mad for you part 5
তানিয়া খাতুন
সন্ধ্যা নেমেছে।
আকাশে হালকা নীলচে ছায়া, পাখিরা ঘরে ফিরছে।
রুহি আর সিমৱান অনেক আগেই বাড়ি ফিরে এসেছে।
কিন্তু সারাটা পথজুড়ে রুহি একটাও কথা বলেনি।
সিমরন নিঃশব্দে বিছানায় বসে আছে। নিজের ভুলটা বুঝে ফেলেছে সে।
ভীষণ অপরাধবোধে ভুগছে, তবুও রুহির মুখ থেকে সত্যিটা জানার তীব্র ইচ্ছে তার ভেতর জ্বলে উঠছে।
ৱুহি চেয়াৱে বসে আছে সামনে বই খোলা মুখটা নিস্তব্ধ, চোখ দুটো বইয়ের পাতায়— কিন্তু মন যেন দূরে কোথাও।
ধীরে ধীরে সিমৱান রুহির দিকে তাকিয়ে বলে,
সিমৱান: “রুহি… এই রুহি, সরি রে।
আমি ইচ্ছে করে করিনি, একদমই বুঝতে পারিনি এমনটা হবে।
বল না, ক্ৰিশ তোকে কিছু বলেছে? কিছুও কি করেছে? আমি জানলে হয়তো কিছু করতে পারতাম…”
রুহি কোনো উত্তর দেয় না।
চুপচাপ বইয়ের পাতায় চোখ রেখে বসে থাকে—
মনে হয় শব্দগুলো পড়ছে, কিন্তু বোঝার চেষ্টা করছে না কিছুই।
সিমৱান বিরক্ত হয়ে উঠে বলে,
“এইভাবে চুপ করে থাকলে হবে না!
আমি আর পারছি না!”
তার গলা কেঁপে ওঠে, চোখ ভরে যায় পানিতে।
মুহূর্তের মধ্যে সে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।
রুহি চমকে ওঠে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চোখের সামনে সিমৱানের কান্না দেখে তার বুকটাও ভারী হয়ে আসে।
দ্রুত উঠে এসে পাশে বসে সিমৱানের কাঁধে হাত রাখে।
রুহি: “এই এই, কী হলো তোৱ? এমন করে কাঁদছিস কেন?”
সিমরান: “আমি জানি আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু তুই একটাও কথা বলছিস না!
বল তো, তোদের মধ্যে আসলে কী হয়েছে?”
রুহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীরে বলে,
রুহি: “আচ্ছা আচ্ছা, বলব… কিন্তু তুই কান্না থামা আগে।”
সিমৱান চোখ মুছে বলে,
“ঠিক আছে, এখনই থামাচ্ছি। এখন বল।”
রুহি একটু থেমে হাসে—
রুহি: “বলব ঠিকই… কিন্তু যেভাবে তুই আমাকে এই বিপদে ফেলেছিস, তেমনি তুই-ই এখন এর solution বের করবি।”
সিমৱান হেসে ফেলে চোখ মুছে বলে,
“ওকে ডান!”
দু’জনেই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে ওঠে—
দীর্ঘ নীরবতার পর আবার যেন তাদের বন্ধুত্বের আলো ফিরে আসে।
রুহি অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।
ঘরে হালকা বাতাস ঢুকছে জানালা দিয়ে, কিন্তু তাদের মাঝের নীরবতা যেন আরও ভারী।
সিমৱান: “এই রুহি, বল না, ক্ৰিশ আসলে কী বলেছিল?”
রুহি একটু দ্বিধায় পড়ে যায়, চোখ নামিয়ে বলে,
“ও… ওই চিঠিটা পড়ার পর ওনি বলল… Love you too, Butterfly…”
সিমৱানের মুখে একদম অবিশ্বাসের ছাপ।
সিমৱান: “কি! ক্ৰিশ তোকে এটা বলেছে? ও মজা করছিল নাকি?”
রুহি ধীরে মাথা নাড়ে, মুখে কোনো হাঁসি নেই।
রুহি: “না, ওনি একদম সিরিয়াস ছিল।”
একটু থেমে, গলা ভারী হয়ে যায় তার।
রুহি: “কিন্তু আমি ওনাকে ভালোবাসি না, সিমৱান। একটুও না।”
সিমৱান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
“তাহলে তুই ওকে সেটা বলিসনি কেন?”
