এক মুঠো কাঠগোলাপ শেষ পর্ব || তানজিল মীম

এক মুঠো কাঠগোলাপ শেষ পর্ব 
তানজিল মীম

——-“এবার তাহলে যাওয়া যাক “প্রিয়সী”…..
“কুটকুটে নীরবতার শিকল ছিঁড়ে বলে উঠল রিয়াদ তানজুকে’!!রিয়াদের কথা শুনে কিছুটা হতভাগ হয়ে বলে উঠলাম আমিঃ
——–“এখনি চলে যাবো….
——–“এখন না গেলে দেরি হয়ে যাবে আর রাত হয়ে গেলে আমরা আর বেরোতে পারবো না এখান থেকে তাই চলো….
“ইচ্ছে না থাকা সত্বেও বলে উঠলাম আমিঃ
——–“ঠিক আছে চলো…(মন খারাপ করে)
“রিয়াদ তানজুর মন খারাপের কারনটা বুঝতে পেরে বললোঃ
——–“মন খারাপ করো না আমরা আবার আসবো এখানে….
——–“সত্যি….
——–“হুম…
——–“তাহলে চলো যাই বাড়িতে….
——–“হুম…
“তারপর আর কি সুন্দর মুহূর্তগুলো কাটিয়ে আর সেই মুহূর্তের স্মৃতিগুলো মাথায় নিয়েই হাতে হাত রেখে এগিয়ে গেল রিয়াদ আর তানজু’!!

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

“মাঝখানে কেটে গেল পুরো ১ মাস ১০দিন….
“আর ১ মাস ১০ দিনে বদলে গেছে অনেক কিছু’!!বদলে গেছে রিয়াদ, তানজু, আফরিন, অপূর্বের জীবন’!!বদলে গেলে দুটো পরিবারের জীবন!বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে দুটি জুটি,সাথে পূর্ণতা পাবে দুই কাপলদের ভালোবাসা’!!এই ১ মাস ১০ দিনের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে দুটো পরিবারের মাঝে রিয়াদ, তানজু, আফরিন, অপূর্বের সম্পর্কের কথা!শুধুতে সবাই একটু না না করলেও পরক্ষণেই সন্তানদের খুশির জন্য সবাই মেনে নেয় বিষয়টা’!!যেহেতু অপূর্বকে আগে থাকতেই চিনতো রিয়াদের পরিবার তাই তেমন জামেলা ছাড়াই মেনে নেয় তাঁরা সবটা!আর তানজু অপূর্বের বোন বিষয়টা শুরুতে অদ্ভুত লাগলেও পরক্ষণেই হাসি খুশি ভাবেই সবটা মেনে নেয় তাঁরা’!ভাবতে চমৎকার লাগে দুই পরিবারই এক মেয়েকে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে আরেক মেয়েকে ঘরে নিয়ে আসবে’!!এক দিনে একই পরিবারের সদস্যকে নিজেদের ঘরে আনবে আবার একই পরিবারের সদস্যের কাছে নিজের ঘরের মেয়েকে তুলে দিবে বিষয়টা খুব আশ্চর্যকর!তার চেয়েও সবচেয়ে চমৎকার বিষয়টা হলো দুই ভাইবোনের বিয়ে একি দিনে হবে!

“আয়নার সামনে কনের বেশে বসে আছে তানজু!এক অদ্ভুত শিহরণ, সাথে এক অদ্ভুত ফিলিংস বয়ে যাচ্ছে তার মাঝে’!!ভাবতেও অবাক লাগছে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই পুরোপুরি রিয়াদের হয়ে যাবে তানজু’!!সেদিনের কাটাতো সেই স্মৃতি আজও হৃদয়ে ভালোলাগার শিহরণ বয়ে যায় তানজুর’!!ভাবতেও ভালো লাগছে তাঁর রিয়াদের মতো একটা ছেলেকে বিয়ে করতে পারছে সে’!!যে কিনা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে’!!জীবনে এর চেয়ে বেশি কি বা চাওয়ার থাকতে পারে’!!আনমনেই হেঁসে উঠল তানজু’!!এমন সময় হন হন করে রুমে ঢুকে পরলো প্রিয় চিরচেনা কিছু মুখ দিহান,রিতু,আরিফা, হৃদয়’!!রুমে ঢুকেই সোজা তানজুর সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল তাঁরাঃ
——–“উড়ে দোস্ত তোকে তো হেব্বি লাগছে….
“আচমকা এমনটা হওয়াতে হাল্কা অবাক হয় তানজু’!!পরক্ষণেই পিছন ঘুরে আরিফা,রিতু,দিহান, হৃদয়কে দেখে হেঁসে বলে উঠল সেঃ
——–“দেখতে হবে না কে সেজেছে….?
“তানজুর কথা শুনে হেঁসে উঠলো ওঁরা’!!সবাই একসাথে বলে উঠলঃ
——–“তুই আর ঠিক হবি না দোস্ত…

