মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ৭

মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ৭
সৌরভ চৌধুরী

আমি ওদের শেষ করে ফেলবো, পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিবো _____ চিৎকার করে বলল আরহাম।
আবরাজ চুপচাপ বসে আছে চেয়ারে।চোখ তার স্থির আয়মান চৌধুরীর শেষবার রেকর্ড করা ভিডিও তে।
আয়মান চৌধুরী ভিডিও তে বলতেছে,

আয়মান _____ প্রিয় আবরাজ, আরহাম।আমার সোনারা।তোরা যখন এই ভিডিওটা দেখবি ততদিনে তোদের চাচ্চু হয়তো এই দুনিয়াই নেই।
তবে আমার ভরসা আছে তোরা তোদের চাচ্চুকে খুঁজবি।
আমার খোঁজ করতে গিয়ে তোরা আকাশের পর্যন্ত পৌছাবি আমার সেই বিশ্বাস আছে।
আমি আমার বিশ্বাসের ওপর ভরসা করে এই ভিডিওটি রেকর্ড করতেছি,
শেখ পরিবার কখনো আমাদের বন্ধু ছিলো না।ওরা আমাদের শত্রু। ওরা তোদের দাদা ও ছোট দাদাকে খুন করেছে।
তবে ওরা একা না, শেখ পরিবারের উপরেও কেউ আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি তাদের সম্পর্কে বেশী কিছু জানতে পারি নি।আমার সাথে বেইমানি করেছে NSI এর ADG শাকিল ইসলাম।
আমি বিশ্বাস করে ওর হাতে প্রমাণ দিয়েছিলাম তবে বুঝতে পারি নি ও একজন দেশদ্রোহী।
ও নিজেও প্রত্যক্ষ ও পরক্ষো ভাবে শেখ পরিবার ও তাদের মূল হোতার সাথে জড়িত।
ওরা ভেবে ছিলো সকল প্রমাণ আমি দিয়ে দিয়েছি তবে আমি যে কপি ওদের দিয়েছি।আর আসল প্রমাণগুলো তোদের জন্য রেখে গেলাম।
আর শেষবার অনুরোধ করতেছি বাবা, তোরা তোদের ভালো মা, আর মেহেককে দেখে রাখিস। ওদের ক্ষতি হতে দিস না।
আবরাজের কানে বারবার একটা কথাই বাজতেছে, “তোরা তোদের ভালো মা আর মেহেক কে দেখে রাখিস ”
আবরাজ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

আবরাজ ___ চাচ্চু আমরা পারি নি তোমার শেষ কথা রাখতে। আমরা ভালো মা কে রক্ষা করতে পারি নি। ( বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো)
তখনি পাশ থেকে আবরার বলল,
আবরার _____ভাইয়া আমরা চাচি কে বাঁচাতে না পারলেও মেহেক কে বাঁচাতে হবে। ওদের টার্গেট এখন আমি আর মেহেক।
আবরারের কথা শুনেই আরহাম হুংকার দিয়ে উঠলো,
আরহাম _____ আমার বনৃুর দিকে হাত বাড়ালে ঐ হাত আমার পোষা পিরাণহা মাছের খাবার হবে। (বলেই ভয়ংকর হাসি দিলো)
আবরার ______ ভাইয়া ভুলে যেও না প্রতিপক্ষ কিন্তু তোমার বউ নিজে।তাই তোমার জন্য বিষয়টা কঠিন হবে।
আরহাম তখন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

আরহাম _____ বউ মাই ফুট। ওকে আমি বিয়ে করেছি গুটি হিসেবে ব্যাবহার করতে।
আবরার অবাক হয়ে বলল,
আবরার ______ মানে!!
আরহাম _____ আমজাদ শেখ ভেবেছিলো জারিনকে গুটি বানিয়ে আমার সাথে বিয়ে দিবে। জারিন কৌশলে আমাদের রহস্য জানবে,
তবে আমজাদ জানতো না চৌধুরী বংশের ছেলেরা ওর থেকেও বড় মাইন্ড গেমার।
আমি নিজেই ওদের সাথে মাইন্ড গেম খেলি।ওরা আমাকে ওদের জালে ফাঁসাতে এসেছিলো। উল্টো আমি ওদের আমার রহস্যের জালে ফাসিয়ে দিয়েছি।

