Death or Alive part 21
priyanka hawlader
ওয়াজফানের কথার পরে এখনো পুরো রাজপ্রাসাদে নিস্তব্ধতা বইছে।
হঠাৎ করেই যেন রাজপ্রাসাদের প্রতিটি অলিন্দ, প্রতিটি করিডোর, প্রতিটি স্তম্ভ—সমস্ত কিছু থেমে গেছে। বাতাস থমকে আছে, মোমবাতির শিখাও কাঁপতে ভুলে গেছে, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি নিজের শাসন কায়েম করেছে প্রাসাদের উপর।
ওয়াজফানের কণ্ঠের সেই বজ্রনিনাদ—সেই অটল, কঠোর ঘোষণা—যা তিনি অর্ষাকে কেন্দ্র করে দিয়েছেন, তার রেশ এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজপ্রাসাদের প্রতিটি প্রাচীরে।
আর ওয়াজফান এর ঘোষণা এতোক্ষনে প্রাসাদের সকলের কাণে পৌঁছে গিয়েছে।
কেউ সরাসরি শুনেছে, কেউ শুনেছে দাসীর মুখে, কেউ আবার গোপন গুঞ্জনে। কিন্তু বিষয়টি আর গোপন নেই—তাজা আগ্নেয়গিরির মতো এখন তা সবার মনে আলোড়ন তুলেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রাসাদের সব দাস-দাসী নীরব; মাথা নিচু করে হাঁটছে যেন কোথাও চোখ রাখতে ভয় পাচ্ছে। প্রাসাদের প্রহরীদের মুখেও দেখা দিয়েছে দ্বিধা—যেন কোনো যুদ্ধ শুরু হতে চলেছে, কিন্তু তারা জানে না কার পক্ষে দাঁড়াবে।
ওয়াজফানের বাবা, জ্যাইম, ইসাবেলা, ও প্রাসাদের সকলে কাছে এ খবর পৌঁছে গিয়েছে।
ওয়াজফানের বাবা— তাঁর বিশাল সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে তাকিয়ে আছেন দূরের আকাশে, চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। হয়তো তিনি ভাবছেন, এই ঘূর্ণিঝড় তাঁর প্রাসাদকে কোথায় নিয়ে যাবে।
চারদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে সকলের মুখে বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠেছে।
ওয়াজফান ধীর পায়ে অর্ষাকে নিয়ে তার নিজের ঘরে প্রবেশ করে। ঘরজুড়ে হালকা সোনালি আলো—একধরনের নিঃশব্দ আশ্রয়ের ছায়া যেন ছড়িয়ে আছে চারদিকে।
অর্ষা ক্লান্ত, নিস্তেজ। ওয়াজফান তাকে বিছানায় আলতো করে বসিয়ে দেয়, যেন একটা ভাঙা খেলনা—ভীষণ যত্নে রাখা দরকার, নাহলে একেবারে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।
ওয়াজফান আলতো করে অর্ষার মাথায় নিজের হাত ছোয়ায়। যেন হাতের ছোঁয়া দিয়েই বুঝে নিতে চাইছে—কতটা কষ্ট পেয়েছে এই মেয়েটা।
হঠাৎ ওয়াজফানের চোখের কোণে শঙ্কা আর বিস্ময়ের একটা ছায়া খেলে যায়। তার দৃষ্টি নিচে নামে… তারপর আরো নিচে… আর তারপর পাগলের মতো অর্ষার দুই হাত, পা, কাঁধ—সবখানে চোখ বুলাতে থাকে। কোথাও ব্যথা লেগেছে? কোথাও কেউ আবার…?
তার শ্বাসপ্রশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে।
কিন্তু ঠিক তখনই, হঠাৎ তার দৃষ্টি গিয়ে পড়ে অর্ষার বাঁ গালের উপর। সেখানে স্পষ্ট… পাঁচটি আঙুলের দাগ। তাজা দাগ। লাল হয়ে আছে জায়গাটা। মনে
হচ্ছে, একটু চাপ দিলেই ফেটে রক্ত বের হবে।
ওয়াজফান জমে যায় মুহূর্তেই।
তার চোখের ভিতর যন্ত্রণার সঙ্গে এক অজানা উন্মত্ততা মিশে যেতে থাকে। বুকের গভীরে যেন কিছু একটা ভেঙে পড়ে—একটা ধাক্কা লাগে হৃদপিণ্ডের গায়ে।
তার চোখ জ্বলতে থাকে, কিন্তু সে কিছু বলে না। শুধু হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে। পেছন ঘুরে টেবিলের উপর থেকে একটা ছোট্ট ওষুধের কৌটা তুলে নেয়।
পুনরায় ফিরে এসে অর্ষার সামনে বসে।
একটা নিঃশব্দ শ্বাস ফেলে সে ওষুধের ঢাকনাটা খোলে। তারপর তার আঙুলে একটু মলম তুলে, খুব ধীরে… খুব, খুব আলতো করে অর্ষার গালের ক্ষতস্থানে ছোঁয়ায়।
“আহ্!”
