বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৯
রানী আমিনা
থমকালো ইয়াসমিন, খাবার গলায় আটকে গেলো মুহুর্তেই, কেশে উঠলো ও। আনাবিয়া এগিয়ে দিলো পানির গ্লাসটা আবারও, বলল,
“ঠাণ্ডা মাথায় খাও ইয়াসমিন, তাড়াহুড়োর কিছু নেই৷”
ইয়াসমিন গ্লাস টেনে নিয়ে পানি খেলো। গলা টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে আনাবিয়ার দিকে বিস্মিত, ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কিভাবে জানলেন শেহজাদী, আমি আপনাকে প্রাসাদে ফেরার কথা বলতে এসেছি?”
আলতো হাসলো আনাবিয়া, ইয়াসমিনের প্রশ্নটাকে সম্পুর্ন উপেক্ষা করে ওর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে পালটা জিজ্ঞেস করলো,
“পেট ভরেছে?”
অপ্রস্তুত হলো ইয়াসমিন। চোখ নামিয়ে নিলো আনাবিয়ার শকুনি দৃষ্টির ওপর থেকে। তড়িতে উপরে নিচে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো তার পেট ভরেছে।
“বাকিটুকু শেষ করো।”
বলে উঠে পড়লো আনাবিয়া, ইয়াসমিনও উঠে দাড়াতে নিলো সাথে সাথে। আনাবিয়া হাতের ইশারায় ওকে বসতে বলে এগোলো কিচেনের দিকে। কিচেনের দেয়ালের সাথে লাগোয়া বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এসে উচ্চস্বরে ডেকে উঠলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কোকো!”
হলরুম থেকে সাথে সাথেই ভেসে এলো কোকোর উত্তর,
“জ্বী আম্মা!”
“খাওয়া শেষ করে ইয়াসমিনকে প্রাসাদে পৌছে দিয়ে আয়।”
বলে কামরায় ঢুকে গেলো আনাবিয়া। ইয়াসমিন একই সাথে বিস্ময় আর হতাশা নিয়ে তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার পানে।
রাতের অন্ধকারে ডুবে থাকা কিমালেবের আকাশে হঠাৎ লালচে আগুনের ছায়া উঠল ধোঁয়ার মেঘে। মধ্যরাতের নিগুঢ় স্তব্ধতা ছিন্ন করে হু হু করে জ্বলে উঠল কৃষকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শত পরিশ্রমের বিনিময়ে ফসলের বিরাট গুদামের ভেতর থরে থরে সাজিয়ে রাখা ফসলের স্তুপ গুলোতে।
প্রথমে উঠে এলো কুন্ডুলী পাকানো একরাশ ধোঁয়া— আর তারপরেই আগুন যেন নিজেই চিৎকার করে উঠল তারস্বরে! দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে জ্বলতে মুহুর্তেই পুড়িয়ে ফেললো ফসলের গুদাম ঘর গুলোকে।
ঘুমন্ত মানুষগুলোর চোখ খুলে গেলো আতঙ্কে। পোড়া গন্ধে ভারী হয়ে এলো আশপাশ, ঘুমের ঘোর কাটিয়ে বাহিরে ছুটলো তারা।
“আগুন! আগুন লেগেছে গুদামে!”
কারো আতঙ্কিত চিৎকারে কেঁপে উঠল পুরো জনপদ।
লোকজন ছুটে এলো, হাতে বালতির পর বালতি পানি! কারো হাতে ভেজা কম্বল, কারো হাতে মাটি, কারো হাতে বালি। যে যেভাবে পারলো আগুনের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা থেকে নিজেদের শেষ সম্বল টুকু বাঁচিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে গেলো প্রাণপণে!
গুদামের দরজায় দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল কেউ একজন,
“ আমার এত দিনের পরিশ্রম! এত সাধের ফসল আমার…. সব শেষ হয়ে গেলো……”
তার আহাজারিতে যেন এবার টনক নড়লো সবার, ফসল হারানোর শোকে কান্নায় ভেঙে পড়লো তারা!
আকাশের নিচে, লালচে রঙের আলোয় সবাই যেন ছায়ামানব। উত্তেজনায় কণ্ঠ কাঁপছে কারো, কারো চোখে তীব্র ক্রোধ!