আবরার ____ বাহহহ ভাই বাহহহ……. এত বড় কাহিনী করলা অথচ আমাকে জানালেও না।
আরহাম ____ ঐ পরিস্থিতি ছিলো না।
আবরার _____ তবে ভাইয়া আমাদের দ্রুত ফিরতে হবে।
মেহেক কে একা রাখা যাবে না। আর জারিনকেও চোখে চোখে রাখতে হবে।
আবরারের মুখে জারিনের কথা শুনে আবরাজ আর আরহাম বাঁকা রহস্যময় হাসি দিলো তারপর আরহাম বললো,
আরহাম _____ ওকে চোখে চোখে রাখতে হবে না। ও এখন আমাদের মাইন্ড গেমের হাতিয়ার।
আবরার ______ বুঝলাম না।
আবরাজ ______ ভাই তোকে পরে বুঝিয়ে বলবে।

কথাটা বলেই আবরাজ গটগট পায়ে বের হয়ে গেলো, তার পেছন পেছন আরহাম ও গেলো।
আর আবরার বোকার মতো ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
চৌধুরী বাড়ির ৩ ছেলে থমথমে মুখ নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসলো।
জারিন আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো ওদের ৩জনের চোখ লাল হয়ে আছে, মনে হয় অনেক কান্না করেছে।
জারিন ভাবতেছে ওরা এখন কান্না করবে কেন? ওরা তো বই পড়তে গেলো? তাহলে?
জারিনকে ভাবতে দেখে আরহাম গম্ভীর কন্ঠে বলল,

আরহাম ______ জারিন গিয়ে আমাদের ৩জনের জন্য কফি করে আনো।
আরহামের মুখে এমন কথা শুনে জারিন অবাক হয়ে গেলো,
কই আগে তে কোনো দিন জারিন কে কফি বানাতে বলে নি,
জারিন তো কফি বানাতেও পারে না।
জারিন আমতা আমতা করে বলল,
জারিন _____ না মানে আমি…. আ আ আ মি তো (তুতলিয়ে তুতলিয়ে বলল)
আরহাম _____ যা বলার পরিষ্কার করে বলো।
জারিন _____ আসলে আমি তো কফি বানাতে পারি না। আমি বরং মেহেক কে বলতেছি ও বানিয়ে দিবে।
জারিনের কথা শুনে আরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

আরহাম ___ চৌধুরী বাড়ির মেয়ে যদি কফি বানায়। ৩ বেলা রান্না করে। তাহলে থার্ট ক্লাস শেখ পরিবারের মেয়ে এই পরিবারের বউ হয়ে এসেছে কেন? চেহারা দেখানোর জন্য?
আরহাম এমন শক্ত কথা শুনে জারিন ফ্যাল ফ্যাল করে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে,
অপর পাশ থেকে মেহেক বলল,
মেহেক _____ আহহহ ভাইয়া, তুমি ভাবির সাথে এভাবে কথা বলছো কেন? আর ভাবি যেহেতু বলছে পারে না সে পরে শিখে নিবে আমি বরং এখন কফি করে আনি।
আরহাম গম্ভীর স্বরে আবরাজের উদ্দেশ্যে বলল,

আরহাম ______ আবরাজ তুই তোর বউকে কাজ করাতেই পারিস এতে আমার কিছু বলার নেই, তবে আমার বনু যেন রান্না ঘরে না যায়, তাকে যেন কোনো কাজ করতে না দেখি।
আরহামের মুখ থেকে এমন বেক্কল মার্কা কথা শুনে আবরাজের কপাল কুচকে যায়,
আবরাজ ___ ভাই তুই কি ইন্ডাইরেক্টলি আমাকে আরেকটা বিয়ে করার জন্য ফুসলাচ্ছিস।
আবরাজ কথাটি বলার সাথে সাথে মেহেক রেগে আগুন হয়ে গেলো,
মেহেক ______ আপনার সাহস তো কম না, আপনি আরেকটা বিয়ে করতে চান। আপনাকে মেরে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিবো। (রেগে বলল)

