Death or Alive part 9
priyanka hawlader
সন্ধ্যার আগমন যেন নিঃশব্দ এক চোরাগোপ্তা পদক্ষেপ।
সূর্য তখন পশ্চিমে হেলে পড়েছে।
আকাশের রঙ ক্রমশ লালচে কমলা হয়ে সোনালি আঁচে ঝলমল করছে, ঠিক যেন কারও রক্তাক্ত চোখে পড়েছে শেষ আলো।
বনের বুকজুড়ে আজ এক অদ্ভুত নীরবতা।
নেই কোনো পাখির ডাক, নেই পাতার মৃদু দোল।
প্রকৃতি যেন নিঃশ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে আছে, অপেক্ষায়… এক অজানা ঘটনার।
এই রঙিন মৃত্যু-আভা ছুঁয়ে যাচ্ছে জিনদের শাসক ওয়াজফান কায়াস্থ-এর বাংলোর কাচঘেরা বারান্দা, দেয়ালে খেলা করছে ছায়া।
ভেতরে, বাংলোর এক নির্জন, রহস্যময় কক্ষে বসে আছে ওয়াজফান।
মেঝেতে আঁকা এক গোল বৃত্ত—মধ্যখানে আগুনরঙা সুরক্ষাচক্র।
তার মাঝখানে সোজা পিঠে চক্রাসনে বসে আছে সে, চোখ বন্ধ করে।
সারা শরীর নিঃস্তব্ধ, যেন বহির্জগতের সমস্ত শব্দ থেমে গেছে তার ধ্যানের প্রবল গহ্বরে।
ধীরে ধীরে সে শ্বাস নেয়… ছাড়ে…
জাদুপ্রক্রিয়ার মাঝে তার চারপাশে হালকা ধোঁয়া ঘুরছে—একটা অদৃশ্য রক্ষাবলয়, যা তার ধ্যানকে রক্ষা করে।
ঠিক তখনই…
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একটা মৃদু শব্দ।
কোনো পদক্ষেপ…
অত্যন্ত হালকা, কিন্তু ওয়াজফানের প্রখর ইন্দ্রিয়কে ফাঁকি দেওয়ার সাধ্য কার?
তার কপালে ভাঁজ পড়ে।
চোখ বন্ধ রেখেই সে ঘ্রাণ নিতে থাকে বাতাসের—
ধাতুর গন্ধ, কাঠের ধোঁয়ার গন্ধ…
আর হঠাৎই আসে এক ভিন্ন ঘ্রাণ — মানুষের রক্তমাংসের!
তার ঠোঁট বাঁকা হয়ে ওঠে।
ভেতরের কণ্ঠে গর্জে ওঠে সে নিজের মনেই বলে,
কেউ ঢুকেছে… বাইরের কেউ… এই বাংলোতে।
তাও একজন মানুষ!
কিন্তু সে নড়ছে না।
গভীর ধ্যানে থেকেও অপেক্ষা করছে সঠিক সময়ের—শিকারের সামনে আসার।
পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে…
প্রথমে করিডোর… তারপর মূল কক্ষের কাছে… এখন মাত্র কয়েক কদম দূরত্ব।
ওয়াজফান এবার নিঃশব্দে মুখে বলে উঠে,
আজকে কেউ মরতে এসেছে।
কিছু সময় থেমে থাকার পর…
হঠাৎ সে আবার অনুভব করে নিঃশ্বাসের শব্দ… একেবারে তার পেছনে!
হঠাৎই চোখ দুটো খুলে যায়—রক্তের মতো লাল!
সে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ায়, বজ্রগতিতে পেছনে ঘুরে দাঁড়ায় এবং…
একটা মানুষের গলা শক্ত হাতে চেপে ধরে দেয়ালে ঠেসে দেয়!
ধ্বনি হয়, শরীর আঘাত খায়।
ওয়াজফানের সেই আগুনের মতো চোখে ঝলকে ওঠে হত্যার পিপাসা।
তার কণ্ঠে ভয়ংকর হিংস্রতা—
“তুই কে?! এই বাংলোর ভেতর ঢোকার সাহস পেল কোথা থেকে?!
কে পাঠিয়েছে তোকে? সাধু? না… সেই ক্ষুদ্র মনস্টার?
