Death or Alive part 2
priyanka hawlader
সকালটা অন্যরকম।
পাখিরা ডেকেছে আগের মতো, বাতাসও বইছে সেই বনগন্ধ মাখা মিষ্টি ছোঁয়ায়—
তবুও অর্ষার বুকের মধ্যে যেন কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
ইনায়া চলে যাচ্ছে।
“কারণ ঢাকা থেকে ফোন এসেছে । একটু জরুরি কাজ পড়ে গেছে মেডিকেলের, ভাইভা আর একটা প্রেজেন্টেশন। তুই থাক, এমনিও তুই এতদিন পর এসেছিস আন্টি আঙ্কেল কে সময় দে আর খুব জলদি ফিরে আসিস ।”
অর্ষা চুপচাপ ছিল।
ইনায়া ব্যাগ গুছাচ্ছে, বাসের সময় হয়ে এসেছে। সাহেলা বেগম তখন রান্নাঘর থেকে গরম পরোটা বের করছেন, সঙ্গে ডিম ভাজি—ইনায়ার পছন্দ।
শেষ বারের মতো উঠোনে দাঁড়িয়ে ইনায়া বলল,
“তুই সাবধানে থাকিস, ঠিক আছে? কিছু হলেই ফোন করিস। এই গ্রামের ব্যাপারে আমার কেমন অদ্ভুত লাগছে…”
অর্ষা মাথা নাড়ল, কিন্তু চোখ নামিয়ে নিল।
ভিতরে একটা শূন্যতা জমা হচ্ছিল।
ইনায়া চলে গেলে এই গ্রাম, এই অরণ্য, এই ঘর… সবকিছু যেন হঠাৎ অনেক বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বে।
রওশন সরদার নিজে ইনায়াকে বিদায় করে দিলেন। ফারাজ ওকে নিয়ে রাস্তার মাথা পর্যন্ত গেল।
অর্ষা তখন চুপচাপ বসে ছিল বারান্দায়, পায়ে পা গুটিয়ে।
একটা নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস তার ঠোঁটের কোনা ছুঁয়ে যায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বিকেল বেলা…
সাহেলা বেগম এসে পাশে বসলেন।
“মন খারাপ করিস না। ইনায়া তো আবার আসবে।”
অর্ষা হালকা হাসে।
“জানি মা… কিন্তু এই চার বছরে সব সময়ই সাথেই থেকেছি তাই একটু কেমন যেন লাগছে ।”
মা তখন মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“তুই যা, তোর ফুপি তোকে যেতে বলেছে। অনেকদিন হলো দেখা হয়নি। ওর শরীরও ভালো না, একটু ঘুরে আয়। তোর মনটাও ভালো হবে।”
অর্ষা প্রথমে যেতে চাইছিল না, কিন্তু অবশেষে রাজি হলো।
ফুপিদের বাড়ি—গ্রামের একদম পশ্চিম প্রান্তে, বড় রাস্তায় পেরিয়ে জঙ্গলের ঘনতা একটু কমে এলেই একটা পুরনো বসতি। গরুর গাড়ির রাস্তা, খাল পেরিয়ে ছোট্ট পাড়ার ভেতরে তাদের বাড়ি। এ দীর্ঘ পথ পার করে অর্ষা এসে পরে ফুফুর বাড়ি।
এরপর,
ফুপিদের সঙ্গে কেটে গেল সুন্দর কিছু সময়—ফুপির অসুস্থতা, কিছু পুরনো গল্প, ছোট্ট খালঘাটের ধারে পাটি পেতে বসে চা খাওয়া।
কিন্তু সময় গড়াতে গড়াতে অর্ষার মন খচখচ করতে লাগল।
বিকেলের আলো নিভে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
আকাশে চাঁদ উঠেছে, কিন্তু মেঘে ঢাকা।
“ফিরতে হবে।”—অর্ষা বলল।
ফুপি অনেক করে বলল, “রয়ে যা মা, কাল চলে যাস। এখন জঙ্গলের পথটা একটু বিপজ্জনক।”
কিন্তু অর্ষা জেদ ধরে বলল,
“আমি চিনে চিনে যাবো। এই পথ আমার চেনা। চিন্তার কিছু নেই।”
এরপর অর্ষা বেরিয়ে যায় তাদের থেকে বিদায় নিয়ে,
অর্ষা হাঁটছে। বালির রাস্তায় তার পায়ের আওয়াজ ঠকঠক করছে। দুই পাশে আবার সেই ঘন জঙ্গল।
আজ বাতাস নেই,
পাতাও নড়ছে না।
তবে…
হঠাৎ বাঁ পাশে ঝোপের মধ্যে একটা শব্দ— “ক্র্র্র…”
অর্ষা থেমে যায়।
তার মাথায় বিদ্যুৎ খেলে যায় সেই নীল চোখের কথা।
সে জানে, আজ রাতটা “স্বাভাবিক” নয়।
সে হাঁটা জোর করে দেয়।
কিন্তু তার পেছনে ধীরে ধীরে আবার সেই শব্দ—
“ক্র্র্র…হুঁউউ…”
যেন কোনো কিছু তার পেছনে পা টিপে টিপে হাঁটছে।