রুহি নিঃশ্বাস ফেলে,
রুহি: “ওনার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলার মতো সাহস পাইনি।
ওনার চোখের দিকে তাকাতে গেলেই মনে ভয় পাই।”
সিমৱান: “তাহলে এখন কী করবি?”
রুহি ধীরে বইটা বন্ধ করে সিমৱানের দিকে তাকায়।
চোখে একধরনের দৃঢ়তা জেগে উঠেছে।
রুহি: “তুই বল, এই সম্পর্কটা থেকে বেরোনোর কোনো উপায় আছে কি না।
আমি চাই না কেউ ভাবুক আমি ওকে ভালোবাসি।”
সিমরান চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর ঠোঁটে হালকা হাসি টানে।
সিমৱান: “তাহলে একটা কাজ করা যাক… আমরা এমন কিছু করব, যাতে ক্ৰিশ নিজেই তোকে ছেড়ে দেয়।”
রুহি অবাক হয়ে তাকায়,
রুহি: “মানে?”
সিমৱান: “মানে, ও যেন ভাবে তুই ওর জন্য একদম ঠিক না।
তুই ওর পেছনে না ঘুরে নিজের মতো থাকবি, একটাও reaction দিবি না।
আৱ কলেজে যত পাৱবি ছেলেদেৱ সাথে কথা বলবি।
দেখবি, ওর আগ্রহ নিজের থেকেই কমে যাবে।”
রুহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
রুহি: “তুই নিশ্চিত এটা কাজ করবে?”
সিমৱান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে,
“একদম! ছেলেরা যখন পাত্তা পায় না, তখনই তো বিরক্ত হয়ে দূরে সরে যায়।”
রুহি হালকা হাসে,
রুহি: “ঠিক আছে, দেখা যাক। কিন্তু তুই থাকবি পাশে।”
সিমৱান: “অবশ্যই থাকব, বাটারফ্লাই sorry sorry!”
রুহি চোখ বড় করে বলে,
রুহি: “এই নামটা আর মুখে আনবি না!”
দু’জনেই হেসে ফেলে, কিন্তু রুহির মনে তবুও একটা অজানা দুশ্চিন্তা রয়ে যায়—
যদি সহজে না ছাড়ে ?
রাত ১২টা ৩০।
পুরো শহর তখন নিদ্রায় ডুবে।
চারপাশে এক অদ্ভুত নীরবতা, শুধু মাঝে মাঝে দূরে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শোনা যায়।
রুহি গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।
হঠাৎ তার বালিশের পাশে রাখা ফোনটা কেঁপে ওঠে—
স্ক্রিনে আলোর ঝলকানি, সঙ্গে বাজতে শুরু করে রিংটোন।
অর্ধনিদ্রায় চোখ খুলে রুহি ফোনটা কানে তোলে।
রুহি: “হ্যালো… কে?”
ওপাশ থেকে ঠান্ডা গলায় ভেসে আসে এক পরিচিত কণ্ঠ—
ক্ৰিশ: “তাড়াতাড়ি নিচে আসো, Butterfly।”
রুহি: “কে রে তুই! আমি কেন নামব নিচে? এটা রাত বারোটা পেরিয়েছে!”
ক্ৰিশ (রাগে): “তোৱ ভাতাৱ বলছি, মধু খেতে এসছি তাৱাতাৱি আয়।”
বলে ফোন কেটে দেয় ক্ৰিশ।
রুহির ঘুম এক ঝটকায় উড়ে যায়,
রুহি চমকে উঠে বসে পড়ে।
হৃদপিণ্ড জোরে ধকধক করছে।
রুহি: “হায় আল্লাহ! এই লোকটা আমার ফোন নাম্বার পেল কোথা থেকে?”
পাশ থেকে সিমৱানের ঘুম জড়ানো গলা শোনা যায়।
সিমৱান: “কি হলো রে? চিৎকার করছিস কেন?”
