বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৬
shanta moni
অয়ন:- “তুই…?
“অয়নকে আর কিছু না’ বলতে দিয়ে শুভ্র অয়নকে মারতে থাকে! রোদ গুটিসুটি মেরে এক কোনে দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপছে‚ শুভ্র অয়নের গলা চেঁপে ধরে, রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে..!
শুভ্র:- “তোর সাহস আছে বলতে হবে। তুই কার কলিজায় হাত বাড়িয়েছিস হ্যা..!”
“শুভ্র অয়নের নাক বরাবর পাঞ্চ মেরে পুনরায় আবার বলে উঠে…!
শুভ্র:- “আজ তুই আমার ভাই বলে তোকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু এর পরের বার এমন হলে, জানে মেরে ফেলবো।
“কথা গুলো বলে অয়নকে ধাক্কা দিয়ে রোদের কাছে এগিয়ে আসে। রোদের শরীর কাঁপছে, শুভ্র রোদকে কোলে তুলে, রুম থেকে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায়।
অয়ন রোদকে ছাদের এক পুড়ানো রুমে
গেছিল। শুভ্র ছাদ থেকে নেমে, নিচে আসে। বাড়ির সামনে শুভ্রের গাড়ি। রোদের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। যে শুভ্র এসেছে। শুভ্র রোদকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসে। শুভ্র গাড়িতে বসতেই রোদ শুভ্রের গলা জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। রোদের মাথা তুলে শুভ্র রোদের দুই চোখের পানি। মুছে! দুই গালে হাত রাখে..!
“রোদ এখনো নাক টানছে, থেকে থেকে শরীর কেঁপে উঠছে। শুভ্রের এটা ভেবেই শরীরে কাটা দিচ্ছে আজকে যদি সময় মতো না আসতো। তাহলে কি হতো..!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“দুই দিন অফিসের কাজ কিছুটা কমে আসলেও সব শেষ হয়নি। এই দুই দিনে ব্যস্ততা জন্য রোদের সাথে সেরকম কোনো যোগাযোগ হয়নি। মিটিং শেষ করে অফিসে বসে ছিলো শুভ্র। কোনো কিছুই যেনো তার মন টিকছে না। মন’টা শুধু বউ বউ করছে, কাজের মধ্যে থাকলেও শুভ্র প্রতিটা মূহুর্তে রোদকে মিস করছে। অশান্ত মন শান্ত করার জন্য হলেও তার বউ চাই৷ মানে চাই,
“রাত তখন ৯:০০ কি ৯:৩০ তখন অফিস থেকে বের হয়। ঢাকা থেকে গ্রামের উদ্দেশ্য শুভ্র। রাত একটা বাজে এসে গাড়ি থামে। সেই চিরচেনা চৌধুরী বাড়ির
সামনে। অজানা এক কারনেও জন্য শুভ্র এতদিন এই বাড়িতে আসেনি। কিন্তু আজকে বউয়ের জন্য আসতেই হলো।
গাড়ির দরজা খুলে দারোয়ানকে বলে বাড়ির ভিতরে ডুকে শুভ্র। ফোন বেড় করে রোদকে ফোন দেয়।ফোন বাজে কিন্তু ফোন কেউ তুলছে না। শুভ্র ভাবে রোদ হয়তো, ঘুমিয়ে গেছে। উপর তলায় সিঁড়ি বেয়ে উঠে৷ আসে পাশে সব রুম গুলোই খুঁজে কিন্তু রোদকে কোথাও দেখছে না। রোদ যেই রুমে থাকার কথা সেখানেও দেখছে না। শুভ্র রোদের ফোনের লোকেশন ট্রাক করে। ফোনের লোকেশন বাড়িতেই দেখাচ্ছে। শুভ্র কি ভেবে যেনে, ছাদের দিকে পা বাড়ায়। সে ভালো করে জানে, রোদের যখন ঘুম আসেনা৷ তখন একা একা ছাদে যায়। শুভ্র ছাদে এসে আসে পাশে খুঁজে কিন্তু কোথাও রোদকে দেখা যাচ্ছে না।
