তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ১৭+১৮
নৌশিন আহমেদ রোদেলা
ব্রেকফাস্ট করার হলে ক্যান্টিনে যাবো আপনি আমায় গাড়িতে আনলেন কেন??আর এভাবে আনার মানে কি?সবাই কেমন করে তাকিয়ে ছিলো দেখেছেন?
আই ডোন্ট কেয়ার।এখন ওড়না টা খুলো…
হোয়াটটটটটট???কি বলছেন এসব।(অবাক হয়ে)
আমি ওড়নাটা মাথা থেকে সড়াতে বলছি জাস্ট,,অন্য কিছু না।।আর কারো সামনে এভাবে মাথায় ওড়না দিয়ে আসবে না।।
কেনো??
সবগুলো ছেলে কেমন আহাম্মকের মতো তাকিয়ে ছিলো।।স্কার্ফ পড়তে পারতে।।এভাবে অগোছালো চুলে,,,ঘুমো ঘুমো চোখে মাথায় লাল ঘোমটা এঁটে ছেলেদের হার্ট অ্যাটাক করাতে চাও??
লিসেন?ছেলেরা আমাকে নয় শ্রেয়াকে দেখছিলো ওকে?
হুহ…এজন্যই তো সাহেলের মুখে মাছি ঢুকে যাচ্ছিলো।।ও তোমায় চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো।।
ওয়াও…সাহেল ভাইয়া আমায় দেখছিলো??রিয়েলি?
এতো খুশি হচ্ছো কেন??(ভ্রু কুঁচকে)
তো খুশি হবো না??আম রিয়েলি ক্রাশড অন হিম।ইউ নো হোয়াট??উনি কি কিউট এন্ড সুইট।।অন্নেক ড্যাশিং…
আমার কথাটা হয়তো উনার হজম হলো না।।হঠাৎই আমার দিকে এগিয়ে এলেন।।আমি গাড়ির দরজার সাথে মিশে বসে আছি।।শুকনো গলায় বারবার ঢোক গিলে উনার দিকে তাকাচ্ছি কে জানে আবার কি ভুল বলে ফেললাম।উনি একহাত সিটে এবং অন্যহাত গাড়ির দরজায় রেখে আমার উপর ঝুঁকে পড়লেন।।নীরবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন।।কি অস্বস্তিকর ব্যাপার।।আমি নড়েচড়ে উঠতেই উনি আরো এগিয়ে এসে বলে উঠলেন…
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাহেল ড্যাশিন?কিউট?সুইট? তো আমি কি?
আপনি তো পুরাই স্টোবেরি আইসক্রিম (মনে মনে) আপ আপনি ভাইয়া…!!
আমার কথাটা শুনেই হতাশ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।।আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলাম।।উফফ আরেকটু হলেই তো মরে যেতাম।।শ্বাস নিতে নিতে সামনের দিকে তাকাতেই সাহেল ভাইয়াকে দেখতে পেলাম কারো সাথে হেসে গল্প করছেন।।আমার অবচেতন মন বলছে শুভ্র ভাইয়া সাহেল ভাইয়ার প্রতি জেলাস।।কারণ না জানলেও এই জেলাসনেসটা বাড়িয়ে দিলে কেমন হয়?যেমন ভাবা তেমন কাজ।।শুভ্র ভাই চোখ মুখ লাল করে বসে আছেন।উনাকে শুনিয়ে বলে উঠলাম-
লুক ভাইয়া? সাহেল ভাইয়াকে নেভিব্লু শার্টে কি কিউট লাগছে।।উফফ…আমি তো আহত।আচ্ছা ভাইয়া?(উনার দিকে তাকিয়ে) সাহেল ভাইয়া তো আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড,,তাহলে একটা কাজ করি আমি উনাকে পটিয়ে বিয়ে করে ফেলি।।তাহলে আপনাদের রিলেশন আরো ক্লোজ হবে।।আপনার বোনের হাজবেন্ড বলে কথা।।তাইনা??আচ্ছা আমি সাহেল ভাইয়ার কাছে যাই ওকে??
