সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৬+৬৭

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৬+৬৭
neelarahman

রাত্রি প্রহর দশটা । নওরিন আফরোজ এখনো রুমে আসেনি ।রান্নাঘরে কাজকর্ম শেষ করছে।হুমায়ূন রহমান নিজের ঘরে বসে বসে চিন্তা করছে ফজলুর রহমান পরবর্তীতে কি করবে বা কি বলতে পারে! অবশ্যই নিঃসন্দেহে ফজলুর সাদাফের ভালো চাচ্ছে কিন্তু সাদাফ কিভাবে এক্সেপ্ট করবে বিষয়গুলোকে বুঝতে পারছে না ।ছেলেকে উনি ভালো করে চিনে।

যদি ফজলুর কোন শর্ত দেয় সাদাফ কি সেগুলো মানবে কি মানবে না ?
হুমায়ূন রহমান বুঝতে পারছে ফজলুর হয়তো সাদাফের জন্য কিছু শর্ত দিবে কিছু নিয়ম দিবে সেগুলো পালন করলেই হয়তো নূরের হাত সাদাফের হাতে দিবে ।কিন্তু সাদাফ যে অধৈর্য ওকি পারবে সবগুলো কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে?
মাঝখানে ভাই ও ছেলের মধ্যে নিজে যাতা কলে পিষে শেষ হয়ে যাবে ।হুমায়ুন রহমান না পারবে ছেলের পক্ষ নিতে না পারবে ভাইয়ের পক্ষ নিতে।
এসব ভাবতে ভাবতে চোখের চশমাটি খুলে মাথাটা উপরের দিকে দিয়ে সোফায় শরীর এলিয়ে দিল হুমায়ন রহমান ।ছেলেকে নিঃসন্দেহে অনেক ভালোবাসে হুমায়ূন রহমান ।না হলে ছোটবেলা ওর এরকম একটা আবদার হুমায়ূন রহমান কোনদিনও মানতেন না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বলতেই হয় ছেলের প্রতি এক ধরনের অন্ধ ভালোবাসা থেকে উনি সাদাফের কথা মেনে নিয়েছিল ।তবে খুব কি ক্ষতি হয়েছিল সাদাফের কথা মেনে নেওয়ায়? মনে মনে ভাবছে হুমায়ূন রহমান।
এতে কারো কোনো ক্ষতি তো হয়নি ।হ্যাঁ হয়তো যা ফজলুর রহমানের জানা উচিত ছিল বা নূরের জানা উচিত ছিল তা ওরা জানতে পারেনি।কিন্তু সাদাফ তো কথার বরখেলাপ করেনি বা কোনভাবে কারো কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি।যা যা শর্ত দিয়েছিল সেই শর্ত সব পালন করেছে সাদাফ।
রুমে দরজা নক হতেই সাদাফ রুমের ভিতরে আসতে বলে বললো,”দরজা খোলা আছে ভিতরে আসো।”
সাদাফ দরজার দিকে তাকালো ।দেখল দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করছে ফজলুর রহমান ।সরু চোখে তাকালো ছোট বাবার দিকে ।মনে মনে ভাবল এত রাতে এখানে কি কথা বলতে এসেছে?
ফজলুর রহমান ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে সাদাফের বেডের সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,”কেমন অবস্থা এখন শরীরের ?”
বলতে বলতে বিছানায় সাদাফের পায়ের কাছে বসতেই সাদাফ পা গুটিয়ে নিল।
ফজলুর রহমান খেয়াল করলেন ছেলেটা এমনি ভীষণ ভালো, আদব-কায়দা কোন কিছুতেই যেন ছেলেকে পিছনে ফেলা যাবে না শুধু রাগটা একটু বেশি।