আবরাজ _____ কি রে আবরার বউ কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছে?
আবরার বেচারা পরেছে মাইনকার চিপায়, ও আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে ভাই আর ভাবির দিকে, আর মনে মনে বলতেছে আরে ব্যাটা ঝগড়া করবি কর আমাকে কেন এর ভেতর টানিস।
মেহেক _____ আমি ভয় দেখায় না, ওয়ার্নিং দিলাম আর একবার আরেক বিয়ের কথা মুখে আনলে মেরে বালি চাপা দিয়ে দিবো।
মেহেকের মুখে এমন কথা শুনে আবরাজ আড় চোখে এরিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
আবরাজ ______ আর যদি কোনো মেয়ে নিজ থেকে ভাব জমাতে আসে তখন আমি কি করবো।
আমি তো মন্ত্রী তাদের সেবা করা তো আমার দায়িত্ব।
মেহেক ______ তার জন্য আমি নিজেই যথেষ্ট। আমার স্বামী মন্ত্রী হয়ে তাহলে লাভটা হলো কী? এরকম ২/৪টা খুন যদি করি ধামাচাপা দিতে না পারলে সে আবার কিসের মন্ত্রী। ( মেহেক রেগে কথাটা বলল তবে তার চোখ ছিলো এরিনের দিকে স্থির)
মেহেকের কথা শুনে এরিন জারিনের উদ্দেশ্যে বলল,

এরিন _____ দেখেছিস আপু। এটা হলো এই মেয়ের আসল রূপ। এতদিন তো অসহায় হওয়ার নাটক করতো ( বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলল)
এরিনের কথা শুনে মেহেক বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
মেহেক _____ আমি এতদিন নাটক করি নি। এতদিন যে মেহেক কে দেখেছো সে ছিলো অসহায়, অত্যাচারিত,সম্বলহীন, এতিম।
আর এখন যে মেহেক কে দেখছেন সে এই দেশের টপ ব্যাবসায়ী আয়ান চৌধুরীর ভাতিজি, দেশের সুনামধন্য উকিল রেহেনা চৌধুরীর মেয়ে, টপ ব্যাবসায়ী আরহাম চৌধুরীর বোন। আর আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রী আবরাজ আয়ান চৌধুরীর স্ত্রী।
মেহেকের এমন রণমুর্তি ধারণ এবং মুখের ওপর জবাব দিতে দেখে চৌধুরী পরিবারের সবার মুখে তৃপ্তির হাসি।
আরহাম গম্ভীর স্বরে বলল,

আরহাম _____ জারিন দ্রুত রান্না ঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে আনো আর বনু তুই এখনি রুমে যাবি। সামনে তোর এডমিশন পরিক্ষা দ্রুত গিয়ে পড়তে বসবি।
আরহামের গম্ভীর স্বর শুনে মেহেক ভড়কে গেলো, আবরাজের দিকে তাকালো।
আবরাজ ও যাওয়ার জন্য বলল।
মেহেক আর দেড়ি না করে চলে গেলো তার রুমে।
এদিকে জারিন দো টানায় ভুগতেছে। সে তো কোনো দিন ও রান্না ঘরে যায় নি। কীভাবে কফি করবে?
ভাবতে ভাবতে ইউটুবে ঢুকে টিউটোরিয়াল দেখতে শুরু করলো।
জারিন চলে যেতেই আবরার আর আবরাজ চলে গেলো আরহামের কাছে।
আবরাজ নিচু গলায় বলল,