অর্ষা ব্যথায় একটু চেঁচিয়ে ওঠে।
সেই মুহূর্তে ওয়াজফান কেঁপে ওঠে। তার শরীরটা যেন ঠান্ডা হয়ে আসে। অর্ষার কণ্ঠে যন্ত্রণার সেই সামান্য আওয়াজ—তা যেন ছুরি হয়ে বিঁধে যায় ওয়াজফানের স্নায়ুর ভেতর।
সে কিছু বলে না।
শুধু একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে অর্ষার মুখের দিকে… তার চোখের দিকে…
আর দৃশ্যটা ধীরে ধীরে স্তব্ধ হয়ে যায়…
দরজার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো জ্যাইম। তার চোখে ক্রোধের আগুন, দাঁত চেপে ধরা, চোখ জ্বলছে অভিমানে—সবকিছু সে দেখেছে। সবকিছু।
জ্যাইমের কণ্ঠে শীতল কিন্তু চাপা আগুনভরা সুর বেজে উঠলো—
“দা…”
ভিতরের সমস্ত উত্তাপ যেন এক মুহূর্তে থেমে যায়।
ওয়াজফান মুখ তুলে তাকায় দরজার দিকে। সেই চেনা কণ্ঠ—জ্যাইম। ধীরে ধীরে সে এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। দুজনের মাঝে শুধু একটুকরো ফাঁকা দরজার পাত।
জ্যাইম (চোখে স্থির দৃষ্টি, কণ্ঠে অবিচল ঠাণ্ডা সুর):
“তোর সাথে একটু কথা আছে। বাহিরে আয় দা।”
ওয়াজফানঃ হুম। তুই যা, আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।”
জ্যাইম চুপচাপ ঘুরে চলে যায়। তার ভারী পায়ের আওয়াজ অর্ষার বুকের মধ্যে বাজে যেন। ওয়াজফান কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে গভীর নিশ্বাস ফেলে। তারপর ঘুরে যায়।
জ্যাইম কিছুটা দূরে যেয়ে আবার দাড়িয়ে পড়ে। ও আবার এসে দাড়ায় দরজার আড়ালে।
ওয়াজফান ধীরে ধীরে দরজার পাশ থেকে সরে আসে। তারপর একেবারে সোজা দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে আদেশ করে—
ওয়াজফান: ইসাবেলা!
ইসাবেলা তৎক্ষণাৎ ছুটে আসে, চোখে ভক্তি আর বিস্ময়।
ওয়াজফান এগিয়ে গিয়ে তার হাতে তুলে দেয় এক অপূর্ব রাজকীয় পোশাক—সোনার সুতোয় বোনা, নীল-রূপার মিশেলে তৈরি পোশাকটি ঝলমল করছে। এটিকে সাধারণ পোশাক বলা চলে না—এটা বাদশাহের স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত পোশাক।
ওয়াজফান (চোখে অদ্ভুত দীপ্তি নিয়ে):
অর্ষাকে তোর রুমে নিয়ে যা সুন্দর করে সাজিয়ে দে। আমি কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে আসছি।
ইসাবেলা একটু থমকে যায়, তারপর মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।
আর বাহির থেকে দাঁড়িয়ে জ্যাইম এসবকিছু দেখছে আর রাগে ফুসছে। সে আর এক মূহুর্তও এখানে না দাড়িয়ে দূরত্ব পায়ে হাটা শুরু করে।
ওয়াজফান রুম থেকে বের হওয়ার পূর্বে একবার ঘুরে তাকায় অর্ষার দিকে। তার দৃষ্টি স্থির চোখ শান্ত ও মায়া ভরা। ঠিক তখন অর্ষাও ওয়াজফানের দিকে তাকায় দুজোনের চোখে চোখ পরে। ওয়াজফান মৃদু হাসে তারপর রুম থেকে বের হয়ে যায়।
আজ ইসাবেলার মুখে যেন বসন্তের রঙ ছড়িয়ে আছে। চোখে মুখে আনন্দের ঝলক, কণ্ঠে উচ্ছ্বাসের ঢেউ। সে এতটাই খুশি যে নিজের আবেগ সামলাতে পারছে না।
ইসাবেলা নিজের হাতে অর্ষাকে নিয়ে আসে তার নিজের রুমে। নরম আলোয় মোড়ানো কক্ষটির ভেতরে সাজানোর টেবিলের সামনে বসিয়ে দেয় অর্ষাকে। অর্ষা কিছুটা লাজুক, কিছুটা থমথমে। আর ইসাবেলা ঠিক তার পেছনে দাঁড়িয়ে আয়নার সামনে চুলে বিলি কাটতে কাটতে শুরু করে দিল কথার ফুলঝুরি।
ইসাবেলা (চঞ্চল সুরে হেসে):
“আরে আমার দা ভাই এত ছুপা রুস্তম নিকলা! যার ভয়ে পুরো রাজপ্রাসাদের লোক থরথর করে কাঁপে, সে কিনা একদম চুপচাপ বিয়েটা সেরে ফেলেছে? হায়রে, এই কথা কেউ বিশ্বাস করবে?”