যা আগে জানতো না এই ইদানিং জানছে।
চাচার দিকে তাকিয়ে বলল ,”ভালো আছি ছোট আব্বু ।হঠাৎ এত রাতে কিছু বলবে?”
ফজলুর রহমান সাদাফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন ।তারপর বললেন আমি একটি ছবি পেয়েছি সাদাফ।তোমার ড্রয়ারে একটি বক্সের ভিতরে ছিল ।ছবিটি সম্পর্কে জানতে চাই।
যদি আমি তোমাকে ছেলে মনে করে থাকি আর তুমি আমাকে সত্যি সত্যি বাবা মনে করে থাকো তাহলে আজ একটি কথাও লুকাবে না আমার কাছ থেকে ।যা সত্যি সব বলবে যদিও আমি সত্যিটা জানি আমি আমার ছেলের মুখ থেকে শুনতে চাই।
সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ফজলুর রহমানের দিকে ।বুঝতে পারল ছবিটি ছোট আব্বু দেখেছে এবং বুঝতে পেরেছে ।

সাদাফ কোন ভূমিকা করলো না ।সরাসরি বলল ,”সেদিন নূরের সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল।”
ফজলুর রহমান থ হয়ে গেল সাদাফের মুখ থেকে সরাসরি এ কথা শুনে। ভেবেছিল হয়তো সাদাফ লুকানোর চেষ্টা করবে বা ভয় পাবে কিন্তু চিত্র পুরাই ভিন্ন।
সাদাফ বলতে শুরু করলো।”আমার বিদেশে যাওয়ার তিন দিন আগে এই শর্তে আমি বিদেশে গিয়েছিলাম ।শুধু বাবা জানতো ব্যাপারটা আর কেউ না।
আমি বিদেশে চলে গেলে যদি নূরকে অন্য কেউ বা কোথাও বিয়ে দিয়ে দাও সেজন্য আমি বিয়ে করে রেখে যেতে চেয়েছিলাম।ওই মুহূর্তে আমার মাথায় এটাই এসেছিল তাই এটাই করেছি।
যেই সত্যটা শুধু আমি আর বাবা জানতাম আজ থেকে তুমি জানলে ।আমি নুর কেউ কোনদিনও বুঝতে দেইনি বা জানতে দেইনি ও আমার বিবাহিত স্ত্রী।”

ফজলুর রহমান অবাক হবেন নাকি নিজ ছেলে সমতুল্য ভাতিজার সততায় আরেকবার মুগ্ধ হবেন বুঝতে পারল না ।রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল ,”তখন নূরের কত বয়স ছিল ?বলতে পারো ?”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।হেসে বল ,”দশ বছর ।”
তারপর ফজলুর রহমান সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল ,”১০ বছরের একটা মেয়ে বিয়ের কি বুঝে?”
সাদাফ ধীরে কিন্তু দৃঢ় কন্ঠে বলল ,”ওর বুঝতে হবে না আমি বুঝি ও আমার বিবাহিত স্ত্রী এতটুকুই যথেষ্ট ওর সাথে আমার সারা জীবন পার করে দেওয়ার জন্য।আর তোমার মা মানে আমার দাদীর ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিলো।এটা ভুলে যেয়ো না।”

ফজলুর রহমান অবাক হয়ে বলল,”তারপরেও তোমার কি মনে হয় না তোমার আর ওর যখন বিয়ে হয়েছে তখন ওর এটলিস্ট বিয়ে কি সেটা বোঝা উচিত ছিল । ধরো তুমি বিদেশে ছিলে আমরা কেউ জানতাম না ও যদি অন্য কাউকে পছন্দ করে ফেলে বা আমরা কোন সিচুয়েশনে পড়ে ওকে বিয়ে দিয়ে দিতাম?”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।বললো,”না পারতে না ।আমার বিবাহিত স্ত্রীকে বিয়ে দেওয়ার অধিকার কারো নেই। তোমারও নেই ।ওই মুহূর্তে অবশ্যই আমি বলতাম ও আমার বিবাহিত স্ত্রী যদিও প্রয়োজন পড়ে নি বলার আজ পড়েছে তাই আজ বললাম। আজ থেকে তুমি জানলে তাই আশা করি সামনে এরকম কোনদিন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করবে না।”

“তুই কি অনুরোধ করছিস নাকি আমাকে জোর গলায় থ্রেট দিচ্ছিস?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো ফজলুর রহমান
“থ্রেট দিচ্ছি না তবে অনুরোধ করছি ও করছি না ।যা সত্যি তোমাকে জানাচ্ছি ।নূর জন্ম থেকেই আমার ।তুমি ওকে আমার কোলে তুলে দিয়ে প্রমিজ করে বলেছিলে আজ থেকে ওর সব দায় দায়িত্ব আমার ।সেদিন থেকেই নূর আমার তারপরও আমি দশ বছরের সময় আবার বিয়ে করেছি।

