mad for you part 17

mad for you part 17
তানিয়া খাতুন

চৌকিটা ছোট, তাই রাতভর দু’জনে বেশ কষ্টে ঘুমিয়েছিল।
ক্রিশ রুহিকে পুরোপুরি নিজের বুকের ওপর নিয়েই ঘুমিয়েছিল।
সকালের আলোয় ক্রিশের ঘুম ভাঙতেই নিজের ওপর রুহির শরীরের উষ্ণতা টের না পেয়ে একটু ধড়ফড়িয়ে ওঠে।
চারদিকে তাকিয়ে রুহিকে না দেখে অবাক হয়, তারপর তাড়াতাড়ি চৌকি থেকে নেমে পড়ে।

ক্রিশ: “বাটারফ্লাই…”
ঠিক তখনই রুহি চুল মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকছিল, আর ক্রিশ দরজা দিয়ে বেরোচ্ছিল।
দু’জনের মাথা ঠাস করে ধাক্কা খায়।
রুহি: “আহহহ! মা গো, অফ! মাথা না আলুর বস্তা?”
ক্রিশ: “কোথায় ছিলে হ্যাঁ? এত সকালে উঠেছো কেন?”
রুহি: “অফ! তাতে কি হয়েছে?
বাঁদরের মতো লাফাচ্ছেন কেন?
ওয়াশরুমে যাব না নাকি!”
ক্রিশ: “না, বিছানাতেই করো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রুহি (চোখ বড় বড় করে): “এই! আপনি কি পাগল নাকি?”
ক্রিশ (হাসতে হাসতে): “হ্যাঁ, তোমার জন্যই।”
রুহি: “ফালতু না বকে ফ্রেশ হয়ে আসুন, চা করব আপনার জন্য।”
ক্রিশ: “আমি বেরোব, তুমি একা থাকতে পারবে তো?”
রুহি: “কেন পারব না? আমি কি বাচ্চা নাকি?”
ক্রিশ এগিয়ে এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তোমার যা যা লাগবে, একটা লিস্ট বানিয়ে রাখো। বই-খাতাগুলোও লিখে রেখো। সব নিয়ে আসব।”
রুহি (চুপ করে তাকিয়ে): “কিন্তু এত টাকা পাবেন কোথায়?”
ক্রিশ (হালকা হেসে): “ওটা আমার উপর ছাড়ো।”
তারপর ক্রিশ ফ্রেশ হতে চলে যায়, আর রুহি স্থির চোখে তার তাকিয়ে থাকে ক্ৰিশেৱ যাওয়াৱ দিকে।

সারা দিন কেটে সন্ধ্যা নামছে, অথচ ক্রিশের এখনো কোনো খোঁজ নেই।
দুপুরে একবার ফোনে বলেছিল, “আসছি, একটু দেরি হবে।” তারপরে মানুষ টা কোথায় গেছে কে জানে।
রুহি জানালার ধারে বসে বারবার ফোনটা হাতে নিচ্ছিল, আবার নামিয়ে রাখছিল।
ফোনে নেটওয়ার্ক নেই একদম কল যাচ্ছেনা!
সে হালকা বিরক্ত মুখে বলে ওঠে,
“এখন এবার কল করব কী দিয়ে?”
ঠিক তখনই বাইরে থেকে ভেসে আসে পরিচিত কণ্ঠ—
“বাটারফ্লাই…”

সেই এক ডাক শুনেই রুহিৱ শৱীৱে যেন বিদ্যুৎ খেলে ওঠে সে ছুটে যায় বাইরে।
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে ক্রিশ—ঘাম ভেজা মুখ, ধুলো-মাখা জামা,
আর দুই হাতে বড় বড় ব্যাগ—গুনে দেখলে অন্তত সাত-আটটা।
রুহি (চোখ বড় বড় করে): “হায় আল্লাহ! এত ব্যাগ? এত কিছু এনেছেন কেন?”
কী আছে এগুলো তে?
ক্রিশ (মুচকি হেসে): “ভেতরে চলো, এক এক করে দেখাচ্ছি।”
দু’জন ঘরে ঢোকে।

