flesh last part 

flesh last part 
Papilion skyscraper

দ্বে-ই- হিউন এর মৃ’ত লা’শ দক্ষিণ কোরিয়ায় নেয়া হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে।
দেশের সেরা ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ায় তার মৃত্যুতে অনেক উচ্চ ক্ষমতসীন ব্যক্তিরা এসেছেন।
আমি, নাজিম শেইখ, ওয়াটসন সবাই দ্বে-ই হিউন এর কফিনের সামনে দাড়িয়ে আছি।
ওয়াটসন আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আরো একজন আপন জন চলে গেলো, উইলহেম স্যার।”
“প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আপনার বন্ধু হওয়ায় আপনি এখনো বেচে আছে,উইলহেম স্যার।”

ওয়াটসনের মুখে আমাকে নিয়ে এমন পরনির্ভরশীল বাক্য শুনে আমার অসহ্য লাগছিলো।
আমি কিছুই বললাম না, আমার সামনে প্রেসিডেন্ট আলবার্ট দাঁড়িয়ে আছে।
আমি তার দিকে তাকালাম, সেদিন ৯৩ জন ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একসাথে হোটেলের অডিটোরিয়াম রুমে ফিলাকে দিয়ে যে ইলিউশান তৈরি করেছিলাম,আলবার্ট না থাকলে এটা সম্ভবই হতো না। আলবার্ট সবকিছুর ব্যবস্থা সেদিন করেছিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আলবার্ট এখনো আমার সঙ্গেই আছে।
যেভাবেই হোক আমার প্রতিমূর্তি আমি বানাবোই।
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ খেয়াল করে দেখি, ওয়াটসন পাশে নেই।
সেখান থেকে বের হয়ে একটু সামনে আসতেই দেখলাম,ওয়াটসন কাউকে গুলি করেছে।
লাশ নিচে পড়ে আছে,ওয়াটসন আমার দিকে তাকিয়ে বললো “এটা আপনিও হতে পারতেন।”
আমি কোনো কথা বাড়ালাম না। আলবার্ট আমি নাজিম শেইখ সবাই একই ফ্লাইটে আমেরিকা ফিরেছি। বিমান থেকে নেমে বিদায় নিয়ে আমি একাই বাসায় ফিরলাম।

অন্যদিকে ফিলা হসপিটাল থেকে ফিরছে,
সেদিন সমুদ্রের পাড়ে ফিলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যখন সুর্যাস্ত দেখছিলো,তখন পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন ড. শ্রেয়াস। অনেকেউ বলে, ড. শ্রেয়াস ইশ্বরের প্রতিরুপ।
ফিলার হারিয়ে যাওয়া অদ্ভুত অনুভুতির সব রঙ যেন ড. শ্রেয়াস ফিলার গায়ে মাখিয়ে দিতেই এসেছেন।
ফিলার মাথায় হাত রেখে শ্রেয়াস বলতে লাগলো, “তোমার অপূর্ণতা ভরাট হয়ে উপচে পড়ছে,এবার ফিরে পাওয়ার পালা।”

ফিলা শ্রেয়াস এর দিকে তাকালো,ফিলার মনে হলো যেন সৃষ্টিকর্তা সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তার কথার প্রতি সুরেই যেন আশ্বাসের মেলা বসে গিয়েছে।
এরপর ফিলাকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়।
ফিলা আবার স্বাভাবিক গঠনে ফিরবে ভাবতেই তার উল্লাস যেন আকাশ ছুঁই ছুঁই।
ফিলা স্নান করতে এসে, গোলাপ ফুলের নির্যাস আর দুধ মিশিয়ে নিয়েছে।
গত কয়েক বছরের বিশ্রী অযত্ন গুলো ফিলা আজ যেন ধরে ধরে নিজের মন,মস্তিষ্ক আর শরীর থেকে পরিষ্কার করছে।
এরপর সুন্দর পোশাক গায়ে জড়িয়ে ফিলা হসপিটালে আসে। তাহলে এবার নিশ্চই সব স্বপ্ন পূরণ হবে ফিলার।
ড. শ্রেয়াস এর রুমে ঢুকে ফিলা।

ড. শ্রেয়াস অদ্ভুত এক পদ্ধতির কথা ফিলাকে জানালো।
ফিলার যো’নির পুনরায় পূর্ণরূপ এনে দিতে,লাগবে অন্য কোনো মেয়ের যো’নি।
সদ্য মৃ’ত যার কোষ এখনো কর্মঠ অথবা জীবিত কোনো মেয়ের থেকে যো’নি কে’টে নিতে হবে।
ফিলা ড. শ্রেয়াসের কথা শুনে ঘামছিলো,হঠাৎ চুপসে গেলো। ফিলা মূহুর্তের জন্যে আবার নিজের সেই দিনের কথা চোখ বুঝে মনে করতে লাগলো।

ফিলা এতটাই কোমল ছিলো,মৃ’ত কোনো মেয়ের যো’নি কা’টা হবে এটা ভেবেও কেঁপে উঠেছিলো।
কোনো মেয়ের দেহের পঁচন-গলন হবে অপূর্ণতার সাথে,এটা হতেই পারে না।
অন্য মেয়ের যো’নি যদি ফিলা ব্যবহার করে,তাহলে ফিলা এবং টয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো তফাৎ রইলো না।
ফিলার অপারেশনের ব্যাপারে ফিলা নিজেই অস্বীকৃতি জানালো।
ড. শ্রেয়াস হেসে দিলেন,ফিলার এমন মহানুভবতা দেখে শ্রেয়াস খুশি হয়ে গিয়েছেন।
ফিলা চোখে সাধারণ হাসি নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে এলো।
আশা বা প্রত্যাশিত আকাঙ্খা ভেঙে গেলেই মানুষ ম’রে যায়,হয়তো এই ভিত্তিতেই মানুষ বেচে থেকেও অনেক বার মরতে থাকে।।

তারপর আরো এক বছর কেটে যায়,
আমি আমার প্রতিমূর্তি বানানোর প্রক্রিয়াটাও চালাচ্ছি।
অনেক ঝড় তুফান পার করেই নিজের প্রতিমূর্তির জন্যে মাংস সংগ্রহ করছি।
আমাকে বানাতেই হবে।
রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম।
হঠাৎ মাথায় কেন যেন অদ্ভুত নেশা চেপেছে- কাউকে খু*ন করে তার রক্তে হাত ভেজাতে ইচ্ছে করছে,উন্মাদ উন্মাদ লাগছে।

