মোহশৃঙ্খল পর্ব ১৩
মাহা আয়মাত
অর্তিহা চুপচাপ বেডে বসে থাকলেও বুকের ভেতরটা এখনো ধকধক করছে। ভয় আর চিন্তায় যেন শ্বাসই নিতে পারছে না ঠিকমতো। আর না কাঁপবে কেন? একটু আগেই তো আদ্রিকের রুম থেকে বের হওয়ার সময় সে আভীর কারদারের সামনে পড়ে গেছিলো। এমনিতেই ভয়ে ছিলো এখন আভীর কারদারের সামনে পড়ে ভয়টা আরও বেড়ে গেছে। যদি আভীর কারদার কিছু আচঁ করে ফেলে? এটারই ভয় অর্তিহার মনে।
আভীর কারদার অবাক হয়ে তাকিয়ে বলেন,
— কি হয়েছে? তোমাকে এমন ভীতসন্ত্রস্ত লাগছে কেন?
অর্তিহা ভয় লুকাতে চেষ্টা করলেও মুখের ভেতর থেকে কথা ঠিকঠাক বের হচ্ছিল না। তবুও ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলে বলে,
— কিছু হয়নি ড্যাড! আচমকা তুমি সামনে আসাতে ভয় পেয়েছি। আমি তো ছোট থেকেই একটু তেই ভয় পেয়ে যায়!
আভীর কারদারের চেহারার পরিবর্তন ঘটে না। আর দেখে মন হয় না তিনি অর্তিহাী কথাটা বিশ্বাস করেছেন।
— তুমি এতক্ষণ আদ্রিকের রুমে ছিলে?
— হ্যাঁ ড্যাড… আদ্রিক ভাইয়া… উনি ডেকেছিলেন!
— আমি এতোক্ষণ তোমার রুমে অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্য। তা কেন ডেকেছিলো আদ্রিক তোমাকে?
এবার অর্তিহার ভয়টা বেড়ে যায়। বুক ধকধক করতে থাকে। কী বলবে বুঝে পায় না। যদি কোনো ভুল কথা বলে ফেলে, তাহলে আভীরের সন্দেহ আরও বেড়ে যাবে। অর্তিহা কি বলবে ভাবতে ভবতে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— উনি….হ্যা উনি জানতে চাচ্ছিলেন, ডেকোরেশনটা আমার পছন্দ হয়েছে কি না। না হলে নাকি বদলে দেবে। এই নিয়ে কথা হচ্ছিলো।
তারপর হাতের আঙুল গুলো কচলাতে কচলাতে জিজ্ঞেস করে,
— আচ্ছা ড্যাড… তুমি কেন আমাকে খুঁজছিলে?
আভীর কারদারের মুখটা হঠাৎই নরম হয়ে গেল। নিচু গলায় বলেন,
— এমনি! কাল তো আমার মেয়েটা চলে যাবে, এটা ভেবেই খারাপ লাগছিলো। তাই তোমাকে দেখতে এলাম। যদিও আমি সাইহান আর সারফারাজের সঙ্গে কথা বলেছি। কাল তুমি বিয়ের পর রেজা মঞ্জিলে চলে গেলেও, কিছুদিন পর ফিরে এসে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। তারপর তোমার পড়ালেখা শেষ হলে, ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে পাঠাবো। তার আগে তুমি এ বাড়িতেই থাকবে যদিও মাঝে মাঝে যাবে শ্বশুরবাড়ি।
এই কথা শুনে অর্তিহা ভেজা চোখে আভীর কারদারকে জড়িয়ে ধরে। ওর চোখে পানি এসে যায়। আভীর কারদারের চোখেও জল জমে, কিন্তু তিনি চুপচাপ তা মুছে ফেলেন। ঠিক তখনই কেউ এসে আভীর কারদারকে ডাকে। তিনি মেয়েকে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান, তবে আদ্রিকের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ ঘুরে আবার অর্তিহার দিকে তাকান। সেই দৃষ্টিতে ছিল স্পষ্ট সন্দেহ। অর্তিহার বুকটা আরও কেঁপে ওঠে। তিনি চলে যেতেই অর্তিহা তাড়াতাড়ি নিজের রুমে ফিরে এসে বিছানায় বসে পড়ে। রুমে এসেছে দুই মিনিট হয়েছে তবে ওর ভয় এখনো কমছে না।
দরজার হালকা শব্দে অর্তিহার দৃষ্টি সেদিকে চলে যায়। আর তখনই অবাক হয়ে ওঠে। চোখ দুটো বিস্ময়ে বড় হয়ে যায়। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
— তোরা?
দরজায় দাড়িয়ে আছে মিষ্টি আর হানিন। মিষ্টি চোখ ছোট করে বলে,
— লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলছিস! জানাসও নি! এতোই পর হয়ে গেছি বুঝি?
হানিনও তাল মিলিয়ে বলে,
— তুই আর বলছিস? আমাদের তো পর করেই দিয়েছে নাহলে আন্টির মুখে শুনলাম আজ তোর গায়ে হলুদ, কাল বিয়ে! তাও তিনি আসতে বলেছেন!
দুজনেই এগিয়ে এসে অর্তিহার পাশে দাঁড়ায়। অর্তিহা ওদের দেখে একটু স্বস্তি পায় ঠিকই, কিন্তু মনের ভিতরের ভয়টা একেবারে যায় না। ও কিছু না বলে আবার ধীরে ধীরে বিছানায় বসে পড়ে। মাথা নিচু করে আস্তে বলে,
— না… মানে… হঠাৎ করেই সব হয়ে গেল…
মিষ্টি পাশে বসে কাঁধে হাত রাখে। অর্তিহা তাকায় তার দিকে। মিষ্টি এবার ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— অর্তি, তুই ঠিক আছিস তো? তোর জন্য না আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। তুই কি এই বিয়েতে রাজি না?
মিষ্টি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর চায়।
কিন্তু অর্তিহা চুপ থাকে। সে কিছু বলে না, শুধু একজোড়া অসহায় চোখে চেয়ে থাকে মিষ্টির দিকে।
এবার হানিন এসে ওর পাশে বসে, ওর হাত ধরে।
চোখে একরাশ প্রশ্ন নিয়ে বলে,
— তুই কি… অন্য কাউকে ভালোবাসিস? আদ্রিক ভাইয়াকে?
