ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৫৯ (২)

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৫৯ (২)
তাজরীন ফাতিহা

অতীত শুনে উমায়ের ভুঁইয়ার বোনের জন্য সকলেই বিমর্ষিত হলো। এদিকে মুনতাজির, রুবানা উভয়ই বজ্রাঘাতের মতো সবকিছু শ্রবণ করছে। ছোট থেকে যা জেনে, মেনে বড় হয়েছে আচমকা সেটা মিথ্যা শুনলে যে কেউ তব্দা খাবে। মুনতাজির বহু কষ্টে বলল,
“এজন্যই আমার মায়ের প্রতি, আমার প্রতি এবং আমাদের পরিবারের প্রতি আপনার এত রাগ?”
ব্ল্যাক ভাইপার লাল চোখ দুটো মুনতাজিরের দিকে স্থির হলো। হয়তবা ছোট থেকে ভাগ্নের মুখে তুমি ডাক শুনে অভ্যস্ত হঠাৎ করে আপনি ডাকায় বিভ্রান্ত হলেন। একটু ধাতস্থ হয়ে বললেন,

“ঊর্মিলা থাকত ঢাকার ওর এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে। ওর কেমন খালা হয় যেন। অত খেয়াল রাখিনি। সেসময় মেয়েরা অত পড়তে পারত না। মেয়েদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে নানা প্রতিকূলতা, বাধার সম্মুখীন হতে হতো। সেসময় কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন ছিল। হাতে গোনা কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। ঊর্মিলা তার মধ্যে একজন। বহু কসরৎ করেই অতটুকু যেতে পেরেছিল। ভীষণ মেধাবী মেয়ে। বাংলায় স্নাতক করছিল। খোঁজ খবর নিয়ে একদিন চলে গেলাম সেখানে। দেখলাম কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে পুরো ঘর পরিষ্কার, বাসন কোসন মাজা থেকে শুরু করে রান্নাবান্না সবই ওকে দিয়ে করানো হচ্ছে। এতিম ছিল তো তাই কোনো রকম দয়া পরবশ হয়ে থাকতে দিয়েছে এই বেশি। তাই পয়সা উসুল হিসেবে গাধার খাটুনি খাটিয়ে নিত তারা। কেন যেন চোখের সামনে আমার পুতুলটা ভেসে উঠেছিল সেদিন। একদিন যেয়ে বললাম আমি ওর ভাই। ওনারা কিংবা উর্মি কেউই বিশ্বাস করতে চাইছিল না বহু বুঝিয়ে সুজিয়ে ওকে নিয়ে আসলাম আমার বাড়িতে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বাবা গত হয়েছিলেন বহু আগে। সৎ মা মেয়ের শোকে পাগলের মতো জীবন যাপন করছিল। সেসময় উর্মিকে নিয়ে বাড়িতে ওঠায় আমাকে বাঁধা দেয়ার কেউ ছিল না। আত্মীয় স্বজনরা আপত্তি ওঠালেও আমি কাউকেই পাত্তা দেইনি। ভালো ভালো খাবার, জামাকাপড়, একটা সুন্দর জীবন সবই ওকে দিয়েছিলাম আমি। তবে ভেতরে ভেতরে ওর প্রতি চাপা রাগ কিংবা বিদ্বেষ ঠিকই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে আমি এই উর্মির প্রতিও দুর্বল হয়ে পড়লাম। ওর ভাইজান ডাকের মধ্যে আমার পুতুলকে খুঁজে পেলাম। মেয়েটা প্রথম প্রথম আমার সাথে কমফোর্ট ফিল করত না। নিজেকে গুটিয়ে রাখত। মন ভোলা ছিল অনেক। অনেককে দেখলেও পরবর্তীতে চিনতে অসুবিধা হতো। ওর চিকিৎসা করালাম। আস্তে আস্তে সুস্থ হতে লাগল।

