নীলের হুরপাখি পর্ব ২০
কারিমা ইসলাম কেয়া
হঠাৎ করে কেউ তার হাত ধরে টেনে একটা রুমের ভেতর নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
হুর ঃ বড়মা তুমি।
রুহানি ঃ হ্যাঁ আমি।
রুহানি হুরের হাত ধরে খাটে বসালো। তারপর এক গ্লাসে ঢেলে খেল। আরও এক গ্লাস পানি গ্লাসে ঢেলে হুরের দিকে উচঁয়ে ধরলো এবং পানি খাবে নাকি ইশারা করলো হুর ওহ মাথা দুই দিকে করে না করলো।
রুহানি ঃ আম্মা,,,,,,।
এই ডাকটা হুরের কাছে অপরিচিত না তবে আজকের এই আম্মা ডাকটা কেনো যেনো হুরের কাছে ভারি মনে হলো।
হুর ঃ হুমমমম বড়মা।
রুহানি ঃ আপনি যখন পৃথীবিতে এসেছিলেন। তখন আমিই প্রথম আপনাকে কোলে তুলে নিয়েছিলাম। আপনাকে কোলে নেওয়ার পর আমি এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলাম কেনো জানেন আপনার মাঝে আমি নিজের মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখেছিলাম। আমার মায়ের মতোই চোঁখ, নাক, ঠোঁট মুখের গঠণ। ভারি সুন্দর একদম হুর পরিদের মতো। তাই আমি আপনার নাম হুরজান রেখেছি।
আপনাকে তুই বা তুমি কোনটাই ডাকতে ইচ্ছে হয় না। মাকেও আপনি বলেই ডাকতাম।
রুহানি একটু থেমে শ্বাস নিল।
রুহানি ঃ আম্মা এখন আর আপনি ছোট নেই। দেখতে দেখতে কুড়ি। তবে আপনাকে এবার আপনার বয়সের থেকেও ভারি সির্ধান্ত নিতে হবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হুর নিজের মায়াবী মুক্তার টলমল টানা ভাসা ভাসা আঁখি যুগল তুলে তাকালো।
হুর আন্দাজ করতে পারলো হয়তবা তবুও সুধাঁলো
হুর ঃ মানে,,,
রুহানি ঃ আপনাকে এবার নীলের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে।
হুর ঃ না না বড়মা। আমায় গলা টিপে মেরে ফেলো। তবুও এমন কথা বলো না। আমি নীল ভাইকে খুব ভালোবাসি।
রুহানি ঃ কত ভালোবাসেন আপনি নীলাদ্র সরকারকে।
হুর ঃ জানিনা,,,,,,,
হ্যাঁ বড়মা আমি নিজেই জানিনা নীল ভাইকে আমি কতটা ভালোবাসি। তবে এতটুকু জানি আমার ভালোবাসা দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মাপার নয়, কারণ তার ওজন দাঁড়িপাল্লা বইতে পারবে না।
হুর নীর হারা পাখির মতো উন্মাদ হয়ে বললো।
রুহানি ঃ এতো ভালোবেসে লাভ কিহ অভাগী, যদি ভালোবাসার মনুষটাকেই হারাতে হয়।
হুরের চোঁখ বাধঁ মানলো না, পানি হয়ে গড়িয়ে পরলো।
হুর ভাঙ্গা গলায় বলল, বড়মা
রুহানি ঃ 7 বছর আগে কিহ ঘটেছিল আপনার আর নীলের জীবনে এতো সহজে ভুলে গেলেন নাকী আপনি ভাবছেন নীলকে নিয়ে পালিয়ে গেলেই সব সমাধান হয়ে যাবে।
রুহানি বলতে শুরু করলো,,,,,,,,,,,
9 বছর আগে
হুর ঃ কিহ মজা কিহ মজা আমার আর নীল ভাইয়ের বিয়ে।
হুর বউ (টেনে টেনে)
নীল জামাই (টেনে টেনে)
দুইজন মিলে বউ জামাই (টেনে টেনে)
নিলাসা ঃ হুর থাম থাম। পড়ে যাবি খাট থেকে। বক্সের সাউণ্ডের থেকে তর গলার সাউণ্ড বেশি শোনা যাচ্ছে।
নিলাসা বক্স টা বন্ধ করে দিল।
নে এবার তুই শান্তিতে চেঁচা। বক্সের ফুল সাউন্ড আর তর গলার সাউন্ড দুটোর পাওয়ারই সমান। আর প্লাসে প্লাসে প্লাস হয়ে আমার কানটা মাইনাস হয়ে গেলো।
এবার তুই শান্তিতে চেঁচা আর আমার কানও ওহ পুরোপুরি না হলেও এখন খানিকটা সুরক্ষিত।
হুর ঃ এই তুই বক্স অফ করলি কেন। এখন সবাই শুনতে পাবে না।
আমার না এখন ভিষণ লজ্জা লাগছে,লজ্জায় পেট টা গুড়গুড় করছে।
নীলাসা ঃ এ্যাহ সবার শুনতে মনে হয় বাকিই আছে। গলা তহ নয় যেনো ফাঁটা বাশ।
হুর ঃ নীলা তকে আজ আমি খেয়েই ফেলবো।
নীলাসা ঃ হ্যাঁ খাবিই তহ তুই তোহ কুমির।