এই প্রশ্ন শুনে অর্তিহা চমকে ওঠে। হঠাৎ এমন কথা শুনে তার চোখে আতঙ্কের ছাপ পড়ে। হানিনের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে, সে এই প্রশ্ন আগে থেকেই ভাবছিল।
মিষ্টিও এবার বলে ওঠে,
— হ্যাঁ রে, অর্তি সত্যি করে বল তো? তুই কি আদ্রিক ভাইয়াকে ভালোবাসিস? আমি তো প্রথমে আন্টির মুখে তোর বিয়ের কথা শুনে ভাবছিলাম, তোর বর বুঝি আদ্রিক ভাইয়াই!
অর্তিহা অবাক হয়ে বলে,
— তোদের এমন মনে হলো কেন?
মিষ্টি কাঁধ ঝাঁকিয়ে হালকা হেসে বলে,
— কারণটা হচ্ছে আদ্রিক ভাইয়ার তোর প্রতি যত্ন! উনি তোকে খুব কেয়ার করে!
হানিন একমত হয়ে বলে,
— একদম ঠিক বলেছে মিষ্টি!
অর্তিহা একটু হেসে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে,
— আরে নাহ এমন কিছু না! কেউ কেয়ার করলেই কি ভালোবাসা হয়ে যায় নাকি? তোদের না…
মিষ্টি হেসে বলে,
— ঠিক আছে। এসব বাদ। এখন বল, একটু পরেই তোর গায়েহলুদ আর তোকে এমন চিন্তিত লাগছিলো কেন?
— আসলে… কালকে সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। তারউপর একটা নতুন বাড়িতে যাচ্ছি সেটা ভেবেই নার্ভাস হচ্ছিলাম।
হানিন হেসে বলে,
— উফ! বোকা মেয়ে একটা! আন্টি তো বলেছে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যাবি ঠিকই, কিন্তু কিছুদিন পর আবার এই বাড়িতে ফিরিয়ে আনবে। পড়াশোনাও চালিয়ে যাবি। আর পরে অনুষ্ঠান করে একেবারে তুলে দেবে তোকে। তাই এত মন খারাপ করিস না!
মিষ্টিও সাথে সাথে বলে,
— হ্যাঁ! আর তুই মন খারাপ করে থাকলে, যে বেচারা তোকে পেতে এত কিছু করলো, সেও মন খারাপ করে থাকবে!
এই কথাগুলো শুনে অর্তিহা ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও জোর করে মুখে হালকা একটা হাসি টানে। অর্তিহার মুখে হাসি দেখে মিষ্টি এবং হানিন আরও নানা কথা বলতে থাকে। অর্তিহা কিছু বলছে না কেবল মাথা নাড়াচ্ছে।
মেহজা সবার জন্য আনা কাপড়গুলো সবাইকে দিয়ে দিয়েছে। এখন শুধু তাহিয়া কারদার, আভীর কারদার আর কৌশালীরটা বাকি। মেহজা এসে আভীর কারদারের ঘরের দরজায় নক করে ভেতরে ঢোকে। দেখে, বেডে তাহিয়া কারদার বসে আছেন। আর সামনেই বেডে রাখা ভারী গয়না।
তাহিয়া কারদার মেহজাকে দেখে হাসিমুখে বলেন,
— এসেছো? আমি ভাবছিলাম তোমার কাছেই যাবো!
মেহজা হেসে বিছানার শেষ প্রান্তে বসে বলে,
— হ্যাঁ এসেছি। সাথে আমার শাউড়ী আম্মার একটা শাড়ি এনেছি, কালকে সেটাই পরবেন।
এই বলে শাড়িটা হাতে তুলে দেয়। তাহিয়া কারদার হেসে বলেন,
— আরে, আমার জন্য আনার কি দরকার ছিলো? তোমার মামা তো একটু আগেই ড্রেস হাউস থেকে সবার বিয়েরতে পড়ার জন্য এনে দিয়েছে!
মেহজা মুচকি হেসে বলে,
— ঐটা রেখে দিন, পরে পরবেন! কালকে আপনি আপনার ছেলের বউয়ের দেওয়া শাড়িটাই পরবেন! এটা কিন্তু রিকোয়েস্ট, শাউড়ী আম্মা!
তাহিয়া কারদার হাসতে হাসতে বলেন,
— আচ্ছা, ঠিক আছে, পরবো।
মেহজা চারপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— আচ্ছা, আমার শ্বশুর আব্বা কোথায়? রুমে দেখি না। উনার জন্যও তো কাপড় এনেছি!
তাহিয়া বলেন,
— উনি বারান্দায় আছেন।
এমন সময়, আভীর কারদারকে বারান্দা দিয়ে রুমে ঢুকতে দেখে তিনি বলেন,
— ঐ তো উনিই এসেছেন!
মেহজা উঠে দাঁড়িয়ে আভীর কারদারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আভীর মুখ ঘুরিয়ে নেন। মেহজা একটু থমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— শ্বশুর আব্বা, আপনি কি আমার উপর রাগ করে আছেন?
আভীর শুধু বলেন,
— না।
এরপর আর কিছু বলেন না, না মেহজার দিকে তাকান। মেহজা কিছুটা সংকোচ নিয়ে হাতে থাকা শপিং ব্যাগটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
— এই নিন।
আভীর একবার ব্যাগটার দিকে তাকান, তারপর মেহজার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলেন,
— এটা কী?
মেহজা মুচকি হেসে বলে,
— আমি আর উনি শপিংয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে সবার জন্য কাপড় কিনে এনেছি। আপনার জন্যও এটা এনেছি!
আভীর ভ্রু কুচকে তাচ্ছিল্য করে বলেন,
— তুমি কিনেছো? এই সবের টাকা তো আমার ছেলের!
ঠিক তখন আরভিদ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
— আর তোমার ছেলে ওর ড্যাড!
তাহিয়া সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ায় আরভিদকে দেখে। তিনি ভয়ে আছেন, এবার না আবার বাপ-ছেলের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। মেহজা মুখ কালো করে একবার আরভিদের দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে ফেলে।
আভীর দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,
— বউয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলার একটুও সুযোগ ছাড়ো না!
আরভিদ রাগি চোখে তাকিয়ে রাগি গলায় বলে,
— যেমন করে তুমি আমার বউকে কথা শুনানোর সুযোগ ছাড়ো না!
আভীর বলেন,
— আমি তো তোমার বউকে ডেকে এনে কিছু বলি নাই! সে এসেছে কেন?
আরভিদ বলে,
— সে তোমার জন্য কাপড় এনেছে সেটা দিতে এসেছে, অপমান শুনতে নয়!
আভীর রেগে গিয়ে বলেন,
— আমি কি বলেছি ওকে আমার জন্য কিছু আনতে? বলো, নিয়ে যেতে! আমার দরকার নেই!
