বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৭
shanta moni
“সকাল পেরিয়ে দুপুর, ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে। শুভ্রের খোঁজ এখনো কেউ দিতে পারেনি। ফোন দিচ্ছে কিন্তু বার বার ফোন বন্ধ বলছে। আরাফ চৌধুরী চিন্তিত হয়ে বসে আছেন সোফায়। রোদকে নিজের রুমে দিয়ে আসা হয়েছে। বার বার সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে রোদ। কিছুক্ষণ আগে ডক্টর এসে দেখে গিয়েছে। সাথে ঘুমে ইনজেকশন পুস করেছে। রোদ নিজের রুমে ঘুমাচ্ছে। হেনা বেগমের সেইম অবস্থা। শুভ্রের এমন কথা শুনে বুকে ব্যথা উঠে। আর অসুস্থ হয়ে যান।
রাত : ১২ টার কাছাকাছি
_বাড়ির সবাই সব যায়গা খোঁজ দিচ্ছে।
কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ পাচ্ছে না শুভ্র।
ড্রয়িং রোমান,নিলয়, অয়ন আরাফ চৌধুরী, আরিফ চৌধুরী আকরাম চৌধুরী সবাই বসে আছেন। এমন সময় ড্রয়িং রুমে দরজা খুলে বাড়ির ভিতরে ডুকে শুভ্র। শুভ্রকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আরাফ চৌধুরী। দৌড়ে গিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে। শুভ্র প্রথমে অবাক হলেও পড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। আরাফ চৌধুরী কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠে…!
আরাফ চৌধুরী: বাবা তুই ঠিক আছিস?
শুভ্র: হুম আমি ঠিক আছি ড্যাড। বাট তোমাদের কি হয়েছে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
_আরাফ চৌধুরী শুভ্রকে ছাড়েন। চশমা খুলে নিজের চোখের পানি মুছে। রোমান শুভ্রের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে পরে একে একে সব ঘটনা খুলে বলে…!
_নিলয় দৌড়ে যায় হেনা বেগমের রুমে।
_হেনা বেগম অসুস্থ শরীর নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। শুভ্রের কাছে এসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। শুভ্র হেনা বেগমকে শান্ত করে। তপ্ত নিশ্বাস ফেলে সবার উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…!
শুভ্র: একটু সমস্যার জন্য আমি সকাল ১০টার ফ্লাইট আসতে পারিনি। তাই দুপুর ২ টার ফ্লাইট আসতে হয়। আর ফোনে যে কাউকে জানাবো সেটাও পারেনি। ফোন বন্ধ হয়ে ছিল। আর নিউজ চ্যানেলে খবরটা আমিও শুনেছি। মিথ্যা এক নিউজ সব যায়গায় ছড়িয়েছে। সে ব্যবস্থা নিয়েছি আমি। আশা করি সব কথা বুঝতে পারছো, আমি ঠিক আছে, কিছু হয়নি আমার।
“শুভ্র থেমে হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে…!
হেনা বেগম: দাদি আমার বউ কই?
হেনা বেগম চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে..!
হেনা বেগম: তোর বউয়ের অবস্থা খুবই খারাপ, ডক্টর ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে গেছে। নিজের রুমে আছে!
_“শুভ্র মুচকি হেঁসে সিঁড়ি বেয়ে উপরে রোদের রুমের দিকে যায়।
_রুমে ভিতরে ডুকতেই দেখে টিম লাইটের মৃদু আলোয় রোদের মুখটা দেখা যাচ্ছে। কেমন জানো পুড়ো মুখ শুকিয়ে আছে। শুভ্র বেডের দিকে এগিয়ে যায়। রোদের পাশে বসে আলতো হাতে রোদের গালে হাত দিয়ে মৃদ স্বরে ডাকে…!
শুভ্র: ফুল, এই ফুল….!
_পর পর শুভ্রের ডাকে রোদের ঘুম পাতলা হয়ে আসে। পিটপিট করে চোখ খুলে। আপছা আলোয় শুভ্রের মুখ দেখে দড়ফড় করে শোয়া থেকে উঠে বসে…!
_কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠে…!
রোদ: আ আ আপনি এসেছেন…?
শুভ্র: হুম আসছি বউ তো…!
_রোদ মুখে হাত দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে…!
“কোনো কিছু না ভেবেই শুভ্রকে জাপটে ধরে, কাঁদতে কাঁদতে বলে….!
রোদ: আপনি কোথায় গিয়েছিলেন আমাকে ছেড়ে। প্লিজ আপনি কোথাও যাবেন না। আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না। সত্যি বাঁচবো না…!
শুভ্র রোদের মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে…!