আমি ততদিনে ঊর্মিলার মধ্যে উর্মিকে পুরোপুরি খুঁজে পেয়েছি। ঊর্মিলাকে একদমই চোখের আড়াল করতাম না। বেশ ভয় কাজ করত ওকেও আমার পুতুলের মতো হারিয়ে ফেলব না তো?
ইমতিয়াজ উর্মির পিছনে পাগলের মতো ঘুরছিল। ওকে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারতাম না। মনে হতো ও আবার আমার উর্মিকে নিয়ে যাবে। কিছুতেই আমি সেটা হতে দেব না। উর্মিকে কারো সঙ্গে মিশতে বারণ করতাম বিশেষ করে ইমতিয়াজের থেকে কয়েশো হাত দুরত্ব বজায় রাখতে বলতাম। উর্মি এসে আমাকে জানাতো ইমতিয়াজ ওকে যেখানে সেখানে ডিস্টার্ব করে। তাই নিজের দলবল নিয়ে ওর ভার্সিটিতে যেয়ে ওকে শাসিয়ে আসি। ইমতিয়াজ আর আমি সমবয়সী হওয়াতে ওর পড়াশোনার পাঠ চুকেছিল বহু আগেই। শুধু এখানে সেখানে রাজনৈতিক নেতা হয়ে দাপট নিয়ে চলত। শাসানোর পর ইমতিয়াজ আমাকে থ্রেট দিয়ে এক মাসের ভেতর উর্মিকে বিয়ে করে আমার সামনে উপস্থিত হয়।”

১২ই শ্রাবণ, ১৩৯৪ বঙ্গাব্দ
তুমুল বর্ষণে আশপাশ তলিয়ে গেছে প্রায়। ঊর্মিলা ক্লাস শেষ করে বের হতে না হতেই আবারও তীব্র বেগে জলবর্ষণ শুরু হলো। ছাতা আনতে ভুলে গেছে আজ। আশেপাশে ছাউনী জাতীয় কিছু নেই যেখানে আশ্রয় নেবে। শরীরে ওড়না ভালোভাবে টেনে দিল। মাথায় কাপড় দেয়া আছে। মোটা জামাকাপড় ভিজে একাকার হলেও দেহের ভাঁজ, গড়ন কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ঊর্মিলা আশেপাশে তাকিয়ে রিকশা খুঁজছে কিন্তু একটা রিকশাও কম টাকায় যাবে না। সামনের দোকান থেকে রেডিও উচ্চ শব্দ ভেসে আসছে। খবর শুনছে আর চা বানাচ্ছে দোকানদার। দূরে কয়েকজন লোক জোরে জোরে কথা বলছে। একজনকে ঘিরে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। ঊর্মিলা শুনেছিল কোন দলীয় নেতা প্রায়ই আসে এখানে। হাঙ্গামা, মারামারি করে। আজকেও নাকি এসেছে। ঊর্মিলার সেসব দেখার সময় নেই। বাসায় গিয়ে রান্না বসাতে হবে। নাহয় খালার হাতে মার খেতে হবে। চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে রিকশা খুঁজতে লাগল। বেশি ভাড়া চাইলে এবার হেঁটেই যাবে। এত ভাড়া দিয়ে রিকশায় ওঠার সামর্থ্য তার নেই। কপালে চিন্তার বলিরেখা।
দূর হতে ইমতিয়াজ ভুঁইয়া সবকিছু পর্যবেক্ষণ করল। মেয়েটার উদ্বিগ্ন ও মায়াবী চোখে চেয়ে বেশ মায়া কাজ করল। একজনকে ডেকে বলল,

“একটা রিকশা ঠিক কর তো।”
“রিসকা দিয়া কি করবেন ভাই?”
ভ্রু কুঁচকে বলল,
“যা বলেছি তাই কর।”
“আচ্ছা ভাই।”
কিছুক্ষণ পর রিকশা হাজির করতেই ইমতিয়াজ অদূরে দাঁড়ানো মেয়েটির সামনে যেতে বলল। ভাড়া নিজ থেকেই দিয়ে দিল। শিখিয়ে দিল,
“ভাড়া দেয়া হয়নি এমন ভাব করবে। যেমন অন্য প্যাসেঞ্জারদের কাছে বলো সেভাবেই বলবে।”
রিকশা ওয়ালা মাথা নাড়িয়ে খুশি মনে ঊর্মিলার সামনে এসে বলল,

“আফা ওডেন।”
ঊর্মিলা কপাল ভাঁজ করে বলল,
“জিগাতলা যাবেন?”
রিকশাওয়ালার মাথায় পলিথিন বাঁধা। বৃষ্টিতে পুরো শরীর ভিজে একাকার। প্যাডেলে পা রেখে বলল,
“জে, ওডেন।”
“আরে দাঁড়াও। কত টাকা ভাড়া?”
“যা মুন চায় দিয়েন।”
“না আপনি বলেন।”
“এমনে দিনে বিশ টেকা নেই, বৃষ্টির দিন দেইখা ত্রিশ দিয়েন।”
ঊর্মিলা মাথায় হাত দিয়ে বলল,

