mad for you part 4
তানিয়া খাতুন
রুহি আর সিমরন ক্লাসে বসে আছে।
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাস শুরু হবে।
পুরো ক্লাস ভর্তি ষ্টুডেণ্ট— কেউ বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ছে, আবার কেউ বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠেছে।
রুহি সিমৱানের দিকে তাকিয়ে বলে,
রুহি: “কি রে, সকাল থেকে মুখটা এমন শুকনো করে রেখেছিস কেন?”
সিমৱান: “আরে… একটা বড়ো ভুল হয়ে গেছে।”
রুহি: “ভুল মানে? কী ভুল করেছিস?”
সিমৱান: “শোন, কিন্তু রাগ করবি না তো?”
রুহি: “না না, বল তাড়াতাড়ি!”
সিমৱান নিচু গলায় বলে,
“কাল তোর দেওয়া চকলেট বক্সে আমি একটা লাভ লেটার ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম… ক্ৰিশের জন্য।”
রুহি: “কীইইইইইইইইইই?!”
রুহি এত জোরে চিৎকার করে ওঠে যে আশেপাশের সবাই ঘুরে তাকায় তাদেৱ দিকে।
সিমৱান: “আরেএএ চুপ! আস্তে বল!”
রুহি মুখ ঢেকে ফিসফিসিয়ে বলে,
রুহি: “তুই কি পাগল হয়েছিস? যদি ওই ক্ৰিশ ভাই রেগে যায়, তোর কপালে দুঁঃখ নাচছে!”
সিমরান: “শোন তো, আসল কাণ্ডটা— আমি চিঠিতে লিখেছিলাম ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’।
কিন্তু শেষে নিজের নামটা লিখতে ভুলে গেছি! এখন ভয় পাচ্ছি, ক্ৰিশ ভেবে বসবে— চিঠিটা তুই লিখেছিস!”
রুহি: “হায় আল্লাহ! তুই এমন পাগলামি করলি কেন? আগে আমায় বললি না কেন?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ঠিক তখনই দরজাটা খুলে যায়।
ক্লাসের স্যার ঢুকে পড়েন।
সবাই একসাথে উঠে দাঁড়ায়— রুহি আর সিমৱানও চুপচাপ উঠে দাঁড়ায়।
স্যার বললেন, “ঠিক আছে, সবাই বসো।”
আর ক্লাসে নেমে আসে নিস্তব্ধতা।
ঠিক তখনই দরজা দিয়ে
ভেতরে ঢোকে ক্ৰিশ, পেছনে আমান, রুদ্র আর রোহিম।
স্যার ক্ৰিশকে দেখে একটু থমকে যান।
স্যার: “তুমি এখন এখানে? কোনো দরকার বাবা?”
ক্ৰিশ কিছু না বলে ক্লাসের ভেতরে ঢোকে,
চারপাশে তাকায়, তার দৃষ্টি যেন কাউকে খুঁজছে।
সবাই নিঃশব্দ—
রুহি আর সিমৱান তো ভয়ে একদম কাঠ হয়ে গেছে।
মনে হচ্ছে, এখনই বুঝি ক্ৰিশ এসে তাদেৱ চড় মেরে দেবে!
হঠাৎ ক্ৰিশ থেমে যায়, ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি টেনে বলে,
ক্ৰিশ: “Miss লেদা মার্কা… please come first.”
রুহির বুক ধড়ফড় করে ওঠে।
ক্লাসের সবাই চুপচাপ চারদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে — এই Miss লেদা মার্কা আবার কে!
আৱ ক্ৰিশেৱ সাথেই বা কী সম্পক্য।
ক্ৰিশ মাথা চুলকে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সামনে এগিয়ে যায়,
রুহির সামনে এসে দাঁড়ায়।
রুহি কিছু বলার আগেই ক্ৰিশ তার হাতটা শক্ত করে ধরে টেনে বেরিয়ে যেতে থাকে।
সিমৱান শুধু “রুহি!” বলে ভয়ে চুপ করে যায়।
সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
ক্ৰিশ ঘুরে স্যারের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
“স্যার, আপনি আপনার ষ্টুডেণ্ট দেৱ পড়ান।
আমি আমারটাকে নিয়ে যাচ্ছি, ও একটু কম বুদ্ধির, তাই হয়তো বাড়তি ক্লাস দরকার।”
পেছন থেকে আমান মুচকি হেসে বলে,
আমান: “মানে, কী একটা সাবজেক্টে দুইবার ফেল করেছে, সে আবাৱ ক্লাস কৱাবে?”
