Death or Alive part 36

Death or Alive part 36
priyanka hawlader

সুন্দর এক বিকেল। চারপাশে নরম আলো ছড়িয়ে পড়েছে। অর্ষা টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ফল কাটছিল। হঠাৎই সে অনুভব করল—কেউ যেন তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।
স্পর্শটি ছিল অদ্ভুতভাবে পরিচিত। যেন বহুদিন আগের, বহুদিন মিস করা সেই আপনজনের স্পর্শ। অর্ষার ভেতরটা এক মুহূর্তের জন্য কেঁপে উঠল। তার মনে হলো—নিশ্চয়ই ক্যালিয়ন, কারণ এই বাড়িতে তো সে ছাড়া আর কেউ নেই। মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল অর্ষা।

কিন্তু—
ঘুরতেই তার শ্বাস আটকে গেল।
এ ক্যালিয়ন নয়।
এ এক সম্পূর্ণ অচেনা মুখ।
অচেনা সেই ব্যক্তি তাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে অস্বাভাবিক ঘনিষ্ঠতায়।
এক ঝটকায় অর্ষা নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। তার কণ্ঠে ভয় আর ক্ষোভ মিশে গেল—
“কে আপনি? কীভাবে ঢুকলেন এখানে? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলেন সাহস কীভাবে হলো আপনার? এখুনি বেরিয়ে যান, এক্ষুণি!”
চারপাশের বাতাস যেন হঠাৎই ভারী হয়ে উঠল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অর্ষার এমন আচরণে ওয়াজফান একেবারেই হতবাক হয়ে গেল। তার চোখে ফুটে উঠল বিস্ময়ের পাশাপাশি দমিয়ে রাখা রাগ। সে আরও এক ধাপ এগিয়ে এলো, আবার টেনে অর্ষা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কণ্ঠ ভারী হয়ে উঠল—
“এমন করছ কেন তুমি? এভাবে মজা করছো আমার সাথে? এতদিন আমার থেকে লুকিয়ে এখানে কী করছো? আমার সহ্যের সীমা পরীক্ষা নিচ্ছিস? এইভাবে আমাকে জ্বালানোর সাহস তোকে কে দিল! এর শাস্তি তো তোকে পেতে হবে । এসব নাটক বন্ধ করে সোজা বল—এখানে কি করছিস?”
ওয়াজফান কথা শেষ করার আগেই হঠাৎ অর্ষা তার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় চিৎকার করে উঠল—

“কে আপনি? নির্লজ্জের মতো আমাকে ছুঁয়ে দিলেন কেন? আমি আপনাকে চিনি না, জানি না! এইভাবে এসে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরা কি ভদ্রতা? অসভ্যলোক! এখুনি বেরিয়ে যান, আমার বাড়ি থেকে!”
অর্ষার চোখেমুখে ভয় আর ঘৃণার ছাপ স্পষ্ট।
এই দৃশ্য দেখে ওয়াজফান স্তম্ভিত। মুহূর্তের জন্য যেন তার ভেতরের সবকিছু থেমে যায়। তবুও সে আবার অর্ষার দিকে এগিয়ে গেল, হাত বাড়িয়ে তাকে থামাতে চাইল, কিছু বলতে চাইলো।
কিন্তু ঠিক তখনই অর্ষার চিৎকারে বাড়ির ভেতর কেঁপে উঠল। ওপরতলা থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে এল ক্যালিয়ন।
ক্যালিয়নকে দেখামাত্রই অর্ষা যেন মুক্তির পথ পেল। সে দৌড়ে গিয়ে ক্যালিয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, কণ্ঠ কেঁপে উঠল—

“দেখো! এই অসভ্য লোকটা আমার সাথে অসভ্যতা করছে… আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরেছিল!”
ঘর জুড়ে তখন যেন কিছুক্ষণের জন্য নামলো তীব্র নীরবতা।
ওয়াজফানকে সামনে দেখে যেন ক্যালিয়নের পায়ের তলার মাটি সরে গেল। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে— বুকের গভীর থেকে হুংকার তুলে উঠতে লাগল ভয়, যেন কলিজার সবচেয়ে প্রিয় কিছু হারানোর আশঙ্কা আঁকড়ে ধরেছে তাকে।

অন্যদিকে,
ওয়াজফান।
ক্যালিয়নকে প্রথম দেখামাত্রই তার মাথার ভেতর রক্ত যেন উথালপাথাল হয়ে উঠল। আর তার ওপর অর্ষাকে ক্যালিয়নের বুকে জড়িয়ে থাকতে দেখে— তার রাগ আকাশ ছুঁয়ে গেল, চোখে যেন আগুন জ্বলে উঠল।
এক মুহূর্তও দেরি না করে ওয়াজফান ঝড়ের মতো এগিয়ে এলো, অর্ষার চুলের মুঠি ধরে টেনে আলগা করল ক্যালিয়নের বুক থেকে। চোখে তখন শুধু ক্ষোভ আর দহন।
তারপর বজ্রাঘাতের মতো ঝড়ল সেই আঘাত—
অর্ষার গালে এক থাপ্পড়!
থাপ্পড়টা এত জোরে ছিল যে মুহূর্তের মধ্যে অর্ষা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ঠোঁটের কোণে ফেটে বেরিয়ে এলো লাল রক্তধারা… নিস্তব্ধ ঘর যেন কেঁপে উঠল সেই রক্তাক্ত দৃশ্যে।
ওয়াজফান আবার চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলল তাকে। চোখে তখন আগুন, ঠোঁটে বিষাক্ত ক্রোধ। মুহূর্তের মধ্যে আরও এক চড় ঝড়ল অর্ষার গালে— থাপ্পড়ের শব্দ যেন ঘরের দেয়ালে বজ্রপাতের মতো প্রতিধ্বনিত হলো।
তারপর হাত সরাসরি চলে গেল গলার কাছে।
লোহার মতো শক্ত আঙুলে চেপে ধরল অর্ষার কোমল গলা।
ওয়াজফানের কণ্ঠে গর্জন—

