The Silent Manor part 36

The Silent Manor part 36
Dayna Imrose lucky

বেলা ধীরে ধীরে বাড়লেও সূর্যের আলো পরিপূর্ণ ছড়িয়ে পড়েনি প্রকৃতিতে।আজ সকাল থেকেই কুয়াশায় চারপাশ ঘেরা ছিল।শিশির ভেজা ঘাস গুলো এখনো শুকিয়ে যায় নি।সুফিয়ান ক্ষেতের আইলে কাঁচি হাতে বসে আছে।যেন নীড় হারা পথিক সে।কাজে মন বসছে না।আজ বদরু, হাবলু লাল মিয়া, সোলেমান, তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে। ওঁরা তাঁর সাথে বিশ্বাস’ঘাতকতা করেছে।ফারদিনা প্রথম দিনেই বলেছিল,চোরেরা কখনো ভালো হয় না।কারো স্বভাব কখনো পরিবর্তন হয় না। ওঁরাও কোনদিন ভালো হবে না।দেখো, ওঁরা যেন সবার আগে তোমার ক্ষতিই করতে না চায়।’ ফারদিনার বলা কথাগুলো সুফিয়ান এর আশেপাশে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।মনে পড়ে তাঁর মায়ের কথা।ফারহিনা বেগম দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার ঠিক ক’দিন আগে উদাস মনে দিঘীর ঘাটে বসে ছিল। সুফিয়ান সেদিন শহর থেকে ফিরছিল।ফিরে এসে ঘরে তাঁর মাকে না পেয়ে বেশ চেঁচিয়ে ছিল।একে ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর,একজন বলেছে তোমার মা দীঘির পাড়ে। সুফিয়ান ছুটে দিঘীর পাড়ে এসেছিল।ফারদিনা বেগমের বিমর্ষ মুখখানি দেখে জিজ্ঞেস করেছিল ‘কি হয়েছে মা?

ফারহিনা বেগম বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকেছে। তাঁর গম্ভীর,ফ্যাকাশে মুখ কখনোই সুফিয়ান এর ভালো লাগেনি।সেদিনও লাগছিল না।সুফিয়ান আগ্রহ নিয়ে দ্বিতীয় বার ফারহিনার গা ঘেঁষে আলতো করে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করেছিল “ও মা,কি হয়েছে তোমার?এভাবে বসে আছো কেন?
ফারহিনা বেগম গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলেছিলেন “জানিস, যাকে তুই সবথেকে বেশি বিশ্বাস করবি, সে-ই তোকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে।কারো প্রতি এতটা ডুবে যাবিনা,যতটা গভীরে গেলে তুই কিনারা পাবি না।” সুফিয়ান এর কুল কিনারা সব আছে। শুধু নেই ভরসাস্থল। সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত একজন-মানুষ সঙ্গী হিসেবে তাঁর কেউ বেঁচে রইল না।মা বাবা হারিয়ে আজ সে বড়ই একা। সুফিয়ান শ্বাস ফেলল।বসা থেকে উঠে ফসল তোলার কাজ শুরু করল।
বেলা এখন ঠিক একটা বাজে।একটার সময় গ্রামের দৃশ্য যেন একেকটি রঙিন চিত্রের মতো চোখে ভেসে ওঠে।সূর্যের দেখা হঠাৎ মিলেছে।সোনালি রোদ বাতাসে নরম স্পর্শের মতো খেলে যায়। আকাশে মেঘগুলো ধীরে ধীরে ভেসে বেড়াচ্ছে, কখনও হালকা সাদা, কখনও হালকা ধূসর ছায়া ফেলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পথের ধারে ধানক্ষেত গুলো সবুজের বিভিন্ন ছায়ায় মোড়ানো, যেন প্রকৃতি তার সৌন্দর্য দেখছে। বাতাসে ধানগাছের মৃদু দুলন এবং পোকাপাখির কিচিরমিচির শব্দ মিশে এক মনোরম সঙ্গীত তৈরি করছে। দীঘির জল উজ্জ্বল নীল রঙের মত। সূর্যের আলোয় ছোট ছোট ঝলকানি করছে, আর তীরে কিছু হাঁস ভেসে বেড়াচ্ছে।
গ্রামের ছোট্ট মাটির ঘরগুলো থেকে ধোঁয়া উড়ে আসছে, হালকা রান্নার গন্ধ বাতাসে মিশে গেছে। রাস্তার ধারে বাচ্চারা খেলছে, হাসির শব্দ গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।তবে আগের মত ততটা শব্দ আর মানব যেন নেই।মাঝে মাঝে দূরে গরুর ডাক, কৃষকের হাতে হার ভেজার শব্দ আসে, যা শান্ত এবং প্রাণবন্ত এক মেলবন্ধন তৈরি করছে।

