flesh part 17+18
Papilion skyscraper
পৃথিবীর কোনো মানুষ
হাঙ্গর,সাকার মাছ সহ শুধু রাক্ষুসে মাছকে খাবার খাওয়াতে সমুদ্রে যায় কিনা –
যিসাস বিন কে না দেখলে বিশ্বাস হতো না।
মানুষ মরে গেলে সাধারণত কবর বা শশানে শেষ কাজ হয়,কিন্তু যিসাস এর অপছন্দের লোক গুলোর শেষ অবস্থা হয় ভয়ংকর।
যিসাস জেলে পরিবারে বড় হয়েছে,
মাছের দুর্গন্ধ আর মাছের স্তুপের মধ্যে বড় হয়েছে,
ঝড় তুফানের মধ্যে মানুষ ঘরে আশ্রয় নেয়, আর যিসাস?
মাছের স্তুপের ছোটো হাউজ বা বাক্সের মধ্যে ঢুকে মাছের ওপর বসে –
নিজের মাথার ওপর মাছের স্তুপ দিয়ে ঢেকে, চারপাশে মাছের চাপে -কোনো ভাবে ঝড়ের বাতাস থেকে যিসাস নিজে বেচে ছিলো।
পুরো শরীরে পঁচা পিছলে যাওয়া মাছ গুলোর লালা,আঠা আর আঁশ শুকিয়ে চুল গুলো শক্ত হয়ে আছে,যিসাস নাক খুঁটে খুঁটে নাকের শ্লেষা বের করার বদলে নাক থেকে মাছের পঁচা আঠা বের করছিলো।
কিন্তু নাক থেকে বের হওয়া শ্লেষা আর কোনটা চোখের পানি,হাতে লাগানোর পর বুঝা যাচ্ছিলো না।
তিন দিন আগে, যিসাস, তারা বাবা আর বড় ভাই এই তিন জন মিলেই সংসার,তবে সংসারে নতুন প্রেম আসতে যাচ্ছে- অর্থাৎ যিসাস এর বড় ভাই এবার সমুদ্র থেকে ফিরেই বিয়ে করবে।
যিসাসদের গত পনের বছরে, বোন,ভাবী মা,স্ত্রী এমন সম্পর্কের আশীর্বাদ ছিলো না ।
যিসাসও অনেক খুশি।
রাতের মাঝ অন্ধকার,সমুদ্রের পাড়ে গেলে,এই অন্ধকার অনেকটা ঝাপসা আলোয় বদলে যায়,
ভেজা বালির চিক-চিক ঝলমলে তীব্র শীতলতা পায়ে স্পর্শ হতেই যেন চোখে সূর্যের আলোর মতো অনুভূতির রশ্নি চমকাতে থাকে।।
সমুদ্রের পাড় থেকে হেটে হেটে জাহাজে উঠে-
যিসাস,বড় ভাই,আর বাবা নিজেদের সামুদ্রিক জাহাজ ছাড়লো মাছ ধরার উদ্দ্যেশ্যে।
প্রচুর হাসি সবার মুখে। যিসাসরা তিন জন সহ মোট ১৩ জন জাহাজে আছে।।
পাড় থেকে জাহাজ ভেসে চলছে, প্রায় নয়দিন,মাঝ সমুদ্রে,চাঁদের রাত, যিসাসের বড় ভাই আর যিসাস দুজনে জাহাজের ছাদে শুয়ে আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাল ফিরে যাবে, আর তারপর বিয়ে।
হঠাৎ জাহাজে ধাক্কা,ধড়ফড়িয়ে উঠে দেখে,অন্য আরেকটা জাহাজ থেকে একশ জনের মতো লোক যিসাসদের জাহাজে উঠেছে।
বুঝতে বাকি নেই -দস্যু হামলা হচ্ছে।
যিসাসকে একটা মাছের বক্সে ঢুকিয়ে দিয়ে দিলেন যিসাসের ভাই।