“তোকে সাহস কে দিল পরপুরুষের শরীরের ছোঁয়া নিজের গায়ে মাখতে? আমার সামনে অন্য পুরুষকে জড়িয়ে ধরিস! এখানে কি করছিস তুই? ও বুঝেছি — নিজের ইচ্ছেতে পালিয়ে এসেছিস… আমাকে ধোঁকা দিয়ে, একটা পরপুরুষের সাথে এতদিন ধরে এখানে থাকছিস!
এই লজ্জা করল না তো একটুও লজ্জা হলো না একটা পর পুরুষের সঙ্গে একাএকটা বাড়িতে থাকতে।
তার চোখ আরও লাল হয়ে উঠল, হিংস্র পশুর মতো কাঁপতে লাগল শরীর।
“কিসের এত জ্বালা তোর? কোন অভাব ছিল আমার কাছে? বল! কোন জ্বালা মেটাতে পারিনি আমি? যে তুই আমাকে ছেড়ে অন্য পুরুষের সাথে এভাবে বাঁচতে চেয়েছিস! বিশ্বাসঘাতক… বেইমান!
শরীরে এতই যদি জ্বালা ছিল তাহলে আমাকেই বলতে পারতি আমি তো তোর ডোজ আরো বাড়িয়ে দিতাম তোর জ্বালা মিটানোর জন্য।
কথাগুলো বলতে বলতে ওয়াজফানের হাতের চাপ আরও বাড়তে লাগল অর্ষার গলায়।
সে আবার গর্জে উঠল—

“যেহেতু তুই আমাকে ধোঁকা দিয়েছিস… নিজের শরীর অন্যের কাছে সমর্পণ করেছিস… আজ তোকে আমি জীবিত রাখব না! এই পৃথিবীতে তোর কোনো স্থান নেই। তোর মতো বেইমানের জন্য আর আমি কষ্ট পাব না। আজ… তোকে এখানেই মেরে ফেলব।”
চোখের সামনে সব ঝাপসা হতে লাগল অর্ষার।
নিঃশ্বাস যেন বুকের ভেতরেই থেমে গেল, গলা চেপে ধরা হাতের শ্বাসরোধী শক্তিতে চোখ উল্টে আসতে লাগল তার… ঠোঁট কাঁপতে কাঁপতে নিস্তেজ হয়ে আসছিল তার দেহ,
মুহূর্ত আরেকটু দীর্ঘ হলেই— হয়তো নিভে যাবে তার প্রাণপ্রদীপ।
ওয়াজফান অর্ষার গলা চেপে ধরে তাকে শূন্যে তুলল।
অর্ষার দু’হাত ছটফট করছে, চোখের তারা নিভে যাওয়ার মতো ফ্যাকাসে হয়ে আসছে।
ক্যালিয়ন এতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে সব দেখছিল,এই ভয়ে এতক্ষণ সেই স্তব্ধ হয়েছিল তার রেড ওয়াইন কে বোদ হয় এবার আর তার কাছে ধরে রাখতে পারবে না।

কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঝুলতে দেখে তার বুকের ভেতর রক্ত ফেটে গেল।
আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সে ছুটে গিয়ে ওয়াজফানের মুখে প্রচণ্ড ঘুষি বসাল।
ওয়াজফান দুলে উঠে দু’পা পিছিয়ে গেল। তার হাতের মুঠি আলগা হতেই অর্ষা মাটিতে পড়ে গেল
গলা চেপে ধরে হাহাকার করতে লাগল, শ্বাস নিতে গিয়ে কাশির সাথে বেরিয়ে এলো গলাভরা কান্না, চোখ দিয়ে টলমল করে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু।
কিন্তু এদিকে রাগে উন্মত্ত ওয়াজফান মুহূর্তেই আবার ঝাঁপিয়ে পড়ল ক্যালিয়নের ওপর।
শুরু হলো ভয়ংকর লড়াই।
কখনো ওয়াজফানের ঘুষি এসে আঘাত করছে ক্যালিয়নের মুখে, আবার কখনো ক্যালিয়নের লাথিতে দুলে উঠছে ওয়াজফান।

কিন্তু শক্তিতে ভারী ওয়াজফান ধীরে ধীরে ক্যালিয়নের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ফেলল।
একপর্যায়ে ক্যালিয়নকে নিজের জাদুর সাহায্যে দুই হাত দু দিকে বেঁধে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে ফেলল ওয়াজফান।
তারপর কোমর থেকে বের করল ধারালো তরোয়াল—
চোখে রক্ত, মুখে বজ্রনিনাদী হুংকার ছেড়ে বলে ওঠে —
“তোকে সাহস কে দিল আমার জিনিস আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবার?
আজ তোর কলিজা ছিঁড়ে বের করে আনব! আমার কলিজার ওপর হাত দিয়েছিস— এই অপরাধের শাস্তি তোকে আমি মৃত্যুর আগুনে পুড়িয়ে দেব!”
ক্যালিয়ন ঠোঁটে বাঁকা হাসি খেলাল, রক্তে ভেজা ঠোঁট দিয়েই গর্জে উঠল—
“তোর কলিজায় হাত দিয়েছি?