মনে হচ্ছে মাংসের গন্ধ নাকে না পেলে আমি এখানে ঢলে পড়ে যাবো।।
কোনো কিছু না ভেবেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলাম, গাড়ি চালাচ্ছিলাম,গভীর রাত,ফাঁকা রাস্তা।
এরপর আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থার চিফ এভিল ক্রিশ্চান এর বাসায় সামনে গাড়ি থামিয়েছি,সামনে সিকিউরিটি, কোনো ভাবেই আমাকে ঢুকতে দিবে না,আমি নিশ্চিত।
এভিল ক্রিশ্চান আমার মতোই একক জীবনযাপন করে।
আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে গেইটের সামনে দাঁড়ালাম
,ফরাসীর দেয়া সেন্ট ব্যবহার করতেই সবাই জ্ঞান হারিয়ে ফেললেই,এভিলকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে আসলাম।
সারা রাত ধরে নিজের ল্যাবে এভিলকে টুকরো টুকরো করলাম।
এভিলকে বেহুশ করেই আমি এভিলের দেহের টুকরো করেছিলাম। এরপর হাড় থেকে মাংস গুলো ছাড়িয়ে প্রতিমূর্তিতে লাগাচ্ছিলাম।

ক্লান্ত লাগছিলো,তাই গোসল করে নিলাম।
কিচেনে ঢুকে খাবার নিয়ে খাচ্ছিলাম,
কল বেজে উঠলো, “হ্যালো উইলহেম,কোনো এক কমিউনিটি সেন্টারে সামরিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে,প্রস্তুত হও।”
শুনেই দাঁড়িয়ে গেলাম,অদ্ভুতভাবে সাহসগুলো কোথায় থেকে যেন দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে মনে ভেতর জড়ো হতে লাগলো।।
খুশি লাগছিলো।।
ছয় দিন পর, আজ সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে।
নাজিম শেইখ,যিসাস সবাই আমার সাথে আছে।
কেউ আমার পরিকল্পনা জানে না।

শুধু জানে,আমি সেখান থেকে কোনো একজনকে তুলে নিবো।
বিনিময়ে আমার সব সম্পদ নাজিম শেইখ এবং যিসাসকে হস্তান্তর করে দিবো,তাই তারাও রাজি হয়েছে। তাদের লোক জনকে বাহিরে দাড়িয়ে ছিলো।
কমিউনিটিতে অনেক ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা জড়ো হয়েছে।
আলবার্ট থাকায়,আমার প্রবেশ করতে কোনো বেগ পেতে হয়নি।
সম্মেলন চলছিলো,ফরাসীর বানানো সেন্ট পুরো হল রুমে ছড়িয়ে দিলাম।
ভেতর থেকে হলরুমের দরজা বন্ধ।
তাই ভেতরে কি হচ্ছে জানা সম্ভব না।
জ্ঞান হারিয়ে সবাই পড়ে আছে।

দশ জনের ওপর ছুড়ি চালিয়ে হ’ত্যা করলাম, পুরো সেন্টার রক্তে ভেসে গিয়েছে।
আলবার্ট জানতো আমি কিছু একটা করবো,তাই হলরুম থেকে আলবার্ট আগেই বের হয়ে গিয়েছিলো।
হলরুম থেকে বের হয়ে সেন্ট ছড়াতে ছড়াতে বের হয়েছি। ততবেশি কঠোর সিকিউরিটি না থাকায় আমি আয়ত্তে নিতে পেরেছিলাম।
তবে এমন কিছু করবো আলবার্ট বুঝতে পারেনি।
সবার শরীর থেকে মাংস কে’টে নিলাম,একটা ব্যাগে মাংস গুলো নিয়ে বের হয়ে চলে এলাম।
ততক্ষণে পুরো আমেরিকায় খবর ছড়িয়ে গিয়েছে।
যিসাসের লোক ,এবং নাজিম শেইখের লোক হোটেলের চার পাশ ঘিরে রেখেছে।
সরকারি প্রসাশন এর সাথে গো’লা গু:লি হয়।
বেশ কয়েকজন মা’রা যায়।

আমি গাড়িতে চালিয়ে নতুন এক ঠিকানায় আসছিলাম।
প্রচণ্ড ক্লান্ত, হঠাৎ রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায়,আমি ব্যাগ নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে জংগল ঘেরা এক রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে
দৌড়াতে গন্তব্যের দিকে আসছিলাম,
রাস্তায় পা ফসকে পড়ে যাই, পায়ের প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েছি।
র’ক্ত মাখা শার্ট, চুলে শুকিয়ে যাওয়া র’ক্ত,আর ব্যাগ থেকে চুয়ে চুয়ে পড়া র:ক্ত,সব কিছুর আলাদা ঘ্রাণ।।আমার হেটে চলার গতি আরো বেড়ে গিয়েছে,
গায়ে শক্তি নেই,তবুও দৌড়াচ্ছি,ব্যাগ নিয়ে
দৌড়ানোর মতো শক্তি যেন নেই,তবে লক্ষ আছে।
অবশেষে আমার গোপন এক বাসায় এলাম।

এখানেই আমার প্রতিমূর্তি বানানোর কাজ শেষ করবো।
পুরো পৃথিবীকে যেটা দেখানোর জন্যে এত কিছু করছি,সেটাতে সফল হতেই হবে।।
এই দুই দিনে প্রতিমূর্তি সম্পূর্ণ করেছি।
শুনেছি গতকাল আলবার্টকে প্রেসিডেন্ট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।।
ফা’সিও হতে পারে।
আমাকে দেখা মাত্রই গুলি করার আদেশ জারি করা হয়েছে।।
অফিসার সাও-জুন শেইখ নাজিমকে এনকাউন্টারে মে’রে ফেলেছে। হয়তো যিসাসেরও বাচা হবে না আর। অফিসার সাও-জুন কাউকেই বাচতে দিবে না।
হয়তো আমাকেও!
কিন্তু, নাহ! অসম্ভব।

“যদিও দ্বিতীয় ইশ্বর বলে কিছু নেই,প্রথম ইশ্বর ছাড়া আমাকে কেউ মা’রতে পারবে না,আর প্রথম ইশ্বর আমার ভেতরে।”
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো, “আমার মেয়ে কোথায়?”
চমকে উঠলাম,”একি ফরাসী তুমি এখানে কিভাবে?”
– “সেন্ট।”

