মোহশৃঙ্খল পর্ব ৬
মাহা আয়মাত
মেহজা সোফায় বসে নখ খুঁটছে। মাঝে মাঝে চোখের কোণে ঝুঁকে তাকাচ্ছে আরভিদের দিকে। সে বেডে আধশোয়া হয়ে একটা ফাইল পড়ছে। আজ আরভিদ পার্লামেন্টে যায়নি।
একসময় মেহজা নখ খোঁচানো বন্ধ করে সরাসরি তার দিকে তাকিয়ে বলে,
— কথা আছে।
আরভিদ চোখ ফাইল থেকে সরাল না। নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে,,
— কান খোলা আছে, বল।
মেহজার মুখে বিরক্তির ছাপ। ঠোঁট শক্ত করে বলে,,
— আপনি একটু আপনার ফুজি বা আঙ্কেলকে ফোন দিয়ে বলবেন? আমার ফোনটা যেন কাউকে দিয়ে পাঠায়!
এবার আরভিদ চোখ তুলে মেহজার দিকে তাকায়। গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
— কেন?
মেহজা সামান্য বিরক্তিতে ঠোঁট চেপে ধরে বলে,
— কারণ আপনি আমার মোবাইলটা আনেননি! শুধু আমাকেই নিয়ে এসেছিলেন বিয়ের রাতে!
আরভিদ শান্ত গলায় বলে,
— মনে আছে আমার।
মেহজা ভ্রু কুঁচকে বলে,
— মনে থাকলে আবার এত আজাইরা প্যাচাল মারছেন কেন?
আরভিদ বিরক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
— ভালো ফ্যামিলিতে বড় হয়েছিস, কিন্তু কথা-বার্তা আর আচরণ দেখলে মনে হয় যেন কোনো বস্তির মেয়ে!
মেহজা ভেটকি মেরে হাসে,
— তাই নাকি, পটলা বেডা?
আরভিদের চোখ কপালে। ভ্রু তুলে বলে,
— পটলা কি?
মেহজা মুখে একরাশ কৌতুক মেখে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— পটল চিনেন তো? সেই পটল! তাকেই সুরকার আর গীতিকার দিয়ে আমি বানিয়েছি পটলা!
আরভিদ ঠোঁট শক্ত করে বলে,
— ধরলে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিব!
মেহজা ভেংচি মেরে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
— আচ্ছা আচ্ছা, এসব আজাইরা কথা বাদ দিই। চলেন আবার মেইন টপিকে ফিরি।
— কী সেই মেইন টপিক?
— ঐ যে আমার মোবাইল!
আরভিদ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে,
— মোবাইল নিয়ে কি করতে হবে?
মেহজা চোখের ইশারা করে বলে,
— ঐ যে বাসায় কল দিয়ে বলতে হবে, আমার মোবাইলটা যেন কাউকে দিয়ে পাঠায়।
আরভিদ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
— কখনো শুনছিস, পটল কল করে ফোনে কথা বলে?
মেহজা গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বলে,
— না।
— তাহলে?
মেহজা কাঁধ ঝাঁকিয়ে হেসে বলে,
— কিন্তু পটলা তো বলতে পারবে!
— পারবো না!
— আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আরেকটা কাজ করেন।
— কী কাজ?
— আমার কিছু কেনাকাটা বাকি। এই সারাদিন শাড়ি পরে থাকতে পারবো না আমি।
— কেন? শাড়িতে তো ভালোই লাগছে তোকে।
— “লাগবেই তো! রাতে আমার শাড়ি ঠিকঠাক থাকে না—এটাই তো বেশি ভালো লাগে, তাই না?“
আরভিদ নির্বিকার ভাবে বলে,
— বুঝেছিস তুই! ব্রেইনটা তাহলে আছে!
মেহজা মেকি হেসে বলে,
— আরে এটা তেমন কিছু না! লুচ্চা বেডা মানুষের চিন্তা আর চোখ যায় ঐ পর্যন্তই!
আরভিদ বাঁকা হেসে বলে,
— আর হাত, ঠোঁট? সেগুলো কি ঐখানে পৌঁছায় না?
মেহজা চোখ-মুখ কুচকে ভেংচি মেরে বলে,
— চুপ কর পটলা বেডা! আর কত লুচ্চামি করবি?
আরভিদ মেহজার মুখে তুই শুনে রেগে গিয়ে হাতে থাকা ফাইলটা নামিয়ে রেখে উঠতে যায়। তখনি আরভিদের কাণ্ড দেখে ভড়কে গিয়ে মেহজা দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আরভিদ রাগে-ঝাঁজে ফাইলটা তুলে নিয়ে আবার পড়া শুরু করে।
এদিকে মেহজা লিভিং রুম পেরিয়ে কিচেনের দিকে যাচ্ছিল, হঠাৎ শুনতে পেল ডোরবেল বাজছে। সে দাঁড়িয়ে যায়—দেখতে কে এসেছে। মেইড দরজা খুলতেই ৬-৭ জন ছেলে ঢুকে পড়ে ঘরে। ওরা সবাই আরভিদের দল—মিজান, তানভীর, রাব্বি, রকি, শুভসহ আরও কয়েকজন। তাদের দেখে মেহজার মনে খেলে যায় এক শয়তানি বুদ্ধি। ছেলেগুলো মেহজাকে দেখে সালাম দেয়।
— ওয়ালাইকুম সালাম। আপনারা এখন এসেছেন?
মিজান নামের ছেলেটা বলে,
— ভাবি, ভাই ডেকেছিলেন।
— ওহ, আচ্ছা। আসুন, বসুন।
মেহজা ওদের সোফায় বসতে বলে। নিজেও আরেকটি সোফায় গিয়ে বসে।
মিজান আবার বলে,
— ভাবি, ভাইকে একটু ডেকে দেবেন?
— মিজান ভাই, আপনার ভাই তো আসবেই। তার আগে একটু আমার সঙ্গে কথা বলুন না। আপনারা তো আমার সাথে এই প্রথম দেখা করছেন!
রকি নামের একজন হেসে বলে,
— ভাবি, আগেও তো দেখা হয়েছে।
— হয়েছে, কিন্তু তখন তো ছিলাম বোন। ভাবি হিসেবে তো আজকেই প্রথম দেখা! তাই না?
— জ্বি ভাবি!
— তা আপনারা সবাই কেমন আছেন?
— জ্বি ভাবি, ভালোই!
— বাসার সবাই ভালো তো?
— জ্বি।
মেহজা হেসে বলে,
— আপনারা তো আমার ছোটবেলার গল্প জানেন না, তাই না?