“ত্রিশ! ডাকাতি করতে নেমেছেন নাকি আজ?”
“বৃষ্টির দিনে ভাড়া এট্টু বেশিই আফা।”
“না এত ভাড়া দেব না। বিশ টাকায় গেলে চলো নয়তো দরকার নেই।”
“আইচ্ছা দিয়েন। আহেন।”
ঊর্মিলা উঠে বসতে গেলেই রেডিও থেকে ভেসে এল গান,
“বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দেব তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারই ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম”

রিকশা সাঁই করে টান দিয়ে চলে যেতেই গানটা আর শোনা হলো না আর। গানটা তার বেশ পছন্দের। ইশ আরেকটু আগে রেডিও স্টেশনটা পাল্টালে গানটা শোনা যেত। ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে সে। জ্বর না বাঁধলেই হলো।
এদিকে রেডিওর গানটা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে ইমতিয়াজ।
“তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিবা দূরে রও
মনে রেখ আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম।”

আজ ঊর্মিলার ভার্সিটির সামনে ইমতিয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। চাতক পাখির ন্যায় আশেপাশে তাকাচ্ছে। মেয়েটা তার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তার সাঙ্গপাঙ্গোরা নেতার এমন অস্থিরতায় চিন্তিত ও স্থবির হয়ে আছে। কখনো এমন বেশ দেখেনি তাই বোধহয়। রুক্ষ ভারিক্কি মেজাজে দেখেই অভ্যস্ত সেজন্য ম্লান, উদ্বিগ্ন চেহারা ঠিক হজম করতে পারছে না। খানিক পর ঊর্মিলার দর্শন পেতেই ইমতিয়াজ ভুঁইয়া উজ্জ্বল মুখে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“ভালো আছেন মিস?”
ঊর্মিলা ভয় পেয়ে খানিকটা পিছিয়ে গেল। হঠাৎ এমন মুখের সম্মুখে চলে আসায় বেশ চমকিত হয়েছে। কঠিন দৃষ্টিতে চাইল। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া চমৎকার হেঁসে বলল,

“ভয় পেয়েছেন? আমি সুদর্শন পুরুষ কোনো ভূত টুত নই।”
ঊর্মিলা এসব কথায় চরম বিরক্ত হচ্ছে। অপরিচিত এক লোকের অযথা বকবক বিরক্ত লাগারই কথা। পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে ইমতিয়াজ পথ আগলে বলল,
“উহু, কথা শেষ হয়নি মিস। তোমার নাম কি?”
ঊর্মিলা এবার শক্ত গলায় বলল,
“পথ ছাড়ুন, আজব লোক। এটা কেমন ম্যানার্স?”
ইমতিয়াজ ভুঁইয়া কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল,
“গুড ম্যানার্স। শোনো নাম বললেই ছেড়ে দেব।”
ঊর্মিলা হাত ভাঁজ করে কোনো কিছু না ভেবেই রাগী স্বরে বলল,
“নাম হলো গুলি মেরে উড়িয়ে দে।”
ইমতিয়াজ বুঝতে না পেরে বলল,

“এ্যাঁ”
ঊর্মিলা বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেছে। ইমতিয়াজ হতবুদ্ধির মতো বলল,
“কি বলে গেল?”
একজন চ্যালা এগিয়ে এসে বলল,
“ভাই বলেছে গুলি মেরে উড়িয়ে দে।”
“এ্যাঁ, এটা আবার কেমন নাম?”
“ভাই নাম না। আপনাকে গুলি মেরে উড়িয়ে দেয়ার থ্রেট দিয়ে গেল।”
ইমতিয়াজ ভুঁইয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। মেয়েটা ভারী বজ্জাত তো। সেদিন দেখে মোটেও তা মনে হয়নি। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা গো বেচারা টাইপ মনে হয়েছে।

ঊর্মিলার একটা কলেজে স্টুডেন্ট ক্যাম্পেইন ছিল। সেখানে তার নামের একটি মেয়ের সাথে পরিচিত হয়েছে। সাদা কলেজ ড্রেস পরিহিত দুই বেণী করা। কলেজ মাঠের এ মাথা হতে ও মাথা ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে তাকে বড় আপা ডেকে বেশ কয়েকবার জড়িয়ে ধরেছে। দুজনের একই নাম শুনে মেয়েটা উৎফুল্ল ও পুলকিত হয়ে উঠছিল। বেশ মিষ্টি মেয়েটি। বারবার আপা আপা বলে মাথা খারাপ করে ফেলছিল। রিনরিনে কণ্ঠের আদুরে ডাকটুকু বেশ আপন আপন লাগছিল ঊর্মিলার। উর্মি হাতে জুস আর চিপস নিয়ে এগিয়ে এসে বলল,
“আপা নাও।”
“আমি খাব না উর্মি।”
“আরে খাও। আমরা না মিতা?”
ঊর্মিলা নিতান্ত অনিচ্ছা শর্তেও নিল। আজকের কর্মসূচি নিয়ে খানিকক্ষণ আলোচনা হলো। উর্মি একটু পর পর এটা ওটা নিয়ে আসছিল। অনেক চঞ্চল মেয়েটা। কোথাও একটু স্থির হয়ে বসে নেই। পুরো মাঠ দৌঁড়ে, চক্কর দিয়ে বেড়াচ্ছে।