ফরাসী আমার হাত ধরে অনুরোধ করে জানতে চাইছে যে তার মেয়ে কোথায়।
ফরাসী অনেক আগেই পরিবার হারিয়েছিলো,তারপর নিজের মেয়েকে নিয়ে তার স্বপ্নের অভাব ছিলো না।
নিজের মেয়েকে বড় হওয়ার পরে অনেক রুপেই দেখার শখ।
প্রতিদিন স্বপ্ন দেখতো,তার মেয়ের সংসার হবে,ফরাসী নাতি নাতনিদের সাথে সময় পার করবে।
নাতি- নাতনি নতুন নতুন সেন্ট আবিষ্কার করে উপহার দিবে।
ফরাসী আবার নতুন করে একটা পরিবার পাবে।
অনেক আকাঙ্খার পর ফরাসী সেদিন “Dytto” এর সাথে দেখা করতে মুখিয়ে ছিলেন।
কিন্তু দেখা আর হয়নি।

উইলহেম যখন বলেছিলো,ফরাসীর মেয়ে বেচে আছে,ফরাসী যেন আবার কিছু ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা পায়। নতুন করে সব কল্পনা জেগে উঠে।
নিজের মেয়েকে কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা আবার ফরাসীকে ঘিরে ধরে।
ফরাসীর কোনো অনুরোধ যেন আমার কানে পৌছাচ্ছিলো না। আমি এক প্রকার বিরক্ত হয়ে বলেই দিলাম, “ফরাসী তোমার মেয়ে মৃ’ত,সেদিন ভিডিওতে যে মেয়েকে দেখেছিলে,সেটা ” Dytto” এর মুখোশধারী মেয়ে ছিলো। তোমার সেন্ট ব্যবহার করার জন্যেই আমি এই সুযোগ নিয়েছিলাম।”

– “ফরাসী আমার কথা শুনে হঠাৎ হেসে উঠলো, ” আমি জানতাম, “Dytto” বেচে নেই। কিন্তু ভিডিওতে আমার মেয়েকে দেখে আমি আর কোনো যুক্তিকেই মেনে নিতে পারিনি।
যেন মনে হয়েছিলো,হ্যা আমার মেয়ে বেচে আছে।”
এরপর ফরাসী হাসতে হাসতে উন্মাদের মতো বের হয়ে গেলো।।

ঠিক একই ভাবে উন্মাদের মতো ওয়াটসন হাসছিলো শেইফ এলিসের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে।
কবর বলতে কয়েক টুকরো হাড় আর মাংসের আধুলি জড়ো করে কবর দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন থেকে এলিসকে ওয়াটসন পছন্দ করতো,এরপর ওয়াটসন ক্রাইম ইনভেস্টিগেটর বিভাগে যোগদান করার পর থেকেই এলিসকে বিয়ে করার কথা আর ভাবেনি।
কিন্তু কেন যেন আজ ওয়াটসনের মনে হচ্ছে,এলিসও ওয়াটসনকে ভালোবাসতো,নয়তো এলিস বিয়ে করলো না কেন!

এটা ভাবতেই ওয়াটসনের আত্মা কেঁপে উঠলো, “তাহলে কি সত্যিই এলিস আমাকে ভালোবাসতো!”
এলিস মাং’সা’শী ছিলো বলে কি কখনোই তার পছন্দের কথা আমাকে জানায়নি?”
“সব যেন মিলাতে ইচ্ছে করছিলো,যেন বার বার প্রমাণ করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো এলিস আমাকেই পছন্দ করতো।”
হঠাৎ শূণ্যতা থেকে যেন প্রেম জন্মাচ্ছে…..।
ওয়াটসনের পরিবার বলতে কিছুই ছিলো না।
নিজের কর্মের জন্যে কাউকে জীবনে ঠাঁই দেয়নি,আজ এই কর্মের জন্যেই পছন্দের একজন শেষ মানুষ তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।

এলিসের ওপর প্রতিশোধ নেয়া হয়ে গিয়েছে,এলিস শাস্তি পেয়েছে,তাহলে এবার নিশ্চই উচিৎ, যে এলিসকে নির্মম মৃত্যু দিয়েছে,তারও শাস্তি পাওয়া।
ওয়াটসন আজ সকালেই নিজের পেশা থেকে অব্যহতি নিয়েছে। ওয়াটসন এখন থেকে মুক্ত।
ওয়াটসন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো।
সাও-জুনকে ওয়াটসন দেখা করতে বললো।
শহরের কোনো নির্জন প্রান্তে ওয়াটসন এবং সাও জুন দাঁড়িয়ে আছে।
ওয়াটসনকে স্বান্তনা দিচ্ছিলো সাও-জুন।
সাও-জুন বুঝতে পেরেছে,
এলিসের বিয়োগ,ওয়াটসনকে উদাস বানিয়ে ফেলেছে।

– “আমি এলিসকে এভাবে খু’ন করে,ওর দেহকে টুকরো টুকরো করে, রান্না করেছিলাম,শুধু উইলহেমকে ভয় দেখানোর জন্যে।
তাছাড়া এলিসতো এভাবেই অনেক মানুষকেই শেষ করেছে।”
এলিসেকে রান্না করা হয়েছে,ভাবতেই ওয়াটসনের শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো,মনে হচ্ছে,এলিসের শরীরের ওপর চালানো ছু’রি যেন ওয়াটসনের ওপর চালানো হচ্ছে,এলিসের মাং’স আগুনে ঝলসানো হয়েছে,ভাবতেই ওয়াটসনের মাথায় রাগ জমে গেলো। চোখ লাল হয়ে গেলো।
পেছন থেকে সাও-জুন ওয়াটসনের কাধে হাত রাখতেই,ওয়াটসন সাও-জুনের দিকে ঘুরেই সাও-জুনের কপালে গু’লি করলো.

