তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৭১+৭২

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৭১+৭২
নৌশিন আহমেদ রোদেলা

কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ বৃষ্টির দিকে চোখ রেখে উঠে দাঁড়ালো জেনি। টেবিলের উপর রাখা ডায়েরিটি হাতে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। পাশের রুমের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি দিলো ভেতরে। ষাটোর্ধ্ব একজন আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ বৃদ্ধা বারান্দায় দাঁড়িয়ে গাছে পানি দিচ্ছেন। সাদা গায়ে হালকা রঙের গাউন। বাদামী রঙের চুলগুলো এসে ঠেকেছে কাঁধে। জেনি মুখে হাসি টেনে নিয়ে মাথা হেলিয়ে বলে উঠলো,

— হ্যালো গ্র্যানি?
বৃদ্ধা ফিরে তাকালেন। চোখে-মুখে স্নেহময় হাসি ফুটিয়ে বললেন,
— হ্যালো ডিয়ার! ভেতরে এসো।
জেনি ভেতরে গিয়ে সোফায় বসলো। বৃদ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— কি করছিলে গ্র্যানি?
— গাছের পরিচর্চা করছিলাম। দেখো তোমার মতোই ফুটফুটে একটি ফুল ফুটেছে গাছে।
জেনি হাসলো। পা দুলিয়ে বললো,
— বাবা কোথায় গ্র্যানি?
বৃদ্ধা হাতের কাজ শেষ করে জেনির পাশে গিয়ে বসলেন। জেনির গালে আলতো ছোঁয়ে দিয়ে বললেন,
— তোমার বাবা ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছে, ডিয়ার।
জেনি আবারও জিগ্যেস করলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আর দাদু?
— তোমার দাদু যে দু’দিনের জন্য নিউইয়র্ক গিয়েছেন সেটা তো তুমি জানো সুইটহার্ট তবু কেন জিগ্যেস করছো?
জেনি এবার পেছন থেকে ডায়েরিটি বের করে গ্র্যানির সামনে রাখলো। ডায়েরির দিকে ইশারা করে বললো,
— গ্র্যানি? তুমি কি এই ডায়েরিটি সম্পর্কে কিছু জানো? এটা আমি বাবার স্টাডি রুমের এককোণা থেকে উদ্ধার করেছি। হোয়াট ইজ দ্যা হিস্ট্রি অব দিস ডায়েরি?
জেনির গ্র্যানি ক্যাথেরিন কিংস্টোন ডায়েরিটি হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখলেন। ভেতরের লেখাগুলো তার বোধগম্য নয় বলে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। কপাল কুঁচকে চিন্তিত মুখে বললেন,
— আমি এই ডায়েরিটা আগে কখনো দেখি নি। তোমার বাবা এই ডায়েরি সম্পর্কে আমায় কিছু বলে নি জেনি। আই এম সো সরি ডিয়ার বাট এখানে কি লেখা আছে?
জেনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ক্যাথেরিনের দিকে তাকিয়ে দুর্বল হাসি দিয়ে বললো,

— ইট’স ওকে গ্র্যানি। আমি বাবাকে জিগ্যেস করে নিবো। এখানে একজনের লাভস্টোরি লেখা আছে গ্র্যানি। অসাধারণ একটা লাভ স্টোরি বাট..
— বাট?
— বাট এখানে এন্ডিংটা নেই। আমি এর এন্ডিংটা জানতে চাই। কি হয়েছিলো তারপর? আচ্ছা গ্র্যানি? হোয়াট ইজ লাভ? ইজ ইট আ ম্যাজিক?
ক্যাথেলিন জেনির ডানহাতের উপর স্লাইট করে আদরমাখা গলায় বললেন,
— ইয়েস ডিয়ার। ইট’স লাইক আ ম্যাজিক। যখন তুমি কাউকে ভালোবাসতে শুরু করবে তখন ম্যাজিকের মতোই তার চারপাশের সবকিছুই ভালো লাগবে তোমার। এই সুন্দর ফিলিংসটার জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি হয়ে যাবে তুমি।
জেনি খানিকটা ঝুঁকে এসে বললো,