এই সময়টা যেন গ্রামের প্রকৃতির শান্তি এবং প্রাণবন্ততার এক অসাধারণ মিলন। সূর্যের কিরণ, বাতাসের নরম ছোঁয়া, পাখির গান, সব মিলিয়ে একটি স্বপ্নময় দুপুরের অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু সুফিয়ান এর মনটা বিষিয়ে আছে অজানা কারণে। নির্দিষ্ট একটি কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে। কখনো ভাবে ফারদিনার জন্য,কখনো ভাবে তাঁর এতিম হওয়ার তীব্র কষ্টের জন্য। কখনো জানান দেয় অজানা ব্যথার ইঙ্গিত।যেন সে ব্যথা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে।

সুফিয়ান মাথায় বাঁধা গামছাটা খুলে মুখ মুছতে মুছতে তাকাল রাস্তার দিকে।ফারদিনা আসছে। অসম্ভব ব্যাপার। গতরাতে তাঁকে খুঁজতে বের হয়েছিল তাঁর ভাইয়েরা।আজ এত সহজে ঘরের বাইরে বের হতে দিবে না তাঁকে।সুফিয়ান ভুল দেখছে। হ্যালুসিনেশন হচ্ছে।চোখ সরিয়ে নিল।গামছাটা পুনরায় বেঁধে নিল মাথায়।তখন চোখের কর্ণিয়ার থেকে খয়েরী রঙের আপছা শাড়ি পরনে কাউকে দেখছে। সুফিয়ান ভুল দেখছে বলে তোয়াক্কা না করে কাঁচি হাতে তুলে নিল।

“আমার দিকে তোমার তাকাতে ইচ্ছা করছে না?’ মোহময় একটি কন্ঠস্বর ভেসে আসল।ফারদিনার কন্ঠ। সুফিয়ান ঘুরে তাকাল। কিঞ্চিত অবাকও হল।ফারদিনার দিকে এগিয়ে গেল। হতাশ ভঙ্গিতে ফারদিনাকে দেখল।সে যেন প্রাণভরে দেখছে তাঁকে।ফারদিনা বলল “অবাক হচ্ছ,আমি দিনে কিভাবে বের হলাম?
“হুঁ,গতরাতে যেভাবে তোমার ভাইয়েরা হুংকার তুলেছিল, ভেবেছিলাম এই বোধহয় তোমাকে হারালাম।”
“সামান্য কারনেই আমাকে হারানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলে!কত সহজে বলে দিলে তুমি,এই বোধহয় আমাকে হারিয়ে ফেলছো! আমাকে হারালে তোমার বিন্দুমাত্র কষ্ট হবে না হয়তো?তাই না?
সুফিয়ান উত্তেজিত না হয়ে বলল “চলো,বাড়ির ভেতরে চলো।কেউ দেখে ফেলবে।’

ফারদিনা রাঙার কাছে দাঁড়ালো। ওর শরীরে হাত বুলিয়ে দিল।রাঙা শান্ত হয়ে তাঁর আদর নিল।যেন অপেক্ষায় ছিল ফারদিনার। ঝিলমিল কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কিছু খাচ্ছে। সুফিয়ান দিঘীর কাছে চলে যায়। ঠান্ডা জলে গোসল করছে।ফারদিনা ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে দিঘীর পাড়ে এসে ঘাঁটের উপর বসে। সুফিয়ান জলে ডুব দিচ্ছে, আবার উঠছে।চুল গুলো কখনও এক রকম এর সোজা হয়ে যাচ্ছে কখনো মাথা ঝাড়া দিলে চুল গুলো যেন দুলে উঠছে।এমন দৃশ্যে যেন ফারদিনা বেশ আনন্দ উপভোগ করল।সে মুগ্ধতা নিয়ে দেখছে সুফিয়ান কে। সুফিয়ান হাতের উপরিভাগ ডলতে ডলতে বলল ‘কি দেখছো ওভাবে?