অর্ষা তার কথা শুনে এক কোণে মিষ্টি লাজুক হাসি দেয়। চোখ নিচু, গাল লাল।
ইসাবেলা একটু থেমে, অর্ষার কাঁধে মাথা রাখে।
ইসাবেলা (স্নেহমাখা গলায়):
“যাক… ফাইনালি তুই আমার ‘ভাবি’ হয়ে গেলি! উফ্, আমি যে কী খুশি হয়েছি, তা তোকে বলে বুঝাতে পারবো না রে! এখন থেকে আমাদের দুটো সম্পর্ক—একদিকে বন্ধুত্ব, আরেকদিকে ভাবি-ননদ! আমি তোকে আমার ভাইয়ের বউ হিসেবে পেয়ে সত্যিই অনেক, অনেক বেশি খুশি।”
সে আবার একটু থামে। চুলের বাঁধনে নতুন ফুল গুঁজে দিয়ে হাসিমুখে বলে—
ইসাবেলা (কিছুটা স্মৃতিমাখা কণ্ঠে):
“না না, এটা ভাবিস না যে এলিনা খারাপ মেয়ে। ওও অনেক ভালো, গুছানো। তবে তুই… তুই আমার হৃদয়ের কাছের। আমি তো সবসময়ই চাইতাম, তুই যেন কখনো এই প্রাসাদ থেকে যাস। তুই গেলে যে আমি আবার আগের মতো একা হয়ে যেতাম রে। তোকে হারাতে আমি কখনোই চাইনি।”
অর্ষার চোখে কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা, আর নিরবে বইছে আবেগের স্রোত।
ইসাবেলা (একটু হাসতে হাসতেই):
“আমার মনের চাওয়াটা পূরণ হয়েছে, অর্ষা। তুই এখন দা ভাইয়ের স্ত্রী। এখন আর কোথাও যেতে পারবি না, বুঝলি? আর আমার দাদা? সে কি তোকে এত সহজে ছেড়ে দেবে নাকি! সবে তো বিয়ে হয়েছে—আগামী দিনগুলোতে বুঝবি, আমার দা ভাই আসলে কেমন! তখন কিন্তু ঠেলা সামলাতে হবে! পারবি তো আমার দা ভাইর ঠেলা সামলাতে?
এই বলে ইসাবেলা একটানা হেসে ফেলে। আর অর্ষা? সে মুখে হাত চাপা দিয়ে হেসে ফেলে এক চিমটি লজ্জা নিয়ে, চোখে চোরানো আনন্দ আর চুপিচুপি স্বপ্ন।
আর মনে মনে বলে এখনি কম জালায় নাকি শুধু তোমায় বলতে পারছি না তোমার দা কি পরিমান জালায় আমায়।
রুমের ভেতরে চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে রয়েছে। বাতাস যেন ভারী হয়ে আছে অনিশ্চয়তার বোঝায়। এক পাশে দাঁড়িয়ে ওয়াজফান—চেহারায় স্থিরতা, কিন্তু চোখের গভীরে ঝড়। আরেক পাশে জ্যাইম, যার মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। চোখ দুটো রাগে জ্বলজ্বল করছে, কণ্ঠ ঠান্ডা হলেও অভিমান চাপা পড়ে নেই।
ওয়াজফান রুমে ঢুকতেই জ্যাইম কোনো ভূমিকা ছাড়াই ছুড়ে দেয় তার প্রশ্নের ঝাঁপি।
জ্যাইম (রাগে টলমল কণ্ঠে):
“তুই এটা কী করলি দা? তোর ফিয়ন্সে আছে, সেটা জানার পরেও তুই কীভাবে একটা অন্য মেয়েকে গোপনে বিয়ে করতে পারলি! একবারও ভাবলি না এলিনার কথা? মেয়েটা তোকে কতটা ভালোবাসে… আর তুই তার সঙ্গে এমন নিষ্ঠুরতা করলি? কেন করলি এমন? কী কারণে করলি? বল, দা! আজ তোকে সবটা বলতেই হবে।”
রুমে কিছুক্ষণ নীরবতা। বাতাস যেন এক মুহূর্তের জন্য জমে যায়।
ওয়াজফান ধীরে এগিয়ে আসে। তার কণ্ঠে কোনও উত্তেজনা নেই, বরং এক ধরনের দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস ভরপুর। সে চোখ তুলে জ্যাইমের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি কখন, কী কারণে কী করি, সেটা আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে পছন্দ করি না। আর দিইও না। কিন্তু তুই আমার ছোট ভাই—তুই জিজ্ঞেস করেছিস, তাই উত্তর দিচ্ছি।”
