mad for you part 19
তানিয়া খাতুন
সকালটা তখনও পুরোপুরি জেগে ওঠেনি।
জানালার পর্দা ভেদ করে সূর্যের মোলায়েম আলো বিছানার সাদা চাদরে হালকা সোনালি আভা ছড়িয়ে দিয়েছে।
ঠিক তখনই ক্ৰিশের ফোনটা হঠাৎ বেজে ওঠে — তীক্ষ্ণ রিংটোনে ঘুমের নিস্তব্ধতা ভেঙে যায়।
ক্ৰিশ ঘুমজড়ানো গলায় একটা বিরক্ত আওয়াজ করে হাত বাড়ায়, চোখ আধবোজা অবস্থায় ফোনটা কানে নেয়।
ওপাশ থেকে রুদ্রর চেনা কণ্ঠ ভেসে আসে —
রুদ্র: “এই, কিরে? আজ কলেজে আসবি বলেছিলি, কখন আসবি?”
ক্ৰিশ (চোখ না খুলেই): “বাল, কটা বাজে হে? সকাল সকাল ডিস্টার্ব করিস কেন?”
রুদ্র: “তোর গলা শুনে মনে হচ্ছে রাতভর জেগে ছিলি , নাইট ডিউটি … করছিলি নাকি রে?”
ক্ৰিশ(হাসিমুখে): “না রে, সারা রাত ড্রাইভ করছিলাম, তাই ক্লান্ত।
এখন রাখ ফোনটা, হারামজাদা!”
ফোনটা রেখে ক্ৰিশ হালকা বিরক্তি নিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে, তারপর চোখটা যখন রুহির দিকে যায় — বিরক্তি মিলিয়ে একরাশ প্রশান্তি এসে ভরে যায় ওর মুখে।
রুহি তখন ঘুমের ঘোরে, মুখের ওপৱ চুলগুলো গাল ছুঁয়ে পড়ে আছে, ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা, বুকের ওঠানামায় নিঃশ্বাসের মিষ্টি ছন্দ।
ক্ৰিশের চোখ সেখানে আটকে যায়।
ওর নেশার মতো লাগে — এই মেয়েটা, যে একদিন ওর জীবনে হঠাৎ এসেছিল, এখন যেন তাকে ছাড়া চলেই না।
রুহি সামান্য নড়ে, আর চাদরটা একটু সরে যায়।
ওর বুকেৱ উন্মুক্ত ত্বকে আলোটা পড়ে চকচকে কৱে ওঠে।
ক্ৰিশের গলা শুকিয়ে আসে।
রূহি হালকা করে চোখ খুলে দেখে ক্ৰিশ তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
চোখে চোখ পড়তেই রূহির মুখ লাল হয়ে যায়।
তাড়াতাড়ি শরীর ঢাকতে চায়, উলটে শুয়ে পড়ে, কিন্তু এতে ৱুহির উম্মুক্ত মোলায়েম পিঠটা একেবারে ক্ৰিশের চোখের সামনে চলে আসে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ক্ৰিশ হালকা হেসে ওঠে। ওর হাসিতে দুষ্টামি মেশানো কোমলতা।
ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে রূহির পিঠে আলতো স্পর্শ রাখে।
ত্বকের গরমে ক্ৰিশের আঙুলে যেন আগুন লেগে যায়।
রুহিৱ শরীর কেঁপে ওঠে —
রুহি (আবেগ মিশ্রিত গলায়): “কি করছেন আপনি? এখন সকাল…”
ক্ৰিশ ( ফিসফিসিয়ে): “সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা— আমার তো সব সময় তোকে আদৱ কৱতে মন চাই বাটারফ্লাই।”
ওর কথায় রূহির বুকের ভেতর কেমন জানি নরম হয়ে যায়।
ক্ৰিশ কাছে এগিয়ে এসে রুহিকে আলতো করে টেনে নিজের দিকে ঘোৱায়।
রূহি চোখ বন্ধ করে, বুক ঢেকে ফেলে দুই হাতে।
ক্ৰিশ ( ফিসফিসিয়ে): “কাল তোকে এত ভালোবাসা দিয়ে পুরোটা ‘আনবক্সিং’ করলাম, তবুও আজ এত লজ্জা?”