হাসালি আমাকে, ভুলে গেছিস ওয়াজফান— ও তো প্রথমে আমার ছিল।
আমি ওকে আগলে রেখেছি, আমি ওর প্রথম ভালোবাসা! তুই হঠাৎ এসে ওকে ছিনিয়ে নিয়েছিস।
তুই আমার জিনিস নিয়েছিস… আমি তোরটা না।”
ওয়াজফানের চোখে আগুন জ্বলে উঠল।
হুংকারে চারদিক কেঁপে উঠল—
“চুপ! ভুলেও ওর নাম নিবি না তুই।
বডিগার্ড যেমন পাহারা দেয়, তেমন তুই পাহারা দিয়েছিস… এতেই কি তোর দাবি দাঁড়ায় যে ও তোর?
ওর জীবনের প্রথম পুরুষ আমি! শেষ পুরুষও আমি হবো।
আমার লিটল মনস্টার আমার ছিল… আমার আছে… আর আমারই থাকবে!
আপুকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার অপরাধে
আজকে তোকে এমন মৃত্যু দেব—

যেন তোর শেষ চিৎকার শুনে আকাশও কেঁপে ওঠে,
আর মাটিও রক্তে রঞ্জিত হয়ে আমার প্রতিশোধের সাক্ষী হয়!
ওয়াজফান তরোয়াল উঁচু করে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত হলো—
দোহাই লাগে, মারবেন না।
ঠিক তখনই পেছন থেকে ফেটে এলো অর্ষার গলা।
কণ্ঠ কাঁপছে, বুকের ভেতরটা যেন ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রণায়।
“না! ওকে মেরো না…”

অর্ষা ছুটে এসে ওয়াজফানের পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল, জড়িয়ে ধরে কাঁপা কণ্ঠে অনুনয় করল—
“আপনি কে আমি জানি না… আপনার সাথে কী শত্রুতা আছে, সেটাও জানি না।
কিন্তু আমাদের এমন শাস্তি দিচ্ছেন কেন? আমরা কী ক্ষতি করেছি আপনার?
প্লিজ… দয়া করে আমাদের ছেড়ে দিন… আমাদের শান্তিতে বাঁচতে দিন…”
তার চোখ ভিজে উঠল অশ্রুতে, হাত কাঁপছে ভয়ে আর অসহায়তায়।
কিন্তু ওয়াজফান যেন পাষাণ—
রক্তিম চোখে সে পা ঝাঁকিয়ে অর্ষাকে দূরে ছুড়ে দিল।
অর্ষা মাটিতে গিয়ে আছড়ে পড়ল,

এরপর তরোয়ালটা দিয়ে যেইনা ক্যালিয়ান কে আঘাত করতে যাবে তখনই আবার
অর্ষা নিজের সব শক্তি দিয়ে উঠে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল—
“আমার স্বামীকে মারবেন না…!
দোহাই লাগে… ও আমার সবকিছু… ওকে ছেড়ে দিন…!”
ওয়াজফানের চোখ মুহূর্তে ছলকে উঠল।
তার হাতের তরোয়াল মাঝ আকাশে থেমে গেল—
কিন্তু সেই চোখে আবারও জ্বলে উঠল আগুন,
“স্বামী…?”
তারপর ভয়ঙ্কর বজ্রকণ্ঠে গর্জে উঠল—কি বললি তুই আবার বল,,
“তুই… ওকে স্বামী বললি?”
চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
অর্ষার বুক ধড়ফড় করছে, ক্যালিয়ন রক্তে ভেজা মুখে হাপাচ্ছে, আর ওয়াজফানের চোখে তীব্র ঝড়ের ইঙ্গিত…
স্বামী…!

শব্দটা কানে কানে বাজছে ওয়াজফান নিস্তব্ধ।
তার দেহের সমস্ত শক্তি যেন এক মুহূর্তে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
পা আর এগোতে চায় না—বরং মাটিতে শিকড় গেঁথে আটকে গেছে।
নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে, বুকের ভেতর হাহাকার জমে কাঁপছে।
চোখের সামনে থাকা অর্ষা—
তার লিটল মনস্টার…
কিন্তু এ কোন আচরণ?
ও তো কখনোই এমন ছিল না, কখনোই নয়।
ওর ঠোঁট দিয়ে “স্বামী” শব্দটা বের হলো—
কিন্তু সেই স্বামী অন্য কেউ!
ওয়াজফানের মস্তিষ্কে বজ্রপাতের মতো বারবার ধ্বনিত হচ্ছে সেই একটি শব্দ—
“স্বামী… স্বামী… স্বামী…”
সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন নিজের কানে শোনা কথাটাকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।
ধীরে ধীরে সাহস সঞ্চয় করে অর্ষা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে, আর ওয়াজফানের চোখের সামনে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে কাঁপা গলায় বলে—
“প্লিজ… আমার স্বামীকে ছেড়ে দিন।

