নীল চিরকুট পর্ব ৫১+৫২

নীল চিরকুট পর্ব ৫১+৫২
নৌশিন আহমেদ রোদেলা

দিনের শেষ ক্লাসটা শেষ করে বেরিয়ে এসেছে নম্রতা। পাশাপাশি হাঁটছে ছোঁয়া আর নীরা। তিন জোড়া পা একই তালে এগিয়ে গেলেও চোখ-মুখে নিস্পৃহ ভাব। কোথাও একটা সুর কাটার ছাপ। ডিপার্টমেন্ট থেকে বটতলা পর্যন্ত একদম নীরব হেঁটে গেল তারা। কারো মুখে কথা নেই। প্রত্যেকেই তার নিজস্ব ভুবনে ব্যস্ত। বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে গিয়েই বিদায় নিল ছোঁয়া। ছোঁয়াকে বিদায় দিয়েই নীরবতা ভাঙার চেষ্টা করল নম্রতা। হালকা হেসে বলল,

‘ অন্তু কি জাদু করেছে বলো না? আমাদের ফোন তুমি কেন রিসিভ করো না?’
নীরা তাকাল। এক গাল হেসে বলল,
‘ ফোন রিসিভ করার জন্য তো ফোনটা হাতের কাছে থাকতে হবে নাকি? আমার ফোনেরই কোনো খোঁজখবর থাকে না।’
‘ থাকবে কিভাবে? দিন-রাত প্রেমিক স্বামীর চোখে ডুবে থাকলে ফোন কেন? দুনিয়ার খোঁজ-খবর না থাকাও আশ্চর্যের কিছু নয়।’
নীরা শুকনো হাসল। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
‘ তুই হঠাৎ হল ছেড়ে দিলি কেন? হলে সীট থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন ধানমন্ডি টু শাহবাগ জার্নি করার মানে হয় কোনো?’
নম্রতা ঠোঁট উল্টে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ তোকে ছাড়া হলে টলে থাকতে ভালো লাগে না দোস্ত। কেমন একা একা লাগে। তার থেকে ধানমন্ডি থাকাই ভালো। তুইও ধানমন্ডি, আমিও ধানমন্ডি। আর মজার ব্যাপার হলো, আমার ডাক্তারের বাড়িও ধানমন্ডি। আহা! খাপে খাপ।’
কথাটা বলে চোখ টিপল নম্রতা। নম্রতার কথার ধরনে হেসে ফেলল নীরা। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমাকাশে। কনে দেখা হলদেটে আলোয় ভরে উঠেছে চারপাশ। নম্রতা অনুযোগের সুরে বলল,

‘ বিয়ের পর তুই যেন কেমন হয়ে গিয়েছিস নীরু। আমি তোকে আমার দিকটা শেয়ার করলেও তুই তোর দিকটা শেয়ার করিস না। আগে তো করতিই না। এখন আরও না। অন্তু আর তোর সম্পর্ক ঠিক যাচ্ছে তো?’
নম্রতার কন্ঠে দুশ্চিন্তার আভাস পেয়ে হাসল নীরা। হাসি হাসি মুখে বলল,
‘ আরে ধূর! শেয়ার করার মতো কিছু থাকলে তো শেয়ার করব নাকি? তাছাড়া আমি যে একটু ইন্ট্রোভার্ট তা তো তুই জানিসই। ওসব ছাড়, আমি ভাবছি অন্য কথা।’
কথা বলতে বলতেই ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে বসল ওরা। দুই প্লেট সিঙ্গাড়া আর চা অর্ডার দিয়ে ভ্রু কুঁচকাল নম্রতা। আগ্রহ নিয়ে বলল,

