ধূসর রংধনু ৩ শেষ পর্ব 

ধূসর রংধনু ৩ শেষ পর্ব 
মাহিরা ইসলাম মাহী

আশাদের দোতালা বাড়ির মেইনডোরে কলিংবেজে চলেছে।থামাথামির নাম গন্ধ নেই।
আশার মনে হচ্ছে ওপাশের মানুষটি পন করেছে তাদের সদ্য লাগালো কলিংবেলটা ভাঙার।
এই রাত বিরাতে আবার কে এলো।
বিরক্ত মুখে মাথায় ঘোমটা তুলে দরজা খুলে দিলো সে।
দরজার সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে দেখে হতবাক নয়নে চেয়ে রইলো। হৃদগহীনের লুকায়িত অশ্রুগুলো হুট করে এসেই হানা দিলো তার চক্ষু কোটরে।চোখগুলো আজকাল এত্ত নিষ্ঠুর হয়েছে না।মনের বারণ, মস্তিষ্কের বারণ শুনতেই চায় না।
সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন পুরুষটি ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ কেমন আছিস রে পাখির বাসা?”
আশা ছলছল চোখে নির্নিমেষ তাকিয়েই রইলো পুরুষটির পানে।

“নিচে নাম।”
“ আশ্চর্য এই রাতের বেলা আমি নিচে নামবো কেন রে গুন্ডা।আর তুই আমায় আদেশ করার কে শুনি।”
নীলাদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ থাপড়াবো নিচে নাম।”
“ নামবো না।নামবো না।কি করবি শুনি?”
“ আমি উঠে আসবো? তোর প্রেমিক কিন্তু ভালো চোখে দেখবে না।”
“ কথায় কথায় এত প্রেমিক প্রেমিক করবি না।অসহ্য। প্রেমিক না হাঁদারাম। “
নীলাদ্র ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ সবাই তো আর তোর ভাইয়ের মতন চতুর নয়।”
“ হ্যাঁ সেই।সবাই তো আর তোর হুপিংকাশির মতন বোকা নয়।”
“ তুই আসবি নাকি আমি আসবো? শেষবার বলছি।”
কথায় হেরে অগত্ত্যা আর উপায় না পেয়ে নাওমী বাধ্য হলো নিচে নামতে।
যেই না একটু সে চিঠিতে ভালো বলেছে ওমনি বাইক ছুটিয়ে ঢ্যাংঢ্যাং করে লম্বা ঠ্যাং দুটো নিয়ে হাজির হয়েছে তার আস্তানায় গুন্ডাটা।
কই এত দিন তো আসে নি। যেই একটু ভালো বলেছি ওমনি না? ওমনি পাখনা গজিয়ে গেছে।
নাওমী নিচে নেমে আসতেই নিলাদ্র চট করে তার দিকে দুটো চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম এগিয়ে দিলো।
নাওমী নিজের হাতদুটো বুকের কাছে বেঁধে মুখ গুড়িয়ে ভেঙচি কেটে বলল,

“ আমি আইসক্রিম খাইনা।হুহ।যত্তসব আদিখ্যেতা। সর তো। যা বলার দ্রুত বল। আমি ঘুমাবোওওওও।”
নীলাদ্র দাঁত কেলি হাসলো।
একটা সে ছিঁড়ে খেতেও শুরু করলো
নাওমী রাগে ফুঁসতে লাগলো।
তার জন্য এনে এখন নিজে খাওয়া হচ্ছে? খাওয়াচ্ছে সে ভালো করে।
সে চট করে নীলাদ্র’র হাত থেকেই দুটোই কেঁড়ে নিলো।
“ আমার জন্য এনে তুই খাবি সাহসটা পেলি কোথায় রে গুন্ডা? হাড়গোড় ভেঙে রেখে দেব না একদম।”
নীলাদ্র মুগ্ধ চোখে বোনের আইসক্রিম খাওয়ার পানে চেয়ে।