কাঠের বাক্সের ফাঁক দিয়ে চোখ দুটো বের করে বাইরে তাকিয়ে আছে। যিসাসের ওপর-নিচে সব দিকের মাছের তীব্র গন্ধ যিসাসকে আক্রমণ করতে পারছে না।
দস্যু দলের আক্রমণে জাহাজের লোক গুলো একে একে সবাই শেষ।
যিসাসের বাবা আর ভাইকে বেধে রাখা হয়েছে।।
বাকি দশ জনের লাশ দস্যুরা-
যিসাসের বাবা আর ভাইয়ের সামনে ছু*রি দিয়ে কে*টে টুকরো টুকরো করছে।
দস্যুরা সমুদ্রের রা*ক্ষুসে মাছদের উপসনা করে।
ওদের বিশ্বাস, রাক্ষুসে মাছ সন্তুষ্ট থাকলে সমুদ্রের রাজত্ব করা যায়।
দস্যু দলের কিছু লোক, লাশ গুলোকে টেবিলে রেখে গরুর মাংসের মতো কা*টছে।
কে*টে কে-টে সেগুলো জাহাজের চার পাশে পানিতে ছেটাচ্ছে। র*ক্তে ভেজা মাংস গুলো সমুদ্রে পড়তেই রক্ত গুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
কোথায় থেকে যেন অসংখ হাঙ্গর আর সাকার মাছ,পিরানহা মাছের উপস্থিতিতে মুহুর্তেই দশ জনের লাশ গায়েব।
যিসাস এর বাবা চিৎকার করে দস্যুদের ডাকছে,দস্যু দলেরা হাসছিলো।
তারা সবাই একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে,
আর তারপর যা ঘটলো,যিসাস হয়তো কোনো দিনও ভুলবে না।
যিসাসের বাবাকে টেনে টেনে এনে টেবিলে শুইয়ে দিলো,ধারালো ছুরি দিয়ে যিসাসের বাবার পোশাক দেহ থেকে কা*টতে গিয়ে পেট কে*টে ফেলেছে।
তিনি চিৎকার করছেন, যিসাসের ভাই এখনো বাধা,মুখে পাথর ঢুকিয়ে কাপড় দিয়ে বাধা।।
দস্যুরা রোদে গরম করা সূচালো ছুরির মাথা -যিসাসের বাবার চোখগুলোকে টেনে ধরে চোখের ওপর পাঁপড়ি গুলোকে কা*টছিলেন।
এরপর গালের চামড়া আঙ্গুল দিয়ে ধরে-
ছুরি দিয়ে গালের চামড়া ছাড়িয়ে নিচ্ছিলো।
এভাবে পুরো শরীরের চামড়া খ*সিয়ে নিয়ে জাহাজের ভেতরেই একটা পানির হাউজের মধ্যে যিসাসের বাবাকে ছেড়ে দিলো।
পানিতে থাকা পিরানহার মতো রাক্ষুসে মাছ গুলো লোকটার মাংসের ওপর নিজেদের দাঁতের ভয়ংকর কা*মড় বসিয়ে সব মাংস ছি*ড়ে নিচ্ছে ।
এভাবে যিসাসের ভাইকেও ওরা শেষ করেছে।
তারপর জাহাজে থাকা সব সামগ্রী সহ মাছের বক্স গুলো সাগরে ফেলে দেয়া হয়।
যিসাস পানিতে ভেসে উঠে। এখনো কাঁপছে,ভয়েও চিৎকার নেই।
দস্যুদের এমন নৃশংসতাই নাকি তাদের উপসনা দেবতাদের পছন্দ,মূলত রা*ক্ষুসে মাছের মধ্যেই সেই দেবতার বাস,এমন ধারণাই তাদের।
সেদিন যিসাস কোনো ভাবে নিজের বাসায় ফিরে আসে।
বাসায় এসে গলা ফাটানো নিরব চিৎকার।
যিসাস রাগে, কাঁদতে কাঁদতে নিজেদের পুরো বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