শ্বাসরুদ্ধ সেই আগন্তুক কোনো কথা বলতে পারছে না, কেবল তার চোখজোড়া বিস্ময়ে ছলছল করছে।
ওয়াজফান ধীরে ধীরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে—
ওয়াজফানের হাতের নিপুণ ও ভয়ঙ্কর চাপের নিচে মানুষটা তখন এক মুহূর্তে নিঃশ্বাসের জন্য হাঁসফাঁস করছে।
দেয়ালের সঙ্গে পুরো শরীরটা গুঁড়িয়ে যাওয়ার মতো হয়ে গেছে।
তার সারা শরীর শিহরিত হয়ে আছে ওয়াজফানের জাদুতে পূর্ণ স্পর্শে।
ঠিক সেই সময়…
ওয়াজফানের চোখ এক ঝলকে চমকে ওঠে।
তার দৃষ্টি মুখের দিকে আটকে যায়—
চোখদুটো… সেই চোখ!
সেই ভ্রু… সেই স্পর্ধা… সেই রহস্য!
এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে ওয়াজফান ঠাণ্ডা স্বরে ফিসফিস করে বলে,
— “তুই… তুই আবার?!
এ যে সেই… ‘Little Monster’… কাল রাতের সেই মেয়েটা!”
তার গলা দিয়ে এক নিম্নস্বরের ভয়ানক হাসি বের হয়।
তোর সাহস তো আগের চেয়েও বেড়েছে… এবার আমার প্রাসাদে ঢুকে পড়েছিস?!
তবে অর্ষা কিছু বলে না।
শুধু স্থির, ঠাণ্ডা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওয়াজফানের চোখে চোখ রেখে।( কিছুটা অবাক হয়ে মনে মনে ভাবে এই লোকটি কি পাগল কাল রাতে আমি তাকে বাঁচিয়েছি আর সে আমার গলা চেপে আছে।)
আর তার এই তাকিয়ে থাকাই ওয়াজফানকে আরও উত্তেজিত করে তোলে।
ওয়াজফান বলে ওঠে —তুই চোখ নামাস না? এত বড়ো সাহস… আমার দিকে তেরচা না, সোজা তাকাচ্ছিস?!”
তার চোখের লালচে রঙ যেন এবার জ্বলন্ত হয়ে ওঠে।
সে এবার হাতের চাপ দিগুণ করে।
“চোখ নামা বলেছি!”
তার কণ্ঠে বজ্রনাদ, আর হাতের আঙুল যেন ঢুকে যেতে চায় ওই নরম গলায়।
এবার অর্ষার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
সে হাত-পা ছুঁড়তে থাকে, দম নিতে না পেরে নিজের শরীরটাকে ছটফটাতে থাকে।
কিন্তু ওয়াজফানের মুখে কোনো করুণা নেই।
বরং তার কণ্ঠে শোনা যায় রক্ত-পিপাসু উত্তেজনা—
আমার উপর যাদু! আমায় ধোঁকা?! তুই জানিস না কার সামনে এসেছিস…
অর্ষা চোখে এবার আতঙ্কের ছায়া খেলে যায়।
সে ওয়াজফানের হাত থেকে ছুটে বাঁচার জন্য প্রাণপণে লড়তে থাকে। তবে এত জোরে গলা চেপে ধরে রাখার কারণে সে মুখে কিছুই বলতে পারছে না।
কিন্তু ওয়াজফান নিস্তব্ধ, যেন এক পাষাণ মূর্তি।
তার হাত যেন পিশাচের মতো চেপে ধরে রেখেছে সেই গলা।
অর্ষার ঠোঁট এবার কাঁপে… গলার আওয়াজ বেরোয় না… চোখ ঝাপসা হয়ে আসে…
ওয়াজফান তাকে চেপে ধরে বলে ওঠে,
তুই যদি আবার জাদু করে থাকিস, তবে এবার তোকে জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলবো।
ওয়াজফানের হাত তখনো শক্ত করে চেপে আছে অর্ষার গলায়।
সে যেন ভুলে গেছে, তার শিকার একটা মানুষ—শুধু একটা মেয়েমানুষ।
অর্ষার শরীর ছটফট করছে… নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে… চোখ কাঁপছে।
তার ঠোঁটজোড়া হা হয়ে আছে শ্বাস নিতে না পেরে
মুখখানা লালচে, ঠোঁট দুটি গোলাপি… তিরতির করে কাঁপছে।
আর ঠিক তখনই—
ওয়াজফানের চোখ আটকে যায় অর্ষার ঠোঁটের ওপর।
এক সেকেন্ড… দু’সেকেন্ড… সময় যেন থমকে যায়।
তার মস্তিষ্কে ঝড় বয়ে যায়।
এই ঠোঁট… যদি আমি একবার কামড়ে খেয়ে ফেলতে পারতাম…
একবার ছুঁয়ে মাখিয়ে নিতে পারতাম নিজের তৃষ্ণায়…
তাহলে কি আমার ভেতরের আগুন একটু শান্ত হতো?