অর্ষার গলা শুকিয়ে আসে।
সে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়…
কেউ নেই।
তবে ঝোপটা একটু নড়ছে
রাতের নিস্তব্ধতা আর অন্ধকার যেন কুয়াশার মতো জড়িয়ে ধরেছে চারপাশকে।
সে প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরে ভাবে এমনি তার মনের ভুল এরপর অর্ষা আবার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একা হাঁটতে শুরু করে । মাথার ওপরে বিশাল গাছের ছায়া, পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে ধূলোময় পথ জুড়ে পড়েছে। , হাতে ব্যাগ, তবু মুখে ভয়ের চিহ্ন নেই।
কিন্তু তার হৃদয় বুঝে গেছে—সে একা নয়।
চারদিকের নিস্তব্ধতা মাঝে মাঝে এমন নিঃসাড় হয়, যেন আশেপাশের সব প্রাণী থেমে গেছে।
অর্ষা থামে।
তার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়।
বুক ধড়ফড় করছে, কিন্তু সে নিজেকে সামলে রাখে।
কান খাড়া করে শোনে।
“খস… খস…” শব্দ হচ্ছে কোথাও থেকে,
পেছনের ঝোপে কিছুর নড়াচড়া।
সে ঘুরে তাকায়—কিছু নেই।
কিন্তু অনুভব স্পষ্ট, কেউ আছে।
অর্ষা চারপাশে চোখ বুলিয়ে একটা মোটা কাঠের ডাল দেখে সেটা তুলে নেয়।
তার চোখের ভাষা বদলে যায়—এবার সে শিকার নয়, সে লড়বে।
সে চিৎকার করে বলে ওঠে।
কে আছো? বাইরে বেরিয়ে আয়! আড়াল থেকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই… সাহস থাকলে সামনে আয়!”
সেভাবে কেউ হয়তো ইচ্ছে করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।
তার কণ্ঠে কম্পন ছিল না, ছিল তীব্র আত্মবিশ্বাস।
ঝোপটা থেমে যায় কিছুক্ষণ।
তারপর…
বাঁ দিকের একটা ঘন পাতার ফাঁক থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে কিছু।
আলো পড়তেই অর্ষার চোখ কেমন স্থির হয়ে যায়।
সে একটা নেকড়ে।
তবে এটা সাধারণ নেকড়ে না।
এই নেকড়েটা লম্বা, সুঠাম গড়নের, তার শরীর ঘন ছায়ার মতো কালো, আর…
চোখ দুটো অস্বাভাবিক রকমের উজ্জ্বল নীল।
একটা বরফশীতল, অথচ গভীর যন্ত্রণা মেশানো মানুষের মতো দৃষ্টি।
অর্ষা একপা পিছিয়ে যায়।
তার হাতে থাকা লাঠিটা শক্ত করে ধরে রাখে। কিন্তু চোখ ছিঁড়ে আসতে পারছে না সেই দৃষ্টির থেকে।
নেকড়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে।
কোনো শব্দ নেই।
নিঃশব্দে…
শুধু পায়ের নিচে শুকনো পাতার মচমচে আওয়াজ।
অর্ষার পা পিছলে যায়—সে মাটিতে টুপ করে পড়ে যায়।
মাটি ঠান্ডা, কাঁদা লেগে যায় হাতের পাশে। কিন্তু তার চোখ থেমে নেই।
নেকড়েটা এখন একেবারে তার সামনে।
একপলক তাকিয়ে আছে।
তার স্নায়ুগুলো অবশ হয়ে আসছে।
মনে হচ্ছে, আজই শেষ দিন—এই নেকড়েটা এখনই হয়তো…
কামড়ে ছিঁড়ে ফেলবে।
নেকড়েটা মাথা নিচু করে আস্তে করে তার মুখের কাছে মুখ রাখে।
দুটো চোখ এক লাইনে।
অর্ষার দম বন্ধ হয়ে আসে।
সে চোখ বন্ধ করে ফেলতে যাচ্ছিল…
কিন্তু ঠিক তখন…
নেকড়েটা থেমে যায়।
দুটি শ্বাস।
তারপর ধীরে ধীরে… পিছিয়ে যায়।
একবার মুখ ঘুরিয়ে জঙ্গলের দিকে তাকায়।
তার চোখে ঝলকে ওঠে কেমন একটা শীতল অভিমান, অথবা… চেনা কাউকে দেখার শোক।
আর এক মুহূর্তে সে অদৃশ্য হয়ে যায় জঙ্গলের গহীনে।
অর্ষা পেছনে হেলান দিয়ে পড়ে থাকে।
তার হৃদপিণ্ড যেন শরীর ফুঁড়ে বাইরে চলে যাবে।
শুধু একটা প্রশ্ন মাথায় বাজে—
“ওটা কে ছিল…? নেকড়ে? নাকি কিছু… অন্য কিছু?”