— গ্র্যানি? তুমি কি জানো? “ফিলিংস” শব্দটির খুব মিষ্টি একটি বাংলা শব্দ আছে। আর সেই শব্দটি হলো “অনুভূতি” বাংলা ভাষাটা কি মিষ্টি তাই না?
ক্যাথেলিন হাসলেন। সস্নেহে জেনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
— সবার কাছেই তার মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ মিষ্টি লাগে। আমার মাদারল্যাঙ্গুয়েজ ইংলিশ তাই এটাই আমার বেশি ভালো লাগে। তবে বাংলা ভাষাটাও মিষ্টি। তোমার দাদু মাঝে মাঝেই বলেন আমার শুনতে বেশ লাগে। কিন্তু জেনি? তোমার ল্যাঙ্গুয়েজ তো ইংলিশ তবু তুমি বাংলাকে এতো পছন্দ করো কেন?
জেনি হাসলো। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
— বিকজ বাংলা ইজ মাই ফাদার ল্যাঙ্গুয়েজ।
ক্যাথেরিনও হেসে উঠলেন। জেনি ঘড়ি দেখে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে গ্র্যানিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— ওকে বাই গ্র্যানি। আমার এখন ক্লাস আছে। সি ইউ ইন দ্যা আফটারনুন।
কথাটা বলেই দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো জেনি। ক্যাথেরিন স্নেহভরা নীল চোখে তাকিয়ে থেকে ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
— বাই। স্টে হ্যাপি মাই চাইল্ড।

বাইরে টিপটাপ বৃষ্টি। জেনি গোলাপী রঙের ছাতা হাতে হেঁটে চলেছে। পিঠে ঝুলাছে কলেজ ব্যাগ। পরনে লেডিস জিন্স এন্ড হোয়াইট টপস। ঘন কালো চুলগুলো উঁচু করে ঝুঁটি করা। জেনির পুরো নাম জেনিফা কিংস্টোন। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লসএঞ্জেলস সিটিতে বসবাস করে জেনি। আমেরিকার পঞ্চাশটি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া অন্যতম একটি অঙ্গরাজ্য। আবহাওয়ার দিক থেকে চমৎকার একটি স্টেট। শীতকালে তীব্র শীত নয়, আবার গরমকালে অত্যধিক গরম নয়। ক্যালিফোর্নিয়ার আবহাওয়াকে নাতিশীতোষ্ণ বলা চলে। অনেকটা আমাদের দেশের বসন্তকালের মতো। তবে এখানকার আবহাওয়া খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। অনেকটা ষোড়শী তরুণীর মনের মতো আনপ্রেডিকটেবল। ষোল বছর বয়সী তরুনীর মন বুঝা যেমন দায় ঠিক তেমনি ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়েদার বোঝাও কষ্টসাধ্য। কথায় আছে এদেশের থ্রি-ডব্লিউ যে কোন মুহূর্তে চেঞ্জ হতে পারে। প্রথম ডব্লিউ হলো “ওয়েদার” যা ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। দ্বিতীয় ডব্লিউ হলো “ওয়ার্ক অর্থাৎ চাকরী” সকালে আছে তো বিকেলে নেই অর্থাৎ, সকালে কাউকে হায়ার করা হয়েছিল বাট বিকেলেই ফায়ার হয়ে গেছে। তৃতীয় ডব্লিউ হলো “ওয়াইফ”।

ওয়াইফদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। আজকে আছে তো কালকে নাও থাকতে পারে। যা জেনির বাবা “কার্লোস কিংস্টোনের” ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। জেনির মাকে কখনো দেখে নি জেনি। গ্র্যানির কাছে শুনেছে তার মা নাকি তাকে জন্মের পর পরই বাবার কাছে ফেলে গেছেন। বাবাকে কখনো মা নিয়ে প্রশ্ন করে না জেনি কারণ সে জানে বাবা তাতে কষ্ট পান। এইতো উনিশটি বছর কেটে গেলো, কার্লোস এখনও তার স্ত্রিকেই ভালোবাসেন। কার্লোসের বাবা একজন বাঙালী কিন্তু মা আমেরিকান ক্যাথেরিন। দেখতে পুরোপুরি আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ হলেও বাবার মতোই অসম্ভব সুন্দর বাংলায় কথা বলে কার্লোস।

