কাশফুলের মেলা পর্ব ১৪ || রোমান্টিক গল্প ২০২১

কাশফুলের মেলা পর্ব ১৪
Nusrat jahan Sara

“ওই আসলে ইশান খান নামটা আমি আগেও শুনেছিলাম তো তাই একটু অবাক হলাম।
“তাহলে এরকম অভার রিঅ্যাক্ট করার কী আছে?
“বললামই তো!
হুম।

আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রেলিঙে ভর দিয়ে দাঁড়ালো।হাত দুটি ভাজ করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।অনু কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,
“উনারা চলে গেছেন?
“অনেক আগেই।খালি বাসা তোমাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না তাই খুজতে খুজতে ছাঁদে এলাম আর দেখো তোমায় পেয়েও গেলাম।
“খালি বাসা মানে আপনার বাবা মা কোথায়?
“উনারা আংকেলদের সাথে চলে গেছেন। প্রতিবছরই আমরা গিয়ে উনাদের বাসায় থাকি নয়তো উনারা এসে আমাদের বাসায় থাকেন।খুব ভালো সম্পর্ক উনাদের সাথে আমাদের।
“আচ্ছা একটা ছেলে ওতো এসেছিল ও কী হয় আপনাদের?
আবির অনুর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

“কেনো বলো তো?
“এমনি!
“ও হচ্ছে আদিল খান। ইশান আংকেলের ছেলে।জানো তো অনু ওর না বড় একটা বোন ছিলো, আমার সঙ্গি ভাবতে পারো।কিন্তু কোনো এক কালবৈশাখী ঝড় এসে ওকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেলো।এতটাই দূরে যে আমি আজ অব্দি ওকে খুঁজে পাইনি।ও যখন আমার থেকে দূরে সরে যায় তখন আমার বয়স পাঁচ বছর।ভালোবাসা কী জিনিস বুঝতাম না।কিন্তু ওকে দেখলে কেমন জেনো মনে এক ধরনের নাম না জানা অনুভূতি জাগত।বয়স বাড়ার সাথে সাথে কখন যে এই অনুভূতি ভালোবাসায় রুপান্তর হয়েছে বুঝতেই পারিনি। যখন থেকে বুঝতে পারলাম আমি ওকে ভালোবাসি তখন থেকেই ওকে খুজে যাচ্ছি।বাবা আমার জন্য অনেক পাত্রী দেখেছে।বাট কেনো জানিনা আমার তখন শুধু সেই পিচ্চির কথাই মনে পরত।শুধু মনে হতো ও আসবে।কিন্তু ও আর আসলোনা।আর আসবে কী না সেটাও জানিনা। আমি আজও ওকে ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি!

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

“এত ভালোবাসেন!তা ও কীরকম দেখতে হয়েছে কালো বা ফর্সা,,
“ব্যস ও যেমনি হোক না কেনো ওকে আমি ভালোবাসি।
“যদি তার বিয়ে হয়ে যায় তাহলেও কী আপনি ওকে ভালোবাসবেন।
“হঠাৎ তুমি এতো প্রশ্ন করছো যে?এক মিনিট এক মিনিট ওর নাম ওতো অনু ছিলো এন্ড তোমারও। আর তোমার ইশান আংকেলের নাম শুনে অভার রিঅ্যাক্ট করা,আচ্ছা কোনো ভাবে তুমিই অনু নওতো?
অনু এতক্ষন ঠিকি ছিলো। কিন্তু আবিরের মুখ থেকে কথাটি শুনে সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।কোনো রকমে জিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে বলল,
“আপনি এভাবে আমাকে সন্দেহ করতে পারেননা। যখন দেখলেন অনুকে পাচ্ছেননা তখন আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করলেন।আর কারণটা কী কাকতালীয় ভাবে অনুর সাথে আমার নামটা মিলে গেছে তাই তো?আচ্ছা দুনিয়াতে কী অনু নামের একজনই আছে বলুন তো?কত-শত মানুষ আছে অনু নামের।তাহলে কী সবাই আপনার সেই পিচ্চি অনু?
“আচ্ছা তোমার সব কিছুতেই এত অভার রিঅ্যাক্ট কেনো?
“মানে?
“মানে তুমি সবকিছুতেই এরকম আচরন করো কেনো?
“কেমন আচরন?
“অদ্ভুত।