“ হ্যাপি বার্থডে বুনু।”
নাওমী চমকে চাইলো।
এতক্ষণের কান্না’রা তার গলায় দলা পাকিয়ে আসলো।
নীলাদ্র’র বুকে কিলঘুসি মেরে হাওমাও করে কেঁদে উঠলো সে।
“ চাই না তোর উইস।যা সর।আমার থেকে সর। একদব ছুবি না। তুই আমার কেউ না।”
নীলাদ্র’র অভিমানী বোনের সবটুকু অভিমান আজ বৃষ্টি হয়ে ঝরছে। তাও ভালো বৃষ্টি তো দুঃখের নয় এ বৃষ্টি অদ্ভুত আনন্দের।
নীলাদ্র সরলো না বরং
বোনকে বুকে আগলে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“ এভাবে বোকার মত কাঁদছিস কেন? আমার সন্ধ্যাতারা না ভীষণ শক্ত। এভাবে ভ্যাত ভ্যাত করে কাঁদে নাকি সে আজকাল?”
“ হ্যাঁ কাঁদে তাতে তোর কি? শুধু ভ্যাত ভ্যাত কেন।ভ্যা ভ্যা, ক্যা ক্যা, পুপু,চুচু সব ভাবে কাঁদবো তাতে তোর কি।”
নীলাদ্র শব্দ করে হাসলো।
নাওমী রাগী চোখে চাইলো।
“ গুন্ডাআআ..”
“ চিৎকার করিস না বুড়ি তোর প্রেমিক জেনে যাবে।”
“উফফ তুই একটা অসহ্য।”
ভাই বোনের আদুরে স্নেহ যত্নের মাঝে নীলাদ্র’র ফোন বাজছে।
এতদিন পর অসময়ে কাশফির ফোন দেখে সে অবাক হলো। সঙ্গে চকচক করে উঠলো যুবকের চোখদুটো।কি হলো হঠাৎ মেয়েটার মুড চেঞ্জ? হোয়াট এ্যা কোয়েন্সিডেন্স।
ফোনের ওপাশ থেকে কাশফির রাগী স্বরে নীলাদ্র হকচকিয়ে গেল,

“ নীল সমুদ্র আপনার এত বড় সাহস হয় কি করে।”
“ মানে?”
“ মানে মানে করছেন কেন এখন? আমি তো বলেছিলাম আমার সময় চাই। তার পরেও আঙ্কেল কে এখন কেন পাঠিয়েছেন বলুন।”
“ আঙ্কেল কে পাঠিয়েছি মানে?”
নীলাদ্র হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
নাওমী চোখ ছোট ছোট করে বলল
‘কি হয়েছে রে গুন্ডা? “
নীলাদ্র ওকে ইশারায় থামালো।
“ আপনার বাবা এই মুহুর্তে আমাদের ড্রয়িংরুমে বসে আছে। মাই গডড ভাবতে পারছেন। আমার তো খাঁচা ছেড়ে আত্তাটাই বেরিয়ে গেছে।”
“ হোয়াটটট?”

“ একদম চিৎকার করবেননা।আমার সব শেষ। বাবা এখন আমার দিকে কিভাবে তাকাচ্ছে জানেন?”
কাশফি ফোন কেটে দিলো।
নীলাদ্র মাথায় হাত দিয়ে আহাম্মক বনে বসে পড়লো।
“ কি হয়েছে বলবি তো।”
“ মি.আরাধ্য ওরফে তোর বাপ কাশফিদের বাড়িতে।”
“ কিইই।”
“ চিৎকার করিস না তো বুড়ি মাথা ধরেছে।”
“ আর এই তুই আমার বাপ বললি কেন শুধু? তোর বাপ নয় সে? অসহ্য।”
নীলাদ্র আরাধ্য কে ফোন করছে ক্রমাগত কিন্তু সে ফোন তুলছে না।
নাওমী নীলাদ্র’র হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বলল,

“ এই তুই উঠতো।গেছে ভালো হয়েছে।আরে তোর জন্য আঙ্কেল কে পটানোরও তো ব্যাপার-স্যাপার আছে নাকি?”
“ তবে চিন্তা করতে নিষেধ করছিস? “
“ অবশ্যই।তুই কান আগা তোকে আমি ডেকে ছিলাম কেন? সেটা শোন গাঁধা।”
নাওমী নীলাদ্র’র কানে কানে ফিসফিস করে কিছু বলল।নীলাদ্র অবাক চোখে বোনের দিকে চেয়ে রইলো। একেই বুঝি বলে রক্তের টান।
“ তুই কিভাবে সবাই কে রাজি করাবি আমি তা জানিনা গুন্ডা।কিন্তু সময় মত আমি সবাইকে পাশে চাই।”
নীলাদ্র হেসে বলল,
“ কাজ হয়ে যাবে।”

কাশফিদের ড্রয়িংরুমের সিঙ্গেল সোফাটায় বসে আরাধ্য কিছু ভাবছে।
তার জীবনের মতো সোফাটাও বুঝি সিঙ্গেল।
মনসুর কাচুমাচু মুখ করে তার স্যারের পাশে দাঁড়িয়ে। ইশশ এবাড়ির মানুষগুলো কত নিষ্ঠুর।
একে তো তার স্যারকে আঁধঘন্টা যাবত ভেতরে এনে বসিয়ে রেখেছে। কিছু খেতে তো দিলোই না তার ওপর কতবড় অকৃতজ্ঞ তাকে দাঁড় করিয়েই রেখেছে।একটু বসতে পর্যন্ত দিলো না।
মনসুরের ভাবনার মাঝেই সুজন ঠাস করে এসে আরাধ্য’র সামনে বসলো।
তীর্যক কন্ঠ বলল,