— না ভাবি।
— আমি যখন ছোট ছিলাম…
বলে থেমে যায়। শুভ কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে,
— তখন কী হয়েছিল, ভাবি?
মেহজা হেসে বলে,
— তখন আমি ছোট ছিলাম!
এই কথা শুনে সবাই থমকে যায়। কিছুটা লজ্জাও পায়।
— তা আপনারা কে কে বিবাহিত?
মিজান হালকা হেসে উত্তর দেয়,
— ভাবি, আমরা কেউই এখনো বিয়ে করিনি।
— আরেহ! বলেন কী! আপনারাও কি আপনাদের ভাইয়ের মতো ৩১ বছরে ১৯ বছরী মেয়ের অপেক্ষায় আছেন?
এই কথায় ছেলেরা একটু হেসে কিছু একটা বলতে যাবে, ঠিক তখনই…আরভিদকে দেখে মুখের কথা মুখেই রয়ে যায়। আরভিদ দাঁড়িয়ে আছে মেহজার পেছনে। তার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট — মানে সব শুনেছে।
আরভিদ গম্ভীর ও কড়া স্বরে বলে,
— আর কিছু বলার আছে?
মেহজা আরভিদের কন্ঠ শুনে ভয়ে চমকে উঠে দাঁড়ায়। ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে সিউর হয়ে যায়, পেছনে আরভিদই দাঁড়িয়ে। ধীরে ধীরে পিছনে ফিরে, মুখে এক রকমের বানানো হাসি এনে বলে,
— পাতিদেব, আপনি কখন এলেন?
আরভিদ দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
— পত্নীদেবী, আপনার ফালতু কথার মাঝেই!
মেহজা মুখ বেঁকিয়ে বলে,
— ফালতু কথা কোথায়? একটু তো পরিচিত হচ্ছিলাম!
— তা কে চেয়েছে?
— ওরাই তো চেয়েছে!
আরভিদ ছেলেদের দিকে তাকায়। ওরা মাথা নাড়ে — মানে, কেউ কিছু বলেনি। আরভিদের দৃষ্টি এবার আবার মেহজার দিকে,
— পরিচয় পর্ব শেষ?
— হ্যাঁ।
— তাহলে এখন এখান থেকে যান।
মেহজা ভেংচি মেরে যেতে যেতে জোরে গান গাওয়া শুরু করে,
Main kya karu ram mujhe buddha mil gaya
Main kya karu ram mujhe buddha mil gaya
Hoy hoy buddha mil gaya
Hay buddha mil gaya…
ছেলেরা মুখ চেপে হাসি থামাতে না পেরে ফিসফিস করে হেসে ফেলে। আরভিদ তাদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই তারা চুপ মেরে যায়।
আরভিদ এবার মেহজার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
— “রাতে তোর ভুল ধারণা আর বেড — দুটোই ভাঙবো, রেডলিপ।”
আরভিদ এসে সোফায় বসে, পায়ের উপর পা তুলে নেয়। মুহূর্তেই মিজান উঠে দাঁড়ায়, সাথে বাকিরাও।
মিজান বলে,
— ভাই, আসসালামু আলাইকুম।
আরভিদ গম্ভীর স্বরে উত্তর দেয়,
— ওয়ালাইকুম সালাম।
তারপর থেমে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
— সবকিছু ঠিকভাবে হয়েছে তো?
মিজান মাথা নেড়ে বলে,
— জ্বি ভাই, রাতে মাল ঢুকে গেছে। সবকিছু সেইফ… তবে…
আরভিদের চোখ সরু হয়ে আসে, ঠান্ডা কিন্তু চাপা কণ্ঠে প্রশ্ন,
— তবে?
মিজান একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
— ভাই, আগের এসপি বদলি হয়ে গেছে। নতুন এসপি আসছে।
— তো? এটা বলার কী আছে?
মিজান চুপ হয়ে যায়। কিছু বলার সাহস পায় না। তখন রাব্বি বলে ওঠে,
— আসলে ভাই, নতুন এসপি সৎ। ওনার আসার পর থেকে থানার পুলিশরা কোন কাজে হাত দিতে গেলেও দশবার ভাবে। সবাই ভয় পাচ্ছে। আগেরজন তো রাজি হয়েছিলো সহজেই… কিন্তু এইজন? পসিবল মনে হয় না ভাই।
আরভিদ গম্ভীর স্বরে বলে,
— ইম্পসিবলের মধ্যেও পসিবল থাকে, সো…
মিজান নিচু স্বরে বলে,
— ভাই, হবে না!
আরভিদ এবার মিজানের দিকে তাকায়। মিজান একদম মাথা নিচু করে ফেলে, ভয়ে পাথরের মতো চুপসে যায়।
আরভিদ ঠান্ডা কণ্ঠে বলে,
— এখন তোরা যা।
সবাই চলে যায়। আরভিদ উঠে দাঁড়ায়, ঠিক তখনই— ঝড়ের গতিতে কোথা থেকে যেন কৌশলী এসে তাকে জড়িয়ে ধরে!
— গুড মর্নিং, আরভু বেবি!
তার গলায় আদুরে ভঙ্গি। আরভিদ দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চারপাশে তাকায়—মেহজা আশেপাশে আছে কিনা দেখতে। না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এরপর কিছুটা রাগী গলায় বলে,
— কী করছো? ঘুম থেকে উঠেই মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?
কৌশলী গাল ফুলিয়ে বলে,
— কি করেছি? জাস্ট একটা গুড মর্নিং হাগ দিয়েছি!
আরভিদ রাগ ও বিরক্ত মিশ্রিত কন্ঠে বলে,
— করতে হবে না হাগ-মাগ। তুমি আমার থেকে দূরে থাকবে।
— উফফ! রাগ করছো কেন, আরভু বেবি?
আরভিদ এবার চোখ বড় করে আগুন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে ওঠে,
— আরভু বেবি না! ভাইয়া বলবা! আমি তোমার ভাই! দ্বিতীয়বার যেন বলতে না হয়!
কৌশলীর মুখে ধাক্কা খাওয়ার মতো অবস্থা, সে মাথা নিচু করে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মনে মনে ভাবে আরভিদ তার রাগ ভাঙাবে। কিন্তু আরভিদ কোনো পাত্তাই না দিয়ে বিরক্ত মুখে উপরের দিকে চলে যায়।]
কিছু সময় পর আরভিদের কোনো সাড়া না পেয়ে কৌশলী মাথা তুলে তাকায়, সামনে আরভিদ নেই। সে
আরভিদকে খুঁজছে তখনই,
— চলে গেছে।
কথাটা ভেসে আসে পাশের দিক থেকে। কৌশলী চমকে তাকিয়ে দেখে—মেহজা ডাইনিং টেবিল থেকে আপেল খেতে খেতে হেঁটে আসছে। মুখে হাসি, চোখে টিপিকাল কটাক্ষ।
মেহজা কাছে এসে বলে,
— সুপাকাল্লিফ্রাজিলিস্টিকএক্সপিআলিডোশাস।
কৌশলী ভ্রু কুঁচকে বলে,
— এটা আবার কী?