“তোমাকে!’
“এভাবে দেখার কি আছে? নতুন দেখছো কি?”
“তোমাকে প্রতিবারই নতুন এর মত লাগে।”
“আমিত তোমার মত সুন্দরী নই। তোমার সামনে দাঁড়াতেও তো আমার লজ্জা লাগে।”
“আমার চোখে দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ তুমি।”
“যে যাকে ভালোবাসে,সে কুৎসিত হলেও তাঁর চোখে সেই মানুষটি সবচেয়ে সুন্দর।’যেমন আমি তোমার কাছে সুন্দর।’

“তুমি আসলেই সুদর্শন পুরুষ।নয়তো মেহের এর মত সুন্দরী নারী তোমার সৌন্দর্য এর প্রশংসা করত না।”
“তার মানে, মেহের আমার প্রশংসা করেছে বলে আমি সুন্দর!
‘বিষয়টি তেমন নয়।আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
‘তুমি সুযোগ করে কিভাবে আসলে আমার সাথে দেখা করতে?
“আমার শরীর টা ভালো না।আজ সকালে বমি করেছিলাম। ভাইয়েরা খুব চিন্তিত।আদিব ভাই কে বলেছি,আমি বাইরে বের হতে চাই, সারাদিন ঘরের মধ্যে ভালো লাগে না। এরপর সে আমাকে অনুমতি দেয়।’
ফারদিনার অসুস্থতার কথা শুনে সুফিয়ান এর অভিব্যক্তি পরিবর্তন হয়ে গেল।এমন মনে হল ফারদিনা অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে। এখুনি এর শা’স্তি এর ব্যবস্থা করতে হবে। সুফিয়ান জল থেকে উঠে এল।বলল ‘আমি যাই, ভেজা পোশাক বদলে নেই। তুমি আসো। এখানে দুপুর এর সময় বসে থেকো না।’

সুফিয়ান বলে ঘরের দিকে চলে যায়। ভেজা পোশাক বদলে কালো রঙের পাঞ্জাবি সাথে পাজামা পড়ে নিল।ফারদিনা সুফিয়ান এর ঘরে প্রবেশ করল। সুফিয়ান এর দিকে তাকিয়ে অবাক হচ্ছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে তাঁর সাথে দেখা করতে এসেছে অথচ সুফিয়ান এর কোন প্রতিক্রিয়া নেই। একটাবার জিজ্ঞেস করল না ‘চিকিৎসা করিয়েছো?কখন থেকে এরকম?এখন ঠিক আছো? তোমার অসুস্থতার কথা শুনে আমার ভালো লাগছে না।’ সুফিয়ান এমন কিছুই বলেনি।সে বইয়ের ভেতর কিছু খুঁজছে। নিজের কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছে।ফারদিনা অসুস্থ শরীর নিয়ে বসে আছে,সেই নিয়ে তাঁর কোন মাথা ব্যাথা নেই।

ফারদিনা বিষণ্নতায় ডুবে গেল।রাগ,অভিমান কোনটিই প্রকাশ না করে শান্ত ভঙ্গিতে উঠে ঘরের বাইরে যেতেই সুফিয়ান তাঁর ডান হাতটা ধরে ফেলল।ফারদিনা থমকে দাঁড়াল। সুফিয়ান এর দিকে ঘুরে তাকালো। সুফিয়ান বলল “চলে যাচ্ছ যে! বলে ফারদিনাকে চেয়ারে বসিয়ে নিজে ফারদিনার পায়ের কাছে হাঁটু ভাঁজ করে বসল।কন্ঠ খাদে নামিয়ে মসৃণ মুখে বলল “তোমার অসুস্থতার কথা শুনে ভালো লাগছে না। গতকাল থেকে আমি তোমার অসুস্থতা নিয়েই ভাবছি।হাকিম ডেকেছিলে?কি বলেছেন উনি?কি হয়েছে তোমার?
ফারদিনা কিছুক্ষণ চুপচাপ রইল।সুফিয়ান এর চোখ দুটো দেখছে আর ভাবছে,এই চোখ হয়তো কোনদিন তাকে হারাতে দিবে না।সে হারিয়ে যেতে চাইলেও জাপটে ধরে রাখবে। সুফিয়ান পুনরায় বলল “কি ভাবছো তুমি?
“ভাবছি না,দেখছিলাম।ঠিক কিছুক্ষণ আগে তোমাকে অচেনা মনে হয়েছিল। সে-ই সময়টার পর এখন তোমার চোখ বলছে তুমি আমাকে ভালোবাসো।হারাতে চাও না। আমার অসুস্থতায় তোমার চিন্তা হয়।” এতটুকু বলে থেমে গেল। সুফিয়ান মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে।শুধু ফারদিনার হাত দুটো ধরে আছে।