আরভিদ সাথে সাথে মেহজার হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে তাহিয়া সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন।
তাহিয়া চিন্তিত কন্ঠে বলেন,
— এতো রেগে যাচ্ছো কেন?
আরভিদ বলে,
— তোমার স্বামীই রেগে যাওয়ার মতো কথা বলছে, মম!
তাহিয়া বলেন,
— তুমি উনার কথায় কান দিও না।
বলেই বিছানার উপর রাখা গয়নার একটা ভারী সেটের বাক্স তুলে মেহজার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন,
— এটা মেহুর জন্য। আমি ভাবছিলাম, একটু পরেই ওর রুমে দিয়ে আসবো।
আরভিদ রাগে ফেটে পড়ে বলে,
— থাক! তোমার স্বামীর টাকার গয়নার দরকার নেই আমার বউয়ের! আমি চাইলে এরকম ছয়শটা হার কিনে দিতে পারি বউকে!
বলেই আর এক মুহুর্তও দাড়ায় না সোজা বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। পেছনে তাহিয়া কারদার হতাশায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এই কয়েকদিন ধরে বাপ ছেলের মধ্যে যেই পরিমাণ রাগারাগি হচ্ছে তা পুরো ৩৩ বছরেও হয়নি। আরভিদ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছে, মেহজা বারবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
— হাত ছাড়ুন! কে বলেছে আপনাকে আমার হয়ে এসে কথা বলতে?
আরভিদ অবিচলভাবে বলে,
— আমার বউকে কেউ কিছু বললে আমি চুপ থাকতে পারি না, আর থাকবোও না!
মেহজা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
— হুহ্! দূর সম্পর্কের বউয়ের জন্য এতো দরদ?
আরভিদ মুচকি হেসে বলে,
— যতদিন না কাছের বউ পাই, ততদিন এই দূরের বউয়ের জন্যই দরদ দেখাবো!
কথা বলতে বলতেই তাদের রুমের সামনে এসে পড়ে। মেহজা দাঁড়িয়ে বিরক্ত হয়ে বলে,
— আরেহ্! ঐ দেশী সান্ডার জন্য আনা কাপড়টা দেওয়া হয়নি এখনো। আমি ওটা দিয়ে আসি।
— ঠিক আছে। চল আমিও যাচ্ছি। না হলে আবার কৌশালী কিছু উল্টাপাল্টা বলে বসে!
মেহজা ঠোঁট উল্টে বলে,
— ঐ দেশী সান্ডাটা যদি কিছু বলে, আমি ওর মুখটাই ভেঙে ফেলবো! আমাকে একদম ইজি পিজি ভাববেন না!
এই বলে সে হেঁটে চলে যায়, আর আরভিদও তার পেছনে পেছনে যায়। মেহজা গিয়ে কৌশলীর দরজায় নক করে। কৌশালী দরজা খুললে, মেহজা হাতে থাকা ব্যাগটা এগিয়ে দেয়।
কৌশালী ব্যাগ না নিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,
— কি আছে এতে?
মেহজা চট করে উত্তর দেয়,
— তোর কাফনের কাপড়, দেশী সান্ডা!
কৌশালী হতভম্ব হয়ে বলে,
— কি বললেহ!
আরভিদ সামাল দিতে বলে,
— আমরা শপিংয়ে গিয়েছিলাম, সবার জন্য বিয়ের কাপড় এনেছি সাথে তোমার জন্যও।
কৌশালী ঢং করে আরভিদকে বলে,
— ওহ্! থ্যাংকস!
মেহজা বিদ্রুপ করে বলে,
— থ্যাংকস যাকে বলছো, সে তো তোর কথা মনেই রাখেনি! আমি কিনেছি, গুইসাপ কোথাকার।
কৌশালী বিরক্ত মুখে তাকায়। কিন্তু কিছু বলতে পারে না আরভিদের কারণে। আরভিদ মেহজার দিকে তাকিয়ে বলে,
— শেষ হয়েছে? এখন রুমে চল।
— হুম।
দুজনে রুমে ফিরে আসে। মেহজা গিয়ে কাভার্ড থেকে একটা প্লাজো আর আরভিদের একটা টি-শার্ট বের করে। সে শাওয়ার নিয়ে এগুলো পরবে, কারণ ওয়াশরুমে শাড়ি পরা কষ্টকর, তাই রুমে এসে শাড়ি পরে নেবে। আরভিদ এগিয়ে এসে পেছন থেকে মেহজাকে জড়িয়ে ধরতে হাত বাড়ায়, ঠিক সেই মুহূর্তেই দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে মিশান।
— আপি?
অর্তিহার ডাকে আরভিদ দ্রুত হাত সরিয়ে নেয়। মেহজা ঘাড় ঘুরিয়ে মিশানের দিকে তাকায়, তখন তার চোখ পড়ে আরভিদের ওপর। আরভিদকে এত কাছে দেখে সে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
আরভিদ মুখ ঘুরিয়ে মনে মনে বলে,
— সালার কপাল! সবার সমস্যা কী বুঝি না! বিয়ের আগে তো কেউ আমার রুমে পারমিশন ছাড়া ঢোকার সাহসও পেত না। তাও তখন অবিবাহিত ছিলাম! আর এখন? যে যার খুশি, যখন খুশি ঢুকে পড়ে! অথচ একজন বিবাহিত মানুষদের রুমে নক করে ঢুকা কোনো ফরজ কাজের থেকে কম না!
মেহজা মিশানকে বলে,
— কি হয়েছে?
মিশান বলে,
— আমরা দুই বোন একসাথে রেডি হবো ঠিক আছে?
— আচ্ছা!
এই কথা শুনে আরভিদের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। সে মনে মনে বলে,
— এই বাড়িতে যেন কেউ চায় না আমি বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করি! যখনই সময় পাই, কেউ না কেউ এসে হাজির!
রাগ চেপে আরভিদ রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যায়, তখন মেহজা পিছন থেকে বলে ওঠে,
— কারোর জানে জিগার বন্ধুর জন্য আনা কাপড়টা এখনো দেওয়া হয়নি! দিতে মন চাইলে দিতে পারে!
কথা শুনে আরভিদ বুঝে যায় মেহজাই তাকে বলেছে। সে সোফা থেকে শপিং ব্যাগটা তুলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আরভিদ চলে যেতেই মিশান চোখ ছোট করে জিজ্ঞেস করে,
— তুমি কি জিজুর সাথে ঝগড়া করেছো?”