রুহি: “ক্ৰিশ ! ক্ৰিশ ফোন করেছিলেন ! বলছেন নিচে যেতে!”
সিমৱান (অবাক হয়ে): “কি? কোথায়? কবে এল?”
রুহি: “বলছে নিচে আছে, আমাকে ডেকেছে।”
সিমরান (বিছানা থেকে উঠে): “তুই যাস না, বুঝলি! এখনই ফোনটা অফ করে ঘুমিয়ে পড়।
ও যদি নিচে থেকেও থাকে, গার্ডরা আছে, ও ঢুকতে পারবে না। এটা তো লেডিস হোস্টেল!”
রুহি একটু ভেবে বলে,
“তুই ঠিক বলছিস… আমি না গেলে নিশ্চয়ই ও নিজে থেকেই চলে যাবে।”
রুহি ফোনটা বন্ধ করে দেয়,
তারপর নিঃশব্দে আবার শুয়ে পড়ে, কিন্তু ঘুম আর আসে না।
বারবার কানে বাজতে থাকে সেই কণ্ঠস্বর—
“Butterfly… তাড়াতাড়ি নিচে এসো।”
ঘড়ির কাঁটা এগোয়, কিন্তু রুহির মন অদ্ভুত এক অস্থিরতায় ঘেরা থাকে।
বাইরে দূরের বাতাসে হালকা মোটরবাইকের শব্দ ভেসে আসে…
মনে হয় কেউ সত্যিই নিচে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রায় অনেকক্ষণ কেটে গেছে।
রুহি আবাৱ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে, হঠাৎ যেন তার মনে হলো—তার মুখের ওপর কারও গরম নিঃশ্বাস পড়ছে।
ঘুমের ঘোরে সে একটু পাশ ফিরতেই টের পায়, কেউ যেন আলতো করে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এক মুহূর্তে রুহির বুক ধড়ফড় করে উঠল—চমকে উঠে বসে পড়ে সে।
চোখ খুলে পাশের দিকে তাকাতেই, যা দেখে রুহির গলা শুকিয়ে গেল।
ভয়ে তার চোখ বড় হয়ে গেল, নিঃশ্বাস গলায় আটকে গেল।
ক্ৰিশ: বাটারফ্লাই…
রুহির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়।
রুহি: আ-আপনি… আপনি এখানে কী করে এলেন? (তোতলাতে তোতলাতে বলে) সিমৱান কোথায় গেল?
ক্ৰিশের হাসিটা আরও গভীর হয়। চোখে যেন আগুন জ্বলে ওঠে।
হঠাৎই সে ঝুঁকে রুহির গলা শক্ত করে চেপে ধরে।
ক্ৰিশ: বাটারফ্লাই, তোকে বলিনি? এখন থেকে যা করবি—আমাকে জিজ্ঞেস করে করবি!
তুই আমাকে না জিজ্ঞেস করে ঘুমিয়ে পড়লি?
একবারও ভাবলি না আমি নিচে তোর জন্য অপেক্ষা করছি?
রুহির মুখ লাল হয়ে যায়, শ্বাস নিতে পারছে না।
হাত দিয়ে ক্ৰিশের বুক ঠেলতে থাকে, চোখ আধখোলা হয়ে যায়। ঠিক তখন ক্ৰিশ হাত ছেড়ে দেয়।
সে সামনে রাখা গ্লাসটা হাতে তুলে নিয়ে বলে—
নে, জল খা।
রুহি থরথর কাঁপা হাতে গ্লাস নিয়ে এক নিঃশ্বাসে জলটা শেষ করে ফেলে।
বুক দমে আসে, চোখে জল চিকচিক করে।
ক্ৰিশ (ঠান্ডা গলায়): বাটারফ্লাই, কোনোদিন আমার কথার অবাধ্য হবি?
রুহি ভয়ে মাথা নিচু করে, আস্তে আস্তে না বোঝায়।
ক্ৰিশ: that’s like a good girl. চলো।
রুহি কাঁপা গলায় বলে—
রুহি: ক-কোথায় যাব?