শুভ্র পুনরায় রোদের ফোনে কল দেয়। কল দিতেই ছাদের এক কোনে থেকে, ফোনের আলো জ্বলে উঠে। ফোন হয়তো সাইলেন্ট করা। শুভ্র ফোনের কাছে গিয়ে ফোন হাতে তুলে ভ্রু কুচকে তাকায়। মনে মনে বলে — “রোদের ফোন এখানে থাকলে, রোদ কোথায়? আবার কোনো বিপদ হলো না তো। আসে পাশে খুঁজে দেখে, কিন্তু কোথাও রোদ নেই। ছাদের এক পাশে, একটা পুড়ানো রুম আছে।
হটাৎ একটা শব্দ আসে। শুভ্র দৌড়ে এগিয়ে যায় সেই দিকে, যেতেই দেখে রুমে দরজা হালকা চাঁপানো। দরজা খুলে রুমের ভিতরে ডুকতেই আপছা আলোয় অয়নকে রোদের ওড়না হাতে। শুভ্রের বুঝতে আর, অসুবিধা হয় না। অয়ন কি করতে যাচ্ছে।
“রোদের কপালে শব্দ করে চুমু খেয়ে দু গালে হাত রেখে বলে…!”
শুভ্র:– “আমি এসে গেছি তো জান! কিচ্ছু হবে না। শান্ত হও প্লিজ!
“রোদ শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে, কাঁদতে কাঁদতে বলে..!
রোদ:- “আপনার কাছ থেকে আমাকে আলাদা করতে চায় অয়ন ভাই।
শুভ্র:- “আমি বেঁচে থাকতে কখনোই কেউ তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।
“শুভ্র রোদকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে স্টার্ড দেয়। রোদ শুভ্রের বুকে গুটিসুটি মেরে আছে। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।
“সকাল : ৮:৩০ মিনিট…!”
“রোদকে নিজের রুমে দেখতে না, পেয়ে
পুড়ো বাড়ি সবাই খোঁজা খুঁজি করছে। কিন্তু রোদ কোথাও নেই। হেনা বেগম চিন্তিত হয়ে ফোন দেয়। শুভ্র কাছে শুভ্র ফোন তুলার সাথে সাথে বলে দিছে, রাতে রোদকে নিজের সাথে করে নিয়ে এসেছে। হেনা বেগমকে আর কিছু না বলতে দিয়েই, সাথে সাথে কল কেঁটে যায়। হেনা বেগম ফোন হাতে নিয়ে সামনে থাকা রুহির দিকে তাকিয়ে আছে।
হেনা বেগমকে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, রুহি ব্যস্ত হয়ে বলে..!
রুহি:- “দাদি কি হয়েছে, বলো! ভাইয়া কি বলছে তোমায়?
“হেনা বেগম ভাবলিশীন ভাবে বলে উঠে..!
হেনা বেগম:- “যার বউ সে এসে রাতের আঁধারে নিয়ে গেছে।
‘‘হেনা বেগমের কথা শুনে পাশ থেকে নিলয় বলে উঠে..!
নিলয়:- “বলেছিলাম তোমাদের রোদকে ব্রো এসেই নিয়ে গেছে। তোমরা তো শুনলেই না, আমার কথা।
“নিলয়ের দিকে ঘুরে তাকায় রুহি, নিলয় দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলে উঠে..!
নিলয়:- “শিয়াল রাতে মুরগী শিকার করে সাথে করে নিয়ে গেছে।
“হেনা বেগম তেতে উঠে বলেন..!
হেনা বেগম:– “এই গাঁধা কাকে শিয়াল, কাকে মুরগী বানাচ্ছিস তুই!
“হেনা বেগমের কথা শুনে নিলয় দাঁত বেড় করে হেঁসে বলে..!