“সেটা একান্ত আপনার কাছেই মনে হয়।
“আচ্ছা ঠিকাছে কথা পরেও বলা যাবে। আগে নিচে এসো সন্ধ্যা হচ্ছে জানালা দরজা সব বন্ধ করতে হবে।আর আকশের কন্ডিশনও বেশি ভালো নয়।
“কন্ডিশন মানে?
আবির অনুর কথা শুনে ফিক করে হেঁসে ফেলল কিছুক্ষন হেঁসে তারপর বলল,
“তোমাকে না কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করানো দরকার।তাহলে তুমিও ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে লেখাপড়া করতে পারবে।
অনু মুখটা ফুলিয়ে বলল,
“আপনার যদি এতো ইচ্ছে থাকে ছোট ইস্কুলে ভর্তি হওয়ার তাহলে আপনি গিয়েই ভর্তি হোন।
সন্ধ্যা সাতটা বাজে অনু হাতে কফি নিয়ে বসে আছে আর ওর সামনেই আবির হাতে কফি নিয়ে একেরপর এক চুমুক দিয়ে যাচ্ছে।অনুকে এভাবে হাতে কফি নিয়ে বসে থাকতে দেখে আবির বলল,
“কফি কী ভালো হয়নি?হাতে নিয়ে বসে রইলে যে?
“আসলে আমি আগে কখনো কফি খাইনি।খেতে কেমন সেটাও জানিনা।
“খেতে ভালোই।খেয়ে দেখো, ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার ভালো লাগবেনা।শুরু করো।
অনু আবিরের কথা শুনে কফি মুখে দিলো।না খেতে ভালোই।আবির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“জানো তো আমি কখনো কোনোদিন কোনো মেয়েকে কফি খেতে বলিনি।কিন্তু আজ দেখো নিজের হাতে কফি বানিয়ে একজন মেয়েকে খাওয়াচ্ছি। তা আজ তো বুয়া আসেনি রান্না তো করতে হবে কী খাবে?
“আমি রান্না জানি।
“তাহলে তো ভালোই।চলো রান্নাঘরে।দেখি রান্না করার মতো কিছু আছে কী না?
আবির ফ্রিজ খুলে দেখলো অনেক সবজীই আছে। বরবটি,চিচিঙ্গা,বাঁধাকপি,পটল আর সীম।
“অনু চলো আজ বাঁধাকপি খাই।সকালে তো বুয়া আসবেই তখন নাহয় মাছ মাংস রান্না করা যাবে।
“আপনার ইচ্ছা।

আবির পেয়াজ কুটছে আর শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছছে।অনু আবিরকে এভাবে কাঁদতে দেখে খিলখিল করে হেঁসে দিলো।আবির প্রথমে বিরক্ত হলেও পরে মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।এই প্রথম সে অনুকে এভাবে হাসতে দেখছে।অনু হাসলে ওর বাম গালে টুল পরে আর তারমধ্যে আঁকাবাকা দাঁতের হাসি।এমন রমনীর বর্ননা দিতে গেলে যে আস্ত একটা উপন্যাস লিখা হয়ে যাবে।আবির নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত করে বলল,
“অনু!!!!
অনু নিজের হাসিটা থামিয়ে বলল,
“বলুন
“তুমি কী জানো তোমার আর আমার মধ্যে একটা জিনিসের মিল আছে?
“ওমা তাই? সেটা কী?
“হাসলে তোমার গালেও টুল পরে আর আমার গালেও। শুধু এতটুকুই তফাৎ আমার দুই গালে আর তোমার এক গালে।
“আপনাকে হাসলে খুব ভালো লাগে।খোঁচা খোঁচা দাড়ি, গালে টুল পরে উফ মন চায় গালটা একটু টেনে দিই।
“আচ্ছা তাই?
“হুম তাই।
রান্না-বান্নার পাঠ চুকিয়ে আবির আর অনু যে যার রুমে চলে গেলো।অনু আয়নার সামনে এসে দেখলো তার অবস্থা ঘেমে একাকার। কপালে ঘামের বিন্দু মুক্তোর দানার মত বসে আছে।বেবি হেয়ারগুলোও কপালের সাথে লেপ্টে আছে।সারা শরীরও চুলকাচ্ছে।না এভাবে থাকা আর সম্ভব নয়।অনু বাথরুমে চলে গেলো শাওয়ারের জন্যে।