আল্লাহকে হাজির নাজির সাক্ষী রেখে আমি বিয়ে করেছি। হয়তো নূর অতটা বুঝতো না কিন্তু ও কবুল করেছে আমার নামে। ধর্মীয় মতে নুর আমার স্ত্রী ।এটা তুমি অস্বীকার করতে পারবেনা।”
ফজলুর রহমান একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন ।এই তিন দিনে ফজলুর রহমানের রা*গ অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছে তবে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”হ্যাঁ নূর হয়তো কবুল বলেছে কিন্তু ও কি কবুল মানে বুঝত ?ও কি এখনো জানে ও তোর স্ত্রী ?জানে না ।তাহলে তুই যেটাকে বিয়ে মনে করছিস সংসার মনে করছিস ও তো এগুলো কিছুই জানে না।”

সাদাফ বলল ,”জানেনা তাহলে জানাবো ।আজ থেকে ঠিক ১৫ দিন পর ওর সাথে আমার বিয়ে হবে।
তোমরাই আনুষ্ঠানিকভাবে নূরকে আমার হাতে তুলে দিবে ।সেদিন না হয় নূর জানবে বিবাহিত কিন্তু যেহেতু তোমরা জানো নূর আমার বিবাহিত স্ত্রী তাই তোমরা নুরকে সেভাবেই ট্রিট করবে ।আমার স্ত্রী হিসেবে ট্রিট করবে।”
“আমি যে তোর বাবা হই তোর কি একটু বুক কাপছে না আমার সাথে এভাবে কথা বলতে ?”বললো ফজলুর রহমান।
সাদাফ মুচকি হাসল ।বলল ,”না তুমি এখন শুধু আমার বাবাই না আমার শ্বশুর হও ।যেহেতু জেনে গিয়েছো তাই এখন থেকে ওপেনলি তুমি আমার শ্বশুর ।সম্পর্ক তোমার সাথে আমার দুইটা তাই অধিকারও বেশি।”
ফজলুর রহমান বলল ,”যদি আমি না মানি ?”

সাদাফ মুচকি হেঁসে বললে ,”ওই যে বললে আমি তোমার ছেলে আজ হোক কাল হোক তুমি মানবেই যদি ছেলে মনে করে থাকো। যদি তোমার চোখে আমি সুযোগ্য পাত্র হয়ে থাকি তাহলে অবশ্যই মানবে।”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করল ফজলুর রহমান ,”তুই কি শুরু থেকেই এরকম ছিলি নাকি আমি তোকে চিনতে ভুল করেছি?”
“আমি শুরু থেকেই এরকম বাবার সাথে আজকে থেকে তোমার সাথেও ।তবে আমাকে চিনতে ভুল করনি তোমাদের সন্তান হিসেবে আমি কখনো কোনো খারাপ কাজ করিনি ।এমন কোন কাজ করেনি যাতে তোমাদের মাথা নত হয়ে যায়।
তবে নূরের ব্যাপারটা ভিন্ন ।নূরের ব্যাপার নিয়ে আমি কারো সাথে কখনো কম্প্রোমাইজ করব না তোমাদের দুই ভাইয়ের সাথেও না।”

বললো সাদাফ।
ফজলুর রহমান আর কি বলবে কোন ভাষা খুঁজে পেল না ।চুপচাপ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” তোর সাথে আমার পরে কথা হবে তুই সুস্থ হয়ে নে। তুই এখন সুস্থ না।”
বলেই সাদাফের দিকে আড় চোখে একবার তাকিয়ে মাথা নাড়াতে নাড়াতে রুম থেকে বের হয়ে গেল ফজলুর রহমান ।সাদাফ মুচকি মুচকি হাসলো ।সাদাফ ভাল করে জানে তার দুই বাবা তাকে অনেক ভালবাসে এক সময় না একসময় সাদাফের অন্যায়টা ঠিকই ক্ষমা করে দিবে।
রাত বাজে এগারোটা ।সাদাফের খুব কফি খাওয়ার নেশা উঠে গিয়েছে ।সাদাফ ভাবলো এত রাতে মা কে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না সারাদিন কা*জকর্ম করে তাই কি করবে বুঝতে না পেরে ফোন দিল নুরকে ।একটু কফি খাওয়ার জন্য ।

