বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৬ (২)
shanta moni
“রোদ হাত পা, ছোটাছুটি করতে থাকে।
শুভ্র হেঁসে রোদকে ধরে বিছানার দিকে এগিয়ে আসে। রোদ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে…!
রোদ:- “প্লিজ না, ছেড়ে দিন আমায়!
শুভ্র রোদকে বিছানার উপর ফেলে, রোদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে..!
শুভ্র:- “আরে বউ এমন করছো কেনো? ভালোবাসা নিবে না। আজকে তোমাকে ভালোবাসা দিব।
রোদ:- “আমার ভালোবাসা লাগবে না।
শুভ্র:– “ছিহহহ বউ এই কথা বলে না।
রোদ:- “দেখুন আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
শুভ্র:- “হুম করো, বারন করছে কে জান!
“শুভ্রকে কাছে আসতে দেখে, চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে রোদ।
“কিছুক্ষন সময় যেতেই, শুভ্রের কোনো সারা শব্দ না, পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায় রোদ। সামনে শুভ্রকে দেখতে না পেয়ে। আসে পাশে তাকায়, রুমে কোথাও শুভ্র নেই। রোদ বিছানা থেকে উঠে, বেলকনির দিকে যেতেই দেখে শুভ্রের টি-শার্ট দেখা যাচ্ছে। আর কানে ফোন। হয়তো কারো সাথে কথা বলতে আছে।
“রোদ রুমে না, দাঁড়িয়ে বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। জমের মুখে সে আর পড়তে চায় না।
বিকাল: ৪:১২
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“সোফার উপরে গুটিসুটি মেরে বসে আছে রোদ। কতোক্ষণ ধরে শুভ্রকে বলছে বাড়িতে যাওয়ার কথা, কিন্তু শুভ্র শুনছে না। অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু বার বার ব্যর্থ হয়েছে। যার জন্য মন খারাপ করে বসে আছে। শুভ্র বেডের উপর বসে কি যেনো করছে ল্যাপটবে, খুব গভীর ভাবে। রোদ কিছুক্ষণ সেই দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ায়। পা টিপে টিপে রুম থেকে বেড়িয়ে রান্না ঘরে আসে। শুভ্র কাজে ব্যস্ত থাকায় রোদ যে রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে। সেটা খেয়াল করেনি। ছোট্ট একটা কিচেন সে রকম খাওয়ার মতো কিছুই দেখছে না রোদ।
শুভ্র দুপুরে বাহির থেকে খাবার এনে দুইজনে খেয়েছে। তবে বাহিরের রান্না করা খাবার রোদের তেমন একটা ভালো লাগেনি, যার জন্য এখন রান্না ঘরে আসা। রোদ রান্না ঘরে অনেক খুঁজে চাল ডাল আর ফ্রিজ থেকে মাংস বেড় করে।
সব কিছু রেডি করে, খিচুড়ি রান্না বসায়।
ঘন্টা খানিক পর রান্না শেষ হয়, রোদের।
পুড়ো বাড়ি রান্না গন্ধ মো মো করছে।
শুভ্র এতোক্ষণ পর খেয়াল আসে। ট্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে তাকায় সামনের, রোদকে কোথাও না দেখে, ভ্রু কুচকে তাকায়, মনে মনে বলে, কোথায় গেলো এইখানে তো ছিল। শুভ্র বেড থেকে উঠে দাঁড়ায় রুম থেকে বেড় হতে যাবে। এমন সময় নাকে সুন্দর রান্নার গন্ধ
আসে। শুভ্র ধীরে পায়ে উপর তলা থেকে নিচে ড্রয়িং রুমে আসে। ড্রয়িং রুম পেড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে চোখ পড়তেই দেখে রোদ, ডাইনিং টেবিলে বলে, কি যেনো খাচ্ছে। শুভ্র ধীরে পায়ে এগিয়ে যায় সেই দিকে। রোদ শুভ্রকে দেখে থতমত খেয়ে যায়। খাওয়া থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে। এই ভয়ে যে শুভ্রকে না বলে রান্না করে আবার একা একা খাচ্ছে।
চেয়ার টানার শব্দে আড় চোখে পাশে তাকায় রোদ। শুভ্র রোদের পাশের চেয়ারে বসে আছে। শুভ্র রোদের দিকে চোখ ইশারা করে৷ রোদ বুঝতে না পেড়ে সেই রকম তাকিয়ে থাকে। শুভ্র গলা খাকারি দিয়ে আস্তে করে রোদের নাক টেনে বলে…!