আবরাজ _____ তুই কি করতে চাচ্চিস।
আরহাম ____ ওয়েট এন্ড সি। নাটক দেখার জন্য প্রস্তুত থাক ( বলেই বাঁকা হাসলো)
আরহামের কথা শুনে বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো আবরাজ এবং আরহাম।
তবে তারা এটা ঠিকই বুঝতে পেরেছে এখন যা হবে তা জারিন এর জন্য মোটেও ভালো হবে না।
একটু পর জারিন খুশি মনে তিন কাপ কফি নিয়ে আসলো এবং আরহাম আবরাজ এবং আবরার কে দিল।
আবরার, আবরাজ কফি না খেয়ে হাতে ধরে রাখল তবে তারা না খেলেও আরহাম ঠিকই কফিটা মুখে দিলো।
অপরদিকে জারিন উজ্জ্বল নয়নে তাকিয়ে আছে আরহাম এর দিকে কফিটা কেমন হয়েছে তা জানার জন্য।
আরহাম এক চুমুক দিয়ে মুখটা বিকৃতি করে নিল সাথে সাথে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কফিটা জারিনের মুখে ছুঁড়ে মারল।

গরম কফি জারিনের শরীরে পরায় শরীরটা যেন জ্বলে গেল।
জারিনের শরীর জ্বালা করলেও মুখে কিছু বলল না।
অপরদিকে আবরাজ আর আবরার অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরহামের দিকে তাদের মাথা যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আরহাম এটা কি করলো তারা বুঝতেই পারতেছে না।
তবে আরহাম যেন পৈশাচিক আনন্দ পেল তার কানে বারবার বাজতেছে তার চাচ্চুর কথা __”তোরা তোদের ভালো মা এবং মেহেককে দেখে রাখিস তাদের কোন ক্ষতি হতে দিস না”
সে তো তার ভালো মাকে বাঁচাতে পারেনি তবে শেখ পরিবারের একজন কে ও বাঁচতে দেবে না।
তাদেরকে তিলে তিলে শেষ করবে।
আবরাজ আরহাম এর দিকে তাকালো দেখতে পেল আরহাম যেন আরো হিংস্র হয়ে উঠছে। ও কোনভাবেই স্বাভাবিক নেই। তাই আবরারকে ইশারা দিল তারপর দুই ভাই মিলে আরহামকে ওইখান থেকে অন্যত্র নিয়ে চলে গেল।

অন্যদিকে জাপানে,
সবাই বসে আছে এয়ারপোর্টে। সবাই স্থির থাকলেও স্থির নেই আছিয়া চৌধুরী।
তার বুকের ভেতর ঝড় বইছে।
বার বার ভাবছে, কোন মুখে বড় ভাই, আর ভাবি মা র সামনে দাড়াবে।
তারা কি তাকে গ্রহণ করবে নাকি তাড়িয়ে দিবে।
আবার, ভাবতেছে যাই হয়ে যাক, আমি হাল ছাড়বো না।আমার বিশ্বাস আমার ভাবি মা আমাকে তাড়িয়ে দিবে না।
কতগুলো বছর পর আমি আমার ভাবি মা কে কাছে পাবো।

ছোট থাকতেই মা মারা গেলো, তারপর বাবা আর বড় ভাই ছিলো। কয়েক বছর পর বাবা ও মারা গেলো।
অল্প বয়সে চৌধুরী বাড়ির বউ হয়ে এলো ভাবি মা। নিজেই একটা বাচ্চা অথচ নিজের কথা চিন্তা না করে এক হাতে আছিয়া ও আয়মান কে বড় করলো।
কথাগুলো ভাবতেছে আর পায় চারী করতেছে আছিয়া চৌধুরী।
আছিয়া চৌধুরীকে নার্ভাস দেখে এগিয়ে এলো আসিফ।
মায়ের কাধে হাত রেখে বলল____ রিল্যাক্স মা। নিজেকে শান্ত করো।আমরা আছি তো। তোমার ছেলে আছে তো তোমার পাশে।
আছিয়া চৌধুরী মৃদ্যু হাসলো তার ছেলের দিকে তাকিয়ে।
অতঃপর এয়ারপোর্টের সকল ঝামেলা শেষ করে প্লেনে গিয়ে বসলো।