“ অসভ্যটা তবে তোমার ছেলে?”
আরাধ্য হেসে মাথা নাড়লো।
সুজন চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।
“ ছেলেকে তো নিজের মতোই অভদ্র বানিয়েছ।অবশ্য তোমার মত বলছি কেন। তোমার চাইতেও জঘন্য অসভ্য।গুরুজনকে সম্মান করতে জানেনা। আবার মুখে মুখে তর্ক করে। সাহসটা কত।
তোমার কি মনে হয় ওমন ছেলের হাতে আমি আমার মেয়েকে তুলে দেব।”
“ কিন্তু স্যার আমি কখন বললাম আমি আমার ছেলের সমন্ধ নিয়ে এসেছি?”
সুজন হকচকিয়ে চাইলো।
মনসুর স্যারের হেয়ালী কথায় এবারে সস্তি পেল।
যাক তার স্যার নিজের ফর্মে ফিরে এসেছে।তার তো স্যারকে এমন দুঃখিত হতে দেখে জান-ই বের হয়ে যাচ্ছিলো।ইশশ কেমন করে নিজের মুখের কথা ঘুড়িয়ে নিচ্ছে দেখ।

“ মানে? কি বলতে চাইছো?”
“ বলতে চাইছি না স্যার, বলছি। আমি তো বলিনি আমার ছেলের বিয়ে আপনার মেয়ের সঙ্গে দেবার জন্য কথা বলতে এসেছি।”
সুজন হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো। এই বোকা ছেলেটা এত চালাক হলো কবে থেকে।
“ জীবনের পরিক্রমায় অনেক কিছুই বদলে যায় স্যার।বলতে পারেন বদলাতে হয়।”
“ তাহলে কেন এসেছো?”
“ আমি তো আমার কাশফি মামনী কে দেখতে এসেছি। সেদিন শপিংমলে আর ভার্সিটি তে আপনার মেয়েটাকে আমার এতটা পছন্দ হলো। সেদিন তো হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লাম।ভাবলাম মৃত্যুর আগে মেয়েটাকে একবার চোখের দেখা দেখে যাই।মেয়েটার জন্য মনটা এত পুড়ছিলো। কই কাশফি মামনীকে ডাকুন।”
সুজন চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।আরাধ্য’র কথাগুলো তার অবিশ্বাস হলেও কিছু করার নেই।
ডাক দিলো মেয়েকে।

কাশফি বাবার ডাকে বাধ্য হয়ে দুরুদুরু বুকে এসে দাঁড়ালো। এতক্ষণ সে আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনছিলো।মনে তার উথাল-পাতাল ঢেউ বৈয়ে যাওয়া তূফান চলছে।
ইশশ সেদিন সে দোকানের মালিক কে কর্মচারী বানিয়ে বখশিশ দিলো।ছিঃ,ছিঃ,ছিঃ।এই মুখ এখন সে মানুষটাকে দেখাবে কিভাবে।
তারওপর বাবার কাছেই কিনা ছেলের বিচার দিলো।
ওও গড।কাশফি পারেনা এই মুহুর্তে পিঠে দুটো ডানা লাগিয়ে উড়াল দিয়ে দূর আকাশে পালায়।
কে জানতো এই মিষ্টি আঙ্কেলটাই ওমন তিতকুটে নীলসমুদ্রের বাবা।উফফ।
আরাধ্য ইশারা করতেই মনসুর আড়ালে তার হাতে কিছু একটু দিলো।
মুহুর্তে আরাধ্য চট করে উঠে দাঁড়িয়ে ডায়মন্ডের লাভ সেডের আংটিটা কাশফির অনামিকা আঙুলের পরিয়ে দিলো।
সুজন আহাম্মদ বনে চেয়ে বলল,

“ এটা কি হলো?”
আরাধ্য হেসে বলল,
“ আপনার মেয়ে সেদিন আমায় বখশিশ দিয়েছিল।আজ আমি তাকে উপহার দিলাম।”
“ কাশফি মা তুই ওকে বখশিশ দিয়েছিলি?”
কাশফি চোখ বন্ধ করে মাথা আরো নিচে নামিয়ে নিলো। উফফ।জীবনে এত লজ্জা কেন।
ইয়া খোদা তার মতো এমন পরিস্থিতিতে তুমি আর কাউকে ফেল না। কাউকো না। শুধু তার নীল সমুদ্র কে ফেলো।
সুজন স্পষ্ট বুঝতে পারলো আরাধ্য’র চালাকি।ব্যাটাছেলে ব্যবসা করে করে এত ধুরন্ধর হয়েছে নিশ্চয়ই।
আশা আজ নিস্তব্ধতা কে যেতে দেয় নি।

