বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৩৮
রানী আমিনা
রেড জোনের ভেতর মাথা উঁচিয়ে সূর্যের দিকে মুখিয়ে আছে বিশাল বিশাল রেড উড গাছ গুলো। গোধুলি লগ্নের লালচে আলো পড়ে স্বপ্নীল করে রেখেছে শিরো মিদোরির উপরিভাগকে।
রাঙা আলোয় মোড়া রেড উড গুলোর সবচেয়ে উঁচুটির মগডালের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে আনাবিয়া৷ ঝলমলে চোখ জোড়াতে প্রতিফলিত হচ্ছে কমলা রঙা সূর্যের প্রতিচ্ছবি। সফেদ, খোলা চুলগুলো দুলে চলেছে মৃদুমন্দ শীতল বাতাসে।
চোখ নামালো আনাবিয়া, বা হাতখানা উঁচিয়ে একবার পরখ করলো অনামিকাতে থাকা আংটিটা৷ চোখ ভিজে আসতে চাইলো, কিন্তু সংবরণ করে নিলো নিজেকে। কনিষ্ঠাঙ্গুলি দিয়ে চোখের কোণা মুছে নিয়ে ট্রাউজারের পকেট থেকে বের করলো নিজের ফোনটা, এখানে নেটওয়ার্ক জিরো।
স্বচ্ছ, কাঁচের মতোন যন্ত্রটিকে একবার ভালোভাবে দেখলো সে। আজকের পর এই সর্বক্ষণের সঙ্গীটির সাথে আর কখনো দেখা হবেনা ওর। ঝড়ো শ্বাস ফেলে ফোনটা দুহাতের মুঠিতে নিয়ে মাঝখান থেকে ভেঙে ফেললো এক চাপে, তারপর ছুড়ে দিলো দূরে। গাছপালার ফাঁকফোকর দিয়ে খন্ড দুইটি ছুটে চলল জমিনের দিকে।
দূর থেকে ভেসে আসছে ডানা ঝাপটানোর শব্দ। আনাবিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো একবার, দুদিক হতে দুটি বাজপাখি ছুটে আসছে এদিকেই। ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে এসে দুজনেই বসলো আনাবিয়ার আশেপাশে থাকা অন্যান্য ডালগুলোতে, পরমুহুর্তেই চলে এলো নিজেদের হিউম্যান ফর্মে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো ফ্যালকন, এত খানি পথ এত দ্রুত উড়ে আসতে গিয়ে ওর দম বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।বার্ডি কাছাকাছিই ছিলো, সে এসে বসলো নির্বিকার ভঙ্গিতে, মাথা নুইয়ে আনুগত্যের সুরে বলল,
“শেহজাদী, আপনার আদেশের অপেক্ষায়।”
আনাবিয়া একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সকলের অগোচরে। সমুদ্রের বুকে ডুবে যেতে থাকা সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি শিরো মিদোরি ত্যাগ করতে চলেছি আজই। এইখানে থাকা আমার জন্য বিপদজনক। হিজ ম্যাজেস্টি একটু একটু করে স্মরণ করতে করতে অনেক কিছুই স্বরণ করে ফেলেছেন। এইখানে থাকলে আমাকে খুঁজে পেতে তাঁর খুব বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন হবে না।”
আনাবিয়ার শিরো মিদোরি ত্যাগের খবরে আহত হলো ফ্যালকন। ব্যাথিত চোখে তাকিয়ে রইলো আনাবিয়ার মুখপানে। মৃদুস্বরে শুধোলো,
“আপনি কোথায় যেতে চান, শেহজাদী?”
“এমন কোথাও যেখানে আমাকে কেউ খুঁজে পাবে না।”
ফ্যালকনের মুখের রঙ উড়ে গেলো মুহুর্তেই! বেড়ে গেলো হৃৎপিণ্ডের গতি। শেহজাদী কি তবে আবারও আত্মহননের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন? অস্থির চিত্তে, অসহায় চোখ জোড়া বড় বড় করে সে তাকিয়ে রইলো আনাবিয়ার দিকে। আনাবিয়া ঠোঁটের কোণা প্রসারিত করে বলল,
“ভয় নেই ফ্যালকন, পূর্বের মতোন ভুল আমি আর করবোনা। আমি লোকেশন সেন্ড করে দিয়েছি। আজ হতে আমি সেখানেই থাকবো। কিন্তু সেখানে আমার একটা মহল চাই। অ্যাবিসোরাকে জানালে সে র’ ম্যাটরিয়ালস গুলোর ব্যাবস্থা করে দিবে, তার বাইরে কোনো কিছু প্রয়োজন হলে তোরা নিজেরাই ম্যানেজ করবি। ”
ফ্যালকন স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো। বলল,
“অ্যাবিসোরা কে বললে তো উনি নিজেই মহল তৈরি করে দিবেন, শেহজাদী?”