সে মনে মনে বলে এটাই কি ঐ দিন রাতে জানালার বাইরে দেখেছিলাম তবে সে আমাকে কিছু না করে চলে কেন গেল।
এরপর সে উঠে নিজেকে দাঁড়িয়ে সোজা দৌড় দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে আর বিরবির করে বলে এসব নিয়ে ভাবা পরেও যাবে আগে বাড়ি চল অর্ষা।
অন্ধকারে ঢাকা এক রাজ্য
একটা পাহাড় আছে পৃথিবীর সমস্ত মানচিত্রের বাইরের এক প্রান্তে—
একটা এলাকা যেখানে পৌঁছায় না চাঁদের কোমল আলো, না সূর্যের জ্বলন্ত দৃষ্টি।
দিনের আলোও সেখানে ঢোকে না ঠিকমতো।
তবু সময় চলে, পাতা পড়ে, বাতাস বয়…
শুধু মানুষ ঢোকে না। বা বলা ভালো—পারেও না।
সে পাহাড়ের নাম — কোহে কাফ।
এটা কোনো পাহাড় না,
এটা একটা অভিশাপের সীমারেখা।
একটা আংটির মতো এই পাহাড় পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে—যেমনটা ভয় ঘিরে রাখে অন্ধকারকে।
সেখানে যেতে হলে…
চার মাসের অন্ধকার পথ পাড়ি দিতে হয়।
তবে তা কোনো পথ নয়—
এ এক আত্মার যাত্রা।
পা নয়, ভয় এগোয়,
রক্ত নয়, দুঃস্বপ্ন গড়ে তোলে রাস্তা।
কিন্তু হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে আজও কেউ এই পাহাড়ে নিজের ইচ্ছায় প্রবেশ করতে পারেনি।
এই রহস্যময় পাহাড়ের গহীনে অবস্থিত একটি গোপন রাজ্য—
যার নাম পারস্য রাজ্য।
সেই পাহাড়ের চূড়ায়, কালো পাথরের গাঁথুনি দিয়ে বানানো এক বিশাল রাজপ্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে হাজার বছর ধরে।
সেখানে মানুষ থাকে না, থাকে
জিন
ছায়াপুরুষ
আর ভয়ংকর আত্মা যারা বাতাসে ভেসে থাকে।
এই রাজ্যের বাদশা ইশবাব, এক দুই হাজার বছরের জিন শাসক, যার রাজত্ব চলে অদৃশ্য শক্তি আর পুরনো চুক্তির মাধ্যমে।
আজ তার সিংহাসন ছাড়ার দিন।
আর আজ তার বড় ছেলে ওয়াজফান কায়াস্থ হবে এই রাজ্যের নতুন বাদশা।
ওয়াজফান কায়াস্থ — কোহে কাফ-এর অগ্নচক্ষু রাজপুত্র
সে এক নাম,
যা উচ্চারিত হলেই বাতাস থেমে যায়,
ছায়ারা নড়ে ওঠে—
আর হৃদপিণ্ডে কাঁপন ধরে যে কোনও মানুষের।
নামটির মধ্যেই যেন এক রাজকীয় মহিমা, আর অলৌকিক গম্ভীরতা।
তাকে দেখলে মনে হয়,
আলো আর অন্ধকার একসঙ্গে রূপ ধারণ করেছে।
তার চেহারা যেন নূরের মতো জ্যোতির্ময়—
অতিমানবীয় ফর্সা রঙ,
একেবারে নিখুঁত গড়নের মুখশ্রী—
যেখানে শিল্পী নিজে থেমে গিয়েছিল, বুঝতে না পেরে
আর কী যোগ করবে।
কিন্তু সেই অপার্থিব মুখের মাঝে আছে দুটি চোখ—
যা ভেদ করতে পারে আত্মার গভীর অন্ধকার।
চোখের মণি রক্তলাল,
না, সেটা শুধু লাল নয়—
টকটকে তাজা রক্তের রং যেন তার চোখে জ্বলছে
সব সময়।
চোখ দুটি দেখে কারও মনে হয়—
এই চোখ ভালোবাসতে পারে না,
তবে .. জ্বালিয়ে দিতে পারে জীবন।