মেহজা মুচকি হেসে উত্তর দেয়,
— “কোনো কিছু খুব ভালো লাগলে সেটা বোঝাতে বলে — সুপাকাল্লিফ্রাজিলিস্টিকএক্সপিআলিডোশাস!“
কৌশলী বিরক্ত কন্ঠে বলে,
— তো এটা এখানে বলার কি আছে?
মেহজা হেসে বলে,
— তোমার আরভু বেবির দেওয়া ফাডা বাঁশটা আমার কাছে পুরো ‘সুপাকাল্লিফ্রাজিলিস্টিকএক্সপিআলিডোশাস’ লাগছে।
কৌশলীর মুখ লাল হয়ে যায় রাগে, ফোঁস করে ওঠে,
— অসভ্য, লো ক্লাস মেয়ে!
মেহজা হাসি থামিয়ে বলে,
— “এই অসভ্য, লো ক্লাস কাকে বললি তুই? কানের দুই আঙুল নিচে একটা বসাবো—একদম ‘ওটিতে’ জ্ঞান ফিরবি!
— তুমি আমাকে ‘তুই’ বলছো! তোমার সাহস…!
মেহজা ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— বলেছি, কী করবি?
কৌশলী রাগে আঙুল তুলে বলে,
— তোমাকে আমি…
আর কিছু বলার আগেই মেহজা থামিয়ে দেয়,
— যো ওখারনাহে ওখার লে, দেশী সান্ডা।
বলেই সে আরেক কামড় আপেলে দিয়ে হাসতে হাসতে সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। কৌশলী রাগে ফুঁসতে থাকে, দাঁড়িয়ে পড়ে চুপচাপ।
অন্ধকার। একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডাকা রুমটা। কেবল রুমের এক কোণে থাকা বেন্টিলেটরের ক্ষুদ্র ফাঁক দিয়ে আসছে সামান্য আলো—যার মধ্যেই বোঝা যাচ্ছে বাইরে প্রচণ্ড রোদ পড়েছে। রুমের মাঝখানে একটি স্টিলের চেয়ারে বাধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে তাহমিদ। সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে তার চেতনা ফিরতে থাকে। চোখ খুলে, কিন্তু কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না অন্ধকারের কারণে।চারপাশটা দুর্বোধ্য, অচেনা।
তার মনে পড়ে, সেদিন কোচিং শেষে বাসায় ফেরার পথে সে একটি উবারে উঠেছিল। হঠাৎ লক্ষ্য করে ড্রাইভার ভুল পথে গাড়ি নিচ্ছে। সে সন্দেহ করে, গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল—ঠিক সেই মুহূর্তে ড্রাইভার তার মুখে কিছু একটা স্প্রে করে দেয়। তারপর আর কিছু মনে নেই।
চেতনা ফেরার পর নিজেকে আবিষ্কার করে এই অজানা ঘরে, চেয়ারে বেঁধে রাখা অবস্থায়। তারপর থেকে প্রতিদিনই কিছু লোক এসে কিছু না বলেই তাকে হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক মারধর করে যাচ্ছে। আজ তিন দিন হয়ে গেছে—না খাওয়া, না পানি। তার গলা শুকিয়ে কাঠ। প্রচণ্ড তৃষ্ণা।
সে অস্পষ্ট কণ্ঠে ডাকতে থাকে,
— কেউ… কেউ আছে? একটু পানি দেন… প্লিজ…
কোনো সাড়া নেই। বরং তার কণ্ঠই প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে। সে চুপ হয়ে যায়। হঠাৎ জুতার আওয়াজ কানে আসে। শব্দটা যত এগিয়ে আসে, ততই গাঢ় হয়। কারা যেন আসছে তার দিকে। তাহমিদ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে দেখার জন্য—কে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে?
দরজাটা খুলে যায়। একজন পুরুষ ঢোকে—হোয়াইট শার্ট, কালো প্যান্ট, ইন করে পরা। তার পেছনে আরও তিনজন। পুরুষটি এসে সোজা তাহমিদের দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্ধকারে তাহমিদ তার চেহারা ঠিক বুঝতে পারে না। একজন তার জন্য চেয়ার এগিয়ে দেয়। পুরুষটি আয়েশ করে বসে, পা তুলে পায়ের উপর। এরপর ইশারায় লাইট জ্বালাতে বলে।
লাইট জ্বালতেই হঠাৎ চোখে প্রচণ্ড ঝলক আসে। তিনদিন অন্ধকারে থাকার পর চোখ সেই আলো নিতে পারছে না। চোখ পিটপিট করে তাহমিদ সামনে তাকায়। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয় সামনে বসা পুরুষটির চেহারা। সে হঠাৎ চমকে ওঠে।
— আপনি?!
পুরুষটি ঠোঁটের কোণে এক চিমটি হেসে শান্তভাবে উত্তর দেয়,
— আদ্রিক কারদার।
তাহমিদের গলা কেঁপে ওঠে ভয়ে,
— আপনি… আপনি আমাকে এখানে এনেছেন?
আদ্রিক মাথা নাড়িয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
— হ্যাঁ।
— কিন্তু… কেন? আমি কী করেছি?
আদ্রিক ভান করে অবাক হয়, তারপর পাশে থাকা লোকদের দিকে তাকিয়ে বলে,
— তোমরা কেউ বলোনি ওকে?
রামিম নামের একজন কণ্ঠ নিচু করে বলে,
— বস, আপনি তো বলেননি কিছু বলতে, তাই…
আদ্রিক হাত তুলে থামিয়ে দেয়, ঠোঁটে হালকা হাসি,
— ইটস নটা বিগ ডিল! আমিই বলে দিচ্ছি। মরার আগে অন্তত জানার অধিকার তো আছে, তাই না?
তাহমিদের বুক ধকধক করে ওঠে।
— মা…মানে? আমার মরার কারণ?!
আদ্রিক মাথা ঝাঁকায়, যেন এটা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার।
— হ্যাঁ।
— কিন্তু আমি তো কিছু করিনি! আমার অপরাধ কী?