“শিরো মিদোরির জঙ্গল বাঁধানো, এখান হতে বাইরে বের হতে পারবেনা ওরা কখনোই। তাই সব কাজ তোদেরকেই করতে হবে৷”
বলে মিষ্টি করে হাসলো আনাবিয়া, যেন বুঝিয়ে দিলো তাদের ওপর দিয়ে পরিশ্রম এবার বেশ ভালোই যাবে৷
ফ্যালকনের উৎকন্ঠিত হৃদয় প্রশান্ত হয়ে এলো আনাবিয়ার হাসিতে। মনে মনে বার বার প্রার্থনা করলো যেন শেহজাদীর মুখের এই হাসিটা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওই টেরাকোটা রঙা ঠোঁটে লেগে থাকে, কোনো যন্ত্রণা-ই যেন ওই হাসিকে কখনো ক্ষীণ করে না দেয়।
“আমি না থাকলেও মীরের খাবারে যেন কোনো অসুবিধা না হয়। ও যে কারো হাতের রান্না খেতে পারবে না৷ কুরো আহমারের নওয়াস চাচাজানের বাসার থেকে দু কিলো দূরের সেভেন স্টার হোটেলে একজন শেফ আছে, মুরসালিন নাম তার। আজকেই তাকে এইখানে নিয়ে আসবি, বলবি আমার আদেশ। আমি মীরের পছন্দ অপছন্দের লিস্ট করে দিবো, সেই অনুযায়ী তাকে খাবার সার্ভ করতে বলবি। ঠিক আছে?”
ফ্যালকন তড়িতে মাথা নাড়ালো ওপর নিচে।
বার্ডি চুপচাপ বসে শুনছিলো দুজনের কথা। আনাবিয়া বার্ডিকে দেখিয়ে ফ্যালকনকে বলল,
“পরিচয় করিয়ে দিই, ও হলো বার্ডি। তোদের মতো সেও একজন, আমার সন্তানের মতোন। এখন থেকে আমার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বার্ডিই কাজ করবে৷ যে কোনো প্রয়োজনে তোরা ওর সাথে যোগাযোগ করবি, ও আমার নিকট সংবাদ পৌছে দিবে।”
ফ্যাককন শুনলো, বসে রইলো চুপচাপ। আনাবিয়া কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,
“এই জঙ্গল ছেড়ে বা মীরের সামনে থেকে তোদের অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তোরা সর্বদা মীরের আশেপাশে থাকবি। ওকে প্রোটেক্ট করা, ওকে সব ধরণের বিপদ আপদ, সকল অসুবিধা থেকে রক্ষা করাই তোদের একমাত্র দায়িত্ব। খুব প্রয়োজন ব্যাতিত তোরা কেউ কখনো আমার কাছে আসবিনা৷ মনে থাকবে?”
ফ্যালকন চুপ করে রইলো। চোখে জল জমতে শুরু করেছে তার।
আবারও বিচ্ছেদ! এই বিচ্ছেদ ব্যাতিত ওদের ভাগ্যে বোধ হয় আর কিছুই নেই! বার বার কেন ওদেরকেই এই মাতৃস্থানীয়া স্নেহময়ী হতে বিচ্ছিন্ন হতে হয়? খুব ভালোবাসার মানুষ গুলোর জন্য ভাগ্য বোধ হয় বিচ্ছেদকেই বেছে নেয়!
“আপনি এখন কোথায় যাবেন?”
ফ্যালকন কে শুধোলো বার্ডি।
আনাবিয়া বিদায় নিয়েছে ঘন্টা দুই পেরিয়ে গেছে, কিন্তু ফ্যালকন এখনো সেভাবেই বসে৷ বার্ডির প্রশ্নে মাথা তুলে তাকালো সে, চোখ জোড়ায় শুধুই শূন্যতা!
“কোকো ভাইজানকে জোভির বাসায় রেখে কাঞ্জিকে নিয়ে কুরো আহমার যাবো। মুরসালিন নামক শেফকে রাতের খাবারের আগেই মহলে নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করতে হবে। নইলে হিজ ম্যাজেস্টিকে রাতে অনাহারে কাটাতে হবে, যা আমার শেহজাদী একদমই পছন্দ করবেন না।”
মৃদুস্বরে উত্তর করলো ফ্যালকন। বার্ডি ওর দিকে তাকিয়ে রইলো নিষ্পলক। এইখানে এসে উপস্থিত হওয়ার সময়ে যতটা প্রাণোচ্ছল, উৎফুল্ল সে ফ্যালকনকে দেখেছিলো তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই! সবটুকুই যেন সেই রহস্যময়ী, মমতাভরা অতী সুন্দরী নারীটি নিজের সাথে বয়ে নিয়ে চলে গেছেন সুদূরে, এই অভিশপ্ত শিরো মিদোরি হতে যোজন যোজন দূরে……!