তার চুল হালকা ব্রাউন রঙের,
হাওয়া লাগলে যেন আগুনে লেলিহান শিখার মতো নড়ে ওঠে।
চুল কিছুটা লম্বা—
চোখের সামনে অব্দি এসে থেমে যায়,
তবে ঠিক চোখে পড়ে না, শুধু ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
আর পেছন থেকে ঘাড় অবধি ছুঁয়ে থাকে।
এই সামান্য অসাবধান নকশার ভেতরেও
আছে এক অব্যক্ত নেশা।
ওয়াজফানের উচ্চতা ছয় ফুট চার ইঞ্চি।
তার চলন, তার অবস্থান—
একটি সিংহের মতো সজাগ, চুপচাপ
তবুও সর্বগ্রাসী।
তার গলার স্বর—
গভীর, কর্কশ নয় কিন্তু কম্পন আছে।
যা শোনা মাত্র শরীরে কাঁটা দেয়।
তাকে যারা প্রথম দেখে,
তারা পাগল হয়ে যায় তার রূপে।
কিন্তু…
যদি কেউ চোখের নিচে লুকানো সেই ছায়া দেখতে পায়,
যদি কেউ টের পায় তার ভয়ংকর রূপ,
তাহলে…
এক মুহূর্তেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
ওয়াজফানের অভিশাপই তার শক্তি।
সেই সৌন্দর্য আর ভয়ের মিশ্রণে
সে এক অভিশপ্ত আগুন
যার দিকে তাকালে দৃষ্টি পুড়ে যায়
তবু কেউ চোখ ফেরাতে পারে না।
(এতক্ষণ ধরে যার বর্ণনা দিলাম সে কোন সাধারণ মানুষ নয় আর না সাধারণ কোন রাজ্যের বাদশা। সে হলো জিনের বাদশা। এক হাজার বছর পূরণ হওয়ায় জিনেদের নিয়ম অনুযায়ী আজ তার রাজ্যভিষেক হচ্ছে।)
“এই জিনের বাদশার মানুষরূপ যতটা মোহময়, তার আসল রূপ ঠিক ততটাই বিভীষিকাময়। চকচকে রূপালী চোখ আর রক্তের মত লাল ঠোঁট নিয়ে সে যখন মানুষের ভান করে হেঁটে বেড়ায়, তখন কেউ টেরই পায় না তার ভিতরের অন্ধকার কতটা গভীর। তার হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকে নির্মমতা, আর তার কোমল কণ্ঠে জমে থাকে হিংস্রতার বিষ।
দয়া? সে শব্দটার মানেই জানে না। মায়া-মমতা তার দুনিয়ার অংশ নয়। সে জন্ম থেকেই শিখেছে কেবল আধিপত্য, আতঙ্ক আর ধ্বংস। তার উপস্থিতিই যেন বাতাস ভারি করে তোলে। রাজ্যের শিশুদের ঘুম পাড়ানির গল্পে তার নাম এক বিভীষিকার মতো উচ্চারিত হয়। রাজপ্রাসাদে কেউ তার চোখে চোখ তুলে কথা বলার সাহস পায় না। এমনকি তার পিতা—সেই মহান রাজাও—তার উপর কথা বলে না ।
তার হিংস্রতা সীমাহীন। কেউ যদি একবারও তার আদেশ অমান্য করে, সে এক মুহূর্তও দেরি করে না—সেই রাজপ্রাসাদ, সেই পরিবার, এমনকি সেই গোটা জনপদ—সবকিছু সে ছারখার করে দেয়। এক নিঃশ্বাসে সে পুরো জনপদ পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারে। তার শরীরের পেছনে বিশাল দু’টি ডানার মত পাখা—কালো আগুনে ঝলসানো, যেন শয়তানেরই ছায়া। সে যখন আকাশে ওড়ে, তখন মনে হয় রাতটা আরও ঘন হয়ে এসেছে।
সে রক্ত চায়, সে ভয় চায়, সে চায় সবাই কাঁপুক তার নামে। তার হৃদয়ে আলো বলে কিছু নেই—শুধু অন্ধকার। সেই অন্ধকারেই সে বাস করে, আর সেই অন্ধকারই সে ছড়ায়।”