দুপুরে খাওয়ার বিরতিতে ঊর্মিলা অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদা বসল। মাঠে চাদর বিছিয়ে টিফিন বক্স বের করে ভাত তরকারি নামিয়ে খেতে বসল। সাদামাটা খাবার। ভাত, করল্লা ভাজি আর গুড়ো মাছ। একটু পরে পাশে কারো বসার শব্দে ঘাড় ফিরিয়ে চাইল। উর্মি মেয়েটা হাতে বক্স নিয়ে বসেছে। বক্স খুলে নিজের খাবার বের করে পাশে রাখল। চিকেন কারি, চিংড়ি ভুনা আর ভাত এনেছে সে। ঊর্মিলাকে ওসব দিয়ে খেতে দেখে বক্স থেকে চিংড়ি, চিকেন বেড়ে দিল। ঊর্মিলা না না করলেও শোনেনি সে। অগত্যা খেতে শুরু করল। উর্মি বলল,
“আপা, আমি করল্লা ভাজি পছন্দ করিনা। তুমি আমাকে ছোট মাছ দাও। আচ্ছা আজকে নাহয় তোমার করল্লা একটু খেয়ে দেখা যাক।”

ঊর্মিলা খুশি মনেই দিল। মেয়েটা এত মিশুক আর মিষ্টি তার দারুন লাগছে কথা বলে। ভাগাভাগি করে খাওয়া সম্পন্ন করল। একটু পরে আবারও কাজে লেগে পড়ল। ঊর্মিলা প্রতিটা পদক্ষেপে উর্মিকে সাহায্য করল। কাজ করতে করতে কোত্থেকে যেন একটা কারেন্টের তার উর্মির উপরে পড়তে যাচ্ছিল সে নিজের জীবন ঝুঁকিতে রেখে উর্মিকে সেখান সরিয়ে দিয়েছে। উর্মির একটা কৃতজ্ঞতাবোধ আর ঋণ রয়ে গেল মানুষটার প্রতি।

ইমতিয়াজের কয়েকদিন ধরে ঘুম ভালো হচ্ছে না। শয়নে স্বপনে শুধু একজনই হানা দিচ্ছে। মেয়েটার নাম জেনেছে বহু কষ্টে। ঊর্মিলা। কি সুন্দর নাম! তার উর্মিমালা। আজকেও ভার্সিটির সামনে বাইকে চেপে বসে আছে। ঊর্মিলাকে দেখা যেতেই বাইক থেকে নেমে এগিয়ে আসল। ঊর্মিলা তাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে নিলে ইমতিয়াজ পিছন বলল,
“এই গুলি মেরে উড়িয়ে দে।”
ঊর্মিলা আঁতকে উঠে ব্যাগ চেপে ধরল। এসব নেতা ফেতাদের কাছে গুলি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তাকে সেদিনের স্পর্ধার জন্য মেরে ফেলবে নাকি? ভয়ে ভয়ে বলল,
“নাহ।”
ইমতিয়াজ এগিয়ে এসে বলল,
“কি না গুলি মেরে উড়িয়ে দে?”
ঊর্মিলা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“আমাকে গুলি করবেন না।”
ইমতিয়াজ ঊর্মিলাকে ভয় পেতে দেখে হো হো করে হেঁসে বলল,

“তোমাকে গুলি করব কখন বললাম। তোমার নামই তো গুলি মেরে উড়িয়ে দে। ভুলে গেছ? সেদিন বলেছিলে কিন্তু।”
শেষের কথাটা ভ্রু নাচিয়ে বলল। ঊর্মিলা নিজের বোকামোতে মারাত্মক বিরক্ত হলো। সেদিন কি না কি বলছে লোকটা মাথায় নিয়ে বসে আছে। আশ্চর্য লোক তো! ঊর্মিলা চলে যেতে নিলে ইমতিয়াজ বলে উঠল,
“উর্মিমালা আর কত জ্বালাবা?”
ঊর্মিলা অপরিচিত কারো মুখে নিজের নাম শুনে হতবাক হলো। বলল,
“আপনি নাম জানলেন কিভাবে?”
কানের পিঠ চুলকে বলল,
“জেনেছি এভাবে ওভাবে।”
ঊর্মিলা আর এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে চলে গেল। লোকটা কয়েকদিন ধরে সাংঘাতিক বিরক্ত করছে।