শুভ্র: রিল্যাক্স জান, এই তো আমি আসছি, কোথাও যাচ্ছি না। পাখি আমার এই তো আমি।
_শুভ্রকে পেয়ে রোদের কান্না যেনো আরো বেড়ে যায়। অনেক কষ্টে রোদকে শান্ত করে শুভ্র।
_রোদ শান্ত হতেই কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে আসে রোদকে, বিছানার উপর রোদকে বসিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ডুকে, রোদের মনে হচ্ছে সে কোনো স্বপ্ন দেখছে৷ কিন্তু স্বপ্ন না সত্যি তার শুভ্র ভাই তার কাছে আসছে। রোদ নিজে নিজের হাতে চিমটি কেটে ব্যথায় নাক মুখ কুচকে ফেলে। শুভ্র রোদকে এমন করতে দেখে মুচকি হাঁসে, রোদের কাছে এগিয়ে এসে মজা করে বলে_
শুভ্র: আমি স্বপ্ন এসেছি বউ, বাসর করতে, স্বপ্ন বাসর করে আবার চলে যাবো।
রোদ চোখ বড় বড় করে তাকায় শুভ্রের দিকে…!
“কি অসভ্য লোক ছিহহ, সব সময় আজে বাজে চিন্তা নিয়ে ঘুরে(মনে মনে বলে)
শুভ্র রোদের চুল টেনে বলে…!
শুভ্র: ছিহহহ বউ এই সব বলে না। বাজে চিন্তা কেনো হবে। এটা হচ্ছে হালাল চিন্তা বুচ্ছো।
রোদ: রাখেন আপনার হালাল চিন্তা।
শুভ্র রোদের পাশে বসে রোদকে জড়িয়ে ধরে, রোদকে বিছানায় নিয়ে শুয়ে পড়ে।
_শুভ্রের বুকে মাথা রোদের, শুভ্র আস্তে করে রোদকে ডেকে উঠে…!
শুভ্র: রোদ…..?
রোদ: হুম….!
শুভ্র: এতো ভালোবেসো না বউ। সত্যি সত্যি যদি আমার কিছু হয়ে যায়। তখন তো তোমাকে শক্ত থাকতে হবে।
শুভ্রের কথায় রোদের বুক কেঁপে ওঠে…!
না চাইতেও চোখের কোনে পানি আসে।
রোদ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে…!
রোদ: ভালোবাসেন আমায়? সত্যি যদি একটুও ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আমাকে একা করে কোথাও যাবেন না।
শুভ্র: সব দুঃখ যেমন প্রকাশ করতে নেই। তেমন কিছু ভালোবাসা প্রকাশ করতে নেই। ভালোবাসা প্রকাশ করলে হারিয়ে যায়। আর আমি আমার ভালোবাসা হারাতে চাই না।
শুভ্র একটু থেমে আবার বলে উঠে…!
শুভ্র: তুই অবুঝ নয় রোদ, সবই কিছুই বুজিস।
শুভ্র পুনরায় রোদকে বলে উঠে…!
শুভ্র: জীবনে এমন একটা সময় আসবে। যখন তোমার প্রতি মূহুর্তে মনে হবে আমি ভুল। তোমার সাথে ভুল করেছি। সেইদিন তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা আর বিশ্বাসের পরিক্ষা হবে।
_শুভ্র কথা গুলো বলে অনেকক্ষণ চুপ থাকে। পর মূহুর্তে ঘুমিয়ে যায়।
_রোদ শুভ্রের শেষে বলা কথা গুলো না শুনেই ঘুমিয়ে যায়..!
“রাত প্রায় এক টার কাছাকাছি…!
_হাঁসি বেগম এর সামনে কালো পোশাক পড়া একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে…!
হাঁসি বেগম চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে…!
হাঁসি বেগম: আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে শুভ্র সবটা জেনে গেছে।
অজনা শত্রু: শুভ্র কিছুই জানে না। শুভ্র যদি সব জেনে যেতো, তাহলে আমরা এখানে থাকতাম না।
হাঁসি বেগম: আমার মনে হচ্ছে শুভ্র রোদকে মেনে নিয়েছে। যার জন্য আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। রোদের কাছে কাছে যদি শুভ্র থাকে তাহলে কোনো ভাবেই আমরা আমাদের কাজে সফল হতে পারবো না।
সামনে থাকা লোকটিও সহমত পোষন করে। আর বলে…!