৭ ঘন্টা পর আছিয়া চৌধুরী ছেলের হাত ধরে অনেক বছর পর নিজ মাতৃভূমিতে পা রাখলো।
আর তার পেছনে দাড়িয়ে আছে তার স্বামী আসাদ মির্জা ( শেখ পদবী তারা পাল্টিয়েছে) এবং মেয়ে রুশা মির্জা।
তারা উবার কল করেছে।উবারে গিয়ে বসলো।
আছিয়া চৌধুরী চারিপাশে তাকিয়ে দেখতেছে।
অপরদিকে, রুশা মনে মনে ভাবতেছে, “হেই হ্যান্ডসাম আমি আসছি তোমাকে নিজের করে নিতে।তোমার এটিটিউডের রাজ্যে আমিই হবো একমাত্র রাণী। ( কথাটা ভেবেই রুশা মুচকি মুচকি হাসলো)
কি হতে চলেছে চৌধুরী বাড়িতে? আবারো কি নতুন কোনো ঝড় আসতে চলেছে? রুশা কাকে ইঙ্গিত করলো? রুশার ভালোবাসার মানুষ কে?

চৌধুরী বাড়িতে,
সকাল সকাল মেহেক ঘুম থেকে উঠেই তার বড় মা, আর আরিশাকে সাথে নিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করছে আর গল্প করছে।
একটু পর তাদের পেছনে এসে দাড়ালো জারিন।
জারিনকে এসময় রান্না ঘরে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো রেহেনা চৌধুরী।
আর আরিশা তো স্বপ্ন ভেবে চোখ ডলতেছে।
ঠিক তখনি মেহেক বলল,

মেহেক ______ ভাবি আপনি এই সময় রান্না ঘরে।
জারিন ______ কেন আসতে পারি না।
মেহেক _____ আসতে পারেন। আপনি এই বাড়ির বড় বউ আপনি রান্না ঘরে আসতেই পারেন।
জারিন _______ আমিও তোমাদের রান্নায় সাহায্য করতে আসলাম।
জারিন মুখ থেকে এমন কথা শুনে আরিশার তো কাশি উঠে গেলো।
ও মাত্র পানি খেতে নিয়েছিলো। কাশির কারণে ওর মুখের সকল পানি গিয়ে পরলো জারিনের মুখে।
ও সাথে সাথে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

আরিশা ___ স্যরি স্যরি। আমি ইচ্ছে করে কাজটা করি নি ( অপরাধীর স্বরে বলল)
আরিশা কথাটি বলেই নিজেকে প্রস্তুত করলো কিছু কড়া কথা শোনার জন্য।
তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে জারিন বলল,
জারিন _____ ইটস ওকে ( উদাসীনভাবে বলল)
জারিনের মুখ থেকে এমন কথা শুনে রেহেনা চৌধুরী ভালো ভাবে জারিনের দিকে তাকালো।
দেখতে পেলো জারিনের মুখে ছোপ ছোপ লাল দাগ, যেন ফোসকা পরেছে।
সে আরিশার মুখ থেকে শুনেছে, আরহাম নাকি জারিনের মুখে গরম কফি ছুঁড়ে মেরেছে।
রেহেনা চোধুরী আরো লক্ষ্য করলো জারিনের চোখ ফোলা ফোলা এবং লাল।
উনি একজন বিচক্ষণ মানুষ যা বুঝার বুজে গেছেন, আরহাম শেখ পরিবারের ওপর থাকা আক্রোশ জারিনের ওপর মেটাচ্ছে।

কিন্তু এটাতো ঠিক না, চৌধুরীরা তো বাড়ির বউ এর গায়ে হাত তুলে না।
উনি একবার মনে মনে ভাবলেন যে করেই হোক, আজ তিনি আরহামের সাথে কথা বলবে।
কথাটা ভাবতেই বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠলো,
রেহেনা চৌধুরী জারিনের উদ্দেশ্যে বলল,
মা _____ আপতত রান্না আমরা করি, তুমি বাড়ির দরজার খুলে দেখো তো কে এসেছে?
জারিন মাথা ঝাঁকিয়ে সন্মতি দিলো।
জারিন স্থান ত্যাগ করতেই মেহেক বলল,
মেহেক _____ বড় মা ভাইয়া কি ভাবিকে মেরেছে।ভাবির মুখ টা কেমন শুকনো শুকনো লাগলো আর ছোপ ছোপ লাল দাগ।
মা ______ তোর এই বিষয়ে ভাবতে হবে না। তুই এখন মন দিয়ে পড়াশোনা কর।
বাকিটা আমি সামলে নিবো।
জারিন বাড়ির দরজার খুলতেই কপাল কুঁচকে তাকালো দেখতে পেলো,