ওয়াজফান সামান্য থামে, যেন কথাগুলোকে ঠিকঠাক সাজিয়ে নিচ্ছে। তারপর ফের বলে—
ওয়াজফান:
“আমি কারো জীবন নষ্ট করিনি, জ্যাইম। আর হ্যাঁ, এলিনা আমাকে ভালোবাসে, তো আমি কি করবো আমি তো তাকে ভালোবাসি না। আমি তো কাউকে বলে দিইনি আমাকে ভালোবাসতে। আমাদের গ্র্যান্ডপা সঙ্গে এলিনার গ্র্যান্ডপা বন্ধুত্ব ছিল, তাই তারা বাবাকে বলেছিল যে ওই রাজ্য থেকেই যেন আমার জন্য বউ আনা হয়। দুই পরিবার তখন রাজ্যের মঙ্গল ভেবে সম্মত হয়। তখন আমার জীবনে কেউ ছিল না, তাই আমিও দ্বিধা না করে রাজি হয়ে যাই।
কিন্তু এখন… এখন আমার জীবনে এসেছে অর্ষা। সে আমার জীবনের রানী হয়ে এসেছে। আমার প্রতিটা শ্বাসে, প্রতিটা রক্তের স্পন্দনে, শুধু সেই। সে আমার মন, আমার অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে গেছে। আমি আর অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারি না, পারবও না।
তবে যদি জিজ্ঞেস করিস অর্ষা কে ভালোবাসি কি না, তাহলে বলবো না কারন আমি ভালবাসতে শিখিনি ভালোবাসা কি এটা আমি জানিনা না ওটা আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি অর্ষা আমার নেশা আমার আসক্তি। সেই আসক্তি থেকে আমি দূরে থাকতে পারব না।
জ্যাইম কিছু বলতে যায়, কিন্তু ওয়াজফান থামায় না। সে গম্ভীর সুরে শেষ কথাগুলো বলে—
ওয়াজফান: অর্ষা এখন শুধু আমার নয়, এই রাজপ্রাসাদের রানী। তাই আমি আর এলিনাকে বিয়ে করতে পারব না। আর আমাদের পরিবারের সঙ্গে এলিনার পরিবারের যে চুক্তি হয়েছিল, সেটি আমি আগামী কিছুদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেব।”
তার কথা শেষ হতেই রুমে একপ্রকার স্তব্ধতা নেমে আসে। রুমে গভীর নিরবতা। বাতাস যেন ভার হয়ে উঠেছে চেপে রাখা প্রশ্ন, অভিমান আর একরাশ রাগে।
হঠাৎই জ্যাইম রুক্ষ কণ্ঠে ফেটে পড়ে, এক নিঃশ্বাসে বলে ওঠে—
“তুই এটা করতে পারিস না দা। এলিনা জীবনটা তুই এভাবে নষ্ট করতে পারিস না।
আমিতো জানতাম তুই নাকি মানব জাতিকে ঘৃণা করিস—
তাহলে এই তুচ্ছ, সাধারণ একটা মেয়েকে কী করে বিয়ে করে নিলি?
তোর এত ঘৃণা, এতদিনে সব বড় বড় কথা…
এখন তো সেই সাধারণ মানুষকেই বিয়ে করলি তুই!
রুমে শব্দ যেন থেমে যায় এক মুহূর্তের জন্য।
ওয়াজফান: হ্যাঁ, আমি মানব জাতিকে ঘৃণা করতাম। আর এখনো করি।
তবে হ্যাঁ, অর্ষা কোনো তুচ্ছ মেয়ে না।
সে আমার হৃদয়—একটা খণ্ড।
যেমন অক্সিজেন ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না,
আমি তেমনি আমার অর্ষা কে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।
স্বামীর বা পাঁজরের হাড়ে—নাকি স্ত্রীকে সৃষ্টি করা হয়?
অর্ষা আমার পাঁজরে সৃষ্টি… ওকে আমি কী করে ঘৃণা করব?
আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি ওর থেকে দূরে থাকার, ওকে কষ্ট দেওয়ার।
আরো অনেকবার ওকে আমি কষ্ট দিয়েছি।
কিন্তু বিশ্বাস কর, যতবার ওকে কষ্ট দিয়েছি,
ততবার আমি নিজেই ভেতর ভেতর মরেছি।
ওর কষ্ট আমার মনে তীরের মত আঘাত এনেছে।
আমি সেই কষ্টে নিজের ভিতরেই প্রতিনিয়ত মরে যেতাম।
আর এখন বুঝে গিয়েছি—
ওই-ই আমার অক্সিজেন।
ওকে ছাড়া আমি এক মুহূর্ত নিঃশ্বাস নিতে পারবো না।
বেঁচে থাকা তো অনেক দূরের কথা।
ও আমার শ্বাস-প্রশ্বাসে মিশে গেছে।
ও আমার আসক্তি… আমার নেশা।
বিশ্বাস কর, আমি ওর নেশায় খারাপভাবে আসক্ত হয়ে গেছি।
আর এই আসক্ত নেশাটা খুব খারাপ।
যে একবার হয়, সেই এর যন্ত্রণা বুঝতে পারে।
আর হ্যা এখোন থেকে ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী।
তাই তুই মানিস বা না মানিস,
ও এখন এই রাজপ্রাসাদের রানী।
এটা তো আর তুই চাইলেও বদলাতে পারবি না।”
এই বলে ওয়াজফান ঘুরে দাঁড়ায়, যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
ঠিক তখনই, জ্যাইম পেছন থেকে একটু নরম স্বরে বলে ওঠে—
জ্যাইম: আমি না তোর সব থেকে প্রিয় ছিলাম দা…
আর সেই তুই, একটা অন্য তুচ্ছ মেয়ের জন্য আমার সাথে এরকমটা করতে পারলি?
কি করে বদলে গেলি তুই এতটা?”
ওয়াজফান থামে। ধীরে পেছনে ফিরে তাকায় জ্যাইমের দিকে। চোখে নিঃশব্দ শাসন। এবার তার কণ্ঠ রাগে সামান্য ভারী হয়ে ওঠে—
ওয়াজফান: অর্ষা কোনো তুচ্ছ মেয়ে নয়।
ও প্রাসাদের রানী। আমার বউ
আর ওর একটা সুন্দর পরিচয় আছে…
এখন থেকে ও তোর ভাবি হয়।
তাই দ্বিতীয়বার যদি ওর সম্পর্কে কিছু বলা হয়,
তাহলে সেই সম্মানটা বজায় রেখে কথা বলবি।
আর হ্যাঁ, আমি বদলাইনি।
তুই আমার প্রিয় ছিলি, আছিস, আর থাকবি।
তবে হ্যাঁ, ভাবিস না রে
যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে
আমার বউকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলবি—
আর আমি তোকে শাসন করবো না।
তাই নিজের মাথা থেকে এসব চিন্তা বার করে দে।
আমার অর্ষাকে নিজের ভাবি হিসেবে মেনে নে—
এটাই ভালো হবে।”
এই বলে ওয়াজফান সোজা দরজার দিকে পা বাড়ায়।
তার পেছনে পড়ে থাকে এক অভিমানী জ্যাইম—
যার কণ্ঠে হেরে যাওয়া নীরবতা,
জ্যাইম ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে।
চারপাশে রাজপ্রাসাদের সোনালি দেয়াল—
কিন্তু তার মনে এক নিঃসীম অন্ধকার।
তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা।
চোখের জল মাটিতে পড়ে একেকটা টুপটাপ শব্দে যেন তার হৃদয়ের ফাটলকে আরও গাঢ় করে তোলে।
তার মনে এখন কেবল এলিনা।
সেই ছোটবেলা থেকে দু’জন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল।
একসাথেই বেড়ে ওঠা, খেলাধুলা, হাসি-কান্না সবকিছুই ছিল একসাথে।
কিন্তু সময়ের সাথে সেই বন্ধুত্ব একদিন জ্যাইমের ভেতরে গোপন এক তরফা ভালোবাসায় রূপ নেয়।
বড় হওয়ার সাথে সাথে সে নিজেও টের পায়—
সে আর বন্ধু নেই, সে এলিনাকে ভালোবেসে ফেলেছে।
কিন্তু সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়,
যেদিন হঠাৎ করে এলিনা জানায়—
সে ভালোবাসে ওয়াজফানকে।
আর তাদের দু’জনের বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে।
এলিনা খুশি ছিল,
আর জ্যাইম তখন ভাঙা হৃদয়ে হাসিমুখে নিজের ভালোবাসাকে নিজের ভাইয়ের হাতে তুলে দেয়।
কারণ সে জানে, ওয়াজফান ভালো ছেলে।
সে এলিনাকে ভালো রাখতে পারবে।
এবং যদি এলিনা ওয়াজফানের সাথেই সুখী হয়—
তবে সেটাই হোক তার ভালবাসার শেষ আশীর্বাদ।
তাই জ্যাইম নিজের ভালোবাসাটাকে বুকের গভীরে পাথরচাপা দিয়ে রাখে।
সেই হাসি মুখেই বিদায় নেয়,
আর নিজেকে এলিনার থেকে দূরে রাখতে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াতে থাকে।
কারণ সে জানে, এ রাজ্যে থাকলে
সে এলিনার প্রতি নিজের আবেগকে আর ধরে রাখতে পারবে না।
কিন্তু আজ…
যেই দা’র উপর অন্ধ বিশ্বাস রেখে নিজের ভালোবাসাকে সঁপে দিয়েছিল—
আজ সেই দা-ই তার বিশ্বাস ভাঙল।
জ্যাইম হতবাক…
এখন এলিনাকে কীভাবে সামলাবে সে?