শুভ্র:– “একা একা খাবে নাকি আমাকেও একটু খেতে দিবে নাকি৷
“রোদ মিনমিন স্বরে বলে..!
রোদ:- “আপনি খাবেন?
শুভ্র:-“হুম…..?
“রোদ বসা থেকে উঠতে যায়। কিন্তু শুভ্র হাত ধরে আবার বসিয়ে বলে…!
শুভ্র:- “নতুন করে আর দিতে হবে না। এইখান থেকেই দাও।
“রোদ শুভ্রের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে..!
রোদ:- “আমি খেয়েছি এটো খাবার এটা..!
শুভ্র:- “তোমাকে যা বলছি, তাই করো।
“শুভ্রের দমকে চুপ হয়ে যায় রোদ, নিজের খাবার প্লেট এগিয়ে দেয়। শুভ্রের দিকে, শুভ্র ভ্রু কুচকে রোদের দিকে তাকিয়ে বলে..!
শুভ্র:- “আমার হাতে ব্যথা তোমার হাত দিয়ে খায়িয়ে দাও!
“রোদ চোখ বড় বড় করে শুভ্রের দিকে তাকায়, শুভ্র তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বলে..!
শুভ্র:–“আমার দেখার জন্য সারা রাত পড়ে আছে। রাতে দেখো, এখন খায়িয়ে দাও।
“রোদ আর কোনো কথা বলে না। কাঁপা কাঁপা হাতে শুভ্রের মুখে খাবার তুলে দেয়। রোদ শুভ্রকে খাওয়াচ্ছে, আর চোখ গরম করে শুভ্রের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু শুভ্র স্বাভাবিক অবস্থায় খেয়ে যাচ্ছে। রোদ খাবারের লোকমা মুখে দিতে রোদের আঙ্গুলে কামড় দিচ্ছে শুভ্র। রোদ প্রথম বার ভুল করে হয়েছে বলে মানলেও পর পর পাঁচ-ছয় বার কামড় দিছে শুভ্র।
যার জন্য রাগী চোখে তাকিয়ে আছে রোদ শুভ্রের দিকে। শুভ্রের এমন ভাব যে সে কিছুই জানে না।
“প্রায় ১০ মিনিট পর শুভ্রের খাওয়া শেষ হয়। রোদ খাবার প্লেট নিয়ে কিচেনের দিকে যায়৷ রান্না ভালো হয়েছে, না খারাপ হয়েছে, সে সব কিছুই বলেনি শুভ্র। রোদ খায়িয়ে দিয়েছে শুভ্র চুপচাপ খেয়েছে। রোদ রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িং রুমে আসতেও শুভ্র সামনে এসে রোদকে কোলে তুলে নেয়। রোদ বিচিলিত হয়ে রোদের টি-শার্ট খামচে ধরে বলে..!
রোদ:- “কি করছেন আপনি…?
শুভ্র:–“পেট তো ভরে গেছে। এখন মন ভরতে হবে। রুমে চলো!
“রোদকে আর কোনো কিছু না বলতে দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে রুমে চলে আসে শুভ্র।
সন্ধ্যা সাতটা , কি সাড়ে সাত টা বাজে,
রোদকে নিজের সাথে জড়িয়ে বেডে শুয়ে পড়ে শুভ্র। রোদ শুভ্রের বুকে মাথা রেখে চুপচাপ আছে। সে জানে কোনো কিছু শুভ্রকে বলে লাভ নেই। সে যা বলবে মানে বলবে। যা করার করবে, তাই শুভ্রকে কিছু বলা বা করা মানে নিজের শক্তি অপচয় করা। যার জন্য রোদ চুপচাপ আছে। কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর শুভ্র নড়েচড়ে উঠে রোদকে নিচে ফেলে রোদের মুখ বারবার নিজের মুখ এনে, কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টি রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে। রোদের কপালে আলতো করে চুমু খায় শুভ্র। রোদের কপালে সাথে কপাল ঠেকিয়ে তপ্ত নিশ্বাস ফেলে ফিসফিস করে বলে উঠে শুভ্র..!