ওকে মারবেন না। আমি জানি না ও কী ভুল করেছে… কিন্তু আমি তার হয়ে ক্ষমা চাইছি।
দয়া করে… প্লিজ, আমার স্বামীকে ছেড়ে দিন।”
তার প্রতিটি শব্দ ভিজে ওঠে চোখের জলে,
প্রতিটি প্রার্থনা যেন আঘাত করে ওয়াজফানের বুকের গভীরে।
কিন্তু ওয়াজফান শুনতে পাচ্ছে না কিচ্ছু—
তার কানে বাজছে শুধু সেই এক শব্দ—
“স্বামী…”

মাথার ভেতর অন্ধকার ঝড়ের মতো ঘুরপাক খেতে থাকে সেই শব্দ।
আস্তে আস্তে তার হাতে ধরা ধারালো ছুরিটা আলগা হয়ে আসে।
অর্ষা এক ঝলকে সেই সুযোগ বুঝে নেয়।
দ্রুত হাত বাড়িয়ে ওয়াজফানের হাত থেকে ছুরিটা ছিনিয়ে নেয়।
এরপর সেই ছুরিটা ঘুরিয়ে সোজা ওয়াজফানের দিকে তাক করে দাঁড়ায়।
চোখেমুখে আর কোনো ভয় নেই,
শুধু তীব্র দৃঢ়তা—

“চলে যাও… এখুনি চলে যাও!”
অর্ষার গলায় বজ্রকণ্ঠ কাঁপতে থাকে।
“আমার স্বামীকে ছেড়ে দাও।
তার গায়ে একটুও আঘাত এলে আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না।
নিজ হাতে মেরে ফেলব।
শুনছো?
প্রতিবার, প্রতিবারই আমি এরকম রুখে দাঁড়াবো,
আমার স্বামীকে রক্ষা করব।”
ওয়াজফান চোখের সামনে তাকিয়ে রইল—
যেন ভেতরে সে তার লিটল মনস্টারকে খুঁজছে,

কিন্তু সেখানে আজ দাঁড়িয়ে আছে এক দুর্দম, এক নারী—যার চোখে তার জন্য কোন ভালোবাসা খুঁজে পায় না সে।
যে অন্য পুরুষ কে বাঁচানোর জন্য মৃত্যুকেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে।
ওয়াজফানের ঠোঁটে ধীরে ধীরে এক বাঁকা হাসি খেলে গেল।
চোখে চোখ রেখে অর্ষার দিকে এগিয়ে এল সে।
“আমাকে মারতে চাস, লিটল মনস্টার ?
আমি রেডি।”
তার কণ্ঠে ঠান্ডা আগুন।
হাতের ইশারায় নিজের বুকের বাঁ পাশে দেখিয়ে দিল।
“এইখানে… ঠিক এইখানে আঘাত করিস।

তোর হাতে থাকা ওই ফাকিং অস্ত্রটা দিয়ে হাজার বার আঘাত করলেও আমি মরব না—
কিন্তু যদি এই এক জায়গায় ঢুকাতে পারিস…
তাহলেই এক মুহূর্তে শেষ হয়ে যাব আমি।
আজ পর্যন্ত কেউ জানতো না জিনের বাদশা কে কিভাবে মারা যায় তাই এখনো পর্যন্ত কেউ আমাকে কখনো মারতে পারে নি তবে আজ এই সিক্রেট টা আমি তোকে বলে দিলাম। আয় মার এবার।
ওয়াজফানের চোখে পাগলাটে ঝিলিক।
অর্ষার হাত কাঁপছে।
ছুরিটা তার হাতে, কিন্তু বুকের ভেতর ভয় জমে জমে পাহাড়।

ওয়াজফান আরও কাছে আসে, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।
“কি হল? দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
আয়… মার আমাকে।
আমার পাঁজরের এইখানেই ঢুকিয়ে দে ওটা।
তুই তো এত সাহস দেখাচ্ছিস,
তাহলে আজ… আমার জীবনটা নিয়ে নে।”
অর্ষার শ্বাস দ্রুত হয়ে ওঠে।
তার আঙুলে ধরা ছুরি কাঁপতে থাকে।
কিন্তু চোখের সামনে দাঁড়ানো এই মানুষটা—
যেন মৃত্যুকেও খেলায় পরিণত করেছে।
অর্ষার বুকের ভেতর ঢাকের মতো বাজছে।
তার হাত কাঁপছে—কেন এত ভয় সে নিজেই জানে না।
হয়তো সে কাউকে আঘাত করার মানুষ নয় বলেই,
নাকি সামনে দাঁড়ানো এই অচেনা অথচ ভীষণ চেনা ছায়াটিকে আঘাত করার যন্ত্রণায়—
সে কিছুই বুঝতে পারছে না।

তবুও সে সাহস জোগায়।
তরোয়ালটা সামনে তুলে ধরে বলে ওঠে,
“আপনি যদি এখনই চলে না যান…
আমি সত্যি সত্যিই আঘাত করব।
বিশ্বাস করুন… আমি মেরে ফেলব আপনাকে।”
কণ্ঠস্বর কাঁপছিল, তবু চোখে একরাশ জেদ।
ওয়াজফান হঠাৎ এক অদ্ভুত শান্ত হাসি হাসল।
তারপর ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে অর্ষার কাঁপা হাতে ধরা তরোয়ালটা শক্ত করে চেপে ধরল।
মুহূর্তেই তরোয়ালের ধারালো মাথা তার বুকের বাঁ পাশে গিয়ে ঠেকল।
“আমি তো চাই… তুই মারিস।”
ফিসফিস করে বলল সে।