সে থ হয়ে যায়।
তার ভেতরের হিংস্র পশুটি থমকে দাঁড়ায় এক অদ্ভুত আকাঙ্ক্ষার সামনে।
তার রক্তের ভিতরে জেগে ওঠে পিশাচী আকর্ষণ…
নরম… কাঁপতে থাকা… দমবিহীন সেই ঠোঁটজোড়া তাকে ক্ষণিকের জন্য অভিশপ্ত মোহে ফেলতে চায়।
এই ভয়ঙ্কর চিন্তা মাথায় আসতেই যেন নিজের ভেতরেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ওয়াজফান।
সে সঙ্গে সঙ্গে অর্ষাকে ছেড়ে দেয়।
থ্যাপ করে অর্ষা নিচে পড়ে যায়।
গলা ধরে সে হেঁচকি দিয়ে কাশতে থাকে—নিঃশ্বাস নিতে নিতে কেঁপে ওঠে তার সারা শরীর।
চোখ দিয়ে পানি ঝরছে, ঠোঁটের কোণে ব্যথার ছায়া।
ওয়াজফান পেছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে, মুখ আড়াল করে ফেলে নিজের অস্থিরতা।
তার কণ্ঠ এবার আর গর্জন নয়—বরং সেই ভয়ভীতিকে চাপা দেওয়া দুর্বল রাগ—
এখনই চলে যা এখান থেকে…
নইলে তোকে মেরে ফেলতে এক মুহূর্তও সময় লাগবে না।
অর্ষা কিছু বলতে পারে না, শুধু কাশতে কাশতে উঠে দাঁড়ায়।
ওয়াজফান আরও এক ধাপ পেছনে সরে গিয়ে ফিসফিস করে ওঠে, যেন নিজেকেই বলে—
আর কখনো আমার সামনে আসবি না…
আসলে… আমি তোর মুখ… এই চোখ… এই ঠোঁট… সহ্য করতে পারবো না…
আর সহ্য না করতে পারলে, আমি তোকে… মেরে ফেলবো!
তার চোখ লালচে, নিঃশ্বাস ভারী।
অর্ষা কাঁপতে কাঁপতে পেছনে ফিরে… তারপর দৌড়ে বেরিয়ে যায় সেই বাংলোর ভয়ানক দরজা পেরিয়ে।
পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে ওয়াজফান—
হাতদুটো কাঁপছে।
আর তার বুকের ভেতরে বাজছে একটা অজানা প্রশ্ন—
ওই ঠোঁটের কামড় কি পাপ হতো, না পরিত্রাণ?
পরবর্তী মুহূর্তে, নিজের দম নেবার শব্দে ওয়াজফান হঠাৎ থেমে যায়।
তার চোখ ছায়ায় ঢাকা, নিঃশ্বাস ভারী, আর মুখে এক অদ্ভুত রকম বিভ্রান্তি।
সে ধীরে ধীরে পেছনে সরে এসে নিজেই নিজের মুখে হাত রাখে। যেন নিজের ভিতরের কিছু একটা থেকে নিজেকে আলাদা করতে চাইছে।
না… না… আমি কেন…!” — ফিসফিস করে ওঠে সে।
তার চোখে লালচে রক্তজবার মতো ঝলক। সে আঙুলে রক্ত দেখে ভয় পায় না, বরং আরও উন্মাদ হয়ে ওঠে।
সে মেয়ে… না, সে সাধারণ নয়।” ওয়াজফান গম্ভীর গলায় বলতে থাকে নিজের সাথেই।
সে এক কালো জাদুকরী… তার চোখ দুটো… সেই চোখেই লুকিয়ে আছে অশুভ মায়া।
সে আমায় বশ করতে চায়… আমার মতো জিন এর বাদশাকে!— এবার গলা উঁচু করে বলে ওঠে সে।
সে ধীরে ধীরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজের প্রতিফলনে তাকায়… তারপর আঙুল তুলে নিজের বুকের মাঝ বরাবর নির্দেশ করে।
এইখানে আছে ওয়াজফানের জিন হৃদয়… আর তুই ভেবেছিস, তুই সেটা আয়নার মতো মিথ্যে রূপ দিয়ে জয় করে নিবি?