আদ্রিক ধীরস্বরে বলে,
— আদ্রিক কারদারের লিটলহার্ট এর দিকে তাকানোর চেয়ে ভয়ংকর অপরাধ আর হয় না।
তাহমিদ অবাক আর আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
— লিটলহার্ট কে? আমি তো তাকে চিনিই না!
আদ্রিক ঠান্ডা গলায় জবাব দেয়,
— অপরূপা? এখন চিনতে পারছো?
তাহমিদের চোখ বিস্ময়ে ও ভয়ভয়ে বড় হয়ে গেল। আদ্রিকের চোখে যেন ভয়ংকর কিছু লুকিয়ে ছিল।
আদ্রিক ধীরে বলে,
— এখন, সেই অপরাধের একমাত্র শাস্তি হিসেবে… জান্নাতের টিকিট পাবে।
তাহমিদের কণ্ঠ থেমে থেমে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
— জান্নাতের টিকিট পাব মানে? এসব কী বলছেন?!
আদ্রিক মুচকি হেসে তার দিকে এগিয়ে আসে, চোখে এক শীতল ঝলক।
— যেভাবে তোমাকে মারবো, তারপর আর কোনো পাপ বাকি থাকবে না তোমার নামে।
তাহমিদ কাঁপতে কাঁপতে বলে,
— আমাকে মাফ করে দিন। আমি আর কোনো দিন অর্তিহার দিকে তাকাবো না, অপরূপা বলবো না। সত্যি বলছি, আমি এই শহরটাই ছেড়ে চলে যাবো… তবুও আমাকে ছেড়ে দিন। আমার ভুল হয়ে গেছে।
কিন্তু তাহমিদের করুণ আর্তিতে আদ্রিকের মুখে একটুও পরিবর্তন দেখা গেল না। বরং ঠোঁটের কোণে হালকা এক নিঃশব্দ হাসি খেলে গেল।
আদ্রিক শান্ত স্বরে বলে,
— আমি কি তোমাকে মারার প্রসেসটা বলে দিই? তাহলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারবে।
তাহমিদ চিৎকার করে উঠে,
— না! এমন করবেন না…!
আদ্রিক এবার আর দ্বিধা করল না, তার চোখ দুটো নিস্তব্ধ আগুনে জ্বলছিল,
— “প্রথমেই, তোমার চোখ দুটো ছুরি দিয়ে উপড়ে ফেলব— কারণ, দোষটা তো সেখান থেকেই শুরু।
তারপর, ছুরিটা দিয়ে তোমার কেটে ফেলবো ঠোঁট— যেগুলো দিয়ে তুমি আমার অর্তিজানের উপর অপরূপা বলে অধিকার ফলিয়েছো! আর শেষে… ছুরিটা ঢুকিয়ে দেব তোমার বুকের গভীরে— ঠিক যেখানে তোমার লালসা জন্ম নিয়েছিল, ওকে পাওয়ার ইচ্ছেটা।“
তাহমিদ কাঁদতে কাঁদতে বলে,
— না… দয়া করে… আমি জানতাম না অর্তিহা আপনার কাছের কেউ…
আদ্রিক হালকা হেসে ওঠে। ঠোঁটের কোণে জমে ওঠে এক ঠাণ্ডা, সাইকোপ্যাথিক হাসি। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন তখন ভয়ে কাঁপতে থাকে। সাধারণ মানুষ রেগে গেলে ভয় লাগে—কিন্তু আদ্রিক যখন হাসে, তখন ভয়টা আরও গভীর হয়ে ওঠে। কারণ—আদ্রিক কখনো রাগে না… সে শুধু হাসে। আর এই হাসিই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। আদ্রিক সেই মানুষ, যে ভয় দেখায় না—ভয় হয়ে ওঠে। এক ভয়াল, ঠাণ্ডা মাথার হিংস্রতা তার ভেতরে প্রতিটি নিঃশ্বাসে মিশে থাকে। সে যখন হাসে, তখন কেউ না কেউ কাঁদে।
আদ্রিক ঠোঁটের কোণে সেই একই মুচকি হাসি রেখে ধীরে, দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
— আই ডোন্ট ওয়ার্ন পিপল নট টু টাচ হার। আই মেইক শিওর দে নেভার ডেয়ার টু থিংক অ্যাবাউট ইট।
এই কথা বলে পকেট থেকে ছোট ছুরি বের করে হঠাৎই এক নিঃশব্দ গতিতে ছুরিটা তাহমিদের ডান চোখে ঢুকিয়ে দেয়। তাহমিদ আর্তনাদ করে ওঠে — তীব্র ব্যথায় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার, রামিম আর বাকি দুজনের মুখে কোনো পরিবর্তনের ছাপ নেই। যেন তারা এসব দেখে অভ্যস্ত। আদ্রিকের এই নির্মমতা তাদের কাছে নতুন কিছু নয়।আদ্রিকের ঠোঁটের হাসিটা আরও চওড়া হয়। তাহমিদের আর্তচিৎকার আর ব্যথায় ছটফটানি যেন তাকে তৃপ্তি দেয়। তার চোখে স্পষ্ট আনন্দের ছায়া।
তাহমিদ আর্তনাদ করে,
— আহ্! বাঁচাও! আমি মরে যাচ্ছি… আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে!
আদ্রিক নির্মম স্বরে বলে,
— এখনো মরোনি! আরও অনেক কিছু করা বাকি।
এই কথা বলেই আদ্রিক ছুড়ি তুলে তাহমিদের ডান চোখ উপড়ে ফেলে। মুহূর্তেই ঘরে আবার আর্ত চিৎকারে প্রতিধ্বনি ওঠে।
তাহমিদ ব্যথায় ছটফট করতে করতে, কাঁপা গলায় বলে,
— আর না! আমি আপনার পায়ে পড়ি… দয়া করে… আমাকে ক্ষমা করে দিন!