তবু সবাই দৌড়াচ্ছে, ছুটে আসছে গুদামের আগুন নিভাতে, শেষ বার নিজের ফসলটুকু বাঁচানোর চেষ্টায়; যার পেছনে লেগেছিল ঘাম, স্বপ্ন আর রৌদ্রের প্রখর তাপে ফেলা ভারী নিঃশ্বাস! আগুন নেভাতে নেভাতে তারা দেখলো তাদের আশাদের পুড়ে যাওয়া…..নিঃশব্দে!
ঘুমিয়ে আছে ইলহান, কিছুক্ষণ আগেই সাম্রাজ্যের কাজ গুলো শেষ করে বিছানায় পিঠ ঠেকিয়েছে সে। শারীরিক শ্রম না হলেও মানসিক শ্রম দিতে দিতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, ফলাফল বিছানায় যেতেই ঘুম।
কিন্তু ওর এত স্বাধের ঘুম ভাঙলো টেবিলের ওপর সেট করা স্বচ্ছ স্ক্রিনের টুংটাং শব্দে। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় চরম বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুচকালো ইলহান, গায়ের ওপর থেকে চাদর সরিয়ে নামলো বিছানা থেকে। টেবিলের নিকট গিয়ে স্ক্রিনে চোখ রাখতেই ইযানের নামটা দেখতে পেলো। স্পর্শ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো ইযানের দ্রুতস্বর,
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, কিমালেবের ফসলের গুদাম গুলোতে আবারও আগুন লেগেছে। অধিকাংশ ফসলই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যা বেঁচে আছে তাতে এই বছর চালানো প্রচন্ড মুশকিল হয়ে যাবে। হয়তো কোনো রকমে আট ন মাস চালানো যাবে তাতে। এখন কি করার?”
“আগুন কিভাবে লেগেছে? এত সতর্কতার পরও আগুন কিভাবে লাগলো? যাদেরকে সিকিউরিটিতে রাখা হয়েছিলো তারা কি করছিলো?”
ইলহানের কন্ঠে স্পষ্ট ক্রোধের আভাস। ইযান ঢোক গিললো একটা। দম নিয়ে বলল,
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, ওরা জানেনা আগুন কোনদিক দিয়ে কিভাবে লেগেছে। ওদের বক্তব্য ওরা সিকিউরিটিতে কোনো অবজ্ঞা করেনি, কিন্তু কিভাবে লাগলো জানেনা৷”
“ভেতরে এসো।”
বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলো ইলহান, খুলে দিলো কামরার দরজার সিকিউরিটি লক৷ কিছুক্ষণ পরেই দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো ইযান৷ আনুগত্য জানিয়ে মাথাটা নত করলো সামান্য৷
চেয়ারের ওপর মাথায় আঙুল ঠেকিয়ে চোখ বুঝে বসে থাকা ইলহান চোখ বন্ধ রেখেই অন্য হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো ওকে। ইযান ধীর পায়ে এগোলো সেদিকে। টেবিলের সম্মুখে গিয়ে দাড়াতেই প্রশ্ন এলো,
“সিকিউরিটির দায়িত্বে কে ছিলো?”
“টমাস ছিলো ইয়োর ম্যাজেস্টি।”
“ওর কাছে এখনি কৈফিয়ত চাইবে, লজিক্যাল কোনো কারণ দর্শাতে না পারলে মেরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিবে৷”
“অ্যাজ ইয়্যু উইশ ইয়োর ম্যাজেস্টি।”
বলে আনুগত্য জানিয়ে আবার চলে যেতে নিলো ইযান, তখনি ডাক এলো আবার পেছন থেকে,
“ইযান!”
ঘুরে দাড়ালো ইযান, তাকিয়ে রইলো ইলহানের আদেশের অপেক্ষায়।
“শেহজাদী আনাবিয়া আর তার সাথে থাকা জংলী গুলোর দিকে নজর রাখো। ওদের কেউ রেড জোন থেকে বের হলেই তাকে ফলো করবে, ওরা কোথায় যায় কি করে সব আমাকে টু দ্যা পয়েন্টে ইনফর্ম করবে।”
কপালে তর্জনী ঘষতে ঘষতে বলল ইলহান। ইযান দ্বিধান্বিত চোখে তাকিয়ে শুধালো,
“কিছু মনে করবেন না ইয়োর ম্যাজেস্টি, কিন্তু…শেহজাদী কি কখনো এমন কিছু করবেন?”