“আমারো তাই মনে হচ্ছে, যে করেই হোক রোদের থেকে শুভ্রকে আলাদা করতে হবে।
হাঁসি বেগম: কালকে রিয়া আসছে। তারপর কোনো না কোনো একটা ব্যস্ততা করতে হবে।
_এই রকম অনেক বিষয়ে আলাপ আলচনা করে লোকটি চলে যায়।
_হাঁসি বেগম চুপি চুপি নিজের রুমে চলে আসেন।
_সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে, বিডিও নিয়ে পড়ে আছে নিলয়। তার উদ্দেশ্যে মূলত এখন ভিডিও করা। বাড়ির সামনে দাড়িয়ে, টিকটক ভিডিও বানাচ্ছে।
এমন সময় বাড়ির গেট দিয়ে হাতে লাঘেজ টানতে টানতে বাড়িতে ডুকছে রিয়া। নিলয় সামনে এসে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যায় রিয়া। রাগে তেতে উঠে বলে…!
রিয়া: ইউ…তোমাকে তো আমি….!
সামনে তাকাতেই রিয়াকে দেখে নাক মুখ কুচকে ফেলে নিলয়। ছোট একটা শর্ট প্যান্ট, আর কাধ কাটা গেঞ্জি পড়ে আছে। শরীরের সব কিছু ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে। রিয়া উঠতে গিয়ে আবার ঠাসস করে পড়ে যায়। নিলয় আর এবার হাঁসি থামাতে পারে না। হো হো করে হেঁসে দেয়। রিয়া রাগে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে…!
রিয়া: এই বিয়াদব তুই হাঁসছিস কেন…?
নিলয় রিয়াকে ব্যঙ্গ করে বলে উঠে
নিলয়: আমি হাঁসছি না, চাচি আম্মা।
দাঁতে বাতাস লাগাচ্ছি।
রিয়া যেনো আরো রেগে যায়। রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠে…!
রিয়া: এই তুই কাকে চাচি আম্মা বলছিস…!
নিলয়: এখানে তো আপনি ছাড়া কেউ নেই চাচি আম্মা। যে তাকে বলবো।
রিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়, তারপর বলে
রিয়া: তোকে তো আমি…?
_বলেই থাপ্পড় মারতে যায়। নিলয় রিয়ার হাত ধরে মচকে দিয়ে বলে উঠে…!
নিলয়: এই ছেমড়ি, কাকে মারতে আসছিস হ্যা। নিজেকে আয়না দেখছিস,
চাচি আম্মাদের থেকেও বাজে লাগে।
বলেই ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূড়ে সরিয়ে দেয়। রিয়া নিলয়ের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে…!
রিয়া: হোয়াট দ্যা হেল…? সাহস কি করে হয় তোর আমার হাত ধরার, আমাকে তুই করে বলার।
নিলয় দাঁত বেড় করে হেঁসে বলে…!
নিলয়: আহারে আমার চাচি আম্মা, আন্নে কোন খ্যাতের মুলা যে আপনার হাত ধরতে সাহস লাগবে।
রিয়া রেগে গিয়ে নিলয়ের সামনে আসতে যাবে। এমন সময় নিলয় দূরে সরে গিয়ে বলে উঠে…!
নিলয়: সামনে থেকে সর ছেমড়ি। ওই নোংরা হাত পা দিয়ে আমাকে ধরলে। আমার ওযু করা লাগবে।
বলেই সামনে থেকে সরে অন্যদিকে চলে যায়। রিয়া অপমান লজ্জায়, দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে উঠে…!
রিয়া: দেখে নিব তোকে আমি…!
এইদিকে
কিছুক্ষণ আগেই রোদের ঘুম ভাঙছে,
শুভ্র রোদের বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। রোদ দুই হাতে জড়িয়ে আছে শুভ্রকে। রোদের কাছে সব কিছুই যেনো স্বপ্নের মতো। রোদ মনে মনে বলে উঠে…!
রোদ: এতো সুখ সইবে তো আমার কপালে….!
_আল্লাহ যেনো এই সুখ চিরস্থায়ী করে।
কারো নজর যেনো না, পড়ে শুভ্র রোদের সম্পর্কে। সবার সব সম্পর্ক ঠিক থাকলেও ঠিক নেই৷ রোমান রুহি, রোমান আগের থেকে অনেকটা পাগলের মতো হয়ে গেছে। রুহি তার সামনে আছে। কিন্তু তার দিকে ফিরে পযন্ত তাকাচ্ছে না। দুই দিকে দুইটি মানুষ ভালোবাসার দহনে পুড়ছে।
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৫৬ (৪)
বিকাল : ৪ টা….!
পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে রুহি।
সামনে পাত্র মা বাবা, আর পাত্র নিজে,
রোমান সারা রাত ঘুমাইনি, শুভ্রদের বাসায় ছিল। সারাদিন ঘুমিয়ে, একটু আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেড় হয়। ড্রয়িং রুমে এসেই পা থেমে যায়, রোমানের। পাত্রের মা, রুহির হাতে আংটি পড়াচ্ছেন…!
এমন সময় রোমান চিৎকার করে বলে উঠে….!