সেই সুবাদে মেয়ে জেনিকেও বাংলা লিখতে এবং বলতে শিখিয়েছে। তার ধারনা গায়ে আমেরিকান হওয়ার ট্যাগ লাগলেও তার উৎপত্তি বাংলার ওই শিকড়ে। জেনিও তাই বিশ্বাস করে তাইতো ছবির মতো ঝকঝকে একটি শহরে বসবাস করেও তার মন চাই বাংলার মাটি ছোঁয়ার। দাদু বলে সেই মাটির নাকি আলাদা গন্ধ থাকে। বাতাসের আলাদা স্বাদ আর বৃষ্টির আলাদা ছন্দ থাকে। কার্লোস ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির স্ট্যাটিস্টিক প্রফেসর। আর তার বাবা একই ভার্সিটির কেমিস্ট্রির রিটায়ার্ড প্রফেসর। জেনি ভার্সিটিতে পৌঁছাতেই ঝড়ের বেগে একটি সাইকেল এসে থামলো ঠিক তার সামনে। জেনি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। চোখে-মুখে বিরক্তিভাব স্পষ্ট। জেনি বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,

— হ্যারি? একদম বিরক্ত করবে না। আজ মন ভালো নেই আমার।
হ্যারির মুখটা মুহূর্তেই কালো হয়ে গেলো। সে জেনিকে মোটেও বিরক্ত করে নি। হ্যারির পুরো নাম, “লুইস হ্যারিসন”। বন্ধুমহলে হ্যারি বলেই পরিচিত সে। আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ । সুঠাম দেহ, মাথায় একঝাঁক বাদামী চুল। গাঢ় নীল রঙের উজ্জল দুটো চোখ। হ্যারি সাইকেল থেকে নেমে দৌড়ে জেনির পাশে পাশে হাঁটতে লাগলো। জেনি বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই মিষ্টি করে হাসলো সে। জেনি কিছু বললো না। মন খারাপ ভাব নিয়েই ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো সে। রোদ-শুভ্রর লাভস্টোরি পড়তে বসে সকালের ব্রেকফাস্ট করা হয়নি তার।জেনি বসতেই তারপাশে ধপ করে বসে পড়লো হ্যারি। চোখদুটো ছোট ছোট করে বলে উঠলো,

— তোমার মন খারাপ কেন জেনি?
জেনি বিরক্ত হয়ে বললো,
— তাতে তোমার কি? যাও এখান থেকে।
হ্যারি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,
— টুমি আ..আমার সাটে শেয়ার করটে পা..পা..হোয়াট ওয়াজ দেট?
জেনি রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
— দেট ওয়াজ “পারো” । যা পারো না সেটা বলতে গিয়ে ভাষার সৌন্দর্য নষ্ট কেন করো হ্যারি? বাংলা বলা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু শুধু বিকৃতি করবে না আমার রাগ লাগে।
হ্যারি অপরাধী গলায় বললো,
— আমি চেষ্টা করছি জেনি। তোমার গ্র্যান্ডপা’স মাদারল্যাঙ্গুয়েজ আসলেই অনেক মিষ্টি। শুনতে অনেক ভালো লাগে আমার। ট্রাস্ট মি।
জেনি কিছু বললো না। চুপচাপ ক্রোনাট ও চকলেট চিপসে মনোযোগ দিলো সে। হ্যারি চিজ বার্গারে কামড় দিয়ে আবারও বলে উঠলো,

— কি হয়েছে জেনি? বলো আমায়। আই ওয়ান্ট টু নো।
জেনি চকলেট চিপসে কামড় বসাতে বসাতে বললো,
— আমার রোদ আর শুভ্রর জন্য টেনশন হচ্ছে। ওরা কি বেঁচে আছে? ওদের বাচ্চাটার কি হয়েছে?
হ্যারি খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বললো,
— রোওড কে? আর শোওবরোই বা কে?
জেনি মাথা তুলে তাকালো। কড়া গলায় বললো,
— ঠিক করে উচ্চারণ করো হ্যারি। এতো সুন্দর নামগুলোকে কি রকম বিশ্রীভাবে উচ্চারণ করছো তুমি।
হ্যারি অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
— সরি! বাট নামগুলো একটু বেশিই কঠিন। এনিওয়ে, ওরা কে সেটা তো বলো।
জেনি এবার ব্যাগ থেকে ডায়েরিটা বের করে টেবিলে রাখলো। হ্যারি ডায়েরিটা নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে ঠোঁট উল্টে বললো,