বেশ কিছুক্ষন শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকার পর মনে পরলো সে তো কাপড়ই আনেনি এখন কী পরবে। বাথরুমের এক কোনে স্ট্যান্ডে একটা সাদা তোয়ালে রাখা আছে অনু সেটাই শরীরে প্যাচিয়ে বেরোলো।কাবার্ড খুলে দেখল একটা দুটি শাড়িই পরে আছে আর একটা জামাও নেই।হয়তো আরুহি সাথে করে নিয়ে গেছে নয়তো সরিয়ে ফেলেছে। অনু শাড়িটা নিয়ে আবার বাথরুমে চলে গেলো।
আবির অনুকে ডাকতে এসে নিজেই থমকে গেলো। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নীল শাড়ি পরিহিতা রমনীকে দেখে সে একেবারে ঘোরে চলে গেছে। একেকবার মেয়েটাকে একেকরুপে দেখে সে বারবার মায়ায় পরে যাচ্ছে। কী আছে এমন এই মেয়ের মধ্যে। অনু নিজের লম্বা চুলগুলো সামনে এনে ঝারছে। চুল সামনে নেওয়ার জন্যে ওর ফর্সা পিট ব্লাউজ বেধ করে অর্ধেক দেখা যাচ্ছে। আবির সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল,
“নিচে এসো খাবে।
কথাটি বলে আবির আর এক মুহুর্তও আর দাঁড়াল না চলে গেলো।অনু জিভে একটা কামড় দিয়ে নিজেই নিজের মাথায় চাটা মারল।
“ছিঃ অনু দরজাটাও বন্ধ করতে পারলি না।বেচারা আবির এখন তোকে কী ভাববে বল তো?আর তাছাড়াও এটাও প্রমান হয়ে গেলো যে সব ছেলেরা খারাপ হয়না। সব ছেলেদের মনে কামনা বাসনা থাকেনা।আবির চাইলেই সুযোগ নিতে পারত কিন্তু ও তো ভালো করে তাকায়ও নি।সত্যি সব ছেলেরা যদি এমন হতো তাহলে হয়তো কোনো বোনকে ধর্ষিতা হতে হতোনা।আবির হয়ত নিজেকে এসবে জড়াতেও চায়না তার মনে তো শুধু একজনি আছে সেই পিচ্চি অনু মানে আমি।কিন্তু আমি চাইলেই তাকে এসব বলতে পারবনা।সত্যিটা সামনে আনতেও আমার অনেক সময় লাগবে।হুট করে সত্যটি বললে একটা ঘাপলা বেঁধে যাবে যা আমি চাই-না।