আদ্রিকের চোখে এক বিন্দু করুণা নেই। ঠোঁটে হালকা ব্যঙ্গাত্মক হাসি, গলায় ভয়াল দৃঢ়তা।
— আদ্রিক কারদার কাউকে ক্ষমা করে না… ইউ ব্লাডি বাস্টার্ড।
বলেই সে আবার ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয় তাহমিদের বাম চোখে। ঘরজুড়ে তাহমিদের হাহাকার গড়িয়ে পড়ে, ছটফট করে তার দেহটা। কিন্তু আদ্রিক একটুও বিচলিত নয়। সে যেন উপভোগ করছে প্রতিটি মুহূর্ত। এবার সে তাহমিদের মুখের দিকে ঝুঁকে ঠোঁটটা ধরে টান দেয়-চিরে ফেলে ফেলে দেয় নিচে। রক্ত আর বিকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে এক পিশাচের মতো মানুষ—আদ্রিক।
তাহমিদের মুখশ্রী এতটাই বিকৃত হয়েছে, যেন চেনা যাচ্ছে না তাকে। তাহমিদ তখন মুখ দিয়ে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে সে। চোখ নেই, ঠোঁট নেই, শুধু গোঙানি… যন্ত্রণায় কাতর হয়ে বাঁচার শেষ আকুতি জানাচ্ছে।
আদ্রিক তাহমিদের কানে মুখ নিয়ে ধীরে বলে,
— যাও… এই দুনিয়া তোমার জন্য না। জান্নাতে গিয়ে হুরদের অপরূপা বলে ডাকো…ইনজয় তাহমিদ, উইথ ইউর অপরূপা হুরস।
কথাটা শেষ হতেই, এক নিঃশ্বাসে ছুরিটা সে গেঁথে দেয় বুকের বাম পাশে—ঠিক হৃদয়ের ওপর। কয়েক সেকেন্ডের নীরবতায় পৃথিবী থমকে যায়। তাহমিদের মাথা আস্তে করে চেয়ারের পেছনে হেলে পড়ে—জীবনের শেষ স্পন্দনও থেমে যায়। তার রক্ত ছিটকে পড়ে আদ্রিকের সাদা শার্টে। সে শার্টের দিকে তাকায় না, বরং ঠোঁটে হাসি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
আদ্রিক ধীরে ধীরে দুই হাত উপরে তোলে, উঠে দাঁড়ায়। ঠাণ্ডা, নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে,
— দেটস মাই রিজাইন।
বলেই সে সরে গিয়ে রুমের এক কোণে থাকা বেসিনের দিকে এগিয়ে যায়। বেসিনে দাঁড়িয়ে আদ্রিক ধীরে ধীরে হাত ধোয়। পাশে থাকা রামিম নিঃশব্দে তোয়ালেটা এগিয়ে দেয়। আদ্রিক কোনো কথা না বলে হাত মুছে নেয়, তারপর তোয়ালেটা আবার রামিমের হাতে দিয়ে দেয়। ঠিক সেই সময় একজন নতুন সাদা শার্ট নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।
আদ্রিক রক্তমাখা শার্ট খুলে ফেলে, নতুন শার্টটা গায়ে জড়িয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে বলে,
— ওকে ঐতিহাসিক জায়গায় দাফন করে দাও।
রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে।
শেষ বিকেলের আলোয় আদ্রিক কারদার ম্যানরে প্রবেশ করে। সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে ওপরতলায়। হঠাৎ থেমে যায় অর্তিহার দরজার সামনে। চারপাশ দেখে নেয়— কেউ নেই। তারপর চাবি দিয়ে দরজা খুলে নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকে দরজাটা আবার ভেতর থেকে লক করে দেয়।
তারপর পকেট থেকে চাবিটা বের করে দরজাটা খোলে। নিঃশব্দে ঢুকে দরজাটা আবার ভেতর থেকে লক করে দেয়। অর্তিহা ঘুমিয়ে আছে। আদ্রিক ধীরে ধীরে হাঁটে। যেন শব্দ না হয়। তারপর ফ্লোরে বসে পড়ে ওর মাথার কাছে। ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অদ্ভুত এক মায়াবী দৃষ্টিতে। এই চোখ দেখে কেউ বলবে না, এই মানুষটা একটু আগেই কারো চোখ তুলে, ঠোঁট কেটে, বুক চিরে মেরেছে।
আদ্রিক আলতো করে ওর গালে হাত রাখে। ঠোঁটে সেই কোমল, স্নিগ্ধ হাসি।
— আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য তুই, অর্তিজান।
প্রায় ২০ মিনিট পর আদ্রিক উঠে দাঁড়ায়। দরজা লক করে বের হয়ে আসে। ঘুরতেই দেখে কৌশলী দাঁড়িয়ে।
— তুমি?
কৌশলী ভ্রু কুঁচকে আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে কিছুটা সন্দেহভরা কণ্ঠে বলে,
— অর্তির সাথে একটু জরুরি দরকার ছিল। অর্তি কি রুমে আছে?
আদ্রিক নির্বিকার মুখে জবাব দেয়,
— আমি জানি না।
কৌশলী কপালে ভাঁজ ফেলে আবার প্রশ্ন করে,
— আপনি জানেন না মানে? আমি তো দেখলাম আপনি এইমাত্র অর্তির রুম থেকেই বের হলেন!
আদ্রিক হালকা হাসে, চোখে একটু বিদ্রুপের আভা,
— আমি রুম থেকে বের হইনি। দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে নক করছিলাম। তোমার বোধহয় গ্লাসেস পরা বন্ধ করায় চোখের পাওয়ার বেড়ে গেছে!
কৌশলী কথাটা শুনে স্পষ্টতই অপমানিত বোধ করে, কিন্তু কোনো জবাব দিল না। শুধু ওহ বলেই অর্তির দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে নক করতে যাচ্ছিল, তখনই আদ্রিক তাকে থামিয়ে দিল।
— ও ঘুমাচ্ছে।
কৌশলী এক মুহূর্ত থেমে ফিরে তাকায়,
— আপনি কীভাবে জানলেন যে অর্তি ঘুমাচ্ছে? আপনি তো বলেছিলেন আপনি ভেতরে যাননি?
আদ্রিক স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,
— বললাম তো, অনেকবার নক করেছি। কোনো সাড়া দেয়নি। দ্যাট মিনস, অর্তি ঘুমাচ্ছে।
কৌশলী কিছু না বলে মাথা নেড়ে বলে,
— ওহ।
— পরে এসো।
কৌশলী সরে গেলে আদ্রিকও সেখান থেকে নিজের রুমে ফিরে যায়। রুমে ঢুকেই শার্টটা খুলে রাখে চেয়ারে, আর তারপর সরাসরি শাওয়ার নিতে চলে যায়।
রাত তখন গভীর। চারদিক নিস্তব্ধ, নিঃসাড়। ঘরের প্রতিটি প্রান্তে নিস্তব্ধতার চাদর। পুরো বাড়ি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। নিঃশব্দে, নিঃশ্বাস চেপে অর্তিহা ধীরে ধীরে পেরোয় লিভিং রুম। তার পায়ের শব্দ যেন বাতাসেও ছায়ার মতো মিশে যায়। মেইনডোরে পৌঁছে সে একবার চারপাশে তাকায়—কেউ দেখছে না তো? আশেপাশে কারও উপস্থিতি টের না পেয়ে, অতি সন্তর্পণে সে দরজাটি খুলে বাইরে পা রাখে।
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে আদ্রিকের কালো BMW XM Label। গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে ফোন ঘাঁটছে সে—মেরুন রঙা শার্ট ইন করে পড়া, কালো প্যান্ট, আর চোখেমুখে সেই বরফের মতো ঠান্ডা অভিব্যক্তি। অর্তিহা ধীরে পা ফেলে আদ্রিকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আদ্রিক চোখ তুলে তাকে দেখে, ফোনটি পকেটে রেখে ঠোঁটের কোণে এক ঝিলিক হাসি আনে।
অর্তিহা ভয়-ভেজা কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে,
— এত রাতে ডাকলেন কেন?