তার ঠোঁটে টান পড়ে। এক ভয়ংকর শয়তানি হাসি।
তুই ভুল করেছিস মেয়ে। তোর চোখের সেই ছলনা আমার উপর চলবে না।
যদি সামনে পাই, যদি আবার তুই আমার চোখে চোখ রাখিস…— এবার চোখ লাল হয়ে ওঠে ওয়াজফানের।
…তাহলে তোর জন্য অপেক্ষা করছে ওয়াজফানের নরক।
তার চারপাশে হাওয়ার তীব্র ঘূর্ণি শুরু হয়। ঝড়ের মতো হু হু শব্দে দেয়াল কেঁপে ওঠে। সে চোখ বন্ধ করে ডান হাতটা সামনে তোলে—আঙুলের ফাঁকে আগুনের রেখা।
তুই আমাকে বশ করার চেষ্টা করেছিস—এখন আমি দেখাবো, কীভাবে জিনের বাদশা তার শিকারকে শাস্তি দেয়।
তার চোখে শিকারি উন্মাদনা। আর ঠোঁটে… সেই ভয়াবহ, শয়তানি হাসি।
বাংলোর দোতলার করিডোর থেকে যেন ঝড়ের বেগে নিচে নেমে আসে অর্ষা। তার নিঃশ্বাস দ্রুত—হাঁপাচ্ছে। চোখে এক অদ্ভুত ভয়, ঠোঁটের কোণে কাপুনি। সে যেন কারও চোখ এড়িয়ে পালাতে চাইছে। চারপাশের নিস্তব্ধতা তাকে আরও বেশি অস্থির করে তোলে।
বাংলোর গেটের বাইরেই অপেক্ষায় ছিল মিরা। অর্ষাকে হঠাৎ এতটা অস্বাভাবিকভাবে ছুটে আসতে দেখে মিরার মুখে বিস্ময় ফুটে ওঠে।
তুই এমন করে দৌড়ে আসছিস কেন অর্ষা? হাঁপাচ্ছিস কেন রে?”
মিরার প্রশ্নের জবাব দেয় না অর্ষা। চোখে তাকিয়ে থাকে মিরার দিকে, যেন কিছু বলতে চাইছে কিন্তু জিভ আটকে গেছে। কেবল সামনে এসে মিরার হাতটা হালকা করে ধরে ফিসফিস করে বলে,
চল… এখান থেকে বেরিয়ে যাই এখনই। আর এক মুহূর্তও এখানে থাকতে পারব না। এখানে কোন ভূত থাকে না থাকে এক পাগল।
মিরা কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু অর্ষার চোখের ভাষা তাকে চুপ করিয়ে দেয়। ও চোখে ভয় লুকানো নেই—ও চোখে ভয় স্পষ্ট, গা শিউরে ওঠার মতো ভয়।
কোন প্রশ্ন না করে মিরা শুধু মাথা নেড়ে অর্ষার হাত ধরেই হাঁটতে শুরু করে।
পিছনে বাংলোর রহস্যময়তা আর অজানা অন্ধকার রেখে দুজনে বেরিয়ে পড়ে। পথের মাঝে বাতাসে কেমন একটা অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে—মাঝেমাঝে পেছনে তাকায় অর্ষা, যেন কেউ পেছন থেকে অনুসরণ করছে।
মাঝপথে হঠাৎ অর্ষা থেমে দাঁড়ায়। গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
শোন মিরা, তুই সোজা বাসায় ফিরে যা। আমি একটু বাড়ি যাব… মাথাটা ধরে আছে। একা থাকতে চাই একটু।
মিরা চিন্তিত গলায় বলে,
তুই ঠিক আছিস তো?”
হ্যাঁ… শুধু একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।
আর কিছু না বলে অর্ষা আবার হাঁটতে শুরু করে। তার পেছনে দাঁড়িয়ে মিরা শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অর্ষার ভেতরে কী যেন একটা বদল এসেছে—একটা অদৃশ্য ছায়া যেন তার চারপাশে লেপ্টে আছে।
এখনো পর্যন্ত সে কিছুই বলেনি, কিন্তু মিরা বুঝে গেছে… কিছু একটা ঘটেছে। ভয়ঙ্কর কিছু।
রাতের গভীরতা যেন ভয় আর রহস্যের চাদরে মোড়া। চারদিক নীরব, নিস্তব্ধ, কেবল মাঝে মাঝে গাছের পাতায় বাতাসের দোল আর দূরে কোথাও রাতচরা পাখির ডাক। সেই নিস্তব্ধতাকে ভেঙে হঠাৎ ওয়াজফান আয়রাককে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
“চলো, রেডি হও। এখনই সময়। আজ রাতেই সেই গুহার সাধু আসবে। আমাদের আর দেরি করা চলবে না।
আয়রাক কিছু না বলে মাথা ঝাঁকায়। তার চোখে আজ ভিন্ন এক তীব্রতা। তারা দু’জনই প্রস্তুত হয়—কালো পোশাকে, কোমরে বাঁধা বিশেষ ছুরি, আর কিছু গোপন অস্ত্র। আয়রাক তার ডান হাতে বাঁধে রক্ত-সুতোর ব্রেসলেট, যার প্রতিটা সুতো তান্ত্রিক শক্তিতে বাঁধা। ওয়াজফান তার চোখে পরে লাল কাঁচের লেন্স, যাতে কোনো জাদু তার চোখকে প্রতারিত করতে না পারে।