— আমি কেন ঝগড়া করবো? তোর জিজু কি ফেরেস্তা নাকি?
— ফেরেস্তা না, কিন্তু অনেক ম্যাচিউর! আর তুমি একদম ইমম্যাচিউর! আর এমনিতেই তুমি সারাক্ষণ ঝগড়া করো! ঝগড়া করা ছাড়া এক দন্ডও থাকতে পারো না!
মেহজা দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
— দিবো একটা লাথি ফেরেস্তা জিজুর ছোট্ট চামচিকা!
— উচিত কথা বললেই বকো!
— চামচামি করছে আবার বলছে উচিত কথা নাকি বলেছে! বস তুই চামচিকা, আমি শাওয়ার নিয়ে আসছে।
— আচ্ছা যাও।
আদ্রিক সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছে খুব মনোযোগ দিয়ে। এমন সময় দরজায় নক হয়। এতে সে একটু বিরক্ত হলেও মুখে কিছু প্রকাশ করে না। মুখাবয়ব আগের মতোই। সে উঠে দরজা খুলতেই দেখে আরভিদ দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিক চুপচাপ আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে। আরভিদ রুমে ঢুকে তার দিকে তাকায়। দেখে, আদ্রিক আবারও ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়েছে।
আরভিদ এবার ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রাখতেই ভ্রু কুঁচকে যায়।
— তুই তোর পাইলট লাইসেন্স আর পাসপোর্ট কোথায় পাঠাচ্ছিস?
আদ্রিক ল্যাপটপে চোখ রেখেই শান্ত কন্ঠে বলে,
— আমেরিকার এক এয়ারলাইনসে! জব কনফার্ম হয়ে গেছে, এখন ডকুমেন্টস পাঠাচ্ছি।
আরভিদ অবাক হয়ে বলে,
— তুই এমিরেটসের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিস?
আদ্রিক নির্বিকার ভঙ্গিতে উত্তর দেয়,
— হ্যাঁ।
আরভিদ ভ্রু কুচকে বলে,
— কেন?
— ফ্লাইট ছাড়ার ৩০ মিনিট আগে আমি প্রটোকল ভেঙে ফ্লাইট ক্যানসেল করে দিয়েছি। এখন ওরা এর যথাযথ কারণ জানতে চাইবে। যাকে বলে কৈফিয়ত! আর আদ্রিক কারদার কৈফিয়ত দেয় না। তাই ছেড়ে দিয়েছি।
— ঠিকই করেছিস! এয়ারলাইন্স তো আর তোর বাপের না, যে রুলস ভাঙবি আর তারা কৈফিয়ত চাইবে না?
— না, তোর বাপের! এখন আমার বদলে কৈফিয়তটা তুই দিয়ে দে, সালা!
— এখন যেহেতু তুই ইউএস এয়ারলাইন্সে যাচ্ছিস, আগের চেয়ে স্যালারি নিশ্চয়ই বেশি?
— তুই কি আমার স্যালারি জানতে চাচ্ছিস?
— হ্যাঁ! আমার বোনকে তোকে দিতে যাচ্ছি। এখন দেখতে হবে না, তুই তাকে ঠিকমতো সামলাতে পারবি কিনা!
— তোর বোনকে আমি অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছি!
তাই এখন তোর দেওয়া আর না দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না!
— অর্তিকে পাওয়ার লড়াইয়ে যদি আমি তোর প্রতিপক্ষ হই, তাহলে জেনে রাখ তুই তাকে পেয়েও হাত ফসকে ফেলবি!
আদ্রিক মুচকি হেসে আরভিদের দিকে তাকায়। আরভিদ ভ্রু কুঁচকে তাকায় তারপর হেসে হাত বাড়িয়ে তার হাতে থাকা ব্যাগটা দেয়,
— এই নে!
— এটা কী?
— শার্ট! মেহু তোকে কালকের বিয়ের জন্য এনেছে। এটা পরিস।
আদ্রিক ব্যাগটা হাতে নেয়। এরপর কিছুক্ষণ তার সঙ্গে কথা বলে আরভিদ ছাদের দিকে রওনা দেয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাদটা ঠিকভাবে সাজানো হয়েছে কিনা দেখতে। কারণ, আজ অর্তিহার হলুদের অনুষ্ঠান ছাদেই করা হবে। কারদার ম্যানরের বিশাল ছাদটা আজ রাঙানো হচ্ছে উৎসবের রঙে। এরই মধ্যে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে, চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে, কিন্তু ছাদটা ঝিকিমিকি করছে অফ হোয়াইট রঙের ছোট ছোট আলোয়। আরভিদকে ছাদে আসতে দেখে
তার এসিস্ট্যান্ট নাসিদ ও নাসিদের এসিস্ট্যান্ট তাফসির এগিয়ে আসে।
নাসিদ হেসে বলে,
— স্যার, সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো? আমি নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে দেখাশোনা করছি।
এই কথা শুনে তাফসির অবাক হয়ে তাকায় কারণ সব কাজ খাটুনি নাসিদ তাসফিকে দিয়ে করিয়েছে। তাফসির রাগে মনে মনে নাসিদকে বকতে থাকে।
— সালা ভন্ড ঠকবাজ! মিথ্যে কথা বলে সব ক্রেডিট নিয়ে নিসে!
আরভিদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— আমি জানি কে দৌড়াদৌরি করে দেখা শুনা করছে!
