বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২৫
রানী আমিনা
আনাবিয়া দ্রুত পায়ে হেটে এসে আলফাদকে সাথে না দেখে স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কোকোকে শুধোলো,
“আলফাদ কোথায়?”
কোকো হঠাৎ আনাবিয়াকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছিলো। আনাবিয়ার কথায় সম্বিত ফিরে পেতেই চমকে উঠে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আম্মা আ-আপনি ঠিক আছেন? আপনি ওই দরজার ওপাশ থেকে কিভাবে বের হলেন, আর বাইরে থেকেই বা কিভাবে ঢুকলেন! আমি তো ভেবেছি আপনি বোধ হয় ভেতরে আটকা পরে গেছেন, আমি দরজাটা ভাঙার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি! আপনি ঠিক আছেন তো আম্মা? আপনি কোথাও ব্যাথা পাননি তো!”
কোকোর শঙ্কিত দৃষ্টিতে এক নাগাড়ে করে চলা প্রশ্নের বানে আনাবিয়া হঠাৎ বাধা দিয়ে দুহাতে কোকোর দুবাহু ধরে দ্রুত গলায় বলল,
“রিল্যাক্স, আমি ঠিক আছি কোকো। আলফাদ কোথায় আছে দ্রুত ডাক ওকে আমাদের এক্ষুনি বের হতে হবে।”
কোকো আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করলো না, ছুটলো আবার ভেতরের দিকে, ওর পেছন পেছন এগোলো আনাবিয়াও। আলফাদ আর রেক্সা কোকোর ছেলেবেলা নিয়ে গল্প করছিলো। হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে কোকো কামরায় প্রবেশ করলে দুজনেই হকচকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। আলফাদ কিছু বলতে নিচ্ছিলো তার আগেই কোকো তড়িঘড়ি করে বলল,
“আম্মা এসেছেন, দ্রুত এখান থেকে বের হতে হবে, উঠ। জিনিস পত্র যা যা ছিলো গুছিয়ে নে দ্রুত।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বলেই ও লেগে পড়লো ওর ব্যাকপ্যাকে নিজের জিনিসপত্র গুলো ভরতে। আলফাদ হঠাৎ কি করবে বুঝতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমুঢ়ের মতোন দাঁড়িয়ে রইলো কোকোর দিকে তাকিয়ে। তখনই কামরায় ঢুকলো আনাবিয়া, বলল,
“আলফাদ, দ্রুত তৈরি হ, এখুনি বের হবো৷ ওদিকে বাচ্চা গুলো কি করছে কে জানে। আমরা এদিকে নিখোঁজ হয়েছি ওরা হয়তো চিন্তা করে মরছে। বাইরে ন্যাকু নামক যে নেকড়েকে দাড় করিয়ে রেখেছিলি সে সেখানে নেই। আমার ধারণা লিও ফ্যালকনরা এখানে এসেছিলো, ওরা আমাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। এখুনি ওদের কাছে পৌছতে না পারলে অবস্থা বিগড়ে যাবে৷”
আলফাদ আনাবিয়াকে দেখে আরও অবাক হলো, বিস্মিত গলায় বলল,
“শেহজাদী আপনি বাইরে থেকে কিভাবে….. মানে….. আপনি তো…. ভেতরে ছিলেন!”
“যেতে যেতে বলবো সব, দ্রুত কর৷”
আলফাদ নিজের বিস্ময় কাটিয়ে লেগে পড়লো তৈরি হতে। রেক্সা দাঁড়িয়ে রইলো এক কোণায়।
এরা দুজন চলে যাবে বাইরে? এই দুদিনে আলফাদের সাথে ওর বেশ সুন্দর রকমের ভাব হয়ে গেছিলো। ছেলেটা বেশ চটপটে, সাথের ছেলেটার মতোন অহংকারী নয়। কিন্তু আলফাদের থেকে শুনেছে কোকো ছেলেটা একটু বেশিই আদর আভিজাত্যে বড় হয়েছে, ওটুকু গুমোর ওর স্বাভাবিক। কিন্তু এরা চলে যাবে?
মুখখানা শুকিয়ে এল রেক্সার, করুণ চোখে ও তাকিয়ে রইলো আলফাদ আর কোকোর দিকে।
আনাবিয়া ওদিকে ইলহানের কামরায় ঢুকে পড়েছে, সময় টুকু নষ্ট না করে সে এক্সপ্লোর করতে চলে গেছে ইলহানের কামরার আলমারি গুলো। কোকো তৈরি হয়ে নিয়ে আলফাদের জন্য বসে রইলো। তখনি ওর চোখ গেলো রেক্সার দিকে, বিষণ্ণ চেহারা নিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে এক কোণায়, নিচের ঠোঁট টা ফুলে গেছে সামান্য, কাঁদছে নাকি?