ফিলা উইলহেমের মায়ের নাম ছিলো।
উইলহেমের চোখে তার মা ছিলেন সেরা সুন্দরী। মধ্যবয়সী এই রমণী বয়সের ভারেও যৌ’বনতরঙ্গিত প্রাণপ্রবাহের অভাবে পড়েনি।
উইলহেম সেদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার মায়ের সৌন্দর্যের ওপর অবাধ অত্যাচার দেখেছিলেন।
অথচ উইলহেমের বাবার কাছে -এই সৌন্দর্য ছিলো মূল্যহীন। আর তাই কোমড়ের বেল্টের আঘাত সহ্য করতে হয়েছিলো উইলহেমের মাকে।

এত কোমল দেহের ওপর কেউ অত্যাচার চালাতে পারে,উইলহেম সেদিন সামনে না থাকলে জানতো না। উইলহেমের মা সেদিন লজ্জা অপমান নিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো।
উইলহেম সেদিন হয়তো এই সুন্দরের ওপর অনুভুতি কি,তা বুঝতো না,
কিন্তু সুন্দর কি,সেটা নিশ্চই বুঝতো।
উইলহেম একা একা প্রায় চিৎকার করতো ” আমার মা পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর নারী।
মা অসুন্দর হওয়ার কারণে বাবার কাছে নির্যাতিত হতে হতো। উইলহেম এত বছর পর এসেও মানতে পারছিলো না যে তার মা অসুন্দর ছিলো।
সুন্দর কোনো মেয়েকে দেখলে মেয়েটাকে তুলে নিয়ে জামা ছিড়ে স্ত’ন, যৌ’নাঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকতো,আর ভাবতো,তার মা এই মেয়ের থেকেও সুন্দর।

– “আমার মা কি শুধু আমার চোখেই সুন্দর,নাকি পুরো দুনিয়ার সব পুরুষের চোখেই সুন্দর!”
উইলহেমের মা সত্যিই রমণী ছিলেন,এটি পুরো পৃথিবীর সব পুরুষের থেকে শোনার ইচ্ছে হলো তার।
তাই উইলহেম নিজের মায়ের মূর্তি ৫১ মেয়ের শরীরের মাংস দিয়ে বানিয়েছিলো-
একদম জীবিত অনুভূত হওয়ার জন্যে।
আর মায়ের নামেই মূর্তির নাম রেখেছিলো ‘ফিলা’।

উইলহেম চাইলেই তিন থেকে চারটি মেয়ে দিয়ে পুরো মূর্তি বানাতে পারতো,কিন্তু না, মাত্র তিন থেকে চারটি মেয়ের মধ্যে উইলহেমের মায়ের অর্থ্যাৎ ফিলার সব সুন্দর একীভূত ছিলো না।
সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফিলা’ নাম শুনেই উইলহেম চমকে যায়,যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা ফিলা মেয়েটি আর উইলহেম এর মা দেখতে একরকম ছিলো না। শুধু তাদের নামই এক ছিলো।
ফিলাকে দেখে উইলহেম নিজের মায়ের কথা ভাবছিলো। পড়াশোনা করা- ফিলা দেখতেও অস্বাভাবিক সুন্দর ছিলো।
উইলহেম তার মাকে যতটা পছন্দ করে,তার বাবাকে সে ঠিক ততটাই অপছন্দ করে।

এখন উইলহেম তার ঘৃণার মানুষ গুলো দিয়ে বানানো মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে আছে,
মূর্তির চোখে চোখ রেখে উইলহেম নিজেকে বলছিলো, ” আমার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রমণী,এটি আমি সেদিনই প্রমাণ করেছি যেদিন ৯৩ জন জ্ঞানী কর্মঠ ব্যক্তিদের সামনে আমার মায়ের সৌন্দর্য তুলে ধরেছিলাম,আর তারা মিসেস ফিলার সৌন্দর্যের মোহে নিজেদের সব সম্মান হারিয়েছিলো।”
রাত প্রায় শেষের দিকে, উইলহেম তার বানানো মূর্তি সম্পূর্ণ করেছে।।
সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে।

এই দিনটির জন্যে হয়তো উইলহেম এত কাঠ-খড় পুড়িয়েছে। অবশেষে পুরো বিশ্বের কাছে তুলে ধরার পালা। উইলহেমের পরিচয়,কর্ম,পরিণতি,সম্মান, ভয়ংকর চরিত্র সব একসাথে ফুটে উঠবে।
আমেরিকার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় “স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি” এর মধ্য কেন্দ্রে উইলহেম মূর্তিটিকে স্থাপন করবে।
অন্ধকার,বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন জুড়ে আজ খোলা বাতাস বইছে,যেন কোণায় কোণায় ইতিহাসের করুণ,নিদারুণ, অথবা উদ্ভাসিত হওয়ার মতো ঘটনার মলট লাগানো হবে এখন।
প্রাঙ্গণ যেন এই মলট নিজের গায়ে লাগাতে প্রস্তুত।
মুর্তি বসানো হলো,উইলহেম সামনে দাঁড়িয়ে আছে, –
উইলহেম দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে –

পা একটু ফাঁকা করে দাঁড়িয়েছে,
মাথা একটু উচু করে মূর্তির দিকে তাকিয়ে আছে।
মূর্তি বিশাল বড় এক পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা।
উইলহেমের পড়নে ধুসর ছাই রঙের কোর্ট,অন্ধকারের মধ্যে শুধু সিগারেটের আলোই জ্বলছে,তবে দূর থেকে বাতির ঝাপসা আলো ভেসে আসছিলো। এরপর উইলহেম হাটতে হাটতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে…।

এদিকে ফিলা তার বাসার প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে শেষ বারের মতো।
গত দুই মাস আগে,ফিলা নিজের পেশা থেকে ইস্তফা নিয়েছে। মনের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে সুস্থ শরীরের অনেক বেশি দরকার,কিন্ত মন এবং শরীর দুটোই যদি নাজেহাল অবস্থায় থাকে,তখন নিজের সাথে লড়াই করা মানে হেরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া।
আজ মধ্যরাতে হঠাৎ ফিলার ঘুম ভেঙ্গে যায় আকস্মিক ব্যাথায়।
ফিলা সজাগ হয়ে দেখে,ফিলার যো’নি দিয়ে প্রচুর র’ক্তক্ষরণ হচ্ছে। গত এক মাস ধরেই,ফিলা যেন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিলো,অসহ্য যন্ত্রণা বেড়েই চলছিলো। ফিলার চলা-ফেরা সহ স্বাভাবিক কাজ গুলো বাধাগ্রস্থ হচ্ছিলো।
মানুষ অনেকটা নিজের মনের জোরে বেচে থাকে।