— এসব কি লেখা এখানে?
— এটা বাংলায় লেখা। বাবার স্টাডি রুম থেকে পেয়েছি। এখানে রোদ নামের একটি মেয়ের লাভ স্টোরি লেখা। রোদ-শুভ্র আর দ্যা লাভ বার্ডস্। ওরা বাংলাদেশে থাকে। অনেক কিউট লাভস্টোরি বাট এন্ডিংটা নেই…আই এম ভেরি কিউরিয়াস এবাউট দ্যা এন্ডিং।
— এটা রিয়েল লাইফ স্টোরি?
জেনি খেতে খেতে বললো,
— আমার তো তাই মনে হয়। তুমি শুনবে?
হ্যারি আগ্রহ নিয়ে মাথা নাড়লো। জেনি ডায়েরিটি খুলে বাংলা লেখাগুলোকে ইংলিশে ট্রান্সলেট করে শুনাতে লাগলো। দেখতে দেখতে ক্লাস টাইম শেষ হয়ে এলো। কিন্তু হ্যারি জেদ ধরে বসে রইলো বাকিটা সে আজই শুনবে। অবশেষে দু’জনে মিলে চলে এলো লসএঞ্জেলসের ফিফথ ও সিক্সথ স্ট্রিটের মাঝে নিউহ্যামশায়ারে জেনিদের বাসায়। গ্র্যানির সাথে দেখা করে বাবা ফিরলেই তাকে জানাতে বলে নিজের রুমে ঢুকে আবারও ডায়েরিতে মনোযোগ দিলো তারা । রাত ৮ টার দিকে পড়া শেষ করে হ্যারির দিকে তাকাতেই চিন্তিত মুখে বলে উঠলো হ্যারি,

— হোয়াট নেক্সট? এখন কি হবে জেনি?আই মিন তারপর কি হয়েছিলো?
জেনি দুঃখী দুঃখী গলায় বললো,
— জানি না। আই থিংক বাবা জানেন। বিকজ ডায়েরিটা তার কাছেই ছিলো।
তখনই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। দরজা ঠেলে মাথা হেলিয়ে বলে উঠলো ক্যাথেলিন,
— তোমার বাবা ফিরেছে সুইটহার্ট।
জেনি হ্যারি দুজনেই লাফিয়ে উঠলো। দুজনেই দৌঁড়ে গেলো কার্লোসের রুমের দিকে।কার্লোস মাত্রই ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে। মেয়েকে এভাবে দৌঁড়ে আসতে দেখে অবাক হলো সে। বিস্ময় নিয়ে বললো,
— কি হয়েছে প্রিন্সেস? তুমি ঠিক আছো?
জেনি হন্তদন্ত করে বাবার দিকে ডায়েরিটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
— এই ডায়েরিটা তুমি কোথায় পেয়েছো বাবা?
কার্লোস ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ডায়েরিটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে নিয়ে বললো,

— এটা কি আমার কাছে ছিলো প্রিন্সেস?
— হ্যা বাবা। এটা তোমার স্টাডি রুমের ডানপাশের তাকটা থেকে পেয়েছি আমি।
কার্লোস কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
— আমার তো মনে পড়ছে না, মা।
এবার পাশ থেকে হ্যারি বলে উঠলো,
— মনে করার চেষ্টা করুন, স্যার।
কার্লোস হ্যারির দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো,
— হেই হ্যারি! কেমন আছো?
— আপনি ডায়েরির ব্যাপারটা মনে করতে পারলে ভালো থাকবো। নয়তো খুব খারাপ।
কার্লোস ভ্রু কুঁচকে বললো,

— এতোটা জরুরি? ওকে আই এম ট্রায়িং।
জেনি আর হ্যারি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। কার্লোস খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে বলে উঠলো,
— এভাবে তাকিয়ে আছো কেন তোমরা?
— তাড়াতাড়ি মনে করো না বাবা, প্লিজ!
মেয়ের অস্থিরতা দেখে মনে করার চেষ্টা করলো কার্লোস। খানিকবাদে বলে উঠলো,
— এটা আমি ইন্ডিয়ার কোন এক হাসপাতালের ময়লার ঝুড়ি থেকে তুলে ছিলাম।
জেনি আর হ্যারি একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথেই চেঁচিয়ে উঠলো,
— হোয়াটটট!!
কার্লোস হঠাৎ চিৎকারে চমকে উঠে বললো,
— হ্যাঁ। এটুকুই মনে আছে আমার। কোন এক সার্ভে তে ইন্ডিয়ার হসপিটালগুলো পরিদর্শন করতে গিয়ে ময়লার ঝুড়িতে পাই এটা। পানির বোতল ফেলতে গিয়ে দেখি একজন নার্স কিছু ময়লা ঝুড়িতে ঢালছেন। ওখানে এই ডায়েরিটাও ছিলো। কেন যেন তুলে নিয়েছিলাম কিন্তু পড়া হয়ে ওঠেনি কখনো।
হ্যারি মাথা চুলকে বললো,