কোকো ভ্রু কুচকালো, মনে মনে ভাবলো, এর আবার কি হলো?
ডাকলো ও,
“এই যে, রেক্সুরেন্ট!”
নামের বিকৃতি শুনে ফুসে উঠলো রেক্সা, নাকের পাঠা ফুলিয়ে চোখ বড় বড় করে রাগী স্বরে বলল,
“আমার নাম রেক্সা, রেক্সুরেন্ট নয়! ডাকতে না পারলে ডাকতে আসবেন না একদম।”
“আমি রেক্সুরেন্টই ডাকবো, ভালো লাগলে ডাক শুনবে, না লাগলে শুনবেনা। বুঝেছো রেক্সুরেন্ট?”
রেক্সা কোনো উত্তর দিলোনা, দাঁতে দাঁত চেপে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিলো। এই ছেলের সাথে কথাতে ও এই জীবনে পারবে না, শুধু শুধু কথা নষ্ট হবে৷ কোকো আবার বলল,
“যাবে নাকি আমাদের সাথে বাইরে?”
কোকোর কথা শুনে আলফাদ রেক্সা দুজনেই চমকালো, আলফাদ শার্টের বোতাম আটকাতে গিয়ে থেমে তাকিয়ে রইলো কোকোর দিকে। কোকো এমন প্রস্তাব যে আদৌ দিতে পারে আলফাদ তা ভাবেনি, বরাবরের মতোন ফাইজলামি করে মেয়েটার মন ভাঙবে কিনা সেই চিন্তায় তটস্থ হয়ে একবার রেক্সা আরেকবার কোকোর দিকে তাকাতে রইলো ও৷
কিন্তু ওদের আরও অবাক করে দিয়ে কোকো বলল,
“যেতে চাইলে বলো, আমি আম্মার সাথে কথা বলবো। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবে, তোমার জন্য এখানে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে পারবোনা। তোমার হাতে সময় ৩০ সেকেন্ড। তবে হ্যাঁ, বাইরে গিয়ে কিন্তু সম্পুর্ন নিজের মতোন থাকবে, আমাদের ঘাড়ে চাপতে পারবে না। বলো বলো, দ্রুত।”
“য্-যাবো।”
সাথে সাথে উত্তর করলো রেক্সা। কোকো বসা থেকে উঠে বাইরে যেতে যেতে বলল,
“ওকে দ্রুত রেডি হও।”
রেড জোনের ভেতরের ইনভিজিবল রোডে ঝড়ের বেগে নিজের গাড়ি হাকিয়ে ডার্ক প্যালেসের দিকে এগোচ্ছে ইলহান। পাশের সিটে ইযান বড় বড় ভীত চোখে চেয়ে বসে আছে, সিটের সাথে পুরোপুরি সেট হয়ে গিয়ে দুহাতে গাড়ির পার্টস পাতি ধরে আছে যেন গাড়ি থেকে দুর্ঘটনাবশত ছিটকে না পড়ে যায়।
ইলহান গাড়ির গতি বাড়াচ্ছে ক্রমে ক্রমে। ইযানের ভয় ও বাড়ছে সাথে সাথে। অন্যান্য দিন ইযান নিজে ড্রাইভ করে, আজ ইলহান ওকে আর ড্রাইভ করতে দেয়নি। ইযানের কাছে স্টিয়ারিং দিলে পৌছাতে পৌছাতেই সন্ধ্যা লাগিয়ে দিবে৷
“ই-ইয়োর ম্যাজেস্টি, একটু স্লো ড্রাইভ করুন দয়া করে, নইলে কখন কোন গাছের সাথে গিয়ে ধাক্কা খেতে হবে নিশ্চিত।”
সিঁটিয়ে গিয়ে বলল ইযান। ইলহান গমগমে ঠান্ডা স্বরে বলল,
“গাড়ি তুমি নও, আমি ড্রাইভ করছি। চুপচাপ বসে থাকো, আমার মনোযোগ নষ্ট কোরোনা।”
জঙ্গলের পথ ধরে এক অদৃশ্য রাস্তার ভেতর দিয়ে গাড়ি এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলেছে, ইযান দেখছে না সে রাস্তা, ইলহান ঠিকই দেখছে। ইযান গাছের সাথে বাড়ি খাওয়ার ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত কন্ঠে বলল,
“শেহজাদী ডার্ক প্যালেসে আছেন, কোনো বিপদ আসার তো কথা না, ইয়োর ম্যাজেস্টি! তবে আমরা এত দ্রুত কেন যাচ্ছি?”