কথাটা বলে গাড়ির দরজায় হাত দিতেই উনি আমার হাতটা জোড়ে টেনে ধরে চোখ মুখ লাল করে বলে উঠলেন-
খবরদার..গাড়ি থেকে নামবে তো।।লুক এট মি ডেমেট।।কি পেয়েছো ওর মধ্যে?? বলো কি পেয়েছো??
কথাটা বলেই গাড়ির সামনের দিকটায় খুব জোড়ে আঘাত করলেন উনি।।এমন কিছু হবে ভাবি নি।।আমি চমকে উঠে উনার হাতের দিকে তাকাতেই অবাক হলাম।।ব্যান্ডেজ ভিজে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।।এটুকু রক্ত তেমন কোনো ব্যাপার না কিন্তু আমার চোখে ভাসছে সেই রাতের ঘটনা।।অনেক রক্ত,,,চারপাশে অনেক রক্ত।।আমি কোনোরকম বলে উঠলাম…”রররক্ত!!!” উনি আমার কথায় হাতের দিকে ফিরে তাকালেন।।হাতের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই ডান হাতে দিয়ে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে মাথাটা চেপে ধরলেন বুকে।।স্লো ভয়েজে কানে কানে বলতে লাগলেন….
রিলেক্স রোদ।। টেক আ ডিপ ব্রেথ।।কিচ্ছু হয় নি,,কিচ্ছু না।।চোখ বন্ধ করো।।আমার সাথে কথা বলো।।
আমি কিছুই বলছি না চুপ করে উনার বুকে মাথা গুঁজে খামচে ধরে আছি উনার শার্ট।উনি আমাকে ধরে রেখেই রক্তমাখা হাতে সাহেল ভাইয়াকে কল করলেন…
হ্যালো সাহেল?তোর সামনেই আমার গাড়ি।।প্লিজ গাড়ির কাছে আয় ইমার্জেন্সি!!!
কিছুক্ষণ পরই সাহেল ভাইয়ার কথা শুনা গেলো।।
কি রে শুভ্র ডাক…(হঠাৎ থেমে গিয়ে) সানশাইনকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছিস কেন??
লুক এট মাই হ্যান্ড।ব্লিডিং হচ্ছে। আর ওর ব্লাড ফোবিয়া আছে।।প্লিজ ব্যান্ডেজ টা চেঞ্জ করে দে।।আমি একহাতে পারবো না।।
ওহ..ওকে।বাট এমনটা হলে কিভাবে?শুভ্র তোর রাগটা বেশি বেড়ে গেছে।।সেদিন ফারুককে মেরে নিজের ইচ্ছেতে হাতটা কেঁটে বেহাল দশা করলি।।আজ আবার?(ব্যান্ডিজ খুলতে খুলতে)
আজ ইচ্ছে করে করি নি।।হয়ে গেছে।
উনি আমার চুলে হাত ভুলিয়ে বলে উঠলেন-
রোদপাখি??ভয় পাচ্ছো?
আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম হ্যা পাচ্ছি।।উনি মুচকি হেসে আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন-
আমার বুকের বা পাশে মাথা রাখো একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় আছে ওখানে।।রাখো..
