মহাপ্রয়াণ পর্ব ২৫+২৬

মহাপ্রয়াণ পর্ব ২৫+২৬
নাফিসা তাবাসসুম খান

ক্যাথরিনের হাতে আগুনের মশাল দেখে আর কোনো নেকড়ে প্রহরী দরজায় তাকে বাধা দিতে পারে নি৷ লোল্যান্ডা ভয়ে ক্যাথরিনের পিছনে আর যায় নি৷ তার চিন্তা হচ্ছে ক্যাথরিন না জানি নিচে গিয়ে এখন কি করবে। আর আলফাই বা ক্যাথরিনকে দেখে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাও ভাবাচ্ছে তাকে। লোল্যান্ডা মনে মনে বলছে,
” যেমন আলফা ঠিক তেমনই ক্যাথরিন। দুজনেই ঘাড়ত্যাড়া। উফফ! ক্যাথরিন নিজেও মরবে আমাকেও মারবে৷ ”

ক্যাথরিন ধীরে ধীরে আগুনের মশাল হাতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। সে জানে এখন আরোণ কোথায় হতে পারে। তাই দেরি না করে সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হলরুমে প্রবেশ করে সে। যা ভেবেছে তাই। আরোণ হলরুমে দাঁড়িয়ে আছে। হলরুমের দু পাশে দাঁড়িয়ে আছে সকল নেকড়েরা। তাদের চোখে হিংস্রতা ফুটে আছে। হলরুমের মাঝে তার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছে একজন। কিন্তু ক্যাথরিন সবচেয়ে অবাক হয় যখন সে দেখে আরোণ হতে কিছুটা দূরে একপাশে এক আগুনের গোলকের মাঝে মার্থা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে কাপছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এতদিন পর মার্থাকে হঠাৎ এভাবে দেখে ক্যাথরিন চেঁচিয়ে উঠে ওর নাম ধরে। মুহুর্তেই হলরুমে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি ক্যাথরিনের উপর স্থির হয়। ক্যাথরিন দৌড়ে মার্থার কাছে এগিয়ে যেতে নেয়। দৌড়ে যাওয়ার সময় তার হাত থেকে আগুনের মশালটা পড়ে যায়। আরোণ আকস্মিক পরিস্থিতিতে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। মুখের পাষণ্ড ভাব সরে গিয়ে চোখে মুখে ছেয়ে যায় ভয়ের কালো ছায়া। সে কিছু বলবে তার পূর্বেই ক্যাথরিনকে সেই হলের মাঝে থাকা আগুন্তকঃ লোকটা টেনে কাছে এনে একহাতের সাহায্যে তার ঘাড় পেচিয়ে ধরে। আরোণ চেচিয়ে উঠে,

” জ্যাকসন! খুন হবি তুই। ওকে ছেড়ে দে৷ ”
জ্যাকসন হালকা হেসে না জানার ভান করে বলে,
” কেন আলফা? কে এই মেয়ে? শরীর থেকে তো একদম মাখোমাখো মানব ঘ্রাণ আসছে। ”
আরোণের রাগ নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। সে মার্থার দিকে ইশারা করে বলে,
” যদি নিজের বোনকে জীবিত ফেরত চাস তাহলে এই মেয়েকে এই মুহুর্তে ছেড়ে দে। ”
জ্যাকসন আরো আত্মবিশ্বাসের সহিত বলে,

” আরোণ রদ্রিগেজ। এই মেয়েকে নিয়ে যেহেতু তোর এতো চিন্তা সেহেতু ভয় তোর পাওয়া উচিত। আমার বোনকে ছেড়ে দে নাহয় এই মেয়ের ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করতে আমি এক মুহূর্ত সময় নিবো না। ”
এটুকু বলে জ্যাকসন আরো জোরে ক্যাথরিনের গলায় চেপে ধরে হাত দিয়ে পেচিয়ে। ক্যাথরিন ব্যথায় ছটফট করা শুরু করে দেয়। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠে,
” আরোণ। ”
আরোণ তা শুনতে পায়। ক্যাথরিনকে হারানোর ভয় মনে হানা দিয়ে বসে। জ্যাকসনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” এই মেয়েকে ছেড়ে দে এই মুহুর্তে। তাহলে তোর বোনকে তোর কাছে ফিরিয়ে দিবো আমি। ”
জ্যাকসন কৌতূহলী কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
” এই সামান্য মেয়ের জন্য নিজের শত্রুকে বন্দী করার সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি হয়ে যাচ্ছে আলফা আরোণ রদ্রিগেজ? মজার বিষয় তো! তারমানে এই মেয়ে আর কোনো সাধারণ মেয়ে নেই। খুব গুরুত্বপূর্ণ এখন সে। ”
ক্রিয়াস রাগে কটমট করে বলে বসে,
” জ্যাকসন। নেকড়েদের শত্রুতার মাঝে এক মানব কন্যাকে টানবি না মোটেও। যদি ভীরু না হয়ে থাকিস তাহলে পুরুষের মতো আমাদের মোকাবেলা করতে আয়। ”
গলায় এতো জোরে চাপ লাগছে যে ক্যাথরিনের দমবন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। চোখ উল্টে যাচ্ছে তার শ্বাস নিতে না পেরে। আরোণের নিজেকে দিশেহারা মনে হচ্ছে। ক্যাথরিনকে বাঁচানোর জন্য তার কাছে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। জ্যাকসন বলে উঠে,

” বাব্বাহ! সমগ্র নেকড়ে পালের এই মেয়ের প্রতি এতো মায়া? এমনকি এই মেয়েকে বন্দী করায় আলফা আরোণ রদ্রিগেজের প্রাণও গলার কাছে এসে ঠেকেছে। আগে যদি জানতাম আরোণের প্রাণভোমরা এই মেয়ের মাঝে তাহলে ওই রাতে এই মেয়েকে টুকরো টুকরো করে গিলে খেতাম। কেউ লাশও খুঁজে পেতো না। ”
আরোণ ক্ষিপ্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
” কোন রাতের কথা বলছিস তুই? ”
জ্যাকসন অন্য হাতে ক্যাথরিনের মুখের আঁচড়ের উপর হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
” যেদিন রাতে এই মেয়েকে আমি প্রায় মেরেই ফেলছিলাম কিন্তু সেখানে শেষমেশ তুই এসে পৌঁছানোর ফলে এই মেয়ে বেঁচে যায়। ”