ক্ৰিশ ধীরে ধীরে ঝুঁকে আসে।
তার চোখ রুহির চোখের ঠিক মধ্যে গিয়ে থামে, যেন প্রতিটা শ্বাসে আগুন আছে।
ক্ৰিশ (ধীরে, হুমকির সুরে): প্রশ্ন করা আমার একদম পছন্দ নয়। মাথায় রাখবি।
রুহি: হ্যাঁ… থাকবে।
ক্ৰিশ (হাসতে হাসতে): গুড। আমি বাইরে আছি, তোমার ফ্রেন্ডকে ভিতরে পাঠাচ্ছি।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসবে। আর যদি আমাকে আবার উপরে আসতে হয়—
(চোখে ভয়ানক ঝিলিক)
তাহলে এই বারান্দা দিয়েই টুকুস করে নিচে ফেলে দেব। কেমন?
রুহির চোখে আতঙ্ক জমে যায়। হাতের গ্লাসটা কাঁপতে কাঁপতে টেবিলে রাখে।
ৱুহি ওঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমেৱ দিকে যেতে যায়,
ক্ৰিশঃ Stop butterfly.
পিছন থেকে ৱুহিৱ টপস টেনে ধৱে তবে ভুলবশতঃ এমন ভাবে ধৱে যে ভেতৱেৱ ব্ৰা সমেত ধৱে ফেলে।
ক্ৰিশঃ sorry butterfly, but তুমি এত টাইট কেনো পড়েছো?
এমনিতেই ছোটো ছোটো future আমি কী খেয়ে বড়ো হবো?
এমন লাগামহীন কথা শুনে ৱুহিৱ কান গৱম হয়ে যায় লজ্বায় সে দৌড়ে ওয়াশরুম ঢুকে যায়।
ক্ৰিশের পায়ের শব্দ দূরে মিলিয়ে যায়, কিন্তু তার গলার সেই হুমকি যেন ঘরটায় গেঁথে থাকে—
“বাটারফ্লাই, আমার অনুমতি ছাড়া কিছুই না… কিছুই না।”
রুহি ওয়াশৱুমে ঢুকে নিঃশব্দে চুপ করে বসে থাকে।
বাইরে বাতাসে পর্দা উড়ছে, অথচ ঘরের ভেতরটা ঠান্ডা নয়—ভয় আর পাগলামির এক অদ্ভুত আগুনে জ্বলছে।
রাতটা ছিল একদম চুপচাপ, চারদিক নিস্তব্ধ।
ক্ৰিশ বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে গার্ডটা দিব্যি চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে।
চোখ খুলে রাখার কথা, অথচ মুখটা খোলা, হালকা নাক ডাকার আওয়াজও বেরোচ্ছে।
ক্ৰিশের চোখ সরু হয়ে যায়।
ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে ঠাস করে এক ঘুষি মারে গার্ডটার গালে।
গার্ড ঘুম থেকে হুড়মুড় করে উঠে পড়ে, ভয়ে থরথর কাঁপছে।
ক্ৰিশ: এখানে তোকে ঘুমানোর জন্য রাখা হয়েছে?
গার্ড: স–সরি স্যার, আর হবে না।
গার্ড মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
ক্ৰিশ (কঠিন গলায়): এখন ভালো করে শোন, এখানে আমার বাটারফ্লাই থাকে।
ওর দিকে কেউ তাকাবি না, কাউকে ঢুকতে দিবিনা।
ভালো করে পাহারা দিবি। আর যদি আবার এমন দেখি, তাহলে তোর নামও থাকবে না, মুখও থাকবে না—বুঝেছো?