এখন তো ওয়াজফান আর অর্ষার বিয়ে হয়ে গেছে।
তার কিছুই করার নেই।
এলিনা নিশ্চয়ই ভেঙে পড়বে…
সে জানে, এলিনার মন ভাঙা দেখতে পারবে না সে।
তাকে সান্ত্বনা দিতে পারার শক্তিও তার নেই।
সবকিছু ভাবতে ভাবতে জ্যাইম এক হাতে নিজের চুল আঁকড়ে ধরে,
আরেক হাতে শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে।
তার চোখ দিয়ে অনবরত ঝরছে পানি।
এ কেমন আজব ভালোবাসার যন্ত্রণা!
যেটা না তাকে শান্তিতে মরতে দিচ্ছে,
না শান্তিতে বাঁচতে দিচ্ছে।
ভালোবাসা আজ যেন এক অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছে তার হৃদয়ে।
সন্ধ্যা বেলায় রাজসভায় আজ এক বিশেষ আয়োজন।
চারদিকে রাজকীয় সাজে ঝলমল করছে প্রাসাদের প্রাঙ্গণ।
সোনালি আলো, সুগন্ধি ধূপের মৃদু সুবাস, আর রক্তিম আলোকছটায় যেন রাজসভা এক স্বপ্নপুরীতে রূপ নিয়েছে।
রাজসভার কেন্দ্রস্থলে, ওয়াজফান গম্ভীর অথচ সম্মানিত ভঙ্গিতে তার সিংহাসনে বসে আছে।
তার চোখে আজ এক ভিন্ন দীপ্তি।
একজন দাসীকে নির্দেশ দেয় সে—
“ইসাবেলাকে বলো, অর্ষাকে নিয়ে নিচে আসতে।”
দাসী তৎক্ষণাৎ গিয়ে খবর পৌঁছে দেয় ইসাবেলার কাছে।
কিছুক্ষণ পর, রাজসভায় প্রবেশ করে ইসাবেলা, সঙ্গে অর্ষা।
ইসাবেলা অর্ষার হাত ধরে রাজসভার মেন গেট পার করে লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।
অর্ষার সাজ আজ একেবারে ভিন্নতর।
বাদশাহর স্ত্রী হিসেবে বিশেষ পোশাকে সাজানো তাকে—
মাথায় নকশি অলংকার, হাতে জড়ানো রত্নখচিত চুড়ি, মুখে অনাড়ম্বর অথচ অনবদ্য এক লাজুক হাসি।
ওয়াজফানের চোখ পড়ে অর্ষার ওপর—
এক মুহূর্তের জন্য যেন তার দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়।
সে উঠে দাঁড়ায়।
ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে অর্ষার হাতে আলতো চুমু খায়।
তারপর এক ঝটকায় তাকে কোলে তুলে নেয়।
এত জিনের সামনে এমন আচরণে অর্ষা লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে।
সে সঙ্কোচে এদিক-ওদিক তাকায়, আর হাত দিয়ে নিজের চেহারা আড়াল করার চেষ্টা করে।
ওয়াজফান তাকে নিয়ে রাজসভার মূল মঞ্চে ওঠে।
সবাই নিঃশব্দ—
আর ঠিক তখনই, রাজসভা জুড়ে গম্ভীর অথচ আবেগময় ঘোষণায় মুখর হয় ওয়াজফানের কণ্ঠ—
আজ থেকে এই প্রাসাদের একমাত্র রানী — অর্ষা ওয়াজফান কায়াস্থ।
আমি তাকে আমাদের রীতি অনুযায়ী বিয়ে করেছি।
তাই কে মানে আর কে না মানে, সেটার কোনো মূল্য নেই আমার কাছে।
আজ থেকে অর্ষা এই প্রাসাদের রাণী।
এখন থেকে সবাই তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে।
আমি যেনো আর কারও মুখে অর্ষার সম্পর্কে একটাও কটু কথা না শুনি।
যদি শুনি, তাহলে তার পরিণতি ভয়ংকর হবে।
হ্যাঁ, যদিও আমরা আমাদের জীনদের নিয়মে গোপনে বিয়ে করেছি,
তবে আগামীকাল এই রাজসভায় আবার আয়োজন করে বিয়ে হবে—
এবার মানুষের নিয়ম মেনে, অর্ষার মনের মতো করে।
আর কাজি আনা হবে সরাসরি মানবদুনিয়া থেকে।
ঘোষণার পর রাজসভা জুড়ে নীরব বিস্ময়।
ওয়াজফান এবার ধীরে ধীরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে অর্ষার সামনে।
তার চোখে আবেগ, ঠোঁটে হাসি।
একহাত এগিয়ে দিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে—
হুম, মহারানী… আপনি কি এই রাজ্য, এই অসভ্য রাজার, আর তার হৃদয়ের সমস্ত দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন?