“ডার্ক প্যালেসের শেষে একটা রয়্যাল ডোর আছে, যা শুধুমাত্র দেমিয়ান ফ্যামিলি মেম্বার দ্বারা খোলা সম্ভব। তার ওপাশে আর কিছুই নেই, শুধু একটা গভীর খাদ ব্যাতিত। সেখানে কিছু ভয়ানক ক্রিয়েচার্স আছে, ডার্ক প্যালেসের কোনো আসামীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রয়োজন হলে তাকে সেখানে ফেলে দেওয়া হয়। ক্রিয়েচার গুলো তাদের হাড় সুদ্ধ খেয়ে ফেলে, সামান্য চিহ্ন অবশিষ্ট রাখে না৷
আনাবিয়া এসব জানেনা, ভুলবসত সেখানে চলে গেলে বিপদে পড়তে হবে। ক্রিয়েচার গুলো ওকে চিনবেনা, তারা ল্যাবে তৈরি করা হাইব্রিড। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো?”
ইযান শিউরে উঠলো যেন, পরক্ষণেই উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো সে বুঝেছে। ইলহান গাড়ির গতি বাড়ালো আরও, ভুলেও ইযানকে বুঝতে দিলোনা নিজের ভেতর ঝড় বইয়ে চলা অস্থিরতা।
বেশ কিছুক্ষণ ড্রাইভ করার পর ডার্ক প্যালেস এরিয়াতে এসেই গাড়ি হতে এক প্রকার লাফিয়ে নেমে এলো ইলহান। দ্রুত মাটির ওপরের ঘাস সরিয়ে দরজা খুলে দ্রুত পায়ে নেমে গেলো ভেতরে। ইযান নিজেও নামলো ওর পেছন পেছন।
সিড়ি বেয়ে নেমে দেখলো দরজা ভাঙা, আনাবিয়া নিশ্চয় চাবি না পেয়ে দরজা ভেঙেছে, চাবিটা পাশেই দেয়ালের সাথে সাটানো ছিলো, একটু খোজাখুজি করলেই পেয়ে যেতো, কিন্তু তার তো আবার তার দাদাজানের মতোন দেরি সহ্য হয় না।
ইলহান বড় বড় কদম ফেলে এগোলো সামনে, পেছন পেছন ছুটলো ইযান। ইলহানের লম্বা পায়ের সাথে হেটে কুলোনো কঠিন। ইলহান ভেতরে ঢুকতেই ডার্ক প্যালেসের লোয়ার গ্রেড এরিয়ায় থাকা গার্ড গুলো হকচকিয়ে গেলো। রাস্তার দু ধারে সরে গিয়ে ওরা মাথা নত করে দাঁড়িয়ে গেলো যথাস্থানে।
ইলহানের বুক কাঁপতে লাগলো, ভেতরে গিয়ে যেন কোনো খারাপ সংবাদ না পেতে হয় এই আর্জি জানাতে লাগলো সৃষ্টিকর্তার নিকট।
মস্তিষ্কের ওপর এই হঠাৎ চাপে ওর চোখের স্মাওনে ভেসে উঠলো আনাবিয়ার ছোট্ট বেলার সফেদ, মোলায়েম মুখখানা। সালিম ভাইজানের মেয়ে, ওদের আদরের একমাত্র শেহজাদী।
সেদিন আজলান চাচাজানের সাথে আনাবিয়াকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে মীরের হাতে ধরা না খেলে আজ আনাবিয়া হয়তো ওর স্ত্রী হতো, বা ও হয়তো বিয়ে করতোনা আনাবিয়াকে, সালিমের মেয়ের মতো করেই রেখে দিতো নিজের কাছে। অতোটুকুন একটা মেয়ে, কতই বা বয়স! ওর কি এতসব চাপ নেওয়ার মতোন ম্যাচ্যুরিটি এসেছে?
আজলান চাচাজান যতই স্বার্থপরের মতোন আনাবিয়াকে নিজের কাজে লাগাতে চাইতেন, ভালো তো বাসতেন প্রচন্ড! ছেলেকে মেরে তার ভেতরে কি অপরাধবোধ ছিলো না? ছিলো, নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শয়তানের কু প্ররোচনায় পড়ে ছেলেকে মেরে তো ফেলেছিলেন, তারপর?
পাপে যখন একবার হাত দিয়েই ফেলেছেন তখন আরও কেন নয় এই থিওরী তে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি।
সকলে একে একে এই ধরাধাম হতে বিদায় নেবার পর আনাবিয়া শুধু তাদের তিনজনের কোলেই থাকতো, মীর ইলহান, আজলান। আর কেউ নয়, কারো নয়!
শক্ত হাতের মুঠিতে মেয়েটা যখন দাদার দাড়ি টেনে ধরে তারস্বরে চিৎকার করতো মীর কেন সকাল বেলা তাকে কোলে না নিয়ে সাম্রাজ্যের প্রয়োজনে চলে গেলো, তখন চাচা ভাতিজা মিলে কি হাসাহাসিই না করতো ওরা!