রোহিম: “হাহাহা… একদম ঠিক বলেছেন ভাই!”
রুদ্র: “চুপ কর, ক্ৰিশ শুনে ফেললে তো হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে!”
এদিকে ক্ৰিশ টেনে টেনে রুহিকে বাইরে নিয়ে যায়।
রুহি অনেক চেষ্টা করেও হাত ছাড়াতে পারে না।
অবশেষে একদম ফাঁকা একটা ক্লাসরুমে ওকে নিয়ে ঢোকে ক্ৰিশ,
দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়।
রুহি: “আপনি কী করছেন? দরজাটা বন্ধ করছেন কেন?”
ক্ৰিশ একটু বাঁকা হেসে পাশে থাকা একটা চেয়ার টেনে এনে সামনে রাখে।
চোখে এক অদ্ভুত ঝিলিক।
ক্ৰিশ: “বসো।”
রুহি কিছু না বলে দাঁড়িয়ে থাকে, তাৱ সাৱা শৱীৱ কাঁপছে ভয়ে।
ক্ৰিশ এবার গম্ভীর গলায় ধমকে ওঠে,
“Sit.”
রুহি ভয় পেয়ে ধীরে ধীরে বসে পড়ে।
তার হাত-পা কাঁপছে অনবরত।
ক্ৰিশ চেয়ারটা টেনে কাছে আনে,
দু’হাত দিয়ে চেয়ারটার দু’পাশে ভর দিয়ে রুহির মুখের একদম কাছে আসে।
রুহির নিঃশ্বাস আটকে যায়। চোখ বন্ধ হয়ে আসে নিজের অজান্তেই।
ক্ৰিশ: “এত কাঁপছো কেন, বাটারফ্লাই?
তোমাৱ কাঁপা কাঁপি দেখে আমি যদি সত্যিই কিছু করে ফেলি, তখন কিন্তু কিছু বলতে পারবে না।”
রুহি: “আপনি… আপনি কী চান!”
ক্ৰিশ হালকা হাসে, পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে রুহির সামনে ধরে বলে,
ক্ৰিশ: “নাও, এটা সুন্দর করে পড়ে শোনাও।”
রুহি: “এটা… এটা চিঠিটা আমি..”
ক্ৰিশ: “হুস….. কোনো কথা নয়, বাটারফ্লাই।
চিঠিটা পড়ো।
বেশি দেৱি কৱলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না তখন কিন্তু ইমৱান হাসমি স্টাইলে সিন চলবে।”
রুহির কাঁপতে থাকা হাত দু’টো ধীরে ধীরে চিঠিটা খোলে।
চোখের পাতার নিচে ঘাম জমে গেছে, বুকের ভিতর ধপধপ শব্দ যেন পুরো ঘরে প্রতিধ্বনি করছে।
ক্ৰিশ একদম চুপচাপ তাকিয়ে আছে তার দিকে— চোখে এক অদ্ভুত মায়া, কিন্তু তাতে ভয়ও মিশে আছে।
চিঠিটার প্রথম লাইনেই রুহির গলা কেঁপে ওঠে—
“প্রিয় ক্ৰিশ,
তুমি যখন হাসো, মনে হয় যেন সকালটা একটু বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
তুমি রাগ করলে পৃথিবীটাও যেন থেমে যায় কিছুক্ষণের জন্য।
আমি জানি তুমি কখনও বোঝো না— কিন্তু তোমাকে দেখলেই বুকের ভেতরটা কেমন অচেনা এক অনুভূতিতে ভরে যায়।
আমি দূর থেকে দেখি…
আর ভাবি, যদি একদিন তুমি আমার দিকে তাকাও, একবারের জন্য হলেও আমার নাম ধরে ডাকো।
আমি তোমাকে ভালোবাসি ক্ৰিশ।
চোখে চোখ রাখলে হয়তো বুঝে যাবে, এই ভালোবাসা কোনো খেলার মতো নয়, এটা আমার নিঃশ্বাসের মতো সত্যি।
I love you krish.