আদ্রিক কোনো জবাব না দিয়ে গাড়ির ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে তার কণ্ঠে খসখসে নির্দেশ ঝরে পড়ে,
— গাড়িতে বোস।
এই মানুষটার সামনে তার কথা চলে না। তাই সে চুপ করে বসে পড়ে। গাড়ির দরজা বন্ধ হয়, একটা ছোট ধাক্কার মতো শব্দ করে। আদ্রিক নিজের সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। গভীর রাতের নিস্তব্ধ রাস্তায় কালো গাড়িটা যেন এক ছায়ার মতো মিশে যেতে থাকে। রাস্তা ফাঁকা। জানালার ওপাশে অন্ধকার আর গাছপালা যেন ঘুমিয়ে গেছে। গাড়ির গতি বাড়ে, আর অর্তিহার মনের ভীতিও বাড়তে থাকে। যদি কেউ জেনে যায় সে এভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে?
সে চুপচাপ আদ্রিকের দিকে তাকায়—আদ্রিক ঠিক আগের মতোই, অচঞ্চল, অপ্রতিরোধ্য। অর্তিহার ঠোঁট শুকিয়ে আসে। সে সাহস করে জিজ্ঞেস করে,
— এত রাতে কোথায় যাচ্ছি আমরা? যদি বাসায় কেউ টের পায়?
আদ্রিক ঠোঁটে এক চিলতে হাসি টেনে বলে,
— পেলে পাক। পরোয়া করি না।
অর্তিহা মৃদু প্রতিবাদ করে বলে,
— কিন্তু আমি করি।
আদ্রিক হেসে উত্তর দেয়,
— করতে থাক। আমি তো মানা করিনি।
অর্তিহা আর কিছু বলে না। বাইরের অন্ধকারে চোখ রাখে, যেখানকার নীরবতা তার মনে আরও বেশি শূন্যতা আনে। এক ঘণ্টার মতো পেরিয়ে গেলে আদ্রিক একহাতে গাড়ি চালাতে চালাতে অপর হাতে ফোন তুলে মেসেজ পাঠায়,
— সবকিছু রেডি তো?
ওপাশ থেকে উত্তর আসে,
— জ্বি বস, রেডি।
আদ্রিক ফোন রেখে অর্তিহার দিকে তাকায়। অর্তিহা বাইরের দিকে তাকিয়ে, পরনে তার কালো ও মেরুন কাজ করা কুর্তি, গলায় জরজেটের মেরুন ওড়না, লম্বা বার্গান্ডি চুল বেণী করে বাঁধা। আদ্রিক তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার গাড়ি চালাতে মন দেয়।
প্রায় ২০ মিনিট পর গাড়ি থামে গন্তব্যে। আদ্রিক নেমে অর্তিহার জন্য দরজা খোলে, হাত বাড়িয়ে দেয়।
ইচ্ছে না থাকলেও অর্তিহা সেই হাত ধরে নামে। পা রাখতেই গায়ে এক ধরনের শীতলতা ছুঁয়ে যায়। চারদিক অদ্ভুত রকম নীরব। অন্ধকার আকাশ, তারার ঝিকিমিকি, বাতাসে হালকা কুয়াশা, আর সামনের দিগন্তজোড়া পানির ঢেউ—সব মিলে যেন এ জগতের বাইরের কোনো দৃশ্য। এটা যেন এক স্বপ্নের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা।
অর্তিহা ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করে,
— এই জায়গা কোথায়?
আদ্রিক হেসে বলে,
— কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর। স্বপ্নের মতো না? যেমনটা তোর কল্পনায় ছিল… আকাশ, তারা, নীরবতা…
অর্তিহা সামনে এগিয়ে যায়, রেলিং ধরে দাঁড়ায়। তার চোখে-মুখে বিস্ময়, হৃদয়ে প্রশান্তি। বুক ভরে নেয় হাওরের বাতাস। জলজ কুয়াশা ধীরে ধীরে ভেসে বেড়াচ্ছে, তারাভরা আকাশের প্রতিচ্ছবি যেন পানির বুকে নেমে এসেছে। এই নিঃশব্দতা, এই বিশালতা শহরের মানুষের কল্পনারও বাইরে। মনে হয়—জল নয়, মাটি ছুঁয়ে আকাশ নেমে এসেছে। মনে হয়, সে একটা স্বপ্নে হাঁটছে—যেটা বড্ড সত্যি।
আদ্রিক অর্তিহার পেছনে দাঁড়িয়ে অর্তিহার বেণিটা খুলতে নেয়। হঠাৎ হওয়ায় অর্তিহা ভয় পেছন পেছন ঘুরতে চায় কিন্তু আদ্রিক বাধা দেয়।
— শশশশশ! নড়িস না।
অর্তিহা থেমে যায়। চুল খুলে পড়তেই বাতাসে উড়ে ওঠে। আদ্রিক অর্তিহার কাছে থেকে একটু সরে বুকে হাত গুঁজে অর্তিহাকে দেখে হেসে বলে,
— এখন লাগছে জলকন্যা। আমার মিস্ট্রি মারমেইড।
অর্তিহা কিছু বলে না। আদ্রিক তার হাত ধরে বলে,
— “চল, তোর আরেকটা স্বপ্ন পূরণ করি—যেটা আকাশে থেকেও তোর নামে।“
সে অর্তিহার হাত ধরে তাকে ডান পাশে নিয়ে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিলাসবহুল টেলিস্কোপ—গায়ে খোদাই করা সোনালি অক্ষরে লেখা: “Adrik & Orthiha | Forever in Orbit”। পাশেই একটা ছোট টেবিল, যাতে রাখা আছে একটি খাম এবং দুটি ছোট বাক্স।
অর্তিহা টেলিস্কোপটা দেখে কিছুটা বিস্ময়ে, মৃদু স্বরে বলে,
— আপনি এটা… বানিয়েছেন?