একজন মহিলা দাড়িয়ে আছে, তার পাশে একজন পুরুষ মানুষ, সম্ভবত তার স্বামী, আর পাশে হয়তো তাদের ছেলে মেয়ে।
জারিন কপাল কুঁচকেই জানতে চাইলো,
জারিন _____ জি বলুন কাকে চাই?
জারিন করা প্রশ্নে আছিয়া চৌধুরী সামনের দাড়ানো জারিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
আছিয়া _____ তুমি কে মা?
আছিয়া চৌধুরীর করা প্রশ্নে যেন জারিন বিরক্ত হলো।
বিরক্তির রেশ চাপা দিয়ে বলল ,
জারিন ____ আমি জারিন। এই বাড়ির বড় ছেলের বউ।
আছিয়া চৌধুরী ছলছল চোখে জারিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
আছিয়া ______ তুমি আরহামে বউ।
জারিন ______ হ্যা। তবে আপনারা কারা? কাকে চান?

আছিয়া চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আর মনে মনে বলল, ” তার ভাবি মা এই অভদ্র মেয়ে কে কীভাবে বাড়ির বউ করলো, তার মতো বিচক্ষণ মানুষ ও ছেলের বউ বাছাই করতে ভুল করলো ”
অপরদিকে, মায়ের সাথে এমন ব্যাবহার করতে দেখে আসিফ তো রেগে আগুন।রাগে হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে রেখেছে,
আসাদ মির্জা ছেলের রাগি মুখ এবং স্ত্রী বিবরত মুখ দেখে নিজেই উত্তর দিলো,
আসাদ ____ আয়ান চৌধুরী এবং রেহেনা চৌধুরীর কাছে এসেছি আমরা।
তাদের একটু ডেকে দিবে।
জারিন _____ আসুন। ভেতরে আসুন।
কথাটি বলেই গটগট পায়ে চলে গেলো রান্না ঘরে।
জারিন রান্না ঘরে গিয়ে বলল,
জারিন _____ মা ৪জন মানুষ এসেছে। তারা আপনার সাথে এবং বাবার সাথে দেখা করতে চায়।
রেহেনা চৌধুরী বলল,

মা ______ তুমি গিয়ে বলো মা হাতের কাজটা শেষ করেই আসতেছে। আরিশা যা তো তোর বাবাকে ডেকে নিয়ে আয়।আর মেহেক চা গুলো মেহেমানদের জন্য নিয়ে যা।
মেহেক মাথা নাড়িয়ে সন্মতি দিলো। জারিন ও স্থান ত্যাগ করলো
মেহেক চা এবং কিছু ফলমূল নিয়ে রওনা দিলো ড্রয়িং রুমে।
ড্রয়িং রুমে যাওয়ার আগে মাথায় ভালো ভাবে ওড়না দিলো।
মেহেক _____ আসসালামু আলাইকুম ( ধীর কন্ঠে সালাম দিলো)
একটা মিষ্টি কন্ঠ শুনে সবাই তড়িৎ গতিতে মেহেকের দিকে তাকালো,
আছিয়া চৌধুরী মিষ্টি হেসে জবাব দিলো,

আছিয়া _____ ওয়ালাইকুম সালাম
মেহেক ততক্ষণে চা এবং ফলমূলগুলো সাজিয়ে রাখতেছিলো আর সামনের সোফায় বসা জারিন কে আড়চোখে দেখতেছিলো,
জারিন পায়ের ওপর পা তুলে বসে থেকে ফোন টিপতেছে।
মেহেক _____ আসলে আন্টি দুঃখিত।আপনাদের দেড়ি করানোর জন্য।আসলে বড় মা আটা মাখাচ্ছে তো তাই এখনি আসতে পারলো না। হাতের কাজটা শেষ করেই দ্রুত আসবে।
(ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল)
আছিয়া চৌধুরী মেয়েটার ভদ্রতায় খুশি হয়ে গেলো। কি মিষ্টি মেয়ে,
আছিয়া _____ মা তুমি এখানে বসো।
(আছিয়া চৌধুরী তার পাশে জায়গা করে দিলো)
মেহেক ও মিষ্টি হেসে সন্মতি জানিয়ে আছিয়া চৌধুরীর পাশে বসলো।
আছিয়া চৌধুরী মেহেক কে উদ্দেশ্য করে বলল,