আমি বাধ্যমেয়ের মতো উনার বা পাশে মাথা রাখলাম।।ধুপধুপ ধুপধুপ শব্দ হচ্ছে ক্রমাগত।।অনেক ফাস্ট বিট করছে উনার হার্ট।।আমার কাছে সাউন্ডটা মিউজিকের মতো লাগছে।।আচ্ছা এই সাউন্ডে কি কোনো গানের মিউজিক হতে পারে?? হঠাৎ উনি কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলেন…” এখনো ভয় করছে??” আমি খেয়াল করলাম আমার আর ভয় লাগছে না।।একটুকুও ভয় লাগছে না।।আমি মাথা নেড়ে না বলতেই উনি বলে উঠলেন-
মাথা নাড়ো কেন??মুখে বলো…. আর বোবা হয়ে যেও না প্লিজ।।স্পিক আপ।।
ভয় পাচ্ছি না।
আমার কথায় শুভ্র হাসলো।।সাহেল ভাইয়ার মুখের প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারছিলাম না৷ কারব্ণ উনি কারের বাইরে আমার অপজিটে দাড়িয়ে আছেন।সাহেল ভাইয়া কাজ শেষ করে যেতে নিলেই শুভ্র তাকে খাবার পাঠানোর কথা বলে দিলেন।।সাহেল ভাইয়াও মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে চলে গেলেন।।আমিও সোজা হয়ে বসলাম,,খুব লজ্জা লাগছে আমার।।এতোক্ষণ আমি উনার এতো কাছে ছিলাম ভাবা যায়??কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ছেলে এলো খাবার নিয়ে।।খাবারটা এগিয়ে দিয়েই হাসিমুখে বলে উঠলো…
সরি ভাই লেইট হয়ে গেছে।।(আমার দিকে তাকিয়ে) আসসালামু আলাইকুম ভাবি!!ভালো আছেন??
আমি জবাব দেওয়ার আগেই শুভ্র বলে উঠলো…”ও ভালো আছে।।তুই এখন যা রাতুল।।” কিন্তু বাদ সাধলাম আমি।।ছেলেটাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম…
এক মিনিট এক মিনিট!!!এই শুভ্র ভাই আপনার কি হয়??
জি ভাই লাগে।।
তাহলে শুভ্র ভাইয়ার বোন আপনার কি লাগবে??(ভ্রু নাচিয়ে)
বোন লাগবে।।
বোন লাগলে আমায় ভাবি ডাকেন কোন এংগেল থেকে??আমি উনার বোন হই৷ সো নেক্সট টাইম ভাবি ডাকলে খবর আছে যান।।
জি ভাবি।(মাথা নিচু করে)
আবার ভাবি??(রাগী চোখে)
সরি ভাবি!!
আবার??
এই রাতুল তুই যা তো…গো
ছেলেটা দুই সেকেন্ড না দাঁড়িয়ে দিলো দৌড়।আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম-
ওকে যেতে দিলেন কেন??
তো বেঁধে রাখতাম??তোমাকে তো জাস্ট ভাবিই ডাকছে।এমন ভাব করছো যেন,, ওর ভাবি ডাকাতে তুমি ওর ভাইয়ের বাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছো।।স্টুপিড।।
ইচ্ছে তো করছে একে খুন করে ফেলি।।তবু চুপ করে গেলাম।।আপাতত ক্ষুধা লাগছে,, একে পড়ে দেখা যাবে।।
আমি খাচ্ছি।। আর উনি গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে গেমস খেলছেন।।নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে কপাল কুঁচকে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন।।আমি উনার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলাম-
শ্রেয়াকে আজ কেমন লাগছিলো??
আমার কথায় ভ্রু কুচঁকে আমার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন- “শ্রেয়া কে?” উনার কথায় আমি চরম অবাক।।একটু আগে নাম পরিচয় শুনে এখনি ভুলে গেছেন।।আজব।।আমি উনার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম-
একটু আগে যে মেয়েটার সাথে কথা বলছিলেন।।তার নাম শ্রেয়া।।
ওহ।।
উনার “ওহ” শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।।তবু নিজেকে শান্ত রেখে বলে উঠলাম- “শাড়িতে অস্থির লাগছিলো না??পুরাই কিউটের ডিব্বা”
শাড়ি পড়েছিলো নাকি??(গেইম খেলতে খেলতে)
আপনি এটাও খেয়াল করেন নি ও কি পড়েছিলো??এতোক্ষণ কথা বলেও আপনি ওর ড্রেস খেয়াল করলেন না??
