mad for you part 1
তানিয়া খাতুন
শহরের সবচেয়ে -নামকরা ক্লাব।
ক্রিশ খান মদের নেশায় চুর হয়ে, একটার পর একটা মেয়ের সঙ্গে চুম্বনে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে।
ডান্স ফ্লোরে চলেছে চরম হইচই, ছেলে মেয়েরা নাচছে, সঙ্গীতের তালে দুলছে—আর এই ভিড়ের মাঝে সবচেয়ে “আকর্ষণীয় ব্যক্তি হলেন ক্রিশ খান।
সে ঘুরে একেকবার একেকজন মেয়েৱ গায়ে হাত রেখে মিশে যাচ্ছে তাদেৱ ঠোঁটেৱ সঙ্গে।
তার হাতে ড্রিঙ্কের গ্লাস, কখনো এক মেয়েৱ ঠোঁটে কিস কৱছে, মুখ ফিরিয়ে আবার পাশের মেয়েকে কিস কৱছে—মনে হচ্ছে সে আজ মনেৱ মতো মেয়ে পাচ্ছে না।
যদিও মেয়েগুলো বিরক্ত নয়, বরং উপভোগ করছে, কারণ এই ক্রিশ খান কিন্তু দেশের শিক্ষামন্ত্রীর এ্কটা মাএ বখাটে ছেলে।
উচ্চতা ছ’ফুট লম্বা-পেশিবহুল শরীর, জিমে ঘাম ঝরানো বলিষ্ঠ গঠন।
রঙ শ্যামলা, কিন্তু মুখে এক অদ্ভুত আকর্ষণ—তার হাসিটাই মেয়েদের পাগল করে দেয়।
লোকেরা বলে, তার সেই বাঁকা হাসি যেকোনো মেয়েকে সিডিউস করার মতো যথেষ্ট।
চুলগুলো লম্বা, কপাল পর্যন্ত পড়ে থাকে, তাতেই তাকে আরও মারাত্মক লাগে।
তার জীবনের দুইটা নেশা—একটা মদ, আরেকটা মেয়ে।
প্রতিদিন নতুন কোনো মেয়ে দরকার তার, না হলে ড্রাগস নিতে হয় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে।
চলুন, আবার গল্পে ফিরে যাই—
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রায় দশজন মেয়েকে চুমু খাওয়ার পর ক্রিশের শিকাৱি চোখ থামে একটা মেয়ের উপর।
শিকারির মতো চোখে তাকিয়ে, হাতে থাকা গ্লাসটা শেষ করে মুখটা মুছে মেয়েটাকে ইশারা করে।
মেয়েটা হেঁসে় সরে যায় পাশে, আর ক্রিশ সে দিকে এগোয় ঠিক তখনই সামনে আসে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমান।
ক্রিশ: “রুম নম্বর বল, first, I am out of control”
আমান: “রুম বুক করতে পারিনি, তোৱ সব কার্ড ব্লাংঙ্ক দেখাচ্ছে!
মনে হয় তোর বাপ সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।”
ক্রিশ বাঁকা হেঁসে বলে, “দিস ইজ নট ফেয়ার, মিস্টার সরিফুল খান!”
“Fuck your money”
এই বলে পাশে থাকা এক মেয়েটা কে ইশারা করে ধীরে ধীরে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটে।
আমান ভয় পায়—কারণ ক্রিশ রেগে গেলে ভয়ানক হয়ে যায়। সব ভাঙচুৱ তো কৱবেই তাৱ সাথে নিজেৱও ক্ষতি কৱবে।
তাই পিছু পিছু যায়, কিন্তু ক্রিশ ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই দরজাটা বন্ধ করে দেয়।
আমান দৌড়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়, ভেতর থেকে জোরে আওয়াজ আসে।
আমান চেঁচিয়ে বলে, “ভাই, কী করছিস? নিজের ক্ষতি করিস না, বাইরে আয়!”
ভেতর থেকে আরও জোরে আওয়াজ আসে।
সে দরজায় ঠকঠক করে ধাক্কা দিতে থাকে প্রায় দশ মিনিট ধরে।
শেষে দরজা খুলে ক্রিশ বেরিয়ে আসে, প্যান্টের চেইন লাগাতে লাগাতে।
আমান অবাক হয়ে তাকায়।
ক্রিশ: “দশ মিনিটে কী হয় রে স্টুপিড, একটু শান্তি তে করতেও দিবি না?”