তীব্র হতাশা,আকাঙ্খা বিয়োগ,পছন্দ -প্রত্যাশার
বিচ্ছেদের নিয়ম কানুন থেকেও-মাঝে মাঝে শারীরিক অক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
কোনো ভাবেই রাত থেকে র’ক্তক্ষর’ণ বন্ধ হচ্ছিলো না ফিলার। গত দুই দিনে ফিলা ঠিক ভাবে খেতেও পারছে না।
ফিলা বুঝতে পারছিলো অস্বাভাবিক কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ফিলার চোখ থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছিলো,
হয়তো আজকের সূর্য টাই হবে ফিলার চোখে তাক লাগানো শেষ সূর্য।
অদ্ভুত এই সুন্দর শরীরের অধিকারী-
ফিলা নিজের জীবনের বিপর্যয় ধারার
কোনো সমাধান পেলো না।

আজকের মত এমন রাতে ফিলার তো নিজের পছন্দের মানুষের সাথে
সারা রাত আকাশের তারা গোনা শেষ করে-
এই ভোর বেলায় ঘুমানোর কথা ছিলো।।
ফিলা বিছানা থেকে দাঁড়াতেই দেখে-
সে যেন র’ক্তের ওপর বসে আছে।
ফিলা বাসা থেকে বের হলো-
হাটছে,ফিলা কোথাও যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে রওনা হয়েছে।
চোখ থেকে পানি গাল বেয়ে বেয়ে গলায় এসে মিশে যাচ্ছে,যো’নি থেকে রক্ত পা বেয়ে-বেয়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছে।
ফিলার অমলীন সুন্দর চেহারার বিধ্বংসী রুপ যেন অন্ধকারেও ঝলকাচ্ছিলো।
হাওয়ায় ভেসে আসা বাতাসের স্পর্শে-

ঊড়তে থাকা চুল গুলো-
অগোছালো ঠোঁট গুলোকে বার বার ঢেকে দিচ্ছে।
ভোরের সময় যে হালকা অন্ধকার চারদিকে বিরাজ করে,এই সময়টাতে সব কিছু এত বেশি নিশ্চুপ থাকে,কিন্তু আজ যেন সব কিছুই সজাগ হয়ে গিয়েছে।
প্রান্ত ভরা সবুজ ছোট ছোট ঘাস,ঘাসের ওপরে লাল র’ক্তের প্রলেপ লাগিয়ে ফিলা এগোচ্ছে।
হঠাৎ ফিলার হেটে চলার গতি বেড়ে গিয়েছে-
ফিলার দেহের কাঁপতে থাকা তেজ-
চারপাশে ঝড় তুলে ফেলছে।

মেয়েটা রাগে অভিমানে কাঁদতে-কাঁদতে ফুসিয়ে ফুসিয়ে শ্বাস নিচ্ছিলো।
ফিলার ডান পাশে উঁচু পাহাড়,পাহাড় থেকে নিচে ধাবিত হওয়া ঝর্ণা-
ঝর্ণার জমানো পানির প্রবহমান নদী –
ফিলার সামনে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
আর ফিলা নদীর পাড়ে বড় পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
ফিলা এবার হাসতে আর একটুও ক্লান্তি দেখায়নি।
আর তারপর ফিলার সেই বিলাসীতা শুরু- পোশাকহীন উন্মুক্ত শরীরে ভোরের সকালের উচ্ছাস উদযাপন।
ফিলার নগ্ন শরীর,ডান হাতের তালু –
যো’নির ওপর রেখে -ডান হাতের পৃষ্ঠের ওপর-

বাম হাত রেখে ,
দুই হাতের দুই বাহু দিয়ে দুই স্ত’নের পার্শ্বে চে’পে ধরে -যো’নি ঢেকে দাঁড়িয়ে-
চোখ বুজে ধীরে শ্বাস টেনে নিচ্ছে।
আকস্মিকভাবে ফিলার গায়ের তাপ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছিলো,বেড়েই যাচ্ছিলো,র’ক্ত যো’নি থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে -পড়তে পায়ের গোড়ালিতে পৌছানোর আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে।
না-না,ফিলার দেহের শেষ রক্ত পৃথিবীর কোনো বস্তু স্পর্শ করার স্পর্ধা রাখে না।

নি:শ্বাস্বের এই ব্যস্ততায় ড. ফরাসীও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। নিজের কাছে পুরো পৃথিবীকে ধরাসয়ী করতে পারা ফরাসীর পরিবারে একজনও বেচে নেই।
“Dytto” এর সাথে দেখা না হওয়ার তৃষ্ণা ফরাসীর মনে তীব্র ভয়ংকর অপ্রাপ্তির ব্যাধি তৈরি করেছে।
প্রায় বুড়ো বয়সী এই লোকটা নিজের ওপর রাগে অভিমানে দাঁতে কামড় দিয়ে চেয়ারে বসে আছে।
রাতের শেষ প্রায়।ঘুম নেই চোখে।
গলা ফে’টে চিৎ’কার বের হতে চাচ্ছে,ফরাসী ফুসিয়ে ফুসিয়ে কান্না করছিলো হয়তো, চোখ থেকে অনর্গল পানি পড়ছে। গলা শুকিয়ে গিয়েছে।

প্রতিশোধ নেয়ার মতো শক্তি বা ইচ্ছে কোনোটাই যেন নেই।
কোনো কিছুতেই তো আর তার পরিবার ফিরে আসবে না।
ফরাসী নিজেই নিজেকে দোষ দিতে লাগলো, তার উচিৎ ছিলো “Dytto” কে তার সাথে রাখা।
হয়তো তাহলে “Dytto” বেচে থাকতো।।
ফরাসীর মধ্যে হতাশা যেন গাঢ় ভাবে চেপে বসলো।
ফরাসী শেলফে গুছিয়ে-সাজিয়ে রাখা সেন্টের সিসি বা ছোট ছোট বোতলের দিকে তাকাচ্ছে।
সব যেন বৃথা,কোনো কাজেই আসেনি।
বরং ফরাসীর সেন্টের অপব্যবহার হয়েছে।
যেন মনে হচ্ছে সেন্ট আবিষ্কার ফরাসীর জন্যে অভিশাপ হয়েই এসেছে।
ফরাসী কোনো সুখই গ্রহণ করতে পারেনি।

হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো।
শেলফ থেকে একটা সেন্টের বোতল হাতে নিলো, বোতলের মুখ খুলে দিয়েই ফরাসী আবার চেয়ারে বসলো,চেয়ার দুলছে ফরাসীও দুলছে।
ফরাসী শ্বাসের সাথে সেন্ট টেনে ফুসফুসে নিতে লাগলো । আস্তে আস্তে ফরাসী নিজের কান্না থামিয়ে দিলো,চুপ-চাপ দুলছে ।
চেয়ারের পাশেই ছু’রি।।
ফরাসী ছু’রি হাতে নিলো।
হ্যাঁ,ফরাসী আ:ত্মহ’ত্যা করার –
হরমোনকে প্রলুব্ধকারী সেন্ট রুমে ছড়িয়ে দিয়েছে।
হঠাৎ ফরাসীর কণ্ঠে যেন চাপা কান্নার সুর ভেসে উঠে,সে নিজেই নিজেকে সব কিছুর জন্যে জোরালো ভাবে দোষী মনে করতে থাকে।
তার বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
মৃ’ত্যুই একমাত্র সমাধানের পথ…….।

হ্যাঁ,আ’ত্মহ’ত্যাই যেন একমাত্র পথ।
ওয়াটসন এমনটাই ভাবছে,সাও-জুনকে গুলি করার পর থেকে।
সারাজীবন পেশায় কখনো অসৎ এর সঙ্গ দেয়নি ওয়াটসন। অথচ আজ অনৈতিক ভাবে সাও-জুনকে খু’ন করা নিয়ে নিজের মধ্যে এখন অতিমাত্রায় অনুশোচনা বেড়ে গিয়েছে।
*চোখের সামনে সাও-জুন,মনের সামনে এলিস।*
পছন্দ আর প্রবল আক্ষেপের সংঘর্ষে ওয়াটসনের প্রতি মুহূর্ত যুদ্ধে কাটছে।
* যে যুদ্ধ – মন আর মস্তিষ্কের মধ্যে লেগে যায়, সেই যুদ্ধে যে-ই হেরে যাক না কেন,হার টা নিজেরই হয়।*
ওয়াটসন মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠে, “আর ঘুমানো সম্ভব না,আমি পারছি না।”
প্রায় ভোর-

যা সিদ্ধান্ত নেয়ার, ওয়াটসন নিয়ে নিয়েছে।
ওয়াটসন গায়ে ঝাপসা সাদা ধুসর রঙের পোশাক পড়লো,
পৃথিবীতে সূর্য উদয় হওয়ার আগে-
ভোরের একটু পর- ওই অন্ধকারেই
সম্ভবত স্বর্গ পৃথিবীতে বিরাজ করে।
বাসা থেকে বের হয়ে এসে ওয়াটসন কবরস্থানে দাঁড়িয়ে আছে –
এলিসের কবরের সামনে, চারদিকে ফুলের সুবাস।
নিজের পেশায় আসার পর ওয়াটসন-
রক্ত আর গুলির ধোয়ার ঘ্রাণ ছাড়া –
আর কোনো ঘ্রাণ নাকে পায়নি।

হঠাৎ ফুলের সুবাসে- ওয়াটসন যেন একটু ঠোঁট বাকিয়ে হাসছে। মনে আনন্দ বইছে।
ওয়াটসন রিভলবার হাতে নিলো,ডান হাতে রিভলবার বাম হাতে সাদা গোলাপের তোড়া।
ওয়াটসন এলিসের কবরের দিকে তাকিয়ে আছে,
কানের ওপরে কপালের ডান পাশ বরাবর ওয়াটসন রিভলবারের এর মাথা লাগিয়ে চোখ বুঝলো…..।

পেছনে থেকে রিভলবার -মাথায় ঠেকিয়ে অফিসার সিন্দ্রো বলতে লাগলো, “উইলহেম এবার আর তোমার কোনো ভাবেই বাচার উপায় নেই,
প্রেসিডেন্ট আলবার্ট পদচ্যুত,
তোমাকে ওপেন শ্যুট করারও আদেশ আছে।”
লোকটি পেছনে ঘুরে তাকাতেই সিন্দ্রো অবাক হয়, “একি আপনি তো উইলহেম নয়,উইলহেম কোথায়?”
লোকটি হাসতে লাগলো, “আপনি উইলহেম স্যারকে ধরতে এসেছেন?”
-সিন্দ্রো বললো, “উইলহেমের তো এখানেই থাকার কথা ছিলো।”
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে-
সিন্দ্রো দাঁড়িয়ে আছে, সিন্দ্রোর সামনে পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা মূর্তি।
মূর্তি খানিকটা উচুতেই স্থাপন করা হয়েছে।
সিন্দ্রো ধীরে ধীরে মূর্তির কাছে গেলেন,বেশ বড় মনে হচ্ছিলো, সিন্দ্রো পর্দার এক কোণা হাতে তুলে নিলেন।
সিন্দ্রো পর্দা টানছে-
পুরো মুর্তি ঢেকে থাকায়,
মূর্তির পেছনের মাটির সাথে –
পর্দার স্পর্শ লেগে থাকা থেকে
পর্দা ক্রমেই ওপরে উঠছে।

আর তারপর পেছন থেকে পর্দা মূর্তির মাথায় এসে পৌছালো,মাথা উন্মোচন হতেই সিন্দ্রো বিস্মিয় হয়ে গেলো।
সিন্দ্রোর হাত থেকে রিভলবার পড়ে গেলো,রাতের অন্ধকার এখনো কাটেনি,হঠাৎ আলো জ্বলে উঠলো।
পুরো মূর্তির থেকে কাপড় সরে গেলো।
সিন্দ্রোর চোখ বড় বড় হয়ে আছে।
উইলহেম এটা কি করেছে!
একসাথে দু ‘ টো মূর্তি এখানে কিভাবে!
মূর্তির একটি পুরুষের, অন্যটি কোনো এক রমণীর।
সিন্দ্রো মূর্তি গুলোর পায়ের নিচে খোদাই করা লেখা পড়তে লাগলেন,
“Fila, the mother of Wilhelm wundt. ”
“Wundt smith,the father of Wilhelm wund.”
সিন্দ্রো হোচট খেলো, সেদিন অডিটোরিয়াম রুমে তাহলে কি পুতুল ফিলার ধ্বংস হয়নি!
তাহলে কি হয়েছিলো সেদিন!