“এটা সত্যি সে পঞ্চদ্বীপের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবে না, কিন্তু করতে পারবেনা এমন কোনো অব্লিগেশন্স ও নেই। স্যো….. পসিবিলিটি নট নাল।”
“ঠিক আছে ইয়োর ম্যাজেস্টি, আমি আমার সর্বোচ্চ টা দিয়ে চেষ্টা করবো নজর রাখার।”
ইযান বলতেই ইলহান হাতের ইশারায় ওকে বাইরে যেতে বলল, ইযান আনুগত্য জানিয়ে চলে গেলো আবার৷
ঘর ফাঁকা হতেই চেয়ারে শরীর টা এলিয়ে দিলো ও। চোখে ভীষণ ঘুম কিন্তু এই দুঃশ্চিন্তা ওকে এই মুহুর্তে ঘুমোতে দিবে বলে মনে হয় না…..
“আম্মা, সাম্রাজ্যের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। শেহজাদা ইলহান একেবারে হিমশিম খাচ্ছেন সবকিছু সামাল দিতে। কিমালেবের এক ফসলের গুদামে গতকাল আগুন লেগেছে। লেগেছে নয়, কেউ ইচ্ছে করেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সন্দেহ নেই, বর্তমান টালমাটাল পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী।
সিন্ডিকেট এখন ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে। কয়েক মাস আগেই যে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটল না…… সেটাও প্রিপ্লানড ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের সর্বস্ব ধ্বংস করে তাদের দেউলিয়া করে দেওয়া, যেন তারা বাধ্য হয় ওই গোষ্ঠীর দারস্থ হতে।
তা-ই হয়েছে। ফসল হারিয়ে কৃষকরা প্রচণ্ড ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেকেই তাদের মালবাহী গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে টিকে থাকার জন্য। এখন, কুরো আহমারে ফসল পৌঁছানোর কোনো উপায় না থাকায় সিন্ডিকেটরাই কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনে নিচ্ছে, তাও আবার নামমাত্র মুল্যে।
কৃষকেরাও দিতে বাধ্য হচ্ছে—ঘরে রেখে ফসল নষ্ট হওয়ার চেয়ে যেটুকু পাওয়া যায়, সেটাই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে এখন।
আর গতকাল আবারও আগুন। বাজারের অবস্থা এমনিতেই ভেঙে পড়েছে, পণ্যের দাম এখন আকাশচুম্বী। এখন কী হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।”
আনাবিয়া নিজের সফেদ চুলগুলো আচড়ে নিতে নিতে শুনে গেলো কোকোর কথা, বললনা কিছুই।
এই রেড জোন, এই মসভেইল প্যালেসে আজ ওদের কেটে গেলো প্রায় ন মাস। এর ভেতরেই ইলহানের সাম্রাজ্য পরিচালনার খন্ড খন্ড সংবাদ কানে আসে তার। এরকমই তো হওয়ার ছিলো! ইলহানকে দিয়ে এসব সামলানো কখনোই সম্ভব ছিলোনা৷ সে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, চারদিকে নজর রাখতে ব্যর্থ।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আনাবিয়া বলে উঠলো,
“জায়ান আর নওয়াস চাচাজানকে সরিয়ে যাদেরকে শেহজাদা কন্ট্রোলারের গদিতে বসিয়েছেন তারা কি করছে? আঙুল চুষছে?”
“ওদের বয়স কম আম্মা, এই সেক্টরে ওদের বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। শেহজাদা শুধু নিজের লোকদেরকেই বসিয়েছেন, কে যোগ্য কে নয় সেটা দেখার প্রয়োজন মনে করেননি।”
“বাহ্, ভালো তো!”
কিঞ্চিৎ হেসে বলল আনাবিয়া। ওর কামরার বেতের সোফার নরম গদির ওপর নড়েচড়ে বসতে বসতে কোকো জিজ্ঞেস করলো,
“এখন কি করার আম্মা?”
“কিছুইনা কোকো, তিনি যেহেতু ক্ষমতায় বসেছেন সেহেতু সমস্ত সাম্রাজ্যটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা তারই দায়িত্ব। এখানে আমাদের কি করার আছে?”
