বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৫ || valobashar golpo bangla

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৫
Writer Nondini Nila

ভাইয়া আমার ছবি তুলে দিল। তারপর আমাকে যেতে বলল,,
“কোথায় যাব?”
ভীতু মুখ করে বললাম,,,,,
ভাইয়া বলল,”কোথায় যাবি মানে? এখানে থাকবি নাকি।”
গম্ভীর হয়ে বলল। ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠ শুনে আমি থমকে গেলাম।
ভাইয়া বলল,,”চারপাশে দেখেছিস। তাও এখানে থাকতে চাইছিস যা।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি আমার পাশে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি দেখলাম একটা ছেলে একটা মেয়েকে চুমু খাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে আবার খুললাম তারপর ভাইয়াকে বললাম,,
“তুমি এখানে কি করছো?”
আমার কথায় ভাইয়া সরু চোখ করে তাকালো,
“দেখলি না ফ্রেন্ডদের সাথে আছি।”
আমি আশেপাশে তাকিয়ে বললাম,,”তুমি ও এখানে থেকে চলে যাও। ছিঃ কি অসভ্য ছেলে মেয়ে।”
বলে নাক ছিট কালাম। তার পর নেতাদের কাছে গিয়ে বললাম,,,
“চল এই জায়গায় আর না। ছিঃ কি নির্লজ্জ ছেলে মেয়ে গুলো।”
বলেই চলে এলাম।

ভাইয়া আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।
তারপর আমি চোখের আড়াল হতেই ফ্রেন্ডের কাছে গিয়ে বসলো। ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা বলল,,
“আদনান এই তোর মায়াবতী তাই না।”
আদনান ভাই কিছু বলল ফোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আরেক জন বলল,,
“হ্যা এই তো আমাদের ভাবি। ছোট্ট ভাবি আমাদের সেই ছোট বেলা থেকেই তো আদনান ওকে ভালোবাসে। কিন্তু এখন ও মনের কথা বলতে পারলো না।”
বলতে পরলো না কেন?
“আর বলিছ না ওর হিটলার শশুর মানে দোলার বাবা তো শর্ত দিয়ে রেখেছে। আগেই জানানো যাবেনা।”
আরেকজন বলল,,”বেচারা আদনান নিজের ভালোবাসার মানুষটির এতো কাছে থেকেও অনেক দূরে।”
সবাই কথা বলতে আদনান কে নিয়ে আর আদনান নিজের মন মতো ওর মায়াবতীর ছবি দেখছে।

আরও গল্প পড়তে ভিজিট করুন

একটু আগে যে ছবি গুলো তোলেছে সব ছবি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। আজকে দোলাকে ওর ভাবনার থেকে ও বেশি সুন্দর লাগছে। এতো সুন্দর লাগছে যে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যাচ্ছে।
তৃষ্ণার্ত মনটা বারবার অন্যমনষ্ক হয়ে পরছে।
আমরা আবার চেয়ার এ বসলাম শাড়ি পরে হাঁটা খুব কষ্ট। বসতেই বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে এলো মামা আর আমাদের সবাইকে দিয়ে গেল।
এতো সুন্দর করে সেজেগুজে এসেছি কি খাওয়ার জন্য। বিরিয়ানি আমার অনেক পছন্দের কিন্তু খেলেই সাজ নষ্ট হবে জানি।তাই খাচ্ছি না কিন্তু না খেয়ে থাকতেও পারছিনা পছন্দের জিনিস থাকলে “কি থাকা যায়।”
“ওই খাস না কেন?”
“আমি খাব না রে। খেলেই দেখবি পুরো হাত মুখ নষ্ট হয়ে গেছে।”
“তাই বলে না খেয়ে থাকবি।”
“আসলাম তো মাত্র দুই ঘন্টা হয়েছে?”
“তোর কি খিদে পায় নি তাহলে আমাকে দে।”
আমাকে দে শুনেই চমকে উঠলাম। বিরিয়ানির প্যাকেট শক্ত করে ধরে বললাম,,
“কেন নিজেরটাই হয় না আমার টা কেন দিমু।”
তুই তো খাবি না তাই।”
“খাব না তাই কি পরে খাব।”
“আচ্ছা আমার মা লাগবে না।”
“ওই আমি তোর মা । ”
রেগে বললাম।

” না না তুই আমার মা হবি কেন তুই তো আমার নানি?”
আমি কটমট করে তাকিয়ে আছি।ওকে চোখ দিয়ে ভষ্স করে দেব।
“আরে এমন করে তাকাচ্ছিস কেন?”
“আমি তোকে …
বলেই মারতে যাব ও ভৌ দৌড়। পলকে আমার সামনে থেকে দূরে সরে গেছে। শাড়ি পড়ে এরা কি দৌড়ানো শুরু করছে পারেও আর আমি অর্কমার ঢেকি ঠিক মতো হাঁটতে ও পারিনা।
এই প্রথম ভাইয়ার একটা কথা ঠিক লাগছে।ভাইয়া এর জন্যই আমাকে অর্কমার ঢেকি বলে।
সবার খাওয়া শেষ আমি একমাত্র প্যাকেট নিয়ে বসে আছি তখন ভাইয়া এলো আর আমার হাতে দিকে তাকিয়ে বলল,,
“এটা হাতে নিয়ে বসে আছিস কেন ?”
আমি ভাইয়ার কথায় বললাম,,
“তো কি করবো ফেলে দেব নাকি।”
“আমি কি ফেলে দিতে বলেছি ইডিয়েট। খাস নি কেন?”
“কিভাবে খাব দেখো না আমাকে হাতে লাগবে আবার মুখেও লাগবে তাই পরে খাব।”
“এতো সময় না খেয়ে থাকবি।”