তারপর সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে বসে থাকে।
রাতে হঠাৎ তুফান,শেষমেশ তুফান থেকে বাচার জন্যে মাছের বাক্সে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো যিসাস।
যিসাস এখন প্রায় ত্রিশ বছরের যুবক,
যিসাস নিজেই এখন রা*ক্ষুসে মাছের উপসনা করে।।যিসাস জানে এই উপসনার কোনো সত্যতা নেই। তবুও কোন চিন্তা,কোন মনস্ক থেকে জিসাস এটা করে, কেউ জানে না।
যিসাসের একশ এর ওপর মাছ ধরার জাহাজ আছে।
যেভাবে সেদিন দস্যুরা যিসাসের থেকে জাহান ছিনিয়ে নিয়েছিলো,সেভাবেই যিসাস এখন নিচ্ছে।।
সমুদ্রের একক রাজত্ব যিসাসের।
সেই তুফানের পর যিসাস সুমদ্রে এসেছিলো,আর কোনো দিনও মাটিতে পা রাখেনি।
বাণিজ্যক জাহাজ,ভ্রমণ জাহাজ,মাছ ধরার জাহাজ, সব কিছু যিসাস এই সমুদ্রের মাঝে বসেই বানিয়েছে।
তবে সাগর পাড়ি দিয়ে পুরো পৃথিবীতেই যিসাসের ক্ষমতা।
বিশাল সমুদ্রের সব রা*ক্ষুসে মাছ যেন যিসাসের জাহাজের আশে পাশেই থাকে।
থাকবেই না কেন,প্রতি মুহুর্তেই মাছ গুলো –
মানুষের মাংস খেতে পাচ্ছে।
কবর থেকে নতুন লা*শ,এক্সিডেন্ট হওয়া বেওয়ারিশ লা*শ,যিসাসের অপছন্দ মানুষ গুলোর লা*শ,জাহাজ ছিনতাইয়ের পর জাহাজের মানুষ গুলোর লা*শগুলো- যিসাসের জাহাজে পণ্য আমদানির মতো আসতে থাকে।।
আর অনেক লোকও রাখা আছে লা*শ গুলোকে যত্ন করে কে*টে মাছকে খাওয়ানোর জন্যে।
আজ যিসাসের ভ্রমণ জাহাজে বিশাল বড় করে আয়োজন হবে,রাতে ডিনার এবং ড্রিংক্স পার্টি আছে। বড় বড় ব্যবসায়ী সহ অনেকেই এসেছে।
যেন এক মিলনমেলা।
কারণ উইলহেম আসছে,
উইলহেম জাহাজে করে চীনে যাবে,অনেক দিন কোনো সফরে যায় না উইলহেম। চীন সহ আমেরিকা
মধ্য প্রাচ্যের অনেক বড় বড় সব ব্যবসায়িক অপরাধীরা এক হচ্ছে আজ।
ওইতো উইলহেমের জাহাজ দেখা যাচ্ছে,যিসাসের দিকেই আসছে।
যিসাসের আনন্দ ধরে রাখা যাচ্ছে না।
যিসাস উইলহেম এর সব চেয়ে কাছের বন্ধু।
উইলহেম আসলেন,চারদিকে উৎসব।
সবাই উইলহেম এর সামনে যেন শিষ্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে।উইলহেম কত বড় ব্যক্তি,তার ধারণা,চোখে মাপ করা যায় না।
সব কিছু শেষে সবাই ডিনারের জন্যে বসলেন,
প্রায় পঞ্চাশ জন তো হবেই।
সবার টেবিলে খাবার ঢেকে রাখা।
যিসাস সবার সামনে দাড়িয়ে আছে,সবাই খাবারের ঢাকনা সরাতেই চমকে উঠে।
– “একি, এইসব কি!”