কেউ নেই আর ওর পরিবারে, বাবা, মা, দাদাজান, চাচাজান, সালিম ভাইজান, মীর…. ওর ছোট ভাই! যার সাথে মায়ের পেট থেকে ওর সম্পর্ক, চেনাজানা। ভাগ্য এবং সময় মানুষ কে কতটা দূরেই না ঠেলে দেয়!
হঠাৎই গলা ধরে আসতে চাইলো ইলহানের, কিন্তু ঢোক গিলে নিজের সমস্ত দুর্বলতা ঠেলে দিলো আবার নিজের ভেতর। ওর মনে পড়লো যেদিন কুরো আহমারে ওর আর মীরের ভেতর ভয়ানক যুদ্ধ বেধেছিলো, মীর হয়তো মেরেই ফেলতো ওকে, শুধু আনাবিয়ার এক ইশারাতে ইলহানকে সেবারের মতোন ছেড়ে দিয়েছিলো মীর। নইলে আজ হয়তো সময় সবার জন্য অন্যরকম হতো।
মাটির দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে দ্রুত পায়ে এগোতে এগোতে হঠাৎই কয়েকটা গলার আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে গেলো ইলহান। ওর পেছন পেছন ইযান আসছিলো ছুটতে ছুটতে, এটুকু এসেই হাপিয়ে গিয়েছে ও৷ মুখ আলগা করে বড় বড় শ্বাস ফেলতে ফেলতে ও এসে উপস্থিত হলো ইলহানের পেছনে৷
ইলহানকে থমকে দাড়াতে দেখে সেও দাঁড়িয়ে গেলো সামনে হতে কারা আসছে দেখতে৷
কিছুক্ষণ বাদেই হুডি আর ট্রাউজারে আবৃত আনাবিয়া কোকো, আলফাদ আর রেক্সার সাথে গল্প করতে করতে এসে হাজির হলো সেখানটায়। ইলহানকে এই সময়ে সামনে দেখে আনাবিয়া নিজেও থমকে দাঁড়িয়ে গেলো।
ভয় হলো ওর ভীষণ, ইলহান যদি জেনে যায় মীর এখন মুক্ত তবে ও কি করবে? কিভাবে সামলাবে?
শঙ্কিত ভাবখানা দ্রুতই মুখ থেকে ঝেড়ে ফেলে ও স্বাভাবিক করলো নিজেকে, ইলহানকে বুঝতে দিলোনা কিছুই। এগিয়ে ইলহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ও বলল,
“হ্যালো, চাচাজি।”
“হাই, বেইবি গার্ল।”
আনাবিয়ার মতো করেই বলল ইলহান। পরক্ষণেই শুধোলো,
“এ দিকে কি মনে করে?”
“এই যে, দেখতে এসেছিলাম আপনি কোথায় বসে সাফার করতেন। জায়গাটা ভালো লেগে গেলো তাই ভাবলাম কিছুদিন ছুটি কাটিয়ে যাই। ভালো করেছি, না?”
“হুম অবশ্যই। ছুটি কাটানো ভালো, বিশেষ করে অল্প বয়সী বিধবা মেয়েদের জন্য।”
ইলহানের কথায় আনাবিয়া মিষ্টি করে হাসলো, বলল,
“জ্বী হ্যাঁ, আরও অনেকের জন্যই ছুটি কাটানো ভালো, এই যেমন ধরুন নালায়েক বাদশাহ। এতে মাইন্ড ফ্রেশ হয়, মাথা দ্রুত চলে।”
ইলহান মজা পাওয়ার ভঙ্গিতে শব্দ করে হাসলো, আনাবিয়া কিছুই না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিচ্ছিলো। তখনি ইলহানের নজর গেলো কোকো আলফাদের পেছনে থাকা মেয়েটির দিকে। ও দ্রুত বলে উঠলো,
“ওয়েট ওয়েট, এই মেয়েটা কোথায় যাচ্ছে?”
“আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি।”
ইলহানের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল আনাবিয়া, ইলহান ঠোঁটের কোণ সামান্য প্রসারিত করে বলল,
“সেটা হচ্ছেনা বেইবি গার্ল, ওকে তুমি নিয়ে যেতে পারবে না। ও এখানেই থাকবে।”
“উহু, ও আমার সাথেই যাবে।”
“ও ডার্ক প্যালেসের মেয়ে, তাছাড়া ও আমার দাসী, তুমি ওকে এভাবে নিয়ে চলে যেতে পারোনা৷”
“ও অ্যানিম্যাল টাউনের মেয়ে, ওরা স্বাধীন, আপনার দাসী নয়। ও কোনো অপরাধীও নয়, সুতরাং আমি ওকে বাইরে নিয়ে যাবো।”
“সর্বক্ষণ এত জেদ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।”
“এটা জেনেও আমাকে বাধা দেন কেন? মেয়ে হই আমি আপনার, মেয়ের জন্য আপনার দেখি একটুও চিন্তা নেই!”