ঊর্মিলা কিছু কাজে উর্মির কলেজে এসেছে। কাজটা করে বেরোতেই সেদিনের টিজ করা লোকটাকে বাইকে হেলান দিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করতে দেখল। এই লোকের কাজ কি শুধু এখানে ওখানে আড্ডা মারা নাকি? যেসময়ই বের হয় এখানে নয়তো ওখানে তার দেখা পাওয়া যাবেই। এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তার মাঝে চলে এসেছিল সে খেয়ালই করেনি। বাস পুরো অগ্রভাগে এসে পৌঁছাতেই কারো ধাক্কা খেয়ে পাকা সিমেন্টের সঙ্গে বারি খেল। রক্তে হাত ভরে গেল। জ্ঞান হারানোর পূর্বে আবছা আবছা চোখে দেখল রক্তাক্ত একটি মেয়ে রাস্তায় পড়ে আছে।

ইমতিয়াজ নিজের চোখের সামনে উর্মিমালার এই অবস্থা দেখে ঠিক থাকতে পারল না। চিৎকার করে অজ্ঞান ঊর্মিলাকে আগলে নিয়ে ডাকল,
“উর্মিমালা, এই উর্মিমালা? কথা বলো। এই মেয়ে। এই তোরা তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে আয়।”
সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসতেই গাড়িতে করে দুটো বডি ঢোকানো হলো। ইমতিয়াজের ঊর্মিলার থেকে আশেপাশে চোখ যায়নি এতক্ষণ। ঊর্মিলার থেকেও বেশি রক্তাক্ত হয়েছে কলেজের একটি মেয়ে। আল্লাহ জানে কার মেয়ে! ইমতিয়াজ কাঁপা কাঁপা হাতে মেয়েটির রক্তাক্ত হাত ছুঁয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। অবচেতনে মেয়েটা তা জানতেও পারল না। জানলে কি খুশি হতো?

হাসপাতালে রক্তাক্ত শার্টে বসে আছে ইমতিয়াজ। কিছুক্ষণ আগে ঊর্মিলার কেবিনে এক ব্যাগ আর সেই মেয়েটির কেবিনে তিন ব্যাগসহ মোট চার ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ করে দিয়ে এসেছে সে। তার দলের ছেলেরা নিজ ইচ্ছায় কাঙ্ক্ষিত রক্ত ডোনেশন করেছে। একটু পর ‘আমার উর্মি ‘ ‘ আমার উর্মি ‘ করতে করতে এক লোককে ঢুকতে দেখে ইমতিয়াজ বুঝল এটা তার উর্মিমালার ভাই। ছলছল চোখে এগিয়ে যেতেই লোকটা কেমন করে যেন চাইল। হন্তদন্ত হয়ে উপরে চলে গেল। ইমতিয়াজের হাত, পা কাঁপছে। তার উর্মিমালার কিছু হবে না তো? ওই কলেজের মেয়েটা বাঁচবে তো? তার উর্মিমালাকে বাঁচাতে গিয়ে ছোট্ট মেয়েটা…। আর ভাবতে পারল না মুখ ঢেকে হাঁটু ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়ল। তার দলের ছেলেরা এগিয়ে এল।