চৌকির ওপর ক্রিশ ব্যাগগুলো রাখে, তারপর একে একে খুলে দেখাতে শুরু করে—
প্রথম ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে আসে দু’টো সুন্দর ড্রেস —
একটা হালকা গোলাপি লং চুড়িদার, যার গলায় সূক্ষ্ম সোনালি কারুকাজ,
আরেকটা নেভি ব্লু রঙের সালওয়ার কামিজ, যার ওড়নায় ছোট ছোট পাথৱেৱ কাজ।
দ্বিতীয় ব্যাগ থেকে বেরোয় জোড়া সাদা স্নিকার্স আর হালকা হিল জুতো,
রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে ক্রিশ বলে,
“সব সময় হিল পড়লে তো তোমাৱ পায়ে ব্যাথা কৱে তাই স্নিকার্স এনেছি।”
তৃতীয় ব্যাগে বই আর খাতা, নতুন কলম।
“তুমি যেই ব‌ই গুলো বলেছিলে সব এনেছি।,”
বলতে বলতে ক্রিশের মুখে এক অদ্ভুত শান্ত হাসি ফুটে ওঠে।
তারপর ব্যাগ থেকে বেরোয় রুহির ব্যবহারের জিনিসপত্র—
চুলের তেল, ব্রাশ, ফেসওয়াশ, ছোট আয়না, পাউডার, লিপবাম,
সব কিছু নিখুঁতভাবে সাজানো।
রুহি অভিভূত হয়ে তাকিয়ে থাকে,

“আপনি… এগুলো সব মনে কৱে কৱে এনেছেন?”
ক্রিশ শুধু হাসে,
তারপর আরেক ব্যাগ খুলে বলে,
” এগুলোও তোমার জন্য ।”
ভেতরে দু’জোড়া চুড়ি,
এক জোড়া ছোট গোল সোনালি দুল,
আর একখানা হালকা নীল রঙের শাড়ি,
যার কিনারায় রুপোলি কাজ করা।
আরেকটা ব্যাগে গাঢ় লাল রঙের শাড়ি,
যার কাপড়ে ফুলের নকশা যেন আলোয় ঝিলমিল করে উঠছে।
রুহি নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে।
তার চোখে জল চিকচিক করে—
সে শুধু ধীরে বলে,

“এত কিছু আনলেন কেন, ক্রিশ?”
ক্রিশ এগিয়ে এসে রুহির কপালে হাত রেখে বলে,
“কারণ আমি তোমাৱ কোনো কমতি ৱাখতে চাই না।”
রুহি হঠাৎ কোনো কিছু না ভেবেই ক্রিশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
তার বুকের ভেতর যেন চাপা আবেগের ঢেউ এক মুহূর্তে ফেটে বেরিয়ে আসে।
ক্রিশ হঠাং আচমকা আলিঙ্গনে এক মুহূর্তের জন্য অবাক হয়ে যায়—
হাতদুটো নড়াতে পারে না, শুধু অনুভব করে রুহির কাঁপতে থাকা শরীরটা নিজের গায়ে গলে পড়েছে।
পরের মুহূর্তেই ভারসাম্য হারিয়ে দু’জনেই চৌকির ওপর পড়ে যায়,
রুহি পুরোপুরি ক্রিশের ওপর, তবু ছাড়ে না… আরও শক্ত করে ধরে রাখে।
চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে কেঁপে ওঠে রুহি।
তারপর হঠাৎ ফুপিয়ে ওঠে।

ক্রিশ (বিহ্বল হয়ে): “এই… এই! তুমি হঠাৎ এমন কাঁদছো কেন, বাটারফ্লাই?
তুমিও কি আমার মতো পাগল হয়ে গেছো?”
রুহি (কাঁপা গলায়): “হুঁ… আপনার জন্যই পাগল হয়েছি।
কী দরকার ছিল এত কিছু আনার?
নিজের জন্য কিছু আনেননি কেন?
আপনার তো কিছুই নেই… কাল থেকে একই জামা-প্যান্ট পরে আছেন!”
ক্রিশ মৃদু হেসে রুহিৱ মাথায় হাত বোলায়,
আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে রুহির চুলে হাওয়ার মতো ছোঁয়া দেয়।
ক্রিশ: “ওগুলো নিয়ে ভাবিস না। দুইদিন পর নিয়ে নেব।
এখন তুই মন দিয়ে পড়াশোনা করবি, ঠিক আছে?”
রুহি (চোখ মুছে): “কিন্তু এত টাকা কোথা থেকে পেলেন?”
ক্রিশ (একটু দ্বিধায়): “আমি একটা কাজ পেয়েছি।”
রুহি (চোখ বড় করে): “সত্যি? কী কাজ?”
ক্রিশ কিছুটা গোপন হাসি দিয়ে বলে,