“বড্ড বেশি কথা বলো তুমি!”
বলে আনাবিয়ার প্রতিউত্তরের অপেক্ষায় রইলো, কিন্তু তাকিয়ে দেখলো আনাবিয়ার দৃষ্টি ইলহানের পেছন দিকে। ইলহান ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো নিজের পেছনে, ইযান বিস্ময়াভিভূত হয়ে তাকিয়ে আছে আনাবিয়ার দিকে মুখ খানা কিঞ্চিৎ আলগা৷ চোখের পলক পড়ছে না৷
ইলহান দাঁতে দাঁত চেপে চাপা সুরে ধমকে ডাকলো,
”ইযান!”
ইলহানের কন্ঠে নিজের নাম শোনা মাত্রই চমকে উঠে দৃষ্টি নত করলো ইযান। ইলহান ফের তাকালো আনাবিয়ার দিকে, বলল,
“ওকে রেখে যাও, ও ডার্ক প্যালেসেই থাকবে৷”
“উহু, আমি ওকে নিয়েই যাবো।”
ডান ভ্রু তুলে বলল আনাবিয়া। ইলহান বড়ে করে একটা শ্বাস টেনে নিলো, এই মেয়ে ওকে শান্তিতে থাকতে দিবেনা, সবখানে এই মেয়ের বাগড়া দেওয়া চাই। হাল ছেড়ে দিয়ে বলল,
“ঠিক আছে, নিয়ে যাও।”
“অনুমতি চাইনিতো, আমি এমিনিতেও নিতাম ওমনিতেও নিতাম।”
“আচ্ছা বাবা! যাও তুমি এখন!”
দুহাত জোড় করে বলল ইলহান। আনাবিয়া ঠোঁট টিপে চোয়াল ফুলিয়ে নিঃশব্দে হেসে ইলহানকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো সামনে। ওর পেছন পেছন এগোলো কোকো আর আলফাদ। রেক্সা ভয়ে ভয়ে দ্রুত পায়ে এগোলো আলফাদের পিছু পিছু, এখুনি না আবার ওকে থেকে যেতে হয় এই অন্ধ কুটিরে!
ইলহান নিজেও এগোলো আনাবিয়াদের পেছনে। খুব জলদি মীরকে একবার দেখা আসা প্রয়োজন। বাই এনি চান্স যদি আনাবিয়া ওর অবস্থান ঠাওর করে ফেলে তবে খুব ঝামেলা হয়ে যাবে। এই মেয়ে এই পর্যন্ত যখন চলে এসেছে তখন মীর পর্যন্ত পৌছতে তার বেশি সময় লাগবে না।
ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে ইযানকে বলল,
“আমাকে জঙ্গকের গভীরে যেতে হবে। শেহজাদী আর তাঁর সাথের ছেলে মেয়ে গুলোকে ওদের স্থান পর্যন্ত পৌছে দিয়ে আসবে, তুমি সাথে যাবে অবশ্যই। বোঝা গেছে?”
“আপনার যেমন আদেশ, ইয়োর ম্যাজেস্টি।”
বলে ইলহানের পেছন পেছন এগোলো ইযান। কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ ইতস্তত ভঙ্গিতে বলল,
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, অনুমতি দেন তো একটা কথা বলি?”
ইলহান মাথা নেড়ে অনুমতি দিলো, ইযান বলল,
“আপনি একদিন বলে ছিলেন গুলবাহার যদি শেহজাদীর চাইতেও সুন্দরী হয় তবে তাকে আপনি গ্রহণ করবেন।”
ইলহান সামনে এগোতে এগোতে বলল,
“গুলবাহার কে কখনোই আমি গ্রহণ করবোনা তাই না?”
ইযান হাসলো সামান্য, শ্রদ্ধাভরে বলল,
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, গুলবাহার কোনো দিক দিয়েই শেহজাদীর পায়ের কাছে দাঁড়ানোরও যোগ্যতা রাখে না।”
ইযানের কথায় ঠোঁটের কোণা সামান্য প্রসারিত হলো ইলহানের, গর্ব ভরে বলল,
“শী ইজ অ্যা দেমিয়ান, অ্যা পিউর জেম, গ্লিটারিং জেম!”
ভূ পৃষ্ঠে, ডার্ক প্যালেসের প্রবেশ দ্বারের নিকট দাঁড়িয়ে আছে লিও ফ্যালকন সহ সব ছেলেরা। ইলহানের পেছন পেছন ওরাও ছুটে এসেছিলো, অপেক্ষা করছিলো কখন তারা বের হবে, কি অবস্থা সেখানে, সবাই ঠিক আছে কিনা, শেহজাদী ঠিক আছেন কিনা!