ওর ড্রেস খেয়াল করে আমার কি লাভ বলো তো??কোনো দরকার আছে??ও জামা পড়ুক,,শাড়ি পড়ুক,,চাইলে কিছুই না পড়ুক।।আই ডোন্ট কেয়ার।।
উনার কথা শুনে আমি ফিট।।থেংক গড শ্রেয়া এখানে নেই।। নয়তো মেয়েটা সুইসাইড করতো।।যার জন্য এতো সাজুগুজু সে নাকি তাকে খেয়ালই করে নি কি পড়েছিলো।।ভাবা যায়??আমি খাওয়া থামিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম-
মিস করলেন…এতো সুন্দর মেয়েকে চোখের সামনে রেখেও দেখলেন না।।কি সুন্দর লাগছিলো….
হুমম অনেক সুন্দর লাগছিলো…এলোমেলো চুল,,ঘুমু ঘুমু চোখ।।মাথায় জড়ানো ওড়নার লাল আভা….পাগল যে হয়ে যাই নি।।সেটাই তো অনেক রোদপাখি…(আনমনে)
কি বললেন??(ভ্রু কুচকে)
ক..কই কিছু না তো??(থতমত খেয়ে)
আমি তো শুনলাম…আপনি বললেন এলোমেলো চুল।।ওর চুল গোছানো ছিলো।।এলেমেলো ছিলো নাহ….
চুপচাপ খাও তো।।আমার যাকে দরকার তাকে দেখতে পেলেই হলো।।শ্রেয়া প্রেয়া কে দিয়ে কি করবো??
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।।তারমানে মেয়েটা শ্রেয়া নয়।।তাহলে কি চিত্রা???নো নো….অবশেষে চিত্রা??চিত্রা ঠিকই বলেছিলো…জামাই হতে কতোক্ষন??সত্যিই তাই জামাই হতে কতক্ষণ? দীর্ঘশ্বাস!!!
কফি হাতে ছাদের দোলনায় বসে আছি।। মাথা ধরেছে।এই মুহূর্তে মাথা ধরা ভাবটা হালকা হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা চূড়ান্ত আকার ধারণ করবে।তাই আগে থেকেই আয়োজন করে বসে আছি। মাথা ব্যথার কারণটা না জানলেও এর লক্ষণটা স্পষ্ট।। প্রথমে বিনা কারণে মন খারাপ হবে…. মন খারাপ ভাবটা চূড়ান্ত আকার ধারণ করলে শুরু হবে মাথা ব্যাথা।।যাকে বলে প্রচন্ডরকম মাথা ব্যাথা।।দোলনায় মাথা ঠেকিয়ে একদৃষ্টে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।।রাতের আকাশটাকে উজ্জল করে ফুটিয়ে তুলেছে ওই চাঁদ।।সবার থেকে সুন্দর,,প্রাণবন্ত…ঠিক শুভ্র ভাইয়ার মতো।।আচ্ছা? উনি কি সত্যিই চিত্রাকে পছন্দ করেন?করারই কথা না করে যাবেন কোথায়??চিত্রা যে অসম্ভব রূপবতী একটা মেয়ে।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসে কফির কাপে চুমুক দিলাম।।চিত্রাকে শুভ্র ভাইয়ার বউ হিসেবে খারাপ লাগবে না বরং অসাধারণ মানাবে।আমার ভাবি হিসেবে তো পার্ফেক্ট।।কি মনে করে কল দিয়ে বসলাম চিত্রাকে….
হ্যালো!!
শুভ্র ভাইয়া শ্রেয়াকে নয় তোকে পছন্দ করে চিত্রা!!