এরপর তারা দু’জন উড়ে যায়। কুয়াশায় মোড়ানো পাহাড়ের দিকে, সেই গুহার দিকে যেখানে কুখ্যাত সেই সাধু আজ রাতেও আবার ডেকে আনবে অন্ধকারের শক্তি।
পাহাড়ের গা বেয়ে নিচু একটা গুহা। তার সামনে আগুন জ্বালিয়ে, এক গোল সার্কেলের মাঝে বসে আছে এক বুড়ো সাধু। তার চোখ অদ্ভুত লাল, সাদা চুল এলোমেলো, কণ্ঠে দুর্বোধ্য মন্ত্র—গম্ভীর ও শীতল। বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে, যেন প্রকৃতিও বুঝে নিয়েছে এখানে কিছু অস্বাভাবিক ঘটছে।
সাধুর চারপাশে ছড়ানো আছে হাড়, মাথার খুলি, আর রক্তমাখা তাবিজ। সে মাটিতে ছাই দিয়ে আঁকা এক যন্ত্রের উপর বসে মন্ত্র পড়ছে। গলার স্বরে বিষ, হাতে ধরা ছড়িতে আগুনের ঝলক। বাতাসের গায়ে কাঁপন।
ঠিক তখনই, এক ঝলক আলোয় আকাশ ছেঁড়ে ওয়াজফান আর আয়রাক গুহার সামনে এসে নামে। তাদের পা ছোঁয়ার সাথে সাথেই সাধু থেমে যায়, চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে।
ওয়াজফান ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“তুই অনেক দূর এগিয়ে গেছিস, বুড়ো। এবার শেষ সময় এসেছে তোর। অন্ধকারের সাথে খেলা করা আমার এলাকা না, তুই ভুল জায়গায় ভুল খেলা খেলছিস।”
সাধু দাঁড়িয়ে পড়ল। তার চোখে ভয় নেই, আছে এক বিকৃত গর্ব। সে বলে,
ওয়াজফান… তোমাকে আসতে হবে এটা আমি জানতাম। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে… তোমার ভাই এখন আমার নিয়ন্ত্রণে। এবার তুমি কিছুই করতে পারবে না…
আরও কিছু বলার আগেই ওয়াজফান ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর—একটানে তার হাতের ছড়ি ছুড়ে ফেলে, বুক বরাবর এক ভয়ংকর ঘুষি মারে। আশেপাশের আগুন নিভে যায়। সাধু মাটিতে পড়ে কাঁপে, আর আয়রাক ঝুঁকে পড়ে তার চোখের ভিতর দেখে এক কালো কুঁচকানো অশরীরী ছায়া।
“তুই জাহান্নামে যা…” – বলে ওয়াজফান তার বুকের উপর চাপিয়ে বসে একসাথে তিনটি মারাত্মক জাদু আঘাত করে। আলো ঝলসে উঠে গুহার ভেতর, বাতাসে রক্ত ও ছাইয়ের গন্ধ মিশে যায়।
সাধুর শরীর কাঁপতে কাঁপতে স্তব্ধ হয়ে যায়। মাটি ফেটে তার চারপাশে কালো ধোঁয়া উঠতে থাকে—যেন তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের অতল গহ্বরে।
ওয়াজফান দাঁড়িয়ে পড়ে, গভীরভাবে নিঃশ্বাস নেয়, তারপর নিচু গলায় বলে,
আমার ভাইকে আটকে রেখে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করার সাহস দেখিয়েছিলি… এবার বুঝলি বাদশাকে ছোঁয়ার ফল কী!”
তার ঠোঁটে খেলে যায় এক শয়তানি হাসি, আর চোখে জ্বলে ওঠে নীরব প্রতিশোধের আগুন।
ওয়াজফান ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সেই সাধুর ঝোলার দিকে , যেখানে সে অনেকক্ষন আগেই একটা রহস্যজনক বোতল দেখেছিল। তার মনে পড়ে যায় তার জাদু শক্তি প্রয়োগ করে সে দেখেছিল সেই বিভীষিকাময় রাত—যেদিন এই ভয়ঙ্কর সাধু তার ভাই জ্যাইমকে আটকে রেখেছিল ঐ জাদুর বোতলে। তার হৃদয় কেঁপে ওঠে।
চারদিক নিস্তব্ধ, বাতাস ভারী, যেন প্রকৃতি নিজেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আছে। ভাঙা পাথরের আড়ালে পড়ে থাকা ধূলিমাখা সেই বোতলটি যেন অন্ধকারে ঝিকমিক করে উঠল এক মুহূর্তের জন্য। ওয়াজফান এগিয়ে যায়, ধুলো মোছে, বোতলটা হাতে তুলে নেয়।
একটা মুহূর্ত থমকে থাকে— এরপর বলে,
জ্যাইম … আমি এসেছি তোকে নিতে…
সে ধীরে ধীরে বোতলের মুখ খুলে দেয়।
এক অদ্ভুত নীল আলো বেরিয়ে আসে। বাতাস কেঁপে ওঠে। সেই আলোর মাঝখান থেকে ধীরে ধীরে রূপ নেয় এক মানব আকৃতি—তা-ই জ্যাইম!