লিও পায়চারী করে চলেছে এদিক থেকে ওদিক। লিন্ডাকে রেখে এসেছে মহলে ফাতমা শার্লটের কাছে। গায়ে জ্বর চলে এসেছে ওর, ফাতমা কোনো রকমে ওষুধ পত্র দিয়ে জ্বর কমিয়েছে, এখন ও ঘুমোচ্ছে৷ নইলে ঠিকই এখানে আসার জন্য লাফাতো।
ফ্যালকন বার বার হাতঘড়ি দেখছে সময় কত পেরোলো। কাঞ্জি ওকামি আর হাইনা মিলে দূরে দাঁড়িয়ে শলাপরামর্শ করছে কিসের, জোভী এক কোণে একা দাঁড়িয়ে, কোনো কিছুর ভাবনায় মশগুল।
ওদের অপেক্ষার মাঝেই মেটালিক সাউন্ড করে হঠাৎ খুলে গেলো মাটির ওপর বসানো ধাতব দরজা। তারপরই সিড়ি বেয়ে উঠে এলো আনাবিয়া, ওর পেছন পেছন কোকো আলফাদ রেক্সা।
আনাবিয়াকে দেখা মাত্রই এতক্ষণ চিন্তিত, শঙ্কিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাগুলোর মুখে ফুটলো হাসি, মুহুর্তেই মুখের ওপর থেকে সমস্ত দুঃশ্চিন্তার ছাপ সরে গিয়ে ঝলমলিয়ে উঠলো। ফ্যালকন ছুটে আনাবিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত গলায়, অভিমান ভরে বলে উঠলো,
“শেহজাদী, আপনি আমাদের কাউকে না জানিয়ে কেন ওখানে গেছিলেন বলুন তো! আমাদের খাওয়া ঘুম উড়ে গেছে আপনার জন্য, এভাবে না বলে নিরুদ্দেশ হলে আমাদের অবস্থা কি দাঁড়ায় আপনি কি জানেন না?”
আনাবিয়া ওর উৎকন্ঠিত চেহারা দেখে হাসলো সামান্য, দুগাল ধরে একটা চাপ দিয়ে বলল,
“শাসন করা হচ্ছে বুঝি আমাকে?”
“শাসন মনে করলে এটা শাসনই।”
কপট রাগ দেখিয়ে বলল ফ্যালকন, বলতে বলতে নিচের ঠোঁট ফুলে উঠতে লাগলো ওর। চোখের কোণ ভারি হয়ে এলো। আনাবিয়া তা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো। ফ্যালকন নিজের ভরে আসতে চাওয়া চোখ জোড়া লুকোতে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে চলে যেতে যেতে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ হাসুন, হাসবেনই তো! আমাদেরকে কষ্ট দিয়ে তো আপনি বেশ মজা পান।”
সেই মুহুর্তেই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো ইলহান, ওর পেছনে ইযান। ইলহানকে দেখা মাত্রই বাচ্চারা সকলে আড়ষ্ট হয়ে গেলো যেন। চুপচাপ মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইলহান এগিয়ে এসে আনাবিয়ার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল,
“মহলে ফিরে যাও আনাবিয়া, ইযান পৌছে দিয়ে আসবে তোমাদের।”
সাথে ইযানকে পাঠাচ্ছে দেখে আনাবিয়া প্রতিবাদ করতে চাইলো৷ কিন্তু ও এদিকে এসেছে জানা মাত্র নিশ্চয় ইলহান ইতোমধ্যে সন্দেহ করে বসে আছে আনাবিয়া কোনো কিছুর আঁচ পেয়েছে। এখন প্রতিবাদ করলে ইলহান ওকে পাকাপোক্ত ভাবে সন্দেহ করে বসবে। আনাবিয়া তবুও বলল,
“কাউকে পাঠানোর প্রয়োজন নেই, আমরা একাই যেতে পারবো।”
অতঃপর ইযানের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার বলল,
“এমন তাল পাতার সেপাই আমাদের সাথে গেলে তাকে জংলি জানোয়ার থেকে প্রোটেক্ট করতে আমাদেরই পরিশ্রম করতে হবে।”
আনাবিয়ার এমন সম্বোধন ইযানের আত্মসম্মানে বাধলো যেন, আজ একটু স্বাস্থ্যবান হতে না পারার জন্য ওকে তাল পাতার সেপাই উপাধি দেওয়া হচ্ছে! মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো অতি সত্তর জিম করে বডি বানিয়ে শেহজাদীকে এসে দেখিয়ে যাবে।
ইলহান ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়লো, একটা না একটা উত্তর সবসময় ঠোঁটের আগায় সিল করা থাকে। ইলহান একটা বাক্য পুরোপুরি বলার আগেই হয়তো ওদিকে উত্তর প্রস্তুত হয়ে যায়। তবুও বলল,
“তুমি মহলে পৌছেছো এটা শিওর হয়েই ও চলে আসবে, একাই। চিন্তার কিছু নেই।”
ইযানকে একা ফিরতে হবে শুনে ইযানের গলা শুকিয়ে এলো, এই ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ওকে একা ফিরতে হবে? কোথায় কি লুকিয়ে আছে ওর পাতলা দেহ মজা করে খাওয়ার জন্য তার কোনো ইয়ত্তা নেই!