চারদিন পর ঊর্মিলার ডিসচার্জ হয়। ইমতিয়াজ দেখতে আসতে পারেনি। জরুরী তলবে গ্রামে যেতে হয়েছে তাকে। এমনিতে তার চ্যালাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে জেনেছে ঊর্মিলা ভালো আছে। তাই নিশ্চিন্তে যেতে পেরেছে। শুনেছে কলেজের সেই মেয়েটি নাকি মারা গিয়েছে। ইমতিয়াজ বেশ খারাপ লেগেছে। কার যক্ষের ধন হারালো কে জানে? ঢাকায় ফিরে মেয়েটার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করবে ভাবল। তবে বহু কাজের প্রেশারে সেসব ভুলে বসল।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোতেই দারোয়ান এসে একখানা খাম ধরিয়ে দিতেই ঊর্মিলা বেশ ঘাবড়ে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে নিল সেটা। এটা কে দিয়েছে? এ শহরে তাকে চিঠি দেয়ার মতো কে আছে? নিতে চাইছিল না তবুও কি ভেবে যেন নিল। তৎক্ষনাৎ ব্যাগে ভরে কোনোদিকে না তাকিয়ে হেঁটে চলে গেল। তার গমন পানে একজনের চক্ষু নিরলস ভাবে চেয়ে রইল।
রাত তিনটা। আশেপাশে ঝিঁঝিঁ পোকা আর অদূর হতে কুকুরের ডাক ছাড়া আর কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। শুনশান নীরবতা। সকলেই গভীর ঘুমে নিমগ্ন। মোমবাতির হালকা আলোতে ঊর্মিলা দুরুদুরু বুকে ব্যাগ হতে চিঠির খাম বের করে ছিঁড়তেই একটা সুন্দর সুবাস নাকে ঠেকল। ভেতরে একখানা পত্র, ময়ূর ও কবুতরের পালক এবং কিছু গোলাপের পাপড়ি। সুবাসে বিমোহিত হয়ে পত্রখানা মেলে ধরতেই চোখের সামনে ধরা দিল ছোট ছোট অক্ষরে টানা টানা কিছু লেখা। হাতের লেখন বেশ সুন্দর। এক দেখায় মুগ্ধ হওয়ার মতো।
উর্মিমালা,

কেমন আছ কঠিন হৃদয়ের রমণী? আমি কেমন আছি জানতে চেও না মেয়ে। বড্ড বেশিই খারাপ আছি। তুমি কি জানো তুমি একজন নিদ্রাহরণকারী? তোমার ঐ ডাগর ডাগর আঁখি জোড়া রাতে আমাকে ঘুমোতে দেয়না? ইদানিং কাজকর্মেও অমনোযোগী হয়েছি বটে। সারাবেলা কেবল কল্পনায় মশগুল থাকি। রুচিও হারিয়ে ফেলেছি। কোনো খাবারে স্বাদ অনুভূত হয়না। শয়নে স্বপনে শুধু তুমিই এসে হানা দাও। খুবই খারাপ এটা। বাস্তবে তো তুমি ধরা ছোঁয়ার বাইরে তবে কল্পনায় এত জ্বালাচ্ছো কেন বলো তো?

পত্রখাম খুলতেই একটা সুবাস পেয়েছ না? শোনো এটা আমার নিজের গাছের হাসনাহেনা, বেলি ও বকুলের ঘ্রাণমিশ্রিত সুবাস। এই তিনটে ফুল আমার অত্যাধিক প্রিয়। তাই সবসময় টাটকা টাটকা পুষ্পত্রয় একত্র করে পারফিউম তৈরি করে সংরক্ষণ করে রেখে দেই। সেটারই কিছুটা তোমাকে উৎসর্গ করলাম। সাথে গোলাপের পাপড়ি, ময়ূর ও পায়রার পালক। পায়রা আমার নিজেরই তবে ময়ূরের পালক কেনা। শুনেছি চিঠির সঙ্গে পায়রা ও ময়ূরের পালক দিলে অপরপাশে মানুষের দিল নরম হয়। তুমি তো পাষাণ ললনা; আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে করছ কেবল ছলনা।
এগুলো যত্ন করে রেখে দিও সাথে যত্ন করে রেখ তোমার মন। মনের দখলদারিত্ব করা কিন্তু এখনো বাকি।
ইতি
কাছের অথবা দূরের কেউ

৬ ভাদ্র, ১৩৯৫ বঙ্গাব্দ
দুদিন আগে ঊর্মিলার ভাই এসে ইমতিয়াজকে শাসালো। উর্মিমালার সঙ্গে যেন কথা না বলে। ইমতিয়াজের রাগ উঠল বেশ। মেয়েটা সব কথা তার ভাইকে সাপ্লাই করে। নির্ঘাত তার সম্পর্কে উল্টাপাল্টা মন্তব্য করেছে নয়তো তার ভাই এসে শাসাবে কেন? আজকে হাতের কাছে পেলে খবর করে ছাড়বে। একটু পরেই মাথায় ওড়না প্যাঁচানো ঊর্মিলাকে দেখতে পেতেই তার মধ্যে জেদ ভর করল।
হুট করে এসে হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“চলো বিয়ে করব।”
“পাগল নাকি?”
“হ্যাঁ তোমার প্রেমে পাগল।”
“হাত ছাড়ুন।”