নাসিদ জোর করে একরু হাসে। আরভিদ আবার বলে,
— এখন তোমরা দুজন গেস্ট রুমে গিয়ে রেডি হয়ে আসো। তোমাদের জন্য কাপড় রাখা আছে।
— ঠিক আছে, স্যার।
সবকিছু দেখে আরভিদ আবার ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে ফিরে আসে। রুমে ঢুকেই দেখে, মেহজা সেখানে নেই। কিন্তু বিছানায় বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য তার কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখা। হালকা হেসে আরভিদ ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নিতে যায়।
প্রায় এক ঘণ্টা পর আরভিদ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে। বেডে রাখা মেহেদি রঙের পাঞ্জাবিটা পরে নেয়, তার ওপরে কালো কোট আর সাদা পায়জামা। এরপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে, টেবিল থেকে ঘড়িটা তুলে হাতে পরে নেয়। আয়নায় তাকিয়ে থাকা এই সুদর্শন, গম্ভীর চোখের পুরুষটিকে দেখে যেকোনো মেয়েরই চোখ আটকে যেতে পারে। সুঠাম দেহে মেহেদি রঙের পাঞ্জাবির উপর কালো কোটে পুরুষটির সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। পরিপক্ব চেহারায় আজকের অনুষ্ঠানে শত শত মেয়ের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার মতো আকর্ষণ।
এমনিতেই মিডিয়ার চোখ সবসময়ই থাকে এই বদমেজাজি আইনমন্ত্রীর ওপর। মেয়েরা সোশাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে যেমন কাড়াকাড়ি মাতামাতি করে, বাস্তবে তেমনটা করার সাহস কারো হয়নি, বিশেষ করে মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে। কারণ, আরভিদ শুধু রাগীই নয়, এখন একজন ক্ষমতাধর মানুষও।
টেবিল থেকে Maison Francis Kurkdjian ব্র্যান্ডের
Baccarat Rouge 540 পারফিউম তুলে নিয়ে গলায় স্প্রে করছিল আরভিদ, ঠিক তখনই রুমে ঢোকে মেহজা। পরনে মেহেন্দি রঙের শাড়ি, মেজেন্টা রঙের ব্লাউজ। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, চোখে গাঢ় কাজল আর মাসকারা। কানে ঝোলানো বেলি আর গোলাপ ফুলের দুল, কপালে বেলি-গোলাপের টিকলি।
আরভিদের হাত থেমে যায়, পারফিউম স্প্রের মাঝপথে। তার চোখ আটকে যায় মেহজার উপর। মেহজা কিছু না বলে সরাসরি ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়, আরভিদের ডান পাশে দাঁড়িয়ে কিছু কালো চুলের ক্লিপ তুলে নেয়। এই ক্লিপগুলো নিতেই সে রুমে এসেছে।
আরভিদ ধীরে ধীরে পারফিউমটা টেবিলে নামিয়ে রাখে। মেহজা যখন চলে যেতে যায়, হঠাৎ করেই আরভিদ তাকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আচমকা মেহজার দুই দুটো স্থান পায় আরভিদের দুই কাঁধে। দুজন দুজনের চোখে তাকিয়ে থাকে। আরভিদের দৃষ্টি গভীর যেন নেশার রঙ।
মেহজা আরভিদের চোখে থেকে চোখ সরিয়ে বিরক্ত গলায় বলে,
— কি হচ্ছে কি? ছাড়ুন আমাকে!
আরভিদ তবুও কিছু বলে না, নেশায় ভরা চোখে তাকিয়েই থাকে মেহজার দিকে। মেহজা এবার একটু অস্বস্তি নিয়ে গলা নামিয়ে বলে,
— আপনার মতলব তো ঠিক লাগছে না!
আরভিদ ফিসফিস করে উত্তর দেয়,
— লাগবেও না! কারণ আমার মতলব একেবারেই ঠিক না!
মেহজার চোখ কুঁচকে যায়। আরভিদ তার গালে আঙুল বুলাতে বুলাতে বলে,
— মেহু? নেশা লাগছে খুব…
মেহজা মুখটা বাঁকিয়ে বলে,
— আমি আগেই বুঝেছিলাম, তুই একটা নেশাখোর!
আরভিদ একটু থেমে যায়, কথা শুনে অপ্রস্তুত হয়।
কিন্তু নিজেকে দ্রুত সামলে নেয়, মুড নষ্ট করা যাবে না!
সে মোলায়েম গলায় বলে,
— আমার চোখের দিকে তাকা।
মেহজা তাকায়, চোখে রাগ আর প্রশ্ন। আরভিদ আগ্রহ নিয়ে বলে,
— কী দেখছিস?
মেহজা জোরে নিজেকে ছাড়িয়ে পেছনে সরে যায়। তারপর কোনো প্রকার সংকোচ ছাড়াই উত্তর দেয়,
— কুড়কুড়ানি, কুড়কুড়ানি, আর কুড়কুড়ানি!
আরভিদ হতাশ হলেও হাল ছাড়ে না। ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে মেহজাকে দেওয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে নিজেও মেহজার সাথে একদম মিশে যায়। তারপর তার গলা থেকে বুক পর্যন্ত আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে,
— ইউ নো ওয়াট, রেডলিপ? আই লাভ ফিজিকাল টাচ!
কথাটা বলতে না বলতেই মেহজা জোরে একটা চড় বসিয়ে দেয় আরভিদের গালে। আরভিদ হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
— এটা কি ছিলো?
মেহজা মেকি হাসি দিয়ে বলে,
— ফিজিক্যাল টাচ!
আরভিদ কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থেকে হঠাৎই মেহজার গালে একটা ঠাস করে থাপ্পড় মারে।
মেহজা গালে হাত রেখে মুখটা কুঁচকে, কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলে,
— এই সালার জামাই মারলি কেন?
এবার আরভিদও মেকি হেসে উত্তর দেয়,
— শুধু ফিজিক্যাল টাচ পেতে ভালোবাসি না, দিতেও ভালোবাসি শালির বউ!
মেহজা রেগে গিয়ে এবার আরভিদকে এক লাথি মারে।
— সালার ব্যাডা!
আরভিদও পাল্টা লাথি দিয়ে বলে,
— বল শালির বেডি!
মেহজা চোখ বড় বড় করে বলে,
— তুই একটা স্মল পিপল!
আরভিদের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়, ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,
— এটার মানে আবার কী?
মেহজা গালে হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করে,
— স্মল মানে কি?
— ছোট!
— পিপল?
— লোক!
— দুইটা একসাথে করলে?
— ছোটলোক!
— হ্যাঁ, এটাই তো বলেছি! অশিক্ষিত বেডা!
আরভিদ একটু অবাক হয়ে বলে,
— এইচএসসি টেনেটুনে পাশ করা মেয়ে কিনা, পিএইচডি করা মানুষকে অশিক্ষিত বলে! কি কপাল!
মেহজা নাক সিঁটকে বলে,
— হুহ! আপনার পিএইচডি করে কি হবে, যদি ইংরেজিতে দুইটা গালিই না দিতে পারেন!
আরভিদ এবার চোখে-মুখে বিরক্তি আর রাগ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে সে, কিন্তু রাগ যেন কিছুতেই কমছে না। এই ফাঁকে মেহজা নিজের শাড়ি সামান্য তুলে নেয়, যেন দৌড়াতে সুবিধা হয়। তারপর হঠাৎ আরভিদের অন্য গালেও একটা থাপ্পড় মেরে দৌড় দিতে দিতে বলে,
— হেহে, আরেক গালে থাপ্পড় দিয়ে দিয়েছি! এখন আপনার বউ বেঁচে যাবে আর আমার জামাই মরে যাবে!