হুর রেগে টেডি ছুড়ে দিল নীলাসার দিকে কিন্তু টেডি নীলাসার না লেগে লাগলো দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো নীলের দিকে।
নীল ঃ কিহ হচ্ছে এইসব। নাকট হচ্ছে,,
নীলাসা নিজের রুমে গিয়ে পড়তে বোস৷
নীল দরজা বন্ধ করে দিল।
নীল ঃ এদিকে আয়। নীল বিছানার কাছে গিয়ে দাড়ঁলো।
হুর বিছানা থেকেই এক লাফ দিল।হুর পড়ে যাওয়ার আগেই নীল ধরে ফেললো। হুরের দুই পাঁ এখন নীলের কমোরের পিছনে। আর হুর নীল গলা জাপটে আছে।
হুর ঃ নীল ভাই তুমি কোন পারফিউম ইউস করো, কিহ মিষ্টি ঘ্রাণ খালি নাক দিয়ে টেনে গলা দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলতে মন চায়।
হুর নীলের হোয়াইট শার্টের কলার চেপে বুক থেকে ঘ্রাণ নেওয়া শুরু করলো।
নীল হুরকে ছেড়ে দিল এতে হুর মেঝেতে পড়ে গেল।
হুর খানিকটা ঠোঁট বের কাদঁতে লাগলো
হুর ঃ নীল ভাইই তুমি আমায় ফেলে দিলে,,,,
নীল ঃ হ্যাঁ ফেলে দিয়েছি। বেশ করেছি। তলায় তলায় তহ বেশ জানিস, আবার পিচ্চি সাজার বান ধরিস। কথায় কথায় এখনো কোলে উঠে পড়িস।
হুর কাদঁছে।
নীল ঃ এই তর কান্না বন্ধ কর। একদম কাদঁবি না আমার সামনে কাদঁলে তকে বাজে লাগে। আমার সজ্জ হয় না তর কান্না।
হুর সাথে সাথে চোঁখ মুছলো। তারপর এক গাল হেসেঁ বোকা বোকা চাহনীতে বলল,
হুর ঃ এখন সুন্দর লাগছে,,
নীল হাটুঁ গেঢ়ে বসলো। হুরের থুতনি চেপেঁ ধরলো।
নীল ঃ ভালো করে শুনে রাখ আমি তকে বিয়ে করবো না।
আর তর এখন এইসবের বয়স নয়। পড়াশোনোয় মনোযোগ দে।
হুর ঃ দাদি যে বললো আমাদের বিয়ে হবে।
নীল ঃ বিয়ে করার খুব সগখ না তোর, বিয়ে করার শখ একদম ঘুচিয়ে।
আমার সাথে বিয়ে হলে রোজ রাতে নেশা করে এসে তকে পিটাবো।তকে দিয়ে রান্না করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচাঁ, ঘর মোছা, ঝাড়ু দেওয়া সহ ঘরের সব কাজ করাবো। তকে ঠিক মতো খাবার ওহ খেতে দিব না। তকে আর চকলেট কিনে এনে দিব না,আর তোকে কেউ চকলেট কিনে দিলে সব
চকলেট আমি একাই খেয়ে নিব।
এখন ও আমায় বিয়ে করবি।
বোকা হুর ড্যাবড্যাব করে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে।
নীল চলে গেল।
হুর ঃ নীল ভাই এমন কেন বলল, দাদি তহ বলেছিল, নীল ভাই আমায় অনেক আদর করবে,একদম রানি বানিয়ে মাথায় করে রাখবে। অনেক অনেক চকলেট এনে দিবে।
ব্যবসা নিয়ে দুই ভাইয়ের ভিতর তুমুল ঝামেলা শুরু হচ্ছে । ইদানীং নাহিদ সরকার আর হায়দার সরকারের পড়ছে না। মনমালিন্য হচ্ছে।
মা চারুলতার বিষয় টা সইছে না। সে চায় দুই ভাই ই একসাথে থাকবে।
তাই সে দুই ভাইয়ের সাথে কথা বলে নীল আর হুরের বিয়েটা মেনেজ করেছে। এতে দুজনের সম্পর্ক ভালো থাকবে।
হায়দার সরকারের একটাই মেয়ে। এই বিয়ে হলে সে তার মেয়েকে কাছে রাখতে পারবে সারাজীবন।আর তাছাড়াও কোম্পানীর 50 পারসেন্ট নীলের নামে ।
নীলের দাদা বেচেঁ থাকতে সে নাতি নাতনিদের মাঝে নীলকে দেখে যেতে পেরেছিল। নীল হওয়ার খুশিতে সে কোম্পানীর 50 পারসেন্ট শেয়ার নীলের নামে করে দিয়েছিল।
তাই নীলের সাথে বিয়ে দেওয়া লাভজনক ওহ। সকল দিক চিন্তা করে হায়দার সরকার হুরকে নীলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়।
নীলের হুরপাখি পর্ব ১৯
বেশ কিছুদিন কেটঁ যায়। আজ নীল আর হুরের বিয়ে সম্পন্ন হয়। যদিও নীলকে জোর করে এই বিয়ে দেওয়া হয়।
হুর ফুলে সজ্জিত বেডে বউ সেজে বসে আছে।
তখনই দরজা খোলার শব্দ হয়।
হুর সেদিকে তাকাতেই আতঁকে উঠলো।