তার ওপর তাসফি পইপই করে বলে দিয়েছে।সাদাফের কাছ থেকে এক মুহুর্তের জন্য না সরতে।
যতদিন না বেচারা ছেলেটা সুস্থ হচ্ছে নিস্তব্ধতার তার পাশে থাকা চাই।
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। কেউ তো আর জানেনা এ ছেলে বেচারা নয়।আস্ত বদমাশ। এখন দেখ তার দিকে মুখ করে কেমন শয়তানের মত দাঁতগুলো বের করে হাসছে।অসহ্য।
আরাধ্য খালি হাতে আসেনি।এনেছে ব্যাগ ভরে ভরে মিষ্টি ফলমূল, এমনকি পান-সুপারি, সঙ্গে ইয়া বড় একটা কাতলামাছ ওও এনেছে।

আশা কিচেনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাগে গজগজ করছে।
নিস্তব্ধতা তার পাশে দাঁড়িয়ে সেই আদুরে মিছে রাগের পানে মুগ্ধ চোখে চেয়ে।
ইশশ কারো রাগও বুঝি এমন মিষ্টি আর আদুরে হয়। নিস্তব্ধতার এখুনি ইচ্ছে করছে সেটা টুপ করে খেয়ে ফেলতে।মিষ্টি রাগ খাওয়া যাবে তো? সে নাহয় অদৃশ্য ভঙ্গিতেই খেল।
কথা বার্তার মাঝেই নিস্তব্ধতা শাড়ির আঁচলে মাথায় ঘোমটা টেনে আশার সাজিয়ে দেওয়া চা মিষ্টি, ফল সব ট্রে ভর্তি করে এনে সকলের সামলে রাখলো।
মনসুরের দিকে চেয়ে বলল,

“ আরে আরে আঙ্কেল আপনি দাঁড়িয়ে কেন বসুন বসুন। নিন না নিন। চা নিন। মিষ্টি মুখ করুন।”
মনসুর আহত চোখে পিট পিট করে চেয়ে নিস্তব্ধতার দিকে তাকিয়ে রইলো।
তার এখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,
“ কে তো তুমি রমণী মেয়ে।আমায় দয়া দেখিয়া তুমি আমার জীবন ধন্য করিলা।আহাঃ এত সুখ সুখ যে আমি জীবনেও অনুভব করিনাই।শেষ পর্যন্ত কেউ বুঝি আমার মত হতভাগার মত মানুষটার কষ্ট দেখিতে পাইলো।আমার এ জীবন ধন্য হলো ওগো মেয়ে তোমার-ই তরে।”
মনসুর সঙ্গে সঙ্গে ওপর সোফায় বসে নিস্তব্ধতার চেয়ে বেদনা মিশ্রিত সুখের হাসি হাসলো।
নিস্তব্ধতাও বিনিময়ে মুচকি হাসলো।

আরাধ্য সামান্য কিছু মুখে দিলো।সর্বপ্রথম মুখে সে দিলো আশা’র ভাঁজা গরম গরম পাকোড়া। আরাধ্য নির্নিমেষ সে পাকোড়ার দিকে চেয়ে রইলো।মেয়েটা তবে সেই সামান্য কথাটা আজও মনে রেখেছে? একেই বলে বুঝি বন্ধুত্ব। এই সময় নিয়ে মেয়েটা এসব পাগলামো করেছে।কলেজে একদিন পাকোড়া ভেজে এনেছিলো আশা।আরাধ্য বলেছিল ‘ জীবনে যদি তার এই মুহুর্ত থেকে প্রিয় কোনো খাবার হয় তবে আশার হাতের পাকোড়া।’
পাকোড়া গালে নিয়ে আরাধ্য চোখ বন্ধ করে পুরনো সেই স্বাধ নেওয়ার চেষ্টা করলো।এই তো সেই স্বাদ। কিচ্ছু বদলায় নি, কিচ্ছু না। অথচ বোকা সে ভাবতো হয়তো সব বদলে গেছে।ফিকে হয়ে গেছে সব স্মৃতি।
কিন্তু সে আজ বুঝলো এত দ্রুত সব বদলানো যে মুখের সহজ কথা নয়। স্মৃতি ফুরোয় না বরং মরিচা ধরে হাত বটির নেয়, সেটাও বালি দিয়ে একটুখানি শান দিলেই পুনরায় কাজ চালানো যায় দারুণ ভাবে।
আরাধ্য ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেলো।
উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“ আজ তবে আসি স্যার অন্য কোনোদিন আবার সাক্ষাৎ হবে।”
আবার হেসে নিস্তব্ধতার দিকে চেয়ে বলল,
“ সাদাফ বাবার পছন্দ কিন্তু দারুণ স্যার। আশা করি আপনার মেয়ে আর আমার কাশফি মামনীর পছন্দ ও খারাপ হবে না নিশ্চয়ই। “
সুজন আরাধ্য’র সুক্ষ্ম খোঁচার ইশারায় কোনো জবাব দিলো না।
মনসুর তখনও গোগ্রাসে খেয়ে যাচ্ছে।
আরাধ্য রাগী চোখে চাইতেই সে মিষ্টি মুখে হরবর করে উঠে দাঁড়ালো। তার চাকরি শেষ হলে সব শেষ।খাবার পরেও খাওয়া যাবে।
আরাধ্য বেরিয়ে যাওয়ার মুহুর্তে পিছু ঘুরে চাইলো।আশাকে খুঁজতে চেষ্টা করলো পেলো না।
মেয়েটা এত অভিমানী।আজও তার জেদ কমেনি।
ওথচ আরাধ্য জানলোই না বন্ধুত্বরুপী তৃষ্ণার্থ দুটি চোখ আশা দরজার আড়াল থেকে তাক করে ছিলো আরাধ্য’র দিকেই।