“এরই ভিতর আফরিন আপু এসে হাজির’!!যেহেতু একই বাড়িতে একসাথে দুটো বিয়ে তাই সবাই মিলে ঠিক করেছে কোনো বাড়িতে নয় একটা বড় ক্লাবেই বিয়ে পড়ানো হবে দুই বাড়ির দুই ছেলেমেয়ের’!!তাই আগে উপস্থিত হলো তানজু আর আফরিন!দুজনকেই পার্লারের লোকেরা সাজিয়ে দিয়েছে’!!আজকে তানজু একটা লাল- গোল্ডেন রঙের কম্মিনেশনে জর্জেট গর্জিয়াস লেহেঙ্গা পড়েছে,চুলগুলো খুলে দিয়েছে,হাতে গর্জিয়াস ভাড়ি চুড়ি,গলায় ভাড়ি নেকলেস,কানে ভাড়ি দুল সাথে মাথায় সুন্দর গর্জিয়াস টিকলি, মুখে ভাড়ি মেকাপ সব মিলিয়ে একদম লাল পরীর মতো লাগছে তানজুকে’!!আর অন্যদিকে আফরিন আজকে একটা গোল্ডেন-টিয়া রঙের কম্মিনিশনে জর্জেট লেহেঙ্গা শাড়ি পরেছে,চুলগুলো সেও খুলে দিয়েছে,হাতে গর্জিয়াস ভাড়ি চুড়ি,গলায় ভাড়ি নেকলেস,কানে ভাড়ি দুল সাথে মাথায় সুন্দর গর্জিয়াস টিকলি, মুখে ভাড়ি মেকাপ সব মিলিয়ে একদম সবুজ পরীর মতো লাগছে আফরিনকে’!!এক কথায় বলতে গেলে আফরিন তানজুকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে’!!সবাই আফরিনকে দেখে বলে উঠলঃ

———“আফরিন আপু তোমায় তো খুব সুন্দর লাগছে…
“আফরিন মুচকি হেঁসে বলে উঠলঃ
——–“থ্যাংক ইউ…
“এবার তাহলে সবাই মিলে একটা সেলফি তোলা যাক!হৃদয়ের মুখে এমন কথা শুনে খুশি হয়ে বলে উঠলাম আমিঃ
———“আবার জিগায় তোল দোস্ত…
“তারপর আর কি আমরা সবাই মিলে তুললাম একটা সেলফি!এর ভিতর চারদিকে শোনা গেল জামাই এসেছে, জামাই এসেছে,
“এমন কথায় শুনে আরিফা আর রিতু বললোঃ
———“রিয়াদ স্যার স্যার থুক্কু রিয়াদ দুলাভাই আর অপূর্ব ভাইয়া চলে এসেছে চল তাড়াতাড়ি…
“বলেই চারজন একসাথে দৌড়ে গেল সেখানে!’
“আমার তো ইচ্ছে করছে একবার রিয়াদকে দেখতে এই ভেবে এক পা এগোতেই আফরিন আপু আমার হাত ধরে বললঃ
———“এই কোথায় যাও…
———“না মানে(লজ্জা পেয়ে)
——–“এত তাড়া কিসের এখনই আমার ভাইকে দেখার জন্য….
———“আরে আমি কখন বললাম আমি রিয়াদকে দেখতে যাচ্ছি….
———-“হুম বুজি বুজি এখনো কি খাই সুজি….
“আফরিন আপুর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললামঃ
———“এটা তো…
———“তোমার ডায়লগ তাই তো…
———“হুম কিন্তু তুমি কি করে…

“এরই মাঝে আম্মু আর আফরিন আপুর আম্মু এসে হাজির আমাদের সামনে কারন আমাদের নিয়ে যাবে নিচে’!!
“তানজুর আম্মু এসে জড়িয়ে ধরল তানজুকে’!!আর আফরিনের আম্মু আফরিনকে’!!আফরিন তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরেই বলে উঠল তানজুকেঃ
———“বলবো একদিন….
“কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারো আমাদের কাছে আসলো দিহান,হৃদয় আরিফা আর রিতু!!ওরা এসেই বললোঃ
——–“এবার তাহলে যাওয়া যাক…
“তারপর আমিআর আফরিন আপু চললাম একসাথে’!!হর্ঠাৎই দিহান বলে উঠলঃ
——-“বিশ্বাস কর দোস্ত আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তোর বিয়ে…
——-“তুই কিন্তু এখনো ফুচকা খাওয়াস নি আমায়….
“দিহান অবাক হয়ে বললোঃ
——–“কালই তো খাওয়াম…
——–“ওহ খাওয়াইছিলি আমি তো ভুলে গেছি’…
“আমার কথা শুনে হাসলো সবাই!!