বলে কোকোর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করলো আনাবিয়া। কোকো দেখলো সেই হাসি। আসলেই, কিছুই করার নেই ওদের।
কিন্তু শেহজাদী চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতেন, তিনি চাইলেই সমস্ত সাম্রাজ্য কে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু কোকো জানে তার আম্মা এসবে জড়াবেননা, কখনোই জড়াবেননা।
ওর আম্মার হাতে ভীষণ ক্ষমতা, রামাদি সামার সমস্ত সৈনিক বলতে গেলে তাঁর হাতের মুঠোয়। তিনি একবার আদেশ করলেই পঞ্চদ্বীপের সমস্ত নিরাপত্তা কঠোরভাবে কার্যকর হয়ে উঠবে। তিনি চাইলেই শেহজাদা জাজিব ইলহানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাকে সিংহাসনচ্যুত করতে পারনে। কাজটা যদিও সহজ হবেনা, কিন্তু অসম্ভবও নয়!
পঞ্চদ্বীপের সীমানা প্রাচীর বর্তমানে এক প্রকার অরক্ষিত। সিকিউরিটি সেক্টরে বেশিরভাগ অ্যানিম্যাল টাউন এবং রেড জোনের প্রাণীরাই কর্মরত ছিলো।
কিন্তু শেহজাদা ইলহানের প্রাণিদের ওপর ঘৃণার মনোভাব কমিয়ে দিয়েছিলো দায়িত্বের প্রতি তাদের আন্তরিকতা। আর এখন শেহজাদী রেড জোন নিজের আয়ত্তে নেওয়ার পর থেকে সকল প্রাণিই ইস্তফা দিয়েছে কাজ থেকে।
কোকোর ভাবনার মাঝেই আনাবিয়া বলে উঠলো,
“পঞ্চদ্বীপ আমার মীরের কাছে সন্তানের মতো ছিলো কোকো, সে আমার চাইতেও এই সাম্রাজ্যকে বেশি ভালোবাসতো। জান প্রাণ এক করে এই সাম্রাজ্যের পেছনে ও সময় দিয়েছে, শ্রম দিয়েছে।
কিন্তু তার হাত থেকে এই পঞ্চদ্বীপ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, মেরে ফেলা হয়েছে তাকে! এখন এই সাম্রাজ্যের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ভালোবাসা নেই কোকো। যে সাম্রাজ্য আমার মীরকে বাঁচতে দেয়নি সেই সাম্রাজ্যের তোয়াক্কা আমি করিনা।
তবে এই শিরো মিদোরি, এই রেড জোনের ওপর কেউ একটা আচঁড়ও কাটতে পারবেনা, আমি কাটতে দিবোনা।”
শেষোক্ত কথাটা কোকোর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলল আনাবিয়া। পরক্ষণেই আবার মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দ্রুত গলায় বলল,
“তুই না অ্যানিম্যাল টাউনে যাবি বলছিলি!”
“জ্বি আম্মা, ওখানে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে শুনছি। লিও আর আমি যাচ্ছি। লিন্ডাকেও নিতে পারি সাথে, সে তো আবার লিওকে ছেড়ে দুদন্ড থাকতে পারেনা৷”
বলে স্মিত হাসলো কোকো, আনাবিয়া নিঃশব্দে হাসলো খুব, হাতে থাকা প্রসাধনি টুকু নিজের দুহাতের কব্জির উপরিভাগে মিশিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,
“আর তুই? বয়স যে হচ্ছে সে খেয়াল আছে?”
“আমি তো আপনার জামাই হবো আম্মা, আপনি বলেছিলেন না আপনার মেয়ে হলে আমাকে তার সাথে বিয়ে দিবেন! সেই আশায় বুক বেধে আছি।”
আনাবিয়া খিলখিল শব্দ করে হাসলো বিস্তর! কোকো স্নিগ্ধ চোখে দেখলো তার আম্মার হাসি, তার আম্মা এখন হাসে খুব!
“মাঞ্জারে গিয়ে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসবি? আমার দুটো জামা ছিড়ে গিয়েছে, পরার মতো তেমন কিছুই নেই। অ্যানিম্যাল টাউন থেকে যেগুলো দিয়ে গেছিলো সেগুলোও কেমন যেন হয়ে গেছে। যাবি?”