আরভিদ পুরো ঘটনা দেখে থ হয়ে যায়। একদিকে মেহজার আচমকা থাপ্পড়, অন্যদিকে এই আজব কথা! রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সে গভীর একটা নিশ্বাস ফেলে, বিরক্ত মুখে ছাদের দিকে হাঁটা দেয়।
দরজার সামনে মেহজাকে হাপাতে হাপাতে ঢুকতে দেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মিশান অবাক হয়ে যায়। মেহজা দরজা লাগিয়ে দুটো বড় শ্বাস নেয়, যেন অনেকটা দৌড়ে এসেছে। তারপর মিশানের কাছে এসে হাত বাড়িয়ে বলে,
— এই নে, তিনটা ক্লিপি আনতে পেরেছি! বাকিগুলো দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে গেছে!
মিশান চোখ বড় করে জিজ্ঞেস করে,
— দৌড় দিয়েছো কেন? তুমি আবার জিজুকে মেরে আসোনি তো?
মেহজা গাল ফুলিয়ে গর্বভরে উত্তর দেয়,
— হ্যাঁ! থাপ্পড় মেরে এসেছি, জালেম কারদারটাকে!
মিশান চোখ বড় বড় করে বলে,
— এতো অত্যাচার করার পরও জিজু তোমার কত খেয়াল রাখে! তুমি কত্তো লাকি!
মেহজা বিরক্ত মুখে বলে,
— হইছে হইছে, এমন পক্ষ নিয়ে কথা বলছিস, যেন তোর পীর লাগে!
মিশান মুচকি হেসে বলে,
— উচিত কথা বললে যদি পীর মনে করো, তাহলে পীরই ভালো!
মেহজা কটমট করে তাকিয়ে বলে,
— হুহ্! স্মল পিপল পীরের স্মল পিপল মুরিদ!
মিশান প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
— আমরা তো রেডি হয়ে গেলাম! অর্তি আপুকে রেডি করা হয়েছে তো?
মেহজা এবার হেসে বলে,
— আমি পিন আনতে যাওয়ার আগে অর্তির রুমেই গিয়েছিলাম। দেখলাম, হানিন আর মিষ্টি মিলে ওকে একদম পারফেক্টলি রেডি করে দিয়েছে! এখন ওরাই রেডি হচ্ছে। মাশাল্লাহ, অর্তির থেকে তো চোখই ফেরানো যাচ্ছিলো না!
মিশান আবেশ ভরা কন্ঠে বলে,
— সত্যিই, আমার জীবনে অর্তির আপুর মতো সুন্দর কাউকে দেখিনি! আপুকে দেখতেও একদম বিদেশীনি লাগে!
এমন সময় পেছন থেকে এক কণ্ঠ শোনা যায়,
— কাকে বিদেশীনি লাগে?
মেহজা আর মিশান দু’জনেই চমকে পেছনে ঘুরে তাকায়। দেখে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন আস্মিতা তালুকদার। মুখে হালকা হাসি লেগে আছে।
মেহজা হেসে জবাব দেয়,
— অর্তির কথা বলছিলো! অর্তিকে একদম বিদেশীনি লাগে!
মিশানও তাল মিলিয়ে বলপ,
— হ্যাঁ আম্মু, এই দেখো না, বাড়ির কারো সাথেই অর্তি আপুর চেহারাটা মেলে না! চেহারা দেখলেই যে কেউ বলবে বিদেশীনি!
আস্মিতার মুখের হাসিটা একটু থেমে যায়, কিন্ত জোর করে আবার হেসে বলেন,
— সে তো সুন্দর, তাই তাকে বিদেশিনীর মতো লাগে। কিন্তু আমার দুই মেয়েও কিন্তু কম সুন্দর না!
মেহজা হেসে এগিয়ে গিয়ে আস্মিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— কম সুন্দর হবো কেন? আমার আম্মু-আব্বু দুজনেই তো এত সুন্দর। তাদের মেয়েরা কম সুন্দর হবে কেন!
মিশানও দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে। আস্মিতা দুই মেয়েকে দুই পাশে জড়িয়ে ধরে ফেলেন।তিনজনের মুখেই হাসি, চোখেমুখে আনন্দ। আস্মিতার মন ভরে যায় এতো সুখে ভালোবাসায়।
অর্তিহা গায়ের হলুদের সাজে একদম পূর্ণতা নিয়ে বেডে বসে আছে। তার পরনে কাঁচা হলুদের রঙের একটি ভারী ও দামী লেহেঙ্গা, যাতে সবুজ সুতা আর স্টোনের কাজ করা আছে। মাথায় একপাশে দোপাট্টা, আর বাম হাতেও আরেকটা দোপাট্টা ঝুলে আছে। লেহেঙ্গার সৌন্দর্য এবং দাম বোঝা যাচ্ছে দেখলেই।
অর্তিহার গলায়, কানে, আর মাথায় ফুল দিয়ে তৈরি গহনা পরানো। তার বার্গান্ডি রঙের চুলগুলো স্ট্রেইট করে ছেড়ে রাখা। মুখে প্রসাধনী বলতে কেবল কাজল, গালে হালকা ব্রাশ, আর ঠোঁটে ন্যুড কালারের লিপস্টিক। এর বেশি কিছু লাগেনি কারণ অর্তিহার গায়ের রং খুবই ফর্সা, চোখের পাপড়িগুলো ঘন আর বড় একেবারে সাকোরা টাইপের। গাল এমনিতেই গোলাপি, তাই হালকা ব্রাশই যথেষ্ট ছিল।
পুরো সাজে অর্তিহা দেখতে যেন একদম আদ্রিকের ডাকা নামের মতো মিস্ট্রি মারমেইড! যে একবার একবার তাকাবে, তার আর চোখ ফেরানোর সাহস বা ইচ্ছে কোনোটাই হবে না। পাশেই হানিন আর মিষ্টি মেকআপ করছে। ওদের সাজ শেষ হতেই, মিষ্টি ফোন বের করে বলে,
— চল, একটা সেলফি তুলি তিন ফ্রেন্ড মিলে।
হানিন বলে,
— ঠিক বলেছিস!