গার্ড: বুঝেছি স্যার, একদম বুঝেছি।
ঠিক তখনই রুহি বাইরে বেরিয়ে আসে।
মুখ শুকনো, চোখে হালকা ঘুমের ছাপ, লাল গোল লং স্যুট পরা।
চুলগুলো খোঁপা করে বাঁধা, কোনো সাজ নেই, তবুও এক অদ্ভুত শান্ত সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।
ক্ৰিশ স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকে। চোখে মুগ্ধতা আর একফোঁটা পাগলামি মিলেমিশে গেছে।
ক্ৰিশ (মনে মনে): আমার বাটারফ্লাই…
সে এগিয়ে এসে রুহির হাতটা ধরে বাইকের দিকে নিয়ে যায়।
ক্ৰিশ : মুখটা এমন বালেৱ মতো করে রেখেছো কেন? হাঁসো।
রুহি মুখ তুলে তাকায়, জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করে—কিন্তু হাসিটা আসে না।
ক্ৰিশ ঠোঁটে আঙুল রাখে, আলতো করে টেনে দেয়।
বড়ো করে হাঁসো।
এৱপৱ একটানে ৱুহিৱ কৱা খোপা খুলে দেয়, কোমৱ পয্ন্ত লম্বা চুল পিঠে ছড়িয়ে পড়ে।
ক্ৰিশ ক্লিপ টা নিজেৱ পকেটে নিয়ে বলে এবাৱ ঠিক আছে।
তারপর বাইকে উঠে ইঞ্জিন চালু করে।
ক্ৰিশ: বসো, ভালো করে ধরে বসবে। এক ইঞ্চিও ফাঁক থাকবে না, ক্লিয়ার?
রুহি (আস্তে): হ্যাঁ…
রুহি ধীরে ধীরে পেছনে বসে, দু’হাত ক্ৰিশেৱ কাঁধে ৱাখে।
ক্ৰিশ: বাটারফ্লাই, এমন না… আমায় পুরো জড়িয়ে ধরো।
রুহি ভয়ে আমতা আমতা করে, হাত কাঁপে।
ক্ৰিশ হঠাৎ তার হাতদুটো টেনে নিয়ে নিজের বুকের ওপর রাখে।
রুহির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, শরীরটা জমে যায় একেবারে।
ক্ৰিশ (হালকা হাসিতে): এইভাবেই থাকবে।
তারপর বাইকটা চালাতে শুরু করে।
রাতের হাওয়া উড়ে এসে রুহির গালে লাগে, চুল উড়ে ক্ৰিশেৱ মুখে এসে লাগে।
রুহির বুকের ভেতর ধুকপুক করছে, মনে হচ্ছে শরীরে কারেন্ট খেলে যাচ্ছে।
ও চোখ বন্ধ করে, নিঃশব্দে শুধু অনুভব করে—
ক্ৰিশের বুকের তাপ, তার নিঃশ্বাসের আওয়াজ, আর সেই পাগলাটে ভালোবাসা,
যেটাতে ভয় আছে,
আর যেটা থেকে পালানোও যায় না।
অনেকক্ষণ কেটে যায়, তবুও বাইক থামে না।
চারপাশে অন্ধকার, মাঝে মাঝে স্ট্রিট লাইটের হালকা আলো এসে রুহির মুখে পড়ে যায়।
ঠান্ডা হাওয়ায় তার হাত কাঁপছে, চুল উড়ে এসে মুখে লাগছে।
রুহি (ভয়ে আস্তে বলে): আমরা কি থামবো না? আসলে… আমার একটু ঠান্ডা লাগছে।
ক্ৰিশ (চোখ সরু করে, মুখে হালকা ব্যঙ্গ): তো তোমার কী মনে হয়—তোমাৱ ঠান্ডা লাগছে বলে আমি এখন হিরোর মতো আমার জ্যাকেট খুলে তোমাকে পরিয়ে দেবো?
রুহি (তাড়াতাড়ি): এই না না, আমি তেমন কিছু বলিনি…
ক্ৰিশ হালকা হেঁসে বলে— আইসক্রিম খাবে?
রুহি অবাক হয়ে তাকায়,
রুহি: এত রাতে আইসক্রিম?
ক্ৰিশ: এই ক্ৰিশ খান চাইলে সব হয়।
আর হ্যাঁ, আমরা কোথাও যাচ্ছি না—স্রেফ একটু হাওয়া খেতে বেরিয়েছি।
রুহি মনে মনে ভাবে, এত রাতে কেউ আবার হাওয়া খেতে বেরোয় নাকি! ওর চোখে বিস্ময়, মুখে অজানা ভয়।
ঠিক তখনই ক্ৰিশ হঠাৎ ব্রেক মারে।
বাইক একদম থেমে যায়।
রুহি চমকে ওঠে, প্রায় গিয়ে ধাক্কা মারে ক্ৰিশেৱ পিঠে।
সামনেই একটা ছোট আইসক্রিমের ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে, আলো জ্বলছে, চারপাশ নিস্তব্ধ।
রুহি: (হালকা অবাক হয়ে) আইসক্রিমের গাড়ি?