“রাত গভীর হওয়ার আগেই মুরসালিন শেফকে নিয়ে আসি চলুন।”
মিষ্টি, রিনরিনে গলায় বলল বার্ডি। ফ্যালকন চোখ তুলে তাকালো, শুধোলো,
“তুমি যাবে আমাদের সাথে?”
“হ্যাঁ…. যাবো।
আপনি কাঞ্জি ভাইজানকে বলে দিন কোকো ভাইজানকে জোভি ভাইজনাদের বাসায় পৌছে দিতে৷ নইলে আমাদের অনেক দেরি হয়ে যাবে।”
“তুমি সবাইকে কিভাবে চেনো?”
সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ফ্যালকন। বার্ডি অপ্রস্তুত হলো। বলল,
“শেহজাদী আপনাদের অগোচরে আপনাদের সকলের পরিচয় দিয়েছেন আমাকে, তাছাড়া আমি আপনাদের আশেপাশেই অবস্থান করতাম সবসময়। তাই সবাইকে চিনি।”
ফ্যালকন ওর মুখপানে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বার্ডি অপ্রস্তুত হলো তাতে আরও, অদ্ভুত পরিবেশটা কাটিয়ে উঠতে সে তড়িঘড়ি বলে উঠলো,
“কিন্তু মুরসালিন শেফকে নিয়ে এখানে আসতে তো আমাদের বাহনের প্রয়োজন, তার তো আর ডানা নেই!”
ফ্যালকন উঠে দাঁড়ালো ডালের ওপর, গভীর জঙ্গলের ভেতরের গুপ্ত বুনো অঞ্চলটির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আনমনে বলল,
“সে ব্যাবস্থা হচ্ছে।”
আকাশে রুপোলী থালার মতোন গোলগাল পূর্ণিমার বিশাল চাঁদ। তার সাদা আলোয় ঝলমলিয়ে উঠছে সেইফ জোনের সম্মুখের সমুদ্র পাড়। দূরে ওয়ার্কিং জোন থেকে ভেসে আসছে ওয়ার্কার্স দের হাসি আড্ডার উচ্চ আওয়াজ।
সমুদ্র জুড়ে ভারী বাতাসের প্রকোপ, বিশাল বিশাল ঢেউ এসে বারবার আছড়ে পড়ছে তীরে। ঢেউয়ের প্রতিটি ভাঙনে ঝলমল করছে নীলচে রুপোলী আলো।
লোনা বাতাসের সজোর ঝাপটার ভেতরেই সমুদ্র তীরের জ্বলজ্বলে রুপোলী বালুকাময় তীরে হাটু জোড়া দুহাতে জটিয়ে, তার ওপর নিজের ক্লান্ত মাথাটা বিশ্রাম দিয়ে বসে আছে আনাবিয়া। হীরকখন্ডের ন্যায় চোখ জোড়া নিবদ্ধ দানবীয় ঢেউ গুলোর দিকে।
চারপাশের নরম, ভেজা বালিতে জন্মেছে জ্বলজ্বলে শৈবাল, আকাশের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নক্ষত্ররাজির মতোন আলো ছড়াচ্ছে তারা। দূর সমুদ্রের ঢেউ ভেদিয়ে লাফিয়ে চলেছে এক ঝাঁক সাদা কালো ডলফিন। ওদের ঠিক নিচে সাঁতরে ভেসে চলেছে এক দল নীলাভ জেলিফিশ।
চাঁদের আলোয় সমুদ্রতীর ঘেঁষে উড়ে চলেছে এক ঝাঁক উজ্জ্বল সবুজ রঙা স্বচ্ছ প্রজাপতি। ঘুরতে ঘুরতে এক সময়ে তারা এসে পৌছলো আনাবিয়ার নিকট। আনাবিয়ার চতুর্দিকে চক্কর দিতে দিতে কয়েকটি এসে বসলো ওর চুলের ওপর, বাকিগুলো ঘুরে ফিরে চলল ওর দৃষ্টির ওপর দিয়ে।
বিদায়ের ইস্পাত কঠিন ক্ষণ ভেদ করে যেতে গিয়ে হৃৎপিণ্ড ছিড়ে যেতে চায়! এই চিরচেনা শিরো মিদোরি, এই সমুদ্র পাড়, এই জঙ্গল, এই রেড জোন, এই মসভেইল, এই দেমিয়ান প্রাসাদ, এই হাজার হাজার সুখময় স্মৃতি ফেলে অন্য কোথাও বসবাস করার কথা কি সে কখনো ভেবেছিলো?