শুভ্র:- “রোদ আমি কিছু চাই, তোর কাছ থেকে দিবি আমায়..!
“রোদ চোখ বন্ধ করে ছিলো। শুভ্র রোদের কপাল থেকে নিজের কপাল সরিয়ে রোদের দিকে তাকায়, রোদ জিগ্যেসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্র দিকে..!
শুভ্র রোদের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠে..!
শুভ্র:- আমি আর একবার তোকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে চাই জান। প্লিজ না করিস না। ভয়ংকর যন্ত্রনা সহ্য করছি আমি। আর পারছি না, প্লিজ জান আই নিড ইউ প্লিজ।
“শুভ্র কি চাচ্ছে বুঝতে অসুবিধা হয় না, রোদের, সেদিন রাতের কথা মনে পড়তেই ভয়ে সিঁটিয়ে যায় রোদ।
রোদকে কিছু না বলতে দেখে শুভ্র রোদের দিকে তাকিয়ে পুনরায় আবার বলে উঠে….!
শুভ্র:- “প্লিজ জান, আর একটা বার তোকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে দিবি।
এইবার আর কষ্ট দিবো না পাখি।
“রোদ কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠে..!
রোদ:- “আপনি আমাকে খুব কষ্ট দেন, শুভ্র ভাই। আমি সহ্য করতে পারিনা।
“রোদের কথা শুনে শুভ্র রোদকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে রোদের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে..!
শুভ্র:- “এবার আর ব্যথা দিব না জান। আমার ৪০০ গ্রাম বউকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিব।
“শুভ্রের কথায় রোদের শরীর কেঁপে ওঠে,
নিশ্বাসের গতি ভারী হতে থাকে।
“রোদ কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। আজ প্রথম বার শুভ্রের প্রতিটা স্পর্শে নিজের সায় দিচ্ছে। শুভ্র মুচকি হেঁসে রোদকে নিজের বাহু বন্ধনে আগলে নেয়।
“আজ প্রায় সাত দিন, হয়েছে শুভ্রের আলাদা ফ্লাটে আছে। আজকে রোদকে নিয়ে যাচ্ছে চৌধুরী বাড়ি। চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে যাওয়া মূল কারন হচ্ছে হেনা বেগম। রোদের জন্য অনেক কান্না কাটি করছে শুভ্রের কাছে ফোন দিয়ে। শুভ্র তো কোনো ভাবেই রাজি না, রোদকে চৌধুরী বাড়ি রাখতে। রোদও হেনা বেগমকে ফোন দিয়ে অনেক কান্না কাটি করেছে৷ তার এই বাড়িতে একা থাকতে ভয় হচ্ছে। শুভ্র অফিসের কাজে বাহিরে গেলে রোদ একা বাড়িতে থাকতে ভয় পায়। হেনা বেগম দুই দিন ধরে খুবই অসুস্থ যার জন্য রোদকে নিয়ে যাচ্ছে শুভ্র। হেনা বেগম বাড়ির কেউ জানেনা অয়নের সাথে ঘটে যাওয়া সেই দিনের বিষয় গুলো। শুভ্র সাথে এই সাতদিন অনেক সুন্দর ভাবে কেঁটেছে রোদের। প্রতিটা মূহুর্তে শুভ্রকে দেখে অবাক হচ্ছে রোদ। রোদ রান্না করতে গেলে রোদকে হেল্প করা, সারা দিন রোদের আশে পাশে থাকা। বলতে গেলে শুভ্র সাত দিন রোদকে প্রচুর জ্বালিয়েছে। এই প্রথম রোদের নিজেকে বিবাহিত বিবাহিত মনে হয়েছে। রোদ এটা বুঝতে পারছে শুভ্র তাকে ভালোবাসে৷ কিন্তু মুখে কোনো কিছুই শিকার করছে না।