রুহি কিছু বলে না। ওর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে।
ক্ৰিশ ধীরে ধীরে ওর দুটো হাত বিছানায় চেপে ধৱে, তারপর নিজের মুখটা রুহির বুকে মধ্যে নামিয়ে দেয়…
দু’হাতে রুহির সারা শরীরটা ছুঁয়ে দিতে থাকে ক্রিশ।
তার পুৱুষালি ছোঁয়া যেন আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ল রুহির ত্বকে।
রুহির বুক ওঠানামা করতে লাগল দ্রুত গতিতে, নিঃশ্বাস ভারি হয়ে উঠল।
সে আর নিজেকে সামলাতে পারল না—ক্রিশের সেই পাগল করা পরশে সম্পূর্ণভাবে বেসামাল হয়ে উঠল।
ক্রিশ মুচকি হেসে মুখ তুলে বলে, “অনেক দিন পর ব্রেকফাস্টে দুধ খেলাম, বাটারফ্লাই।”
রুহি মুখ ঘুরিয়ে ফেলল লজ্জায়, চোখ দুটো বন্ধ করে নরম গলায় বলল, “প্লিজ… ছাড়ুন, কলেজ যেতে হবে।”
ক্রিশ হাসল, সেই পরিচিত দুষ্টু চোখে তাকিয়ে বলল, “আরেকবার আমার সঙ্গে সুখের সাগরে ভাসবি, বাটারফ্লাই?”
রুহি চমকে উঠে বলল, “ইশ! কি সখ আপনার—রাতে তিনবার করলেন, মনে নেই?”
ক্রিশ তার বুকে নাকটা ঘষতে ঘষতে বলল, “কি করেছিলাম, বাটারফ্লাই?”
রুহি লজ্জা আর রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “এই ৮৩ কেজির মানুষটা আমার উপর উঠে…!”
বাকিটা আর বলা হল না, নিজের বলা কথায় নিজেই লাল হয়ে উঠল ৱুহি।
ক্রিশ হেসে ফেলল,
“বাটারফ্লাই, আমি তোৱ উপর উঠেছিলাম… তারপর?”
রুহি মুখ লাল করে ফেলল, ঠোঁট কামড়ে ফিসফিস করে বলল, “আমার লাগছে… প্লিজ, আজ আর না।”
ক্রিশ ধীরে ধীরে নিজের হাত রুহির শরীরের উপর থেকে নামিয়ে একদম নিচের দিকে নিয়ে গেল, তার গলা নরম , “এইখানে লাগছে বাটারফ্লাই?”
রুহির শরীর কেঁপে উঠল, গাল লাল হয়ে উঠল।
ক্রিশের এমন লাগামহীন কথায় যেন তার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে।
সে ভারি লজ্জায় শুধু মাথা নাড়ল, জানে—না বললে এই মানুষটা তাকে ছাড়বে না।
ক্রিশ আবার নরম গলায় বলল, “চলো, তোমাকে ফ্রেশ করিয়ে দিই, তারপর ওষুধ আনব—সব ব্যথা চলে যাবে, বাটারফ্লাই।”
রুহি কাঁপা কণ্ঠে বলল, “নাআআআ, আমি পারব।”
ক্রিশঃ “নো মোর ওয়ার্ডস, বেশি বেশি করে খাবি।”
তারপর রুহির চোখের দিকে তাকিয়ে, হঠাৎই এক ঝটকায় তাকে কোলে তুলে নিল ক্রিশ।
রুহি অবাক হয়ে বলল, “কি করছেন আপনি?”
ক্রিশ নিচু গলায় হাসল, “লেদা মাৱকা মাএ তিনবাৱে হাঁফালে চলবে আমাৱ দশবাৱ চাই তাৱপৱও যেনো তুই বলিস আৱো জোৱে কৱুন ক্ৰিশ।”
রুহি লজ্বাই তার বুকের ভিতৱ মুখ লুকায়।
ক্রিশের হৃদস্পন্দন তার কানে বাজতে লাগল, যেন সেই শব্দটাই এখন পৃথিবীর একমাত্র সুর।
ঘরের বাতাসে মিশে গেল ওদের নিঃশ্বাসের গরম পরশ, একটা মিষ্টি নরম নীরবতায়—যেখানে শুধু তারা দু’জনই ছিল, আর ছিল একে অপরের অনিবার্য ভালোবাসা।
কলেজে এসে ক্রিশ রুহিকে ক্লাসে বসিয়ে দিল, তারপর নিজের বন্ধু আমানদেৱ পাশে গিয়ে ক্যাম্পাসে বসল।
ক্যাম্পাস তখন প্রায় ফাঁকা—সবাই ক্লাসে, তাই হাওয়ায় এক ধরনের অলস নিস্তব্ধতা।
আমান চোখ ছোট করে তাকিয়ে বলল, “ভাই, ব্যাপারটা কি ক্রিশ?