আজ হতে কুড়ি বৎসর পূর্বের দিন গুলো কতই না সুন্দর ছিলো! কতই না হাসি আনন্দে কেটেছিলো ওর সুখময় দিন গুলো।
আশি বছর পূর্বে ফিরে গেলে কি খুব ক্ষতি হতো? যখন মীরের হাটু অব্দি দৈর্ঘ্যের আনাবিয়া মীরের বিশালাকৃতির সাদা শার্টের ভেতর নিজেকে গলিয়ে সমস্ত মেঝেতে ছুটে বেড়াতো? পোশাকে বেধে পড়ে ব্যাথা পাবে বলে মীরের কতইনা শঙ্কা! বেলিন্ডা মেয়েটাকে কত আক্রোশই না সহ্য করতে হতো রোজ!
আর নোমান? হামদান?
সেই ক্যাম্পিং এর রাত গুলো, মীরের হাতের খাবার, নেকড়ের পিঠে চড়ে সারা জঙ্গল ছুটে বেড়ানো, কালাচাঁনের পিঠে উঠে মীরের বুকে শরীর এলিয়ে আলগোছে ঘুমিয়ে পড়া, সকাল বেলা আবার নিজেকে রেশমের নরম বিছানায় খুঁজে পাওয়া!
কি হতো যদি আবার বছর পাঁচে ফিরে যেতো, একটিবারের জন্য? আরেকটিবার মীরের প্রশস্ত, উষ্ণ বুকে নিশ্চিন্তমনে বেঘোরে ঘুমোনো যেতো, এই সমুদ্র পাড়ে কিং ক্র্যাব পুড়িয়ে খাওয়া হতো, রেড জোনে চড়ুইভাতি হতো, ক্রিস্টাল পুলে ঘন্টার পর ঘন্টা সাঁতরানো হতো, বিশাল রেড উড ট্রির মগডালে উঠে দুজনে সূর্যাস্ত দেখা হতো, রাতে কাঁথা বালিশ হাতে নিয়ে চুপিচুপি পায়ে মীরের কামরায় হানা দেওয়া যেতো।
মীর তখন ওকে দেখে গম্ভীর মুখ করে বলতো,
—এখন তুমি আর আমার সাথে ঘুমোতে পারবেনা শিনু, তুমি এখন বড় হয়ে গেছো।
আনাবিয়া কি করতো তখন? নিশ্চয় ঠোঁট ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো দরজায়, আর বলতো —দানালায় মনতান!
মীর তখন পরবর্তী এক ঘন্টা ধরে শেখাতো কিভাবে মনস্টার শব্দটাকে শুদ্ধ ভাবে উচ্চারণ করতে হয়। আনাবিয়া শেষ মেশ অধৈর্য হয়ে কাঁথা বালিশ নিয়ে বিছানা থেকে লাফিয়ে নেমে ক্ষুদে পা জোড়া দিয়ে গটগগিয়ে নিজের কামরায় যেতে যেতে গাল ফুলিয়ে বলতো
—গুমোবোনা তোমাল কাসে, মীলি পতা।
তখন মীর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে তার এই ছোট্ট, সুন্দর, শুভ্র অভিমানিনীকে নিজের শক্ত বাহুডোরে তুলে নিয়ে বুকের ওপর রেখে, তার ক্রোধ শান্ত করে ঘুম পাড়ানোর কাজে নিয়োজিত হতো।
ঠোঁটের কোণ জোড়া আনমনে প্রসারিত হলো আনাবিয়ার। পুরোনো স্মৃতি গুলো বিষাদের হলেও যেন সুখময় হয়ে ধরা দেয় সর্বদা!