লাইফট্রির পাদদেশে থাকা ক্রিস্টাল পুলের পাশে বসে বসে আঙুল দিয়ে মাটি খুড়তে থাকা ফাতমাকে প্রশ্ন করলো শার্লট।
কিছুক্ষণ আগেই ওরা এখানে এসে পৌছেছে, মাঝে মাঝেই বিকেল পড়লে আনাবিয়া ওদের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে আসে এদিকে, আজও এসেছে। ছেলেরা সবাই ডোবার ভেতর নেমে হল্লা করছে। আনাবিয়া আছে এদিকেই কোথাও, এই মুহুর্তে তাকে আশেপাশে দেখা যাচ্ছেনা।
শার্লট ফাতমা আর লিন্ডা একত্রে বসে তাই গল্প করতে ব্যাস্ত। শার্লটের প্রশ্নে ফাতমা বলে উঠলো,
“অনেক দিন পেরিয়ে গেছে শার্লট, এখন সেখানে আমাদের জিনিসপত্র, পোশাক আশাক আছে কিনা সন্দেহ। হয়তো সবকিছু ফেলে দিয়েছে ওরা। আর যদি নাও দেয়, তবুও সেখানে গেলে থিয়োডর আর ওর জল্লাদ গফের সামনে পড়তে হবে। ওদের মুখ দেখার আমার কোনো ইচ্ছে নেই।”
“আরে চলনা! তোর গায়ের দিকে তাকা, দেখ এখানেও ছিড়ে গেছে, ও জায়গাটার সেলাই খুলে গেছে। চলনা!”
ফোস করে শ্বাস ছাড়লো ফাতমা, তারপর বসা থেকে উঠে দাড়াতে দাড়াতে হতাশ গলায় বলল,
“আচ্ছা, চল। তবে লুকিয়ে যাবো কিন্তু। ওরা হয়তো এতদিনে ভেবেছে আমরা মরে ভূত হয়ে গেছি।”
“তাহলে তো রাতে যাওয়া উচিত, ভূত সেজে ওদের ভয় দেখানো যাবে, হে হে! ইলোরা আমাদের চাঁদবদন দেখে হার্টফেইল করবে নিশ্চিত!”
নাঁকি হেসে বলল শার্লট। ফাতমা ওর দিকে ভর্ৎসনার চোখে তাকিয়ে ওকে ঠেলে সেইফ জোনের রাস্তার দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
“বেশি নাটক করলে একদম যাবোনা কিন্তু, চুপচাপ চল এখন।”
ওদেরকে যেতে দেখে লিন্ডাও চুপচাপ এগোলো ওদের পেছন পেছন। একমাত্র লিও, আনাবিয়া আর এই পাগল দুটোর পেছন পেছন ঘোরা ছাড়া ওর আর কোনো কাজ নেই।
সেইফজোনের ভেতরে এখন সন্ধ্যা নামার আগ মুহুর্তের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে এখানে বিদ্যুতের সাপ্লাই বন্ধ। কোনোভাবে রেড জীনের ভেতরে কোনো ক্যাবলে সমস্যা দেখা দিয়েছে, যার কারণে সম্পুর্ন সেইফজোন রাত হলেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।
কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও তারা কোনো ব্যাবস্থা নেই, শুধুমাত্র সেদিনের রেশনের সাথে কয়েকটা মোমবাতি দিয়ে গেছে। তাই রাত নামার আগেই সব কাজ শেষ করতে হচ্ছে ওদের৷
কেউ গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছে, কেউ মাটি খুঁড়ছে কোথাও, কেউ সেইফ জোনের ভেতরের জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসছে রান্নার কাঠ। একদল কাজ করছে কিচেনে, দূর থেকেই শোনা যাচ্ছে কিচেনের তৈজসপত্রের টুংটাং শব্দ।
মিটিং জোনের কাঠের গুড়ির ওপর আরামসে বসে আছে থিয়োডর, অলস ভঙ্গিতে ও চেয়ে চেয়ে দেখছে সবার কাজ৷ ওর পাশেই বসে আছে ইলোরা, সে দেখছে থিয়োডরকে।
দূর থেকে এই সমস্ত দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে চুপিচুপি, নিঃশব্দে রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার ভেতর দিয়ে হেটে চলেছে ওরা তিনজন। উদ্দ্যশ্যে ওদের শার্লটের মাঞ্জার।
ফাতমার মাঞ্জার ওয়ার্কিং জোন থেকে বেশ দূরে হওয়ায় ওর মাঞ্জারে ঢোকা সহজ হয়েছে।
নতুন আসামী না আসায় ওদের কামরা গুলো এখনো খালি পড়ে আছে, জিনিসপত্র গুলোও যেভাবে রেখে গেছিলো সেভাবেই আছে, শুধু ধুলোবালি জমে ওজন বেড়ে গেছে তাদের৷
এখন শার্লটের মাঞ্জারে যেতে পারলেই কাজ শেষ, কিন্তু শার্লট ব্রায়ানের মাঞ্জারেও যেতে চায়, ওর জন্যও কিছু পোশাক নেওয়া উচিত। কিন্তু ফাতমা রাজি নয়, কারণ ব্রায়ানের মাঞ্জারটা ওয়ার্কিং জোনের প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় ওদেরকে দেখে ফেলার সম্ভাবনা প্রবল!