পরক্ষণেই বুকের দিকে জোরে চাপ দিল।
ধাতব ধার মাংস চিরে ঢুকে গেল কিছুটা ভেতরে।
এক ফোঁটা, দু ফোঁটা, তারপর ঝরনার মতো—
লাল রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল তার বুক বেয়ে।
অর্ষা স্তব্ধ।
চোখের সামনে দৃশ্যটা দেখে তার দেহে শিহরণ উঠল।
হাত থেকে তরোয়াল পিছলে গেল।
ঠং শব্দ তুলে মাটিতে পড়ল তরোয়ালটা,
আর চারপাশে নেমে এল ভয়ঙ্কর এক নিস্তব্ধতা।
অর্ষা তরোয়াল ফেলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওয়াজফান এই সুযোগে এক ঝটকায় তাকে টেনে নিল বুকে, চেপে ধরল বুকের বা পাশে।

রক্তে ভিজে যাচ্ছে বুকের বাঁ পাশ, তবু তার আলিঙ্গন যেন ভাঙার নয়।
ওয়াজফানের চোখে তখন আর আগের সেই হিংস্র আগুন নেই—
বরং আছে তীব্র যন্ত্রণা আর হতাশার ছায়া।
সে এইটুকু বুঝে গেছে—তার লিটল মনস্টারের কিছু একটা হয়েছে। সত্যিই সে আর তাকে চিনতে পারছে না। আর এর পেছনে ক্যালিয়নের হাত থাকা নিশ্চিত। তাই ওয়াজফান এবার নিজেও শান্ত হয়ে, সবটা হ্যান্ডেল করতে চাইছে।
অর্ষা তার বুকে ছটফট করছে, মরিয়া হয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইছে।
কিন্তু সেই বুকের বাঁধন যেন শেকল।
হঠাৎই ওয়াজফান ফিসফিস করে বলল—

“পাঁজর…”
শব্দটা শুনতেই অর্ষার শরীর কেঁপে উঠল।
তার ছটফট থেমে গেল এক নিমিষে।
চোখে জল জমল, মনে হল সময় যেন পেছনে দৌড়ে গেল—তার স্মৃতিতে ভেসে উঠলো
সেই একান্ত মিলনের মুহূর্তে,
যখন ওয়াজফান তার মধ্যে ডুবে থাকতো সারা রাত বারবার এই নামেই ডাকত—
তার ‘পাঁজর’ বলে।
ওয়াজফান আবার কাঁপা গলায় বলল,
“আমার পাঁজর… তুই এমন কেন করছিস? কী হয়েছে তোর?”
অর্ষা ধীরে ধীরে মুখ তুলে তাকাল ওয়াজফানের দিকে।
চোখে চোখ পড়তেই বুক কেঁপে উঠল দু’জনেরই।
ওয়াজফান আলতো করে তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল।
তারপর আবার ফিসফিস—

“বল পাঁজর, তুই আমাকে চিনছিস না? কেন এভাবে দূরে ঠেলছিস?”
অর্ষার ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠল।
কিন্তু সেই হাসির আড়ালে ছিল এক অদ্ভুত প্রশ্ন সে এমন ব্যবহার করছিল যেন এখানে এতক্ষণ কিছুই হয়নি সে চারপাশের সবকিছু ভুলে গিয়েছে সবকিছু যেন স্বাভাবিক ছিল এতক্ষণ।
সে আস্তে বলল—
“কই কায়স্থ সাহেব, আমার তো কিছুই হয়নি…
আপনি কী সব আজেবাজে বলছেন।”
ওয়াজফানের বুকের ভেতর যেন বজ্রাঘাত হলো।
চোখে রক্তিম ছায়া, তবু ঠোঁটে নিঃশব্দ কাঁপন।
সে বুঝে নিল কোন ভয়ংকর কিছু ঘটেছে তার লিটল মনস্টার এর সাথে।
অন্যদিকে,,

ক্যালিয়ন এতক্ষণ বাঁধা অবস্থায় সবটা দেখছিল।
তার চোখে বারবার ভেসে উঠছিল—
অর্ষা কিভাবে তার জন্য কেঁদে উঠল, তার জন্য প্রাণপণে লড়ল,
এমনকি ওয়াজফানকেও আঘাত করার চেষ্টা করল।
এই দৃশ্য দেখে ক্যালিয়নের মনে হালকা শান্তির ছোঁয়া লাগল।
হ্যাঁ—
তার রেড ওয়াইন আসলেই তাকে নিজের স্বামী মানছে,
তার জন্যই মরিয়া হচ্ছে।
এই বিশ্বাসই তাকে মুহূর্তের জন্য সুখ দিল।
কিন্তু ঠিক পরক্ষণেই যখন দেখল অর্ষা ধীরে ধীরে ওয়াজফানের বুকে থমকে দাঁড়িয়ে আছে,
আর তার চোখে ঝরে পড়ছে অচেনা আবেগ—
তখন ক্যালিয়নের বুকের ভেতর ছিঁড়ে যাওয়া যন্ত্রণা শুরু হলো।
সে জোরে চিৎকার করে উঠল—