আমার মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে অবাক হলো চিত্রা।।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলো…
আর ইউ মেড??আমাকে কেন পছন্দ করতে যাবে বল তো।।
তুই যে সুন্দরী পছন্দ না করে কই যাবো?(,হালকা হেসে)
শোন রোদ??এসব ফাউল কথা বাদ দে।।ভাইয়া যদি ভার্সিটিতে আমাদের চিনা পরিচিতদের মাঝে কাউকে ভালোবাসে তাহলে সেটা তুই,, নয়তো কেউ না।।ভাইয়া তোর কতো কেয়ার নেই দেখেছিস?
শাট আপ চিতা বাঘ।তুই কেয়ার কই দেখলি?অপমান ছাড়া কিছু করেছি উনি??যত্তসব!!
তুই কি জানিস? ফারুক নামের ছেলেটা ১০ দিন যাবৎ আইসিইউ তে।এখনো নাকি কোমায়….বুঝতে পারছিস ওর এই পরিনতির কারণ?
হুমম…নিশ্চয় শুভ্র ভাই মেরেছে।ঠিকই করেছে,, সাকিবকে মারার সাজা।
তোর কি মনে হয় না?শুধু সাকিব না অন্যকারো দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাজা দেওয়া হয়েছে তাকে।
উনি মেয়েদের রেস্পেক্ট করেন।আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলেও তাই করতেন….
রোদ?কেউ ইচ্ছে করে বুঝাতে না চাইলে তাকে বুঝানো সম্ভব নয়।।কোনো কালেই নয়।।তুই কেনো মানছিস না হি লাইকস ইউ।
আজগুবি কথা মানা উচিত না চিত্রা।।আমার মধ্যে এমন কিছুই নেই যাতে শুভ্র ভাইয়ের মতো ছেলে আমার প্রেমে পড়বে।।এনিওয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না বাই!!
আরে..কিন্তু!!
চিত্রাকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম আমি।।ওর এসব অবিশ্বাস্যকর কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার।।একটুকুও না।।কেন ভাবছি আমি এতো??গোল্লায় যাক সব…যাকে ইচ্ছে ভালোবাসুক শুভ্র ভাই…যাকে ইচ্ছে বিয়ে করুক।আমার তো কোনো যায় আসে না।।তবু কেনো বুকে চাপা কষ্ট হচ্ছে… মনে হচ্ছে সব ভেঙে গুড়িয়ে ফেলি।।চিৎকার করে কান্না করি…তাতে হয়তো কষ্টটা একটু হলেও লাঘব হবে!!হঠাৎ ছাদের দরজায় পায়ের শব্দে ফিরে তাকালাম….বাবা!! বাবা আমার দিকে হাসিমুখে এগিয়ে এসে দোলনার একধারে বসে বলে উঠলো…
মামনি?তুই কি বড় হয়ে গেছিস?
বাবার এমন উদ্ভট প্রশ্নে অবাক চোখে তাকালাম।।বাবা হাসিমুখে আবারও বলে উঠলেন-
মেয়ে বিয়ে দেওয়ার মতো কষ্টের আর কিছু এই দুনিয়াতে নেই বুঝলি।মনে হয় কলিজাটা কেটে অন্যকাউকে দান করে দিচ্ছি।তবুও দিতে হয়….মেয়ের বাবারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অসহায়!!
এভাবে বলছো কেন বাবা??
এমনি ইচ্ছে হলো…এনিওয়ে মামনি..? তোর মামু এসেছে।।রুহির বিয়ের কথা হবে মে বি।দেখতে দেখতে কিভাবে বড় হয়ে গেলো বুঝতেও পারলাম না।তুইও হুট করে বড় হয়ে যাবি নিশ্চয়?(মাথায় হাত রেখে)
আমি একদম বড় হবো না বাবা….আর কারো সাথে যাবোও না।। তোমার সাথেই থাকবো(কাঁদো কাঁদো হয়ে)
হা হা হা হা রাজপুত্র এলে কি আর রাজকন্যার সে খেয়াল থাকবে মামনি??দেখবে উড়ে চলে গেছো।।আমিও চাই আমার এই মায়াবতীটিকে একটা রাজপুত্র জয় করে নিয়ে যাক।।যে রাজপুত্র রাজকন্যাকে রাজার চেয়েও বেশি ভালোবাসবে….আচ্ছা চল নিচে যাই..সবাই খুঁজবে তো।
তুমি যাও বাবা!!আমি একটু পরই আসছি।একটু একা থাকতে চাই।
আর ইউ ওকে প্রিন্সেস?