“মানে, তেমন কিছু না… আপাতত লেখালেখির কাজ।
ভালো কিছু না পাওয়া পর্যন্ত এইটা করব।”
রুহির চোখে আবার একরাশ আলোর ঝিলিক খেলে যায়।
সে মৃদু হেসে বলে,
“তাহলে আপনার পড়াশোনা? আর করবেন না?”
ক্রিশ তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে—
“উঁহু… পড়ব তো, কিন্তু এবার তুই আমায় পড়াবি, কেমন?”
রুহি এক চিলতে হাসি দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমি আপনায় পড়াব।”

রাত গভীর হয়ে এসেছে, দূরের গলির কুকুরের আওয়াজ ভেসে আসছে নিঃস্তব্ধ অন্ধকারে।
রুহি আধোঘুমে হঠাৎ টের পায়—ক্রিশের শরীরটা অস্বাভাবিক গরম হয়ে উঠেছে।
তার বুকের ওপর রাখা মুখটা তুলতেই চমকে ওঠে।
রুহি হাত বাড়িয়ে ক্রিশের কপালে ছোঁয়া দিতেই বোঝে—ভয়ানক জ্বর।
তার চোখে আতঙ্ক নেমে আসে।
রুহি (উদ্বিগ্ন গলায়): “ক্রিশ… ক্রিশ! শুনছেন? আপনার তো অনেক জ্বর!
আমন ভাইয়াকে ফোন করি? উনি ডাক্তার নিয়ে আসবেন।”
ক্রিশ ধীরে চোখ খোলে, জ্বৱেৱ ঘোৱে তার চোখ দুটো লালচে জ্বলছে।
গলায় কাঁপা স্বর—

ক্রিশ: “বাটারফ্লাই… আমার পুরো শরীরে ব্যথা করছে… প্রচুর ঠান্ডা লাগছে…
একটু কাছে আয়… প্লিজ।”
রুহি কেঁপে ওঠে। বাইরে থেকে শীতল বাতাস ঢুকছে জানালার ফাঁক দিয়ে।
চাদর তো নেই, গরম কিছুই নেই ঘরে।
রুহি (হতাশ মুখে): “ঠান্ডা লাগছে, কিন্তু কিছুই তো নেই ঢাকার!
সে ধীরে ক্রিশের ওপর শুয়ে পড়ে, নিজের ওড়নাটা খুলে যতটা পারে দু’জনের শরীর ঢেকে দেয়।
তার বুক ক্রিশের বুকের সঙ্গে মিশে যায়,
শরীরের উষ্ণতা দিয়ে যেন আগুনের মতো সেই জ্বরকে হার মানাতে চায়।
ক্রিশের কাঁপুনি কিছুটা কমে আসে,
কিন্তু ব্যথার তীব্রতায় সে অন্যমনস্ক হয়ে রুহিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে—

ক্রিশ: “তুই কাছে থাকলে সব কষ্ট’ দূৱ হয়ে যায়।”
রুহির গলা ভারী হয়ে আসে,
তার চোখের কোণে জল চিকচিক করে ওঠে।
নরম গলায় সে বলে—
“আমি আছি ক্রিশ… আপনাৱ, কিছু হবে না…”
বাইরে হালকা বাতাসে জানালার পর্দা নড়ে ওঠে,
চাঁদের আলো এসে পড়ে চৌকির ওপর।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎই ক্রিশ রুহিকে সরিয়ে উঠে বসল।
রুহি অবাক হয়ে তাকায়, “কি হলো, বেশি খারাপ লাগছে?”
ক্রিশের চোখ লালচে, ক্লান্তিতে ভারী হয়ে আছে।
সে একবার তাকাল রুহির দিকে— রুহির গায়ে তখন আর ওড়না নেই, থ্রিপিসটা সামান্য সরে গেছে, ভেতরের অংশের ফিতা দেখা যাচ্ছে আধো আলোয়।