আচমকা ওর থেকে বেশ কিছু দূরে সমুদ্র পাড়ে শোনা গেলো হ্রেষা ধ্বনি।
মাথা তুললো আনাবিয়া, বায়ে তাকাতেই দেখলো দূরে জটলা পাকিয়ে লাফিয়ে ছুটে চলেছে এক ঝাঁক পঙ্খিরাজ। চাঁদের আলো পড়ে ঝিকিমিকি করছে তাদের প্রশস্ত ডানা।
আনাবিয়ার স্মরণে এলো আজ পূর্নিমার রাত, এ রাতে বন্য পঙ্খিরাজ গুলো শিরো মিদোরির সমুদ্র পাড়ে চন্দ্রবিলাশ করতে নেমে পড়ে, বাকি সময় ওরা থাকে রামাদিসামার বিশাল বিস্তীর্ণ খোলা সমভূমিতে! মুক্ত, স্বাধীন। তাদেরকে মালিকানাধীন করার অধিকার কারো নেই, শুধুমাত্র দেমিয়ান পরিবার ব্যাতিত।
আনাবিয়া উঠে দাঁড়ালো, সমুদ্রের ঝড়ো বাতাসে ছেড়া পালের মতোন উড়ে চলল ওর দীর্ঘ, শুভ্র কেশবিন্যাস। পরনের হুডি খানা কোথায় খুলে পড়েছে স্মরণে নেই। পাতলা ছাই রঙা শার্টখানা বাতাসে শব্দ করে মুহুর্মুহু উড়ে চলেছে।
বিস্তৃত সমুদ্র পাড়ে এই মুহুর্তে ওকে দেখাচ্ছে এক অকুতোভয় নাবিকের মতোন, যার সম্মুখে পড়ে আছে বিশাল সমুদ্র, যে সমুদ্রের সুউচ্চ ঢেউ সামলে ওকে পাড়ি দিতে হবে পথ, হাজার হাজার নটিক্যাল মাইল!
ওকে দাঁড়াতে দেখে থেমে গেলো ঘোড়াগুলোর লম্ফঝম্প। স্থীর দাঁড়িয়ে রইলো ওরা শ্রদ্ধাভরে। আনাবিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ওদের দিকে।
ছোটবেলার কাঁলাচান মারা গেছে বহুবছর আগেই। দলের প্রধান এখন তার বড় ছেলে, যার নাম আনাবিয়া রেখেছিলো জাভিনভস্কি। তাকে দেখা মাত্রই আনাবিয়ার মনে হয়েছিলো বহির্বিশ্বের রাশিয়া দেশটির কথা। নাম খানা সেই আদলেই দিয়েছিলো সে।
তারপর বহুবছর ধরে আর আসা হয়নি এই সমুদ্র পাড়ের পূর্ণিমা বিলাসে। দেখা হয়নি তাদের কারো সাথে। জাভিনভস্কি এখন হয়তো মধ্যবয়সে পৌছেছে, নিশ্চয় বাচ্চা কাচ্চা আছে তার চার পাঁচ খানা।
স্থীর ঘোড়ার দলের ভেতর থেকে ডানা ভাজ করে মাথা নুইয়ে এগিয়ে এলো জাভিনভস্কি, সাদা কালো মিশেলের নকশা তার শরীর জুড়ে। বিশাল বিশাল পা ফেলে সে এলো আনাবিয়ার নিকট, চতুর্দিকে একবার চক্কর দিয়ে ঘুরে কপাল ছোয়ালো আনাবিয়ার বাহুতে।
আনাবিয়া মিষ্টি হেসে হাত বুলিয়ে দিলো ওর সাদা কপালের কালো তীলকের ওপর। চোখ বুজে আদর টুকু সানন্দে গ্রহণ করলো জাভিনভস্কি।
পেছন ফিরে দলের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিলো কাউকে। ধবধবে সাদা রঙা বছর পাঁচের একটি মাদি ঘোড়া তার ইশারা পেয়ে অপ্রস্তুত, ভীতসন্ত্রস্ত পায়ে একটু একটু করে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো তার পেছনে। কৌতুহলী হয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো আনাবিয়াকে।
জাভিনভস্কি তার সাথে ভাব বিনিময় করলো নীরবে, অতঃপর তাকে সম্মুখে এগিয়ে দিয়ে মাথা নাড়িয়ে অভিবাদন জানিয়ে সে ফিরে গেলো দলের নিকট। তারপর বিশাল ডানা ঝাপটে সঙ্গি সাথী নিয়ে উড়ে চলল রামাদিসামার দিকে।
আনাবিয়া তাকিয়ে রইলো ওদের যাওয়ার পানে। একদিন সেও এভাবেই মুক্ত হবে, সেদিন আর কোনো বাধা থাকবে না তার সম্মুখে, থাকবেনা কোনো পিছুটান, কোনো অদৃশ্য বন্ধনের ইস্পাত-দৃঢ় সুতোয় টানবেনা ওকে আর।
আনাবিয়া তাকালো মাদি ঘোড়াটির দিকে, চোখে মুখে তার ভীতি, অসহায়ত্ব। দলছুট হওয়ার ভয়, একা হওয়ার ভয়! আনাবিয়া তাকিয়ে রইলো তার দিকে, তার ভেতর সে যেন হঠাৎ দেখলো নিজেকে। এমন ভীত সেও একসময়ে হয়েছিলো, একা হয়ে যাওয়ার।
এখন তার কোনো ভয় নেই, সে আজ একা থাকতে শিখে গেছে।
মীরও বোধ হয় সব হারিয়ে এভাবেই একা হয়ে গেছিলো? আনাবিয়া নামক সদ্যজাত মেয়েটি হঠাৎ জীবনে চলে আসায় সে বুঝি ওই ছোট্ট প্রাণটিকে প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলো! আমরা তবে সবাই ভয় পাই, একা হওয়ার!