আরোণে দু হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। তারমানে জ্যাকসন সেই রাতে ক্যাথরিনের উপর হামলা করেছিলো। ক্যাথরিনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে পড়ে যায় আরোণের। সে ক্যাথরিনকে ওয়াদা করেছিলো যে যেই হাত তাকে বাজে ভাবে ছুঁয়েছে সেই হাত জোড়া কেটে সে ক্যাথরিনের পায়ের সামনে রাখবে। তার ইচ্ছে করছে এখনই জ্যাকসনকে টুকরো টুকরো করে হায়নাদের সামনে ছুড়ে ফেলতে। কিন্তু ক্যাথরিন জ্যাকসনের কাছে তাই কিছু করতেও পারছে না। কোনমতে রাগ নিজের ভেতর দমিয়ে রেখে চোয়াল শক্ত করে সে জ্যাকসনকে বলে,

” জ্যাকসন এখান থেকে জীবিত বের হতে চাইলে ক্যাথরিনকে ছেড়ে দে। নাহয় কসম করে বলছি যে হাতে ওকে ছুঁয়েছিস সেই হাত কেটে দিবো তোর। ”
জ্যাকসন এবার জোরে শব্দ করে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে সে বলে,
” এর নাম তাহলে ক্যাথরিন? বেশ সুন্দর নাম তো। ঠিক ওর রূপের মতো। আর আমিতো আজ প্রথম ওকে ছুঁয়েছি না। এর আগেও ছুঁয়েছি। আরো গভীরভাবে। ”
এটুকু বলেই জ্যাকসন একটানে ক্যাথরিনের পরিহিত ব্লাউজের কাধ থেকে টেনে একদিকের হাতা ছিড়ে ফেলে। সাথে সাথে ক্যাথরিনের কাধের পাশে একটা আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠে। তা দেখিয়ে জ্যাকসন বলে,

” এইযে প্রমাণ। ”
ক্যাথরিন আরোণের দিকে আকুতি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আরোণের মাথায় দপদপ করে আগুন জ্বলছে। সে বলে,
” তুই যা চাস পেয়ে যাবি। ক্যাথরিনকে আমার কাছে আসতে দে। ”
জ্যাকসন হেসে বলে উঠে,
” এতক্ষণে এসেছিস আসল কথায়। আমার বোনকে মুক্তি দিয়ে আমার সাথে যেতে দে৷ আমি এই মেয়েকে ছেড়ে দিবো। ”
ক্রিয়াস বলে উঠে,
” একে বিশ্বাস করা ঠিক হবেনা আলফা। বিশ্বাসঘাতকদের কথার কোনো দাম নেই। মার্থাকে ছেড়ে দিলেও যে ও ক্যাথরিনকে ছেড়ে দিবে তার কোনো বিশ্বাস নেই। ”
জ্যাকসন হেসে আরোণের দিকে তাকিয়ে বলে,
” এছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই তোমার কাছে। ”
আরোণ ভ্রু কুচকে বলে,

” আমি মার্থাকে যেতে দিবো। কিন্তু তোর শর্তে না, আমার শর্ত অনুযায়ী। আমি যেই মুহূর্তে মার্থাকে মুক্ত করবো সেই মুহূর্তে তুই ক্যাথরিনকে মুক্ত করবি। ”
জ্যাকসন বিরক্ত হয়। আরোণের স্বভাব বদলায়নি। হিসাব সবসময় সমানে সমান চায় সে। আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে জ্যাকসন রাজি হয়ে যায়। আরোণ ইশারা দিতেই একজন নেকড়ে এগিয়ে গিয়ে সেই গোলকের চারিদিকের আগুন নিভিয়ে তাকে টেনে এনে আরোণের সামনে দাঁড় করায়। আরোণ মার্থার দিকে তাকিয়ে বলে,
” কোনো চালাকি করার চেষ্টা করবে না মোটেও। ”

মার্থা উপর নিচ মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। জ্যাকসনও ক্যাথরিনকে ছেড়ে দিয়ে দু কদম পিছনে সড়ে দাঁড়ায়। ক্যাথরিন গলায় হাত দিয়ে কাশতে শুরু করে। কাশতে কাশতে সে আরোণের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মার্থাও জ্যাকসনের কাছে এগিয়ে যায়। যাওয়ার সময় একবার ক্যাথরিনের সাথে চোখাচোখিও হয়। ক্যাথরিন সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয় তার থেকে। মার্থা জ্যাকসনের কাছে আসতেই দুজনেই মুহূর্তে বাতাসের গতিতে সেখান থেকে প্রস্থান করে। আরোণও দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে ক্যাথরিনকে জড়িয়ে ধরে। তার এতক্ষণ আটকে থাকা দম মাত্র স্বস্তির নিশ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসে। ক্যাথরিনও জড়িয়ে ধরে তাকে। নেকড়েদের মধ্যে হতে ভিওরিকা বলে উঠে,
” আলফা আপনি জ্যাকসনকে কিভাবে যেতে দিতে পারলেন? এতো মাস ধরে ওকে খুঁজে ফিরছিলাম আমরা। মার্থাকেও ওর সাথে যেতে দিলেন। ওকে ধরার আর কোনো রাস্তা নেই আমাদের কাছে এখন। ”
আরোণ স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দেয়,

” ক্যাথরিনের থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই আমার জন্য। আজকে সবাইকে স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি ক্যাথরিন আমার পরিবার। আর ওকে রক্ষা করা এখন থেকে পালের সকলের দায়িত্ব। সকলে বুঝতে পেরেছ? ”
আরোণের এহেন স্বীকারোক্তিতে সকলেই বেশ অবাক হয়। ক্রিয়াস মনে মনে ভাবে আরোণ কোনো ভুল করছে না তো? সকলেরই আগে থেকে সন্দেহ ছিলো যে তাদের আলফা হয়তো ক্যাথরিনকে ভালোবাসে। কিন্তু আজ তা স্পষ্টও হয়ে গেলো।
আরোণ আবার জোরে প্রশ্ন করে,

” সবাই আমার কথা বুঝতে পেরেছ? ”
সঙ্গে সঙ্গে সকল মানবরূপী নেকড়ে পাল এক হাঁটু গেড়ে বসে বুকের উপর ডান হাত রেখে মাথা নত করে একসঙ্গে বলে উঠে,
” যা হুকুম আলফা। ”
আরোণের বুকে মুখ গুজা অবস্থায় এই দৃশ্য দেখে অবাক হয় ক্যাথরিন। হঠাৎ করে তার এই প্রাসাদসহ সকলকে এতো আপন লাগছে কেন? এই প্রাসাদে দাঁড়িয়ে থেকে সকল নেকড়েদের সামনে আরোণের বুকে নিজেকে এতো নিরাপদ অনুভব হচ্ছে কেন?