নিঃশব্দে হাটতে হাটতে ওরা সকলে এলো শার্লটের মাঞ্জারে। একদা যাদের কণ্ঠস্বর আর হাসি ভেসে বেড়াত এখানে, আজ তারা ফিরছে নিঃশব্দ পায়ে, ছায়ার মতো অন্ধকারে মিশে যেতে যেতে।
মাঞ্জারের কাছে এসে দেখলো দরজায় তালা ঝোলানো, ফাতমার টা খোলাই ছিলো, কিন্তু শার্লটের টায় তালা ঝোলানো কেন বুঝলোনা ওরা৷
জানালার কাছে এগিয়ে গেলো শার্লট, ভেতর থেকে আটকানো। কিন্তু এ জানালা শার্লটের জনম জনমের চেনা, এটাকে বাহির থেকে খোলার পদ্ধতিও ওর জানা।
এদিক ওদিক তাকিয়ে মাটি থেকে একটা শক্ত চিকন কাঠি তুলে নিলো ও, তারপর জানালার কপাটের ফাকা দিয়ে প্রবেশ করালো ভেতরে। কিছুক্ষণ গুতাগুতি করতেই কাঠিটা চলে গেলো জায়গামতো, শব্দ করে খুলে গেলো ভেতরের লক৷
চকিতে ফাতমা তাকালো চারদিকে, কেউ আবার শুনে ফেললো কিনা সেই ভয়ে। কিন্তু এই মুহুর্তে এদিকে কেউ নেই। সবাই ওয়ার্কিং জোনে৷
জানালা খোলা শেষে সরু স্থানটা দিয়ে আস্তে আস্তে ঢুকে পড়লো শার্লট নিজের পুরোনো জায়গায়। একসময় এটাই ছিল ওর ঘর, এখন তা সম্পুর্ন পরিত্যক্ত! কামরার একেকটা দেয়াল, দরজা, গন্ধ… সবকিছু যেন চেয়ে আছে ওর দিকে, যেন আজও চিনে রেখেছে তাদের মালকিনকে।
শার্লটের দেখাদেখি লিন্ডা আর ফাতমাও ঢুকলো ভেতরে, বাইরে দাড়িয়ে থাকলে কখন কার নজরে বেধে যাবে তার ইয়ত্তা নেই।
বুকের ভেতর ধুকপুক করছে শার্লটের, পুরোনো জিনিসগুলোকে আবার ছুঁয়ে দেখার ব্যাকুলতাতে কেঁপে উঠছে ও ক্ষণে ক্ষণে।
হাত বাড়িয়ে কামরার ওপরের দিকের শেল্ফে থাকা একটা ছোট বাক্স টেনে নিলো ও। সেটাকে ফাতমার হাতে তুলে দিয়ে দেয়ালে ঝোলানো ব্যাগখানা নিয়ে লেগে পড়লো নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলো ব্যাগভর্তি করতে।
সেই মুহুর্তেই হঠাৎ বাইরে থেকে ভেসে আসলো কারো পায়ের শব্দ। থেমে গেলো ওরা তিনজনেই। নিঃশ্বাস আটকে স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো যে যেখানে ছিলো সেখানে।
লিন্ডা পা টিপে টিপে দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে দরজার ছোট্ট ফাঁকা স্থান দিয়ে উঁকি দিলো বাইরে কেউ আছে কিনা দেখার জন্য।
শার্লট আর ফাতমা লিন্ডার থেকে আপডেট জানার জন্য হাতে থাকা জিনিসপত্র গুলোকে শক্ত করে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো অধীর আগ্রহে৷
লিন্ডা কিয়ৎক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে অতঃপর ঘাড় ঘুরিয়ে শার্লটের দিকে তাকিয়ে চাপা সুরে বলল,
“কেউ নেই, কাউকে দেখছিনা তো।”
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো ওরা দুজন। তারপর আরও কিছু জিনিপত্র গুছিয়ে নিয়ে আগের মতো করেই বেরিয়ে এলো জানালা দিয়ে। একে একে নেমে রেড জোনের উদ্দ্যেশ্যে পা বাড়ালো ওরা আবার।
“বাহ্, বাহ্, এতদিন পর ফিরে এলে, এসেই আবার চুরি করতে লেগে গেছো? আর আমিই বা অবাক হচ্ছি কেন? চোরের স্বভাব কি আর কোনোদিন ভালো হয়?”