আনাবিয়া ধীরে হাত বাড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো ঘোড়াটির। আঙুলের স্পর্শে ঘাড় বেয়ে নেমে যাওয়া দীর্ঘ রেশমি কেশরে চালিয়ে দিলো আদর।
এই স্বল্প আদরেই উভে গেলো ঘোড়াটির কুচকুচে কালো চোখের গভীরে ফুটে ওঠা ভীতি, ধীরে ধীরে সেখানে এসে ভর করলো নিঃশর্ত ভরসা, বিশ্বাস, আর অদ্ভুত মায়াময় ভালোবাসা!
“স্ত্রেলকা, তোমার নাম স্ত্রেলকা।”
ঘোড়াটির কেশরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল আনাবিয়া। তারপর ধীর পায়ে আবার এসে বসলো সমুদ্র পাড়ে। স্ত্রেলকা কিয়ৎক্ষণ একা একা দাঁড়িয়ে তার এই অতীব সুন্দরী মালকিনকে দেখে নিয়ে অতঃপর নিজেও হেসে হাটু ভাজ করে বসে পড়লো আনাবিয়ার পাশে।
রেড জোনের ভেতর দিয়ে উদভ্রান্ত চেহারায় জোর কদমে হেটে চলেছে মীর। গায়ে একটা পাতলা সাদা রঙা শার্ট, উপর থেকে বোতাম খোলা তিনটা। চুল এলোমেলো, উষ্কখুষ্ক। পাতলা, মসৃণ দাঁড়িতে ঢেকে আছে চোয়াল। গন্তব্য ঠিক কোথায় সে জানেনা, আজ কোনো স্থান তার গন্তব্য নয়, আজ গন্তব্য একজন নারী।
চারদিন হলো তার সদ্য পাওয়া স্ত্রী নিখোঁজ! দেয়াল ভেঙে সেই যে উধাও হয়েছে আর ফেরেনি, আর না মীর তাকে খুঁজে পেয়েছে।
সেদিন মাথার ভেতরে হঠাৎ আক্রমণ করে বসা যন্ত্রণাটিকে মনে মনে ভয়ানক একটা গালাগাল দিলো মীর, যন্ত্রণাটা না হলে সে জ্ঞান হারাতো না, আর না হারাতো তার নূরকে।
ঝাপসা অচেনা স্মৃতি গুলো সেদিনের পর থেকে প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খাচ্ছে তাকে। মনে হচ্ছে সেগুলো অন্য কারো স্মৃতি, ভুলবসত চলে এসেছে তার মস্তিষ্কে। কিন্তু নূর নামক মেয়েটাকে সে ভুলতে পারছে না। এই মেয়েটিকে না দেখলে তার যে এমন খারাপ অবস্থা হয়ে বসবে সেটা সে কল্পনাতেও আনেনি।
গত ছ সাত মাস ধরে কারণে অকারণে, প্রকাশ্যে কিংবা আড়ালে সে দেখে গেছে ওই মেয়েটিকে। অদৃশ্য এক সুতীব্র আকর্ষণ প্রতিক্ষণে টেনে নিয়েছে তাকে মেয়েটির সন্নিকটে। অথচ মেয়েটির নাম-পরিচয় পর্যন্ত ওর ছিলো অজানা!
প্রথম দিকে বিষয়টিকে নিছক পুরুষালি খেয়াল ভেবে উপভোগ করেছে। কিন্তু সমস্তই পালটে গেছে সেদিন, যেদিন প্রথম বারের মতোন কিছুদিনের জন্য কুরো আহমার নামক শহরের উদ্দ্যেশ্যে নিরুদ্দেশ হয় সে।
প্রতিটি মুহুর্তে বারংবার তাকে তাড়া করে ফিরেছে সেই মানবীটির অবয়ব, পোশাকের আড়ালে লুকোনো সেই অচেনা, রহস্যময় ছায়াশরীর! মস্তিষ্ক নিরন্তর তাকে তাগাদা দিয়ে চলেছিলো ফিরে যেতে সেই রহস্য মানবীর নিকট!