হ্যা বাবা….আই এম ওকে..জাস্ট কোথাও একটা জ্বলছে।।(আনমনে) প্লিজ তুমি যাও তো।।
ওকে বাবা..যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি চলে আসিস মা…
হাতের কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে একদম।। মুখে দিতেই মুখটা কুঁচকে উঠছে তবু মুখে নিচ্ছি বারবার।।অদ্ভুত এক কারণে শুভ্র ভাইয়াকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার।।অসহ্য লাগছে উনাকে।।মনে হচ্ছে উনি আমার সাথে বড়সড় অপরাধ করেছেন যার জন্য শুধু ঘৃণাটায় উনার প্রাপ্য।।এতোদিন তো এমন লাগে নি তাহলে আজ কেন লাগছে??কেন উনাকে ভেঙেচুরে শেষ করে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্চে করছে,, হুয়াই? আমার ভাবনার জগৎ কাঁপিয়ে…দোলনাটা দুলিয়ে কেউ বসে পড়লো পাশে।।বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই অবাক হলাম আমি…
আপনি??এখানে??
উনি হাসি হাসি মুখে গা এলিয়ে বসে বলে উঠলেন-” তো?অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করেছিলে নাকি??লাইক সাহেল?”
করলেই বা ক্ষতি কি??
তোমার প্রত্যেকটা কথায় জ্বালা ধরানো।
তাহলে শুনেন কেনো আমার কথা??প্লিজ আপনি এখান থেকে চলে যা।।আমি আপনাকে নিতে পারছি না।
কেনো?নিতে না পারার রিজন?(উঠে বসে)
আপনাকে দেখলেই আমার কান্না পায়।।ভীষন রকম কান্না।আর এই মুহূর্তে কাঁদতে চাইছি না আমি।।সো প্লিজ গো নাও।
উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।কিছুক্ষণ পর চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবারও গা এলিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন-” যাবো না ” আমার রাগ লাগছে।মারাত্মক রাগ লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে উনাকে ধাক্কা দিয়ে দোলনা থেকে ফেলে দিই।অসভ্য!! উনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন… ধবধবে সাদা শার্ট গায়ে তারসাথে যোগ হয়েছে চাঁদের মায়াবী আলো…অগোছালো চুলগুলোও যেনো বেশ নিয়ম মেনে অগোছালো হয়ে আছে।ব্ল্যাক জিন্স।।হাতের ঘড়িটাও চমৎকার।। সারাটা শরীর যেনো চকচক করছে উনার।।থুতনির কাছের তিলটাও কতো নিঁখুত।উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার।।নাহ্ এখানে বসে থাকা যাবে না।।কিছুতেই না।।কথাটা ভেবে যেই না উঠতে যাবো ঠিক তখনই একটা কথা মনে পড়ায় আবারও বসে পড়লাম।।উনার দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধ স্বরে বললাম-
আচ্ছা?আপনার ক্রাশ আইকনের আরেকটু ডিটেল বলবেন?শুনতে ইচ্ছে করছে।।
আমার কথায় চোখ খুললেন উনি।।আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে সোজা হয়ে বসলেন উনি-
ডিটেইল?যেমন?ওর জুতার নাম্বার,,জামার নাম্বার এসব শুনতে চাইছো?
একদম না।। কোয়ালিটি জানতে চাচ্ছি।।আই মিন বিহেভিয়ার….