“রেড ওয়াইন! আমার দিকে তাকাও! আমি আছি এখানে, আমি তোমার স্বামী!”
কিন্তু ওয়াজফান আগে থেকেই তার জাদুশক্তি ব্যবহার করে চারপাশে এক অদৃশ্য শীল তৈরি করে রেখেছিল।
যেন ক্যালিয়নের কোন শব্দ অর্ষার কানে না পৌঁছায়।
অর্ষা শুনতে পাচ্ছিল শুধু ওয়াজফানের কণ্ঠস্বর…
আর তার হৃদস্পন্দন।
এক মুহূর্তও দেরি না করে,
ওয়াজফান অর্ষার ঠোঁট আঁকড়ে ধরল।
তার ঠোঁট এমনভাবে শুষে নিল,
যেন এতদিনের জমে থাকা পিপাসা মিটিয়ে নিচ্ছে।

অর্ষা আর ছটফট করলো না চোখ বন্ধ করে সবটা নিজেই অনুভব করল —তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।যেন মনে হচ্ছে অনেকদিন পর এই স্পর্শ সে পেয়েছে।
অপরপ্রান্ত থেকে ক্যালিয়ন মরিয়া চিৎকার করছে,
নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে—
তার বুক ফেটে যাচ্ছে,
তার রেড ওয়াইনকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণায়।
ওয়াজফান অর্ষার ঠোঁটকে একান্তে গ্রাস করছে।
কিন্তু তার দৃষ্টি—
আড়চোখে বাঁধা অবস্থায় ক্যালিয়নের দিকে নিবদ্ধ।
ক্যালিয়নের ছটফটানি, তার চোখের যন্ত্রণা—
এসব দেখে যেন ওয়াজফানের ভেতরের দানব আরও উন্মত্ত হয়ে উঠছে।
হঠাৎই তার স্পর্শ বদলে গেল।

তার হাত ধীরে ধীরে অর্ষার পোশাকের ভেতরে সরে গেল,
মসৃণ ত্বক ছুঁয়ে পেটে এক অদ্ভুত চাপ অনুভব করাল।
আস্তে আস্তে হাতটা উপরের দিকে উঠতে লাগল।
চমকে উঠল অর্ষা—
তার ঠোঁট ফসকে বেরিয়ে গেল ওয়াজফানের বাঁধন থেকে।
শ্বাসরুদ্ধ কণ্ঠে সে বলে উঠল—

“কি করছেন, কায়াস্থ সাহেব…?”
ওয়াজফান হেসে ঝুঁকে পড়ল।
তার কণ্ঠ যেন গলিত লাভার মত গরম,
কানে ফিসফিস করে বলল—
“হুসস… বেবি… তুমি শুধু enjoy করো…”
অর্ষার বুক ধকধক করে উঠছে।
তার শরীর ছটফট করছে, মন ভয়ে কাঁপছে—
আর অপরপ্রান্তে ক্যালিয়নের চোখ লাল হয়ে জ্বলছে,
তার শিরায় শিরায় প্রতিশোধ আর যন্ত্রণা ফুঁসে উঠছে।
ওয়াজফানের স্পর্শ হঠাৎই তীব্র হয়ে উঠল। সে হাতটা আর ব্রক্ষস্থলে রেখে চাপ দেয়,
তার আঙুলের হালকা চাপেই অর্ষার ঠোঁট ফসকে বেরিয়ে এল মৃদু চিৎকার—
“আ…আহ্!”

এই ক্ষুদ্র শব্দটাই যেন বিদ্যুতের মতো আঘাত হানল ক্যালিয়নের বুকে।
তার ভেতরের সবকিছু ছিঁড়ে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
রক্তে ফেনিয়ে উঠছে বেদনা, আর চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তার “রেড ওয়াইন”—
যে তাকে ছাড়া আর কিছুই কল্পনা করেনি।
কিন্তু ওয়াজফান—
সে তো আজ ক্যালিয়নকে চরম শিক্ষা দিতে চায়।
আজ প্রমাণ করবেই,
অর্ষার শরীর আর মন—দুটোই শুধু তার নিজের সম্পত্তি।
এখানে অন্য কোনো পুরুষের অধিকার নেই, কখনোই থাকবে না।
তার হাতের চাপ আরও শক্ত হলো।
অর্ষার চোখে ব্যথার জল জমল,

সে হঠাৎ করেই ওয়াজফানের গলা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠল—
“কি করছো… আমার লাগছে!”
কিন্তু সেই আর্তনাদ যেন আরও উসকে দিল ওয়াজফানকে।
সে ঝুঁকে পড়ে আবারও আঁকড়ে ধরল অর্ষার ঠোঁট,
প্রবল আসক্তি আর উন্মত্ততায় শুষে নিল শ্বাস।
আর পেছনে বাঁধা অবস্থায় ক্যালিয়ন—
তার দৃষ্টি ফাঁকা, বুক বিদীর্ণ,
চিৎকার যেন গলায় জমে গিয়ে হারিয়ে গেছে কোথাও।
সে এতটাই ভেঙে পড়েছে যে কণ্ঠ থেকে শব্দ বের হওয়াটাই ভুলে গেছে…

ভোরের আলো ফুঁটে উঠেছে।
ঘরের ভেতর জমে থাকা অন্ধকার ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। চোখ মেলে তাকাতেই ইসাবেলা আঁতকে ওঠে। তার দৃষ্টি পড়ে নিজের নগ্ন বুকের ওপর, যেখানে ড্যানিয়েল নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে।
এক মুহূর্তেই তার মনে ঝলসে ওঠে রাতের সেই সব কথা, সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি। চোখের গভীরে ভেসে ওঠে তীব্র ঘৃণা। সে আর সহ্য করতে না পেরে ধাক্কা দিয়ে ড্যানিয়েলকে সরিয়ে দেয় নিজের উপর থেকে।
ধাক্কার আঘাতে ড্যানিয়েলের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে কিছুক্ষণ ইসাবেলার দিকে তাকিয়ে থেকে সে ফিসফিস করে বলে—