ফারদিনা হঠাৎ করে বলল “তুমি বহুরূপী নওতো?
সুফিয়ান র’ক্তমাখা চোখে তাকাল ফারদিনার দিকে।নির্বাক কন্ঠে বলল “আমার একটাই রুপ।যে রুপখানি তুমি দেখছো,যে চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখছো,সেটাই আমার রুপ।এর বাইরে আমার কোন রুপ নেই।” সুফিয়ান থেমে দৃষ্টি একবার মাটিতে ফেলে দ্বিতীয় বার উঠে দাড়িয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল “তুমি হয়ত কখনো কখনো আমাকে পুরোপুরি স্তব্ধ দেখে চিন্তিত হও। আমার আচরণ বদলে আমি একদম শান্ত হয়ে যাই। জানতে চাও এর কারণ কি? সুফিয়ান বা কাঁধের উপর থেকে ফারদিনার দিকে তাকাল।ফারদিনা চেয়ার থেকে উঠে সুফিয়ান এর পাশে দাঁড়িয়ে বলল ‘কেন তুমি হঠাৎ করে বদলে যাও? শান্ত হয়ে যাও?বলো আমাকে।”

“কারণ আমি যাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসি সেই আমার জীবন থেকে হারিয়ে যায়। আমার মা বাবা কে অনেক ভালোবেসে’ছিলাম। তাঁরা আমাকে একা করে ফেলে চলে গেছেন। অনেক কষ্ট হয় আমার তাঁদের কথা ভেবে।যখন তাদের কথা ভেবে কষ্ট পাই, তখনই তোমার মুখখানি চোঁখের সামনে ভেসে ওঠে।খুশি হয়ে যাই।অজান্তেই ঠোঁটের ফাঁকে হাঁসি চলে আসে। কিন্তু সে-ই হাঁসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না,এই ভেবে,যদি তোমাকেও আমি হারিয়ে ফেলি। তোমাকে পাব সেই ভেবে যতটা না আনন্দিত হই, তাঁর থেকেও বেশি ভয় হয় যদি হারিয়ে ফেলি তখন আমার কি হবে? বেঁচে থেকেও মরে যাব।হয়ত সত্যি স’ত্যিই মৃ’ত্যুকে বরণ করে নিতে হবে।”
ফারদিনা সুফিয়ান এর মুখে এমনটিই শুনতেই তাঁকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল “আমার ভাইয়েরা এই সম্পর্ক মেনে নিবে না। তাঁরা জানতে পারলে তোমাকে ছাড়বে না। তুমি আব্বার সাথে কথা না বলে আমাকে দূরে নিয়ে চলো”

হঠাৎ ফারদিনা সুফিয়ান কে জড়িয়ে ধরায় চমকে উঠল।বুকের কাছ থেকে ফারদিনার হাত দুটো সরিয়ে বলল “তোমার আব্বার সাথে কথা বলব,ভয় পেয়ো না।উনি মেনে নিবেন। না মেনে নিলে কৌশলে তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাব।”
“সত্যিই যাবে তো?
‘এক সত্যি,দুই সত্যি, তিন সত্যি,এবার খুশি তো?” ফারদিনা হতাশ ভঙ্গিতে হ্যাঁ বোধক মাথা আওড়ালো। সুফিয়ান বলল ‘আমাকে যেতে হবে।”
“কোথায়?
“একটা জরুরী কাজ আছে।কাজটা সেরে আমি কাল কি পরশু দিন এর ভেতরে চলে আসব।”
“এতদিন? ফারদিনা লম্বা একটা টানে বলল। “এই ক’দিন তোমাকে না দেখে কিভাবে থাকব? ফারদিনা আবেগ ভরা কন্ঠে বলল।