ক্ৰিশ বাইকের স্ট্যান্ড নামিয়ে ফোন বের করে।
ঠিক তখনই একটা মেসেজ আসে। স্ক্রিনে কারো নাম জ্বলে ওঠে, সে শান্তভাবে রিপ্লাই দেয়—“Thanks.”
তারপর ফোন পকেটে রেখে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে—
তো, খাবে?
রুহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা নিচু করে হেসে ফেলে।
রুহি: আমার ভালো লাগে…“Cornetto Ice Cream.
ক্ৰিশেৱ ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটে ওঠে।
সে গাড়ির কাছে গিয়ে দুইটা নিয়ে আসে, রুহির হাতে দেয়।
রুহি হাতে নিয়ে একটু থামে, চারপাশে তাকায়।
রুহি: আইসক্রিমের মালিক কোথায় গেল? তাকে না জিজ্ঞেস করে খাওয়া ঠিক হবে?
ক্ৰিশ (চোখে দুষ্টু হাসি নিয়ে): তোমায় ভাবতে হবে না, বাটারফ্লাই…
তুমি শুধু খাও।
রুহি ধীরে ধীরে “Cornetto” খুলে খেতে শুরু করে।
ঠান্ডা আইসক্রিম ঠোঁটে লাগতেই তার শরীরে হালকা শিরশিরে ঠান্ডা লাগে।
রুহি আইসক্রিম খেতে খেতে হালকা করে ক্ৰিশেৱ দিকে তাকায়। কিন্তু ক্ৰিশ যেভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তাতে রুহি ভয় পেয়ে যায়।
রুহি: খাবেন?
ক্ৰিশ: (মাথা নেড়ে) হ্যাঁ বোঝায়।
রুহি নিজের হাতে থাকা আরেকটা আইসক্রিম এগিয়ে দেয়।
ক্ৰিশ: এটা নয় বাটারফ্লাই, তোমার হাতের যেটা খাচ্ছো, ওটাই চাই।
রুহি: এইটা তো অর্ধেক খাওয়া…
ক্ৰিশ কোনো কথা বলে না, এগিয়ে এসে রুহির কোমৱ ধরে তুলে বাইকে বসিয়ে দেয়।
রুহি একদম অবাক, কিছু বুঝে উঠতে পারে না।
ক্ৰিশ দু’হাতে রুহির মুখটা ধরে সামনে টেনে আনে, তারপর রুহির হাত থেকে আইসক্রিমটা নিয়ে আলতো করে ওর ঠোঁটে লাগিয়ে দেয়।
রুহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে, তাৱ মুখ দিয়ে কথা বেৱোয় না।
ক্ৰিশ ঝুঁকে আসে, রুহির ঠোঁটে লেগে থাকা আইসক্রিমের অংশটা নিজের ঠোঁটে নিয়ে নেয়।
রুহির শরীর কেঁপে ওঠে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
তারপর ক্ৰিশ হঠাৎ রুহিকে শক্ত করে বুকে টেনে নিয়ে বলে—
এইটুকুতেই যদি এত কাঁপো, তাহলে বাকিটা করলে তো ভূমিকম্প তুলবে।
রুহি চুপ করে থাকে, শরীর কাঁপছে, ঠোঁট কাঁপছে। ক্ৰিশ তার মাথার পাশে মুখ রেখে গম্ভীর গলায় বলে ভয় পেও না, আমি তো আছিই…
mad for you part 4
রুহি কিছু বলে না, শুধু ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে, চোখে জল জমে ওঠে।
রাতের ঠান্ডা হাওয়ায় বাইক আবার চালু হয়, দুইজনের মধ্যে অদ্ভুত এক নীরবতা ছড়িয়ে পড়ে।
রুহির হাত ক্ৰিশের বুকে শক্ত করে ধরা, আর ক্ৰিশের চোখে একরাশ পাগলামী,
যেখানে ভয়, জেদ আর অনুভূতি একসাথে মিশে গেছে।