রুহি ধীরে ধীরে শেষ লাইনটা পড়ে, চুপ করে থাকে।
তার ঠোঁট শুকিয়ে গেছে, কণ্ঠ কাঁপছে।
রুহি: “এই… এই চিঠিটা আমি…..
কিন্তু রুহির কথা শেষ হবার আগেই, ক্ৰিশ হালকা একটা হাসি দিয়ে এগিয়ে আসে।
চোখে একদম সরাসরি তাকিয়ে বলে—
ক্ৰিশ : “Love you too, Butterfly.”
রুহির নিঃশ্বাস থেমে যায়।
সমস্ত শরীর যেন স্থির হয়ে পড়ে—
কান পর্যন্ত লাল হয়ে গেছে তার।
চোখ নামিয়ে নেয় রুহি, আর ক্ৰিশ শুধু হেঁসে চিঠিটা ভাঁজ করে নিজের পকেটে রাখে।
ঘরের নিস্তব্ধতার মাঝেই শোনা যায় রুহির হৃদয়ের ধুকধুকানি।
তারপর কোনো কথা না বলেই রুহির চেয়ারটাৱ সামনেৱ টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
রুহি চমকে তাকাল, চোখে কৌতূহল আর একটু ভয়।
ক্ৰিশ মুচকি হেসে বলল,
“তাহলে বলো তো, আমরা আজ থেকে কী হলাম?”
রুহি মুখ নামিয়ে বলল,
“দেখুন… আপনি যেমন ভাবছেন…”
ক্ৰিশ একটু ধমকে উঠল —
“কি হলো বলো, স্পিক আউট!”
রুহি ঢোক গিলে, নিচু গলায় কাঁপা কণ্ঠে বলল,
“জি.এফ-বি.এফ।”
ক্ৰিশেৱ চোখে ঝিলিক খেলে গেল, ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি।
“exactly,
এখন আমার কাছে আসো, বাটারফ্লাই।”
রুহি লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেল।
“হ্যাঁ…” শুধু এইটুকুই বলতে পারল সে।
ক্ৰিশ ঝুঁকে নিচু গলায় বলল,
“আমার কাছে আসো।”
রুহি কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, তারপর ধীরে ধীরে পা বাড়াল।
তার বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ করছে, হাত কাঁপছে সামান্য।
ক্ৰিশেৱ কাছে এসে দাঁড়াতেই সে হঠাৎ রুহির কোমর টেনে নিজের বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিল।
রুহি এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল।
ক্ৰিশের নিশ্বাস তার গলার কাছে লাগছে, আর পরের মুহূর্তেই ক্ৰিশ নিজের মুখটা রুহির গলায় গুঁজে আলতো কিন্তু জোরে কামড় দিল।
রুহির শরীরটা কেঁপে উঠল, নিঃশব্দে চোখ বন্ধ হয়ে এল ব্যাথায়।
ক্ৰিশ ফিসফিস করে বলল,
“আজ থেকে আমাকে না জিজ্ঞেস করে কোনো কাজ করবে না, বুঝেছো?”
রুহি চোখ মুখ কুঁচকে মাথা নাড়ল, মুখে কোনো শব্দ এল না।
ক্ৰিশ আবার মৃদু হাসল,
“এখন আমাকে একটা কিস দাও।”
রুহি অবাক হয়ে তাকাল,
“কিসস?”
ক্ৰিশ চোখ টিপে বলল,
“হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি।”
রুহি বুকের ভেতর ধকধক আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।
ভয়ে ভয়ে, ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে ক্ৰিশেৱ গালে আলতো করে কিস করল।
ক্ৰিশের মুখে তখন এক প্রশান্ত হাসি।
সে রুহিকে আরও কাছে টেনে নিল, তারপর কানেৱ কাছে মুখ নিয়ে ধীরে ফিসফিস করে বলল—
“এখন চুপচাপ ক্লাসরুমে চলে যাবে, ঠিক আছে?”
রুহি , চোখ নিচু করে বলল,
mad for you part 3
“হ্যাঁ…”
তারপর ধীরে ধীরে দরজার দিকে হাঁটতে লাগল—
পেছনে ক্ৰিশ দাঁড়িয়ে, মুখে সেই একই মুচকি হাসি…
মনে যেন নতুন এক অনুভূতির শুরু।