মিষ্টি ছবির জন্য ক্লিক করতে যাবে, তখনই দরজায় টোকা পড়ে। হানিন গিয়ে দরজা খোলে, দেখে আদ্রিক দাঁড়িয়ে আছে। পরনে হলুদ পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা, হাতার কাপড়গুলো ফোল্ড করা, চুল সেট করা। দেখতে একেবারে মারাত্মক সুন্দর ও হ্যান্ডসাম। যে কোনো মেয়ে দেখলে লাট্টু হয়ে যাবে! এমনিতেই এই পুরুষ মারাত্মক সুন্দর তারউপর আজকে যেন বেশিই চোখে ধরছে তার সৌন্দর্য।
হানিন ড্যাবড্যাব করে আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন নিজের মধ্যে নেই। আদ্রিক সেটা বুঝতে পেরে হাত উঠিয়ে হানিনের চোখে সামনে চুটকি দেয়। তাতে হানিন হুশ আসে এবং সাথে সাথেই সরে দাঁড়ায়। আদ্রিক ভেতরে ঢোকে। তাকে দেখে মিষ্টিও অপলক তাকিয়ে থাকে। ওদের কাছে আদ্রিক এমন একজন, যাকে দেখলেই বার বার দেখতে ইচ্ছে করে।
অর্তিহা আদ্রিককে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যায়। এসি না চললেও তার কান আর গাল গরম হয়ে যায়। হানিন আর মিষ্টি দুজনেই আদ্রিকের দিক থেকে চোখ সরিয়ে একবার অর্তিহার দিকে তাকায়, তারপর চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যায়। ওরা বেরিয়ে যেতেই আদ্রিক দরজা লাগিয়ে অর্তিহার দিকে এগিয়ে আসে। এটা বুঝে অর্তিহা একটু ভয় পায়, কিন্তু মাথা তোলে না। আদ্রিক কাছে এসে হঠাৎ টান দিয়ে তাকে দাঁড় করায়। আচমকা টানে অর্তিহা ঢলে পড়ে আদ্রিকের বুকের ওপর।
আদ্রিক এক আঙুল দিয়ে অর্তিহার থুতনিটা তুলে ধরে তার অভ্যাসগত ঠান্ডা হাসি নিয়ে বলে,
— সেজেছিস? সাইহানের জন্য?
অর্তিহা ভয়ে কিছু বলতে পারছিল না। শুধু চোখে ভয় নিয়ে তাকিয়ে ছিল আদ্রিকের দিকে। কথা বলার সাহস যেন হারিয়ে ফেলেছে সে।
আদ্রিক এবার তার উন্মুক্ত পেটের দিকে তাকিয়ে বলে,
— এই ফর্সা পেটটা বুঝি সাইহানের জন্য খুলে রেখেছিস? যাতে সে দেখে চোখ জুড়াতে পারে? এতদিন আমি চোখ জুড়াতাম, আজকে অন্য আরেকজনের জন্য ব্যবস্থা করেছিস?
অর্তিহা মাথা নাড়িয়ে না সূচক ইশারা করে। বহু কষ্টে গলা চেপে বলপ,
— না…না…আমি কিছু করিনি।
আদ্রিক তার না বলা কথাগুলোর গুরুত্ব দিল না। বরং তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
— এই পেট দেখে তো ওর মনে আকাঙ্খা জাগবে তাই না? একটু ছোঁয়ার জন্য? এখন যে পেট অন্য কারো চোখের কামনা মেটাবে, সে পেট তো আমার লাগবে না!
তারপর হালকা ভ্রু নাচিয়ে বলে,
— জ্বলসে দেই?
বলতে বলতেই পকেট থেকে S.T. Dupont Biggy Diamond-Point Gold Lighter বের করে। অর্তিহা কেঁদে উঠে,
— না আদ্রিক ভাইয়া!
আদ্রিক ঠান্ডা মুখে লাইটারের ঢাকনা খুলে আগুন ধরিয়ে দিল। আগুনের শিখা দেখে অর্তিহা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে। সে ভয়ে আদ্রিককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
— প্লিজ এটা দূরে ফেলে দিন, ভয় লাগছে! আগুনটা নিভিয়ে ফেলুন!
আদ্রিক আগুন নিভায় না। সে বাম হাত দিয়ে অর্তিহার মাথায় হাত রেখে শান্ত গলায় বলে,
— লাইটারের আগুন নিভবে না! এটা জ্বলে উঠবে আবার….
অর্তিহা অবাক হয়ে মাথা তুলে তার দিকে তাকায়। আদ্রিক আবার বলে,
— আমার বুকে জ্বলতে থাকা আগুন দিয়ে!
অর্তিহা এবার তার বুকে মাথা রেখে কাঁপা কণ্ঠে বলে,
— আপনার বুকের আগুন আমি নিভিয়ে দেবো! কিন্তু আপনি আগে লাইটারের আগুনটা নিভান!
এই কথায় আদ্রিক লাইটারের আগুন নিভিয়ে ফেলে। পকেটে ঢুকিয়ে দেয় সেটা। তারপর ডান হাতটা তুলে অর্তিহার গালে রেখে বলে,
— লাইটারের আগুন নিভে গেছে!
এটা শুনে অর্তিহা ধীরে মাথা তোলে। দেখে সত্যি লাইটার নিভানো। তার কান্নাভেজা মুখে একটা ছোট্ট হাসি ফুটে ওঠে।
সে আদ্রিকের কাছ থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে মাথা নিচু করে আস্তে বলে,
— টপটা চেঞ্জ করে ফেলছি। কিন্তু পরে কি পরবো? আমার কাছে তো হলুদ টপ নেই!
আদ্রিক শান্তভাবে বলে,
— আমার একটা সাদা শার্ট বের করে নিয়ে আয়।
অর্তিহা অবাক হয়ে বলে,
— সাদা শার্ট দিয়ে কি হ…
বলতে বলতেই আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল। সে কিছু না বলে কাভার্ড থেকে একটা সাদা শার্ট এনে আদ্রিকের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
আদ্রিক শার্ট টা নিয়ে বলে,
— এখন টপটা খুল।
অর্তিহা লজ্জায় নিচু গলায় বলে,
— আচ্ছা, আপনি যান। আমি পরে নিচ্ছি।
কোনো উত্তর না দিয়ে আদ্রিক তাকিয়ে থাকে। অর্তিহা আদ্রিকের চুপ থাকা দেখে বলে,
— তাহলে আপনি বেলকনিতে যান।
আবারো কোনো উত্তর নেই। শেষে অর্তিহা বলে,
— আচ্ছা, আপনি থাকুন। আমি ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিচ্ছি।
সে শার্টটা নিতে গেলেই আদ্রিক তার কোমর ধরে নিজের দিকে টেনে বলে,
— আমার সামনেই চেঞ্জ কর।
অর্তিহা অবাক হয়ে বলে,
— কিসব বলছেন আপনি!