“দেখো রোজ রোজ বেগানা নারীকে দেখতে, টিজ করতে আমার ভালো লাগেনা। তার চেয়ে বরং বিয়েটা করে ভালো করে দেখে টেখে টিজ করব কেউ আর আড়চোখে চাইবে না। প্রতিদিন একজন তাগড়া পুরুষের এমন লাস্যময়ী রমণীর দিকে প্রেমময় দৃষ্টিপাত ধর্ম এবং সমাজের কেউই ভালো চোখে দেখছে না।”
“আশ্চর্য! আমি কিন্তু এবার চিৎকার করব।”
“দ্রুত করো। বিয়ের জন্য সাক্ষীরও তো দরকার আছে।”
মাথায় ওড়না ভালোভাবে টেনে চারিপাশ পর্যবেক্ষণ করে ধীর অথচ কঠিন স্বরে বলল,
“দেখুন মানুষ জড়ো হওয়ার আগে এখান থেকে কেটে পড়ুন। নয়তো আশেপাশের মানুষকে দিয়ে আপনাকে গণপিটুনি খাওয়াব। বখাটে কোথাকার!”

ইমতিয়াজ ভুঁইয়া শীষ বাজিয়ে গাইতে লাগল,
“ওহে পাষাণ ললনা একটুখানি কবুল বলো না,
আমি যে তোমার বিরহে ভাত মুখে তুলব না।”
ঊর্মিলা বেশ বিরক্ত হলো এসব কথায়। বলল,
“আজগুবি কথা রাখুন। আপনি ভাত মুখে না তুললে আমার কি?”
ইমতিয়াজ এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
“তুমি সত্যিই বিয়ে করবে না উর্মিমালা?”
কথাটা শুনে ঊর্মিলা একটু থমকালো। কেমন বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে কথা বলছে। ঊর্মিলা ইদানিং এই লোকটার প্রতি খানিকটা দুর্বলতা অনুভব করে। প্রায় এক বছর ধরে পিছনে পড়ে আছে। এখনো পিছু ছাড়ল না। বড় ভাইজানের সঙ্গে লোকটার সম্পর্কে বলতে হবে। ভাইজান যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে তার আপত্তি নেই কোনো। ঊর্মিলা সেটা মুখে প্রকাশ না করে চলে যেতে নিলে ইমতিয়াজ পিছন একটা গোলাপ এগিয়ে বলল,

“ওগো উর্মি মালা,
তরঙ্গের ন্যায় ঢেউ খেলো
আমার মনের উঠোনে।
তোমার প্রেমেতে পড়ে
ঝাঁপ দিয়েছি মন পুকুরে।
তোমার স্মৃতিতে কাটে আমার
সকাল বিকেল রাত্রি,
তুমি কি আমার সাথে
থাকবে দিবারাত্রি?”
ঊর্মিলা একটু অবাকই হলো ইমতিয়াজের গলায় আবৃত্তি শুনে। ইমতিয়াজ একটু শ্বাস নিয়ে বলল,
“তোমার জন্য কাল সারা রাত জেগে লিখেছি। কেমন হয়েছে?”
ঊর্মিলা কবিতা আবৃত্তি পছন্দ করে লোকটা জানে নাকি? আনাড়ি কবিতাটা খারাপ হয়নি। তবে মুখে বলল,
“একদমই বাজে।”
বলেই প্রস্থান করল। ইমতিয়াজ তার যাওয়ার পানে মুখ অন্ধকার করে হতাশ হয়ে চেয়ে রইল। আসলেই বাজে হয়েছে?

১৫ আশ্বিন, ১৩৯৫
ইমতিয়াজ ভুঁইয়া ঊর্মিলাকে তুলে নিয়ে এল কাজী অফিস। ঊর্মিলা হতবাক হয়ে শুধালো,
“এসব কি?”
“বিয়ে করব।”
“আপনি কি আসলেই সুস্থ?”
“হ্যাঁ কেন? তোমার অসুস্থ মনে হয়?”
“তা নয়তো কি? বলা নেই কওয়া নেই এভাবে কাজী অফিস নিয়ে আসে কে?”
ইমতিয়াজ নির্লিপ্ত গলায় বলল,
“আমি।”
ঊর্মিলা বিরক্ত হয়ে বলল,
“এসব আজগুবি কথা রাখুন, আমাকে যেতে দিন।”
ইমতিয়াজ এবার ঊর্মিলার চোখের দিকে চেয়ে বলল,