‘ কি কথা?’
‘ হুট করে ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়াটা কেমন অদ্ভুত লাগছে আমার। মনটাও খারাপ লাগছে। বিয়ের পর নাকি অস্ট্রেলিয়াতেই স্যাটেল হবে ছোঁয়া? মিস করব খুব। আংকেল-আন্টি এখনই বিয়ে দেওয়ার জন্য লাফালাফি করছে কেন বল তো? একটা মাত্র মেয়ে। আমাদের মতো হা-ভাতে অবস্থা তো ওদের নয়। তাহলে সমস্যাটা কি?’
নম্রতা সিঙ্গাড়ার প্লেটটা এগিয়ে নিতে নিতে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। টেবিলের উপর খানিকটা ঝুঁকে পড়ে ষড়যন্ত্রের মতো ফিসফিস করে বলল,
‘ সমস্যাটা হলো সিঁথি আন্টির মাথা। বৈজ্ঞানিক ভাষায় যাকে বলে মস্তিষ্ক।’
নীরা বুঝতে না পেরে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। থতমত খেয়ে বলল,
‘ মানে?’
নম্রতা সোজা হয়ে বসল। সিঙ্গাড়ায় কামড় দিয়ে বিজ্ঞদের মতো বলল,
‘ মানেটা পানির মতো পরিষ্কার। আমার ধারণা, এই মহিলার মাথা নষ্ট। আই মিন, মস্তিষ্ক। তোর বিয়েতে একটা শাড়ি পরা নিয়ে হাজারটা কান্ড করেছে এই মহিলা। এখনও করছে, ভবিষ্যতেও করবে। আমার কি মনে হয় জানিস?’
নীরা ভ্রু কুঁচকাল,

‘ কি?’
নম্রতা ঘাড়টা খানিক নুইয়ে এনে টেবিলের উপর ঝুঁকল। ফিসফিস করে বলল,
‘ বিয়ের পর বেবি প্ল্যানিং-এর কাজটাও বোধহয় এই মহিলায় করবে। তুই ভেবে দেখ, সিঁথি আন্টির জন্য অসম্ভব কিছু নয়। কদাপি আশ্চর্যজনক নহে!’
কথাটা বলে হেসে ফেলল নম্রতা। নীরা কৃত্রিম শাসনের সুরে বলল,
‘ ছিঃ! দিন দিন ভীষণ বেয়াদব হচ্ছিস নমু্। ডাক্তার সাহেব এসবের ঔষধ দিচ্ছে নাকি আজকাল?’
নম্রতা দাঁত বের করে হাসল। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চকচকে দৃষ্টিতে তাকাল। দুষ্টুমি করে বলল,
‘ আমাকে ঔষধ দেওয়া এই ডাক্তারের কর্ম নয় বস। বেচারা আজকাল নিম পাতার গুণাবলি দেখতে দেখতেই অস্থির।’

‘ ভীষণ জ্বালাচ্ছিস মনে হয়?’
‘ তা একটু জ্বালাচ্ছি। বেশ কিছুদিন যাবৎ ফোন টোন ধরা হচ্ছে না। ঘোষণা করা হয়েছে, মিষ্টি মিষ্টি গল্প করতে হলে বাবার সাথে করুন, আমার ব্যস্ততা আপাতত কমছে না।’
নীরা খিলখিল করে হেসে উঠল। অনেকদিন বাদে নিজের হাসির শব্দে নিজেই চমকে গেল নীরা। নীরাকে হাসতে দেখে নিজেও হাসল নম্রতা। ঠোঁটে হাসি রেখেই বলল,
‘ ডাক্তাররা যে এমন গাধার মতো খাটে তা ডাক্তারের সাথে প্রেম না হলে জানতেই পারতাম না। সারাদিন ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা। আমার থাকা-না-থাকার কোনো গুরুত্ব আছে বলেই মনে হয় না। মাঝে মাঝে সপ্তাহেও খোঁজ খবর নেয় না। আর যখন নেয় তখন তার পাগলামো অস্থিরতা।’
নম্রতার নিরন্তর ছুটে চলা ঠোঁটের দিকে চেয়ে শুকনো হাসল নীরা। বুকের ভেতর জমে উঠা কষ্ট কষ্ট ভাবটা আরও একটু ভারী হতেই বিরবির করল,

‘ সুখ চামচটা মুখে নিয়ে জন্মেছিস তুই নম্রতা। সুখের চাদরে মোড়ে আছিস বলেই হয়ত জানিস না, প্রেমিকের সীমাহীন ভালোবাসা পেয়েও দুঃখ করা সাজে না। সবার কপালে এই সুখটুকুও জুটে না। এটা কে ঠিক অবহেলা বলা চলে না। অবহেলার মতো তীব্র ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা সবার হয় না।’
নম্রতার ফোনে ঘন্টী বাজতেই ঘোর কাটল নীরার। টেবিলের উপর থাকা ফোনটির দিকে আপনা-আপনিই নজর আটকাল তার। স্ক্রিনে ‘ডক্টর’ শব্দটা ভেসে উঠতেই চোখ ফিরিয়ে নম্রতার দিকে তাকাল সে। একবার কেটে গিয়ে দ্বিতীয়বার বাজতেই ফোন উঠাল নম্রতা। নম্র কন্ঠে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে ক্ষুব্ধ কন্ঠ ভেসে এলো,
‘ সমস্যাটা কী? কতবার ফোন দিয়েছি দেখেছেন? গত তিনদিনে মোট একশো বিশবার কল দিয়েছি। অথচ নো রিপ্লাই। সবকিছুর একটা লিমিট থাকা উচিত। পাঁচ মিনিটের মাঝে ভার্সিটি গেইটে এসে দাঁড়াবেন। আমি গেইটে অপেক্ষা করছি।’