অনু এসব ভাবতে ভাবতে ডাইনিং রুমে চলে গেলো। আবির অলরেডি সব সার্ভ করে রেখে দিয়েছে। অনু একটু মুচকি হেসে চেয়ার টেনে সেও বসে পরল। আবির যেন আরেক দফা ক্রাশ খেলো। এই মেয়ের সবকিছুতেই কেমন মায়া।যে কেউ মায়ায় পরে যাবে। আবিরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনু ওর হাতে হাত রাখল। আবির নিজের হাতের উপর অনুর হাত দেখে হাতটা সরিয়ে নিলো।
“আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাই আপনার দৃষ্টি সরানোর জন্য হাত রেখেছিলাম আমি দুঃখিত।
“ইট’স ওকে।হরর্ ফিল্ম দেখবা?
“হরর্ ফিল্ম মানে?
“আল্লাহ্!!ভুতের ছবি।
“ভুতের ছবি!!দেখব দেখব।
“ভয় পেলে আমার দোষ নেই।
“আচ্ছা।
“তাহলে তারতাড়ি খেয়ে নাও। বসে বসে ল্যাপটপে হরর্ ফিল্ম দেখব।
আবির লাইট অফ করে ফিল্ম অন করছে। অনু একবার ওর দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার ল্যাপটপে। ফিল্ম অন করার সাথেসাথে হন্টেড মিউজিক শুনে অনু নিজের শাড়ি কামচে ধরলো।ফিল্মে দেখাচ্ছে কয়েকজন মেয়ে আর ছেলে রাত দুইটার সময় একটা মিউজিয়ামে এসেছে কিছু তথ্য লুপাট করার জন্য। তথ্যগুলো চুরি করে চলে যাবে তার আগেই ডোর লক হয়ে গেলো।বাতি জ্বলতে নিবতে শুরু করল।কয়েকটা লাইট তো ব্লাস্ট হয়ে পরছে।হঠাৎ সব লাইট আবার আগের মতো হয়ে গেলে।ঠিক তখুনি সবাই সামনে তাকিয়ে দেখল তাদের সাথেরই একটা মেয়ের গলা কেটে মাথা হাতে করে নিয়ে যাচ্ছে একটা ভুত”

কাশফুলের মেলা পর্ব ১৩

অনু এই দৃশ্য দেখে আবিরকে দুইহাতে জাপ্টে ধরল।
“দয়া করে এটা বন্ধ করুন।এটা দেখলে আমি মরে যাব।
আবির অনুর পিটে হাত রেখে বলল,
“আমি তো আগেই বলেছিলাম ভয় পেলে আমার দোষ নেই।
“হ্যাঁ আমি ভয় পেয়েছি অনেক ভয়।এর আগে এমন ছবি দেখিনি।দয়াকরে আমাকে ছেড়ে যাবেননা।
“আচ্ছা যাবনা।আমাকে ছাড়ো তো।
“না না ছাড়বোনা। এভাবেই থাকিনা সমস্যা কী?
“ভুলে যেওনা আমাদের কিন্তু বিয়ে হয়নি।এখন যদি কোনো অঘটন ঘটে যায় তো,,,
অনু তারাতাড়ি নিজেকে আবিরের থেকে ছাড়িয়ে নিল।আবির উঠে গিয়ে জলদি লাইট অন করল।
“যাও গিয়ে শুয়ে পরো।
“আমার ভয় করছে।
“আমি তো আগেই বলেছিলাম। যাও নিজের রুমে যাও।এসব শুধু সিনেমাতেই সম্ভব বাস্তবে নয়।মানুষকে বিনোদন দেওয়ার জন্য এসবের ব্যবস্থা। ঘুমানোর আগে ছোট বেলার কথা মনে করবে এসব মাথায় আনবেনা তাহলে দেখবে ঘুমিয়ে যাবে। আর যদি এসব ভাবো তাহলে সারা রাতেও ঘুমাতে পারবেনা।

“আপনি কী বাকিঅংশ দেখবেন?
“আমি বাকিটুকু দেখে তরপরই ঘুমাব।
“দোহাই আপনার এসব দেখবেন না।
“আমি তোমার মতো এত ভিতুর ডিম না।
অনু ভয়ে ভয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।অনু চলে যাওয়ার সাথেসাথেই আবির বুকে ফু দিলো।
“এই মেয়েটাকে যত দূরে রাখতে চেষ্টা করছি ততই যেন ও আরও কাছে আসছে। আমি ওকে কীভাবে বুঝাব যে আমি আমার সেই পিচ্চি অনু ছাড়া আর কাউকে নিয়ে ভাবতে চাইনা।আচ্ছা কাকতালীয় ভাবে যদি ও আমার অনু হয়ে যেত তাহলে কী খুব বড় ভুল হয়ে যেত।

কাশফুলের মেলা পর্ব ১৫