“আমার চোখের দিকে চেয়ে সত্যি করে বলবে, তোমার কি আমাকে এক বিন্দুও পছন্দ না? একবার না বলো আর জীবনেও তোমার সামনে আসব না।”
ঊর্মিলা কিছু বলতে পারল না। উশখুশ করতে লাগল। ইমতিয়াজ তাকে উত্তর দিতে না দেখে চলে যেতে উদ্যত হতেই ঊর্মিলা ধীর গলায় বলল,
“ভাইজান মানবে না?”
ইমতিয়াজ ফিরে যেতে চেয়েও বলল,
“কেন?”
“আপনার আর আমার বংশ একই।”
“হ্যাঁ তো?”
ঊর্মিলা মিনমিন করে বলল,
“ভাইজান এক বংশে বিবাহ পছন্দ করেন না।”

“আমার তো তোমার আর আমার একই বংশ ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং লাগছে। আমাদের ছেলে মেয়েকে সবাই ডাবল ভুঁইয়ার পুত্র, কন্যা বলে সম্বোধন করবে ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না?”
ঊর্মিলা মুখ শক্ত করে বলল,
“মোটেই না। বিয়েই হয়নি, বাচ্চা পর্যন্ত চলে গেছে।”
ঊর্মিলা মুখ ঘুরিয়ে নিতেই ইমতিয়াজ বলল,
“যদি বলি তোমার ভাই বিয়েতে রাজি তাহলে বিয়ে করবে?”
ঊর্মিলা কিছু বলল না। ইমতিয়াজ তার কথা না বলাকে সম্মতি ধরে নিল। কাকে যেন ফোন দিতেই ঊর্মিলার দিকে এগিয়ে দিল। ঊর্মিলা ফোন কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে এল,
“বিয়েটা করে ফেল। আমার পূর্ণ সম্মতি আছে।”
ব্যাস কবুল বলে কাগজে কলমে ও ধর্মীয়ভাবে ইমতিয়াজ ভুঁইয়ার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে গেল ঊর্মিলা ওরফে উর্মি ভুঁইয়া।

এতটুকু বলে ব্ল্যাক ভাইপার থামল। বলল,
“সেদিন আমি কোনো অনুমতি দেইনি। আমার কণ্ঠ হুবহু নকল করে ইমতিয়াজের এক বন্ধু এই কাজ করছিল। আমি কিছুতেই সেসব মেনে নিতে পারিনি।”
মুনতাজির বলল,
“আপনি মম, পাপার সবকিছু এভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে কিভাবে জানলেন? তারা বলেছিল?”
ব্ল্যাক ভাইপার সম্ভবত জানত এই প্রশ্নটা মুনতাজির করবে। সে ব্রিফকেস থেকে একটা কালো মলাটের ডায়েরি মুনতাজিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এটার ভেতর সব লিখিত আছে। যেটায় তোমার বাবা নিজের জীবনের পুঙ্খানুপুঙ্খ সব ঘটনা নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছিল।”
মুনতাজির ডায়েরিটা হাতে নিতেই বলল,

“এটা কোথায় পেলেন?”
ব্ল্যাক ভাইপার একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তোমার বাবাকে ব্যবহার করতে, হাতে রাখতে কিংবা ফাঁদে ফেলতে যাই বলো সেজন্য এই ডায়েরিটা লুকিয়ে চুরি করেছিলাম বিভিন্ন তথ্য জানতে।”
মুনতাজির ডায়েরিটায় হাত বুলিয়ে মাঝের একটা পৃষ্ঠা খুলতেই নজরে পড়ল টানা টানা চিকন অক্ষরে লেখা কিছু অনুভূতি,

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৫৯

“তাকে ভালোবেসেছিলাম আশির দশকে। তখনকার ভালোবাসা এত রঞ্জিত ছিল না আর নাতো ছিল সে। সাদামাটা ছিমছাম গোছের এক ইস্পাত রমণী। পিছলে পড়লাম একদম ঘোর বর্ষায়। আসমান চিরে তুমুল বর্ষণ আর তর্জন গর্জন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের সামনে ভিজে একাকার হয়ে অসহায় বদনে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। ডাগর ডাগর সেই মায়াবী চোখে চাইতেই সর্বনাশটা হয়ে গেল। একটা টান অনুভব করছিলাম। ব্যাস চেয়ারম্যান পুত্র দাপুটে ইমতিয়াজ ভুঁইয়া হয়ে গেল উর্মিমালার একপাক্ষিক একনিষ্ঠ প্রেমিক পুরুষ। পরে বুঝেছিলাম সেই টান কিংবা মহব্বত সৃষ্টিকর্তারই ইশারা ছিল।”
~ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৬০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here