ক্যাথরিন মুখ তুলে তাকায় আরোণের দিকে। আরোণও তার দিকে তাকায়। আরোণের চোখে রাগের আভা ফুটে আছে। কোনো কথা না বলে ক্যাথরিনের হাত ধরে সেই হলরুম থেকে নিয়ে বেরিয়ে নিজের কক্ষে নিয়ে আসে তাকে। ক্যাথরিনকে কক্ষের মাঝে দাঁড় করিয়ে রেখেই সে বারান্দায় চলে আসে।
বোকার মতো ক্যাথরিন আরোণের পিছু পিছু বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে বলে,
” কি হয়েছে তোমার? রেগে আছো কেন? ঠিক আছি আমি। ”
আরোণ কোনো জবাব দেয় না। রেলিঙের হাতল শক্ত করে ধরে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে সে। ক্যাথরিন আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আরোণের কাধে হাত রেখে প্রশ্ন করে,

” কিসের রাগ দেখাচ্ছো তুমি? ”
আরোণ চকিতে পিছনে ফিরে ক্যাথরিনের বাহু ধরে টেনে তাকে সামান্য কাছে এনে প্রশ্ন করে,
” আমার কথা না মেনে আমাকে শাস্তি দিয়ে খুব মজা পাও তুমি? ”
ক্যাথরিন ভয় পায় কিছুটা। আরোণ বেশ রেগে আছে বুঝাই যাচ্ছে। ক্যাথরিন ঢোক গিলে বলে,
” আমার কথা শুনো তুমি। ”

” কি শুনবো? হ্যাঁ? আমি ক্রিয়াসকে দিয়ে বলে পাঠাইনি যেন কক্ষ থেকে বের না হও? কেন বের হয়েছ তাহলে? তোমার কি মনে হয় আমার শত্রুরা রক্তে মাংসে তৈরি মানুষ? আমাকে না সারাদিন জানোয়ার বলে বেরাও তুমি? আমার শত্রুরাও জানোয়ার এতটুকু বুঝ নেই তোমার মাঝে? মানুষের গন্ধ পেলেই তারা হামলে পড়ে তাদের উপর। তোমার সাথে ওই জানোয়ার কি করতে পারতো কোন ধারণা আছে তোমার? ”
এক নিশ্বাসে সব কথা বলে থামে আরোণ। রাগে থরথর করে কাপছে সে। ক্যাথরিন ঠান্ডা স্বরে বলে,
” আর ওই জানোয়ার যদি তোমার কোনো ক্ষতি করতো? ”
” তুমি নিজে এই মাত্র ওই জানোয়ারের কাছে বন্দী ছিলে। যেই হাত জোড়া কেটে তোমার পায়ের সামনে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আমি সেই হাত জোড়া যখন তোমায় সেখানে সকলের সামনে ছুঁয়েছিলো আমার কেমন লাগছিলো তুমি জানো? আর আমার যদি কোনো ক্ষতি করেও তাহলে তোমার কি আসে যায় তাতে? তুমি উল্টো মুক্তি পেতে আমার থেকে। ”

” যায় আসে আমার। ”
” সেটাই তো। কেন যায় আসে তোমার? ঘৃণা করো তুমি আমাকে। আর এই প্রাসাদে তোমার শুধু নিজের ভালোটাই বুঝা উচিত। অন্য কাউকে নিয়ে না ভেবে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবা উচিত। ”
” যায় আসে আমার কারণ আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য তুমি আছো কিন্তু তোমাকে নিয়ে ভাবার জন্য কেউ নেই। আমার ঢাল হয়ে তুমি আছো কিন্তু তোমার ঢাল হয়ে কেউ নেই। ”
থমকায় আরোণ। ক্যাথরিনের চোখের দিকে ভালো করে তাকায়। চিন্তার ছাপ দেখতে পায় সে। সতর্ক কণ্ঠে প্রশ্ন করে,

” তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করছো? ”
ক্যাথরিন সাথে সাথে আরোণের চোখ থেকে নজর সরিয়ে ফেলে। আমতা আমতা করে বলে,
” ভুলে যাচ্ছো আমি মানুষ? মানবতা আছে আমার মাঝে। আমার চিন্তা যে করে তাকে নিয়ে চিন্তা করাটাও মানবতার অংশ। ”
এটুকু বলেই ক্যাথরিন বারান্দা থেকে কক্ষে চলে যায়। আরোণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে ক্যাথরিনের দিকে। ক্যাথরিন কক্ষে গিয়ে পায়চারি করছে। আরোণ হঠাৎ অপরদিকে ফিরে হেসে দেয় হালকা। ক্যাথরিন এইমাত্র তাকে মিথ্যে বলে গিয়েছে। তার মনে শুধু মানবতা না চিন্তাও ছিলো। এটুকু ভাবতেই আরোণের মনে হচ্ছে সে যেন কোনো রাজ্য পেয়ে যাওয়ার সুখ অনুভব করছে।

আনাস্তাসিয়া এখনো জীবিত এটা বিশ্বাস করতে তার নিজেরই কষ্ট হচ্ছে। কিভাবে কি হয়ে গেলো তা এখনো মাথায় ঢুকছে না তার। তার থেকেও বেশি অবাক হচ্ছে সে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাথিউকে দেখে। লিয়াম জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়ার পর এই যুবকের সাথে তার দেখা হয়েছিলো। কিন্তু ম্যাথিউও একজন ভ্যাম্পায়ার এবং তার থেকেও বড় কথা রিকার্ডোর ভাই এটা জেনে তার বিস্ময়কর লাগছে।
ম্যাথিউ গা ছাড়া ভাব করে কারাগারের চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে। হঠাৎ আনাস্তাসিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
” তুমি ভারী অকৃতজ্ঞ মেয়ে তো! আমি তোমার জীবন বাঁচিয়ে দিলাম অথচ এই পর্যন্ত একটা ধন্যবাদও দিলে না। ”
” আপনাকে আমি বলেছি আমাকে বাঁচান আপনি? তাহলে কেন বাঁচালেন? ”
ম্যাথিউ খানিকটা গম্ভীর ভাব ধরে বলে,