“ভেবে নাও তোমার জন্য বিয়ের বেনারশি আনতে যাচ্ছি।দূর দেশে।ফিরে এসে তোমাকে বিয়ে করব। তোমার আব্বা না মানলেও আমরা একারা বিয়ে করে নেব।”
“তোমাকে বিশ্বাস নেই, আমাকে আগে বিয়ে করে পড়ে আব্বার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবে।বলো আগে বিয়ে করবে? সুফিয়ান হেসে বলল “আমি মিথ্যে বলি না।যাও কথা দিলাম।আমি ফিরেই তোমাকে বিয়ে করব। এরপর প্রস্তাব নিয়ে যাব।”
সুফিয়ান ঘর থেকে বের হয়।ঘরটি তালাবদ্ধ করল। ঝিলমিল সুফিয়ান এর দিকে এগিয়ে বলল “আপনি কোথাও যাইতেছেন মনে হয়?
“হুঁ, দরকারি কাজে একটু দূরে যাচ্ছি।”
“কি এমন দরকারি কাজ?
“এসে বলব। ততদিন ফারদিনার দিকে খেয়াল রাখিস।”

‘আপনার লগে একদিন দেখা না করতে পারলে ও ছটফট করে,আর এই ক’দিন কিভাবে থাকব!’
সুফিয়ান রাঙার বাঁধন খুলে দিতে দিতে বলল “তুই ওকে সামাল দিস। বিয়ের কনে, বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকুক।আমি এসেই ওকে বিয়ে করব।”
“সত্যি?’ ঝিলমিল কপাল ভাঁজ করে জিজ্ঞেস করল।
“আমি তোর মতন মিথ্যুক নই।”
“কিন্তু, আপনার কি এমন জরুরি কাজ!ফারদিনা অসুস্থ এই অবস্থায় ওরে ফালাই রাইখা যাইতেছেন?’
“ফারদিনার জন্যই যাচ্ছি।বিয়ের বেনারশি কিনতে।” সুফিয়ান রসিকতা করে বলল।রাঙার বাঁধন খুলে লাগাম ধরল সুফিয়ান।ফারদিনা জিজ্ঞেস করল রাঙাকে নিয়ে যাবে?

“হুঁ ‌।”
“কোন পথে যাবে?
“নদী পথে”
“যেতেই হবে? ফারদিনা করুন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল।
“তোমার জন্যই যেতে হচ্ছে।”
ফারদিনা নখ খুঁটতে খুঁটতে বলল “তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি?নদী অবধি?
“আপনি যাহা বলিবেন মহারানী।” বলে সুফিয়ান আদেশ মানার মত আচরণ করল।ফারদিনা স্বশব্দে হেসে উঠল। এরপর তাঁরা রওনা নদী পথের দিকে। সুফিয়ান রাঙার লাগাম ধরে পাশেই হাঁটছে। তাঁর পাশে ফারদিনা। তাঁরা তালুকদার বাড়ি ছেড়ে অন্য পথ দিয়ে নদীর তীরের দিকে যাচ্ছে।যাতে ফারদিনাকে কেউ দেখে না ফেলে।
প্রায় ত্রিশ মিনিট পর তাঁরা তিনজন কথা বলতে বলতে নদীর তীরে পৌঁছে যায়। নদীর তীরে একটি দাড় টানা নৌকা বাঁধা।নৌকায় আরো কিছু লোক বসে আছে। তাঁরাও নিশ্চয়ই কোথাও যাচ্ছে বলে ফারদিনা ধারণা করল। নৌকা থেকে মাঝি সুফিয়ান কে লক্ষ্য করে লম্বা সুরে জিজ্ঞেস করল ‘ভাই যাইবেন নাকি?