“এক ঘন্টা পর গাড়ি এসে থামে চৌধুরী বাড়িতে। আস্তে করে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে শুভ্র আর রোদ, শুভ্রের গায়ে কালো টি-শার্ট আর ধূসর রঙের প্যান্ট আর রোদের গায়ে কালো বোরকার সাথে হিজাব। মূলত শুভ্রই রোদকে বোরকা আর হিজাব কিনে দিছে। এখন থেকে বাসা থেকে বেড় হলে যেনো বোরকা পড়ে যায়। রোদও শুভ্রের কথায় সম্মতি জানায়। শুভ্রের পিছু পিছু বাড়িতে ডুকে রোদ। আসে পাশে চোখ ভুলাচ্ছে, আসলে রোদের কেমন যেনো আনেজি ফিল হচ্ছে। অয়নের করা কাজ কর্ম গুলো চোখের সামনে ভাসছে। বাড়ির ভিতরে ডুকতেই হেনা বেগমকে দেখতে পায় সোফায় বসে আছে। পাশে রুহি জুই নিলয়, অহনা রিনা খান সবাই আছে।
রোদ আসতে হেনা বেগম বসা থেকে উঠে রোদের দিকে এগিয়ে এসে রোদকে জড়িয়ে ধরে। রোদও হেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে। শুভ্র হেনা বেগমের কাছে এসে বলে উঠে..!
শুভ্র:- “তুমি না অসুস্থ তাহলে এইভাবে দৌড়ে আসলে কেনো?
হেনা বেগম:- “ছিলাম অসুস্থ এখন আর নেই। আমার নাতি বউকে দেখে সব অসুখ পালিয়েছে।
“শুভ্র হেনা বেগমের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাঁরপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। সে ভালো করে বুঝতে পারছে হেনা বেগম মিথ্যা বলে তাদের বাড়িতে আনা হয়েছে। শুভ্র নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ডুকে। রুহি জুই রোদের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাঁসছে যে বেপার টা রোদ কিছুক্ষণ ধরেই খেয়াল করছে। রোদ রুহি জুইয়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে উঠে।
রোদ:- “সমস্যা কি তোদের এই ভাবে চোরের মতো হাঁসছিস কেনো।
“জুই রোদের দিকে তাকিয়ে দাঁত বেড় করে হাঁসে তাঁরপর বলে…!
জুই:–“না মানে আজ একটা জামাই নাই বলে গলায় লাভ বাইট দাগ নিয়ে ঘুরতে পারিনা।
“জুইয়ের কথায় রোদ থতমত খেয়ে যায়।
তাড়াতাড়ি ওড়না দিয়ে নিজের গলা ঢাকে। জুই পুনরায় হাঁসে জুইয়ের হাঁসির সাথে তাল মিলিয়ে রুহিও হাঁসে জুই রোদের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বরে উঠে..!
জুই:- “ভাবি ভাইয়ার আদরের ডোজ কি একটু বেশি পড়ছে নাকি গো..!
“জুইয়ের কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে রোদ। রোদকে লজ্জা পেতে দেখে জুই রুহি আরো লজ্জা দিতে থাকে রোদকে এটা ওটা বলে..!
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৬
“রাত ১২:০০ কি ১২:৩০
ফোনের মেসেজ পেয়ে ধীর পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় রুহি। ছাদে আসতেই রোমান রুহিকে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে, ব্যথায় কুকিয়ে উঠে রুহি।
চোখে পানি টলমল করছে। রোমান নিজের থেকে থাক্কা দিয়ে কিছু দূরে সরিয়ে দেয়। রোমান রেগে গিয়ে রুহি গালে সজোরে থাপ্পড় মারে। রুহি ফ্লোরে পড়ে যায়। গালে হাত দিয়ে ফুপিয়ে ওঠে।
রুহি রোমানের সামনে মাথা নিচু করে আছে। সে আসলে বুজতে পারছে না। রোমান কেনো এমন করছে। রোমান রুহির গাল চেঁপে ধরে রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে….
রোমান:……..?