” ভালো প্রশ্ন করেছ তুমি। আসলে কাউন্ট রিকার্ডো তথা আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের উল্টো কাজ করা আমার স্বভাবের একটা বৈশিষ্ট্য। যেহেতু উনি তোমাকে মারার আদেশ দেয় তাই আমি ভাবলাম তোমাকে বাঁচিয়ে দেই। যদি উনি তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার আদেশ দিতো তাহলে আমি তোমাকে মেরে ফেলতাম। সহজ হিসাব। ”
আনাস্তাসিয়া অবাকের চরম পর্যায়ে যায়। সে বিস্ময় নিয়ে বলে,
” আপনার মাথায় সমস্যা আছে। শুধুমাত্র নিজের ভাইয়ের বিরোধিতা করার জন্য কাউকে মারতেও আপনার হাত কাপবে না? ”
ম্যাথিউ হেসে দেয় এই কথা শুনে। হাসতে হাসতে হঠাৎ সে তার পিশাচ রূপে এসে পড়ে। সূচালো দাঁত বের করে বলে উঠে,
” হাত না দাঁত হবে। আর নিত্যদিন মানুষ মেরে তাদের রক্তপান ভ্যাম্পায়ারদের নেশা। এতে এতো কাপাকাপির কি আছে? ”

হঠাৎ ম্যাথিউর এই রূপ দেখে আনাস্তাসিয়া ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। এইরকম পিশাচ রূপের সাথে সে অভ্যস্ত নয়। ওই ডায়েরিতে লেখা ভ্যাম্পায়ারদের বর্ণনা পড়ার সময় সে কখনো এক মুহূর্তের জন্য ভাবে নি যে কখনো সামনাসামনি এদের দেখতে পাবে। অথচ ভাগ্য আজ তাকে ভ্যাম্পায়ারদের রাজ্যে এনে ফেলেছে।
ম্যাথিউ স্বাভাবিক রূপে ফিরে এসে বলে,
” যাই হোক তোমার বন্দী জীবনের জন্য তোমাকে শুভেচ্ছা। আমি যাই। ”
এটুকু বলে ম্যাথিউ বেরিয়ে যায় কারাগার থেকে। সাথে সাথে এক কালো আলখেল্লা পরিহিত লোক এসে কারাগারে লোহার দরজায় তালা মেরে দিয়ে সে ও প্রস্থান করে সেখান থেকে। এতক্ষণ তাও লণ্ঠনের আলো ছিলো সেই আলখেল্লা পরিহিত লোকটার কারণে। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে আছে কারাগার। আনাস্তাসিয়ার খুব ক্লান্ত অনুভব করে। দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে সে। চোখ বুজে ভাবতে থাকে আজকে সারাদিন তার সাথে কি হয়েছে।

দড়ির চাপে যখন শ্বাসরোধ হয়ে আনাস্তাসিয়ার প্রায় দম যায় যায় অবস্থা তখন হঠাৎ সে শুনতে পায়,
” এই মেয়েকে আমার জন্য আনা হয়েছিলো। ”
রিকার্ডো ঠান্ডা স্বরে বলে,
” আমার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবি না ম্যাথিউ। ”
” আপনার পক্ষে ছিলামই বা কবে আমি কাউন্ট? ”
ড্যানিয়েল উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
” আহ! ম্যাথিউ। হচ্ছেটা কি? তোমার ভাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মেয়ে মরে গেলেই ঝামেলা শেষ। ”
ম্যাথিউ ড্যানিয়েলের কথাকে পাত্তা না দিয়ে আনাস্তাসিয়ার গলায় দড়ি পেঁচিয়ে রাখা লোকটার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলে,

” আমার কথা কানে যায় নি? এই মেয়ের থেকে সড়ে দাঁড়াতে বলেছি আমি। ”
লোকটা হয়তো ভয় পায়। তাই তাড়াতাড়ি আনাস্তাসিয়াকে ছেড়ে সড়ে দাঁড়ায়। রিকার্ডো রাগে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
” আমার দূর্গে দাঁড়িয়ে থেকে তুই আমার বিরোধিতা করছিস ম্যাথিউ? এতো সাহস কোত্থেকে পেলি তুই? ”
” আমার জন্য কিনে আনা দাসীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আপনার নেই কাউন্ট। ”
” তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি কে হই? ”
” কোভেনদের কাউন্ট আর আমার মায়ের প্রিয় সন্তান। ”
ক্যামিলো এবার উঠে আসে। রিকার্ডোর কাছে এসে তাকে ধরে বলে,
” মেয়েটাকে ছেড়ে দে। এখন সামান্য মেয়ে নিয়ে আমি চাইনা আমার সন্তানরা লড়াই করুক। ”
রিকার্ডো আনাস্তাসিয়ার দিকে তাকিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
” এই মেয়ের এতো দাম নেই যে এর জন্য আমি লড়াই করবো। ”
শ্বাসরোধের পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আনাস্তাসিয়া নিচে তাকিয়ে বসে ছিলো হলের মাঝে। কিন্তু রিকার্ডোর এই কথা শুনে মুখ তুলে তাকায় সে তার দিকে।
ম্যাথিউ বলে,

” তোমার ছেলেকে বলে দাও মা আমার অধীনের দাসীর উপর যেন অধিকার খাটাতে না আসে। ”
রিকার্ডো রাগে চেচিয়ে উঠে,
” কি করবি তুই এই মেয়েকে নিয়ে? ”
ম্যাথিউ বেপরোয়া ভাবে জবাব দেয়,
” আমার যা মর্জি। ”
রিকার্ডো ক্যামিলোকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” ম্যাথিউকে বলে দাও যদি এই মেয়েকে জীবিত রাখতে চায় তাহলে একে যেন কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়। অন্যথায় আমি আমার দূর্গে এই মেয়েকে কোথাও দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই নিজ হাতে খুন করবো। ”
ক্যামিলো পরে যায় বিপাকে। এই দুই ছেলের মাঝে সবসময়ই তার এই সমস্যা হয়। ছেলেদের মতবিরোধের ফলে সে দোটানায় পড়ে যায়। কিন্তু আপাতত মেয়েটাকে জীবিত রাখতে হলে রিকার্ডোর আদেশই মেনে নিতে হবে।
ক্যামিলো ম্যাথিউকে রাজি করাতে চলে যায়। ড্যানিয়েলও তার সাথে যোগ দেয়। সে চায় না রিকার্ডোর বিরোধিতা করে ম্যাথিউ কোনো সমস্যায় পড়ুক। ম্যাথিউ শেষমেশ বাধ্য হয়ে রাজি হয়। এভাবেও এই মেয়ে দিয়ে তার কোনো কাজ ছিলো না। সে কেবল রিকার্ডোর বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্যই এই মৃত্যুূদণ্ড থামিয়েছিলো।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে আনাস্তাসিয়া। নিঝুম রাতে চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে। কারাগারে অবস্থিত জানালার কালো পর্দা হঠাৎ ধীরে ধীরে সড়ে যায়। চাঁদের আলো প্রবেশ করে কক্ষে। ফিনফিনে মৃদু বাতাস বয়ে যায় চারিদিকে। একটি কালো ছায়া ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় আনাস্তাসিয়ার দিকে। মাটিতে শুয়ে আছে সে। তার পাশেই একটা পোকা মাটির উপর হেঁটে তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কালো ছায়াটি পা দিয়ে তা পিষে ফেলে মাটির সাথে। তারপর এক হাঁটু গেড়ে নিচে বসে আনাস্তাসিয়ার পাশে। মাথা কিছুটা ঝুকিয়ে আনাস্তাসিয়ার মুখের উপর হালকা ফু দেয়। আনাস্তাসিয়ার চোখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সড়ে যায় এতে।
ছায়াটি আরো একটু নিচে ঝুকে আনাস্তাসিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
” ভুল করেছো নাসিয়া। ভুল করেছো এখানে এসে। তুষ দূর্গে তোমার জীবন মোটেও সুখকর হবে না। নরক যন্ত্রণা অনুভব করবে প্রতি মুহুর্তে। তোমার ভাগ্যের প্রতি আফসোস হচ্ছে নাসিয়া। ”