‘ আপনি চলে যান। আমি ব্যস্ত আছি। গেইটে যেতে পারব না।’
আরফান রুষ্ট কন্ঠে বলল,
‘ পারবেন না মানে? অবশ্যই পারবেন। পারতে হবে। পাঁচ মিনিটের মাঝে গেইটে আসবেন নয়তো খবর আছে। দরকার হলে হাত-পা বেঁধে তুলে নিয়ে আসব তবুও দেখা আপনাকে করতেই হবে। ইউর টাইম স্টার্টস্ নাও।’
কথাটা বলেই ফোন কাটল আরফান। নীরা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়াল। ব্যাগটা হাতে তুলে নিতে নিতে বলল,
‘ বহুত হয়েছে। আর জ্বালাস না। আমাকেও উঠতে হবে। বিকেল হয়ে এসেছে। এখনই বাসায় না ফিরলে রান্না বসাতে দেরী হয়ে যাবে। আসছি রে।’

নম্রতা থম ধরে বসে রইল। এতোক্ষণে উপলব্ধি করল, কাজটা একদম ঠিক হয়নি তার। সাথে সাথে না ধরলেও পাঁচ বারে একবার ফোন ধরা উচিত ছিল। আরফান ক্ষেপে আছে। নম্রতা অসহায় মুখ নিয়ে উঠে দাঁড়াল। অনুচিত কাজ করে ফেলে হা-হুতাশ করাটাই বোধহয় মানুষগত স্বভাব। নম্রতার রাগ হল। এই মানুষগত, বেয়াদব স্বভাবটিকে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু হায়! সব ইচ্ছেই যে পূরণ হওয়ার নয়।

শাহবাগ থেকে হাতিরঝিলের রাস্তা ধরে হাঁটছে নাদিম- অন্তু। নাদিমের হাতে বাদামের ঠোঙা। একেকটা বাদাম উপরের দিকে ছুঁড়ে ফেলে মুখের ভেতর লুফে নিচ্ছে সে। বাদামের টুকরোগুলো মুখে পড়তেই চিবোতে চিবোতে মিটমিট করে হাসছে। অন্তু হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। বিরক্ত কন্ঠে বলল,
‘ কি সমস্যা তোর? হাসছিস কেন? আমার দিকে চেয়ে হাসবি না৷ আমার বিরক্ত লাগছে।’
অন্তুর কথার জবাবে আবারও মিটমিট হাসি উপহার দিল নাদিম। অন্তু গরম চোখে তাকাল। নাদিমের হাসি এবার বিস্তৃত হলো সারা মুখে। পরপর বেশ কয়েকটা বাদাম মুখে পুরে নিয়ে হঠাৎই এক অদ্ভুত কাজ করে বসল সে। আচমকা টানে অন্তুর গলায় লেগে থাকা ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজটা খুলে আনল হাতে। নিঃশব্দে হেসে বলল,
‘ এসব ব্যান্ডেজ ফ্যান্ডেজে কাজ হবে না মামা। বিবাহিত পুরুষ গরমের দিন চাদর গায়ে বেরুলেই কাহিনি রফা-দফা। ব্যান্ডেজের আইডিয়াটা ভালো। কিন্তু শকুনের চোখ থেকে গুপ্তধন রক্ষা করার চেষ্টা তোমার ব্যর্থ।’
অন্তু কলার টেনে গলার দিকটা ঢাকার চেষ্টা করে বলল,