পাশেই দাঁড়ানো লোকটা অদ্ভুত ভাবে হাসতে থাকলো,-
“উইলহেম এতদিন সে তার নিজের মূর্তি বানাননি, তিনি তার বাবার মূর্তি বানিয়েছেন।”
প্রথমে উইলহেম নিজের মূর্তি বানাতে চাইলেও পরে তিনি দেখলেন,তার পরিচয় বলে কিছু নেই,আজ তার যে অস্ত্বিত্ব বিরাজ করছে,তার একক দায় বা কৃতিত্ব তার বাবা মায়ের।
উইলহেম কে,এটি জানার চেয়ে উইলহেম কেন,এটিই জানার দরকার সবার। ”
সেদিন অডিটোরিয়াম রুমে ফিলাকে সিংহাসনে বসানোর পর ফিলার ওপর সবাই সম্মোহিত হয়েছিলো,এবং সেই হোটেলটি ছিলো উইলহেমের নিজের।
আলবার্ট এর সাহায্য নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসা ছাড়াও উইলহেমের আরো একটা উদ্দ্যেশ্যে ছিলো,তার মায়ের সৌন্দর্য সবার সামনে প্রমাণ করা যে উইলহেমের বাবা- উইলহেমের মাকে অপবাদ দিয়েছিলেন সেটা মিথ্যে।

এটি তিনি প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে চেয়েছেন,আর আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতেন,-
“মিসেস ফিলা শুনছেন,আপনি পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর নারী।
এটি আমি সারাজীবন প্রমাণ করতে পারবো,সেদিন আত্মহত্যা করে আমাকে রেখে চলে গিয়ে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।”
অডিটোরিয়াম রুমে ফিলাকে দেখে সবাই যখন ইলিউশানে ছিলো,উইলহেম কথা বলছিলো,সে সুযোগে ফিলাকে সেদিন সরিয়ে নেয়া হয়েছিলো।
পরিবর্তে সাধারণ এক পুতুলকে সিংহাসনে বসিয়েছিলো।
উইলহেম রুম থেকে চলে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই –
যখন ৯৩ জন ব্যক্তির সবাই স্বাভাবিক হতে থাকে,
তারপর দেখলো,তারা সাধারণ এক পুতুলের ওপর হস্তক্ষেপ চালিয়েছে।
এমন প্রতারণার মোহে থেকে বের হওয়ার পরেই দু’জন প্রেসিডেন্ট লজ্জায় আ’ত্মহ’ত্যা করেছিলো।
সেখানে থাকা ৯৩ জন এই ঘটনা বাহিরে প্রকাশ না করার জন্যে, অডিটোরিয়াম রুমের বিষয়টি সেখানেই চুপ-চাপ স্থগিত করে দেয়।

এবং উইলহেমের পরিকল্পনা মাফিক -ফিলার পুতুল বা মূর্তিকে আলবার্ট নিজ দায়িত্বে গোপন রাখে।
উইলহেম তার পছন্দকে এক জায়গায় পুঞ্জীভূত করে- নিজের মায়ের পুতুল বা মূর্তি বানিয়েছিলেন।
উইলহেমের বাবা উইলহেমের চোখে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি ছিলো।
তাই উইলহেমের প্রধান শত্রুদের দেহাংশ একত্রে পুঞ্জীভূত করে উইলহেমের বাবার প্রতিমূর্তি বানিয়েছে।
দুটো মূর্তি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।
একজন সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তি,যার চোখে উইলহেম সব সময় নিজের সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ করতে পেরেছে,
অন্যজন সবেচেয় ঘৃণিত ব্যক্তি,যার জন্যেই হয়তো আজ উইলহেমের অপরাধের শেখড় সেরা প্রান্তে।
কোনো বই লাগবে না,কোনো পরিচয় লাগবে না,কোনো বায়োগ্রাফি লাগবে না।
শুধু মুর্তি দুটোর সামনে দাড়ালেই পুরো পৃথিবী মুহূর্তেই উইলহেমের গুণ,দোষ, ভাব,কার্যক্রম, ক্ষমতা সব আন্দাজ করতে পারবে।

পরিচয়ের এমন দৃষ্টান্ত আর কেউ পেরেছে কিনা জানা নেই।
সিন্দ্রো পুরো স্তব্ধ।
উইলহেমকে নিয়ে আর ভাবতেই পারছে না কিছু,সিন্দ্রো মুহূর্তের জন্যে নিজের বোনের করুণ মৃত্যুটাও ভুলে গিয়েছে।
প্রায় ভোর হবে হবে,হয়তো আর কিছুক্ষণ পর সূর্য উদয় হবে। সিন্দ্রো পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো যে উইলহেম কোথায়।
……… উইলহেম অন্ধকারে হাটছে,মুখে সিগারেট চোখে তৃপ্তি, মনে উদাস হাওয়া লাগানো উদ্দীপনা।
সুন-সান ভোরে উইলহেম হাটছে,শহরের শেষ প্রান্ত, শক্ত ফাটা মাটির সমতল ভূমি, ভূমির মাঝ দিয়ে দুর্বার গতিতে উইলহেম হাটছে,

বুট আর স্যুটের শব্দে চারপাশে থম থম অবস্থা।
বুটের গতিতে ধুলোর এলোমেলো উথাল পাতাল চলছে।
হাটতে হাটতে -হঠাৎ উইলহেম থমকে দাঁড়ালো।
আর এক পা সামনে আগানোর উপায় নেই।
মরুর প্রান্তের শেষ স্থানে পৌছে গেছে।
সামনেই খাদ, খাদের দিকে তাকালেও যেন বেচে ফেরার উপায় নেই।
সীমানা ঘিরে এই খাদের আয়তন প্রায় ৪০ মাইলেরও বেশি, গভীরতা ১০০ মিটারের বেশি।
প্রশস্ত বলতে নিচু খাদ পার হলেই নিচু শহর।
খাদের এই কিনারায় দাড়িয়ে সূর্যদয় সবচেয়ে-
স্বচ্ছ সুন্দর ভাবে দেখা যায়।

হয়তো আর কিছুক্ষণ পড়েই সূর্যদয় হবে।
হঠাৎ মনে হলো কেউ একজন পেছনে দাঁড়িয়ে আছে,উইলহেম ঘুরে দাঁড়ালো।
ঘুরতেই তার ঠোঁটের চাপ থেকে সিগারেট পড়ে গেলো।
উইলহেম ঘামছে,চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে।
কোনো কথা বলছে না।
এত বছর পর চেনা মুখের লোকটা-
সামনে দাঁড়িয়ে আছে,বিশ্বাস হচ্ছে না।
উইলহেমের বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
এটাও কি সম্ভব!