আজকে তোকে দেখে মনে হচ্ছে ব্লাশ করছিস!”
এই কথা শুনে রুদ্র আর রোহিম দু’জনেই চমকে ক্রিশের দিকে তাকাল।
ক্রিশ চোখ পাকিয়ে দু’জনের মাথা ঠুকে দিল হালকা করে।
ক্ৰিশঃ “ও বাল, বলছে! আর তোরা শুনে নাচছিস! কখনো শুনেছিস ছেলেরা ব্লাশ করে?”
রুদ্র হেসে বলল, “আচ্ছা ছাড়, তুই বরং এটা বল—রুহির সঙ্গে বাসর করেছিস?”
রোহিমও যোগ দিল, “হ্যাঁ ভাই, একটুখানি বল না, কি করলি?”
ক্রিশ একদম গম্ভীর মুখে বলল, “রুহি কি হ্যাঁ? বলেছি না, ওকে ‘বোন’ বলেই ডাকবি।”
তারপর একটু থেমে কটমট চোখে তাকিয়ে বলল, “আর ‘বোনের বাসর’ শুনবি?
মেইন পয়েন্টে এমন লাথি মারব, যে জীবনে আর নিজে বাসর করতে পারবি না!”
ক্রিশের এই ধমক শুনে তিনজনই মুহূর্তে চুপ,
তারপর নিজেরা নিজেদের গোপন জায়গায় হাত চেপে ধরে গান গেয়ে উঠল, “দোস্ত, দোস্ত না রাহা……………….…!”
তিনজন আবার হেসে উঠল, কিন্তু ক্রিশের মুখে তখন এক অদ্ভুত শান্তির হাসি—যেমনটা কেবল রুহির কথা ভাবলেই তার মুখে ফুটে ওঠে।
ক্লাস থেকে স্যার বেরিয়ে যেতেই সিমৱান রুহির হাত ধরে টেনে বলল,
“কি রে, কি খবর?”
রুহি হেসে বলল, “খুবই ভালো, তোর খবর বল।”
সিমৱান ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, “আমার আবার কি খবর হবে, তুই নেই বলে একা একা লাগছে।
তবে শুন, আমার নতুন একটা ফ্ৰেন্ড হয়েছে।”
রুহি চোখ বড় করে বলল, “তাই নাকি! তাহলে তো বেশ হয়েছে, আর একা লাগবে না তোৱ।”
ৱুহিঃ “আচ্ছা, আমার সঙ্গে একটু শপিং করতে যাবি?”
সিমৱান অবাক হয়ে বলল, “শপিং? হুম, যাবো। কিন্তু দাঁড়া, আমার ফ্ৰেন্ড কেউ ডেকেনি।”
রুহি হেসে কানে কানে বলল, “হুম, কিন্তু আমরা পেছনের গেট দিয়ে যাবো।”
সিমৱান কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “কেন?”
রুহি হেসে বলল, “আসলে আমি উনাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই, তাই আৱ কি।”
ঠিক তখনই সিমৱানের ফ্ৰেন্ড রণক ক্লাসরুমের বাইরে এসে ডেকে উঠল,
“হাই, সিমৱান!”
সিমৱান সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বল মুখে ঘুরে দাঁড়াল, “হ্যাঁ, তোমাকেই খুঁজছিলাম!
আমি আর আমার ফ্ৰেন্ড শপিং-এ যাচ্ছি, আমাদের নিয়ে যাবে?”