মাহরিসার ফোন বাজছে।আদ্রিতের ফোন।
কিন্তু সে ধরছেনা।
মানুষটার ফোন না রিসিভ করে তার ভেতরে এক অদ্ভুত ধরনের আনন্দ কাজ করছে।
এতদিন ফোন রিসিভ করতে একটু খানি দেরী হলেই ভয়ে সিটিয়ে যেত সে। আর আজ?
এমন কিচ্ছুটি হচ্ছে না। বরং তার অদ্ভুত রকমের ভালো লাগছে। শুধু ভালো লাগছে না। তার নাচতে ইচ্ছে করছে এখন।
কারো দূর্বলতা যেনে কাউকে এভাবে, অপেক্ষা করিয়ে ইগনোর করেও মাঝে মাঝে এত আনন্দ পাওয়া যায় বুঝি?
এ আনন্দ সে আরো আগে কেন উপভোগ করেনি।কেন?

আজ পৌষ মাসের আঠারো তারিখ।
লোকে বলে কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ। সর্বনাশ আর পৌষ মাস। সর্বনাশের বিপরীত তো ভালো,তবে মানুষ কি পৌষ মাস দ্বারা মানুষের ভালো বুঝাতে চাচ্ছে?
আরাধ্য’র জন্য আজ কোন দিন কে জানে।
অবশ্য তার জন্য তো সব দিনই সমান।তার জীবনে মৃত্যু ব্যতীত এখন আর ভালো আর খারাপের কিছুই নেই।
নিজের শূন্যতায় খাঁ খাঁ করা বিশাল বাংলো বাড়িটায় ঢুকে আরাধ্য অবাক হয়ে গেল। কি আশ্চর্য কোনো লাইট জ্বলছে না কেন। চারিপাশটা এমন অন্ধকার কেন।
তাকে ফোন করে আসতে বলে মনসুরটা আবার কোথায় হারালো।

আরাধ্য’র ইদানীং বাড়িতে আসার প্রয়োজন পরে না। অফিস-ই তার বাড়ি সঙ্গে কর্মস্থল।
আজ মনসুর তাকে ফোন করে বলল একটা কেলেংকারী ঘটে গেছে।তাকে এই মুহুর্তে আসতে হবে বাড়িতে।
কিন্তু এখানে এসে তো দেখছে পরিস্থিতি ভয়ানক। পুরো বাড়িতে কোথাও আলোর ছিটে ফোঁটাও নেই।
এমনটা নয় সে কিছুতে ভয় পায় না। মনের ভুত কে ভয় পায় সে। ভীষণ ভয় পায়।
এই অন্ধকারের মাঝে দাঁড়িয়ে তার কপাল বেয়ে ঘাম দরদর করে পড়তে লাগলো।
টিস্যু কোথায় পাচ্ছে না। আর ফোন, ফোনটা? সেটাও তো খুঁজে পাচ্ছে না।কি মুসকিল।
এত কিছুর মাঝে হুট করে একের পর এক তার জীবনের সবচাইতে চমকিত, অভাবনীয়, বিস্ময়কর ঘটনা গুলো ঘটতে আরম্ভ করলো।
একে একে বাংলোর সবগুলো লাইট জ্বলে উঠলো।শুধু লাইট নয় নানান রঙের এলোমেলো ঝিলিমিলি লাইট।শুধু তাতেই থেমে রইলো না।
শত পদের ফুলের সমাহার তার উপর বৃষ্টি হয়ে ঝরতে লাগলো।
একই সঙ্গে ভেসে আসতে লাগলো একেরপর এক বাজি ফুটানো আর মিষ্টি মধুর কন্ঠের সেই সম্মোহনী এক একটি বাক্য,

“ হ্যাপি বার্থডে আরাধ্য “
“ হ্যাপি বার্থডে আরাধনা।”
“ হ্যাপি বার্থডে বাবা।”
“ হ্যাপি বার্থডে আঙ্কেল। “
মাথা উঁচু বহু কষ্টে আরাধ্য সামনে তাকালো।তার সামনে নিস্তব্ধ, তাসফি,সুজন,আসা, মাহীন, বাসন্তী থেকে শুরু করে তাদের সকল চ্যালা চামুন্ডা বিশেষ করে তার দুই চ্যালাচামুন্ডা দাঁড়িয়ে নীলাদ্র আর নাওমী।
মিনিট দুই আগেও আরাধ্য’র এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল সে নিঃস্ব,সে একা, সে হতভাগা,সে সর্বশান্ত।
কিন্তু এই মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে না। তারও একটা পরিবার আছে সবাই আছে তার সবাই। বন্ধ-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ছেলে মেয়ে সবাই এরাই যে তার বিশাল একটি পরিবার।
তবে সে একা হলো কোথায়। শুধুমাত্র এতগুলো বছর চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে ছিল সে।
আরাধ্য’র এখন সকলকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে।