ক্রিশ একবার শুকনো ঢোঁক গিলে চোখ বুজে আবার খুলল।
তার কণ্ঠ নরম, তবুও ভেতরে চাপা আগুন—
“ঘুমা, বাটারফ্লাই… আমি একটু বাইরে ঘুৱে আসি।”
রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে, “মানে? শরীর এত খারাপ, আর আপনি বাইরে যাবেন?”
ক্রিশ জোর করে হাসল, “আমি ঠিক আছি, তুই ঘুমা।”
রুহি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল তাকে, নিঃশ্বাস কাঁপছে—
“না, কোথাও যাবেন না… এত জ্বর নিয়ে আমি আপনাকে বাইরে যেতে দেব না।”
হঠাৎ ক্রিশ রুহিকে এক ঝটকায় বিছানায় শুইয়ে দিল।
দু’হাতে তার কব্জি চেপে ধরে, চোখের গভীরতা মিশিয়ে দিল রুহির চোখে।
গলার স্বর ভারী হয়ে এলো—

“আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না, বাটারফ্লাই…”
এক মুহূর্ত থেমে সে রুহির কপালে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ঘুমিয়ে পড়ো। আমি বাইরে আছি।”
ক্রিশ উঠে যেতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই রুহি ক্রিশের হাত চেপে ধরে।
রুহি কাঁপা গলায় বলে, “প্লিজ, যাবেন না… আমার ভয় করছে।”
ক্রিশ মুচকি হেসে বলে, “আমাকে ভয় করছে না?”
রুহির গাল টকটকে লাল হয়ে যায়, সে মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে নাড়ে না বোঝায়।
ক্রিশ নিচু গলায় ফিসফিসিয়ে বলে, “নিজেই নিজের বিপদ ডেকেছো, বাটারফ্লাই… এখন আমায় সামলাও।”
রুহি কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ক্রিশ তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।
রুহি শুকনো গলায় ঢোঁক গেলে ক্ৰিশেৱ চোখে অন্য ৱকম নেশা খেলা কৱছে।
ক্রিশ ধীরে ধীরে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে।
রুহি ভয়ে কাঁপা গলায় বলে, “কি… কী করছেন আপনি? আপনার তো শরীর খারাপ…”
ক্রিশ ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টেনে বলে,

mad for you part 16

“ক্রিশ খান এতটা দুর্বল নয়, বউ।
যে… সামান্য জ্বরের জন্য বউকে সুখ দিতে পারবে না।”
ক্রিশ এক টানে রুহিকে তুলে তার ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিল।
রুহি ঘাবড়ে গিয়ে ক্রিশের বুকে হাত দিয়ে ঠেলতে চাইল, কিন্তু সরাতে পারল না।
ক্রিশ রুহির কোমর চেপে ধরে তাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিল।
মিনিট এৱ পৱ মিনিট গড়িয়ে যায়, কিন্তু ক্রিশ থামে না।
রুহি হাঁফিয়ে ওঠে শ্বাস নিতে পাৱে না।
প্ৰায় অনেকক্ষণ পৱ ৱুহিৱ নাড়াচোৱা না পেয়ে — ক্রিশ রুহিকে ঠেলে বিছানায় ফেলে দেয়।
ঠিক তখনই তার চোখে পড়ে, রুহিৱ জ্ঞান নেই্।
ক্রিশ রুহির গালে চাপর দেয়,
“ক্রিশঃ … বাটারফ্লাই… বাটারফ্লাই…”
হে আল্লাহ এ কেমন লেদা মাৱকা এটুকু তেই অজ্ঞান হয়ে গেলে 83 kg ওজন নিতে গিয়ে তো কোমায় চলে যাবে।

mad for you part 18

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here