আমান: “না মানে তুই… ওয়াশরুমে…”
ঠিক তখনই ভেতর থেকে এক লম্বা, ফর্সা মেয়ে বেরিয়ে আসে—ছোট ড্রেস পরা, চুল এলোমেলো, মুখে ক্লান্তির ছাপ বোঝাই যাচ্ছে তাৱ অবস্থা খাৱাপ।
ক্রিশ মেয়েটার দিকে না তাকিয়ে বলে, “ওকে ওর অ্যামাউন্টটা দিয়ে দে, ডাক্তার দেখানোৱ।”
এই বলে সে দাঁড়ায় না—চলে যায় পাশ কাটিয়ে।
আমান তাড়াতাড়ি পকেট থেকে টাকা বের করে মেয়েটার হাতে দেয়, তারপর ক্রিশের পেছনে দৌড়ায়।
ক্রিশ গাড়িতে বসতেই আমান দৌড়ে এসে ড্ৰাইভাৱেৱ সিটে বসে পড়ে।
আমান: “ভাই, বলি কী, রোজ রোজ এসব করে কী পাস? এখন তো এসব বন্ধ কর।”
ক্রিশ লালচে চোখে তাকায়, এমন দৃষ্টি যেন কথা বললেই বিস্ফোরণ ঘটবে।
আমান গলা শুকিয়ে ঢোক গিলে ফেলে, তারপর বলে—
“মানে, তুই যেভাবে মেয়েগুলোর অবস্থা করিস, প্রায়ই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
আজও দশ মিনিটে কী করলি, যে মেয়েটা…”
ক্রিশ: “গাড়ি চালাবি নাকি লাত মেরে গাড়ি থেকে ফেলে দেব?”
আমান: “না না ভাই, আমি চালাচ্ছি।”
সরিফুল খান তার স্ত্রী সঙ্গে রুমে বসে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
ঠিক তখনই তাদের রুমের দরজায় জোরে জোরে কেউ ধাক্কাতে থাকে।
সরিফুল সাহেব নিশ্চিত—এটা তার গুনধর পুত্র ছাড়া কেউ নয়, কারণ এটা রোজের রুটিন।
ক্রিশ মদ খেয়ে আসে, তারপর তাদের রুমে এসে কটু কথা শুনিয়ে যায়।
পাশ থেকে তাঁর স্ত্রী বললেন,
“বলছি কি, দরজা খুলো না, ছেড়ে দাও—ও বিরক্ত হয়ে চলে যাবে।
রোজের ওই একই ঝামেলা, ভালো লাগে না আর।”
সরিফুলঃ “ও আমার ছেলে রুহানা, আমি ওকে খুব ভালো করে চিনি।
ও যা ঘাড় তেড়া, আমি দরজা না খোলা পর্যন্ত ও এখান থেকে যাবে না।”
সরিফুল সাহেব দরজা খুলতেই ক্রিশ রুমে ঢুকে তার বাবার পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে।
ক্রিশ: “এই সালা, তুই কার্ড ব্লাংঙ্ক করে দিয়েছিস কেন?”
সরিফুল: “তো কি করব? আমার সব টাকা কি তোমার ওই মদ আর নেশার পেছনে ঢেলে দেব?”
ক্রিশ জোরে জোরে হেসে একটু হেলে দাঁড়িয়ে বলে,
“সিরিয়াসলি! এগুলো তো তোর টাকা নয়, এগুলো আমার মায়ের টাকা।
এই বাড়ি, গাড়ি, প্রপার্টি—সব আমার মায়ের।
তুই তো সালা মন্ত্রী হয়ে কালো টাকা ইনকাম করিস, তোর টাকায় আমি ক্রিশ খান মুতি বুঝলি?”
সরিফুল সাহেবের স্ত্রী এগিয়ে এসে বললেন,
“ক্রিশ বাবা, যাও রুমে যাও, অনেক রাত হয়েছে।”
ক্রিশ গর্জে উঠল,
“এই নোংরা মেয়ে, ছেলে একদম আমার সঙ্গে পিরিত দেখাতে আসবি না।
তোর মতো মেয়েদের আমি ভালো করে চিনি!
সালা, তোর জন্যই আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে!
তোকেই তো আমি…”
সরিফুল সাহেব তাড়াতাড়ি তার স্ত্রীকে রুমে ঢুকিয়ে ক্রিশের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলেন।
ক্রিশ রাগে দরজায় দুটো লাথি মারল—
“হা হা, যা যা, এমনিতেই তোদের মুখ দেখতেই আমার ইচ্ছে করে না!