পেছনে এমন বাজখাঁই রুক্ষ কণ্ঠ শুনে থমকে গেলো ওরা, শার্লটের চিনতে বাকি রইলোনা এই কন্ঠের মালিক কে। কিয়ৎক্ষণের জন্য থেমে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে ঘুরে দাড়ালো শার্লট, দাড়াতেই ওর চোখে পড়লো ইলোরাকে, সাথে বেশ কজন ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে, হাতে তাদের শার্লট দেরকে বাঁধার জন্য দড়ি।
মুহুর্তেই আতঙ্ক নেমে এলো শার্লটের মুখে, কিন্তু চোখে ফুটে উঠলো একরাশ জেদ—এখানে হারানোর ওদের আর কিছুই নেই। ওদের সাথে এখন আনাবিয়া আছে তাই ইলোরার মতো নর্দমার কীটকে ভয় পাওয়া ওর জন্য লজ্জাজনক ব্যাপার৷
“যা আমাদের ছিলো আমরা তাই-ই নিতে এসেছি, অন্যের জিনিসের ওপর আমাদের লোভ নেই৷”
শক্ত গলায় বলল শার্লট। ফাতমা লিন্ডাও ঘুরে দাড়ালো ইলোরার দিকে। ইলোরা লিন্ডাকে পরখ করলো কিছুক্ষণ, একে সে চেনেনা। শার্লটেরা একে কোথায় পেলো সেটা চিন্তা করলো ও কিছুক্ষণ। তারপর আবার শার্লটের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,
“যা যা নিয়েছো সব ফেরত দাও এখনি, একটা জিনিসও এখান থেকে যেন না গায়েব হয়। শেহজাদীর কামরা থেকে তবে তোমরাই সব পোশাক গায়েব করেছো, এখন বুঝতে পারছি।”
“ওহ্, তুমি তাহলে আবার চুরি করতে গেছিলে? গিয়ে কিছুই পাওনি! ইশ, আফসোস!
নিজে চোরের বংশধর, অন্যের পোশাক চুরি করে পরে আবার আমাকে বলে আমি চুরি করতে এসেছি!”
চোখ নাচিয়ে বলল শার্লট। ইলোরা ভেবে পেলোনা এই ভেড়ার মতো ছিঁচকাদুনে মেয়েটার এত সাহস কিভাবে হলো। দুকদম এগিয়ে এসে ও বলল,
“চুরি করেছো আবার বড় বড় কথা বলো! ত্রিশ সেকেন্ডের ভেতরে সব জিনিসপত্র এখানে রেখে সেইফজোন ছেড়ে বেরিয়ে না গেলে তোমাদের তিনজনকেই বেধে কাল সারাদিন কড়া রোদে ফেলে রাখবো। এখনি রাখো এগুলো!”
ইলোরার এমন আচরণ দেখে রাগে নাকের পাটা ফুলে গেলো লিন্ডার, শিকারী চোখে কয়েক কদম এগিয়ে এসে ও বলে উঠলো,
“একটা জিনিসও রাখবোনা, কি করবি কর, আমরাও দেখি।”
পুচকে একটা মেয়ে ওকে তুই তুই করছে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো ইলোরা,
“এই মেয়ে, তোমার সাহস তো কম না? তুমি কার সাথে কথা বলছো তুমি জানো?”
“হ্যাঁ জানি, আমি কথা বলছি হনুমানের পা**ছার মতো চেহারার এক নেংটি ইঁদুরের সাথে। বেশি তেড়িবেড়ি করলে এক থাপ্পড়ে নেংটি ইঁদুরের মতো এই থোবড়ার নকশা বদলে ব্যাঙের পা**ছার মতো করে দিবো।”
এত আতঙ্কের ভেতরেও হাসি পেলো শার্লটের, তাড়াতাড়ি মুখে হাত চেপে মুখ টিপে হাসলো ও। ফাতমা মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করতে থাকলো প্রাণপণে, কিন্তু তা দৃশ্যমান হয়েই গেলো!