অর্ষা প্রথমে একটু লজ্জা পায়, মুখ ঘুরিয়ে মিষ্টি করে হেসে ফেলে।
তারপর চোখ নিচু করে মাথা খানিকটা ঝুলিয়ে দেয়
তাতে রাজি হওয়ার নিঃশব্দ সম্মতি।
অর্ষার মনের মধ্যে তখন এক বিশাল আবেগের ঢেউ।
এই ভয়ংকর জীন রাজা— যার ভয়ে গোটা প্রাসাদ কাঁপে,
সে কী করে এত কোমল আর সুন্দরভাবে ভালোবাসতে পারে!
অর্ষার মনে নিজেকেই প্রশ্ন করে সে—
হুমম! আজ থেকে এই রাজ্যের রানী তুই অর্ষা।
আমি কি পারবো এ বিশাল দায়িত্ব সামলাতে?
তবে হ্যাঁ, এবার আমাকে মানিয়ে নিতে হবে ওয়াজফানের স্ত্রী হিসেবে।
আমার ভালোবাসা দিয়েই আলোকিত করে তুলতে হবে এই রাজ্যকে।
তার ভাবনার মধ্যে হঠাৎ ওয়াজফান আবার তার হাতে আলতো করে চুমু খায়।
তারপর উঠে দাঁড়ায়, চোখের ইশারায় একজন দাসীকে নির্দেশ দেয়।
দাসী অল্প সময়ের মধ্যেই একটি সোনার থালা হাতে মঞ্চে আসে,
যার ওপর লাল রেশমি কাপড় দিয়ে ঢাকা কিছু একটা।
সবাই নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে আছে।
দাসী ওয়াজফানের কাছে এসে লাল কাপড়টা সরিয়ে দেয়।
সবার চোখের সামনে প্রকাশ পায় এক অপূর্ব, রাজকীয় মুকুট।
ওয়াজফান তা নিজের হাতে তুলে নেয়।
তার চোখে প্রশান্তি, গর্ব, ভালোবাসার মিশেল।
অতিমাত্রায় যত্ন নিয়ে সে মুকুটটা অর্ষার মাথায় পরিয়ে দেয়।
অর্ষার চোখ যেন ঝলমল করে ওঠে সেই মুহূর্তে।
তারপর ওয়াজফান নিজ হাতে তাকে পাশের রানীর সিংহাসনে বসায়।
নিজে বসে তার সিংহাসনে।
রাজসভায় তখন পিনপতন নীরবতা।
সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের রাজা ও নতুন রানীর দিকে।
সন্ধ্যার ভোজের আয়োজন ছিল রাজকীয় ও অভিজাত।
সকলেই একসাথে বসে রাতের খাবার খায়।
এরপর ধীরে ধীরে সবাই নিজ নিজ কক্ষে ফিরে যায়।
আর রাজসভা জুড়ে রয়ে যায় শুধুই নরম আলো,
আর নতুন এক অধ্যায়ের নিঃশব্দ প্রতীক্ষা।
রাত গভীর।
চাঁদের ম্লান আলোটুকু এসে পড়েছে অর্ষার কক্ষের জানালার প্রান্তে। রাজপ্রাসাদের নিঃস্তব্ধতা যেন আরও গাঢ় হয়ে আছে এই রাতটিকে ঘিরে। দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা, জানালার পাশে। চোখ দুটি দূর অজানায় নিবদ্ধ, মন তার আরও দূরে—অতীত আর বর্তমানের টানাপোড়েনে জর্জরিত।
এক সময়ের সাধারণ মানবকন্যা আজ পারস্যের রানী। কাঁধে এসেছে রাজ্যের দায়িত্ব, চোখে রাজ্যের ভবিষ্যৎ। কিন্তু হৃদয়ে জমে আছে হাজারো প্রশ্ন, নির্ভরতার সন্ধান।
ঠিক সেই সময়, হঠাৎ করেই অনুভব করল কোমরের নিচে এক জোড়া উষ্ণ হাত—নরম, দৃঢ় এবং পরিচিত। অর্ষার শরীর হঠাৎ কেঁপে ওঠে না, কারণ এই স্পর্শ সে এখন চেনে, হয়তো বুঝে ফেলে।
সে ঘাড় না ঘুরিয়েই শান্ত স্বরে বলে ওঠে,
“এত রাতে… আপনি এখনো ঘুমাননি? আমার ঘরে কেন এলেন?