‘ ফালতু কথা বলবি না। পোকা কামড়েছিল। তেমন কিছু নয়।’
নাদিম শব্দ করে হেসে বলল,
‘ বুঝি ভাই বুঝি। বউপোকা নিয়ে ঘুমোতে গেলে দু-একটা কামড় আসলে খেতেই হয়। গরমের দিন চাদর গায়ে ঘুরতে হয়। মাঝে মাঝে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজও লাগাতে হয়। অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
অন্তু রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেলল। নাদিম টিপ্পনী কেটে বলল,
‘ এই সত্যি করে বল তো, সত্যিই বউ পোকা? নাকি কোনো বহিরাগত পোকা? আজকাল বহু সুন্দরীদের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি শেখাচ্ছিস। কাহিনী কি মামা?’
কথাটা বলে ভ্রু নাচাল নাদিম। অন্তু সুন্দর করে হাসল। নাদিমের কাঁধে চাপড় দিয়ে বলল,
‘ তুমি যার কথা বলছ, সে তো তোমার পোকা বন্ধু। মিনিটে মিনিটে তার নাদিম স্যারের কথা মনে পড়ে যায়।’
নাদিম সাবলীল কন্ঠে বলল,

‘ এখনও সেখানেই আটকে আছে? আমি ভেবেছিলাম এতোদিনে তোর প্রেমে টেমে পড়ে গিয়েছে।’
নাদিমের কথায় বেশ বিরক্ত হলো অন্তু। নাদিমের পায়ে আকস্মিক লাথি দিয়ে বলল,
‘ অন্যের ফিলিংসকে এতো ছোট করে দেখিস কেন, শালা?’
আকস্মিক আঘাতে উল্টে পড়তে পড়তে সামলে নিল নাদিম। অন্তুকে কিছু বিশ্রী গালি দিয়ে বুকে থুতু ছিটাল,
‘ আশ্চর্য! কথায় কথায় লাথ্থি মারোছ ক্যান বুঝলাম না। আর ছোট করলাম কোথায়? মানুষ সেকেন্ড টাইম প্রেমে পড়তে পারে না? যেখানে-সেখানে যার-তার প্রেমে পড়ে যাওয়ার অধিকার মৌশির আছে। ইট’স নরমাল।’
অন্তু অসন্তুষ্ট কন্ঠে বলল,

‘ একজনের প্রতি অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও অন্যজনের প্রেমে পড়ে যাওয়াটা কখনোই নরমাল হতে পারে না। বরং অন্যায়। এখন যদি আমি তোদের নীরাকে রেখে অন্যকারো প্রেমে পড়ে যাই, সেটা কী তোরা মেনে নিবি? নীরার প্রতি অন্যায় হয়েছে বলে মনে হবে না?’
নাদিম যুক্তি দিয়ে বলল,
‘ তোর আর নীরুর ব্যাপারটা ভিন্ন। তোদের মধ্যে একটা সোশ্যাল কমিটমেন্ট আছে৷ মৌশির ব্যাপারে সেটা নেই। এক পাক্ষিক ভালোবাসায় কমিটমেন্ট থাকে না। কাঙ্ক্ষিত মানুষের ভালোবাসা না পেয়ে অন্যকারো প্রতি আকৃষ্ট হওয়া দোষের কিছু নয়। মৌশির উচিৎ নতুন করে প্রেমে পড়া।’
অন্তু হতাশ হয়ে বলল,

‘ ভালোবাসা নামক অনুভূতিটা চাইলেই অন্যকারো উপর ট্রান্সফার করা যায় না দোস্ত। তুই যতটা সহজভাবে বলছিস, মৌশির জন্য অতটা সহজ হবে না। ভালোবাসা সহজ নয়। কাউকে ভালোবাসার মতো যন্ত্রণার কিছু হয় না।’
নাদিম হাসল। প্রত্যুত্তর করল না। অন্তু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ এতো অবহেলা না করে, মেয়েটিকে একটু বুঝিয়ে বলিস দোস্ত। বাচ্চা মেয়ে তো, সফ্ট হার্ট।’
নাদিম প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
‘ ছোঁয়ার গরুটারে দেখছিস?’
হঠাৎ এমন কথায় অবাক হলো অন্তু,
‘ ছোঁয়ার গরু মানে? ছোঁয়া গরু কিনল কবে? গরু দিয়ে সে করবেই বা কী? আশ্চর্য!’
নাদিম হুহা করে হেসে উঠে বলল,
‘ ও কিনে নাই। ওর মা গিফ্ট করেছে। অস্ট্রেলিয়ান গরু। ইংরেজ বলদ ওয়েডস্ অস্ট্রেলিয়ান গরু, অতি সুন্দর পোস্টার। আমার তো বিয়েতে যাইতেই ভয় লাগছে দোস্ত। গুঁতো তুতো মারলে সর্বনাশ।’