আর তারপর….
তারপর হঠাৎই বদলে গেলো সমস্তই, তার দীর্ঘদিনের গোপন অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে এসে, এক ঝটকায় উদ্ঘাটিত হলো অমোঘ সত্যটি,
সে রহস্যময়ী কোনো অপরিচিতা নয়, বরং সেই নারী তারই স্ত্রী, তার সাথেই মেয়েটি এক পবিত্র বন্ধনে বাঁধা!
মীর সেদিন বোধ হয় প্রচন্ড আপ্লুত হয়েছিলো!
মেয়েটির পরিচয় জানার আগ পর্যন্ত সে জানতো সে একা, সম্পুর্ন একা! দুনিয়াতে তার আছে শুধুই এক শত্রুভাবাপন্ন জমজ। অথচ হঠাৎ করেই সেই নির্জন আঁধারে আলো ছড়িয়ে, ওর এই একাকি জগতের ভেতর এসে উঁকি দিলো কাঙ্খিত অবয়বটি!
মেয়েটি যে অগোচরেই অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো তার। হঠাৎ সেই অভ্যাস হতে অনাহূত পরিত্রাণ পেয়ে দিশেহারা হয়ে উঠলো মীর! মস্তিষ্ক বারংবার তাগাদা দিতে রইলো ওই হারানো স্বস্তিকে খুঁজে পেতে, তার একমাত্র আপনজন, দেহের অর্ধেক সত্তাকে খুঁজে নিতে।
ট্রি হাউজের ভেতর এলোমেলো পড়ে থাকা শেষ আসবাব গুলো গোছগাছ করে লরিতে তুলছে ফ্যালকন আর কোকো। লরিটিকে সেইফ জোন হয়ে আনাবিয়ার নতুন বাসস্থানে পৌছবে।
কোকো সেদিনের ঘটনার পর থেকে হিজ ম্যাজেস্টির ত্রী সীমানায় ঘেঁষেনি। ওকে দিয়ে শেহজাদীর নিকট মিথ্যা ফোন করিয়ে এক থাপ্পড়ে কোকোকে ব্লাক আউট করে দিয়েছিলেন তিনি। অপরাধ ছিলো সে কেন সর্বদা আনাবিয়ার আশেপাশে ছায়ার মতো চিপকে থাকে?
অথচ জ্ঞান ফিরে কোকো শুনলো সে নাকি ঘুমের ওষুধের প্রভাবে জ্ঞান হারিয়েছে। এরপর থেকে সে সম্পুর্ন এলাকাছাড়া। মসভেইলের আশেপাশেও সে ঘেঁষেনি।
বা পাশের চোয়ালে এখনো টনটনে ব্যাথা, দ্বিতীয় বার হিজ ম্যাজেস্টির সামনে পড়ে তাঁর হিংসার শিকার হয়ে আরেকটা দাঁত ভাঙা থাপ্পড় সে খেতে চায়না।
লরি বোঝাই হতেই কোকো চড়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে। ফ্যালকন জানালো সে পরে যাবে, কোকোকে আগেই চলে যেতে। কোকো লরিটা নিয়ে এগোলো গন্তব্যের দিকে। ফ্যালকন আনাবিয়ার জন্য কিছু চারাগাছ নিবে, বার্ডির মাধ্যমে বারবার করে বলে দিয়েছে সেগুলো নেওয়ার কথা। লরিতে চারাগাছ রাখার কোনো জায়গা আর বাকি নেই। সেগুলো সে অন্য কোনো মাধ্যমে নিয়ে যাবে সেখানে৷
ফ্যালকন কিয়ৎক্ষণ দাঁড়িয়ে ট্রি হাউজটিকে দেখলো। এই ট্রি হাউজে হিজ ম্যাজেস্টি আর শেহজাদী কত মিষ্টি সময়ই না কাটিয়েছেন। সময় গড়ালে প্রিয় স্মৃতি গুলো বুঝি এভাবেই অযত্নে ফেলে রেখে যেতে হয়!
