অপলক হয়ে চেয়ে আছে।হাতে ফোন নিয়ে লাইভ চালু করে আছে হিয়া।এগিয়ে আসতে আসতে বলে,”তোমার আড়ালে সমস্ত কিছু ভেস্তে দেওয়া ব্যক্তিটি কেউ না মামা সে হলো আমি।”
রাজ উঠে দাঁড়ায়।হাততালি দিয়ে বলে,”ব্রাভো বোন ব্রাভো।”
“তোমারই তো বোন হই ভাই।এটুকু যোগ্যতা আমারও প্রাপ্য।”
“তোমাকে না লুকিয়ে রাখা হয়েছিল?”
“হুম,আমি তো লুকিয়েই ছিলাম।সরদার মহলে খান বাড়িতে তোমার গোডাউনে আরো অনেক অনেক জায়গায় আমি লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতাম।এই জন্যই তো কেউ কোনকিছুই খুঁজে পেতো না।”
“ফর্মুলা তুমি নিয়েছিলে হিয়া?”
মায়ার কথা শুনে বলে,”হ্যাঁ ভাবী।আমি আর মা মিলে এই সমস্ত প্ল্যান করি।সেদিন রাতে মিহির ভাইয়ের কথা শুনে আমি এগিয়ে যেতে নিলে মা আমাকে গোপনে নিয়ে যায়।ওখানেই মা আর আমি নতুন প্ল্যান সাজাই।তোমরা থাকবে সরাসরি আমি থাকবো গোপনে।সিক্রেট জায়গাগুলো আমি সার্চ করবো আর তোমরা উপরে উপরে যুদ্ধ করবে।প্রথমে ফর্মুলা উদ্ধার তারপর ব্লুপ্রিন্ট সরিয়ে নেওয়া আর তারপর ডকুমেন্ট জোগাড়।এগুলো করে আমি যখন ফিরতে নিবো জানতে পারি মামা নতুন চাল চেলেছে।বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আমাদের পরিবারের নামে বদনাম করতে চায়।আমিও তাই আড়ালে আমাদের ফর্মুলা আড়ালে পাবলিক করি ওহ সিসিটিভি ফুটেজ আমিই ডিলেট করি।কারণ গোপনে কাজ করতে গেলে তো নিজের ব্যাপারে সচেতন হতে হয়। মা আমাকে বলত সবকিছু আমি আড়ালে সব নিখুঁত ভাবে পূরণ করি।কোনকিছুই এখন তোমার হাতে নেই মামা।”
সিয়া তেড়ে এসে বলে,”বেয়াদপ মেয়ে!আমি তোর বড় বোন।আমাকে বলিসনি কেন এসব ব্যাপারে?প্রথমে তো আমরা এক দল হয়েছিলাম।”
“তোর মত ইমোশনের গোডাউনকে সবকিছু বলে দিলে সবার মত আমিও ধরা পড়তাম।”
“হ্যাঁ কিন্তু মায়া যে মোহনা এটা তো বলিসনি আমাকে।”
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬৫+৬৬
“ওটা ভাই ভাবির ব্যাপার ছিল।ওদের ব্যাপারে জানিয়ে আমি ওদের প্রতিশোধ নষ্ট করতে চাইনি।ছোট বাবাকে যে শাস্তি ভাবী দিতে চেয়েছে সেটা পরিপূর্ণ করতে চুপ ছিলাম।”
রুদ্র এক দৃষ্টিতে দেখছে হিয়াকে।তার হিয়াপাখি এত চালাক!এতদিন গোপনে থেকে তাদের হয়েই কাজ করেছে। ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো রুদ্রের।