নূর ফোন পেয়ে নিচে গেল কফি তৈরি করতে ।কফি তৈরি করে দরজার নক করলে সাদাফ ভিতরে আসতে বলল ।নুর কাপা কাঁপা হাতে কফি নিয়ে দরজায় দাঁড়ালো।
বলল ,”কফি চেয়েছিলেন ?এত রাতে ?”
সাদাফ বলল ,”হ্যাঁ কফি নিয়ে ভিতরে আয়।”
দু পা এগিয়ে কফি টেবিলে রাখতে চাইলে সাদাফ বললো আর ,” আর একটু কাছে আয় ।”
নুর আরেকটু এগোলে ।সাদাফ বললো ,”আর একটু কাছে আয় ।”

নূর কফিটা টেবিলে রেখে দৌড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বলে গেল,”আমি জানি আপনি এখন আমাকে কি জন্য ডাকছেন এখন আমি সবকিছু বুঝতে পারি।”
সাদাফ নুরের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল ।অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল ,”কি জন্য?”
নুর বললো,” চুম্মা চাটি করতে?”
সাদাফ অবাক হয়ে বলল,” কি? তোকে বলেছি আমি সেই জন্য ডাকছি ?বেশি চালাক হয়ে গিয়েছিস ?আজকাল পাকা অনেক হয়েছিস ।আমি হাতের ব্যান্ডেজটা টাইট করার জন্য ডাকছিলাম।”

নূর দৌড়ে পালাতে গিয়েও থেমে গেল ব্যান্ডেজ টাইট করার কথা শুনে ।তারপর পিছনে তাকিয়ে বলল ,”সত্যি সেজন্য ডেকেছিলেন ?আমি ভাবলাম…….
সাদাফ মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো,” এদিকে আয় ব্যান্ডেজ টাইট করে বেধে দে না হলে দেখব রাতে খুলে গিয়েছে।”
নুর সরল মনে বিশ্বাস করে সাদাফের দিকে এগিয়ে গেল ।গিয়ে হাটু ভেঙে নিচে বসে সাদাফের ব্যান্ডেজ করা হাতটি ধীরে ধীরে নিজের হাতে নিল ।যেহেতু সাদাফ বিছানায় বসে ছিল পা ঝুলিয়ে তাই নুর নিচে এভাবে বসেছে ।
সাদাফ নুর কে দেখে মনে মনে ভাবছে ,”আসলেই অনেক চালাক হয়ে গিয়েছে ।আসলে একটু চু*মু খাওয়ার জন্য ডেকেছিল কিন্তু এখন কিছু করার নেই নিজের কথাকে সত্য বোঝাতে ব্যান্ডেজ টাইট করাতে হবে।

নুর ধীরে ধীরে সাদাফ এর হাতের ব্যান্ডেজ টা খুললো ।ব্যান্ডেজটা খুলে সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল ,”আচ্ছা এটা চেঞ্জ করে দেই ?দেখুন না একটু একটু ব্লাড লেগে গিয়েছে ।”নীলা রহমান লেখিকা
সাদাফ তাকিয়ে দেখলে আসলে একটু র*ক্ত তাই বলল ,”ঠিক আছে যা আলমারিতে ড্রেসিং এর সব উপকরণ আছে নামিয়ে নিয়ে আয়।”