“ আমি ভুল ছিলাম। সত্যিই আমি ভুল ছিলাম।
আমার জীবনেও ভালো হবার মতো ভালো এখনও কিছু অবশিষ্ট আছে।শুধু আমি কেন প্রত্যেক মানুষের জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালোর মতো ভালো হবার কিছু অবশ্যই থাকে।থাকতেই হবে।নয়তো জীবনে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধ-বান্ধব,ছেলে-মেয়ে এসবের কোনো দরকার-ই ছিল না।”
আশা এগিয়ে আসতে আসতে বলল,

“ এভাবে আর হাভাতের মত কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবি বলতো? দেখে তো মনে হচ্ছে সেই যে আমার বাড়ি থেকে বের হলি এরপর থেকে কতদিন ধরে খাবার দাবার খাস না।তোর এই লক্ষী ছেলেটাই তো এত সব মেনেজ করলো রে।একদম সোনার টুকরো ছেলে আমাদের। আর আমার পান্ডাটাকে দেখ হাত পা ভেঙে কেমন সটান দাঁড়িয়ে আছে।হতভাগা। শেখ শেখ।নীলাদ্র ছেলেটার শেখে তোরা শেখ কিভাবে বাবা-মা কে সারপ্রাইজ দিতে হয়। আজ পর্যন্ত কোনোদিন তো এভাবে আমাদের সারপ্রাইজ দিলি না।”

সুজন গরম চোখে নীলাদ্র’র দিকে চেয়ে।একদম খেয়ে ফেলা টাইপ চাউনি। সোনার টুকরো ছেলে না ছাঁই।আস্ত বদমাশ।কি এমন জাদুটোনা করে তার ওমন লক্ষীমন্ত বউটাকে হাত করলো অসভ্যটা কে জানে।
সাদাফ আহত মুখ করে ভাঙা হাত কোলে করে দাঁড়িয়ে রইলো।
মা এভাবে তাকে সকলের সামনে অপমান করতে পারলো।
নিস্তব্ধতা পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
“ হাস হাস আরো ভালো করে তোর ওই সবগুলো নোংরা দাঁত বের করে হাস।একবার বাড়ি চল তোর হাসা আমি হিমালয়ের বরফ ছুঁড়ে ছোটাবো।”
নিস্তব্ধতা দাঁত কেলানো হাসি মুহুর্তে চুপসে গেল।
রাগে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইলো।
ফিসফিস করে বলল,

“ মায়ের সামনে কিছু বলতে পারছি না, তুই ও শুধু একবার চলনা বাড়ি, চল। তোর ধমকের গুষ্টির আমি ষষ্ঠী করবো। তোর ভাঙা হাত যদি আমি পঙ্গু না করেছি রে সজনেডাঁটার বাচ্চা ।”
সাদাফ নিজের ভালো হাতটা দিয়ে নিস্তব্ধতার ডান হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।
মুহুর্তে নিস্তব্ধতা একদম শান্ত লক্ষীটি বাচ্চার মতো দাঁড়িয়ে গেল।ছেলেটার ছোঁয়া সে নিতেই পারেনা। ভিতরটা কেমন এক নিমিষেই ভেঙে গুঁড়িয়ে আসে। ইশশ।
বিশাল ড্রয়িংরুমের মাঝ খানে বিশাল একটি কেক।
কেক কাটার মুহুর্ত ক্রমশ আগত।ঠিক সেই মুহুর্তে দৌঁড়ে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে সৃজন চিৎকার করে বলল,
“ এইইই হ্যান্ডসআপ। কেউ এক পা ও নড়বে না। আমাকে আর আমার মেয়েকে রেখে কেক কাটা বের করছি তোমাদের।”

সকলে চোখ বড় বড় করে হাত উঁচু করে ফেলল সঙ্গে সঙ্গে। সৃজনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার বান্ধবী সৃজনীকে দেখতেই মাহরিসার চক্ষু চরকগাছ।সর্বনাশ।
আদ্রিত নিজেও এখানে সৃজনীকে দেখে খানিকটা বিব্রত হলো যতই হোক সৃজনী তার ছাত্রী।
অপরদিকে সৃজনী এখানে উপস্থিত মাহরিসাকে দেখে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো। ওও মাই গড পৃথিবীটা এত্ত ছোট কেন।কেন?
তারওপর মাহরিসার হাত চেপে ধরে রাখা হাতের মালিক আদ্রিতের পানে চেয়ে যেন তার মাথায় পুরো আকাশটাই ভেঙে পড়লো।
ধোঁকা! তাদের দুই বান্ধবীকে এত বড় ধোঁয়া দেওয়া হলো?
সৃজনীর ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে সে এখানে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসে।
কিন্তু তার কাঁদা হলো না। কিন্তু সুযোগ বুঝে ঘাপুস ঘুপুস মেরেও দিলো কয়েক ঘা মাহরিসাকে।অসভ্য মহিলা।