কিন্তু পরক্ষণেই উইলহেম যেন ঘোর থেকে জেগে উঠলো, সে তার বাবাকে নিজ হাতে খু’ন করেছে,তাছাড়া সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটি উইলহেমের সমবয়সী।
অর্থাৎ উইলহেমের বাবার মৃত্যুর সময়ে বাবার চেহারা এমন বয়সেরই ছিলো।
উইলহেম লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কে আপনি?”
– “হ্যালো উইলহেম,আমি ড. শ্রেয়াস।”

ড. শ্রেয়াস দাঁড়িয়ে আছে, তার হাতে রিভলবার।
উইলহেমের দিকে রিভলবার তাক করে ড. শ্রেয়াস বলতে লাগলো, “সেদিন তোমার পেট থেকে গুলি বের করে তোমাকে বাচিয়েছিলাম,তোমার সাথে দেখা হওয়া বাকি ছিলো।”
উইলহেম মুখ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারছিলো না,যেন মনে হচ্ছিলো ড. শ্রেয়াসকে দেখার পরেই নিজের সব শক্তি লোপ পাচ্ছে।
ড. শ্রেয়াস বলতে লাগলো, “মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হও,তুমি এখান থেকে আর বেচে ফিরতে পারবে না।”
উইলহেমের কাছে আর কোনো পথ নেই,এখানেই যেন সব থেমে গিয়েছে।
আর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঘৃণিত এক চেহারা।
ড. শ্রেয়াস গুলি করতে যাবে,ঠিক তখনি উইলহেম কথা বলে উঠলো, “সেদিন আমাকে সুস্থ করে তোলার জন্যে ধন্যবাদ।”

আরেকটু হেসে বললো, ” যদিও দ্বিতীয় ইশ্বর বলে কিছু নেই, আমাকে প্রথম ইশ্বর ছাড়া কেউ মারতে পারবে না,এবং প্রথম ইশ্বর আমার ভেতরেই।”
” শুধু উইলহেমই পারে উইলহেমকে হত্যা করতে।
ড. শ্রেয়াস আপনার সাধ্য নেই,আমাকে মা’রার।”
উইলহেম ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে সূর্য হালকা লাল রঙ ধারণ করে উদয় হচ্ছে।
উইলহেমের পিঠে লাল রঙের আলো লাগতেই পেছনের দিকে তিনি তার দেহ হেলিয়ে দিলেন।
সূর্য ওপর দিকে উঠছে,আর উইলহেম খাদের নিচের দিকে তলিয়ে যাচ্ছে।
যেন মনে হচ্ছে হচ্ছে,
সূর্য উদয় হওয়ার গতির চেয়েও-
উইলহেমের দেহ ওপর থেকে নিচে পড়ার গতি অনেক বেশি।

………..অন্যদিকে ফিলা পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে একটু চোখ মেলে তাকাতেই দেখে-
সূর্যের লাল রঙ তার চোখে চোখ রেখেছে,
পরক্ষণেই ফিলা শেষ বারের মত চোখ বুঝলো,
শেষ বারের মতো ফিলা শ্বাস নিলো,
তারপর পাথরের ওপর থেকে ধীরে ধীরে ফিলা-
সামনে বয়ে যাওয়া নদীতে নিজের দেহ সমার্পণ করলো।
নদীর পানি ফিলার নগ্ন গায়ে-
মাখা রক্ত গুলো ধুয়ে দিচ্ছিলো,
আজ নদীর পানি অনেক বেশি স্বচ্ছ ছিলো,
যেন এই নদী ফিলাকে গোসল করানোর প্রস্তুতি আগেই নিয়ে রেখেছে,
যেন অপেক্ষা করছিলো,ফিলা কখন আসবে।
সকালের নতুন সূর্য ফিলার পিঠের ওপর আলো ফেলেছে। ফিলা দূর-বহুদূর ভেসে যাচ্ছে।
হয়তো নদীর স্রোত ফিলাকে ঠিকানাহীন গন্তব্য পৌছে দিবে।

……………রুমের মধ্যে ফরাসীও নিজের বুকে হার্টের ওপর ছু’রি ঢুকিয়ে দিলেন,
হার্ট ছিদ্র হতেই ফরাসীর শ্বাস বন্ধ হয়ে গেল,
হাত থেকে ছু’রিটা পড়ে যায়।
র’ক্তে মাখা ছু’রিতে সকালের সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে ফরাসীর চোখে লাগে।
শেষ বারে মতো ফরাসীও চোখ বন্ধ করলেন।
……..কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওয়াটসন নিজের মাথায় গুলি করতেই-
রক্ত ছিটে বাম হাতে রাখা –

সাদা গোলাপের তোড়ার ওপর লাগতেই-
গোলাপ গুলো লাল হয়ে গেলো,
ভোরের সূর্যের আলো গোলাপে পড়তেই-
গোলাপ গুলো অদ্ভুত রঙ ধারণ করেছে।
ওয়াটসন এলিসের কবরের ওপর ধীরে ধীরে পড়ে গেলেন…..।

flesh part 23+24

খাদের তলানিতে উইলহেমের দেহ পাথরের ওপর পড়তেই- দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো।
উইলহেম শেষ বারের মতো চোখ বুজতে পারেনি।
চোখ ছিটকে মাথা থেকে বের হয়ে পাশে পড়ে আছে।
খানিকটা পড়েই একদল শকুন র’ক্তের গন্ধে উইলহেমের কাছে চলে আসে।
শকুন গুলো উইলহেমের মস্তকে ঠোকর দিচ্ছিলো।
প্রতি ঠোকরে মনে হচ্ছিলো,উইলহেম যেন কেঁপে উঠছে……..।
প্রতি সকালেই অনেক গল্প,ঘটনা বা প্রাণের সমাপ্তি ঘটে,
তবে আজ সকালে সমাপ্তি ঘটলো-
একটা রাজ্যের,একজন রাজার,একজন রাজ কন্যার,একজন পিতার,একজন প্রেমিকের…..

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here