ইযানকে চুপসে যেতে দেখে আনাবিয়া বলল,
“আপনার তালপাতার সেপাইয়ের বেলুনের হাওয়া অলরেডি বেরিয়ে গেছে, আমরা এসব নিবোনা। এই চলো সবাই।”
বলে বাচ্চাদেরকে নিজের সাথে আসার আহ্বান জানিয়ে মহলে যাওয়ার রাস্তার দিকে এগোলো আনাবিয়া। বাচ্চারাও একে একে গুটিগুটি পায়ে ইলহানের সামনে থেকে সটকে পড়লো৷ ইলহান ইযানের দিকে চোখ গরম দিয়ে তাকাতেই সেও ছুটলো বাচ্চাদের পেছনে৷ আনাবিয়া দেখলেও বললনা কিছুই।
ওরা চোখের আড়াল হওয়া মাত্রই ইলহান দ্রুত গতিতে গাড়ি হাঁকালো ডার্ক ফরেস্টের দিকে।
মহলের সিড়ির ওপর বসে আছে ইযান, ওকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখে আছে কোকো আলফাদ লিও ফ্যালকন আর হাইনা। বাকি ছেলেরা মহল পাহারা দিচ্ছে। মেয়েরা রেক্সাকে নিয়ে কামরায় গেছে ওকে ওর বিছানা বুঝিয়ে দিতে, মেয়েটার সকাল থেকে খাওয়া হয়নি, সূর্যের আলো না পেয়ে পেয়ে শরীর ভয়ানক দুর্বল তার। কোকো বলে দিয়েছে ওকে খাইয়ে ঘুমোতে দিতে।
ইযান ভীতসন্ত্রস্ত চোখে তাকিয়ে আছে কোকো আর লিওর দিকে। হিজ ম্যাজেস্টি বলেছিলো শেহজাদী মহলে পৌছেছে এটা নিশ্চিত হয়ে আবার ফিরে আসতে, কিন্তু শেহজাদী ইতোমধ্যে বেইজমেন্ট থেকে একটা জমকালো, স্বর্ণ বাধানো কালো রঙা গাড়ি বের করে তীব্র গতিতে হাকিয়ে চলে গেছে কোথাও, আর এদের বলে গেছে ইযানকে ধরে রাখতে যতক্ষণ না আনাবিয়া আবার ফিরে আসে৷
ইযান বার বার ভয়ে ভয়ে চারদিকে নজর দিচ্ছে। এদের শরীরের বহর দেখে এখন নিজেকে সত্যি সত্যিই তাল পাতার সেপাই মনে হচ্ছে ওর। কোকো নামক ছেলেটা যেভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাতে মনে হচ্ছে ইযান যদি একটা পশমও নড়াবার চেষ্টা করে তবে এখুনি তুলে একটা আছাড় দিতে দুবার ভাববে না। অথচ এদের কিনা ওরা উদ্ধার করে নিয়ে এলো! হিজ ম্যাজেস্টির ওপর ভয়ানক রাগ হতে লাগলো ওর৷
এমন সময় কামরা থেকে বারান্দায় বেরিয়ে এলো ফাতমা, ওকে দেখে কোকো জিজ্ঞেস করলো,
“রেক্সুরেন্ট ঘুমিয়েছে?”
ফাতমা ফিক করে হেসে মাথা নাড়ালো উপর নিচে৷ শুধোলো,
“রেক্সুরেন্ট আবার কেমন নাম?”