“ এই মারু সত্যি করে বলতো তোর আর স্যার তোদের মাঝে কিসের চক্কর চলছে?”
মাহরিসা মুখ কাচুমাচু করে চাইলো।
“ বয়ফেন্ড?”
মাহরিসা মাথা নিচু করে মাথা নাড়লো।
“ হাসবেন্ড -ওয়াইফ।”
সৃজনীর চিৎকারে মাহরিসা ওর মুখ চেপে ধরলো।
সৃজনী হা-হুতাশ করতে করতে বলল,

“ আজ আমার জায়গায় রোশনী থাকলে বুঝতিস মজা।তোর এসব চল-চাতুরী হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিতো। ইশশ।”
এরমাঝে আদ্রিত এসে আমতা আমতা করে বলল,
“ বলছিলাম সৃজনী তোমার ম্যাডামের সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।”
সৃজনী মাহরিসার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“ হায়য়য়!ওহহ হাউ রোমান্টিক রে স্যার। ক্লাসে দেখে তো বোঝাই যায় না। হাউ কিউট করে কথা বলে। ‘বলছিলাম সৃজনী’ ইশশ।”
মাহরিসা সৃজনীর হাত চেপে ধরে মাথা নেড়ে যেতে নিষেধ করলো।
সৃজনী হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে এমন একটা ভাব করলো যেন সে কিছু বোঝেই নি। যেতে যেতে বলল,

“ গুডলাক রে মারু যাই কেক কাটি।এনজয় ইউর’স টাইম জানু।”
মাহরিসা কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সেদিন ফোন না ধরার আনন্দ বুঝি এখন তার বৃথা যাবে সব।সব।
আদ্রিত মাহরিসার হাত ধরে হিসহিসিয়ে বলল,
“ ফোন ধরিস নি কেন? একদিন ভালো ব্যবহার করেছি বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস? কেটে রেখে দেব তোকে বেশি বাড়াবাড়ি করলে কথাটা মাথায় ঢোকা।”
মাহরিসা নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করলো।
“ কাম ডাউন মারু কাম ডাউন। এই মুহুর্তে তোর প্রথম প্রায়োরিটি আদ্রিতকে শান্ত রাখা।একটু মিষ্টি করে কথা বল দেখবি তোর ডাক্তার মহাশয়ের সমস্ত রাগ গলে জল হয়ে যাবে।পরে নাহয় আবার ঝগড়া করিস।”
মাহরিসা তাই করলো। আসলেই আদ্রিত মুহুর্তে শান্ত হয়ে গেল।
মাহরিসা নিজেকে বাহবা দিলো।
বাহ এত বুদ্ধি তোর মারু। এতকাল তবে কেন তুই বোকা ছিলিস কেন।নতুন নতুন চালাক হবার মজাই আলাদা।এমন নাটকের জন্য তো তাকে অস্কার দেওয়া উচিত। বাহ বাহ।
তাদের মাঝের কথা বার্তা এমন,
“ আদ্রিত ভাই। আমার না সেদিন ভীষন পেট ব্যথা ছিল।ফোন ধরার মত অবস্থায় আমি ছিলাম-ই না। এই দেখুন ঠিক পেটের এইখানটায় ব্যথা ছিল ।”
আদ্রিত নরম হলো।চিন্তিত তার কন্ঠস্বর,

“ এখনও ব্যথা আছে মেরিগোল্ড? ওষুধ খেয়েছিলি তো? আমি ওষুধ আনবো?”
“ না না এখন একটু কমেছে।আসুন না আসুন আমরা কেক কাটি।”
আদ্রিত হাসলো।
মাহরিসা তার প্লানে সাকসেসফুল।
সকলের উপস্থিতিতে সে বিশাল কেক কাটা হলো।
মুহুর্তে আরাধ্য’র নিরব নিস্তব্ধ বাংলো বাড়ি খুশি আর লাইটের আলোয় আলো আর সুখে ঝলমল করে উঠলো।
সুখ ঝলমলে বাংলো বাড়ি।
সর্নিধি একপাশে সাফওয়ানের হাত ধরে নিশ্চুপে বসে থেকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে আরাধ্য’র দিকে।তার মুখে না বলা বেদনা আনন্দ।