কারোর টেবিলে সিং*হের মাথা রা*ন্না করে রাখা,সিং*হের চোখ যেন চেয়ে আছে এখনো।
কারোর টেবিলে জি*রাফের মাথা রা*ন্না করে রাখা।
কারোর টেবিলে নে*কড়ে,কারোর টেবিলে বা*ঘ,কারোর টেবিলে তি*মি মাছের মাথার অংশ।
কারোর,হাঙ্গর,কারোর শেয়াল।
অদ্ভুত এই খাবার দেখে সবাই খুশি কিনা, বুঝা না গেলেও-
একটু পর সবাই যখন দুই হাত দিয়ে উন্মাদের মতো সারা শরীরে খাবার মাখিয়ে স্বাদ করে খাচ্ছিলো,তখন বুঝতে বাকি নেই,এরা এই খাবারে কতো খুশি হয়েছে।
মাংসের এই অদ্ভুত পরিবেশনের জন্যে যিসাসের অনেক পরিশ্রম হয়েছে।
খাবার শেষে যখন ড্রিংক্স এর জন্যে সবাই জড়ো হলো,ড্রিংক্স দেখে সবাই অবাক।
কোনো মদের বোতল নেই,কোনো বিয়ারের বোতল নেই,সাধারণ পানি নেই।
মাটির হাড়ি,হাড়ি বেয়ে বেয়ে তরল পানীয় উপচে পড়ছে।
কোনো হাড়িতে হরিণের দুধ,কোনো হাড়িতে সিংহের দুধ,কোনোটাতে জিরাফ,কোনোটাতে তিমি মাছের,কোনোটাতে মহিষ,গরুর।
প্রায় ৫০ ধরণের প্রাণীর দুধ হাড়িতে রাখা।
এত গুলোর লোকের এই উদ্ভট আয়োজন দেখে বুঝতে বাকি নেই সবাই অদ্ভুত মানসিকতার মানুষ।
উইলহেম দাঁড়িয়ে আছে যিসাস এর সাথে।
“উইলহেম তুমি হঠাৎ চীনে কেন?”
– “সাও-জুন এর সাথে দেখা করতে হবে”
-“উইলহেম তুমি জানো,? তুমি কার কথা বলছো?”
“সাও-জুন এর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো,সাও-জুন আমার জাহাজে এসেছিলো,সাও-জুন আমার সাথে জাহাজে বসে কথা বলছিলো,হঠাৎ সে নিজেই জাহাজের মধ্যে কক*টেইল মে*রে জাহাজ পুড়িয়ে দিয়েছিলো।
পরে পানিতে ভাসতে ভাসতে চলে গিয়েছিলো।
সাও-জুন প্রতিদিন মরতে পারে।।
সাও-জুনের থেকে দূরে থাকা ভালো,তিনি গুলি করার চেয়ে গ্রেনেড ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।
শুধু তাই না-সাও -জুন একবার চীনের প্রশাসন ভবনেও গ্রেনেড মেরেছিলো।
তবুও তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস রাখেনি।
সাও-জুন অনেকটা উন্মাদ।
একবার তাকে এক ক্রিমিনাল ফাঁদে ফেলে কাপড় চোপড়-খুলে -তাকে এক পার্কের সামনে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলো।
সাও-জুন সেই উ*লঙ্গ অবস্থায় দোকান থেকে সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে প্রায় তিন কিলোমিটার হেটে থানায় এসেছিলেন।
আর দুই দিন পর সেই ক্রিমিনালের লা*শ একই পার্কে
পড়ে ছিলো।”
সব কিছু শুনে,উইলহেম একটা সিগারেট ধরালো।উদাস ভাবে টানছে।
হঠাৎ, কঁড়মড় শব্দ হচ্ছিলো,উইলহেম আর যিসাস যেখানে দাঁড়িয়ে আছে,পাশেই একটা টেবিলে কেউ একজন হাড় চাবাচ্ছিলো।
যিসাস রাগান্বিত চোখে তাকালো লোকটির দিকে।
তাকাতেই যিসাস চমকে উঠলো,
সাও জুন বসে বসে সিংহের রান্না করা মাথার হাড় চিবিয়ে খাচ্ছে……
যদি সূর্য টা আজকে না ডুবতো,তাহলে ডক্টরের বেধে দেয়া তিন দিন বেচে থাকার ডিক্লেয়ারেশনের সময়টা হয়তো আরেকটু বেড়ে যেত, সূর্য ডুবলেই আজ তিন দিন হবে।
সূর্য ডুবছে ডুবছে,পাহাড়ের উচুতে দাঁড়িয়ে অসুস্থ লোকটি সূর্যের ডুবে যাওয়া দেখছিলেন,সাথে নিজের মৃত্যু।
হঠাৎ তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো,সূর্য পশ্চিমে ডুবছে না,সূর্য পেছনে যাচ্ছে।
“একি আমার চোখে ইলিউশান হচ্ছে কেন!”