ভার্সিটি গেইট থেকে বেরিয়েই আরফানের উপর চোখ পড়ল নম্রতার। একটা লাল রঙা মার্সিডিজের গায়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা লম্বাচওড়া শ্যামবর্ণ মানুষটির গায়ে ছাই রঙা টি-শার্ট। গম্ভীর শান্ত চোখজোড়া কব্জিতে থাকা হাত ঘড়িতে আবদ্ধ। শেষ বিকেলের হলদেটে আলোয় প্রাণবন্ত দেখাচ্ছে তার শ্যামবর্ণ মুখ। মাথাটা নিচের দিকে ঝুঁকে থাকায় গোছাল চুলের কিছুটা এসে পড়েছে কপালে। নম্রতা সন্দিহান চোখে তাকাল। পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ভয়ানক রূপবতী মেয়েটিকে দেখে আপনা আপনিই কুঁচকে গেল ভ্রু। গোল গোল চোখে মেয়েটির দিকে চেয়ে থেকেই নিজের দিকে চোখ ফেরাল নম্রতা। এই অতিরিক্ত সুন্দর মেয়েটির সামনে নিজেকে কেমন ঠুনকো মনে হলো তার। রাগে-দুঃখে ঈর্ষান্বিত মনটা ফুঁসে ফুঁসে উঠল। কোথায় ভেবেছিল আরফানের বিরহে কাতর মুখটি দেখে খানিকটা স্বস্তি কুড়বে কিন্তু কোথায় বিরহ?কোথায় কি?এই লোক তো উল্টো তাকেই জ্বালিয়ে মারছে৷ কে এই মেয়ে? এতো সুন্দরী মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর মানে কী? আরফান কী বুঝাতে চাইছে তার থেকেও ভালো ভালো অপশন তার কাছে আছে? অবুঝ মনের নানাবিদ দ্বিধায় কান্না পেয়ে যাচ্ছে নম্রতার। আরফান নামক মানুষটিকে এই মুহূর্তে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। বেয়াদব!

ঘড়ি থেকে চোখ তুলে তাকাতেই নম্রতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল আরফান। রুষ্ট চোখজোড়া নম্রতার উপর নিবদ্ধ রেখে কোনোরূপ বনিতা ছাড়াই বলল,
‘ আবারও লেইট!’
নম্রতা উত্তর দিল না। মুখ ফুলিয়ে পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির দিকে তাকাল। চোখে-মুখে চাপা ক্রোধ নিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে রইল। নম্রতার স্থিরতায় পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির উপর কোনোরূপ প্রভাব পড়ল বলে মনে হলো না। সে স্বভাবসুলভ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
‘ তুমি তো দেখতে ভীষণ মিষ্টি, মিস.ছোঁড়াছুড়ি! বাহ্! তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে।’

নিদ্রার সম্বোধনে ঈর্ষান্বিত মনটা ফুঁস করে জ্বলে উঠল এবার। ছোঁড়াছুড়ি? কিসের ছোঁড়াছুড়ি? এই মেয়ে তাকে আরফানের জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলার কথা বলছে না তো? সুপ্ত ক্রোধ চোখে-মুখে স্পষ্ট হয়ে উঠতেই গাড়ির কাঁচ নামিয়ে মাথা বের করলেন একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা। পরনে কালো পেড়ে সাদা শাড়ি। ঘাড়ের কাছে ঘন চুলের বিশাল খোপা। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। টান টান ত্বকে রূপবতী মেয়েটির চেহারার ছাঁচ। নম্রতা পুরো ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে হতভম্ব চোখে চেয়ে রইল। আরফান ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে দুই পা এগিয়ে নম্রতার পাশে এসে দাঁড়াল। নম্রতা দ্বিধান্বিত চোখে একবার গাড়িতে থাকা ভদ্রমহিলা তো আরেকবার আরফানের দিকে তাকাল। আরফান হতাশ কন্ঠে বলল,