ইলোরার সম্মানে আঘাত লাগলো ভীষণ, অপ্রস্তুত হয়ে ও এলোমেলো ভাবে তাকালো ওর আশেপাশে দড়ি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে গুলোর দিকে। তারাও যে ঠোঁট টিপে হাসছে ইলোরার অগোচরে সেটা বুঝতে বাদ রইলোনা ইলোরার।
দাঁতে দাঁত চাপলো ইলোরা, বাজখাঁই গলায় ছেলেগুলোর উদ্দ্যেশ্যে বলে উঠলো,
“এদের তিনজনকে এখনি বেধে ফেলো, শক্ত করে বেধে মাঠের ভেতর ফেলে রেখে আসবে। সারারাত ওখানেই থাকবে আর কাল সারাদিন রোদে পুড়ে মরবে!”
ছেলেগুলো এগিয়ে গেলো ওদেরকে বেধে ফেলতে, শার্লট পিছিয়ে গেলো কয়েক কদম। লিন্ডা ফুসে উঠলো, কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,
“আমাদেরকে স্পর্শ করলে এক্কেরে জানে মেরে ফেলবো!”
ছেলেগুলো তবুও এগিয়ে গেলো চারদিক থেকে দ্রুতগতিতে ঘেরাও করে শার্লটকে বেধে ফেলতে চাইলো তড়িতে। লিন্ডা প্রস্তুতি নিলো এক একটা কে ধরে আছাড় দেওয়ার, চোখে মুখে তেজ ফুটিয়ে ও অ্যাকশন নিলো।
কিন্তু ওদের এসব কাজের মাঝেই সেখানে এসে উপস্থিত হলো থিয়োডর, হট্টগোল শুনে এগিয়ে এসেছে সেও। ওর পেছন পেছন এসেছে এলিট শ্রেণীর আরও কিছু ছেলে মেয়ে।
“কি হচ্ছে এখানে?”
ঠাণ্ডা সুরে ইলোরাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়লো থিয়োডর, পরক্ষণেই ওর চোখ গেলো শার্লট ফাতমার দিকে। এদের দুজনকে এত গুলো দিন পর এখানে এভাবে সুস্থসবল অবস্থায় দেখে বেশ অবাকই হলো থিয়োডর৷ ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুচকে ও প্রশ্ন করলো,
“তোমরা এখানে? এতদিন পর…”
ওর প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই ইলোরা বলে উঠলো,
“চুরি করতে এসেছিলো, আমি ধরে ফেলেছি ওদেরকে।”
থিয়োডর শীতল চোখে তাকালো ইলোরার দিকে, থিয়োডরের এমন দৃষ্টি দেখে সাথে সাথেই চুপ হয়ে গেলো ইলোরা।
এগিয়ে গেলো থিয়োডর শার্লটের দিকে, প্রশ্ন করলো,
“এতগুলো দিন তোমরা রেড জোনের ভেতরে কিভাবে সার্ভাইভ করেছো? আর ব্রায়ান কোথায়? সেদিন নেকড়ের পেটে চলে গিয়েছে নাকি?”
শেষোক্ত প্রশ্নটা ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসি ফুটিয়ে শুধোলো থিয়োডর।
“আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই মিস্টার থিয়োডর ব্রাউন।”
কাটাকাটা গলায় বলল শার্লট। থিয়োডর শান্ত চোখে পর্যবেক্ষণ করলো ওকে৷ রেড জোনের ভেতর যে এরা খুব বহাল তবিয়তেই ছিলো সেটা এদের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে দুজনেই। তাছাড়া শরীরে কোনো আচড়ের দাগ পর্যন্ত নেই, এর অর্থ এদেরকে কোনো বন্য পশু ছুয়েও দেখেনি। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?
কিয়ৎক্ষণ গভীর চোখে শার্লটের ফোলা ফোলা চকচকে গাল জোড়া পর্যবেক্ষণ করে থিয়োডর জিজ্ঞেস করলো,
বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৮
“রেড জোনের ভেতর তোমরা কিভাবে সার্ভাইভ করেছো? তোমরা এত চকচক করছো যখন, তখন ব্রায়ানও বেশ ভালোভাবেই আছে বুঝতে পারছি। কিন্তু কিভাবে?
তোমরা খাবারের সাপ্লাই কোথা থেকে পাচ্ছো? সোর্স কি তোমাদের খাবারের? তোমাদের নিরাপত্তা কে দিচ্ছে? খাবার পানি কোথায় পাচ্ছো? জ্বালানী, পোশাক আশাক, বাসস্থান ওগুলো কে দিচ্ছে তোমাদের?
“আমরা দিচ্ছি……”