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওয়াজফান। তার প্রশস্ত বুকটা অর্ষার পিঠে ঠেকা, আর ঠোঁট এসে থামে তার ঘাড়ের গোড়ায়। সে ধীরে ধীরে চোখ বুজে তার গলায় নাক ডুবিয়ে গন্ধ নেয়।
নরম, ভারী কণ্ঠে বলে ওঠে,
ঘুমোতে এসেছি তো… তবে তোমার শরীরের ঘ্রাণ ছাড়া ঘুম আসে না। খুঁজছিলাম সেই গন্ধটা। এখন পেয়ে গেছি… এবার নিশ্চিন্তে ঘুম আসবে।
তারপরে হাতটা একটু নিচে সরে আসে, আর সে ফিসফিসিয়ে বলে,
“এই টাইট আর বিশাল পোশাকগুলো তুমি আর পরবে না। এর ভিতরে ঢুকতে আমার খুব কষ্ট হয়।”
একটি ছলছলে হাসি তার ঠোঁটে খেলে যায়।
ওয়াজফান এবার আরও ঘন হয়ে আসে, মুখটা অর্ষার কানের পাশে এনে সুরে বলে,
— “তুমি আগে যেমন পোশাক পরতে, ঠিক তেমন কিছু আনিয়ে দিয়েছি… কোমল, শরীরের সঙ্গে মিশে থাকে—একেবারে আমার পছন্দমতো। এখন থেকে তুমি সেগুলোই পরবে, শুধু আমার জন্য।
অর্ষা কিছু বলে না। তার দৃষ্টিতে মিশে আছে অনিশ্চয়তা, দ্বিধা, আবার কোথাও এক গভীর প্রলয়ের টান।
ওয়াজফান ধীরে ধীরে তাকে বিছানার দিকে টেনে নেয়, যেন রাজ্যের রানী নয়—এ শুধু তার নিজের লিটল মনস্টার , যার প্রতিটি নিশ্বাস, প্রতিটি ঘ্রাণ, প্রতিটি ঘুম শুধুই তার অধিকারে।
অর্ষাকে ধীরে ধীরে বিছানায় বসিয়ে দিলো ওয়াজফান। তার চোখে তখনো ঝাঁঝালো আগুন, অথচ আচরণে এক ধরণের অস্থির কোমলতা। যেন সমস্ত দুনিয়ার অধিকার এখন তার দু’হাতের মধ্যে আটকে রাখা এই এক মেয়ের গায়ে কেন্দ্রীভূত।
হাত বাড়িয়ে তার জামার ফিতে খুলতে গিয়ে কিছুতেই খুলতে পারছিল না। নিঃশ্বাসগুলো ভারি হয়ে উঠছিল ক্রমশ। হঠাৎ এক মুহূর্তে অধৈর্য হয়ে উঠে পড়ল সে।
— এই ফাকিং ফিতেটা খুলছে না কেন… বাল! আজ পোশাকটাই কেটে ফেলবো!”
তার কণ্ঠে বিরক্তি, চোখে আগুন। সে আশেপাশে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছিল, হয়তো ছুরি, নয়তো ধারালো কিছু।
তখনই অর্ষা নরম হাতে তার কব্জি চেপে ধরে বলল,
— “এত অধৈর্য কেন আপনি…”
ওয়াজফান থমকে দাঁড়াল। তার চোখে কিছু একটা নরম হলো, কিন্তু ঠোঁটে এখনো চাপা উত্তেজনার রেখা।
এরপর অর্ষা নিজেই ফিতে খুলে দেয় ধীরে ধীরে। এরপর বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে। তার দুই হাত প্রসারিত, চোখে শান্ত স্নিগ্ধতা। কণ্ঠে গভীর নিমন্ত্রণ,
— “এসে যান কায়াস্থ সাহেব .. আমি তো অনেক আগেই প্রস্তুত ছিলাম শুধু আপনার জন্য।
এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে ওয়াজফান ঝাঁপিয়ে পড়ে। জামার ভিতর থেকে তার বুকের দিকে মাথা ঠেকিয়ে রাখে। নিঃশ্বাস নেয় গভীরভাবে, যেন সেই শরীরের প্রতিটি অংশে তার অস্তিত্ব মিশিয়ে দেবে। সেই গন্ধ, সেই উষ্ণতা, যেন হাজার বছর ধরে সে খুঁজে ফিরেছিল।
অর্ষার ঠোঁটে ধরা পড়ে এক মুচকি হাসি।
Death or Alive part 20
তার চোখে ভেসে ওঠে সেই ভয়ংকর বাদশা, যাকে সে প্রথম দিন দেখেছিল নিষ্ঠুর, রক্তপিপাসু আর অদ্ভুত হিংস্র রূপে। কিন্তু আজ… আজ সে ঠিক উল্টো—একজন ভালোবাসার কাঙাল, একজন উন্মাদ প্রেমিক, একজন পুরুষ… যে নিঃশর্ত ভাবে তার কাছে নিজেকে সঁপে দিতে চায়।
এই রূপ…
এই লোকটা…
শুধু তার জন্যই বাঁচে, শুধুই তার সামনে এমন হয়।
পুরো দুনিয়ায় অন্য কেউ তার এই রুপ কখনো দেখতে পাবে না।
 