ধরফরিয়ে উঠে বসে আনাস্তাসিয়া। তড়তড় করে ঘামছে সে। হঠাৎ ঘুমের মাঝে তার মনে হয়েছিলো কেউ তার খুব কাছে এসে তাকে খুঁটিয়ে দেখছে। নিজের মুখের উপর কারো গরম নিশ্বাসও অনুভব করছিলো সে। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় আনাস্তাসিয়া। কেউ নেই। তাহলে কি তার ভ্রম ছিলো কেবল? আনাস্তাসিয়া হঠাৎ লক্ষ্য করে জানালার পর্দার দিকে। পর্দা সড়ে চাঁদের আলো কারাগারের ভিতরে ছড়িয়ে আছে। তার স্পষ্ট মনে আছে ঘুমানোর আগে সম্পূর্ণ কক্ষ অন্ধকার ছিলো। তাহলে পর্দা সড়লো কিভাবে? আনাস্তাসিয়া এবার নিশ্চিত হয়ে যায় যে কেউ এসেছিলো।

চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে পাশে একটি মাটির পাত্র হতে গ্লাসে পানি নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা খেয়ে নেয়। তারপর গ্লাস রেখে উঠে দাঁড়ায় সে। জানালার দিকে এগিয়ে যায়। বাহিরের চাঁদের আলো এসে ঠিকরে পড়ছে তার মুখের উপর। এতে যেন তার নীলকান্তমণি জ্বলজ্বল করে উঠে আরো। আনাস্তাসিয়া মাথা নিচু করে নিজের গলার দিকে একবার তাকায়। এসব কিছুর মাঝে সে গ্র্যানির দেওয়া ক্রুশের হারটিও হারিয়ে ফেলেছে। মন খারাপ হয় তার। তার কাছে না আছে তার পরিবার আর না আছে তাদের শেষ কোনো চিহ্ন। লিয়ামের কথা খুব মনে পড়ছে তার। একটা মাত্র আদরের ভাই ছিলো তার। তার মা জুলিয়া যখন তৃতীয় বারের মতো সন্তান সম্ভাবা ছিলো তখন এগারো বছরের ক্যাথরিন আর নয় বছরের আনাস্তাসিয়া প্রতিদিন চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করতো যেন তাদের একটা ভাই হয়। অবশেষে তাদের মনের ইচ্ছা পূরণও হয়। ভাই নয় যেন এক জ্যান্ত পুতুল পেয়েছিলো তারা। সারাদিন ভাইয়ের আগে পিছে ঘুরতো তারা। কে জানতো একদিন এই ভাইয়ের মৃত্যুর সাক্ষীই তার হতে হবে?

আনাস্তাসিয়া ভেবে পায় না সে কাকে দোষ দিবে? তার ভাগ্যকে? যে তার থেকে তার পুরো পরিবার কেড়ে নিলো। তার হৃদয়কে? যে এমন একজনের দখলে চলে গিয়েছে যে কিনা নিজে আনাস্তাসিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। নাকি নিজেকে? আনাস্তাসিয়ার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। বেঁচে থাকার ইচ্ছে তার শূণ্যের কোঠায়। নিজের জীবনটাকে অনেক বিষাক্ত লাগছে তার। আনাস্তাসিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে,
” মা আমাকেও কেন তুমি সাথে নিলে না? দমবন্ধ হয়ে আসছে আমার। তোমার মেয়ে একাকিত্ব সহ্য করতে পারতো না। আর আজ দেখো আমি নিঃস্ব। তোমার মেয়ে সমুদ্রের তীরে মুক্ত পাখির মতো বেড়ে উঠেছে। আর আজ দেখো আমি বন্দী। আমি কেনো মরলাম না? আমাকে কেন নিলে না? ”

হঠাৎ পিছনে ফিরে তাকায় আনাস্তাসিয়া। এইমাত্র তার মনে হলো কেউ তাকে দরজার অপাশ থেকে দেখছে। আনাস্তাসিয়া এগিয়ে যায় দরজার দিকে। দরজার ভিতর হতে চারিদিকে একবার চোখ বুলায়। না কেউ নেই। তাহলে তার কেন মনে হচ্ছিলো কেউ তার দিকে তাকিয়ে ছিলো দূর হতে? আনাস্তাসিয়া চুপচাপ এসে মাটিতে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ে। গভীর মনযোগে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে রাত পাড় করে দেয় সে।

” আমি হয়তো পাগল হয়ে গিয়েছি ভ্যালেন্টাইন। বুঝতে পেরেছিস? ”
ভ্যালেন্টাইনকে কিছু শুকনো খড় খাওয়াতে খাওয়াতে বলে ক্যাথরিন। স্নিগ্ধ সকালে ঘুম থেকে উঠেই সকাল সকাল ক্যাথরিন ভ্যালেন্টাইনের কাছে এসেছে। তার মনে অনেক কথা জমে আছে। কিন্তু বলার মতো কাউকে পাচ্ছিলো না। পরে তার মনে পড়ে ভ্যালেন্টাইনের থেকে ভালো শ্রোতা সে কোথাও আর পাবে না এই প্রাসাদে। তাই সোজা এখানে চলে এসেছে সে।
” আমার কেন যেন হঠাৎ এই প্রাসাদ এবং প্রাসাদে থাকা সকলকে আপন মনে হচ্ছে। নিজেকে নিরাপদ অনুভব করছি এখানে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। তাই না? ”
ভ্যালেন্টাইন যেন মাথা নেড়ে বলে উঠলো,