হঠাৎ কারো দ্রুতগামী পদশব্দ শুনে কান খাড়া হয়ে গেলো ফ্যালকনের। পায়ের শব্দটি চিনে ফেলা মাত্রই নিজের ফ্যালকন রূপে এসে তড়িতে উড়ে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে নিলো গাছের উঁচু ডালের সবুজ পাতার আড়ালে। উঁকি মেরে দেখলো পদশব্দের মালিককে।
মীর এসে দাঁড়ালো ট্রি হাউজের পাশে। মনে হলো যেন এই স্থানটি তার বড্ড চেনা। সন্ধানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো চতুর্দিকে, খুঁজলো কাঙ্ক্ষিত মানবীটির কোনো ফেলে যাওয়া চিহ্ন, কিন্তু ব্যর্থ হলো। অনতিবিলম্বে সিদ্ধান্ত নিলো মসভেইলে ফিরে যাওয়ার।
ফিরে যেতে উদ্যত হতেই চোখ পড়লো পাশের কোমর হতে ভাঙা বিশাল রেড উড ট্রির ভেতরের ফাঁকা জায়গাটিতে। জমিন হতে সাপের মতোন পেঁচিয়ে উঠেছে লতায় পাতায় গড়া এক প্রশস্ত সিঁড়ি। কৌতুহলী হয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে সে উঠলো ওপরে, তারপর চকচকে দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো ভেতরে।
ভেতরটা একেবারে শূন্য! দেয়ালে সাটানো ওয়াল আলমিরাটা ফাঁকা, তাতে এখনো লেগে আছে বইয়ের দাগ। অন্য দেয়ালে পড়ে আছে টাঙিয়ে রাখা পেইন্টিং এর ছাপ। বিছানা, টেবিল, সোফা সমস্তই রেখে গেছে তাদের স্পর্শ৷ যেন সদ্যই কেউ ত্যাগ করেছে এই স্বপ্নলোকের ন্যায় সুন্দর কামরাটি।
শূন্য, ফাঁকা ঘরটা যেন তাকিয়ে রইলো মীরের দিকে। মৃদু, শুষ্ক বাতাস যেন ফিসফিসিয়ে বলে চলল কোনো গোপন, রহস্যময়ী প্রেমিকার নির্ঘুম রাতের গল্প!
মীরের বুকের ভেতর রক্ত ছলকে উঠলো হঠাৎ, মস্তিষ্ক জানান দিলো এই ছোট্ট সুন্দর কামরায়, এই বিছানার শুন্যস্থানে একদিন সে কারো পাশে শুয়েছিলো, এখানেই কারো নরম, কোমল হাতের ভাজে মিশে গেছিলো তার কর্কশ থাবা, এই জানালা দিয়েই কোনো একদিন সোনালী রোদ এসে ছুয়ে দিয়েছিলো তার প্রেয়সীর খিলখিলে হাসি মাখা নরম শুভ্র চোয়াল, এই মৃতপায় বৃক্ষের দেয়াল গুলো কোনো একদিন পরমযত্নে জড়িয়ে রেখেছিলো একজোড়া অতৃপ্ত প্রেমিক সত্তাকে!
স্মৃতির এই ভৌতিক ধ্বনি প্রতিধ্বনি ক্রমশ যেন গ্রাস করে নিতে থাকলো মীরকে! বাতাসের ভেতর দিয়ে মীরকে ঘিরে যেন ভেসে চলল সেই চিরচেনা খিলখিলে হাসির ক্ষীণ প্রতিধ্বনি! শ্বাসপ্রশ্বাস হঠাৎ দ্রুত হয়ে এলো মীরের!
ঝটিতি ও বেরিয়ে এলো বাইরে! কয়েকবার জোরে শ্বাস ফেলে স্থীর করলো নিজেকে। পরক্ষণেই সিড়ি বেয়ে নেমে এলো দ্রুত। কোনদিকে যাবে ভাবতে ভাবতে তাকালো পূবে।
দূর থেকে ক্রিস্টাল পুলের ওপর সূর্যের তীব্র আলোর তীক্ষ্ণ প্রতিফলন এসে চোখে লাগলো তার। অশান্ত মন নিয়ে সে এগোলো সেদিকেই!
ফ্যালকন গাছের ওপরেই লুকিয়ে বসেছিলো। মীরকে লাইফট্রির ওদিকে চলে যেতে দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন। সে চোখের আড়াল হতেই এক উড়ালে ছুটলো চারাগাছ গুলোর সন্ধানে।
শিরো মিদোরি হতে তিনশত ক্রোশ দূরে কিমালেবের পাহাড়ের অন্তস্থলে অবস্থিত অত্যন্ত গোপনীয় খাদের ভেতরের স্বচ্ছ হ্রদের পাড়ে খোলা চুলে স্ত্রেলকার পেটে ঠেস দিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে শুয়ে রইলো আনাবিয়া। গুনগুনিয়ে গাইলো,
বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৩৭
“…..Khushi tumhaari
hai jab isi mein
To hum bhi aasu
chupa hi lenge
Wajah jo poochega
ye zamaana
Koyi bahaana
bana hi lenge…..”