— এটা কতোদিন আগের কথা?
কার্লোস কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,
— দু’বছর হবে।
হ্যারি এবার ফিসফিস করে বললো,
— তারমানে রোওড এর বেবি বেঁচে থাকলে এখন তার দু’বছর?
জেনি কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে এলো। কার্লোস পেছন থেকে কয়েকবার ডাকলেও সাড়া দিলো না সে। কার্লোস কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেয়েটাকে হঠাৎ দেখলে আমেরিকান বলে মনেই হয় না। বাঙালীদের মতো হলুদ ফর্সা গায়ের রঙ। মা-বাবা দুজনেই আমেরিকান হলেও জেনির চোখের পুতুলী দুটো ঘন কালো। শরীরের গঠনটাও বাঙালী মেয়েদের মতো তুলতুলে।এই মেয়েটার মধ্যেই কার্লোসের জীবন। প্রচন্ড ভালোবাসে মেয়েটাকে।
জেনি বেডে মন খারাপ করে বসে আছে। হ্যারি এদিক ওদিক পায়চারি করছে। হঠাৎ পায়চারী থামিয়ে দিয়ে জেনির সামনে দাঁড়িয়ে উজ্জল মুখে বলে উঠলো সে,

— আচ্ছা? তোমার তো বাংলোডেশে যাওয়ার শখ। আমরা যদি স্টোরিটার এন্ডিং খুঁজতে বাংলোডেশে যাই তাহলে কেমন হয়?
জেনি চোখ তুলে তাকালো। হ্যারি সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
— এটা কি খুব বাজে আইডিয়া? ওকে, দেন ফরগেট ইট।
জেনি এবার চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
— এটা দারুন আইডিয়া বাট ওদের খুঁজে পাবো কিভাবে?
হ্যারি কিছুক্ষণ ভেবে বললো,

— ইট ইজ সো ইজি। লুক, শোওবরো প্রফেসর ছিলো। আর তারা বাংলোডেশের একটি নির্দিষ্ট শহরে থাকতো। ওর জবটাও সেই শহরেই ছিলো। একটা শহরে কয়টা ভার্সিটি থাকতে পারে? আমরা যদি শহরের সবগুলো ভার্সিটিতে খুঁজ নেই তাহলে শোওবরোকে পেয়ে যেতেও পারি। না পেলেও ডিটেইলস তো পাবো। আর কিছুই না পেলেও এটলিস্ট বাংলোডেশ ঘুরা হয়ে যাবে।হোয়াট ইউ ছে?
মুহূর্তেই জেনির ঠোঁটের কোণায় হাসি ফোঁটে উঠলো। দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,
— পেরেন্টসদের কিভাবে রাজি করানো যায় তার জন্য একটা অসাধারণ প্ল্যান লাগবে হ্যারি। তারসাথে পাসপোর্ট!! নেক্সট উইক উই আর গুয়িং টু বাংলাদেশ!!!
হ্যারি দাঁত বের করে হেসে বললো,
— আই হ্যাভ আ প্ল্যান। নাও গেট রেডি ফর মিশন বাংলোডেশ!!!

এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে হ্যারি আর জেনি। সবকিছুই গোলকধাঁধার মতো লাগছে তাদের। কোনদিকে যাবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। অবশেষে একটি গাড়ি ভাড়া করে হোটেল পর্যন্ত পৌঁছালো তারা। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো খেতে গিয়ে। কোন খাবার কেমন হবে জানা নেই তাদের। বাঙালী খাবার টেস্ট করতে গিয়ে খাবারের চেয়ে পানি খেয়েই মন ভরাতে হয়েছে তাদের। হ্যারি মিনিটে মিনিটে শুধু একটা কথায় বলে চলেছে,