সুফিয়ান জবাবে বলল “তোমরা এসে আগে আমার অশ্বকে নৌকায় তুলো।আমিও আসছি।যাব বলেই এসেছি।”
এরপর দু’জন লোক এসে রাঙাকে অতি কষ্টে নৌকায় চাপায়।ফারদিনার ভেতরটা কোন কারণে কুহ গাইছে। ধীরে ধীরে সে ভেঙ্গে পড়ছে।এর কারণ সে পরিষ্কার ভাবে ধরতে পারছে না। সুফিয়ান কোন কাজের জন্য দূরে যাচ্ছে?কি কাজে যাচ্ছে ?সে স্পষ্ট করে বলেনি।ফারদিনাও জোড় করে জিজ্ঞেস করেনি।কারণ সুফিয়ান বলেছে ফিরে এসে তাঁকে বিয়ে করবে। সুফিয়ান কে বিশ্বাস করছে। কিন্তু কোথাও একটা বাঁধা এসে তাঁর হৃদয়ে ধক করে ধাক্কা দিচ্ছে যেন।

ফারদিনার গম্ভীর মুখ দেখে সুফিয়ান জিজ্ঞেস করল “কি হয়েছে,কি ভাবছো তুমি? তোমাকে ফেলে রেখে একেবারে চলে যাচ্ছি না।আমি আবার আসব।কাজের জন্যই তো যাচ্ছি তাই না”
“দেখেছো,ফেলে রেখে যাওয়ার কথাটাও কিন্তু তুমিই আগে বলেছো।অথচ আমি সেসব কিছুই ভাবিনি। কিন্তু আমার মনটা কোন কারনে উতলা হয়ে আছে।”

“তোমার শরীর খারাপ। শরীর খারাপ থাকলে মন ও খারাপ থাকে, বিষন্ন থাকে।আমি বুঝি এসব। তুমি বাড়ি ফিরে যাও।আর আমি না ফেরা পর্যন্ত সাবধানে থাকবে।আর ঐ ধলা বিলাই এর থেকে দূরে থাকবে।”
“তুমি কোথায় যাচ্ছ আমি জানি না। সেখানে অন্য কোন মেয়ের সাথে তুমি ঢলাঢলি করবে না, তাঁর কি নিশ্চয়তা আছে!” ফারদিনা মুখ ভেংচে অন্যদিকে ঘুরে তাকাল। সুফিয়ান ফারদিনাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল “তুমি ব্যতীত অন্য কোন মেয়ের দিকে ভুলেও আমার চোখ পড়লে সে চোখ নষ্ট হয়ে যাক।পচে যাক।আমি তুমি ব্যতীত অন্য কাউকে ভাবতে পারি না মেয়ে।- তুমিই আমার সে-ই অপূর্ণ তৃপ্তি যে, তৃপ্তি তুমি ব্যতীত অন্য কেউ কোনদিন পূর্ণ করতে পারবে না।-”

নৌকার মাঝি সুফিয়ান আবার ডাকল। ‘ও ভাই,দেরি হইয়া যাইতেছে,বউ রাইখা যাইতে কেউর ভালো লাগে না।আপনারও লাগতেছে না বুঝতাছি।অহন আহেন।ফিরা আইয়া কথা কইবেন
সুফিয়ান ফারদিনার দিকে তাকিয়ে বলল “আসছি। শিগগিরই ফিরে আসব।”
“ফিরে আসবে তো?
“না আসলে তুমি খুঁজি নিও।’

The Silent Manor part 35

‘তুমি ফিরে আসতে আসতে আমি যেন জগত ছেড়ে না যাই।’ সুফিয়ান ফারদিনার দিকে শুধু হা হয়ে তাকিয়ে রইল। কিছু বলল না।চলে গেল নৌকার দিকে।মাঝি হাত বাড়ালে সুফিয়ান তাঁর হাত ধরে উঠে পড়ে নৌকায়।মাঝি দাড় টেনে ধীরে ধীরে নদীর মাঝে চলে যায়।ফারদিনা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। তাঁর দু চোখ জলে ভরপুর হয়ে গেল। ঝিলমিল বলল “সুফিয়ান চইলা গেছে।আর ফিরা আইবো না দেখিস।

The Silent Manor part 37

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here