— তৈরি করিয়েছি, শুধু তোর জন্য।
আদ্রিক টেলিস্কোপটা যত্ন করে সেট করে। তারপর অর্তিহার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
— এবার চোখ রাখ এতে।
অর্তিহা একবার আদ্রিকের চোখের দিকে তাকায়, যেন কিছু বোঝার চেষ্টা করছে। তারপর ধীরে চোখ রাখে টেলিস্কোপে।
আদ্রিক আকাশের দিকে ইশারা করে বলে,
“ওখানে দেখ Albireo A আর B। এক জোড়া তারা—একই সিস্টেমে, কিন্তু আলাদা দুটি সত্তা। কেউ কাউকে ছেড়ে যায় না কখনো। Albireo B ছোট, কিন্তু চোখ আটকে যায়… ঠিক যেমন তুই। আর Albireo A আমি—অগ্নিময়, বড়, নিয়ন্ত্রণহীন।”
অর্তিহা দেখতে পায়, আকাশের গভীরে পাশাপাশি জ্বলছে দুটি তারা। Albireo B — নীলাভ, কোমল এক আলোয় মিশে আছে নিঃশব্দ ভালোবাসার মতো।
আর Albireo A — কমলা-সোনালি দীপ্তিতে উজ্জ্বল, উষ্ণ, যেন আদ্রিকের ঠোঁটে লেগে থাকা সেই চেনা হাসি। অর্তিহার মনে খেলে যায় হাজার কথা। সে ধীরে টেলিস্কোপ থেকে চোখ সরিয়ে আদ্রিকের দিকে তাকায়। আদ্রিক তখন পাশে রাখা টেবিল থেকে একটি খাম তুলে তার দিকে বাড়িয়ে দেয়।
— “আমি Albireo B তারাটার নাম রেখেছি অর্তিহা, আর Albireo A-এর নাম রেখেছি আদ্রিক। Albireo A-এর পাশে Albireo B চিরকাল থাকবে, যেমন করে আমি তোকে রাখবো—নিজের আকাশে, নিজের পৃথিবীতে, নিজের মনের গহীনে। এই দুই তারা এখন আমাদের নামেই মহাকাশে নথিভুক্ত আছে —International Star Registry-এর পক্ষ থেকে দেওয়া এই দলিলটা তার অফিসিয়াল প্রমাণ।”
অর্তিহা বিস্ময়ের চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
— তারার নামকরণ কি সত্যিই সম্ভব?
আদ্রিক হেসে বলে,
— হ্যাঁ। আমি করিয়েছি International Star Registry থেকে।
পরক্ষণেই আদ্রিক সাইড টেবিল ঢেকে তুলে নেয় একটি ছোট বক্স। খুলে দেখায়—একটি সিলভার চেইনে বাঁধা ছোট্ট নীল পাথর।
— এটা হচ্ছে বিখ্যাত স্যাফায়ার পাথর। এই সুন্দর পাথরের চেইনটা দিচ্ছি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর নারীকে। আমার অর্তিজানকে।
অর্তিহা মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে নীল পাথরের চেইনের দিকে। আদ্রিক নিঃশব্দে অর্তিহার পেছনে এসে চেইনটা পরিয়ে দেয় তার গলায়। আলতো করে চুল সরিয়ে হুক লাগাতে লাগাতে অর্তিহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
— “২৬ জুলাই—দ্য ডে মাই লাভ বিকেইম লিগ্যাল… হ্যাপি অ্যানিভার্সারি, মাই অফিসিয়াল, ওয়ান অ্যান্ড ওনলি ওয়াইফ… মিসেস অর্তিহা আদ্রিক কারদার।“
এই কথার সঙ্গে সঙ্গে অর্তিহার মুখের মুগ্ধতা ফিকে হয়ে আসে। অর্তিহার হৃদয়ে জমে থাকা যন্ত্রণা ফিরে আসে। স্মৃতিতে ভেসে ওঠে এক বছর আগের সেই দগদগে স্মৃতি। সে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,
— আমার চোখের সামনে আমার ভালোবাসার মানুষকে রক্তাক্ত করে আমার মুখ থেকে কবুল বলিয়ে করা বিয়ের এক বছর হলো আজ?
আদ্রিক ঠোঁটের কোণে একটুখানি ব্যঙ্গমিশ্রিত হাসি নিয়ে বলে,
— দিস ইজ নট ফেয়ার, লিটলহার্ট! আমি তোর ওই সো কল্ড প্রেমিকের উপকার করলাম, আর তুই আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার বদলে দোষ দিচ্ছিস?
অর্তিহার চোখে জল টলমল করে ওঠে। গলা কাঁপে,
— আপনি ওর প্রাণ নিয়ে উপকার করেছেন?
আদ্রিক এক চোখ ভ্রু তুলে অবলীলায় বলে,
— “করিনি? ও তো নিজেই বলেছিল, তোকে ছাড়া বাঁচবে না। তুই তো ওর কখনও হতে পারিস না—তাহলে অপশন কী ছিল? আত্মহত্যা? আর আত্মহত্যা তো মহাপাপ, তাই না? আমি ওকে মেরে আসলে আত্মহত্যা নামক পাপ থেকে রেহাই দিয়েছি। আমি ছিলাম ওর রিডেম্পশন। কিন্তু তোর চোখে এই মহৎ কাজটার দামই নেই।“
অর্তিহা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে,
— আমার না খুব আফসোস হয়। কেন সেদিন আপনি আমাকে কলেজ থেকে আনতে গেলেন? আর কেনই বা দেখতে পেলেন ওকে আমার সাথে! সেদিন যদি আপনি ওকে আমার সাথে না দেখতেন, তাহলে হয়তো আজ ও বেঁচে থাকতো!
আদ্রিক শান্ত স্বরে জবাব দেয়,
— ঐ দিন না দেখলে হয়তো আরও কিছুদিন বাঁচতো, তবে এতোদিন না! কারণ আদ্রিক কারদারের চোখে ধুলো দেওয়া এতো সহজ না, অর্তিজান।
অর্তিহার চোখগুলো এবার রাগে রূপ নেয়।
— আপনার এই বর্বরতার উপর একটুও আফসোস হয় না?
আদ্রিক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
— বর্বরতা?