— এই দেশের মানুষ এতো ঝাল কি করে খায়? টেরিবল।
সেদিন আর বের হয় নি ওরা। এতোদূর জার্নি আর রাস্তায় ২/৩ ঘন্টার জ্যামে সিদ্ধ হয়েই যায় যায় অবস্থা তাদের। রাতে লম্বা একটা ঘুম দিয়ে পরের দিন, ১২ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে শুভ্রকে খোঁজার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো তারা। তাদের কাছে না আছে ছবি না আছে কোনো পরিচয়। থাকার মধ্যে আছে শুধু একটা নাম, “আবরার আহমেদ শুভ্র”৷ একটা নামকে পুঁজি করে কি একটা মানুষকে খুঁজে বের করা সম্ভব? হয়তো সম্ভব, হয়তো নয়। তবে চেষ্টা করতে দোষ কি?ঢাকায় সরকারী বেসরকারি মিলে মোট ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এতো বাজে ভাবে জ্যামে আটকে থেকে ২৫ টি ইউনিভার্সিটিতে খোঁজ নেওয়া তাদের পক্ষে অনেকটাই অসম্ভবের পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। তারউপর সবকিছুই তাদের অপরিচিত।

প্রথমদিনে কোনোরকম দুটি ভার্সিটিতে খোঁজ নিয়ে হোটেলে ফিরতে ফিরতেই প্রায় রাত নেমে এলো। আমেরিকায় বসে বসে ব্যাপারটা যতটা সহজ ভেবেছিলো ক্রমেই তা সাপের পা দেখার মতো অসম্ভব হয়ে উঠলো। রাত কাটিয়ে ভোর হলে আবারও বেরিয়ে পড়লো ওরা। ঢাকা শহরের মাঝেই তিনটি ভার্সিটিতে খোঁজ নিয়ে একটি শুভ্র খোঁজে পেলো তারা। খুশিতে লাফিয়ে উঠেও মুহূর্তেই খুশিটা মাটি হয়ে গেলো তাদের যখন শুনলো লোকটির নাম আবরার আহমেদ নয় আরিফুল রহমান শুভ্র। জেনির সেই মুহূর্তে লোকটির চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো। ব্যাটা,দুনিয়াতে কি আর কোনো নাম ছিলো না? শুভ্র নামটাই রাখতে হলো? সারাদিন ঘুরে ঘুরে সন্ধ্যার দিকে ঢাকার একটি পার্কের কাছে গিয়ে বসলো ওরা। তখনই বেশ অদ্ভুত একটি জিনিস চোখে পড়লো। কিছু ছেলেমেয়ে দল বেঁধে রঙের কৌটো হাতে রাস্তায় পেইন্ট করছে। হ্যারি অবাক হয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে উঠলো,

— জেনি? কি করছে ওরা? রাস্তাস পেইন্ট করছে কেন?
জেনির নিজেরও তেমন একটা ধারনা ছিলো না। তাই সামনে এগিয়ে একটি ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— এক্সকিউজ মি?
ছেলেটি ফিরে তাকিয়ে বললো,
— জি বলুন।
— আচ্ছা, রাস্তায় এভাবে রঙ করা হচ্ছে কেনো?
— ফরেনার?
— ইয়াহ।
— ওহ,ওয়েলকাম টু আওয়ার কান্ট্রি। কাল পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ…
জেনি হেসে বললো,
— আমি বুঝতে পেরেছি। বাংলা বছরের প্রথম দিন তাই তো?
ছেলেটি হাসলো। বললো,

— হ্যাঁ। কাল সারা দেশজুড়েই উৎসব। আপনারাও এড হতে পারেন। এই দিনে প্রায় সব মেয়েরাই শাড়ি পড়ে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি বা ফতুয়া। আপনারা চাইলে ট্রাই করতে পারেন। ভালো লাগবে। রমনায় বিরাট মেলা হবে কাল।
জেনি ছেলেটিকে ধন্যবাদ দিয়ে ফিরে এলো।

হ্যারিকে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়ে সেখান থেকে উঠে পড়লো ওরা। কাল পহেলা বৈশাখ,সরকারি ছুটি। অর্থাৎ, কাল কোনো ভার্সিটিই খোলা থাকবে না। সারাটা দিন ফাঁকা যাওয়ার থেকে নিজেকে বাঙালীদের মতো শাড়িতে মোড়ালে কেমন হয়? জেনি মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো সে শাড়ি পড়বে। হ্যারিকে নিয়ে মার্কেটে গিয়ে জোড় করেই নিজের জন্য শাড়ি আর হ্যারির জন্য লাল পাঞ্জাবি কিনে নিলো সে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো পরের দিন সকালে। কিছুতেই শাড়ি পড়তে পারছে না জেনি, এখন উপায়? নিজে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে হ্যারিকে ডাকলো সে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। উল্টো ঝামেলা আরো বেড়ে গেলো।