” এই প্রাসাদকে নাকি আলফাকে আপন মনে হচ্ছে? ”
ক্যাথরিন সাথে সাথে মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠে,
” মোটেও না। একদমই না। ”
ভ্যালেন্টাইন আবার মাথা নাড়তেই ক্যাথরিন হাত থেকে খড় নিচে ফেলে দিয়ে বলে,
” যা। তোর সাথে কথা বলতে আসাই আমার ভুল হয়েছে। ”
এটা বলেই ক্যাথরিন পিছনে ফিরে। পিছনে ফিরতেই দেখে লোল্যান্ডা পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যাথরিনকে দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
” ভ্যালেন্টাইনকে সব বলতে পারো কিন্তু নিজের বন্ধুকে বলতে বিব্রত বোধ করো? নাকি আমাকে তুমি বন্ধুই মনে করো না? ”
ক্যাথরিন বলে উঠে,

” না না। তেমন কিছু না। ”
” তাহলে বলো তোমার মনে কি চলছে? ”
ক্যাথরিন আর লোল্যান্ডা আঙ্গিনায় হাঁটা শুরু করে। ধীরে ধীরে হাঁটতে ক্যাথরিন বলে,
” আমার আসলে মার্থাকে নিয়ে ভাবছি। সে আমাকে বলেছিলো তার ভাই আছে কিন্তু আমি কখনো জানার প্রয়োজন মনে করি নি তার ভাই কে। জ্যাকসনের মার্থার ভাই হওয়াটা আমি ঠিক কিভাবে নিবো বুঝতে পারছি না। মনের মধ্যে সংশয় কাজ করছে। ”
মার্থা প্রশ্ন করে,

” তোমার কি মনে হয়? মার্থাও ওর ভাইয়ের মতো? ”
” আমি জানিনা লোল্যান্ডা। কি সত্যি আর কি মিথ্যে তা বুঝে উঠতে পারছি না। এই প্রাসাদটা আমার কাছে অনেকটা চোরাবালির মতো। যতবারই মনে হচ্ছে আমি সব বুঝে গিয়েছি তখনই নতুন কোনো রহস্য আমার সামনে এসে পড়ছে। সবকিছু আরো জটিল মনে হচ্ছে যত গভীরে যাচ্ছি৷ ”
লোল্যান্ডা হাঁটা থামিয়ে বলে,
” আমার মনে হয় তোমার ক্রিয়াসের সাথে কথা বলা উচিত। সে তোমার জন্য রহস্যের জাল কিছুটা সহজ করে দিতে পারে। ”
ক্যাথরিন মনে মনে বলে,
” ক্রিয়াসের সাথে তো কথা বলতেই হবে আমার। শুধু এই প্রাসাদ না আরোণও আমার কাছে কোনো রহস্যের থেকে কম নয়। তার সম্পর্কেও আমার জানার অনেক কিছু আছে। ”

একটি ট্রেতে করে পারুটির একটি টুকরো এবং তার সাথে এক বাটি স্যুপ আনাস্তাসিয়ার সামনে এনে রাখে কালো আলখেল্লা পরিহিত লোক। কর্কশ গলায় বলে উঠে,
” এই মেয়ে। চুপচাপ তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। তুই না খেয়ে মরলেও আমার জ্বালা। ”
আনাস্তাসিয়া চোখ তুলে তাকায় লোকটির দিকে। প্রশ্ন করে,
” আমি মরলে তোমার কিসের জ্বালা হতে পারে? রিকার্ডো তো উল্টো আরো খুশি হবে। ”
” এই মেয়ে। কতো বড় স্পর্ধা তোর। কাউন্টকে নাম ধরে ডাকিস। আর কখনো যদি শুনি মেরে একদম কৃষ্ণ সাগরে লাশ ভাসিয়ে দিয়ে আসবো। কেউ খুঁজেও পাবে না। ”
” লিভিউ! ”

হঠাৎ ম্যাথিউর শব্দ পেয়ে আনাস্তাসিয়া ও সেই লোকটা পিছনে ফিরে তাকায়। ম্যাথিউ বলে,
” আমার দাসীকে মেরে তুই সমুদ্রে ভাসাবি এতো সাহস হয়ে গিয়েছে তোর? ”
লোকটা মাথা নত করে বলে,
” আমি তো শুধু ভয় দেখাচ্ছিলাম কোভেন। ”
ম্যাথিউ বাতাসের বেগে লোকটার সামনে এসে বলে,
” এই প্রাসাদে তোর জায়গা ও শুধু একজন দাসের। নিজের জায়গা বুঝে মুখ বন্ধ করে দাসত্ব করাই তোর কাজ। আর কখনো যদি দেখি নিজের যোগ্যতার বেশি মুখ চালাচ্ছিস তাহলে এক কামড়ে সব রক্ত শুষে নিবো৷ ”
লোকটা ভয়ে তাড়াতাড়ি ক্ষমা চেয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে। আনাস্তাসিয়া এতক্ষণ বসে নিরবে তাকিয়ে সব দেখছিলো। ম্যাথিউ হেসে বলে উঠে,

” মেয়ে তোমার উচিত আমাকে কদমবুসি করে ধন্যবাদ জানানো৷ ”
আনাস্তাসিয়া প্রশ্ন করে,
” তুমি আমার সাথে এমন নাটক কেন করো যেন এসব যা হচ্ছে তা খুব সাধারণ বিষয়? ”
” তোমার জন্য এসব সাধারণ না হলে তা তে আমার কিছু করার নেই। কিন্তু আমার জন্য এসব কিছুই সাধারণ। ”
” কাস্টোরিয়ায় যখন আমাদের দেখা হয়েছিলো তখন তুমি সেখানে তোমার ভাইকে ই খুঁজতে গিয়েছিলে? ”
” অতীত নিয়ে না ভেবে বর্তমান নিয়ে ভাবো। কাস্টোরিয়া তোমার অতীত, ট্রান্সিলভেনিয়া তোমার বর্তমান। ভ্যাম্পায়ারদের রাজ্য এটা। মানুষ হয়ে এখানে বেঁচে থাকা সবথেকে কঠিন কাজ৷ যেদিন কোনো ভ্যাম্পায়ার শিকার না পেয়ে খালি পেটে দূর্গে ফিরে আসে সেদিন প্রাসাদের দাস দাসীদের রক্তই আমরা পান করি। তাই এমন কোনো কাজ করো না যেটাতে তোমার পরিণামও এমন হয়। ”
আনাস্তাসিয়া উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলে উঠে,