আদ্রিক মুচকি হেসে বলে,
— আমি যদি তোর কাপড় খুলতে পারি, তাহলে তুই কেন আমার সামনে চেঞ্জ করতে পারবি না?
অর্তিহা চোখ নামিয়ে লজ্জায় বলে,
— প্লিজ যেতে দিন।
— এই ভারী লেহেঙ্গা পরে ওয়াশরুমে চেঞ্জ করতে পারবি না তো!
— তাহলে আপনি বেলকনিতে যান না! প্লিজ? আমি তো সবসময় কিছু চাই না, আজকে চাইছি।
আদ্রিক হেসে তার গালে নাক ঘষে বলে,
— আমার অর্তিজানের দেখছি উপস্থিত বুদ্ধি ভালোই হয়েছে। কথায় জ্বালে আদ্রিক কারদারকে ফেলতে শিখে গেছে! তবে আমি বেলকনিতে যাচ্ছি না।
এই কথা শুনে অর্তিহার মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়। তখন আদ্রিক বলে,
— আমি ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। ১ মিনিট সময় দিবো, এর মধ্যে চেঞ্জ করতে পারলে তোর জন্য ভালো। নাহলে ঘুরে যাবো, তখন আমার জন্য ভালো।
এই শর্ত শুনে অর্তিহা একটু খুশি হয়। মনে মনে ভাবে, যাক, ঘুরে তো দাঁড়াচ্ছে! এখন তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করতে হবে।
আদ্রিক বলে,
— নাও, তোর টাইম স্টা…
— দাঁড়ান, এখন না! এক মিনিট তো চেঞ্জ করার জন্য, আগে দোপাট্টাটা খুলে নেই।
বলেই সে দোপাট্টা খুলতে চেষ্টা করে, কিন্তু সেফটিপিনের কারণে পারছে না। আদ্রিক কাছে এসে তার কাঁধের কাছে মুখ নিয়ে দোপাট্টার সেফটিপিন খুলতে খুলতে ফিসফিস করে বলে,
— আমার বোকা অর্তি এত চালাক হলো কিভাবে? আদ্রিক কারদারকে তার কথায় ফেলতে চায়?
এই কথায় অর্তিহার শ্বাস ঘন হয়ে যায়। আদ্রিক সেফটিপিন খুলে সরে দাঁড়ায়। তারপর বলে,
— স্টার্ট বেবিডল।
বলে সে ঘুরে দাঁড়ায়। অর্তিহা দ্রুত টপটা খোলার চেষ্টা করে। কিন্তু টপটা ফিটিং হওয়ায় খুলতে সমস্যা হচ্ছিল। তারপরও কোনো রকমে খুলে ফেলে ও দ্রুত শার্টটা পরে ফেলে। মাত্র দুইটা বোতাম লাগাতেই ১ মিনিট সময় শেষ হয়ে যায়। আদ্রিক ঘুরে তাকায়।
অর্তিহার হাত থেমে যায়। আদ্রিক মুচকি হেসে তার দিকে এগিয়ে আসে। তারপর বাকি বোতামগুলো লাগিয়ে দেয়। অর্তিহা লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে। আদ্রিক তার শার্টের হাতাগুলো ফোল্ড করে দেয়। তারপর স্কার্টের ভেতরে ইন করে দিতে গিয়ে অর্তিহার পেটে হাত লাগে। এই স্পর্শে অর্তিহা কেঁপে ওঠে।
আদ্রিক সেটা দেখে কিছু না বলে মুচকি হাসে। শার্ট পরানোর পর বেড থেকে দোপাট্টা এনে সেফটিপিন দিয়ে বেঁধে দেয়। তারপর একটু দূরে গিয়ে অর্তিহাকে দেখে আবার কাছে এসে দোপাট্টাটা মাথা থেকে খুলতে শুরু করে।
অর্তিহা বাধা দিয়ে বলে,
— এটা খুলছেন কেন?
আদ্রিক শান্ত কন্ঠে বলে,
— ড্রেসআপের সাথে যাচ্ছে না দোপাট্টাটা।
বলে সেটা খুলে ফেলে। এরপর তার কিছু চুল পেছন থেকে এনে সামনে ডান পাশে সাজিয়ে দেয়। তারপর আবার কিছু দূরে গিয়ে দেখে বলে,
— এখন তুই যাওয়ার জন্য রেডি।
অর্তিহা ঘুরে আয়নায় তাকায়। তার পরা সাদা শার্টটা তাকে সুন্দর দেখাচ্ছে। আর এই সুন্দর লাগার পেছনে কারণ আদ্রিকের পরিয়ে দেওয়াটা। এখন তার শরীর ঢাকা, কিন্তু তবুও তাকে বেশি সুন্দর লাগছে। একটা ক্লাসি, সাইনি লুক। আদ্রিক অর্তিহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। অর্তিহার থুতনিতে হাত রেখে মুখটা উপরে তোলে, তারপর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
অর্তিহা নিজের লেহেঙ্গা স্কার্টটা শক্ত করে আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু সে একটুও নড়ে না।একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। না আদ্রিককে কোনো সাড়া দেয়, আর না কোনো বাধা দেয়।
কয়েক মিনিট পর আদ্রিক ঠোঁট ছেড়ে দেয়। তারপর একটু সরে গিয়ে তাদের মাঝে খুব সামান্য দূরত্ব তৈরি করে। অর্তিহা তখনও চোখ বন্ধ করে রাখে।
আদ্রিক মুচকি হেসে বলে,
— তুই কি আরও কিস চাচ্ছিস বেবিডল?
অর্তিহা চট করে চোখ খুলে ফেলে। আদ্রিক আয়নার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, অর্তিহার ঠোঁট থেকে লেগে যাওয়া লিপস্টিকটা মুছে আবার আগের জায়গায় ফিরে এসে ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বলে,
— লিপস্টিকটা নষ্ট করে ফেলেছি, ঠিক করে নে!
মোহশৃঙ্খল পর্ব ১২
আদ্রিকের কথায় অর্তিহার খুব লজ্জা লাগে। সে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে শুরু করে, কারণ ঠোঁটের পুরো লিপস্টিক উঠে গেছে। আর এখন যদি হানিন আর মিষ্টি এই অবস্থায় দেখে, তাহলে সন্দেহ করবে। এই ভেবে সে দ্রুত লিপস্টিক আগের মতো করে ফেলে। সাথে মেকআপটাও ঠিক করে নেয়, কারণ কান্নার জন্য কাজলটা ছড়িয়ে গিয়েছিল।