অর্তিহা কাঁপা কণ্ঠে বলে,
— তা নয়তো কি? আমাকে জোর করে কাজি অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছেন! যখন আমি রাজি হইনি, তখন আমার চোখের সামনে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে মেরে আমার মুখ থেকে জোর করে কবুল বলিয়েছেন! তাও আপনি শান্ত হননি! ওকে প্রাণটা নিয়েই নিলেন! এটা বর্বরতা না?
আদ্রিক কঠিন গলায় বলে,
— না, এটা আমার চাওয়া! তোর প্রতি আমার মোহ! সেই মোহ, যার কোনো শেষ নেই!
অর্তিহার গলায় ঘৃণা আর বিষন্নতার ছায়া মিশে, যেন তার ভেতর আত্মদহনের আগুন জ্বলছে,
— আমি না নিজের উপরেই মাঝে মাঝে রাগ করি, আবার মায়াও হয়। আপনার মুখোশপরা রূপ দেখে আপনাকে বিশ্বাস করতাম! অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজগুলো যেন আপনার হাতেই স্বাভাবিক।
আদ্রিক এক কদম এগিয়ে আসে। তার আঙুলে অর্তিহার গালের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে কানে গুঁজে দেয়। চোখে টলমল করে নরমতা,
— “এই আদ্রিক কেবল তোর সামনেই সত্য। তুই আমার হৃদয়ে থাকিস, তাই তোর সামনে আমি স্বচ্ছ। নয়ত আমার আসল রূপ কী—তা তো আমার বাপও জানে না!“
অর্তিহা এবার চোখে চোখ রাখে। গলায় তীক্ষ্ণ সাহস,
— শুধু আপনার বাপ কেন? আপনি আপনার সাজানো চরিত্র দিয়ে পুরো পরিবারকে মুগ্ধ করে রেখেছেন। কারোরই জানা নেই আপনার ভিতরের অন্ধকারতম বাস্তবতা আর নোংরা আত্মা সম্পর্কে।
আদ্রিক হেসে ওঠে—গভীর, ঠাণ্ডা, অথচ আত্মবিশ্বাসী হাসি,
— আমি এমনই। চরম আকর্ষণীয়। মুগ্ধ না হয়ে কেউ পারে না, অর্তিজান।
অর্তিহা এবার আর সহ্য করতে পারে না, ক্ষোভে ফেটে পড়ে,
— “সবকিছুই আপনার কথার জাল—একটি নিখুঁত বিভ্রম! নয়তো, যাকে আমি এতদিন মানুষ ভেবেছিলাম, সে তো আদতে একজন অমানুষ, একজন খুনি। আপনি নৃশংসভাবে খুন করেছেন আমার ভালোবাসার….“
পুরো কথা শেষ করতে পারে না আদ্রিক ঠোঁটে আঙুল রেখে থামিয়ে দেয় অর্তিহাকে। আদ্রিকের মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায়। হাসি মুছে গিয়ে উঠে আসে চোখে মুখে ভয়ংকর এক হিমশীতল হিংস্রতা।
সে মুখ এগিয়ে এনে অর্তিহার চোখে চোখ রাখে। গলায় নীরব বিষ ছড়ানো কণ্ঠ,
— “আমি ঘৃণা করি… সেই মুহূর্তকে, সেই মানুষটাকে যার কারণে তুই আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলিস!
তুই আমার চোখে চোখ রাখবি, যার কারণটা আমি হবো—কেবল আমি।“
অর্তিহা তার চোখে সেই ভয়ংকর শীতলতা দেখে ভয়ে কেঁপে ওঠে। চোখ নামিয়ে নেয়, গলায় কাঁপা স্বর,
— আমি…আমি বাসায় যাবো…
আদ্রিক ঠাণ্ডা স্বরে বলে,
— আমাদের অ্যানিভার্সারির সেলিব্রেশন তো এখনো শেষ হয়নি, অর্তিজান।
অর্তিহা আস্তে করে বলে,
— আমি কিছু চাই না…
আদ্রিক ঠোঁটে আঙুল রাখে,
— শশশশ! না শব্দটা আমার খুব অপছন্দ।
অর্তিহার আর সাহস হয় না কিছু বলার। আদ্রিক ধীরে হাতে তুলে নেয় সাইড টেবিলে রাখা কাঠের বাক্সটা। বাক্সের ঢাকনাটা খুলে বের করে আনে একটা তারাম্যাপ — Cygnus constellation।Albireo A তে বসানো কমলা হীরা, আর B তে নীল। নিচে খোদাই করা, “Albireo — The star of Adrik & Orthiha Two hearts. One orbit. One eternity.”
অর্তিহার চোখ আবারও ভিজে ওঠে। হৃদয়ের গভীরে চাপা পড়ে থাকা পুরনো ক্ষত যেন নতুন করে রক্ত ঝরাতে শুরু করে। সে তাকাতে চায় না, মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু আদ্রিক তার চিবুক চেপে ধরে মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।
আদ্রিকের কণ্ঠটা এবার ধীর, অথচ শীতল হুমকির মতো,
— আজকের রাতটা যদি নষ্ট করিস, তাহলে কাউকে ঠিক থাকতে দেবো না… কিছুই ঠিক থাকবে না।
মুহূর্তেই চারপাশটা থমকে যায়। অর্তিহার আর সাহস হয় না আদ্রিকের কথার বাইরে যাওয়ার। যদিও সে কখনো সেই সাহস দেখায়নি— কারণ সাহস দেখানোর ভয়াবহ পরিণাম আদ্রিক তাকে বহু আগেই বুঝিয়ে দিয়েছে। শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোতের মতো বয়ে যায় সেই স্মৃতি।
অর্তিহা ভয়মিশ্রিত দৃষ্টিতে আদ্রিকের চোখের দিকে তাকায়। আদ্রিক তারাম্যাপটা অর্তিহার দিকে বাড়িয়ে দেয়। অর্তিহা কাঁপতে কাঁপতে সেই তারাম্যাপটা হাতে নেয়। তারা, আকাশ, নক্ষত্র—সবই যেন এখন তার জন্য তৈরি, কিন্তু তার ভেতর রয়ে গেছে কেবল এক ভয়, এক দহন।
আদ্রিক এবার তার গালে হাত রেখে নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
মোহশৃঙ্খল পর্ব ৫
— পছন্দ হয়েছে, অর্তিজান?
অর্তিহা চুপচাপ মাথা নাড়ে—অর্থাৎ হ্যা। আদ্রিক তার হাত ধরে নিজের বুকের বা পাশে এনে রাখে। চোখে আদুরে উন্মাদনা, গলার স্বর নরম,
— অর্তিজান, তোকে আমি চাইবো হাজারভাবে। তুই আমার জীবনের একমাত্র চাওয়া ।