— “ঠিক আছো তো, জান?”
কিন্তু ইসাবেলার দৃষ্টিতে কোনো কোমলতা নেই। শুধু ঘৃণা, শুধু প্রতিরোধ। একটিও কথা না বলে সে চাদর দিয়ে নিজের শরীর জড়িয়ে নেয়, মুখ ফিরিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়।
দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে ড্যানিয়েল মৃদু স্বরে ফিসফিস করে ওঠে—
— “তোর ওই চোখে ঘৃণাটা… আমি সহ্য করতে পারি না, ইসাবেলা। আমি তোকে ভীষণ ভালোবাসি। তোকে হারানোর ভয় আমাকে প্রতি মুহূর্ত গ্রাস করে ফেলছে।”
তার চোখে জল চিকচিক করে ওঠে, কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে ওঠে আবেগে—
— “আমি তোকে কখনো এভাবে চাইনি… কখনোই না। কিন্তু তুই আমাকে বাধ্য করেছিস। তোকে আমার কাছেই রাখতে হবে, তাই আমি এই পথ বেছে নিলাম। আমি চাই আমাদের একটা বেবি হোক… যেন সেই বেবির মায়ায় তুই আমার সাথে বাঁধা পড়ে থাকিস। তুই আমার থেকে পালাতে পারবি না, ইসাবেলা… কোনোদিনই না।
কিছুক্ষণ পর…

ইসাবেলা আয়নার সামনে বসে আছে। ভেজা চুল কাঁধ ছুঁয়ে ঝরে পড়ছে, আর সে ধীরে ধীরে আচড়াচ্ছে সেই ভিজে চুল। আয়নার কাঁচে নিজের চোখের লালচে ছায়া দেখে মনে হচ্ছিল ভেতরের ভয় আর ঘৃণাই যেন প্রতিফলিত হচ্ছে।
ঠিক তখনই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল ড্যানিয়েল। হাতে খাবারের ট্রে। নিঃশব্দে টেবিলের উপর রেখে দিল। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে এল ইসাবেলার দিকে। তার চোখে সেই চিরচেনা অদ্ভুত কোমল অথচ অস্থির দৃষ্টি।
সে নিচু স্বরে বলল—
— “দাও, আমি তোমার চুল মুছে দিই।”
ইসাবেলা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল, আতঙ্ক আর ঘৃণার ঝড় নিয়ে দূরে সরে গেল। চোখে আগুন জ্বেলে ফেটে পড়ল তার কণ্ঠ—

— “আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। আপনার এইসব ঢং, এইসব নাটক অন্য কাউকে দেখান। আমাকে ভুলেও ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।”
ড্যানিয়েল হেসে ফেলল—একটা মুচকি হাসি, যেখানে ভালোবাসা আর ভয়ংকর আসক্তি মিশে গেছে।
সে ফিসফিস করে বলল—
— “ছুঁয়েই তো ফেলেছি, ইসাবেলা। শুধু ছোঁয়া নয়… তোমার শরীরের প্রতিটি অঙ্গে এখনো আমার স্পর্শ বেঁচে আছে। আমার ঠোঁটের দাগ, আমার উষ্ণতা… তোমার রক্তের প্রতিটি বিন্দুতে গেঁথে আছে। তুমি যতই ঘৃণা করো, যতই পালাও… তোমার ভেতরে আমি রয়েই গেছি।”
ইসাবেলা কিছু বলতেই যাবে কিন্তু ড্যানিয়েল থাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে,
হাত বাড়িয়ে দিল, গলায় নরম স্বর—

— “চলো, এখন খাবার খাবে।”
কিন্তু ইসাবেলা তীব্র কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল—
— “কখনোই না! আমি আপনার হাতের খাবার খাব না। আপনি চলে যান এখান থেকে… আপনি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছেন। আমাকে যেতে দিন… প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দিন।”
ড্যানিয়েলের চোখ হঠাৎ অন্ধকার হয়ে উঠল। ঠান্ডা হাসি ঠোঁটে ফুটে উঠল। মুহূর্তেই এগিয়ে গিয়ে ইসাবেলাকে কোলে তুলে নিল সে।
— “আমাকে রাগিও না, ইসাবেলা। তুমি জানো তো… আমি রাগলে কি হয়। তাই চুপচাপ, ভালো মেয়ের মতো আমার কোলে বসে খেয়ে নাও।”
সে কোলে বসিয়ে খাবার খাইয়ে দিতে চাইল, কিন্তু ইসাবেলা মরিয়া হয়ে মাথা নাড়ল। তার চোখে দৃঢ়তা—
— “না! আজ আমি কিছুতেই খাব না।”