“আস্তে আস্তে এগোচ্ছে তানজু আর আফরিন’!!ওদের থেকে অল্প দূরেই আছে রিয়াদ আর অপূর্ব’!!আজকে রিয়াদ একটা গোল্ডেন কালারের সেরোয়ানি পড়েছে,চুলগুলো বরাবরই মতোই সুন্দর করে সাজানো,সাথে হাতে ব্রান্ডেড ঘড়ি অল্প সাজেই অপূর্ব লাগছে তাকে,আর অন্যদিকে অপূর্ব একটা ব্লাক রঙের সেরোয়ানি পড়েছে, চুলগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে সাজানো,হাতে ব্লাক ব্রান্ডেড ঘড়ি তাকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে’!!দুইজনই তাদের বউদের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে, আর বউরাও তাদের বরেদের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে’!!
“একে একে তানজু আফরিনকে বসানো হলো রিয়াদ আর অপূর্বের সোজাসুজি আর তাদের মাঝখানে রয়েছে সাদা পর্দা’!!সবাই বসতেই কাজি বিয়ে পড়াতে শুরু করল….
“মাথা নিচু করে বসে আছে তানজু’!!আর তার সোজাসুজি বসে থাকা রিয়াদ তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো’!!

“তানজুদের কাছ থেকে অল্প কিছু দূরত্বে দাড়িয়ে আছে রিতু, দিহান, আরিফা আর হৃদয় পাশাপাশি হর্ঠাৎই হৃদয় আরিফার কানে কানে বলে উঠলঃ
——–“চল না আমরাও তানজুর মতো বিয়েটা করে ফেলি…..
“হুট করেই হৃদয়ের মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলো আরিফা’!!আরিফা অবাক হয়ে বললোঃ
———“তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে বিয়ে করবো তাও আবার তোকে…
———“আমায় করবি না তো কাকে করবি শুনি…
———“তোকে বিয়ে করলে তো আজীবন শুধু ঝগড়া করেই কাটাতে হবে…..
———“আর যদি ঝগড়া না করি তাহলে বিয়ে করবি আমায়….
“আরিফা কিছুক্ষন থেমে বললোঃ
———“ভেবে দেখবো….
“বলেই মুচকি হাসে আরিফা হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে আর হৃদয় আরিফার দিকে’!!হয়তো এখান থেকেই শুরু হবে তাদের নতুন ভাবে পথচলা……

“কবুল বলার মাধ্যমে খুব সুন্দর ভাবেই বিয়ে হয়ে গেল রিয়াদ তানজু আর আফরিন অপূর্বের!
“সবাই একসাথে বলে উঠল ”আলহামদুলিল্লাহ”…..

এক মুঠো কাঠগোলাপ  পর্ব ২৭

“অবশেষে সব কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে শেষ হয়ে এখন বিদায়ের পালা’!!বিদায়টা বরাবরই খুব কষ্টের’!!হর্ঠাৎই এই কষ্টের মাঝেই উপস্থিত হলো তুলি আর আবির’!!অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সবাই ওদের দিকে’!!তুলি আর আবির সবার দিকে তাকিয়েই হেঁটে আসছে ওঁদের সামনে’!!ওদের দুজনের হাতেই আছে ফুলের তোরা!!দুজনই তানজু ওদের সামনে এসে একটা ফুলের তোরা তানজু- রিয়াদকে দিল’,আর একটা অপূর্ব-আফরিনকে’ দিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠল তুলিঃ
——–“কেমন দিলাম সারপ্রাইজ….
“তুলির কথা শুনে তানজু বলে উঠলঃ
———“আমি তো ভাবতেই পারি নি তুই আসবি…
———“জানতাম তাই তো…
“হর্ঠাৎই আবির বলে উঠল তানজুকেঃ
———“থ্যাংক ইউ তানজু সেদিন তোমার কথাগুলো সত্যি বদলে দিয়েছে আমায়….
“আবিরের কথা শুনে তানজু হাল্কা হেঁসে বলে উঠলঃ
——–“ম্যানশন নট ভাইয়া….
“মুচকি হাঁসে আবির!
“কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো পরিবেশটাই থমকে গেল’!!চারপাশে কান্নার শব্দ আসতে লাগলো’!!তানজু অপূর্বকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর আফরিন রিয়াদকে….
“বিষয়টা সত্যি যেমন চমৎকার তেমনি একটু কষ্টের…

“অবশেষে সব বাঁধা পেরিয়ে দুই গাড়িতে বসে পরলো দুই জুটি’!!আর এই দুই গাড়ি করেই পৌঁছাবে দুই জুটি তাদের গন্তব্যে যেখানে আছে শুধু নতুন ভাবে পথ চলার আনন্দ, আর শুধু ভালোবাসা, ভালোবাসা শুরুই ভালোবাসা…..??
???”সমাপ্ত” ???
[অবশেষে শেষ হলো এক মুঠো কাঠগোলাপ গল্প’!!প্রথমেই বলবো এই গল্পটা একদমই কল্পনায় ঘেরা’!!আশা করি সবার গল্পটা ভালো লেগেছে’!!কার কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে কিন্তু!!সব এনডিংই একরকম তাই এটা একটু অন্যরকম লিখলাম আশা করি ভালো লাগবে’!!আর এতটা পথ একসাথে আশা জন্য ধন্যবাদ সবাইকে’!!আবারো দেখা হবে তোমাদের সাথে নতুন গল্প নিয়ে ততদিন সবাই ভালো থাকো সুস্থ থাকো]

—-আল্লাহ হাফেজ…?

2 COMMENTS

  1. Just osm khub khub khub khub khub khub khub khub khub khub sundor hoeache Khub Khub Khub Khub Khub valo legeche

Comments are closed.