আছিয়া ______ তা মা তুমি কে? তোমার পরিচয়টা যদি বলতে
মেহেক মিষ্টি হেসে বলল,
মেহেক ______ আমি আবরাজ আয়ান চৌধুরীর স্ত্রী। এই বাড়ির মেঝ বউ।
মেহেক কথাটি বলতেই আছিয়া চৌধুরী ছলছল চোখে মেহেকের দিকে তাকালো আর বলল,
আমার ছোট আবরাজ এত বড় হয়েছে, কি মিষ্টি একটা মেয়ে কে বউ বানিয়েছে
কথাটি বলেই মেহেকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, কপালে চুমু খেলো আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
মেহেক ভড়কে গেলো।

ঠিক তখনি রান্না ঘর থেকে রেহেনা চৌধুরী বেড়িয়ে আসতে আসতে বলল,
আসলে দুঃখিত, আপনাদের অপেক্ষা করতে হলো………
কথাটি বলেই তিনি থমকে দাড়ালো।
মেহেক কে জড়িয়ে ধরা মহিলার চেহারা টা দেখেই তিনি থমকে গেছেন।
তার পা যেন অষাড় হয়ে গেছে, পা যেন চলছেই না।
ঠিক তখনি ঐ মহিলা টি বলল,

আছিয়া ____ ভাবি মা জড়িয়ে ধরবে না? কতগুলো বছর হয়ে গেলো তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারি না? তুমি কি তোমার আছিয়াকে জড়িয়ে ধরবে না।
আছিয়া চৌধুরীর কথা শুনে রেহেনা বেগম ছলছল চোখে হাত বাড়িয়ে দেয়,
আর আছিয়া চৌধুরী দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
এ যেন কত বছরের মিল বন্ধন।
কত বছর পর তারা আবারো একত্রে হলো।
রেহেনা চৌধুরীর সব থাকলেও আছিয়া আর আয়মান ছিলো না।
আয়মান তো তাকে ফাঁকি দিয়ে চলেই গেলো, তবে সে তার আরেক কলিজা আছিয়াকে পেয়েছে। এ যেন মরুর বুকে একটু পানির দেখা।
রেহেনা চৌধুরী ফুপিয়ে উঠলো আর বলল,

মা ___ তোরা অনেক স্বার্থপর। তোরা শুধু নিজেদের কথাই ভাবলি। তোরা তোদের ভাবি মা র কথা ভাবলি না। ভাবলি না তোদের ভাবি মা তোদের ছাড়া কেমন থাকবে?
আরেকজন তো আমাকে ফেলেই চলে গেলে ওপারে।
আয়মানের কথা মনে হতেই ২জনই ডুকরে কেদে উঠলো।
মেহেকের মাথায় কিছু ঢুকতেছে না।
সে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
অপরদিকে,

মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ৬

আয়ান চৌধুরী আর আরিশা এক সাথে সিড়ি দিয়ে নামতেছিলো, রেহেনা চৌধুরী আর আছিয়া চৌধুরীকে এভাবে দেখে তিনি থমকে দাড়িয়ে গেলো।
তিনি যেন নড়তেই পারতেছে না।তার পা যে চলছেই না।
তবে কি চৌধুরী পরিবারে আবারো ফিরবে আছিয়া চৌধুরীর অধ্যায়? নাকি আয়ান চৌধুরী বন্ধ করে দিবে আছিয়ার অধ্যায়? আছিয়াদের ফিরে আসায় কি আবারো নতুন ঝড় আসবে নাকি আবরাজ, আরহাম,আবরার পাহাড়ের মতো দাড়িয়ে সে ঝড় মোকাবেলা করবে?

মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here