রেগে বলল।আমি কিছু বলার আগেই ভাইয়া আমার হাতে থেকে প্যাকেট নিল।আমি তো বড় বড় চোখ করে ভাইয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে আছি।
“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন চল আমার সাথে?”
“তুমি আমার বিরিয়ানি নিলে কেন ?”
রেগে বললাম আমার এখন মনে হচ্ছে ভাইয়া আমার বিরিয়ানি খেয়ে নিবে।
ভাইয়া আমার উওর না দিয়ে হাত শক্ত করে ধরে নিলো।
“আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?”
“কথা বাদ দিয়ে চল।”
আর কিছু বললাম না।
ভাইয়া আমাকে নিয়ে তার গাড়িতে এলো আর আমাকে ভেতরে বসিয়ে নিজেও বসলো।
আমি ভ্রুকুটি করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া পানির বোতল নিয়ে নিজের হাত ধুয়ে প্যাকেট খুললো তার আমার সামনে খাবার তুললো।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া এটা করবে আমি কল্পনা ও করি নাই‌।
“হা করে তাকিয়ে না থেকে খা।”
আমি তাও হা করে তাকিয়ে আছি।
“খেতে বলেছি।”
এবার আমি কথা বললাম।
“তুমি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছ?”
আমার কথায় ভাইয়া বলল,,,

“এমন ভাবে বলছিস যেন এই ফাস্ট খাইয়ে দিচ্ছি।”
আমি কিছু বললাম না।আসলেই ভাইয়া আমাকে আগেও খাইয়ে দিয়েছে কিন্তু সব সময় অসুস্থ থাকা কালীন।
আমি ভাইয়ার হাতে খেতে লাগলাম ভাইয়া বরাবরের মতো যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে আমাকে আর আমি ভাইয়ার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি।
“এভাবে তাকিয়ে থাকিস না প্রমে পরে যাবি ‌।”
আচমকা ভাইয়ার এমন কথায় আমার হেঁচকি উঠে গেল।
আমি তো সেই কবেই ভাইয়ার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। আর ভাইয়া কিনা বলছে পরে যাব।
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম ভাইয়া যদি বুঝে যায় তাই।
দিনটা এইভাবেই কাটলো।তিনটার দিকে ভাইয়া আমাকে নিয়ে বাসায় এলো আমি নিজের বাসায় গিয়ে গোসল দিয়ে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরলাম।
খুব ক্লান্ত লাগছে শুয়েই ঘুমিয়ে পরলাম।

পরদিন—
কলেজে গিয়ে আমি থমকে গেলাম একজন কে দেখে। সে আর কেউনা তিথি। উনি আমার কলেজে কি করছে?
আমাকে দেখেই এগিয়ে এলো।
মুখে তার শয়তানি হাসি।
আমি কাচুমাচু করে সরু চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
“হাই দোলা!”
আমি কিছু বললাম না চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
“বাবাহ কথা বলবা না নাকি?”
আমি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছি। মেয়েটার হাবভাব লক্ষ্য করছি।
“কেমন আছো দোলা?”
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম,,” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?”
“এতো আছি কোনো রকম। এই খানে পড় বুঝি?”
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
“ওহ ভালো।”
“আপনি এখানে কি করছেন?”
“এই তো আসলে এইদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ তোমাকে দেখলাম তাই নামলাম।”
আমার কথাটা বিশ্বাস হলো না কারণ জনি এখানেই ছিলো।
আমার আগে থেকেই কিন্তু বলল অন্য কথা।
“ওহহ”
তাও কিছু বললাম না মেয়েটাকে আমার একদম ই পছন্দ না। কথা বলতেই চাই না।
তাই কথা বাড়ালাম না।
“আচ্ছা আমি আসি।”
বলেই পাস কাটিয়ে চলে এলাম কলেজে।
তিথি আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিল।
আমি কলেজে যেতেই আমার বান্ধবীরা জিজ্ঞেস করলো,,,” কে রে ওই মেয়েটা?”

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৪

আমি একবার তিথির দিকে তাকিয়ে বললাম,,”আদনান ভাইয়ের ফ্রেন্ড না গার্লফ্রেন্ড জানিনা।”
তখন ইলমা বলে উঠলো,,,
“আমার কি মনে হয় জানিস দোলা।”
আমি বললাম,,,”কি মনে হয়?”
ইলমা বলল,,,”আদনান ভাই তোকে ভালোবাসে।”
আমি ওর কথায় চমকে উঠলাম।
“হ্যাত কি বলিস?”
“সত্যি আমার এইটাই মনে হয়।দেখিস না তোকে কতো কেয়ার করে। কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেয় না। সব সময় ছায়ার মতো আগলে পাশে থাকে ভালো না বাসলে এমন করতো বল।”
আমি সরু চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৬