বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৩ || Romantic Golpo

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৩
Writer Nondini Nila

সবার জরাঝরিতে ভাইয়া গাড়িতে উঠতে হলো। আমি কটমট করে গাড়িতে উঠে বসলাম। আদনান ভাই ও ড্রাইবিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দিলো। আমি চুপ করে একবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে র‌ইলাম।
শাড়ির কুচি হাত দিয়ে ঠিক বসে আছি ভাইয়া গাড়ি ছেড়েছে কিছু দূরে আসতেই গাড়ি থামালো। আমি ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে। আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে হকচকিয়ে গেলাম। এভাবে তাকালে লজ্জা করে আচ্ছা আমার কি কিছু ভুল হয়েছে এইভাবে গাড়ি থামিয়ে ভাইয়া তাকিয়ে আছে কেন?
আমি গাড়ির আয়না নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজের মুখ দেখতে লাগলাম না সব‌ই তো ঠিক আছে তাহলে।
শাড়ির আঁচল, কুচি ঠিক করলাম তাও। আজকে ভাইয়ার সাথে কথা বলবে না ভাবছিলাম কিন্তু এখন না বলে থাকা যাবে না।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
“কি হয়েছে? এমন হা করে তাকিয়ে আছো কেন? আগে জীবনে দেখো নাই আমাকে?”

আমার কথার জন্য ই ছিল মনে হয়। আমি কথা বলতেই ভাইয়া বলল,,
“দেখছি কিন্তু আজকের মতো দেখি নি।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,,” মানে।”
মানে বলেই আবার বলে উঠলাম,,
“ও বুঝেছি আজ বুঝি খুব সুন্দর লাগছে আমাকে দেখতে যে চোখ সরাতে পারছো না। আমি এমনিতে সুন্দর আজকে আরো বেশি সুন্দর হয়ে গেছি সেজে তাই না। তোমার চোখ‌ই সরছে না।”
খুশি হয়ে বললাম। কারন ভাইয়া আমাকে দেখে ফিদা হয়ে গেছে। কেমন হা করে তাকিয়ে আছে। এক্সট্রা ভাব নিয়ে কানের দুল ঠিক করছি। মনে মনে আমার লাড্ডু ফুটছে।
সব খুশি ধপ করে নিভে গেল ভাইয়ার কথা শুনে।
“তোকে মুটেও সুন্দর লাগছে না। বরং আজকে সব চাইতে বাজে লাগছে দেখতে। ছিঃ কেমন লাল লিপস্টিক দিয়েছিস ঠোঁটে একটুও মানায় নাই।আবার চুল খোঁপা মাই গড বুড়ি লাগছে দেখতে।”
আদনান ভাইয়া আমার দিকে নাক ছিটকে তাকিয়ে বলছে।
“আর শাড়ি কেমন করে পরেছিস পেট দেগ যাচ্ছে। ছেলেদের তোর পেট না দেখালে হয় না তাই।”
এই কথাটা ভাইয়া মৃদু রাগ নিয়ে বলল।
আমি মলিন মুখ করে হা করে ভাইয়ার কথা শুনছিলাম। পেট দেখা যাচ্ছে শুনেই চমকে উঠলাম।

আরও গল্প পড়তে ভিজিট করুন

বড় বড় চোখ করে তাকালাম সত্যি শাড়ি সরে গেছে। ভাইয়া আমার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে আমি তারাতাড়ি শাড়ি দিয়ে ডেকে নিলাম পেট।
লজ্জা লাগছে অনেক ভাইয়া আমার পেট দেখে নিল ছিঃ। আর কি বলল আমাকে বাজে লাগছে কিন্তু মামনি আম্মু যে বলল অনেক সুন্দর লাগছে।
তাহলে কি তারা মিথ্যা বলেছে।
গভীর চিন্তা করছি। নাকি ভাইয়া মিথ্যা বলল। আমাকে রাগানোর জন্য। গালে হাত দিয়ে ভাবছিলাম তখন হঠাৎ মনে হল কেউ আমার চুল ধরে ছে আমি চমকে উঠলাম।
দেখি আদনান ভাই আমার চুল খুলে দিচ্ছে।
আমি হাঁ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
তারপর বললাম,,,”ভাইয়া আমার চুল খুলছিস কেন?”
আদনান ভাই কড়া চোখে তাকালো আমার দিকে । আমি চুপ করে গেলাম।
ভাইয়া আমার চুল খুলে ছেড়ে দিল।
আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া এলোমেলো চুল ঠিক করে দিল।

তারপর একটা টিস্যু এনে আমার একদম কাছে চলে এলো ভাইয়ার গরম নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। আমি অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম ভাইয়াকে এই মাঝরাস্তায় আমার এতো কাছে আসতে দেখে।
ভাইয়া প্রতি আমি এমনিতে দূর্বল তাকে পছন্দ করি আমি‌ আর পছন্দের মানুষ এতো কাছে এলে কি নিজেকে কন্ট্রোল করা যায়। ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি। আচ্ছা ভাইয়া আমার এতো কাছে আসছে কেন আমাকে কি চুমু দিবে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি ভাবছি ভাইয়া আমাকে চুমু কেন দিবে‌? ভাইয়া তো আমাকে পছন্দ ও করে না ভালো ও বাসে না‌।
আচ্ছা এমন নয় তো ভাইয়া ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু বুঝতে দেয় না। আর আজকে আমাকে এতো সুন্দর লাগছে যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কাছে চলে এসেছে।
আমি তো এসব আকাশ পাতাল ভেবে মহা খুশি হয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।এই বুঝি আমাকে চুমু খাবে।
আমার খুশি দেখে কে? কিন্তু একি আমার সমস্ত ভাবনা ভুল প্রমাণ করে ভাইয়া নিজের হাতে টিস্যু দিয়ে আমার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিলো। আমি হাঁ করে ভাইয়া কান্ড দেখছি।