অবশেষে হোটেলের একজন মেয়ে কর্মচারীকে ম্যানেজ করে শাড়ি পড়তে হলো জেনির। হোটেল থেকে বেরিয়ে রিক্সা নিলো জেনি। “রিক্সা” নামক জিনিসটা তাদের দু’জনের জন্যই একদম নতুন। তবুও এই ভয়ানক জিনিসে চেপেই মেলা পর্যন্ত পৌঁছালো ওরা। রমনায় গিয়ে তাদের বিস্ময় যেন আকাশচুম্বী হয়ে উঠলো। এতো মানুষ আর এতো রঙ-বেরঙের সাজ! চারদিকটা যেন বাহিরী রঙের মেলা। মেলাটা কিছুক্ষণ ঘুরে দেখার পরই বিস্ময়কর এক কান্ড ঘটলো। হাজারো বাঙালীর ভীরে কেউ একজন হ্যারির নাম ধরে ডাকলো। এমন একটা জায়গায় নিজের নাম শুনে অনেকটায় চমকে গিয়েছিলো হ্যারি। নিজেকে সামলে নিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়েই মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। লাল-সাদা পাঞ্জাবী গায়ে একটি ছেলে এগিয়ে এসে বললো,

— হ্যারি? তুমি এখানে?
— হেই অ্যাশ! কেমন আছো তুমি?
ছেলেটি হাসলো। জেনি ওদের থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। চারপাশে তাকিয়ে মানুষজন দেখছে সে। এতো এতো মানুষের মাঝেও একজায়গায় চোখ আটকে গেলো তার। ওর থেকে এক/দুই হাত দূরে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর কালো রঙের ধুতি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে। কোলে দেড়-দুই বছরের একটি মেয়ে। মেয়েটির গায়ে লাল রঙের ফ্রক। সিল্কিচুলগুলো দুপাশে ঝুঁটি করা। সামনের কিছু চুল এসে পড়েছে কপালে। চেহারাটা বাবার মতো হলেও গায়ের রঙটা উজ্জল শ্যামা। বড় বড় চোখদুটো ঘন পল্লবে ঢাকা। হাতে একটি চিপসের প্যাকেট। ছেলেটি বাচ্চার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিতেই হাতের চিপসটা বাবার হাতে দিয়ে সে ও ঠিক একই কাজ করলো। বাবার কপালে পড়ে থাকা সিল্কচুলগুলো আলতো করে সরিয়ে দিলো।

মেয়ের কাজ দেখে হেসে উঠলো ছেলেটি। সাথে সাথেই যেন চমকে উঠলো জেনি। রোদ তার ডায়েরিতে যেভাবে বর্ননা করেছিলো ছেলেটির হাসিটা ঠিক সেই রকম। তেমনি বাঁকা দাঁত আর থুতনিতে সেই কালো তিল। জেনি আরো একপা এগিয়ে এসে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো। ঠিক তখনই একটি মেয়ে এসে দাঁড়ালো তাদের পাশে। মেয়েটি মোটা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পড়েছে। মেয়েটার শাড়ি পড়ার ধরনটা অন্যরকম। জেনির মতো কুঁচি দিয়ে শাড়ি পড়ে নি সে। পিঠে পড়ে আছে একরাশ লম্বা চুল। তাতে গাঁথা তিনটি লাল গোলাপ। মেয়েটির গাঢ় কাজল চোখ আর পাতলা ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টক মুখে একটা প্রতীমা প্রতীমা ভাব এনে দিয়েছে যেন। একদম স্বচ্ছ, শীতল রূপ। মেয়েটি পাশে দাঁড়াতেই বাচ্চা এবং বাবা দু’জনের মাঝেই অদ্ভুত প্রাণোচ্ছলতা খেলে গেলো। ছেলেটি পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির কানের পাশে চুল গুঁজে দিয়ে কপালে আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে মুচকি হেসে বললো,