রাজ সভার সদর দরজা দিয়ে ঢুকছে ওয়াফান কায়াস্থ। তার পরনে এক লম্বা পোশাক,
মূল রঙ: কালো
অলঙ্করণ/কাঁটা কাজ,, গাঢ় লাল রঙের সূক্ষ্ম মেঘের মোটিফের কারুকাজ করা আছে পুরো গায়ে।
কালো কাপড়ে লাল ডিজাইন অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও রাজকীয় আবহ সৃষ্টি করে।পোশাকটির কাটটি ঢিলেঢালা, যা রাজবংশের রাজাদের পোশাকের অনুপ্রেরণায় তৈরি।
চওড়া হাতা, যা রাজকীয়তার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তার পাশে তার ছোট ভাই—জ্যাইম, আসছে।
ওয়াজফানের প্রতিটি পা যেন জমিনে বজ্রপাতের মত পড়ছে। সিংহাসনের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই রাজ সভার সমস্ত জিনেরা এক মুহূর্তে নত হয়ে যায়। কারও চোখ ওঠে না, কারও নিশ্বাস উচ্চ হয় না—শুধু শব্দ শোনা যায় ওয়াজফানের নিঃশ্বাস আর তার জুতার শব্দে রাজপ্রাসাদের মেঝে কেঁপে উঠার।
ওয়াজফান ধীরে ধীরে এসে দাঁড়ায় সিংহাসনের সামনে। তার উপস্থিতি যেন বাতাসকে কেটে ফেলে—তীব্র, ভারী, শাসকোচিত। তার ডান পাশে দাঁড়ায় জ্যাইম, আর বা পাশে দাঁড়িয়ে আছেন সেই ব্যক্তি, যিনি এক সময় রাজ্য শাসন করতেন—ওয়াজফানের পিতা, ইশবাব।
ইশবাবের চোখ আজ জ্বলছে মিশ্র অনুভূতিতে—গর্ব, ভয়, আর অপার রহস্যে। তিনি চোখের ইশারায় নির্দেশ দেন। তৎক্ষণাৎ সামনে এগিয়ে আসে একজন পুরাতন জিন—তার হাতে ধরা রাজ্যের প্রাচীন কালো মুকুট। সেই মুকুট—যা একদা আগুনে গড়া হয়েছিল, যার স্পর্শেই সিংহাসন কাঁপে, যার ওজনে মাথা নয়, গোটা রাজ্য ঝুঁকে পড়ে।
ইশবাব নিজ হাতে মুকুট তুলে নেন। তারপর এক পলক তাকিয়ে থাকেন ছেলের চোখে—সেই চোখে যে এখন আর করুণা নেই, কেবল আগুন আর অধিপত্য। ধীরে ধীরে মুকুটটি পরিয়ে দেন ওয়াজফানের মাথায়। মুহূর্তেই যেন বদলে যায় পরিবেশ।
Death or Alive part 1
আকাশের ঘন কালো মেঘ চেপে আসে প্রাসাদের উপর। এক চিলতে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে দূরে। আর ওয়াজফান ধীরে ধীরে বসে পড়ে সিংহাসনের উপর—সিংহাসন যেন তার আগমনে কেঁপে ওঠে, মাথা নিচু করে।
সবাই নত, রাজ্য থমথমে, আর সেই মুহূর্তে ওয়াজফান কায়াস্থ রাজ্যের নতুন জিন-বাদশা হয়ে যায়।
সে বসার পর যে যে যার যার স্থানে বসে করে পড়ে।আর তার ভাই তার ডানপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। তার বাবা ইশারা করাতে একজন জিন ঘোষণা করে আজ থেকে আমাদের বাদশা ওয়াফান কায়াস্থ।ওয়াজফান সিংহাসনে বসে মুচকি একটা হাসি দেয়। তার চোখ আগুনের লাভার মত জল জল করছে। তার ঠোঁটে হাসি দেখা গেলে তার চোখ বলছে তার মধ্যে কতটা হিংস্রতা আছে।