“ওর কপাল ভালো নামটা রেক্সুরেন্টে এসে আটকেছে, নইলে ওর নাম হওয়া উচিত ছিলো ভাতের হোটেল।”
ডার্ক ফরেস্টের ভেতরের নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি পার্ক করলো ইলহান। এরপরে আর রাস্তা নেই, এটুকু পায়ে হেটে যেতে হবে। চারদিকে কাঁটা বন, তার ভেতর দিয়ে একটু খানি সরু রাস্তা। সরু রাস্তা দিয়ে কোনো রকমে ঠেলে ঠুলে যাওয়া যায়, নইলে ধারালো কাঁটার সূচালো অগ্রভাগে শরীরে লাগলে ছড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
ইলহান গাড়ি থেকে নেমে এগোলো সরু রাস্তা ধরে। এগোতে এগোতেই খটকা লাগলো ওর। চারদিক অন্য রকম দেখাচ্ছে কেমন। মনে হচ্ছে কাঁটা বনের ভেতর দিয়ে ছুটে গেছে কোনো জন্তু জানোয়ার, পেঁচিয়ে থাকা লতানো কাঁটাগাছ গুলো আগের মতো নেই, আলগা হয়ে আছে। ধূসর সবুজ কাঁটার অগ্রভাগে লেগে আছে লাল রক্তের দাগ।
ইলহান সেদিকে নজর দিতে দিতে এগোলো মীরকে রাখা স্থানে। আরও কিছুদূর যেতেই ওর চোখে পড়লো মীরকে চারদিক থেকে আটকে রাখা পাথরের খন্ড গুলো, সেগুলো ইতস্ততবিক্ষিপ্ত হয়ে আছড়ে পড়ে আছে চারপাশে, আর দাঁড়িয়ে নেই! বুকের ভেতর দিড়িম শব্দ হলো যেন ইলহানের, ছুটে গেলো ও সেখানে।
ফাঁকা, সবই ফাঁকা, কেউ নেই এখানে, কিছুই নেই। চারপাশে পড়ে আছে ভাঙা শেকলের অবশিষ্টাংশ, পড়ে থাকা পাথরের ওপর রক্তাক্ত হাতের একটা বিশাল ছাপ! মধ্যিখানের মাটিতে মীরের হাটু রাখার স্থানে দেবে আছে, সেখানে রক্তের দাগ শুকিয়ে মাটিতে মিশে গেছে।
ইলহানের শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেলো মুহুর্তেই। যে ভয়টা পেয়েছিলো তা এত দ্রুত সত্যি হয়ে যাবে সেটা ও ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবেনি!
“আনাবিয়া…. নাহ্, আনাবিয়া অতোটা শক্তিশালী কখনোই নয়। মীর নিজেই এই শেকল ভেঙেছে, কিন্তু কেন? কিভাবে?”
বিড়বিড়িয়ে বলল ইলহান, গলা শুকিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো কিছু, ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা দেখা দিলো ওর। দ্রুত পিছু ফিরে গাড়ি নিয়ে আবার এগিয়ে চললো কোথাও।
মীর বেশি দূর যেতে পারবেনা, এখন ও এখানের কিছুই চিনেনা, আর যে ড্রাগস ওকে দেওয়া হয়েছে তাতে ও কিছু চিনবেও না, কাউকে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারবেনা! স্মৃতিতে কিছু থাকলে তো বলবে!
আনাবিয়াকে হারানোর পর যে টুকু কথা, যেটুকু স্মৃতি, যে টুকু মনুষ্যত্ব ছিলো তা যে ড্রাগসের প্রভাবে পুরোটাই লোপ পেয়েছে ওর ক্রমে ক্রমে! পালিয়ে ও যাবে কোথায়?
ইলহান মস্তিষ্কে ছক কষে নিলো, কোথায় কোথায় মীর যেতে পারে, কোথায় ওকে টানবে বেশি? কোথায় গিয়ে ও থামবে, আশ্রয় খুঁজবে! ছক অনুযায়ী একের পর এক স্থান গাড়ি নিয়ে খুঁজে চলল ও শকুনের মতোন।
মীরের স্বর্ণ বাধানো কালো রঙা আতঙ্কের ড্রাইভিং সিটে বসে সবেগে ড্রাইভ করে চলেছে আনাবিয়া। মহলে ফিরেই মীরের কিছু পোশাক আর গাড়িখানা নিয়ে ও বেরিয়ে পড়েছে তৎক্ষনাৎ। ইলহান জঙ্গলেই থেকে গেছে, নিশ্চয় মীর তার আটকে রাখা স্থানে এখনো বিদ্যমান কিনা দেখতে ছুটে যাবে। যখন পাবেনা তখন নিশ্চয় মাথা খারাপ হয়ে যাবে ওর, খুঁজতে বেরোবে যত্রতত্র!
বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২৪
ইলহান মীরকে খুঁজে পাওয়ার আগেই মীরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলতে হবে। মীর কিছুই জানেনা, কিছুই বুঝেনা। এই অবস্থায় ইলহানের মুখোমুখি হওয়া মানেই নিজের হাতে নিজের ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসা। আনাবিয়া এটা কিছুতেই হতে দেবে না।
আনাবিয়া গতি বাড়িয়ে দিলো গাড়ির, রেড জোনের ভেতরের অদৃশ্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি ছুটে চলল ঝড়ো গতিতে।