— একদম রসগোল্লা লাগছে।
বাচ্চাটি কিছুক্ষণ চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থেকে বাবার মতোই তার ছোট্ট হাত বাড়িয়ে কানে চুল গুঁজে দিয়ে টুপ করে চুমু দিয়ে দিলো কপালে। বাবাকে কপি করে বললো,
— এয়দম অসগোল্লা লাগচে।
বিস্মিত বাবা-মা কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকেই হেসে উঠলো। বাচ্চাটিও খিলখিল করে হেসে উঠলো। কি অদ্ভুত! চেহারাটা বাবার মতো হলেও হাসলে কোথাও যেন একদমই মায়ের মতো লাগে তাকে। সৃষ্টিকর্তা কি অদৃশ্য ধাঁধা তৈরি করে দিয়েছেন চারপাশে। ওদের কান্ড দেখে একা দাঁড়িয়েই খিলখিল করে হাসছিলো জেনি। হঠাৎ করে পেছন থেকে ডেকে উঠলো হ্যারি,

— জেনি? একা একা হাসছো কেন?
জেনি হাসিমুখেই বললো,
— নাথিং।
হ্যারি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তারপর পাশের ছেলেটিকে ইশারা করে বললো,
— জেনি? ইনি হচ্ছেন অ্যাশ। আমার বড় ভাইয়ের ফ্রেন্ড। ক্যালিফোর্নিয়ায় কিছুদিন একসাথেই পড়াশোনা করেছেন উনারা।৷আর অ্যাশ? ও হচ্ছে জেনি, আমার বাগদত্তা।
জেনি হালকা হেসে স্পষ্ট বাংলায় বললো,
— হ্যালো ভাইয়া।
ছেলেটি বিস্মিত কন্ঠে বললো,
—- আপনি বাংলা জানেন?
জেনি কিছু বলার আগেই পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠলো কেউ,
— ওই সাহেল? আদ্র-রোদ্র কই? দেখছিস ওদের?

জেনি চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখলো সেই সাদা পাঞ্জাবি পড়নে ছেলেটাই কথা বলে চলেছে। ততোক্ষণে হ্যারিও ভ্রু কুঁচকে এদিক সেদিক তাকাতে শুরু করে দিয়েছে। “সাহেল” নামটা কেমন পরিচিত লাগছে তার। কিন্তু তাদের আরো কিছুটা চমকে দিয়ে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
— শুভ্রতাকে নিয়ে ফার্স্ট স্টলটাতে ঢুকে যা। ওখানেই লাঞ্চ করবো সবাই। ভেতরে নাবিলা,রুহান, সাব্বির সবাই আছে। বাচ্চারাও আছে।
জেনি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। “শুভ্রতা” আর “শুভ্র” কাছাকাছি। তবে কি? জেনির ভাবনার মাঝেই হাত বাড়ালো সাহেল। হাসিমুখে বললো,

— হ্যালো,আমি আশরাফ আল সাহেল। হ্যারির জন্য নামটা একটু কঠিন বলে ও আমাকে অ্যাশ বলে ডাকে। বাট আপনার জন্য কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে না।
জেনি টোটালি শকড হয়ে তাকিয়ে আছে। কয়েকসেকেন্ড চুপচাপ তাকিয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— হাই! আমি জেনিফা কিংস্টোন।আচ্ছা? একটু আগে যে আপনার সাথে কথা বললেন, উনি কে? না মানে,পরিচিত লাগছিলো খুব।
সাহেল স্বাভাবিক গলায় বললো,,
— ও আমার ফ্রেন্ড। ওর নাম শুভ্র।আপনার সাথে কোথায় দেখা হতে পারে ঠিক বুঝতে পারছি না।
জেনি হাসলো,

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৬৯+৭০

— হয়তো অন্যকেউ হবে। দুজনের মাঝে গুলিয়ে ফেলিছি আমি। এনিওয়ে,, আপনারা বোধহয় এখন লাঞ্চ করবেন। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ট আমরা দু’জন কি আপনাদের সাথে জয়েন হতে পারি?
— ইয়াহ, অফ কোরস্। আমি এখনই রিকুয়েস্ট করতাম আপনাদের। প্লিজ আসুন। আপনারা দু’জন জয়েন করলে আরো খুশি হবো আমরা। বিশেষ করে বাচ্চারা…প্লিজ কাম।
খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে জেনির। অবশেষে শুভ্রকে খুঁজে পেয়ে গেছে সে এতো সহজে খুঁজে পাবে ভাবতেই পারে নি জেনি। আচ্ছা? শুভ্রকে তো পেলো। তাহলে রোদ কোথায়? ওই মেয়েটাই কি রোদ?বেঁচে আছে? নাকি মারা গেছে? নাকি অন্যকাউকে বিয়ে করে নিয়েছে শুভ্র??

তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৭৩+৭৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here