রণক তখন রুহির দিকে তাকাল—আর যেন তাৱ চোঁখ আটকে গেলো ৱুহিৱ ওপৱ।
রণক রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে — মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নেয়।
রুহি একটু চমকে যায়, মনে হয় অদ্ভুত একটা দৃষ্টি তার গায়ে পড়ছে।
সঙ্গে সঙ্গে সিমৱানের হাত চেপে ধরে।
সিমৱান অবাক হয়ে বলে, “অরে, এভাবে কেন তাকাচ্ছো? ও আমার ফ্রেন্ড রুহি।”
রণক হেসে বলে, “বাহ, নামটাও সুন্দর, ফ্রেন্ডটাও সুন্দর।”
সিমৱান হেসে বলে, “তুই ভয় পাস না রুহি, রণক এমনিই মজা করছে।”
রণক তখন বলে, “চলো, তোমৱা আসো আমি আমার বাইক বের করছি, আমরা বাইকে করে যাই।”
সিমরানঃ “হ্যাঁ, তবে পেছনের গেট দিয়ে যাব।”
রণক হেসে মাথা নাড়ে, “As your wish।”
রুহি তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, “না, আমরা দুজন যায় দরকার হলে রিকশা নেব, উনাকে নিতে হবে না।”
সিমৱান হেঁসে বলে, “তুই ভয় পাস না, রণক ভালো ছেলে, কিছু হবে না।
বাইকে গেলে তাড়াতাড়ি পৌঁছব।”
রুহি আর সিমরান ধীরে ধীরে দোকানের ভিতরে ঢুকল।
রণক তাদের পেছনে পেছনে হেঁটে আসছে, চোখ কেবল রুহির দিকে।
রুহি আৱ সিমৱান স্বাভাবিকই ঘুরে বেড়াচ্ছে, দোকানের প্রতিটি জিনিস যাচাই করছে।
রুহি ও সিমরান শপিং মাল্টি-এপার্টমেন্টে চলে গেল।
রুহি সরাসরি ক্রিশের জন্য শার্ট, প্যান্ট আর জুতো বেছে নিচ্ছে—মনে মনে ভাবছে, “ক্রিশ কে কেমন লাগবে এগুলো পড়ে।”
সে তিনটি রঙের শার্ট, জিন্স প্যান্ট আর জুতো সাবধানে বেছে নিল, যা ক্রিশের পছন্দের সাথে মেলে।
সিমৱান তার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, নতুন নতুন জিনিস দেখছে, মাঝে মাঝে রুহির দিকে তাকাচ্ছে।
পুরো সময় রণক চুপচাপ, শুধু রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে।
তার চোখে রুহির ছোট ছোট আন্দোলন, লাজুক হাসি, প্রতিটি হাতের নরম চলাচল—সব কিছু নজরকাড়া।
সিমৱান লক্ষ্য করল, রণক যেন পুরো সময় রুহির দিকে চেয়ে আছে।
ক্রিশ, রোহিম, আমান আর রুদ্র কলেজ থেকে বের হয়ে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ালো।
আমান চারটি সিগরেট কিনে সবাইকে দিল, তারপর ক্রিশকে দেওয়ার জন্য এগিয়ে এল।
ক্রিশ হেসে বলল, “আমি খাই না, আমার জন্য চা দে।”
রোহিম আর রুদ্র ক্রিশের কথা শুনে হেসে বলল, “কি বলিস ভাই, এত সাধু কবে হলি?”
আমান মুচকি হেসে বলে, “আমাদের ক্রিশ রুহিকে পেয়ে পাল্টে গেছে।”
ক্রিশ চোখ লাল করে আমানেৱ দিকে তাকাল।
আমান আবার বলল, “না, মানে আমাদের বোনকে পেয়ে পাল্টে গেছে।”
রুদ্রঃ “আহা!এ প্রেম নাকি, পিনার্ট বাটার!”
সবাই হেসে উঠল।
ঠিক তখন আমান এ্কটা বাইক লক্ষ করল।
mad for you part 18
এ্কটা ছেলে চালাচ্ছে পেছনে সিমরান বসে, আর রুহি তার পাৱে।
আমান চিৎকার করে বলল, “ভাই, ওখানে দেখ রুহি।”
ক্রিশ রুহির নাম শুনেই তাকাল। বাইক পেছনের গেটের দিকে চলে গেল।
ক্রিশ রুহির মুখ ঠিক দেখতে পারল না, কিন্তু চিন্তে ঠিক পেড়েছে।
সে চুপ করে কলেজের গেটের দিকে এগোলো।
রুদ্র, আমান আর রোহিম বুঝতে পারল—“আজ কিছু একটা ঘটতে চলেছে।”