“সূর্য পেছনে ফিরছে কিভাবে”
সন্ধ্যা থেকে বিকেল, তারপর দুপুর, তারপর সকাল।
পেছন থেকে কেউ একজন অসুস্থ লোকটার ব্যান্ডেজ করা মাথা থেকে ব্যান্ডেজ খুলতে লাগলো,
আর তারপরেই হঠাৎ অসুস্থ লোকটি সুস্থ অনুভব করলো।
অসুস্থ লোকটি নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো “মৃত্যুর আগে কি মানুষের এত ইলিউশান হয়!”
কিন্তু কিছুক্ষণ পর মনে হলো,
পেছনে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে,
তাকিয়ে দেখে, পেছন থেকে লোকটি চলে যাচ্ছে- অসুস্থ লোকটি চলে যেতে থাকা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো, “কে আপনি?”
“কি করে করলেন এইসব?” “এমন ইলিউশান সম্ভব?”
লোকটি হাসতে হাসতে বললো, “ইলিউশান তো এক-রকম ধোকা,কিন্তু আমি কাউকে ধোকা দেই না”
এই বলেই লোকটি চলে গেলো।
পৃথিবী যখন ক্রান্তিতে পৌছায়,তখন ইশ্বরের পক্ষ থেকে হয়তো কেউ আসে নয়তো আসবেই,হ্যাঁ এই ভরা ডুবি ক্রান্তিতে সে হয়তো এসে গিয়েছে।
জাহাজের পার্টির টেবিলে সাও-জুন বসে বসে খাচ্ছে,
যিসাস সাও-জুন কে দেখেই চমকে উঠে,
সাও-জুন কিভাবে এলো,সাও-জুন কি করে জানলো,এখানে যে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।
এরপর, উইলহেম মানে আমি চোখে চশমা পড়লাম,
– “যিসাস আমাকে একটা সিগারেট দাও”
“যিসাস,তুমি তো জানোই,আমার অন্ধকারেই চশমা পড়তে বেশি ভালো লাগে।”
লাইটারের আগুনে সিগারেট ধরিয়ে হাতে দুধের গ্লাস নিয়ে,সাও-জুন যে টেবিলে বসে আছে,সেই টেবিলের সামনে বসলাম।
সাও-জুন আমার দিকে তাকাচ্ছেও না।
আমি চুপ করে শুধু সিগারেট টানছিলাম,সাও-জুন খাচ্ছে,যিসাস দাঁড়িয়ে আছে।
কেউ কোনো কথা বলছে না,সবাই নিজের কাজ করছে, সাও-জুন এখনো তাকাচ্ছে না,আমিও সাও-জুনকে নিজে থেকে ডাকছি না।
হালকা আলো গাঢ় অন্ধকারের মিশ্রণ-
ঝাপসা অন্ধকার তৈরি করে।
হঠাৎ,সাও-জুন খেতে খেতে টেবিলে মাথে হেলিয়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো।
সাও-জুন চোখ বুজে গিয়েছে,শ্বাস চলছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না,ডান পাশের গাল টেবিলের ওপর পড়ে আছে।
খাবারের থালার ওপর হাত,শার্টে মাংসের ঝোল লেগে আছে।
সাও-জুন এর মুখ হা করা অবস্থায় মুখ থেকে মাংসের পিস টেবিলে পড়ে আছে।
সিংহের মাথাটা হঠাৎ টেবিল থেকে নিচে পড়ে গেলো,যিসাস দাঁড়িয়ে আছে,সাও-জুন এর পায়ের সামনে মাথা পড়ে আছে।
আমি মুচকি মুচকি হাসছিলাম,আর সিগারেট টানছিলাম,আমার মুখে হাসি থাকলেও শান্তির প্রতিচ্ছিবি নেই।।
যিসাস সাও-জুনকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে গেলো,
যিসাস হেসে হেসে আমাকে বলছে ” উইলহেম, তুমি সব কিছুতেই এত অভিজ্ঞ কেন ?”