নিলয়:- আরে সুইটহার্ট কাকে আবার, তোমার নাতি শুভ্র” আর নাতনি রোদ।
বউকে ছাড়া যে দুইদিন দূরে থেকেছে, এই টাই অনেক।
“হেনা বেগম সোফা থেকে উঠে উপরে চলে যায়। এই হাদারামের সাথে কথা বললে, তাকে পাগম বানিয়ে ছাড়বে। এর থেকে এখান থেকে চলে যাওয়া উত্তম।
“হেনা বেগমের পিছু পিছু রুহিও চলে যায়। নিলয় হেনা বেগম রুহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে, মিনমিন স্বরে বলে উঠে..!
নিলয়:- জীবন’ঠা ওবায়দুল কাদের মতো হয়ে গেছে। যতই সিরিয়াস কথা বলি না কেনো! সবাই মজা ভাবে নেয়।
“এইদিকে জুঁই পা টিপে টিপে অয়নের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজা খুলতে গিয়ে দেখে। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ।রুহি হাঁসি মাখা মুখটা, ভিষাতে ভরে যায়। কিছুক্ষণ অয়নের দরজার সামনে দাড়িয়ে থেকে চলে যায়।
“অয়নের শুভ্র চলে যাওয়ার, ঘন্টা খানিক পর হুস আসে। কোনো রকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসে, রুমের দরজা লাগায়। নিজেই নিজের ক্ষত স্থানে ব্যান্ডেজ করে। মেডিশিন নিয়ে শুয়ে পড়ে।
“ঘড়ির কাটা দুপুর ১২ টার ঘরে, আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে রোদ। আসে পাশে তাকাতেই কাউকে না, দেখতে পেয়ে উঠে বসে।
“রুমের দিকে খেয়াল করতেই, দেখে
শুভ্রের সেই ফ্লাটে যখন রাতের আঁধারে ঘুমের মধ্যে নিয়ে এসেছিল। সেই রুমের বেডে উপর শুয়ে আছে রোদ। রোদের আস্তে আস্তে রাতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা মনে পড়তে থাকে। কাল রাতে অন্য এক অয়নকে দেখেছিল রোদ। যার মধ্যে ছিলো রাগ জেদ আর হ্রিংস্রতা, রাতের কথা মনে করতেই রোদ ভয়ে আরো সিঁটিয়ে যায়। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সামনে দিকে তাকায়, শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে, হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে। রোদের দিকে এক নজর তাকিয়ে, রুমের ভিতরে ডুকে শুভ্র। টি-টেবিলে উপর খাবার ট্রে রেখে।
রোদের দিকে এগিয়ে এসে, দাঁড়ায় তাঁরপর বলে…!
শুভ্র:– “যাও ফ্রেশ হয়ে, আসো। নাস্তা করবে।
“রোদ ঠায় সেই রকম বসে থাকে। রোদের হেলদোল না, পেয়ে রোদকে কোলে করে নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে। কিছুক্ষণ পর রোদ ফ্রেশ হয়ে। ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়। শুভ্র রোদকে কোলে করে নিয়ে সোফার উপরে বসায়। রোদের দিকে ফিরে হাতের খাবার প্লেট নিয়ে, মুখের কাছে খাবার ধরে। রোদ ভাবলিশীন ভাবে বলে উঠে…!
রোদ:- আপনি আমাকে ভালোবাসেন শুভ্র ভাই…?
“শুভ্রের হাত থেমে যায়। রোদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। হটাৎ এমন প্রশ্ন।
শুভ্র রোদের কথা এড়াতে আবার খাবারের লোকমা মুখের সামনে ধরে। রোদ শুভ্রের চোখে দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে..!
রোদ:- “কি হলো বলছেন না কেনো?
উত্তর দিন?
“শুভ্র না শোনার ভান করে বলে…!
শুভ্র:- “কিসের উত্তর দিব?
“রোদ শুভ্রের দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলে উঠে..!
রোদ:–“ভালোবাসেন আমাকে?
শুভ্র:- “তোর কি মনে হয় ?
রোদ:—“আমার যা মনে হয়, সেই টাই কি সত্যি!
শুভ্র:—“হুম…!”
“রোদের বুক কেঁপে ওঠে, তার মানে সে যা ভাবছে সেই টাই সত্যি। রোদ কাঁপা স্বরে বলে উঠে…!