শরীরটা কাঁপছে, চোখ দুটো আধা-বন্ধ, ঠোঁট ফাঁকা।
ভাই… ওয়াজফান…ফিসফিস করে ওঠে জ্যাইম, কিন্তু নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না।
তার শরীর থরথর করে কাঁপে, পা দুটো দুর্বল হয়ে আসে, আর শেষমেশ সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ভাইয়ের বুকে।
সে আর সময় নষ্ট করে না।
ভাইয়ের নিস্তেজ দেহটিকে কোলে তুলে, সে ছুটে যায় সেই পুরনো বাংলোর দিকে—যেখানে তারা এখন থাকে তার ইচ্ছে ছিল ভাইকে নিয়ে সোজা চলে যাবে নিজের দুনিয়া কিন্তু ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে সে আবার সেই বাংলোতেই ফিরে আসে।
অর্ষা নিজের রুমের জানালার পর্দাটা নামিয়ে দিল ধীরে ধীরে। বাইরের অন্ধকার যেন ভেতরের অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়লেও তার চোখে এখনো ঘুম নেই। বারবার সেই বিকেলের ভয়ংকর ঘটনার দৃশ্য ভেসে উঠছে মনে। হৃৎপিণ্ডটা যেন এখনো অতীতের আতঙ্কে ধুকধুক করে চলছে। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে, ঠোঁটের কোণে গোপন রাগের রেখা স্পষ্ট।
নিজের মাঝে বিড়বিড় করে বলতে শুরু করলো, কণ্ঠে একধরনের আত্মরক্ষা আর অভিমান মেশানো ঝাঁজ—
শুধু তোমার সঙ্গে পেরে উঠিনি… না হলে বুঝিয়ে দিতাম, অর্ষা কাকে বলে!
তার চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে রাগে আর আহত অহংকারে।
“তোমার মাথাটা পুরোপুরি সাইকো! আমি বাঁচানোর পরও আমাকে মারতে এলে? এটাই কি কৃতজ্ঞতা? এই প্রথম, হ্যাঁ, এই প্রথম বার আমি কারো জন্য একটু নরম হয়েছিলাম, তাকে সাহায্য করেছিলাম… আর সে আমায় আগাত করলো কিন্তু মনে রেখো, আমি অর্ষা, কাউকে এত সহজে ছেড়ে দিই না।”
তার আঙুলের নখ বিছানার চাদর আঁচড়ে ধরছে, যেন নিজের রাগ সংবরণ করতে চাচ্ছে।
“আজ শুধু হঠাৎ করে… হঠাৎ করে আমার সাথে প্রথমবার এমন কিছু ঘটেছিল তাই আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তাই ছেড়ে দিলাম। কিন্তু…
তার গলার স্বর আচমকা কঠিন হয়ে যায়—
…আবার যদি কখনো আমার সামনে পড়ো, তবে তোমার খবর আছে। সেই সময় আমি আর পিছিয়ে আসবো না। আমি নিজেই তোমাকে শেষ করে দেব!