‘ আপনার যন্ত্রণায় আমার পুরো পরিবার রাস্তায় নেমে এসেছে নম্রমিতা। এই মুহূর্তে পাত্রী দেখা পর্ব চলছে। ইউ আর দ্যা মেইন ক্যারেক্টার ইন দিস এপিসোড। অল দ্যা বেস্ট পত্রপ্রেমিকা!’
আরফান এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো শেষ করে নম্রতার দিকে তাকাল। নম্রতা বোকা বোকা চোখে চেয়ে থেকে বলল,
‘ মানে?’
আরফান উত্তর দিল না। নম্রতা হতবিহ্বল চোখে আবারও গাড়িতে থাকা ভদ্রমহিলার দিকে তাকাল। ভদ্রমহিলা ধীরে-সুস্থে গাড়ি থেকে নামলেন। তাঁর উজ্জল মুখশ্রীতে তীক্ষ্ণ ব্যক্তিত্ববোধের ছটা দেখে কিছুটা ভরকে গেল নম্রতা। অসহায় চোখে আরফানের দিকে তাকাল। আরফানকে অবিচল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও ভদ্রমহিলার দিকে তাকাল। ভদ্রমহিলার গম্ভীর চেহারা দেখে মনে মনে শত তারা গুণতে লাগল নম্রতা। বুকের ভেতর থাকা হৃদপিন্ডটা খনিকের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেল ভয়ে। মুহূর্তের মধ্যেই ভদ্রমহিলাটিকে ভীষণ রাগী বলে আখ্যায়িত করে ফেলল নম্রতা। পরমুহূর্তেই নম্রতার ভাবনাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে মিষ্টি করে হাসলেন ভদ্রমহিলা। নম্রতার ডানগালে আলতো হাত ছুঁইয়ে বললেন,

‘ তুমিই তবে শ্যামলতা?’
নম্রতা মাথা নাড়ল। ভদ্রমহিলা হেসে বললেন,
‘ কিন্তু এই মোমের মতো মেয়েটিকে তো শ্যামলতা নামে মানাচ্ছে না মা। এই মিষ্টি মেয়েটির নাম হওয়া উচিত ছিল, শুভ্রলতা। আমি তোমাকে শুভ্রলতা বলে ডাকলে কী তুমি রাগ করবে মা?’
ভদ্রমহিলার অসম্ভব সুন্দর কন্ঠস্বরে মস্তিষ্কে শীতল হাওয়া বয়ে গেল যেন। নম্রতা মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে মৃদু হাসল। হঠাৎ করেই উপলব্ধি করল, এই ভদ্রমহিলাকে তার খুব পছন্দ হয়েছে। ভীষণ তৃপ্তি দিচ্ছে তার কথা বলার ভঙ্গিমা। নম্রতাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও কথা বললেন ভদ্রমহিলা,
‘ তুমি নিশ্চয় আমায় চিনতে পারছ না? আমি হলাম নিষ্প্রভের মা।’
ভদ্রমহিলার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে পেছন থেকেই বলে উঠল নিদ্রা,

‘ আর আমি হলাম নিদ্রা। নিষ্প্রভ ভাইয়ার ছোট হলেও তোমার থেকে এক বছরের বড়। সুতরাং, বিয়ের পর আমি তোমাকে ভাবি বলে ডাকব না। নাম ধরে ডাকব। আমি তোমাকে নাম ধরে ডাকলে কী তুমি রাগ করবে ছোড়াছুড়ি?’
নম্রতা যেন হোঁচট খেল এবার। ছোঁড়াছুড়ি? আবারও ছোঁড়াছুড়ি? এতো সুন্দর একটা মেয়ে বারবার এমন কুৎসিত নামে কেন ডাকছে তাকে? ভাই ডাকে নিম পাতা, মা ডাকে শুভ্রলতা। পাতা-লতা শেষ করে ফুল-পাখিও তো ডাকতে পারত নিদ্রা। নম্রতা একটুও রাগ করত না। কিন্তু হুট করেই ছোঁড়াছুড়িতে চলে যাওয়ার লজিকটা কিছুতেই ধরতে পারছে না নম্রতা। নম্রতা অসহায় চোখে তাকাল। আরফানের মা নম্রতার ডানহাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলল,
‘ তুমি নাকি রাগ করে কথা টথা বলছ না? বেশ করেছ। এই বদমাইশের সাথে কথা বলা উচিতও না। আজ ওর রাতের খাবার বন্ধ। ওর রিপ্লেজমেন্টে খাবার টেবিলের দায়িত্ব হবে তোমার। কি? যাবে না? ‘
নম্রতা বিস্ময় নিয়ে আরফানের দিকে তাকাল। আরফান মৃদু হাসল। চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করল। নম্রতা বিস্ময়ভাব নিয়ে ভদ্রমহিলার দিকে তাকাল। ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,