“সাও-জুন কি বেচে আছে?” এই বলেই যিসাস সাও-জুন এর কাছে যেতেই-
আমি হেসে উঠলাম,
” সাও-জুন এত অভিনয় পারেন,জানতাম না,উঠে পড়ুন,অনেক হয়েছে”
তারপরে ধুম করেই , সাও-জুন চোখ খুললো,হামি দিতে দিতে মাথা উঁচু করে চেয়ারে বসলেন।
যিসাসকে উদ্দ্যেশ্যে করে সাও-জুন বলতে লাগলো,
” খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,মরে যাইনিরে ভাই”
তারপর সাও-জুন আমার থেকে দুধের ঘটি নিয়ে দুধ মুখে নিলো।
যিসাস ভয়ে ঘামছে, যিসাস আমার দিকে তাকাচ্ছে।
পুরো জাহাজ নিশ্চুপ, কোনো শব্দ নেই,
যারা যারা রাতের খাবার খেয়েছে আর তারপর দুধ- একজনও বেচে নেই।
কেউ দুধের হাড়ির ওপর, কেউ টেবলের পাশে,কেউ বেড রুমে ম*রে পড়ে আছে।
সাও-জুন যিসাসের পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাকেট নিয়ে একটা সিগারেট ধরালো।
-: “দেখেছো উইলহেম,তোমাকে মেরে ফেলা কতো সহজ?”
“চাইলে তুমি আজকে শেষ হয়ে যেতে,কিন্তু এমন হঠাৎ মৃ*ত্যু তোমার হবে না উইলহেম”
“কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলা অনেক সহজ উইলহেম,হা হা হা।”
সাও-জুন এর কথা গুলো শুনছিলাম।
একসাথে এত কাছের মানুষদের মৃ*ত্যু আমাকে একটু হলেও সংকোচে ফেলে দিয়েছে।
হঠাৎ আমি অবাক হয়ে গেলাম, এক ঘটি দুধ নিয়ে খেতে খেতে ওয়াটসন এইদিকে আসছে।।
আমি ভেবেছিলাম,ওয়াটসনও মারা গিয়েছে, ওয়াটসনকে দেখে স্বস্তি লেগেছে।
কিন্তু ওয়াটসন অবাক করে দিয়ে –
সাও-জুন এর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে
আমার দিকে রিভলবার তাক করে দাঁড়ালো।
আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম, “ওয়াটসন তুমি?
সাও-জুন এর সাথে?”
যেন সব কিছু কেমন হয়ে যাচ্ছে।
ওয়াটসন আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনার মতো ক্রিমিনালকে আমি কখনোই সমর্থন দেইনি।”
“কোরিয়ান ব্যবসায়ী দ্বে-ই -হিউন যখন আমাকে একটা প্রোগ্রামে পুতুল উপহার দেয়।”
“আর পরে যখন দেখি,পুতুলের যো*নিতে পচনশীল গন্ধ,সেদিন থেকেই দ্বে-ই হিউন এর সাথে মিশে যাই আমি। তার বিশ্বাস অর্জন করি।”
“যদিও আমি তখন জানতাম না,এর পেছনে কার হাত। আপনার পুতুলের যৌ*নাঙ্গের জন্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় অসংখ্য মেয়ে নিখোঁজ হচ্ছিলো,শুধু তাই না,সুইজারল্যান্ডে গিয়ে যখন দেখলাম ব্যবসায়ীদের মাধ্যমের ব্যাংকে টাকা লেনদেন হচ্ছে।
সেই টাকা গুলো মেয়েদের যৌ*নাঙ্গ কাটার জন্যে ব্যবহার হচ্ছে। তখন থেকেই খুঁজতে থাকি।”
“খুঁজতে খুঁজতে আপনি পর্যন্ত পৌছে দেখি,আপনার সাথে শেইফ এলিসের বন্ধুত্ব। শেইফ এলিস আমাকে সেদিন মানুষের মাং*স খাইয়েছিলো,
আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,এলিস মাংস খায়। তারপর আস্তে আস্তে সব কিছু পরিষ্কার,
আমি রহস্য খুঁজতে চলছি। ”
“এলিসের সাথে আমার বন্ধুত্ব,আর দ্বে-ই হিউন এর সাথে পরিচয় থাকায়,আমি সহজেই আপনার বিশ্বস্ততা নিতে পারি।”
“আমি জানতাম,আপনার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণই যথেষ্ট নয়। আমার একার পক্ষে আপনার বিরুদ্ধে লড়া সম্ভব না।”
“ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেটর টিমে অনেক দেশের অফিসাররা আছেন,আর তাদের মধ্যে সাও-জুন একজন।”
দু:খিত উইলহেম স্যার,এবার আপনার গল্প শেষ।”
“বাহ! ওয়াটসন বাহ!৷ আমি উইলহেম তোমার প্রশংসা করছি।”
কিন্তু ওয়াটসন, আমি কে জানো তো?