” আমি নিজ থেকে তোমাকে বলছি আমার রক্ত পান করো। আমাকে মেরে ফেলো। তবুও আমাকে বাঁচিয়ে রেখো না। তোমার ভাইও খুশি হবে তোমার উপর। আমি বেঁচে থাকতে চাই না। ”
ম্যাথিউ হেসে ফেলে। ঠাট্টার স্বরে বলে উঠে,
” জীবনে প্রথম শুনলাম কোনো মানুষ প্রাণ ভিক্ষা পাওয়ার পরেও ভ্যাম্পায়ারকে বলছে তাকে মেরে ফেলতে। আর কি বললে? তোমাকে মারলে আমার ভাই খুশি হবে? এজন্যই আমি তোমাকে মারবো না। তোমাকে জীবিত রাখবো। কখনো যদি মনে হয় আমার যে কাউন্ট রিকার্ডো তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাচ্ছে তাহলে আমি নিজেই তোমাকে মেরে ফেলবো। ”
এটুকু বলেই প্রস্থান করে ম্যাথিউ। আনাস্তাসিয়ার নিজেকে আসলেই দাসী মনে হচ্ছে এখন। যার বাঁচা মরা তার মনিবের হাতে।

হঠাৎ কক্ষের দরজায় কড়াঘাতের শব্দ পেয়ে চমকে উঠে ক্রিয়াস। এই সন্ধ্যা বেলায় তার কাছে কে আসতে পারে ভেবে পায় না সে। লোল্যান্ডা নাকি? মনে মনে হালকা বিরক্ত হয় ক্রিয়াস। এই মেয়েকে সে মানা করেছিলো যাতে যখন তখন তার কক্ষে না আসে। এসব ভাবতে ভাবতে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয় সে। দরজা খুলতেই চমকে যায় সে। কণ্ঠে খানিকটা বিস্ময় নিয়ে বলে,
” ক্যাথরিন তুমি? ”
” আসতে পারি? ”
” কোনো প্রয়োজন? ”
” তোমার সাথে কথা ছিলো। ”

ক্রিয়াস আর কিছু না বলে দরজার সামনে থেকে সড়ে দাঁড়ায়। ক্যাথরিন বিনাবাক্য ব্যয়ে কক্ষে প্রবেশ করে। ক্রিয়াস দরজা চাপিয়ে কক্ষে এসে বলে,
” দাঁড়িয়ে থেকো না। বসো তুমি। ”
ক্যাথরিন কক্ষের একপাশে থাকা কাঠের এন্টিক সোফায় বসে। ক্রিয়াস বিছানায় বসে বলে,
” আলফা তো প্রাসাদে নেই। ”
” আমি জানি। আমার কথা তোমার সাথে। ”
ক্রিয়াস এখন সোজা হয়ে বসে। ক্যাথরিন কোনো ভনিতা না করে বলে,
” আমি আরোণ সম্পর্কে জানতে চাই। ”
ক্রিয়াস ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
” আলফা সম্পর্কে কি জানতে চাও? ”
” সব। তার অতীত, তার স্বত্তা সব কিছু সম্পর্কে। কিভাবে সে নেকড়ে হলো। কত বছর ধরে সে নেকড়ে হিসেবে জীবন পার করছে সব। ”

হঠাৎ ক্যাথরিনের থেকে এই কথা শুনে ক্রিয়াস তাজ্জব বনে যায়। কিন্তু পরে ঠিক করে ক্যাথরিনকে সত্যি জানানো উচিত। ক্যাথরিনও যে ইদানীং আরোণের প্রতি কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়ছে তা বুঝতে পারছে ক্রিয়াস। তাই আরোণ সম্পর্কে সব জানা উচিত তার৷ ক্রিয়াস উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে এসে আবার বসে। ক্যাথরিন খুব মন দিয়ে বসে আছে সব শোনার জন্য। ক্রিয়াস বলা শুরু করে,
” আলফার জন্ম ১৪৯৩ সালে। ”
এটুকু শুনেই ক্যাথরিনের চোখ চড়াক গাছে উঠার উপক্রম। সে আর্তনাদ করে বলে উঠে,
” কি? ১৪৯৩? ”
ক্যাথরিন আঙুল গুনে হিসাব শুরু করে দেয়। তারপর আরো বিস্ময় নিয়ে বলে,
” আরোণের বয়স ১২১ বছর? ১২১? আমার থেকে ১০২ বছরের বড়? ঈশ্বর! এটা কিভাবে সম্ভব? ”
ক্রিয়াস বলে,

” পুরোটা শুনতে চাইলে তোমার বিস্ময় দমিয়ে রাখো আপাততর জন্য। পরে যা প্রশ্ন করার করো। ”
ক্যাথরিন এখনো বিস্ময় নিয়ে বসে আছে। তবুও সে মাথা উপর নিচে নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। ক্রিয়াস বলা শুরু করে,
” আরোণের পরিবারে শুধু তার বাবা ছিলো। বুঝ হওয়ার পর হতেই সে সবসময় দেখতো তার বাবা
জাদুবিদ্যা করে বেড়াতো। সে আশা করতো একদিন জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করে সে আলাদা কোনো শক্তির সৃষ্টি করবে। যেই শক্তিকে মানুষরা ভয় পাবে। তার জাদুবিদ্যার ফলেই আরোণের মা ও তার জন্মের সময় মারা যায়। এবং জাদুর উল্টো প্রভাবের ফলে আরোণ খুব দূর্বল শিশু হিসেবে ভূমিষ্ট হয়। ছোট থেকেই আরোণ বাকি শিশুদের তুলনায় খুব দূর্বল ছিলো। এজন্য অন্য বাচ্চাদের কাছে তাকে কম হেনস্তার শিকার ও হতে হয় নি। অপরদিকে আরোণের বাবা জাদুবিদ্যার পাশাপাশি শয়তানকে আহবান করা শুরু করে।

এবং অবশেষে তিনি সফল হয়। শয়তান তার ডাকে সাড়া দেয়। আরোণের বাবা শয়তানের উদ্দেশ্যে এক নেকড়ে শিকার করে সেটিকে বলি দেয় এবং সেটির রক্ত সংগ্রহ করে। তারপর শয়তানের আদেশ অনুযায়ী সেই রক্ত আরোণকে পান করায়। তার উদ্দেশ্য ছিলো আরোণকে শক্তিশালী বানিয়ে তিনি আরোণকে নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়। হঠাৎ এতো শক্তি আরোণের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে কোনো ভাবেই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলো না। নিজের মানব ক্ষুধা মেটাতে সে সর্বপ্রথম নিজের পিতাকেই আহার হিসেবে গ্রহণ করে। তারপর রাতের আধারে পালিয়ে গহীন অরণ্যের এই পরিত্যক্ত বাসকোভ প্রাসাদে চলে আসে। এসব যখন হয় তখন আরোণের বয়স কেবল ১১ ছিলো। একটা ১১ বছরের শিশু নিজের মধ্যকার নেকড়ে স্বত্তার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের জন্য একা একা এই গহীন অরণ্যে থাকা শুরু করে। লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন এই অরণ্যে পশুরাই হয়ে উঠে ওর বন্ধু আবার পশুরাই হয়ে উঠে তার শিকার। নিজের পিতার ক্ষমতা লাভের জন্য বলিদান হিসেবে সে পায় অমরত্ব। ”
ক্যাথরিন কাপা স্বরে কোনোমতে প্রশ্ন করে,