‘ রাতে বাইরে থাকাটা বাবা-মা এলাউ করবে না আন্টি।’
ভদ্রমহিলা কিছু একটা ভেবে বললেন,
‘ কোনো সমস্যা না থাকলে তুমি কি তোমার বাবার নাম্বারটা দিবে মা? আমি তোমাদের সপরিবারে নিমন্ত্রণ দিতে চাই। এই মিষ্টি মেয়ের বাবা-মার সাথে পরিচয়টা না হলেই নয়। নিস্প্রভ বলছিল, তোমরাও নাকি ধানমন্ডিতেই থাকো? রোড নাম্বার আলাদা হলেও এলাকা কিন্তু একই। সে হিসেবে আমরা সবাই প্রতিবেশী হয়ে গেলাম না?’
নম্রতা কোনো উত্তর খুঁজে পেল না। মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইল ভদ্রমহিলার মুখে। কাউকে এতো দ্রুতও বুঝি আপন করে নেওয়া যায়? কন্ঠস্বরের স্বাভাবিক, ছোট্ট বাক্যগুলিতে বুঝি এতোটাও মায়া ঢালা যায়?

ভার্সিটি থেকে ফিরেই রান্না বসিয়েছে নীরা। সন্ধ্যার নাস্তা আর রাতের খাবার তৈরি করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে খেয়ালই ছিল না তার। টেবিলে খাবার সাজিয়ে গুছিয়ে সিংকে হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করছিল নীরা। খোঁপা ছেড়ে বেরিয়ে আসা এলোমেলো চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কপালে। চেহারায় ক্লান্তি। নাকে-মুখে তৈলাক্ত ঘামের আভা। এমন সময় পাশে এসে দাঁড়ালেন জাহানারা। অন্তুর খাবারটা আলাদা করে ঢেকে রাখতে রাখতে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালেন। শাশুড়ীর দৃষ্টিকে খেয়াল করে ভেজা হাতের পিঠ দিয়ে চুল ঠিক করে ওড়নার আঁচল টানল নীরা। আমতা আমতা করে বলল,

‘ কিছু বলবেন মা?’
জাহানারা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল। নীরার প্রতি আজকাল একটু-আধটু সন্তুষ্ট সে। সেদিন নীরার করা সরল অভিযোগের পর বাইরে রাত কাটানো বন্ধ হয়েছে অন্তুর। সারাদিন যেখানেই থাকুক না কেন? রাত বারোটার আগে ঠিকঠাক বাড়ি ফিরছে সে। রাতের খাবারটা নিয়ম করে বাড়িতেই খাচ্ছে। ছেলের এতটুকু নিয়মমাফিক জীবন দেখেই এক টুকরো স্বস্তি পেয়েছে জাহানারা। ছেলের বউয়ের প্রতি প্রকাশ্য তিক্ততা খানিক কমে এসেছে। জাহানারা কৃত্রিম রাগ নিয়ে বলল,

‘ সব সময় এমন সালোয়ার কামিজ পরে থাকো কেন? এটা তোমার বাপের বাড়ি না। বাড়ির বউদের রঙ-বেরঙের শাড়িতেই ভালো মানায়। অন্তু বাসায় থাকলে এসব সালোয়ার কামিজ রেখে শাড়ি পরে থাকবে। ওর সামনে শাড়ি পরে ঘুরঘুর করবে। দাদী-নানীরা বলত, “কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ট্যাশ ট্যাশ।” এখন এতো উড়তে দিলে অন্য পাখির খাঁচায় যেতে কতক্ষণ? নিজের সংসার ধরে রাখতে হলে এমন থম মেরে বসে থাকলে চলবে না। সময় থাকতে লাঘাম ধরো। প্রেমের বিয়ে বলে গা ভর্তি তেল নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। পুরুষ মানুষের মন আর গাছের পাকা আম কোনটারই বিশ্বাস নেই বউ। কখন, কোথায় ঝড়ে পড়বে তা তারা নিজেরাই জানে না।’

কথাগুলো বলেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল জাহানারা। নীরা সাবান মাখা হাতে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। শাশুড়ী মা কী কোনোভাবে তার আর অন্তুর ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছেন? সত্যিই কি এবার লাঘাম ধরা উচিত নীরার? অন্তুর পক্ষে কি সত্যিই অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হওয়া সম্ভব? বুকের ভেতর থেকে বিরক্ত এক সত্তা ধমকে উঠে বলল, ‘কেন সম্ভব নয়? অন্তুকে দেখেছিস কখনও মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে? বিয়ের পর একবারও অন্য দৃষ্টিতে তাকিয়েছে সে? তাকায়নি। তবে?’ নীরা অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে কাজে হাত দিল। সত্যিই যদি এমন কিছু হয় তবে কিভাবে লাঘাম টানবে নীরা? কী করবে সে?