ওর কথা বলতে গেলে এক সেকেন্ডে যা বলা যায় তা হলো…সে চরম বোকা।
বোকা??(অবাক হয়ে)
হ্যা বোকা।এইযে আমি….ভদ্র শান্ত একটা ছেলে ওর জন্য টোটালি ডেস্পারেট হয়ে গেছি।।সেটা ওর চোখে পড়ে না।।কদিন পর যখন আমি ওর জন্য পাগল হয়ে যাবো…পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো তখনও তা তার চোখে পড়বে না।।দুনিয়ার সব কিছু সে বুঝে সব যুক্তি তার কাছে আছে।।শুধু আমার বেলায় বুদ্ধির ঘট তার খালি।।আমার বেলায় সে বাচ্চা অবুঝ….কেনো বুঝে না ভালোবাসি…মারাত্মকরকম ভালোবাসি।।
বুঝবে না কেন?,আপনি ওকে সরাসরি বলে দিলেই তো পারেন।।তাহলে সে বুঝতে বাধ্য..
সে তবুও বুঝবে না…ওকে যদি সরাসরি বলি(আমার হাতটা টেনে নিয়ে চোখে চোখ রেখে) “ভালোবাসি” অনেক ভালোবাসি।তোমার দেওয়া যন্ত্রণায় দেখো মরে যাচ্ছি আমি।।তোমাকে পাওয়ার লোভে দেখো কতটা লোভী হয়েছি আমি।।তোমার এই চাহনীতে দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।।খালি বুকটা ব্যাথা করে উঠে প্রতিটা রাতে।।একটু কি ভালোবাসা যায় না আমায়??প্লিজজ একটু বাঁচাও আমায়…..নয়তো মরে যাবো।।আমার বাঁচার উপায় তো তুমিই(হাতটা ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে)তখন সে বলবে জানো??,,রিহার্সেল করছেন??শীঘ্রই কাউকে প্রোপোজ করবেন বুঝি??
উনার কথায় হুহা করে হেসে উঠলাম আমি। সত্যিই কি মেয়েটা এতো বোকা??উনি আমার দিকে মুগ্ধচোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,তৃষ্ণার্ত তার দৃষ্টি।।আমি হাসিটা কোনোরকমে চেপে বলে উঠলাম-
আপনি এই বোকা মেয়ের জন্য পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবেন??
হুমম ঘুরবো।।এভাবে জ্বালালে শীঘ্রই পাগল হবো আমি।।ভালোবাসার মতো জ্বালা আর কিছুতে নেই রোদপাখি।।নিজেকে ভেঙে গুড়িয়ে দেয় এই ভালোবাসা।।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ওকে মেরে ফেলি নয়তো নিজে মরে যাই।।তবুও যদি একটু শান্তি পাই।
এমন হয়??(অবাক হয়ে)
তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ১৫+১৬
হুম হয়।।আমি ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি।।এই বোকা মেয়েটাকে খুব শীঘ্রই জোড় করে তোলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।।
জোড় করবেন??(অবাক হয়ে)
হ্যা জোড় করবো।।ওর আশায় বসে থাকলে আমায় চিরকুমার থাকতে হবে।তাছাড়া ওকে ছাড়া আমার চলবেও না।।আই নিড হার… আমার প্রতিটি মুহূর্তে আমার ওকে চাই।। আমি তো চিন্তা করেই রেখেছি বিয়ের পর ওকে নিজের হাতের সাথে বেঁধে রাখবো।।কোথাও যেতে দেবো না।।সামনে বসিয়ে শুধু দেখবো তাকে।।ইশশশ…
উনার কথায় মন খারাপ লাগছে খুব।।সাথে সাথে মেয়েটার প্রতি জেলাস।।কতো লাকি মেয়েটা যে তাকে শুভ্র ভাই এত্তো ভালোবাসে….আবারও কান্না পাচ্ছে আমার।।উফ্ কি অসহ্য যন্ত্রনা।