সে তুমি আমার থেকে যতই লম্বু হও না কেন অর্ষা কাউকে ভয় পায় না।
তার বুকটা ওঠানামা করছিল দ্রুত। যেন কথাগুলো বলেই নিজের মনকে শান্ত করছিল সে। আস্তে আস্তে চোখদুটো ভারি হয়ে এলো, দেহ ক্লান্ত, মাথা ঘোরাচ্ছে… সেই ভয়, রাগ আর অদ্ভুত অনুভবের ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে যেতে যেতে সে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
জানালার বাইরে তখনো একফালি চাঁদ নীরবে তাকিয়ে আছে ভেতরের সেই দুঃখী অথচ দুর্ধর্ষ মেয়েটার দিকে।
অন্ধকারে ডুবে থাকা ঘরটার নিস্তব্ধতা ভেঙে যায় হালকা শ্বাসের শব্দে। ওয়াজফান ধীরে ধীরে জ্যাইমকে একটি নরম, গাঢ় মখমলের চাদরপাঁছানো বিছানায় শুইয়ে দেয়। জ্যাইমের গায়ে কিছুটা ক্ষত হয়ে আছে, ক্ষতচিহ্নগুলো ফ্যাকাসে রঙে ফেটে আছে। চোখ দুটো বন্ধ, নিঃসাড় শরীর নিস্তেজভাবে পড়ে আছে ওয়াজফানের হাতে। তার মুখে কোনো ব্যথার ছাপ নেই, তবে সেই নিস্তব্ধতা ও নির্জীবতা যেনো আরো বেশি যন্ত্রণা ছড়িয়ে দেয়।
ওয়াজফান এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তার দিকে। এরপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সে নিজের হাত দুটো চোখের সামনে তুলে ধরে—তার হাতদুটো হঠাৎ জ্বলে ওঠে হালকা নীল আলোয়। সেই আলোর স্রোত জ্যাইমের গায়ে ছড়িয়ে যায়, তার ক্ষতগুলো যেন আগুনের স্পর্শে গলে যেতে থাকে। মাংসের ছেঁড়া অংশগুলো ধীরে ধীরে জোড়া লেগে যায়, রক্ত থেমে যায়, চামড়া নতুন করে গজাতে শুরু করে। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য—যেনো সময়কে পেছনে নিয়ে গিয়ে শরীরকে আবার গড়ে তোলা।
তবুও জ্যাইমের চোখ খোলে না।
তুমি এখনো অনেক দুর্বল…” ফিসফিস করে ওয়াজফান, “তোমার শরীর সারিয়ে দিলাম… কিন্তু তোমার আত্মা এখনও ঘুমিয়ে আছে।
সে তার কপালে একবার হাত রাখে, নরমভাবে, যেন গভীর স্নেহের ছোঁয়া। তারপর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় এবং ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
নিজের কক্ষে ফিরে এসে ওয়াজফান থমকে দাঁড়ায় জানালার সামনে। রাতের আকাশ নীল-কালো রঙে ঢেকে আছে, দূরের পাহাড়ের গায়ে অন্ধকারে সোনা রঙের ছায়া পড়েছে। শীতল বাতাস জানালার ফাঁক গলে এসে তার মুখ ছুঁয়ে যায়, কিন্তু তার ভেতরের অস্থিরতাকে একচুলও শান্ত করতে পারে না।
তার মাথায় তখনও ঘুরছে সেই মুখটা…
সেই মানবী…
সেই রাতেই, চাঁদের আলোয় ঢাকা জঙ্গলের ধারে। যে তার হাতে নিজের স্কার্ফ বেঁধে দিয়েছিল, আর আজ বিকেলে… যখন সে প্রায় মেরে ফেলতে যাচ্ছিল তাকে—তখনো সেই ঠোঁট কাঁপছিল ভয়ে, তবুও সে চোখ নামায়নি।
এই কেমন মানবী?
তুই আমার চোখে কেন আটকে যাচ্ছিস বারবার? সে একরকম ফুঁসে ওঠে নিজের মনে, গলার স্বর নিচু, কিন্তু ক্রুদ্ধ।
তার দুই হাত একসাথে করে সামনে তুলে ধরে। এক মুহূর্তেই তার আঙুলের মাঝ থেকে আগুনের শিখা উঠতে শুরু করে। সেই শিখা কয়েক সেকেন্ডে গড়ে তোলে একটি গোল, আগুনে মোড়া আলোকবল—একটা কাচের বলের মতো দেখতে, কিন্তু তার ভেতরে কাঁপছে আগুন আর জাদু।
ওয়াজফান তার দু’চোখ বন্ধ করে সেই বলের মাঝে ফিসফিস করে মন্ত্র পড়ে—“নিগ্রা ইসফিরা… লুমিস …”
বলটা হঠাৎ এক ঝলক আলো ছড়িয়ে দিয়ে স্থির হয়ে যায়, এবং তার ভেতরে ফুটে ওঠে একটি মুখ…
অর্ষার মুখ।
ঘুমন্ত অবস্থায় সে শুয়ে আছে, নিঃশ্বাস ফেলছে শান্তভাবে, যেন কোনো ঝড় তাকে ছুঁতে পারেনি। তার চুল এলোমেলো, গালের পাশে পড়ে আছে, আর ঠোঁট—সেই ঠোঁট একটু একটু করে কাঁপছে। হয়তো স্বপ্ন দেখছে, হয়তো দুঃস্বপ্ন।
ওয়াজফান কাঁচের বলটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে । তার চোখ নড়ছে না, সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওই মুখটার দিকে।
কেন এতটা গভীর মনোযোগে?