গ্রেটেস্ট সাইকোলজিস্ট উইলহেম,
উইলহেম সব সময় বলে, “দ্বিতীয় ইশ্বর বলে কিছু নেই,প্রথম ইশ্বর ছাড়া উইলহেমকে কেউ মারতে পারবে না,আর প্রথম ইশ্বর উইলহেমের মধ্যে থাকে”
“ওয়াটসন আমি সেদিনই সন্দেহ করেছিলাম,যেদিন তুমি আমার সামনে বসে মাংস খাওয়ার নাটক করছিলে,যখন আমার ফ্লাটে গ্রেনেড ব্লাস্ট হলো,
তুমি ফ্লাটের নিরাপদ একটা জায়গা দাঁড়িয়েছিলে,
তোমার কোনো ভাবেই জানার কথা ছিলো না,
অথচ যেন তুমি বুঝতে পারছিলে,এখনোই গ্রেনেড ব্লাস্ট হবে।
তোমার মধ্যে আমি রুম থেকে বের হওয়ার তাড়াহুড়ো দেখেছিলাম।”
কিন্তু বলতেই হবে ভালো গেইম খেলেছো ওয়াটসন।
এরপর যিসাস, আমি,সাও-জুন,ওয়াটসন সবাই দাঁড়িয়ে আছি,
আমি আবার একটা সিগারেট ধরালাম।
আমি সাও-জুন এর দিকে তাকিয়ে বললাম- “সাও-জুন তোমার সাথে বাকি কথা চীনের হবে”
এই বলেই লাইটারে আগুন ধরাতেই বু-ম-ম-ম।
পুরো জাহাজে গ্রেনেড ব্লাস্ট।
জাহাজ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো।
আমি পানিতে ঝাঁপ দিলাম।
এরপর প্রায় এক মাস কেটে যায়।
কিছু টা একা সময় কাটাচ্ছিলাম।
সুমদ্রের খোলা বাতাসে আমি অনেক বছর সময় কাটাইনি।
এমন একটা দ্বীপে আমি একা, যেন সব শান্তি আমার।
সন্ধ্যা হতেই মৃদু বাতাসে ডাল-পালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে বসে ছিলাম।
হঠাৎ সমুদ্রে খেয়াল করে দেখি,অন্ধকারে জাহাজ ভেসে আসছে।
বুঝতে বাকি নেই যিসাস আসছে।
সেদিন আমি যিসাসকে আগেই বলে রেখেছিলাম জাহাজের কাছাকাছি আরো একটা জাহাজ রাখতে।
যদিও যিসাস জানতো না, আরেকটা জাহাজ কেন রাখতে বলেছি।
এতজন ব্যবসায়ীক ক্রিমিনাল একসাথে এক জাহাজে,শত্রু বা যে কোনো ঘটনা ঘটবেই।
তাই জাহাজে গ্রেনেড ব্লাস্টের পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিলো।
কিন্তু সাও-জুন এর উপস্থিতি ছিলো অপ্রত্যাশিত।
যিসাসের সাথে জাহাজে উঠলাম।
যিসাস জাহাজ চীনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আরো কিছু দিন সমুদ্র যাত্রা শেষে চীনে এসেছি।
চীনের সেরা হোটেল গুলোর একটা আমার।
হোটেলের রুমে শুয়ে আছি।
অন্ধকার রুম।
হঠাৎ আলো জ্বলে উঠলো, আমি চোখ খুলে তাকাতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসি,
কেউ একজন সোফায় বসে আছে।
আমার মতো পোশাক পড়ে আছে।
আমার দিকে তাকিয়ে ড্রিংক্স করছে।