” অমরত্ব? ”
” আরোণ সর্বপ্রথম নেকড়ে মানব। সবথেকে বেশি ক্ষমতার অধিকারী। আমরা সকলে কোনো নেকড়ের কামড়ে এই স্বত্তা ধারণ করছি কিন্তু আরোণ প্রকৃতি নেকড়ে মানব। একারণেই সে আলফা। তাই সে অমরত্ব লাভ করেছে। ”
ক্যাথরিন আর কিছু প্রশ্ন করতে পারে না। সে উঠে দাঁড়িয়ে ক্রিয়াসের রুম থেকে প্রস্থান করে। ক্রিয়াসের কক্ষ থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে ভাবতে থাকে আরোণ কিভাবে একা এতো গুলো বছর এই প্রাসাদে ছিলো। এই বয়সে তো ক্যাথরিনও রাতে একা ঘুমোতে ভয় পেতো। আর আরোণ তখন এই প্রাসাদে নিজের শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিলো। কোনো পিতা এতো নিষ্ঠুর কি করে হতে পারে? নিজের সন্তানকে কেউ কিভাবে জেনে বুঝে বিষ সমতুল্য কিছু পান করাতে পারে? এসব ভাবতে ভাবতে ক্যাথরিনের চোখের কোণে পানি চলে আসে। নিজের কক্ষে এসে দরজা খুলতেই সে দেখতে পায় আরোণ তার কক্ষে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যাথরিনকে দেখে আরোণ বলে উঠে,
” আমি মাত্র তোমার কক্ষে আসলাম। এসে দেখি তুমি নেই৷ কোথায় ছিলে? ”

আরোণকে দেখতেই ক্যাথরিনের চোখের কোণে জমে থাকা জল অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ে। আরোণ কিছু বুঝে উঠার আগেই ক্যাথরিন এগিয়ে এসে হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরে। আকস্মিক ঘটনায় আরোণ থমকায়। বুঝে উঠতে সময় নেয় সে। ক্যাথরিন নিজ থেকে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেছে? আরোণের বুক শীতল হয়ে আসে। দু হাত ক্যাথরিনের পিঠের উপর রেখে আবেশে চোখ বুজে ফেলে। কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর আরোণ অনুভব করে তার বুকের শার্ট ভিজে যাচ্ছে। আরোণ এবার সোজা হয়ে ক্যাথরিনের দিকে তাকায়। সাথে সাথে তার গালে হাত রেখে প্রশ্ন করে উঠে,

” কি হয়েছে ক্যাথ? কাদছো কেন? আমার অনুপস্থিতিতে কিছু হয়েছে? ”
ক্যাথরিন নিষ্পলক আরোণের দিকে তাকিয়ে তার উৎকণ্ঠিত স্বরে বলা কথা শুনে। তারপর ধীর স্বরে বলে উঠে,
” তোমার সাথে আমি নিজেকে নিরাপদ অনুভব করছি। তোমার সাথে না থাকলে নিজেকে বিপদগ্রস্ত মনে হচ্ছে। তোমার সাথে থাকতে চাইছি আমি। তোমার পাশে। তোমার কাছে। ”
আরোণ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ক্যাথরিনের দিকে ফ্যালফ্যাল করে। তারপর নিজ থেকেই ক্যাথরিনকে জড়িয়ে ধরে বলে,
” ছায়া হয়ে পাশে থাকবো। আমাকে না ছুঁয়ে কোনো বিপদ তোমাকে ছুঁতে পারবে না। ”
ক্যাথরিন মনে মনে বলে,
” তোমাকেও কোনো বিপদ না স্পর্শ করুক আরোণ। তোমার কাছে কোনো বিপদ আসার আগে যেন তার ধ্বংস হোক। ”

আনাস্তাসিয়া বসে আছে মাটির উপর। শূণ্য দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে তার স্তম্ভিত ফিরে। এক হাত সে নিজের মাথায় নিয়ে যায়। একটি রূপার তৈরী চুলের কাঠি হাতে নেয় সে। এটি তার গ্র্যানির ছিলো। সেই যুদ্ধের দিন এটা দিয়ে চুল বেধেছিল সে৷ কাঠিটির মাথা বেশ সূক্ষ্ম ও ধারালো। আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহার করার যোগ্য। আনাস্তাসিয়া এটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ এটার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ সে নিজের বাম হাতের শিরার উপর এটি দিয়ে জোরে একটি টান দেয়। সাথে সাথেই এতে তার হাতের চামড়া ভেদ করে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। আনাস্তাসিয়ার মাঝে তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। সে শূণ্য দৃষ্টিতে হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।

একটা সময় রক্তক্ষরণ অতিরিক্ত হওয়ার ফলে আনাস্তাসিয়া বসা থেকে একপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে। চেতনা শক্তি যখন প্রায় যাই যাই অবস্থা তখন হঠাৎ সে একটি কালো ছায়াকে কারাগারের দরজা খুলে প্রবেশ করতে দেখে। ছায়াটি এগিয়ে এসে তার পাশে বসে। তার একহাত নিজের হাতে নিয়ে আরেক হাতের সাহায্যে তার মাথা তুলে ধরে বুকের মাঝে নিয়ে নেয়। চাঁদের আলোয় এবার সেই ছায়ার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আনাস্তাসিয়া অস্ফুটে বলে,
” রিক। ”

মহাপ্রয়াণ পর্ব ২৩+২৪

রিকার্ডোর মুখের ভাবমূর্তির কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। আনাস্তাসিয়া নিজেই আবার বলে,
” আমি জানতাম তুমি আসবে। কাল রাতের মতো আজও এসেছো তুমি। ”
ধীরে ধীরে আনাস্তাসিয়ার চোখের সামনে সব ঘোলা হয়ে যায়। ওই অবস্থাতেই সে জ্ঞান হারায়৷

মহাপ্রয়াণ পর্ব ২৭+২৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here