সে নিজেও জানে না।
শুধু জানে, এই মুখটা কিছু একটা খুলে দিয়েছে তার ভেতরে। যেন হাজার বছর ধরে যা পাথরের মতো জমে ছিল কিছু । যে ওয়াজফান ছিল যোদ্ধা, যার হৃদয়ে দয়া ছিল না, অনুভূতি ছিল না—সে আজ এই মানবীর ঘুমন্ত মুখ দেখে দম বন্ধ করে তাকিয়ে আছে।
“তুই কী করছিস আমাকে…” ওয়াজফান ফিসফিস করে উঠে।
বলটা তার হাতে জ্বলছে।
অর্ষার ঠোঁট একটু নড়ে ওঠে… যেনো কিছু বলতে চায়।
ওয়াজফানের বুকের ভেতরটা ধক করে কেঁপে ওঠে।
কিন্তু পরমুহূর্তে,,
ওয়াজফান হঠাৎই থেমে যায়। তার গাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, চোখদুটো রক্তিম আগুনের মতো জ্বলছে। হাওয়ার মধ্যে যেন এক অদৃশ্য বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। তার চোখে এখন আর কোনো দ্বিধা নেই, নেই কোনও মানবিকতা—শুধু হিংস্রতা, প্রতিশোধ আর তীব্র ঘৃণা।
সে তার হাতে থাকা বলটার থেকে চোখ সরিয়ে । এক ঝটকায় সে বলটাকে আছড়ে মারে সজোরে মেঝেতে পড়ে ঝনঝন করে শব্দ হয়। বলটা ফেটে যায় মনে হচ্ছে ভেতরের সমস্ত অভিশাপ ছিটকে পড়ছে চারপাশে। একটা বিকট আওয়াজে আশপাশের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। আর তখনই সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল—
“তুই কি ভেবেছিস… এইভাবে আমাকে বশ করে ফেলবি? তুই আমাকে পেতেও পারবি না, শেষও করতে পারবি না। তুই আমার জীবনে হস্তক্ষেপ করে তোর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছিস, মেয়ে!”
তার কণ্ঠে যেন বজ্রপাতের মতো গর্জন। প্রতিটি শব্দে জ্বলে উঠছে প্রতিহিংসার আগুন। সে এক পা এক পা করে সামনে এগিয়ে আসে, ঠোঁটে শয়তানি এক হাসি, চোখে নৃশংস দৃষ্টির ছায়া।
“তুই বুঝতেছিস না, আমি এখন কেমন খেলায় নামছি। ঐ সাধুকে তো আমি শেষ করেই ফেলেছি। তবে তোর জন্য আমি রেখেছি ভিন্ন এক খেলা। ধীরে ধীরে, পুড়িয়ে, পয়জন দিয়ে তোকে শেষ করব আমি। যেন তুই প্রতিটি মুহূর্তে ভাবিস—এই যন্ত্রণার চেয়েও বড় শাস্তি তোকে কেউ দিতে পারত না!”
তার গলা আরও নিচু হয়, যেন কানের পাশে ফিসফিস করে বলে উঠছে—
“তুই কাঁদবি, ভেঙে পড়বি, রাত্রির অন্ধকারে বুক চাপড়ে বলবি—কেন আমি এই নরকের আগুনে নামলাম। কেন আমি তার জীবনে পা রাখলাম, যে আগুনে নিজেও পুড়ে, অন্যকেও জ্বালিয়ে মারে।”
তার ঠোঁটে হাসির রেখা, কিন্তু সেই হাসি যেন দুঃস্বপ্নের মতো। অন্ধকারের গহীনে হারিয়ে যাওয়া কোন দানবের মতো সেই হাসিতে প্রতিফলিত হলো তার শেষ বাক্য—
“My f**** little monster…”**
চারপাশে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে এলো, যেন প্রকৃতি নিজেও স্তব্ধ হয়ে গেছে এই ভয়ঙ্কর প্রতিশোধের দৃশ্যের সামনে।
এরপর ওয়াজফান গভীরে গলা কণ্ঠে বলে উঠল—
“আয়রাক!”
একটা অদৃশ্য ছায়ার ভেতর থেকে তখন উঠে আসে আয়রাক —ঠান্ডা, হিসহিসে চোখে জ্বলছে দহন। ওয়াজফান তার দিকে তাকিয়ে বলল,
Death or Alive part 8
“তৈরি হও। এখনই ফিরতে হবে আমাদের দুনিয়ায়। অনেক কাজ বাকি। অনেক বিচার অসমাপ্ত।”
আয়রাক মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল, আর ওয়াজফান তার কালো চাদরটা ছড়িয়ে দিল আকাশের দিকে। মুহূর্তেই চারদিকের আলো নিভে গেল। শুরু হলো এক নতুন অন্ধকারের যাত্রা…