গভীর রাত। আকাশ ভর্তি তারার মেলা। হালকা ঝিরঝিরে বাতাসে উড়ছে পাতলা ওড়না, কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল। সামনের রাস্তা থেকে ভেসে আসছে যানবাহনের মৃদু হর্ণ। ছাঁদের এক কোণায় থাকা দোলনায় বসে আছে নম্রতা। ডানহাতে ধোঁয়া উঠা কফি কাপ। বামহাতে কানে ধরে থাকা ফোন।
‘ আপনি এখন কোথায় আছেন? কি করছেন?’
ওপাশ থেকে ক্লান্ত কন্ঠে উত্তর দিল আরফান,
‘ আমি হসপিটালে আছি। এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ড ঘোরাফেরা করছি। আই এম অন ডিউটি ম্যাডাম। রাউন্ডে আছি।’
নম্রতা আঁতকে উঠে বলল,

‘ এতো রাতেও ডিউটি? ঘুম টুম নেই আপনার?’
আরফান হাসল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কারো সাথে কয়েকটি কথা বলে নিয়ে বলল,
‘ ঘুম তো আপনার কাছে।’
‘ ফাজলামো করবেন না, আমি সিরিয়াস। এই মুহূর্তে ডাক্তারের ওয়াইফদের জন্য প্রচন্ড মায়া হচ্ছে আমার।বেচারীদের নিশ্চয় রাতে একা একা ঘুমোতে হয়? মাঝরাতে ভয় পেলে কাঁথা দিয়ে মুখ চেপে মটকা মেরে শুয়ে থাকতে হয়? সাংঘাতিক! নাহ্, এসব ডাক্তার ফাক্তারকে বিয়ে করা যাবে না। প্ল্যান ক্যান্সেল।’
আরফান নিঃশব্দে হাসল। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাতের কাজ শেষ করল। তারপর মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ আপনি এখনও ঘুমোননি কেন? অলমোস্ট একটা বাজে। এতোরাতে কি করছেন?’
‘ ছাঁদে বসে কফি খাচ্ছি আর আকাশ দেখছি। আজকের আকাশটা অনেক সুন্দর ডক্টর।’
আরফান অবাক হয়ে বলল,

‘ ছাঁদে? অনেক বছর আগে কেউ একজন আমায় বলেছিল, সে একা একা ছাঁদে যেতে ভয় পায়। তাই বরের জন্য অপেক্ষা করছে। সাহসী বর তাকে ছাঁদে নিয়ে গিয়ে জ্যোৎস্না বিলাসে সঙ্গ দিবে। তো, তার কী বর জুটে গিয়েছে আজকাল?’
‘ বর না জুটলেও সাহসটা ঠিকই জুটে গিয়েছে তার। অনেক বছর আগের বাচ্চা মেয়ে এখন বিশাল বড়। ভূতে টূতে ভয় পায় না।’

নীল চিরকুট পর্ব ৪৯+৫০

‘ তাই নাকি? তাহলে তো মায়ের গল্পটা আপনাকে বলাই যায়। মা বলতো, আমাদের আশেপাশে নাকি সবসময়ই জ্বীন-পরীরা ঘোরাঘুরি করে। একসাথে, পাশাপাশি বসেও থাকে। আপনার পাশেও নিশ্চয় আছে? ফাঁকা ছাঁদে আপনি আর আলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন কিছু জ্বীন, ব্যাপারটা দারুণ না?’
নম্রতা ভয়ে ভয়ে পাশে তাকাল। অদ্ভুত একটা ভয়ে কেঁপে উঠল তার বুক। কৃত্রিম রাগ নিয়ে বলল,
‘ দেখুন, একদম উল্টাপাল্টা গল্প ফাঁদবেন না। ডিউটিরত অবস্থায় ফোনে কথা বলছেন। তারওপর উল্টাপাল্টা গল্প বানিয়ে মাসুম যুবতীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আপনার নামে তো মামলা করা উচিত ডক্টর। আন্টির মতো….’

নীল চিরকুট পর্ব ৫৩+৫৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here