নুর সাদাফের কথামতো এগিয়ে গেল আলমারির দিকে ।আলমারি খুলে ফার্স্ট এইড বক্সটা নামিয়ে এনে আবার নিচে বসতে গেলে সাদাফ বললো ,”বিছানার উপরে বস।এখানে বসে কম্ফোর্টেবল ফিল করবি ।”
নুর বিছানার উপরে বসে সাদাফের হাতটা ধীরে ধীরে ড্রেসিং করতে লাগলো।
ড্রেসিং করার সময় হঠাৎ সাদা ব্যথা পেলে নুর সাথে সাথে ক্ষত জায়গায় ফু দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,” কেন সেদিন নিজের হাতে এভাবে কষ্ট দিতে গেলেন ?
একটিবার আমাকে জিজ্ঞেস করতেন কি হয়েছিল ?তাহলে তো এত কষ্ট পেতে হতো না ।নিশ্চয় অনেক ব্যথা করছে নিশ্চয় অনেক জ্বালা করছে আপনার।”
বলে ঝরঝরিয়ে চোখের পানি ফেলে দিল নুর ।সাদাফ অবাক হয়ে গেল নুরের হঠাৎ কান্না দেখে ।ধীরে ধীরে ঝুকে এসে ভালো হাতে দিয়ে নুরের চোখে পানি মুছে বলল ,”পা*গলি কাদছিস কেন ?
তখন ব্যথা পেয়েছিলাম কিন্তু এখন এত ব্যথা হচ্ছে না ।আর এই যে তুই এত ভালোবেসে ফু দিয়ে দিলি সব জ্বা*লা শেষ হয়ে গেছে আমার।”

১০ মিনিট ধরে সাদাফের হাতের ব্যান্ডেজ টা চেঞ্জ করে নুর যেই ফার্স্ট এইড বক্সটি বিছানা থেকে তুলে আলমারিতে রাখতে যাবে ওমনি সাদাফ নুরের হাত ধরে ফেলল।
নূর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সাদাফের দিকে ।ভেবেছে হয়তো কিছু প্রয়োজন সাদাফ এক হেচকা টানে নূরকে নিজের বুকে ফেলে পিছনের চুলগুলো মুঠি করে ধরে বলল ,” তুই একটু আগে ঠিকই ভেবেছিলি তোকে আমি একটু আ*দর করার জন্যই ডেকেছিলাম ।এত চালাক তুই কিভাবে হয়ে গেলি রে?
এখন বুঝতে যখন পেরেছিস তাহলে একটু আদর করে দেই না হলে আমার রাতে ঘুম ঠিকঠাক হবে না ।”
নুর বললো,” দেখুন আপনি…………আর বলে শেষ করতে পারলো না নুর।সাদাফ নূরকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঠোঁটে একটি চুমু খেয়ে বসলো ।কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে নূর পিটপিট করে চোখ খুলল ।সাদাফ নুর কে ছেড়ে দিয়ে নূরকে বললো ,”যা এবার ঘুমাতে যা।অনেক পেকেছিস।কিছু বলার আগেই সব বুঝে যাস।তাই বেশি বুঝার জন্য শাস্তি দিলাম।

একা নির্ঘুম রাত আমার কেন কাঁটবে?তোরও একটু কাটুক নির্ঘুম রাত।”বলেই নুরের চুল ছেড়ে দিলো সাদাফ।
নূর কাচুমাচু হয়ে কোনমতে সাদাফের বুক থেকে ঠিকঠাক মতো উঠে বসল ।বসে সাদাফের দিকে এক নজর তাকালো তাকিয়ে সাথে সাথে বলল ,”আপনি অনেক বড় একটা খারাপ লোক ।”
বলেই সাথে সাথে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
সাদাফ নুরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে হাসলো ।আর মনে মনে বলল ,”পা*গলি একটা আসলেই অনেক বুদ্ধিমতী হয়ে যাচ্ছে কে বলবে কদিন আগে এত বোকাসোকা ছিল নূর।”নীলা রহমান
পরদিন দুপুরে খাওয়ার সময় সামিহা বেগম ও নওরিন আফরোজ টেবিল গোছাতে গোছাতে সবাইকে তাড়া দিয়ে বললো,” সবাই তাড়াতাড়ি খেতে আসেন ।”সবাই তাড়াতাড়ি ড্রয়িং রুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে চেয়ার টেনে বসলো।