এটা কি করে সম্ভব ড. সেহজান আমার সামনে বসে আছে।
– “সেহজান,তুমি এখানে কিভাবে? তুমি তো জেলে ছিলে”
– “উইলহেম আমার বোন অর্নির নিখোঁজ হবার পেছনে তোমার হাত ছিলো?” ” আর এই জন্যেই তুমি আমাকে আমার পরিবার সহ কারোর সাথেই যোগাযোগ করতে দিতে না,যাতে আমার পরিবার কেমন আছে জানতে না পারি।”
ড. সেহজান এর কথা শুনছিলাম আমি,
ড. সেহজান আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগলো, “উইলহেম,টিভি অন করে দেখো।”
আমি টিভি অন করলাম, খবর দেখে চমকে গেলাম, নিউজ দেখাচ্ছিলো, -চীনা এক মন্ত্রীকে তার বাসায় ঢুকে খু*ন করা হয়েছে, সিসি ফুটেজ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় খু*নি নোবেলজয়ী ড. উইলহেম,এবং ড. উইলহেম কিছুদিন আগেই চীনে এসেছেন,তাহলে কি মন্ত্রীকে খু*ন করার জন্যেই উইলহেম চীনে এসেছেন? খু*নের কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে,নিহত মন্ত্রী উইলহেম এর প্রায় পাঁচটি হসপিটালের অংশীদার ছিলেন। হয়তো সেখানেই কোনো দ্বন্দ্ব।
শীঘ্রই উইলহেমকে গ্রেফতার করা হবে।”
ড. সেহজান এর জেল থেকে বের হওয়ার পেছনে ওয়াটসন এবং সাও-জুন এর হাত রয়েছে।
ড. সেহজানকে চীনে এনে তাকে দিয়ে মন্ত্রীকে খু*ন করা,সেই খু*নের দায় উইলহেম এর ওপর চাপানো,উইলহেম কে চীনে নিয়ে আসা সবই সাও-জুন এবং ওয়াটসনের পূর্ব পরিকল্পনা।
ড. সেহজান হাসছে, “উইলহেম এবার নিজেকে বাচাও,”
সেহজান চলে যাচ্ছে,পেছনে থেকে ঠাস ঠাস শব্দে গু*লি করলাম সেহজান এর পিঠে,একসাথে চার/পাঁচ টা গু*লি করায়,সেহজান এর ফুসফুস ছিড়ে বের হয়ে গিয়েছে।
গু*লির শব্দে চারদিকে হৈ চৈ পড়ে গেছে, আমি হোটেলের সেইফ এক্সিট দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলাম।
হোটেলে পুলিশ এসেছে,
flesh part 15+16
উইলহেমের রুমে ঢুকতেই সবাই অবাক।।
সবাই ভাবছে,উইলহেম ম*রে পড়ে আছে।।
উইলহেমের মৃ*ত্যুর খবর যেন বাতাসের আগে ছড়িয়ে যেতে লাগলো-।
অন্যদিকে সাও-জুন যেন নিজেই নিজের ফাঁদে পড়ে গিয়েছে,কি থেকে কি হয়ে গেলো।
উইলহেমকে ফাসানোর ফাঁদ যেন ভেস্তে যাচ্ছে।
উইলহেম হোটেলের পেছন দিয়ে বের হয়ে
গাড়িতে বসে, গাড়ি স্টার্ট দিলো।
উইলহেম এর পেছনে দাঁড়িয়ে কেউ একজন কিছু চাবাচ্ছিলো।
হ্যা, অফিসার সিন্দ্রো দাঁড়িয়ে আছে, অফিসার সিন্দ্রো ও গাড়ি স্টার্ট দিলো…