“ফাউল চিন্তা ভাবনা করা থেকে বিরত থাক ইডিয়েট।”
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,,,”কি ভাবলাম আর কি করলো খরিলা টা, শালা খাটাশ,।”
ভাইয়া নিজের কাজ শেষ করে নিজের জায়গায় বসে পরলো।
আমি বললাম,, “এটা কি করলা তুমি আমার লিপস্টিক মুছে দিলা কেন?”
“তোকে বাজে লাগছিল বললাম না। লিপস্টিক দিলে তোকে একদম মানায় না‌।”
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,, “সত্যি।”
ভাইয়া সিকার করলো আর আমি বিলিভ করলাম।
“আর চুল কেন খোলা হলো। মামনি কতো সুন্দর করে খোঁপা করে দিয়েছিল।”
“খোঁপা থেকে খোলা চুলে তোকে ভালো লাগে। মায়াবতী লাগে…
ভাইয়া কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
কি বললা?
ভাইয়া হকচকিয়ে গেল। আর বলল,,
“কিছু না। আর কখনো ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে আমার সামনে আসবি না।”
বলেই গাড়ি স্টাট দিলো ভাইয়া।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে র‌ইলাম ভাইয়ার দিকে।
ভাইয়া আর তাকালো না।
আয়নার দেখলাম সত্যি আমাকে চুল খোলা বেশি ভালো লাগছে বাট লিপস্টিক ছাড়া কেমন জানি। আগেই ভালে লাগছিল কিন্তু ভাইয়া যে বলল লিপস্টিক এ বাজে লাগছে।

আমি একটু পর পর ভাইয়ার দিকে তাকালাম। তাঁরপর বলেই ফেললাম,,
“ভাইয়া তুমি কি আমাকে মিথ্যা বলছো? দেখো আমাকে লিপস্টিক ছাড়াই খারাপ লাগছে থাকতে বেশি ভালো লাগছিল।”
আমার কথায় ভাইয়া কি যেন বলল,, আমি শুনতে
পেলাম না।
কি বললা শুনি নাই‌?
ভাইয়া ধমক দিয়ে থামালো।
“চুপ এক্সিডেন্ট হবে এমন করিস কেন?”
আর কথা বললাম না।
কলেজে চলে এলাম। সব মেয়েরাই লাল সবুজের শাড়ি কেউ সেলোয়ার কামিজ, পরে এসেছে। আমি আস্তে করে গাড়ি থেকে নামলাম।
আশেপাশে তাকাচ্ছি সবাই সবার মতো ইনজয় করছে ভাইয়া গাড়ি পার্ক করে ভেতরে যাবে বাট আমার সাথে না।
আমি নেহাদের খুঁজছি আর পেয়ে ও গেলাম ওরাও শাড়ি পরে এসেছে কি সুন্দর লাগছে ওদের আমাকে দেখেই তো চিৎকার করে উঠল সব কটা‌।
আমি ওদের দিকে তারাতাড়ি করে এগিয়ে যাচ্ছি আমার মনেই ছিলো না আমি কি পরে আছি।
আর পরলাম বিপদে শাড়ির কুচি খুলে গেল আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।
কুঁচি ধরে থমকে চারপাশে তাকাচ্ছি। কারো তেমন আমার খেয়াল নাই সবাই সবার খেয়াল এ। আমার ফ্রেন্ড গুলো বুঝে গেছে আর এগিয়ে আসছে। আমি লজ্জায় লাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ইশ এখন কি হবে এজন্য আমি শাড়ি পরতে চাইনা।

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১২

হঠাৎ কোথা থেকে ভাইয়া এসে দাঁড়ালো আমার পাশে আর আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্কান করলো।
হয়তো বুঝে গেছে তাই আমার হাত ধরে শিমুল গাছের তলে আড়ালে নিয়ে গেল।
“ইডিয়েট আসতে আসতেই আকাম করে ফেলেছিস। দেখে হাটবি না।”
রেগে ধমক সুরে বলল।
আমি মুখ ছোট করে দাঁড়িয়ে আছি।
“গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে ঠিক কর।”
আমি কুচি ধরে ঠিক করতে গেলাম কিন্তু ন
নিচে বেকা হয়ে গেছে কাউকে ধরতে হবে।
“কি হলো তারাতাড়ি কর?”
“আরেকজনের লাগবে।”
ভাইয়া বলল,,”কেন?”
আমি সব বলতেই ভাইয়া নিচে বসে পরলো আমি এটা দেখে থমকে গেলাম।
বিষ্ময় হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
“হা করে তাকিয়ে না থেকে ঠিক কর ইডিয়েট।”

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৩