ড্যানিয়েল কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল তার দিকে। তারপর খাবারের প্লেট একপাশে রেখে দিল। হঠাৎ ঝুঁকে পড়ে ইসাবেলার ঠোঁট আঁকড়ে ধরল, তার প্রতিরোধ অগ্রাহ্য করে দীর্ঘ চুম্বনে ভরিয়ে দিল।
এরপর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে চোখে অদ্ভুত শীতল হাসি নিয়ে ফিসফিস করে বলল—
— “তুমি যদি এখন খাবার না খাও… তবে আমি তোমাকেই খাব।”
ইসাবেলার শরীর শিউরে উঠল। রাতের বিভীষিকাময় স্মৃতি যেন আবার ফিরে এলো তার মনে। তার বুক ধড়ফড় করে উঠল ভয়ে। চোখ দুটো ভিজে উঠল অশ্রুতে।
চুপচাপ মাথা তুলে কাঁপা কণ্ঠে বলল—
আচ্ছা খাচ্ছি,, এরপর চুপচাপ খাওয়া শুরু করে দিলো।

ওয়াজফান এখনো অর্ষার ঠোঁটের মধ্যে ডুবে আছে।
অর্ষা চোখ বন্ধ করে তাল মিলাচ্ছে, সেই স্পর্শের আবেশে হারিয়ে গেছে।
কিন্তু ভেতরে, সে ভাবছে—“কেন এমন মনে হচ্ছে? অনেকদিন পর কায়াস্থ সাহেবকে পাশে পেয়েছি, এই ছোঁয়া পেয়েছি। অথচ সে তো সবসময় আমার পাশে থাকে, সবসময় আমরা একসাথে, আর আজও তার কাছে আছি।”
ওয়াজফান হঠাৎ ঘাড়ের পিছে হাত দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে।
অর্ষার চোখে এক ঝলক বিদ্যুৎ–ধ্বনি, তারপর ধীরে ধীরে তার জ্ঞান হারায়।
কোলে তুলে নিয়ে যায়, অজ্ঞান অর্ষা যেন শান্ত।
সে চায় না—নিয়ে যাওয়ার পথে কোনো ঝামেলা হোক, লিটল মনস্টার যেন কোনো বাধা সৃষ্টি করে।
রাজ্যে ফিরে, সবার আগে সে রাজ বৈদ্ধকে দেখাবে, লিটল মনস্টার কেন এমন করছে সেটা সে খুঁজে বের করবে।
তবে এখন এভাবেই নিয়ে যাওয়া তার জন্য সবচেয়ে সঠিক মনে হলো।

ক্যালিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে, অর্ষাকে কোলে ধরে, ওয়াজফানের চোখ ক্যালিয়নের চোখের সঙ্গে মিলিত হয়।
মৃদু এক হাসি খেলায় ভেসে আসে তার মুখে, ঠোঁটের কিনারায় লুকানো হুংকার—
“**ভেবেছিলাম তোকে ভয়ংকর মৃত্যু দেবো, আজ বাঁচিয়ে রাখলাম। জানিস কেন? মৃত্যুর থেকেও বড় যন্ত্রণা—এখন তুই থাকবি, আমি দুই মাসের যন্ত্রণার দ্বিগুণ যন্ত্রণায় তুই থাকবি, সারা জীবন। তোর মত অবলা কে মেরে আমি শান্তি পেতাম না। বরং তোর মতো অবলাকে দেখে যন্ত্রণার স্বাদ আমার জন্যই শান্তি এনে দিল। আর আমার লিটল মনস্টার আমি নিয়ে যাচ্ছি —তুই সেটা শুধু চুপচাপ দেখছিস, কিছুই করতে পারবি না।”
ওয়াজফানের কথায় ক্যালিয়নের বুকের ভিতর এক তীব্র শূন্যতার সৃষ্টি হয়।

চোখ ভরে আসে উত্তেজনা, ব্যথা আর অসহায়তার মিশ্রণ—
আর অর্ষা, অজ্ঞান হয়ে থেকেও, যেন তার হৃদয়ে ছায়া ফেলে রেখেছে এক অনন্ত অপেক্ষার।
আবারো একবার হেরে গেল সে হারিয়ে ফেলল নিজের রেড ওয়াইনকে এবার হয়তো সারা জীবনের মতো।
অর্ষাকে কোলে তুলে বাইরে বেরিয়ে আসে ওয়াজফান।
বাইরে, হালকা বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে আয়রাক।
তখন তারা এখানে এসে পৌঁছেই ওয়াজফান তাকে বলেছিল—“আমি না ডাকলে ভিতরে ঢুকবি না।”
কারণ এখানেই, নিজের লিটল মনস্টারের সঙ্গে একান্তে দেখা করতে চাইছিল।
যখন তারা বাইরে দাঁড়ায়, ওয়াজফানের মন বলছিল—“এখানে আমার লিটল মনস্টার আছে।”

Death or Alive part 35

তার ঘ্রান চারপাশে মিশে রয়েছে, মনে মনে সবকিছু বলছিল।
এরপর ধীরে ধীরে পা ফেলে ভিতরে ঢুকতেই চোখের সামনে হাজির হলো দাঁড়িয়ে থাকা লিটল মনস্টার —এতদিনের অপেক্ষার চোখ, এতদিনের খোঁজের অভিমান।
ওয়াজফানের হৃদয় মুহূর্তে ধনুকের মতো সঙ্কুচিত হলো।
সঙ্গে সঙ্গে, সে এগিয়ে গিয়ে অর্ষাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মনের ভেতর ঝরে পড়ে দীর্ঘদিনের তৃষ্ণা, ভালোবাসার নিঃশ্বাস আর অবিরাম আবেশ—
“আমার লিটল মনস্টার, এতদিন পরে তুমি আমার কাছে।”

Death or Alive part 37

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here