ইশশ ছেলেটা সেই আগের মতন হাসিখুশি আর নেই। দেখ কেমন চুপসে আছে।
এই যে কলেজ লাইফে সর্নিধি আরাধ্য’র দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতো।আর ছেলেটা ছিল মান্সাতে মজে।
তার মনে কি পুরনো প্রেম জাগ্রত হচ্ছে।
সর্নিধি নিজেকে সামলালো।না এমনটা হওয়া একদম-ই উচিত নয়। একদমি নয়।
কেক কাটার পর মুহুর্তে জাওয়াদ অদিতির পাশে এসে দাঁড়ালো। ফিসফিস করে বলল,
“ আপনার হাতটা ধরতে পারি মাই লিটল বার্ড?”
অদিতি লজ্জায় কুঁকড়ে গেল।
জাওয়াদ অদিতির অনুমতির অপেক্ষা করলো না।
চট করে তার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো ফিসফিস করে বলল,
“ ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে আপনাকে জাপ্টে ধরে একটা চুমু খাই মাই লাভ। আমাকে পাগল করার জন্য আজ আপনাকে কালো শাড়ি পরিধান করতে বলেছিলো কে বলুন তো?
অদিতি লজ্জায় বলতে চাইলো,

“ কেউ না।আমিই নিজে থেকে পরেছি আপনাকে পাগল করতে জাওয়াদ।”
বলা হলো না।
তাসফি চিৎকার করে বলল,
“ এই আরাধনা ওদিকে দাঁড়িয়ে করছিস টা কি। আয় এদিকে আয় না। মশা পরে তাড়াস।
আহ হা ডাক্তার সাহেব আপনারা ওখানে দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন।কেক পুরোটা শেষ করার আগে একটা ফ্যামিলি ফটো তুলে নেই। কারো কোনো কিছুতে ধ্যান নেই।”
আরাধ্য চমকে উঠলো।এই তো বন্ধত্বের সেই মধুর ডাক। “ আরাধনা”। আরাধ্য’র মুখে হাসি ফুটলো।
নিস্তব্ধ আদ্রিতের দিকে না চেয়ে বলল,
“ এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? বউমা কে নিয়ে এসো।তোমার আর ভাই বোনকে ডাক দাও। দামড়া ছেলে মায়ের একটা কথা যদি শোনে।”
সুজন নীলাদ্র কে ধমকে বলল,

“কি এভাবে হাত পা দু দিকে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন? অভদ্র ছেলে ভদ্রতা শিখো নি। জড়িয়ে ধরো বাবাকে। ধর জড়িয়ে ধর। অসভ্য। কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই।”
কাশফি হতবাক চোখে বাবার এক অন্য রকমের রুপের পানে চেয়ে।
নীবিড় নাওমীর দিক আড় চোখে চেয়ে তীর্যক কন্ঠে বলল,
“ ভাইয়ের পরিচয় তো লুকিয়েছোই সে সঙ্গে নিজের পরিচয়ও। এখন এই বিশেষ মুহুর্তেও নিজের বাবাকে দশ হাত দুরে সরিয়ে রাখবে নাকি?”
নাওমী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ দেখুন মহিষের বাচ্চা আপনি একদম বেশি বুঝবেন না।”

নীবিড় দাঁত কেলিয়ে হাসলো।নাওমী স্পষ্ট সে চোখে শয়তানী রহস্যের খেলা করতে দেখলো।
কিছু বুঝে উঠার আগে নীবিড় চট করে নাওমী ধাক্কা দিলো।
তাল সামলাতে না পেরে হিমসিম খেয়ে ভয়ার্তমুখ করে নাওমী আরাধ্য সহ নীলাদ্রকে জাপ্টে ধরে দাঁড়ালো।
ঠিক সেই মুহুর্তে ক্যামেরায় ক্লিক পড়লো।
ক্যামেরা ম্যানের চোখে পানি নিয়ে ছলছল চোখে নিজের তোলা ছবি খানার দিকে চেয়ে রইলো।
এত সুখকর বেদনা মিশ্রিত অপরূপ সৌন্দর্য ধারী ফটো বোধহয় সে আগে কখনো তুলে নি। কখনো না।
প্রত্যেক ছেলে মেয়ের তাদের বাবা-মাকে ধরিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে।
কোনো ফটোতেও বুঝি এমন মায়ার ছায়া পরতে পারে?

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৬৩ (২)

রংধনুদের এমন সুখ ঝলমলে আলো তাদের সারাজীবনে থাকবে তো? পারবে তো এই সুখ চিরস্থায়ী করতে?
নতুন কোনো বিপদ এসে তাদের মাঝে হানা দেবে না তো?
জীবনের সব পথটুকু কি সরলরেখার ন্যায় এতই সরল?
রংধনুদের মাঝে রঙিন কে গ্রাস করে পুনরায় ধূসর আলো ছড়িয়ে পড়বেনা তার কি গ্যারান্টি?

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here