আমার মরা মাকে কথা দিয়েছিলাম, এই বাড়িতেই থাকব, তোর পাশে থাকব—তাই আছি নয়তো বাল এই ক্রিশ খানের অনেক dimand।”
তারপর সে নিচু গলায় গুনগুন করে বলতে লাগল,
“ও নেশা মেঁ হাম নেহি, এ সামা নেশিলা হ্যায়…”
রুহি ডিনার করে রুমে ঢুকতেই দেখে, তার ফোনটা বাজছে।
সে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে বিছানার ওপর রাখা ফোনটা তুলে নিল।
রুহি: “হ্যাঁ, বল।”
সিমরান: “তুই কোন গর্তে থাকিস রে! তোকে দশবার কল করলাম, তারপর তুই কল ধরলি!”
রুহি: “সরি বোন, আমি নিচে ছিলাম, তাই ধরতে পারিনি।”
সিমরান: “আমি খুব এক্সাইটেড রে! কাল কলেজে যাব—নতুন জায়গা, নতুন মানুষ!”
রুহি: “হুম, আমরাও দু’জন একই জায়গায় আছি, এটাই অনেক এখন ফোনটা রাখ।
কাল সকালে তাড়াতাড়ি আসিস।”
সিমরান: “হাহা, ঠিক আছে! কাল সকালে কল দেব, রাখি।”
রুহি ফোনটা রাখতেই তার আব্বু রুমে ঢুকলেন।
আব্বুঃ “কি রে মা, ঘুমাবি না? কাল তো নতুন কলেজে যাবি, লাগেজ গুছিয়ে নিয়েছিস তো।”
রুহি হেসে বলল, “হ্যাঁ আব্বু, সব কাজ শেষ এই তো—এখন ঘুমাতে যাচ্ছি।”
আব্বু: “মন দিয়ে ক্লাস করবি, আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবি।
কলেজটা যেমন নামকরা, তেমনই সেখানে র্যাগিংও হয়—বুঝলি?”
রুহি: “তুমি চিন্তা করো না, আব্বু। আমি এসব থেকে অনেক দূরে থাকব।”
আব্বু: “আচ্ছা, ঘুমা তাহলে।
আমি কাল ভোরবেলা বেরিয়ে যাবো অফিসেৱ,কাজে তাই আর দেখা হবে না।”
রুহি মাথা নেড়ে মৃদু হাসল।
তার চোখে নতুন কলেজের উচ্ছ্বাস, আর মনের গভীরে হালকা এক টান—
অজানার পথে প্রথম পা রাখার আগের রাতটা, যেখানে স্বপ্ন আর ভয় একসঙ্গে খেলা করে।
চলুন এখন রুহির ব্যাপারে কিছু জেনেনি।
রুহি তার বাবা–মায়ের একমাত্র মেয়ে।
তার একটা ছোট ভাই আছে, বয়স মাত্র বারো।
ছেলেটা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে, তাই বাড়িতে তাকে খুব কমই দেখা যায়।
রুহি পড়াশোনায় দারুণ — বর্তমানে বাংলা অনার্সে ভর্তি হয়েছে।
সে শান্ত, মার্জিত ও ভীষণ ভদ্র মেয়ে।
বেশি কথা বলে না, বন্ধুও তেমন নেই।
মারামারি, গোলমাল বা ঝামেলা — এসবের নাম শুনলেই মুখ ফিরিয়ে নেয় সে।
ছেলেদেৱ থেকে দশ হাত দূরে থাকে সে।
নতুন কলেজে ভর্তির পর থেকেই রুহির মধ্যে একরকম নতুন উদ্দীপনা কাজ করছে।
আর মজার ব্যাপার হলো, তার একমাএ কাছেৱ বন্ধু সিমরানও একই কলেজে ভর্তি হয়েছে।
দু’জনেরই যেন নতুন জীবনের শুরু একসাথে।
কাল সকালেই তারা হোস্টেলে উঠবে।
কারণ, বাড়ি থেকে প্রতিদিন কলেজে অনেকটাই দুৱত্বে যাতায়াত করলে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাবে — রুহির কাছে পড়াশোনাই সবকিছু, সে এক মুহূর্তও নষ্ট করতে চায় না।
তাই বাবা-মায়ের পরামর্শে সব ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছে সে।
নতুন কলেজ, নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ — আর রুহির মনের ভেতর কেমন এক অজানা উত্তেজনা। জানে না ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে, তবু তার চোখে এখন একরাশ স্বপ্নের ঝিলিক।