রোদ:—“তার মানে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না। ঘৃণা করেন!
শুভ্র:- “তোর যেটা মনে হয়!
রোদ:- “আমার এই সব মনে হচ্ছে।
“শুভ্র কোনো কিছু বলে না। গ্লাসে থাকা পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়। কিছু সময় যেতেই রোদ ফুপিয়ে ওঠে। আড় চোখে সেই দিকে তাকায় শুভ্র। রোদ ভাঙা গলায় বলে..!
রোদ:—“ভালোই যখন বাসেন না। তাহলে কেনো আপনার জীবনে আমাকে রেখেছেন। আমাকে তো ঘৃণা করেন আপনি। ছেড়ে কেনো দিচ্ছেন না।
“রোদের কথা শুনে শুভ্রের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেঁপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
রোদ নাক টানতে টানতে বলে..!
রোদ:—“আমি এখানে থাকবো না। যেখানে ভালোবাসা নেই৷ সেখানে আমি থাকবো না।
“কথা গুলো বলেই রোদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দরজা দিকে যেতে নেয়। এমন সময় শুভ্র রোদের হেচকা টানে, নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। রোদ ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। কিছু সময় যেতেই পিটপিট করে চোখ খুলে। শুভ্র রোদের কোমড় এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে আছে। রোদ শুভ্রের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে..!
রোদ:- “কি কি করছেন আ আপনি?
শুভ্র:- “ভালোবাসা দেখাচ্ছি!
রোদ:–“মা…মানে?
শুভ্র এক হাত দিয়ে রোদের গায়ে থাকা ওড়না কিছুটা দূরে ছুড়ে মারে। রোদ ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। নিজের ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। রোদকে নিজের সাথে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে..!
শুভ্র:- “ভালোবাসি কিনা, জানতে চেয়েছিলে না, সেটাই দেখাচ্ছি..?
রোদ:- ‘‘আমি জানতে চেয়েছি, দেখাতে বলিনি।
“শুভ্র রোদের মাথায় টোকা দিয়ে বলে…!
শুভ্র:- ”এই ছোট মাথায় বললে, কিছুই বুঝবে না। তাই দেখাচ্ছি।
রোদ: “দে..দেখুন ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
শুভ্র:–“ভালো কিছু এমনিতেই হবে না। চলো বউ খারাপ কিছু করি।
রোদ:- “অসভ্য লোক ছাড়ুন আমাকে, চাইনা, আপনার ভালোবাসা।
শুভ্র:- জামাইকে এই ভাবে বলে না বউ। আল্লাহ পাপ দিবে। তুমি জাহান্নামি হবে বুচ্ছো। তাই আমি যা যা বলি চুপচাপ শুনো।
রোদ:– “আমাকে ছেড়ে দিন। আমার ভালোবাসা চাই না।
শুভ্র: এটা বললে তো হবে না বউ। তুমি তো বললে,যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে থাকবে না তুমি। তো আমি স্বামি হয়ে। সেটা তো হতে দিতে পারিনা। তাই চলো, আজকে তোমায় ভালোবাসা দিব।
রোদ নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আরো ছোটাছুটি করতে থাকে, কিন্তু শুভ্রের সাথে পেড়ে উঠে না। শুভ্র ঠোঁট কামড়ে হাঁসে, রোদকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে, বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে..!
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৫
শুভ্র: –“বৃথা চেষ্টা করো না, বউ
আজকে জমি চাষ করবোই।
আগামী পর্বের অংশ
কারো শক্ত হাতের থাপ্পড়ে ফ্লোরে মুখ থুবড়ে পড়ে, রুহি। পড়ে থাকা অবস্থায় ফুঁপিয়ে উঠে! ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে,
গাল’টা প্রচন্ড জ্বলছে। আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়, সামনে থাকা মানুষ’টার চোখের দিকে তাকানোর সাহস তার নেই। তাই মাথা নিচু করে আছে। এমন সময় সামনে থাকা মানুষ’টি বলে উঠে…!