নূর এসে আগের মতোই চেয়ার টেনে বসল সাদাফের পাশে ।আর নূর তো এখন জানে সাদাফকে খাইয়ে দিতে হবে যেহেতু সাদাফের হাত ভালো না।
সবাই একসাথে বসলে সায়মন ওরিমা পাশাপাশি বসলো ।সায়মন রিমার পায়ে একটি খোঁচা মারলে রিমা খুব জোরে সায়মনকে একটি লা*থি বসিয়ে দিল ।তবে আজ রিএকশন দেখালে ধরা খেয়ে যাবে তাই চুপচাপ ব্যথা হজম করে নিল আর মনে মনে ভাবল এর শাস্তি তুই পাবি রিমার দিকে তাকিয়ে।”
এদিকে সবাই কে নওরিন আফরোজ খাবার সার্ভ করছে ।সামিহা বেগম সাদাফের কাছে এসেই বলল ,”দেশি মুরগির ঝোল করেছি আর দেখ রান দুটো তুই খা । শরীর থেকে অনেক র*ক্ত গিয়েছে তোর এখন ভালো ভালো জিনিস খেতে হবে শরীরের র*ক্ত ফিরিয়ে আনার জন্য।সাথে সাথে সাদাফ বলল ,”আম্মু রান তো সায়মনের খুব প্রিয় ওকেই দাও।”

সাইমন ও সাথে সাথে বলল ,”হ্যাঁ আম্মু আমাকে দাও আমার রান ভীষণ পছন্দ যেহেতু সাদাফ ভাই খাবে না।”
সাথে সাথে সামিহা বেগম বলে উঠলেন ,”চুপ কর দিনভর খালি খাওয়া আর খাওয়া কি কা*জটা করিস তুই সারাদিন শুনি ?তোর সমস্ত কাজ তো রিমা করে দেয় ।দিতে হলে রি মাকে দিব তোকে কেন দিব?”
সাইমন মায়ের ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে গেল ।তাও রিমার সামনে ।এরকম অপমান সহ্য হলো না সাইমনের ।বলল ,”ও কি এমন কাজ করে সারাদিন ?শুধু একটু ঘরটা গোছায় আর আমার কাপড়চোপড় গুলো পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখে ।এই তো ?এই কাজের জন্য এতগুলো কথা শুনতে হবে আর মুরগি রান ও দিতে হবে?”

রিমা সাথে সাথে বলল ,”ও এগুলো শুধুমাত্র একটু কাজ ?ঠিক আছে আগামী কালকে থেকে আগামী কালকে থেকে কেন আজকে থেকে এই সমস্ত কাজ তুমি করবে ।আর সবাই সাক্ষী আমাকে যেন না ডাকে কাজ করার জন্য।”
সাইমন রিমার দিকে তাকিয়ে বলল ,”ওকে তুই কাজ না করলে সাইমন মরে যাবে না ।ঠিকঠাক আমি আমার কাজ করে নিতে পারবো ।যেই না একটু কাজ করিস তার জন্য অনেক ভাব বেড়েছে তোর।”
সামিহা বেগম ধমক লাগিয়ে বললেন ,”চুপ বে*য়াদব সামনে কত মুরুব্বিরা আছে আর ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে।এই সবাই খাও তো ।বলেই সাদাফ কে আবার বলল ,”তুই খা বাবা রান ন দুটো তুই খা ।ওদেরকে দিলে এখন ঝগড়াঝাঁটি কারাকারি শুরু হয়ে যাবে ।”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৪+৫৫

বলেই সাদাফ কে দুটো রান পাতে তুলে দিল ।নূর ধীরে ধীরে প্লেট টা নিয়ে মাংস বেছে বেছে সাদাফ কে ভাত খাইয়ে দিতে লাগলো ।ফজলুর রহমান আড় চোখে সবই খেয়াল করলো কিন্তু এখন বলার কিছুই নেই। প্রতিদিন নূর খাইয়ে দিচ্ছে তাই আজ হঠাৎ না করলে নূরের সন্দেহ হবে তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
হুমায়ূন রহমান সাদাফ আর নুর কে এইভাবে দেখে তাকালো হতাশ হয়ে ফজলুর রহমানের দিকে ।তারপর দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলে নিজেও খাওয়ায় মনোযোগ দিল ।আর মনে মনে ভাবল এই ছেলের জন্য যার কত কিছু দেখতে হবে আল্লাহই জানে।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৮+৬৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here